ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
নতুন শিক্ষাক্রম আর বিতর্ক যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ২০২৩ সালে এ শিক্ষাক্রমের বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানোর পর থেকেই একের পর এক বিতর্ক তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের একটি অধ্যায়ে উল্লিখিত শরীফার গল্প নিয়ে এ বিতর্ক আবার আলোচনা এসেছে। ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে ‘শরীফার গল্প’ অংশটুকু ছিঁড়ে ফেলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎস।
তিনি অভিযোগ করেন, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের ‘মগজধোলাই’ করা হচ্ছে। বইয়ের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলা এবং ওই দিনের অনুষ্ঠানের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। দেশের প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় আসে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু। ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে নানাজন নানামত লিখে পক্ষে-বিপক্ষে মত জানাচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
এসব পক্ষে-বিপক্ষে লেখায় ট্রান্সজেন্ডার একটা মানসিক রোগ। এমন মতও উঠে আসছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দাবি করা হচ্ছে, ট্রান্সজেন্ডার যেহেতু মানসিক রোগ থেকে হয়, তাই তাঁদের শরীরে অস্ত্রোপচার না করে মানসিক চিকিৎসায় জোর দেওয়া উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) ট্রান্সজেন্ডারের সংজ্ঞায় বলছে, যাদের সামাজিক লৈঙ্গিক পরিচয় (স্ত্রী লিঙ্গ, পুরুষ লিঙ্গ বা অন্যান্য) থেকে জন্মগত যৌন পরিচয় (পুরুষ বা নারী) আলাদা, এমন মানুষেরা ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে পরিচিত।
সহজ কথায়, কারও জন্মগত যৌন পরিচয়ের সঙ্গে যখন সামাজিক লৈঙ্গিক পরিচয়ের অমিল ধরা পড়ে, তখন তাকে ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা বিষমকামী (হেটেরোসেক্সুয়াল), সমকামী (হোমোসেক্সচুয়াল), উভকামী (বাইসেক্সচুয়াল) হতে পারে। আবার কখনো এগুলোর কোনোটিতেই শ্রেণিবদ্ধ না হতে পারে।
তাহলে ট্রান্সজেন্ডার কি মানসিক রোগ? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে ২০১৬ সালে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ মেক্সিকো বিশ্বে প্রথমবারের মতো মাঠপর্যায়ে গবেষণা চালায়। দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি, বিশেষায়িত ক্লিনিক কনডেসা ও ন্যাশনাল অটোনমাস ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা রাজধানী মেক্সিকো সিটির ২৫০ ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির ওপর এই গবেষণা চালান।
বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত বিখ্যাত গবেষণা জার্নাল ল্যানসেট সাইকিয়াট্রিতে প্রকাশিত এই গবেষণায় বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয় ট্রান্সজেন্ডার কোনো মানসিক রোগ নয়। অনেক সময় অভিভাবকেরা ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের মানসিক চিকিৎসা নিতে বাধ্য করেন। কিন্তু তাঁদের প্রয়োজন শারীরিক চিকিৎসা।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ট্রান্সজেন্ডাররা জানান, তারা তাদের শৈশব ও কৈশোরের সময় (২ থেকে ১৭ বছর) বয়সেই প্রথম নিজেদের ট্রান্সজেন্ডার পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছিলেন। ৭৬ শতাংশ ট্রান্সজেন্ডার জানান, তারা সামাজিকভাবে প্রত্যাখ্যানের শিকার হয়েছেন, ৬৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী তাদের সামাজিক লৈঙ্গিক পরিচয়ের কারণে সহিংসতার শিকার হয়েছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব সামাজিক প্রত্যাখ্যান এবং সহিংসতা ট্রান্সজেন্ডারদের নিজেদের পরিবারের মধ্যেই ঘটেছে। ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা যে মানসিক সমস্যায় ভোগেন সেটি মূলত ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক পরিসরে এসব নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হওয়া ও সামাজিক সংস্কারের কারণে ঘটে থাকতে পারে।
