ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
বাংলাদেশে চলতি বছর প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই পাঠ্যক্রম নিয়ে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনা–সমালোচনা চলছে। ফেসবুকে নতুন কারিকুলামের কার্যক্রম দাবি করে বিভিন্ন ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। যেসব ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে, এগুলো নতুন কারিকুলামের ভিত্তিতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য।
এর মধ্যে ঘাসফুল নামের একটি ফেসবুক পেজে গত শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) পোস্ট করা একটি ভিডিও আজ সোমবার (৪ ডিসেম্বর) বেলা ১২টা পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে একটি কক্ষে একজন ব্যক্তিকে ‘টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই, ফেরিওয়ালা যায়’ ছড়া কেটে নেচে গেয়ে অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে। এই ভিডিওতে প্রতিক্রিয়া পড়েছে ৬৩ হাজার, এর মধ্যে হা হা প্রতিক্রিয়াই পড়েছে ৩২ হাজার, রাগের প্রতিক্রিয়া পড়েছে ১০ হাজার। ভিডিওটি শেয়ার হয়েছে ১৬ হাজার বারের বেশি, মন্তব্য পড়েছে প্রায় ১৫ হাজার।
ভিডিওটি দেখুন এখানে।
ফ্রলিক জাকির নামের আরেকটি পেজ থেকে শিক্ষকদের নতুন কারিকুলাম বিষয়ক প্রশিক্ষণ দাবিতে আরেকটি ভিডিও প্রচার হতে দেখা যাচ্ছে। গত ৩০ নভেম্বর প্রচারিত ভিডিওটি আজ সোমবার (৪ ডিসেম্বর) বেলা ১২টা পর্যন্ত প্রায় ১৩ লাখ বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে একটি শ্রেণিকক্ষে কিছু ব্যক্তিকে ‘প্যাক প্যাক’ শব্দ করে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করতে দেখা যাচ্ছে। এ ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া পড়েছে ৯ হাজারের বেশি, এর মধ্যে হা হা প্রতিক্রিয়া পড়েছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার, দুঃখের প্রতিক্রিয়া পড়েছে ১ হাজার। ভিডিওটি শেয়ার হয়েছে ১৭ হাজার বারের বেশি, মন্তব্য পড়েছে প্রায় ২ হাজারের বেশি।
ভিডিওটি দেখুন এখানে।
এসব ভিডিওটিতে নেটিজেনরা এমন প্রশিক্ষণ ও নতুন কারিকুলামের সমালোচনা করে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওগুলোর সঙ্গে দেশে চলতি বছর শুরু হওয়া নতুন শিক্ষা কারিকুলামের কোনো সম্পর্ক নেই।
ভিডিও যাচাই ১:
ফেসবুকে ভাইরাল ‘টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই, ফেরিওয়ালা যায়’ ভিডিওটি নিয়ে ওপেন সোর্স অনুসন্ধানে এস তানজিম নামে এক ব্যক্তির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত রোবরাব (৩ ডিসেম্বর ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে করা একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। এস তানজিমের প্রোফাইলে লেখা রয়েছে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের স্বেচ্ছাসেবক ও ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের সদস্য। তিনি ‘টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই, ফেরিওয়ালা যায়’ ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘এই যে ভিডিওটা ভাইরাল হইছে, এইটা বাংলাদেশের ভিডিওই না। এই শিক্ষক ভারতের আসামের এবং ঘটনাও ভারতের। আপনারা যারা সারাদিন এই ভিডিওকে আমাদের দেশের কারিকুলামের প্রশিক্ষণ হিসেবে প্রচার করেছেন তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা। এই সেই ‘‘সাইকেল চালাই’’ এর অরিজিনাল ভিডিও।’
এস তানজিমের এ পোস্টের সূত্রে রতন লাল সাহা নামের একটি পেজ খুঁজে পাওয়া যায়। পেজটি ভারতের আসাম রাজ্যের ফকিরগঞ্জের ধুবরি থেকে পরিচালিত হয়। পেজটির পরিচালনাকারীর পেশা দেওয়া রয়েছে শিক্ষকতা। রতন লাল সাহা গত রোবরাব (৩ ডিসেম্বর) ‘টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই, ফেরিওয়ালা যায়’ ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘টিলিং টিলিং সাইক্লিং, যা ২০২২ সালে আসামে ভাইরাল হয়েছিল। এবার বাংলাদেশেও ভাইরাল।’
