ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
মাথার খুলি একটা, সামনে ও পেছনে মুখ দুইটা- এমন এক ব্যক্তির ধারণা একশতকের বেশি সময় ধরে গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়ে আসছে। ১৮৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পত্রিকায় এমন একজনের গল্প ছাপা হয়েছে। এডওয়ার্ড মরড্রেক নামে ওই ব্যক্তিকে নিয়ে টেলিভিশন সিরিজ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে দুমুখো মানুষ এডওয়ার্ড মরড্রেক ইন্টারনেটেও জায়গা করে নিয়েছে।
তাকে ঘিরে গল্পটি এরকম- উনিশ শতকে পৃথিবীর মুখ দেখেছিলেন এই ব্যক্তি। কিন্তু সবার মতো তার মুখ একটি ছিল না, বরং উভয় দিকে- মাথার সামনে ও পিছনের দিকে ছিল। তাঁর মুখ ছিল দুটি। তাঁর নিজের ধারণা ছিল, পেছনের মুখটি শয়তানের মুখ। কারণ, সেটি নাকি রাতের বেলায় ঘুমোতে দিতো না, কানের কাছে ফিস ফিস করতো। তাঁর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিলনা সে মুখের ওপর। অনেক সুত্র অনুযায়ী, অবাঞ্ছিত মুখটি খাওয়া-দাওয়া করতে পারতো না। এডওয়ার্ড যখন খুশি থাকতেন, তখন অন্য মুখটি নাকি কাঁদতো, আর তিনি যখন কাঁদতেন তখন অন্যটি আনন্দে হাসতো। তার মানে, আবেগ-অনুভূতি সম্পূর্ণ বিপরীত। এতে তিনি অতিষ্ট হয়ে অনেক ডক্টরকে অস্ত্রোপচার করে তার পেছনের মুখটি কেটে ফেলার অনুরোধ করেন, কিন্তু কেউ সাহস করেনি। প্রচণ্ড ডিপ্রেশনে ভুগে মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি আত্মহত্যা করেন।
এই দাবি করে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া পোস্ট ঘুরে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) বিকাল ৫টা পর্যন্ত ২ হাজার প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। এটি শেয়ার হয়েছে প্রায় ৭০ বার। এতে মন্তব্য পড়েছে ৮৬টি। এসব মন্তব্যের অধিকাংশেই নেটিজেনরা ঘটনাটির সত্যতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। কেউ কেউ আবার ঘটনাটি মিথ্যা বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এডওয়ার্ড মরড্রেক নামে বাস্তবে দুমুখো কোনো মানুষের অস্তিত্ব ছিল না- এটি একটি কাল্পনিক চরিত্র, যার স্রষ্টা আমেরিকান লেখক চার্লস লটিন হিলড্রেক। দ্য বোস্টন সানডে পোস্ট পত্রিকায় ১৮৯৫ সালের ৮ ডিসেম্বর এডওয়ার্ড মরড্রেক নিয়ে তার গল্পটি প্রকাশিত হয়েছিল।
এডওয়ার্ড মরডেককে যেভাবে খুঁজে পাওয়া গেল
কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে জনপ্রিয় মিথ-বাস্টিং ওয়েবসাইট মিউজিয়াম অব হোয়াক্সেসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। তাতে এডওয়ার্ড মরড্রেকের ঘটনার সত্যতা নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান তুলে ধরা হয়। এতে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ১৮৯৬ সালের অক্টোবরে জর্জ এম গৌলাদ ও ওয়াল্টার এল পাইল নামে দুজন চিকিৎসক অ্যানোমালিস অ্যান্ড কিউরিসিটিস অব মেডিসিন নামে বই লেখেন। চিকিৎসা সংক্রান্ত উদ্ভট সব ঘটনা নিয়ে লেখা বইটিতে মরড্রেকের ঘটনার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।