মেক্সিকান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রির গবেষক ও গবেষণাটির প্রধান রেবেকা রোবলস এক বিবৃতিতে বলেন, গবেষণায় প্রাপ্ত ডেটা অনুযায়ী, বৈচিত্র্যময় লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে সামাজিক সংস্কার ও সমাজ থেকে পাওয়া দুর্ব্যবহারের থেকে ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা হতাশা এবং মানসিক চাপে ভোগেন।
ওই গবেষণায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) রোগের আন্তর্জাতিক শ্রেণিবিন্যাসের (আইসিডি) পরের সংস্করণে ট্রান্সজেন্ডারকে যৌন স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়। তখন পর্যন্ত আইসিডিতে ট্রান্সজেন্ডার বা জেন্ডার আইডেনটিটি ডিসঅর্ডারকে ‘মানসিক ও আচরণগত ব্যাধি’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে ২০১৯ সালে তা সংশোধন করে ট্রান্সজেন্ডারকে মানসিক ও আচরণগত ব্যাধি নয় বলে সিদ্ধান্ত দেয় ডব্লিউএইচও।
ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ ও ওয়ার্ল্ড প্রফেশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর ট্রান্সজেন্ডার হেলথের প্রেসিডেন্ট জেমিসন গ্রিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম টাইমকে বলেন, ‘লৈঙ্গিক অসংগতি নিয়ে বেড়ে ওঠা একজন ব্যক্তি হিসেবে আমি খুবই স্পষ্ট যে ট্রান্সজেন্ডার কোনো মানসিক সমস্যা নয়। পারিপার্শ্বিকতার কারণে ট্রান্সজেন্ডাররা মানসিক সমস্যায় ভোগেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক একাডেমিক মেডিকেল সেন্টার ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানায়, ট্রান্সজেন্ডার মানসিক রোগ নয়। কিন্তু যাঁরা ট্রান্সজেন্ডার, তাঁরা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন। যেমন, জেন্ডার ডিসফোরিয়া ও বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য। এসব বিষয় তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।
একজন ব্যক্তির জন্মগত যৌন পরিচয়ের সঙ্গে সামাজিক লৈঙ্গিক পরিচয়ের ভিন্নতা ধরা পড়লে তিনি ট্রান্সজেন্ডার। এই অমিল দূর করার জন্য যৌনাঙ্গে সার্জারিসহ যথাযথ চিকিৎসা নেওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যক্তির যে অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা হয় তাঁকে ‘জেন্ডার ডিসফোরিয়া’ বলে। এটি শৈশব থেকে শুরু করে জীবনের যেকোনো পর্যায়ে ঘটতে পারে। এর চিকিৎসা না হলে মানসিক জটিলতাসহ নানা স্বাস্থ্যগত জটিলতা হতে পারে।
বিবিসি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে ২০১৯ সালের ২৯ মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, ট্রান্সজেন্ডারের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রজনন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লালেকে উদ্ধৃত করে বিবিসি জানায়, ট্রান্সজেন্ডার আগে মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাধিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু এটি মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা নয় বলে প্রতীয়মান হওয়ায় ট্রান্সজেন্ডারদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ভিন্ন অধ্যায়ে যুক্ত করা হয়েছে।
২০১৯ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফোরাম ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলির ৭২তম সম্মেলনে আইসিডির ১১তম সংস্করণ অনুমোদন দেওয়া হয়। এই সংস্করণে ট্রান্সজেন্ডারকে মানসিক ও আচরণগত ব্যাধি বা রোগ থেকে বাদ দিয়ে যৌন স্বাস্থ্য অধ্যায়ের অধীনে জেন্ডার ইনকনগ্রুয়েন্স বা লৈঙ্গিক অসামঞ্জস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট ঘুরে দেখা যায়, ট্রান্সজেন্ডারকে মানসিক ও আচরণগত ব্যাধি বা রোগ থেকে বাদ দিয়ে যৌন স্বাস্থ্য অধ্যায়ের অধীনে নেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, ট্রান্স-সম্পর্কিত এবং