পেজটি ঘুরে আরও দেখা যায়, গত ১৭ নভেম্বর রতন লাল সাহা ‘এফএলএন ট্রেনিং অন পয়েম পোস্টার ফর ওরাল ল্যাঙ্গুয়েজ ডেভেলপমেন্ট’ ক্যাপশনে ভিডিওটি প্রথম পোস্ট করেন।
পরবর্তীতে ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে রতন লাল সাহার ফেসবুক পেজে দেওয়া নম্বরে তাঁর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে থেকে যোগাযোগ করা হয়। রতন লাল সাহা আজকের পত্রিকাকে জানান, তিনি আসামের আম্বারি শিশু কল্যাণ এলপি স্কুলের সহকারী শিক্ষক। পাশাপাশি তিনি শিক্ষকদের প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করেন। বাংলাদেশের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রশিক্ষক হিসেবে তাঁকেই দেখা যাচ্ছে। এটি শিশুদের জন্য ভারত সরকারের জয়ফুল লার্নিং বা আনন্দদায়ক শিক্ষণ কার্যক্রমের এফএলএন ট্রেনিং বা ফান্ডামেন্টাল লিটারেসি অ্যান্ড নিউমেরাসি প্রশিক্ষণের অংশ। এখানে যে ছড়াটি আবৃত্তি করা হয়েছে, সেটি আসামের প্রথম শ্রেণির অঙ্কুরণ নামের একটি বইয়ে রয়েছে। বইটির ৪২ নম্বর পৃষ্ঠায় ছড়াটি রয়েছে। এ কবিতা রতন লালের মাধ্যমে ২০২২ সালেও আসামে ভাইরাল হয়েছিল। ওই বছরের ১৭ আগস্ট তিনি এ ছড়ার মাধ্যমে পাঠদান দিয়ে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাওয়ার্ডও পান।
রতন লাল সাহা আরও বলেন, ‘এ ধরনের প্রশিক্ষণ ও পাঠ্যক্রম শিশুদের জন্য অনেক উপকারী। শিশুরা এর মাধ্যমে আনন্দের সঙ্গে জ্ঞান অর্জন করতে পারে।’ তাঁর স্কুলে তিনি এ প্রশিক্ষণের ভালো ফল পেয়েছেন। স্কুলটিতে শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি থাকে। এমনও হয়েছে, তিনি কোনো দিন ক্লাস না নিলে শিশুরা মিডডে মিল (মিডডে মিল ভারতে স্কুল খাবার প্রোগ্রাম, যা দেশব্যাপী স্কুলগামী শিশুদের পুষ্টির অবস্থাকে আরও উন্নত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে) নেওয়া থেকে বিরত থাকে। পরবর্তীতে তিনি ক্লাস নেবেন এমন আশ্বাস দিয়ে শিশুদের মিডডে মিল খাইয়েছেন— এমন দাবি রতন লালের।
এ ছাড়া ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, যে কক্ষে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে সেখানে ঝোলানো ব্যানারেও ধুবরি, আসাম শব্দগুলো রয়েছে।
ওপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট, ‘টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই, ফেরিওয়ালা যায়’ ভিডিওটি বাংলাদেশের শিক্ষকদের নতুন কারিকুলামের ওপর প্রশিক্ষণের কোনো ভিডিও নয়।
ভিডিও যাচাই ২:
এ ভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওটি যে শ্রেণিকক্ষে ধারণ করা হয়েছে, সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক (গণিত) প্রশিক্ষণ শীর্ষক একটি ব্যানার। ব্যানারে আরও লেখা রয়েছে, ‘৬ দিনব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল ব্যবহার করে’। ব্যানারটির ওপরে ডান কোণায় মুজিব বর্ষের ও বাম কোণায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের লোগো দেখা যায়। এ ব্যানারটির সূত্রে কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে গাজীপুর সিটি (Gazipur City) নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের ১১ মার্চ পোস্ট করা একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা আছে, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয় ভিত্তিক (গণিত) প্রশিক্ষণ চলছে।’ পোস্টটিতে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য নেই।
তবে প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে সে সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬ দিনব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক (গণিত) প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এ প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে।