জর্জ এম গৌলাদ ও ওয়াল্টার এল পাইল তাদের বইয়ে মরড্রেকের ঘটনাটির কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র উল্লেখ করেননি। তবে মিউজিয়াম অব হোয়াক্সেসের ইতিহাসবিদ এবং কিউরেটর অ্যালেক্স বোয়েস উল্লিখিত ঘটনাটি দ্য বোস্টন সানডে পোস্ট পত্রিকায় খুঁজে পান। ১৮৯৫ সালের ৮ ডিসেম্বর পত্রিকাটিতে ঘটনাটি প্রথম প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটিতে মরড্রেকের ঘটনাটি লিখেছিলেন কবি চার্লস লোটিন হিলড্রেথ। কিছুদিন পরে যুক্তরাষ্ট্রের পার্সনস ডেইলি সান, দ্যা ডেকাটুর হেরাল্ডসহ অন্যান্য পত্রিকাতেও ওই ঘটনা প্রকাশিত হয়।
মরড্রেকের ঘটনা নিয়ে চার্লস লোটিন হিলড্রেথ লেখেন, সম্ভ্রান্ত ইংরেজ পরিবারে জন্মগ্রহণ নিয়েছিলেন মরড্রেক। তিনি বুদ্ধিমান, সংগীতে প্রতিভাধর এবং সুদর্শন ছিলেন। কিন্তু বিরল রোগে ভুগছিলেন– মাথার পেছনে দ্বিতীয় মুখ নিয়ে জন্মেছিলেন তিনি। অন্যদের কাছে মুখ প্রকাশ করতে ভয় পেয়ে এবং কোনো চিকিৎসা না পেয়ে ২৩ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেছিলেন।
এ ঘটনার সূত্র হিসেবে রয়্যাল সায়েন্টিফিক সোসাইটির নাম উল্লেখ করেছেন চার্লস লোটিন হিলড্রেথ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ইউএসএ টুডে মরড্রেকের ঘটনাটি নিয়ে অনুসন্ধান করে বলছে, চার্লস লোটিন হিলড্রেথ রয়্যাল সায়েন্টিফিক সোসাইটিকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করলেও এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ, রয়্যাল সায়েন্টিফিক সোসাইটি নামে একমাত্র যে প্রতিষ্ঠানটি পাওয়া যায়, সেটির প্রতিষ্ঠা ১৯৭০ সালে। বিপরীতে মরড্রেকের ঘটনা ১৮৯৫ সালের। আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানেও ১৯৭০ সালের আগে প্রতিষ্ঠিত রয়্যাল সায়েন্টিফিক সোসাইটি নামে কোনো প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মরড্রেকের ঘটনাটির লেখক চার্লস লোটিন হিলড্রেথ সম্পর্কে মিউজিয়াম অফ হোয়াক্সেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, চার্লস লোটিন হিলড্রেথ কেবল কবিই ছিলেন না, তিনি কল্পকাহিনীও লিখতেন। অনেক ছোটগল্প সে সময়ে সংবাদপত্রে ছাপা হতো। সেসব ছোটগল্প এখনকার বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর সঙ্গে তুলনীয়। এমনকি তার কবিতাগুলো পরাবস্তাব ঘটনার ওপর লেখা হতো। এসব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ থেকে প্রতীয়মান হয়, এডওয়ার্ড মরড্রেক একটি কল্পচরিত্র, যার স্রষ্টা চার্লস লোটিন হিলড্রেথ নিজেই।
মরড্রেক দাবি করে প্রচারিত ছবিগুলো সম্পর্কে যা জানা যায়
মরড্রেক দাবি করে প্রচারিত ছবিগুলোর রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্যানোপটিকাম নামের ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৬ সালের ১৫ জুন প্রকাশিত দুই মিনিটের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, ভিডিওটি জার্মানির হামবুর্গ শহরে প্যানোপটিকাম জাদুঘর থেকে ধারণ করা। এখানে মোমের তৈরি ভাস্কর্য রয়েছে। এসব ভাস্কর্যের মধ্যে মরড্রেকের দুই মাথার ছবি ছিল।
ভিডিওটি দেখুন এখানে।