লিঙ্গবৈচিত্র্যের ব্যাপারগুলো মানসিক অসুস্থতার শর্ত নয়। তাদের এভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা বিশাল কলঙ্কের কারণ হতে পারে। জেন্ডার ইন কনগ্রুয়েন্স বা লৈঙ্গিক অসামঞ্জস্যকে বয়সভেদে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. কৈশোর বা প্রাপ্তবয়সের ব্যক্তিরা সামাজিক লৈঙ্গিক পরিচয় ও জৈবিক লৈঙ্গিক পরিচয়ের মধ্যে জোরালো ও স্থায়ী অমিল খুঁজে পায়। এর ফলে ব্যক্তি তার কাঙ্ক্ষিত সামাজিক লৈঙ্গিক পরিচয় গ্রহণের জন্য হরমোনাল ট্রিটমেন্ট, অস্ত্রোপচারসহ অন্যান্য চিকিৎসার দ্বারস্থ হয়। বয়ঃসন্ধি শুরু হওয়ার আগে এটির চিকিৎসা সম্ভব নয়।
২. শৈশবে বয়ঃসন্ধি শুরু হওয়ার আগে লৈঙ্গিক অসামঞ্জস্য দেখা যায়। শিশু ভিন্ন সামাজিক লৈঙ্গিক পরিচয় গ্রহণ করতে চায় এবং সেগুলোকেই প্রাধান্য দেয় এবং নিজের লৈঙ্গিক পরিচয় পরিবতর্ন করতে চায়। শৈশবে লিঙ্গ অসংগতির এই অনুভূতি শিশুর মধ্যে কমপক্ষে দুই বছর স্থায়ী হতে হয়।
ওপরের আলোচনা থেকে এটি স্পষ্ট যে মানুষ ট্রান্সজেন্ডার হয় শারীরিক পরিবর্তনের কারণে। পূর্বে এটিকে মানসিক স্বাস্থ্যের অন্তর্গত বলে দাবি করা হলেও গবেষণা বলছে, এর সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নেই। বিশ্ব সংস্থাও ২০১৯ সালে এটিকে মানসিক স্বাস্থ্য থেকে বের করে যৌন স্বাস্থ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছে।
নতুন শিক্ষাক্রম আর বিতর্ক যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ২০২৩ সালে এ শিক্ষাক্রমের বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানোর পর থেকেই একের পর এক বিতর্ক তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের একটি অধ্যায়ে উল্লিখিত শরীফার গল্প নিয়ে এ বিতর্ক আবার আলোচনা এসেছে। ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে ‘শরীফার গল্প’ অংশটুকু ছিঁড়ে ফেলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎস।
তিনি অভিযোগ করেন, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের ‘মগজধোলাই’ করা হচ্ছে। বইয়ের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলা এবং ওই দিনের অনুষ্ঠানের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। দেশের প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় আসে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু। ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে নানাজন নানামত লিখে পক্ষে-বিপক্ষে মত জানাচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
এসব পক্ষে-বিপক্ষে লেখায় ট্রান্সজেন্ডার একটা মানসিক রোগ। এমন মতও উঠে আসছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দাবি করা হচ্ছে, ট্রান্সজেন্ডার যেহেতু মানসিক রোগ থেকে হয়, তাই তাঁদের শরীরে অস্ত্রোপচার না করে মানসিক চিকিৎসায় জোর দেওয়া উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) ট্রান্সজেন্ডারের সংজ্ঞায় বলছে, যাদের সামাজিক লৈঙ্গিক পরিচয় (স্ত্রী লিঙ্গ, পুরুষ লিঙ্গ বা অন্যান্য) থেকে জন্মগত যৌন পরিচয় (পুরুষ বা নারী) আলাদা, এমন মানুষেরা ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে পরিচিত।
সহজ কথায়, কারও জন্মগত যৌন পরিচয়ের সঙ্গে যখন সামাজিক লৈঙ্গিক পরিচয়ের অমিল ধরা পড়ে, তখন তাকে ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা বিষমকামী (হেটেরোসেক্সুয়াল), সমকামী (হোমোসেক্সচুয়াল), উভকামী (বাইসেক্সচুয়াল) হতে পারে। আবার কখনো এগুলোর কোনোটিতেই শ্রেণিবদ্ধ না হতে পারে।
তাহলে ট্রান্সজেন্ডার কি মানসিক রোগ? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে ২০১৬ সালে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ মেক্সিকো বিশ্বে প্রথমবারের মতো মাঠপর্যায়ে গবেষণা চালায়। দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি, বিশেষায়িত ক্লিনিক কনডেসা ও ন্যাশনাল অটোনমাস ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা রাজধানী মেক্সিকো সিটির ২৫০ ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির ওপর এই গবেষণা চালান।
বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত বিখ্যাত গবেষণা জার্নাল ল্যানসেট সাইকিয়াট্রিতে প্রকাশিত এই গবেষণায় বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয় ট্রান্সজেন্ডার কোনো মানসিক রোগ নয়। অনেক সময় অভিভাবকেরা ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের মানসিক চিকিৎসা নিতে বাধ্য করেন। কিন্তু তাঁদের প্রয়োজন শারীরিক চিকিৎসা।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ট্রান্সজেন্ডাররা জানান, তারা তাদের শৈশব ও কৈশোরের সময় (২ থেকে ১৭ বছর) বয়সেই প্রথম নিজেদের ট্রান্সজেন্ডার পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছিলেন। ৭৬ শতাংশ ট্রান্সজেন্ডার জানান, তারা সামাজিকভাবে প্রত্যাখ্যানের শিকার হয়েছেন, ৬৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী তাদের সামাজিক লৈঙ্গিক পরিচয়ের কারণে সহিংসতার শিকার হয়েছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব সামাজিক প্রত্যাখ্যান এবং সহিংসতা ট্রান্সজেন্ডারদের নিজেদের পরিবারের মধ্যেই ঘটেছে। ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা যে মানসিক সমস্যায় ভোগেন সেটি মূলত ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক পরিসরে এসব নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হওয়া ও সামাজিক সংস্কারের কারণে ঘটে থাকতে পারে।
মেক্সিকান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রির গবেষক ও গবেষণাটির প্রধান রেবেকা রোবলস এক বিবৃতিতে বলেন, গবেষণায় প্রাপ্ত ডেটা অনুযায়ী, বৈচিত্র্যময় লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে সামাজিক সংস্কার ও সমাজ থেকে পাওয়া দুর্ব্যবহারের থেকে ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা হতাশা এবং মানসিক চাপে ভোগেন।
ওই গবেষণায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) রোগের আন্তর্জাতিক শ্রেণিবিন্যাসের (আইসিডি) পরের সংস্করণে ট্রান্সজেন্ডারকে যৌন স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়। তখন পর্যন্ত আইসিডিতে ট্রান্সজেন্ডার বা জেন্ডার আইডেনটিটি ডিসঅর্ডারকে ‘মানসিক ও আচরণগত ব্যাধি’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে ২০১৯ সালে তা সংশোধন করে ট্রান্সজেন্ডারকে মানসিক ও আচরণগত ব্যাধি নয় বলে সিদ্ধান্ত দেয় ডব্লিউএইচও।
ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ ও ওয়ার্ল্ড প্রফেশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর ট্রান্সজেন্ডার হেলথের প্রেসিডেন্ট জেমিসন গ্রিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম টাইমকে বলেন, ‘লৈঙ্গিক অসংগতি নিয়ে বেড়ে ওঠা একজন ব্যক্তি হিসেবে আমি খুবই স্পষ্ট যে ট্রান্সজেন্ডার কোনো মানসিক সমস্যা নয়। পারিপার্শ্বিকতার কারণে ট্রান্সজেন্ডাররা মানসিক সমস্যায় ভোগেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক একাডেমিক মেডিকেল সেন্টার ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানায়, ট্রান্সজেন্ডার মানসিক রোগ নয়। কিন্তু যাঁরা ট্রান্সজেন্ডার, তাঁরা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন। যেমন, জেন্ডার ডিসফোরিয়া ও বিভিন্ন ধরনের বৈষম্য। এসব বিষয় তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।
একজন ব্যক্তির জন্মগত যৌন পরিচয়ের সঙ্গে সামাজিক লৈঙ্গিক পরিচয়ের ভিন্নতা ধরা পড়লে তিনি ট্রান্সজেন্ডার। এই অমিল দূর করার জন্য যৌনাঙ্গে সার্জারিসহ যথাযথ চিকিৎসা নেওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যক্তির যে অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা হয় তাঁকে ‘জেন্ডার ডিসফোরিয়া’ বলে। এটি শৈশব থেকে শুরু করে জীবনের যেকোনো পর্যায়ে ঘটতে পারে। এর চিকিৎসা না হলে মানসিক জটিলতাসহ নানা স্বাস্থ্যগত জটিলতা হতে পারে।