ভিডিওটি নিয়ে ওই সময়ও ফেসবুকে আলোচনা–সমালোচনা হতে দেখা যায়। যেমন, ভিডিওটির সমর্থনে টেকনাফের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নূর মোহাম্মদ লেখেন, ‘সারা দেশে উপজেলা রিসোর্স সেন্টারগুলোতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৬ (ছয়) দিনব্যাপী অলিম্পিয়াড কৌশল ব্যবহার করে বিষয় ভিত্তিক ‘‘গণিত’’ প্রশিক্ষণ চলছে। প্রশিক্ষণটির ব্যানারে শিরা ভাগেই লেখা আছে “আনন্দে গণিত শিখি”। কোমলমতি শিশুদের গণিত–ভীতি দূর করা এবং আনন্দদায়ক পরিবেশে বিভিন্ন গেমের মাধ্যমে গণিতের জটিল বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছে সহজভাবে উপস্থাপনের জন্য প্রশিক্ষণটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রশিক্ষণের একটি অংশে দশমিক ভগ্নাংশের ধারণা দেওয়া জন্য মা ও বাচ্চা হাঁসের একটি গেম রোল প্লে করা হয়েছে। যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় কিছু অসুস্থ প্রকৃতির মানুষ বিষয়টি না বুঝেই প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল করছে, যা খুবই দুঃখজনক। ভাইরাল রোগে আক্রান্ত এসব নোংরা মানসিকতার মানুষগুলো দেশে কিছু একটা হলেই বাছবিচার না করেই ট্রলের প্রতিযোগিতায় নেমে যান। অনেকের ট্রলের ভাষা এতই দুর্গন্ধযুক্ত যে, যা দেখলে তাদেরকে রুচিবোধ সম্পন্ন মানুষ বলে প্রতীয়মান হয় না।’
আবার ভিডিওটির সমালোচনা করে কুষ্টিয়ায় অবস্থিত রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক মুফরাদ হোসাইন অলিন্দ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমার ঠিক জানা নেই, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এভাবেই হয় কিনা!? যদি হয়েও থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে আমরা কোমায় চলে গিয়েছি। এভাবে হতে পারে না! আবর্জনা দিয়ে ভরে যাওয়া সিস্টেম আবর্জনা দিয়েই পরিষ্কার করার কথা ভাবাটা বাতুলতা। কারা করে এই ট্রেনিং ডিজাইন? এটা বোধগম্য হচ্ছে না। কতটা কেয়ারলেস ফুল হলে মাস এডুকেশন নিয়ে এ রকম করা যায়! এই শিক্ষকদের জন্য আমার সিম্প্যাথি আসছে। ভীষণ বিব্রত বোধ করছি।’
বদলগাছি তরুণ শিক্ষক নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে একই বছরের ৬ অক্টোবর একটি পোস্ট খুঁজে পায়। এতে উল্লেখিত তথ্যানুযায়ী, পোস্টটি ৬ দিনব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়–ভিত্তিক (গণিত) প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত। এ প্রশিক্ষণ নওগাঁর বদলগাছি উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। এ পোস্টে সংযুক্ত ভিডিওতে প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া শিক্ষকদের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিতে দেখা যায়। তবে আলোচিত ভিডিওটি সেখানে পাওয়া যায়নি। পোস্টে সংযুক্ত একটি ছবিতে ভাইরাল ভিডিওতে থাকা ব্যানারটি দেখা যায়। ব্যানারটি থেকে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে।
এসব পোস্ট থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, বাংলাদেশের শিক্ষকদের নতুন কারিকুলামের ওপর প্রশিক্ষণের দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সঙ্গে নতুন কারিকুলামের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং ভিডিওটি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উদ্যোগে বাস্তবায়িত ৬ দিনব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক (গণিত) প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সময়ে ধারণকৃত।
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বক্তব্য