টম কুয়েবলার নামে একজন ভাস্কর মরড্রেকের মাথার খুলি দাবি করে প্রচারিত ওই ভাস্কর্যের নির্মাতা। ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর তার ইনস্টাগ্রামে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
অনুরূপভাবে মরড্রেক দাবি করে প্রচারিত আরেকটি ছবি চেক রিপাবলিকের একটি ওয়েবসাইটে মিউজিয়াম অব এবনরমাল পিপল, ওয়াক্স ওয়ার্ক বা মোমের কাজ হিসেবেও খুঁজে পাওয়া যায়।
মরড্রেকের ঘটনার ভিন্নরূপ: টেলিভিশন শো, সাহিত্যকর্ম
বার্তা সংস্থা রয়টার্সে ২০২০ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মরড্রেকের পেছনের মুখটি এক সুন্দরী তরুণীর ছিল দাবি করে আরেকটি সংস্করণ পাওয়া যায়। ২০০১ সালে স্প্যানিশ লেখক আইরিন গ্রেস মরড্রেক ও লা কন্দিসিওঁ দে ইনফেম নামে এক উপন্যাস লেখেন। আমেরিকান সংগীতশিল্পী টম ওয়েটস ২০০২ সালে ‘পুওর এডওয়ার্ড’ নামে তার একটি এলবামের জন্য গান লেখেন। ২০১৪ সালে এডওয়ার্ড মরড্রেক নামে আমেরিকায় দুই পর্বের একটি হরর টেলিভিশন শো মুক্তি পায়। ২০১৬ সালে মুক্তি পায় ‘এডওয়ার্ড দ্য ড্যামড’ নামে একটি মিস্ট্রি থ্রিলার। এডওয়ার্ড মরড্রেককে নিয়ে ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয় রাশিয়ান লেখক হেলগা রোয়েস্টনের উপন্যাস ‘দ্য টু ফেসড আউটকাস্ট’।
চিকিৎসাবিজ্ঞান যা বলে
মরড্রেকের ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ডিপ্রোসোপাস (Diprosopus) নামে একটি পরিভাষা খুঁজে পাওয়া যায়। এই গ্রীক শব্দের অর্থ দ্বৈত মুখ। এর ফলে পুরো মুখ কিংবা মুখমণ্ডলের অংশবিশেষের প্রতিলিপি তৈরি হয়। এই রোগে আক্রান্ত শিশুর গলার নিচ থেকে সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ একই, তবে মুখের অংশ থাকে দুটি। এখন পর্যন্ত এমন ৩৫টি শিশু জন্মের রেকর্ড পাওয়া যায়। তবে মাথার খুলির পেছনে দ্বিতীয় মুখের অস্তিত্বের খোঁজ এখনো মেলেনি।
ডিপ্রোসোপাস সম্পর্কে জানতে আরও পড়ুন এখানে।
সিদ্ধান্ত
এডওয়ার্ড মরড্রেক নামে মাথার পেছনে দ্বিতীয় মুখওয়ালা দুমুখো মানুষের কোনো অস্তিত্ব নেই। ১৮৯৫ সালে আমেরিকান কবি ও কল্পকাহিনী লেখক চার্লস লোটিন হিলড্রেথের লেখায় তাঁর জন্ম। ঘটনাটি কোনো সূত্র ছাড়া চিকিৎসা সংক্রান্ত উদ্ভট সব ঘটনা নিয়ে দুজন চিকিৎসকের লেখা অ্যানোমালিস অ্যান্ড কিউরিসিটিস অব মেডিসিন নামের বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর থেকেই এটি বাস্তব দাবিতে প্রচার হয়ে আসছে। এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে মোম ও ভাস্করের তৈরি বিভিন্ন ভাস্কর্যের ছবি।
মাথার খুলি একটা, সামনে ও পেছনে মুখ দুইটা- এমন এক ব্যক্তির ধারণা একশতকের বেশি সময় ধরে গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়ে আসছে। ১৮৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পত্রিকায় এমন একজনের গল্প ছাপা হয়েছে। এডওয়ার্ড মরড্রেক নামে ওই ব্যক্তিকে নিয়ে টেলিভিশন সিরিজ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে দুমুখো মানুষ এডওয়ার্ড মরড্রেক ইন্টারনেটেও জায়গা করে নিয়েছে।