বিবিসি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে ২০১৯ সালের ২৯ মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, ট্রান্সজেন্ডারের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রজনন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লালেকে উদ্ধৃত করে বিবিসি জানায়, ট্রান্সজেন্ডার আগে মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাধিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু এটি মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা নয় বলে প্রতীয়মান হওয়ায় ট্রান্সজেন্ডারদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ভিন্ন অধ্যায়ে যুক্ত করা হয়েছে।
২০১৯ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফোরাম ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলির ৭২তম সম্মেলনে আইসিডির ১১তম সংস্করণ অনুমোদন দেওয়া হয়। এই সংস্করণে ট্রান্সজেন্ডারকে মানসিক ও আচরণগত ব্যাধি বা রোগ থেকে বাদ দিয়ে যৌন স্বাস্থ্য অধ্যায়ের অধীনে জেন্ডার ইনকনগ্রুয়েন্স বা লৈঙ্গিক অসামঞ্জস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট ঘুরে দেখা যায়, ট্রান্সজেন্ডারকে মানসিক ও আচরণগত ব্যাধি বা রোগ থেকে বাদ দিয়ে যৌন স্বাস্থ্য অধ্যায়ের অধীনে নেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, ট্রান্স-সম্পর্কিত এবং লিঙ্গবৈচিত্র্যের ব্যাপারগুলো মানসিক অসুস্থতার শর্ত নয়। তাদের এভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা বিশাল কলঙ্কের কারণ হতে পারে। জেন্ডার ইন কনগ্রুয়েন্স বা লৈঙ্গিক অসামঞ্জস্যকে বয়সভেদে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. কৈশোর বা প্রাপ্তবয়সের ব্যক্তিরা সামাজিক লৈঙ্গিক পরিচয় ও জৈবিক লৈঙ্গিক পরিচয়ের মধ্যে জোরালো ও স্থায়ী অমিল খুঁজে পায়। এর ফলে ব্যক্তি তার কাঙ্ক্ষিত সামাজিক লৈঙ্গিক পরিচয় গ্রহণের জন্য হরমোনাল ট্রিটমেন্ট, অস্ত্রোপচারসহ অন্যান্য চিকিৎসার দ্বারস্থ হয়। বয়ঃসন্ধি শুরু হওয়ার আগে এটির চিকিৎসা সম্ভব নয়।
২. শৈশবে বয়ঃসন্ধি শুরু হওয়ার আগে লৈঙ্গিক অসামঞ্জস্য দেখা যায়। শিশু ভিন্ন সামাজিক লৈঙ্গিক পরিচয় গ্রহণ করতে চায় এবং সেগুলোকেই প্রাধান্য দেয় এবং নিজের লৈঙ্গিক পরিচয় পরিবতর্ন করতে চায়। শৈশবে লিঙ্গ অসংগতির এই অনুভূতি শিশুর মধ্যে কমপক্ষে দুই বছর স্থায়ী হতে হয়।
ওপরের আলোচনা থেকে এটি স্পষ্ট যে মানুষ ট্রান্সজেন্ডার হয় শারীরিক পরিবর্তনের কারণে। পূর্বে এটিকে মানসিক স্বাস্থ্যের অন্তর্গত বলে দাবি করা হলেও গবেষণা বলছে, এর সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নেই। বিশ্ব সংস্থাও ২০১৯ সালে এটিকে মানসিক স্বাস্থ্য থেকে বের করে যৌন স্বাস্থ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছে।
বাংলাদেশে এক হিন্দু নারীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে দাবিতে মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে ১৮ সেকেন্ডের ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে, রক্তাক্ত এক নারীকে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দীপক শর্মা নামের একটি ভারতীয় এক্স হ্যান্ডল থেকে ভিডিওটি টুইট করে দাবি করা হয়, ‘ভিড
১ দিন আগেআওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সাবরিনা চৌধুরী নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় এমন দাবিতে স্ক্রিনশটটি পোস্ট করে লেখেন, ‘Sabnam Faria কিছুক্ষণ আগে একটা পোস্ট করলেন ৫ মিনিট পর ডিলিট করে দিলেন।’
২ দিন আগেএলিস থমাস নামের এক ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স গবেষকের বরাত দিয়ে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছে এআই পরিচালিত বট নেটওয়ার্ক।
৩ দিন আগেগত বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ‘প্রবাসী জীবন’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটি আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক শেয়ার হয়েছে। রিয়েকশন পড়েছে ৪ হাজারের বেশি। ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৪২ হাজার বার।
৩ দিন আগে