ফেসবুকে ভাইরাল এই গল্পে নেটিজেনদের তাঁর এই অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করতে দেখা গেছে। যেমন—আনিছ তারেক বাবুল নামে একজন লিখেছেন, ‘সবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় না। কিন্তু আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়লে সমাজে সম্মান যেমন পাওয়া যায় না, তেমন ভালো (বেতন বেশি) চাকরি পাওয়া যায় না! এটাই বড় সমস্যা। কাজের বৈষম্য ও অর্থনৈতিক বৈষম্য বন্ধ করতে হবে, তবেই এমন করুন অবস্থা থেকে বের হয়ে আসা যাবে।’
জহুরুল ইসলাম আইয়াশ নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘এজন্যই শুধু চাকরীর পিছনে না ছুটে নিজের কিছু এক্সট্রা স্কিল অর্জন হতে হবে। যাতে করে কোন না কোন দিক দিয়ে জীবনটা স্বচ্ছলে যায়। যারা ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া কিংবা পড়তে পারা মানেই সব, উনি হতে পারেন সেটার একটা উদাহরণ। ভাইটির জন্য মন থেকে দোয়া থাকলো।’
আবার তাঁর এই অবস্থাকে কটাক্ষ করে রাকিবুর রহমান কনক নামে একজন লিখেছেন, ‘তবুও ঢাবির পোলাপাইন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের হাতের গোনায় ধরে না।’
ভাইরাল মাঝির আসল গল্পটি কী?
তাঁর প্রকৃত গল্পটি জানতে ফেসবুকে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে
জাতীয় দৈনিক যায়যায়দিনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। পেজে ‘মাঝিগিরি করে সংসার চালান ঢাবির ছাত্র মনিরুল’ শিরোনামে ৪ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের ভিডিও প্রতিবেদনটি ৫ এপ্রিল পোস্ট করা হয়।
ভিডিওটির প্রথম মিনিটে নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দাবি করে মনিরুল বলেন, তিনি ২০০৬–০৭ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে সিট বরাদ্দ থাকলেও ঠাঁই হয়নি সেখানে তাঁর। এ জন্য তিনি অনেক চেষ্টাও করেছিলেন। পরে থাকার জায়গার সমস্যা, আর্থিক সমস্যাসহ নানা কারণে পাঁচ মাস অনিয়মিত ক্লাস করেছেন। এরপর আর তাঁর পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা সম্ভব হয়নি।
এই ভিডিও নিয়ে সংবাদমাধ্যমটি ৬ এপ্রিল ‘
মাঝিগিরি করে সংসার চালান ঢাবির ছাত্র মনিরুল’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে ঢাবির শিক্ষার্থী দাবি করা মাঝি মনিরুল ইসলাম সম্পর্কে বলা হয়, ‘২০০৪ সালে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড থেকে ৪.১৩ পয়েন্ট পেয়ে আজিজুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এর পর থেকেই ঢাকায় এসে বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকা বাইয়ে পাঁচজনের সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী। বুড়িগঙ্গায় মাঝিগিরি অবস্থায় ২০০৬ সালে পিরোজপুরের নেছরাবাদ বলদিয়ায় আলহাজ আব্দুর রহমান ডিগ্রি কলেজ থেকে ৪.৩০ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে ইসলামিক স্টাডিজে চান্স পেয়েও অর্থের অভাবে তিন মাসের বেশি পড়তে পারেননি।’
এই প্রতিবেদন ও যায়যায়দিনের ভিডিও প্রতিবেদন থেকে এটি নিশ্চিত যে নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দাবি করা নৌকার মাঝি মনিরুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। কিন্তু ফেসবুকে ভিডিও এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিষয়টি অস্পষ্ট থাকায় ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।