তাকে ঘিরে গল্পটি এরকম- উনিশ শতকে পৃথিবীর মুখ দেখেছিলেন এই ব্যক্তি। কিন্তু সবার মতো তার মুখ একটি ছিল না, বরং উভয় দিকে- মাথার সামনে ও পিছনের দিকে ছিল। তাঁর মুখ ছিল দুটি। তাঁর নিজের ধারণা ছিল, পেছনের মুখটি শয়তানের মুখ। কারণ, সেটি নাকি রাতের বেলায় ঘুমোতে দিতো না, কানের কাছে ফিস ফিস করতো। তাঁর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিলনা সে মুখের ওপর। অনেক সুত্র অনুযায়ী, অবাঞ্ছিত মুখটি খাওয়া-দাওয়া করতে পারতো না। এডওয়ার্ড যখন খুশি থাকতেন, তখন অন্য মুখটি নাকি কাঁদতো, আর তিনি যখন কাঁদতেন তখন অন্যটি আনন্দে হাসতো। তার মানে, আবেগ-অনুভূতি সম্পূর্ণ বিপরীত। এতে তিনি অতিষ্ট হয়ে অনেক ডক্টরকে অস্ত্রোপচার করে তার পেছনের মুখটি কেটে ফেলার অনুরোধ করেন, কিন্তু কেউ সাহস করেনি। প্রচণ্ড ডিপ্রেশনে ভুগে মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি আত্মহত্যা করেন।
এই দাবি করে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া পোস্ট ঘুরে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) বিকাল ৫টা পর্যন্ত ২ হাজার প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। এটি শেয়ার হয়েছে প্রায় ৭০ বার। এতে মন্তব্য পড়েছে ৮৬টি। এসব মন্তব্যের অধিকাংশেই নেটিজেনরা ঘটনাটির সত্যতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। কেউ কেউ আবার ঘটনাটি মিথ্যা বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এডওয়ার্ড মরড্রেক নামে বাস্তবে দুমুখো কোনো মানুষের অস্তিত্ব ছিল না- এটি একটি কাল্পনিক চরিত্র, যার স্রষ্টা আমেরিকান লেখক চার্লস লটিন হিলড্রেক। দ্য বোস্টন সানডে পোস্ট পত্রিকায় ১৮৯৫ সালের ৮ ডিসেম্বর এডওয়ার্ড মরড্রেক নিয়ে তার গল্পটি প্রকাশিত হয়েছিল।
এডওয়ার্ড মরডেককে যেভাবে খুঁজে পাওয়া গেল
কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে জনপ্রিয় মিথ-বাস্টিং ওয়েবসাইট মিউজিয়াম অব হোয়াক্সেসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। তাতে এডওয়ার্ড মরড্রেকের ঘটনার সত্যতা নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান তুলে ধরা হয়। এতে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ১৮৯৬ সালের অক্টোবরে জর্জ এম গৌলাদ ও ওয়াল্টার এল পাইল নামে দুজন চিকিৎসক অ্যানোমালিস অ্যান্ড কিউরিসিটিস অব মেডিসিন নামে বই লেখেন। চিকিৎসা সংক্রান্ত উদ্ভট সব ঘটনা নিয়ে লেখা বইটিতে মরড্রেকের ঘটনার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।
জর্জ এম গৌলাদ ও ওয়াল্টার এল পাইল তাদের বইয়ে মরড্রেকের ঘটনাটির কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র উল্লেখ করেননি। তবে মিউজিয়াম অব হোয়াক্সেসের ইতিহাসবিদ এবং কিউরেটর অ্যালেক্স বোয়েস উল্লিখিত ঘটনাটি দ্য বোস্টন সানডে পোস্ট পত্রিকায় খুঁজে পান। ১৮৯৫ সালের ৮ ডিসেম্বর পত্রিকাটিতে ঘটনাটি প্রথম প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটিতে মরড্রেকের ঘটনাটি লিখেছিলেন কবি চার্লস লোটিন হিলড্রেথ। কিছুদিন পরে যুক্তরাষ্ট্রের পার্সনস ডেইলি সান, দ্যা ডেকাটুর হেরাল্ডসহ অন্যান্য পত্রিকাতেও ওই ঘটনা প্রকাশিত হয়।
মরড্রেকের ঘটনা নিয়ে চার্লস লোটিন হিলড্রেথ লেখেন, সম্ভ্রান্ত ইংরেজ পরিবারে জন্মগ্রহণ নিয়েছিলেন মরড্রেক। তিনি বুদ্ধিমান, সংগীতে প্রতিভাধর এবং সুদর্শন ছিলেন। কিন্তু বিরল রোগে ভুগছিলেন– মাথার পেছনে দ্বিতীয় মুখ নিয়ে জন্মেছিলেন তিনি। অন্যদের কাছে মুখ প্রকাশ করতে ভয় পেয়ে এবং কোনো চিকিৎসা না পেয়ে ২৩ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেছিলেন।
এ ঘটনার সূত্র হিসেবে রয়্যাল সায়েন্টিফিক সোসাইটির নাম উল্লেখ করেছেন চার্লস লোটিন হিলড্রেথ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ইউএসএ টুডে মরড্রেকের ঘটনাটি নিয়ে অনুসন্ধান করে বলছে, চার্লস লোটিন হিলড্রেথ রয়্যাল সায়েন্টিফিক সোসাইটিকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করলেও এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ, রয়্যাল সায়েন্টিফিক সোসাইটি নামে একমাত্র যে প্রতিষ্ঠানটি পাওয়া যায়, সেটির প্রতিষ্ঠা ১৯৭০ সালে। বিপরীতে মরড্রেকের ঘটনা ১৮৯৫ সালের। আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানেও ১৯৭০ সালের আগে প্রতিষ্ঠিত রয়্যাল সায়েন্টিফিক সোসাইটি নামে কোনো প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মরড্রেকের ঘটনাটির লেখক চার্লস লোটিন হিলড্রেথ সম্পর্কে মিউজিয়াম অফ হোয়াক্সেসের প্রতিবেদনে বলা হয়, চার্লস লোটিন হিলড্রেথ কেবল কবিই ছিলেন না, তিনি কল্পকাহিনীও লিখতেন। অনেক ছোটগল্প সে সময়ে সংবাদপত্রে ছাপা হতো। সেসব ছোটগল্প এখনকার বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর সঙ্গে তুলনীয়। এমনকি তার কবিতাগুলো পরাবস্তাব ঘটনার ওপর লেখা হতো। এসব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ থেকে প্রতীয়মান হয়, এডওয়ার্ড মরড্রেক একটি কল্পচরিত্র, যার স্রষ্টা চার্লস লোটিন হিলড্রেথ নিজেই।
মরড্রেক দাবি করে প্রচারিত ছবিগুলো সম্পর্কে যা জানা যায়
মরড্রেক দাবি করে প্রচারিত ছবিগুলোর রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্যানোপটিকাম নামের ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৬ সালের ১৫ জুন প্রকাশিত দুই মিনিটের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, ভিডিওটি জার্মানির হামবুর্গ শহরে প্যানোপটিকাম জাদুঘর থেকে ধারণ করা। এখানে মোমের তৈরি ভাস্কর্য রয়েছে। এসব ভাস্কর্যের মধ্যে মরড্রেকের দুই মাথার ছবি ছিল।
ভিডিওটি দেখুন এখানে।
টম কুয়েবলার নামে একজন ভাস্কর মরড্রেকের মাথার খুলি দাবি করে প্রচারিত ওই ভাস্কর্যের নির্মাতা। ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর তার ইনস্টাগ্রামে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
অনুরূপভাবে মরড্রেক দাবি করে প্রচারিত আরেকটি ছবি চেক রিপাবলিকের একটি ওয়েবসাইটে মিউজিয়াম অব এবনরমাল পিপল, ওয়াক্স ওয়ার্ক বা মোমের কাজ হিসেবেও খুঁজে পাওয়া যায়।
মরড্রেকের ঘটনার ভিন্নরূপ: টেলিভিশন শো, সাহিত্যকর্ম
বার্তা সংস্থা রয়টার্সে ২০২০ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মরড্রেকের পেছনের মুখটি এক সুন্দরী তরুণীর ছিল দাবি করে আরেকটি সংস্করণ পাওয়া যায়। ২০০১ সালে স্প্যানিশ লেখক আইরিন গ্রেস মরড্রেক ও লা কন্দিসিওঁ দে ইনফেম নামে এক উপন্যাস লেখেন। আমেরিকান সংগীতশিল্পী টম ওয়েটস ২০০২ সালে ‘পুওর এডওয়ার্ড’ নামে তার একটি এলবামের জন্য গান লেখেন। ২০১৪ সালে এডওয়ার্ড মরড্রেক নামে আমেরিকায় দুই পর্বের একটি হরর টেলিভিশন শো মুক্তি পায়। ২০১৬ সালে মুক্তি পায় ‘এডওয়ার্ড দ্য ড্যামড’ নামে একটি মিস্ট্রি থ্রিলার। এডওয়ার্ড মরড্রেককে নিয়ে ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয় রাশিয়ান লেখক হেলগা রোয়েস্টনের উপন্যাস ‘দ্য টু ফেসড আউটকাস্ট’।
চিকিৎসাবিজ্ঞান যা বলে
মরড্রেকের ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ডিপ্রোসোপাস (Diprosopus) নামে একটি পরিভাষা খুঁজে পাওয়া যায়। এই গ্রীক শব্দের অর্থ দ্বৈত মুখ। এর ফলে পুরো মুখ কিংবা মুখমণ্ডলের অংশবিশেষের প্রতিলিপি তৈরি হয়। এই রোগে আক্রান্ত শিশুর গলার নিচ থেকে সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ একই, তবে মুখের অংশ থাকে দুটি। এখন পর্যন্ত এমন ৩৫টি শিশু জন্মের রেকর্ড পাওয়া যায়। তবে মাথার খুলির পেছনে দ্বিতীয় মুখের অস্তিত্বের খোঁজ এখনো মেলেনি।
ডিপ্রোসোপাস সম্পর্কে জানতে আরও পড়ুন এখানে।
সিদ্ধান্ত
এডওয়ার্ড মরড্রেক নামে মাথার পেছনে দ্বিতীয় মুখওয়ালা দুমুখো মানুষের কোনো অস্তিত্ব নেই। ১৮৯৫ সালে আমেরিকান কবি ও কল্পকাহিনী লেখক চার্লস লোটিন হিলড্রেথের লেখায় তাঁর জন্ম। ঘটনাটি কোনো সূত্র ছাড়া চিকিৎসা সংক্রান্ত উদ্ভট সব ঘটনা নিয়ে দুজন চিকিৎসকের লেখা অ্যানোমালিস অ্যান্ড কিউরিসিটিস অব মেডিসিন নামের বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর থেকেই এটি বাস্তব দাবিতে প্রচার হয়ে আসছে। এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে মোম ও ভাস্করের তৈরি বিভিন্ন ভাস্কর্যের ছবি।
বাংলাদেশে এক হিন্দু নারীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে দাবিতে মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে ১৮ সেকেন্ডের ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে, রক্তাক্ত এক নারীকে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দীপক শর্মা নামের একটি ভারতীয় এক্স হ্যান্ডল থেকে ভিডিওটি টুইট করে দাবি করা হয়, ‘ভিড
১ দিন আগেআওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সাবরিনা চৌধুরী নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় এমন দাবিতে স্ক্রিনশটটি পোস্ট করে লেখেন, ‘Sabnam Faria কিছুক্ষণ আগে একটা পোস্ট করলেন ৫ মিনিট পর ডিলিট করে দিলেন।’
২ দিন আগেএলিস থমাস নামের এক ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স গবেষকের বরাত দিয়ে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছে এআই পরিচালিত বট নেটওয়ার্ক।
৩ দিন আগেগত বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ‘প্রবাসী জীবন’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটি আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক শেয়ার হয়েছে। রিয়েকশন পড়েছে ৪ হাজারের বেশি। ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৪২ হাজার বার।
৩ দিন আগে