গত রোববার (৩ ডিসেম্বর) এনসিটিবির সচিব মোসা. নাজমা আখতার স্বাক্ষরিত একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচার করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে এনসিটিবি। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা প্রচার সংবলিত কনটেন্ট আপলোড, শেয়ার বা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। হিন্দি গানের সঙ্গে স্কুলের পোশাক পরা কিছু ছেলেমেয়ে ও ব্যক্তির অশ্লীল নাচ আপলোড করে বলা হচ্ছে, শিক্ষাক্রমের নির্দেশনা, যা মিথ্যা। কিছু লোক ব্যাঙের লাফ বা হাঁসের ডাক দিচ্ছে—এমন ভিডিও আপলোড করে বলা হচ্ছে, এটি নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশ, যা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার।
এনসিটিবির এই বিজ্ঞপ্তির খবর আজকের পত্রিকাসহ দেশের প্রায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশে চলতি বছর প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আগামী বছর বাস্তবায়ন করা হবে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। এ নতুন পাঠ্যক্রম বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্তত দুটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভিডিওগুলোর সঙ্গে নতুন কারিকুলামের কোনো সম্পর্ক নেই। এর একটি ভিডিও ভারতের আসামের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের এবং অন্যটি ২০২২ সালের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উদ্যোগে বাস্তবায়িত ৬ দিনব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক (গণিত) প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের অংশ।
বাংলাদেশে চলতি বছর প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই পাঠ্যক্রম নিয়ে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনা–সমালোচনা চলছে। ফেসবুকে নতুন কারিকুলামের কার্যক্রম দাবি করে বিভিন্ন ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। যেসব ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে, এগুলো নতুন কারিকুলামের ভিত্তিতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দৃশ্য।
এর মধ্যে ঘাসফুল নামের একটি ফেসবুক পেজে গত শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) পোস্ট করা একটি ভিডিও আজ সোমবার (৪ ডিসেম্বর) বেলা ১২টা পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে একটি কক্ষে একজন ব্যক্তিকে ‘টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই, ফেরিওয়ালা যায়’ ছড়া কেটে নেচে গেয়ে অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে। এই ভিডিওতে প্রতিক্রিয়া পড়েছে ৬৩ হাজার, এর মধ্যে হা হা প্রতিক্রিয়াই পড়েছে ৩২ হাজার, রাগের প্রতিক্রিয়া পড়েছে ১০ হাজার। ভিডিওটি শেয়ার হয়েছে ১৬ হাজার বারের বেশি, মন্তব্য পড়েছে প্রায় ১৫ হাজার।
ভিডিওটি দেখুন এখানে।
ফ্রলিক জাকির নামের আরেকটি পেজ থেকে শিক্ষকদের নতুন কারিকুলাম বিষয়ক প্রশিক্ষণ দাবিতে আরেকটি ভিডিও প্রচার হতে দেখা যাচ্ছে। গত ৩০ নভেম্বর প্রচারিত ভিডিওটি আজ সোমবার (৪ ডিসেম্বর) বেলা ১২টা পর্যন্ত প্রায় ১৩ লাখ বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে একটি শ্রেণিকক্ষে কিছু ব্যক্তিকে ‘প্যাক প্যাক’ শব্দ করে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করতে দেখা যাচ্ছে। এ ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া পড়েছে ৯ হাজারের বেশি, এর মধ্যে হা হা প্রতিক্রিয়া পড়েছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার, দুঃখের প্রতিক্রিয়া পড়েছে ১ হাজার। ভিডিওটি শেয়ার হয়েছে ১৭ হাজার বারের বেশি, মন্তব্য পড়েছে প্রায় ২ হাজারের বেশি।
ভিডিওটি দেখুন এখানে।
এসব ভিডিওটিতে নেটিজেনরা এমন প্রশিক্ষণ ও নতুন কারিকুলামের সমালোচনা করে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওগুলোর সঙ্গে দেশে চলতি বছর শুরু হওয়া নতুন শিক্ষা কারিকুলামের কোনো সম্পর্ক নেই।
ভিডিও যাচাই ১:
ফেসবুকে ভাইরাল ‘টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই, ফেরিওয়ালা যায়’ ভিডিওটি নিয়ে ওপেন সোর্স অনুসন্ধানে এস তানজিম নামে এক ব্যক্তির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত রোবরাব (৩ ডিসেম্বর ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে করা একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। এস তানজিমের প্রোফাইলে লেখা রয়েছে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের স্বেচ্ছাসেবক ও ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের সদস্য। তিনি ‘টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই, ফেরিওয়ালা যায়’ ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘এই যে ভিডিওটা ভাইরাল হইছে, এইটা বাংলাদেশের ভিডিওই না। এই শিক্ষক ভারতের আসামের এবং ঘটনাও ভারতের। আপনারা যারা সারাদিন এই ভিডিওকে আমাদের দেশের কারিকুলামের প্রশিক্ষণ হিসেবে প্রচার করেছেন তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা। এই সেই ‘‘সাইকেল চালাই’’ এর অরিজিনাল ভিডিও।’
এস তানজিমের এ পোস্টের সূত্রে রতন লাল সাহা নামের একটি পেজ খুঁজে পাওয়া যায়। পেজটি ভারতের আসাম রাজ্যের ফকিরগঞ্জের ধুবরি থেকে পরিচালিত হয়। পেজটির পরিচালনাকারীর পেশা দেওয়া রয়েছে শিক্ষকতা। রতন লাল সাহা গত রোবরাব (৩ ডিসেম্বর) ‘টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই, ফেরিওয়ালা যায়’ ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘টিলিং টিলিং সাইক্লিং, যা ২০২২ সালে আসামে ভাইরাল হয়েছিল। এবার বাংলাদেশেও ভাইরাল।’
পেজটি ঘুরে আরও দেখা যায়, গত ১৭ নভেম্বর রতন লাল সাহা ‘এফএলএন ট্রেনিং অন পয়েম পোস্টার ফর ওরাল ল্যাঙ্গুয়েজ ডেভেলপমেন্ট’ ক্যাপশনে ভিডিওটি প্রথম পোস্ট করেন।
পরবর্তীতে ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে রতন লাল সাহার ফেসবুক পেজে দেওয়া নম্বরে তাঁর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে থেকে যোগাযোগ করা হয়। রতন লাল সাহা আজকের পত্রিকাকে জানান, তিনি আসামের আম্বারি শিশু কল্যাণ এলপি স্কুলের সহকারী শিক্ষক। পাশাপাশি তিনি শিক্ষকদের প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করেন। বাংলাদেশের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রশিক্ষক হিসেবে তাঁকেই দেখা যাচ্ছে। এটি শিশুদের জন্য ভারত সরকারের জয়ফুল লার্নিং বা আনন্দদায়ক শিক্ষণ কার্যক্রমের এফএলএন ট্রেনিং বা ফান্ডামেন্টাল লিটারেসি অ্যান্ড নিউমেরাসি প্রশিক্ষণের অংশ। এখানে যে ছড়াটি আবৃত্তি করা হয়েছে, সেটি আসামের প্রথম শ্রেণির অঙ্কুরণ নামের একটি বইয়ে রয়েছে। বইটির ৪২ নম্বর পৃষ্ঠায় ছড়াটি রয়েছে। এ কবিতা রতন লালের মাধ্যমে ২০২২ সালেও আসামে ভাইরাল হয়েছিল। ওই বছরের ১৭ আগস্ট তিনি এ ছড়ার মাধ্যমে পাঠদান দিয়ে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাওয়ার্ডও পান।
রতন লাল সাহা আরও বলেন, ‘এ ধরনের প্রশিক্ষণ ও পাঠ্যক্রম শিশুদের জন্য অনেক উপকারী। শিশুরা এর মাধ্যমে আনন্দের সঙ্গে জ্ঞান অর্জন করতে পারে।’ তাঁর স্কুলে তিনি এ প্রশিক্ষণের ভালো ফল পেয়েছেন। স্কুলটিতে শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি থাকে। এমনও হয়েছে, তিনি কোনো দিন ক্লাস না নিলে শিশুরা মিডডে মিল (মিডডে মিল ভারতে স্কুল খাবার প্রোগ্রাম, যা দেশব্যাপী স্কুলগামী শিশুদের পুষ্টির অবস্থাকে আরও উন্নত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে) নেওয়া থেকে বিরত থাকে। পরবর্তীতে তিনি ক্লাস নেবেন এমন আশ্বাস দিয়ে শিশুদের মিডডে মিল খাইয়েছেন— এমন দাবি রতন লালের।
এ ছাড়া ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, যে কক্ষে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে সেখানে ঝোলানো ব্যানারেও ধুবরি, আসাম শব্দগুলো রয়েছে।
ওপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট, ‘টিলিং টিলিং সাইকেল চলাই, ফেরিওয়ালা যায়’ ভিডিওটি বাংলাদেশের শিক্ষকদের নতুন কারিকুলামের ওপর প্রশিক্ষণের কোনো ভিডিও নয়।
ভিডিও যাচাই ২:
এ ভিডিওটি নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওটি যে শ্রেণিকক্ষে ধারণ করা হয়েছে, সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক (গণিত) প্রশিক্ষণ শীর্ষক একটি ব্যানার। ব্যানারে আরও লেখা রয়েছে, ‘৬ দিনব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল ব্যবহার করে’। ব্যানারটির ওপরে ডান কোণায় মুজিব বর্ষের ও বাম কোণায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের লোগো দেখা যায়। এ ব্যানারটির সূত্রে কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে গাজীপুর সিটি (Gazipur City) নামের একটি ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের ১১ মার্চ পোস্ট করা একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা আছে, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয় ভিত্তিক (গণিত) প্রশিক্ষণ চলছে।’ পোস্টটিতে বিস্তারিত আর কোনো তথ্য নেই।
তবে প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে সে সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬ দিনব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক (গণিত) প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এ প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন এখানে।
ভিডিওটি নিয়ে ওই সময়ও ফেসবুকে আলোচনা–সমালোচনা হতে দেখা যায়। যেমন, ভিডিওটির সমর্থনে টেকনাফের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নূর মোহাম্মদ লেখেন, ‘সারা দেশে উপজেলা রিসোর্স সেন্টারগুলোতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৬ (ছয়) দিনব্যাপী অলিম্পিয়াড কৌশল ব্যবহার করে বিষয় ভিত্তিক ‘‘গণিত’’ প্রশিক্ষণ চলছে। প্রশিক্ষণটির ব্যানারে শিরা ভাগেই লেখা আছে “আনন্দে গণিত শিখি”। কোমলমতি শিশুদের গণিত–ভীতি দূর করা এবং আনন্দদায়ক পরিবেশে বিভিন্ন গেমের মাধ্যমে গণিতের জটিল বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছে সহজভাবে উপস্থাপনের জন্য প্রশিক্ষণটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রশিক্ষণের একটি অংশে দশমিক ভগ্নাংশের ধারণা দেওয়া জন্য মা ও বাচ্চা হাঁসের একটি গেম রোল প্লে করা হয়েছে। যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় কিছু অসুস্থ প্রকৃতির মানুষ বিষয়টি না বুঝেই প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল করছে, যা খুবই দুঃখজনক। ভাইরাল রোগে আক্রান্ত এসব নোংরা মানসিকতার মানুষগুলো দেশে কিছু একটা হলেই বাছবিচার না করেই ট্রলের প্রতিযোগিতায় নেমে যান। অনেকের ট্রলের ভাষা এতই দুর্গন্ধযুক্ত যে, যা দেখলে তাদেরকে রুচিবোধ সম্পন্ন মানুষ বলে প্রতীয়মান হয় না।’
আবার ভিডিওটির সমালোচনা করে কুষ্টিয়ায় অবস্থিত রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক মুফরাদ হোসাইন অলিন্দ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমার ঠিক জানা নেই, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এভাবেই হয় কিনা!? যদি হয়েও থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে আমরা কোমায় চলে গিয়েছি। এভাবে হতে পারে না! আবর্জনা দিয়ে ভরে যাওয়া সিস্টেম আবর্জনা দিয়েই পরিষ্কার করার কথা ভাবাটা বাতুলতা। কারা করে এই ট্রেনিং ডিজাইন? এটা বোধগম্য হচ্ছে না। কতটা কেয়ারলেস ফুল হলে মাস এডুকেশন নিয়ে এ রকম করা যায়! এই শিক্ষকদের জন্য আমার সিম্প্যাথি আসছে। ভীষণ বিব্রত বোধ করছি।’
বদলগাছি তরুণ শিক্ষক নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে একই বছরের ৬ অক্টোবর একটি পোস্ট খুঁজে পায়। এতে উল্লেখিত তথ্যানুযায়ী, পোস্টটি ৬ দিনব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়–ভিত্তিক (গণিত) প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত। এ প্রশিক্ষণ নওগাঁর বদলগাছি উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। এ পোস্টে সংযুক্ত ভিডিওতে প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া শিক্ষকদের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিতে দেখা যায়। তবে আলোচিত ভিডিওটি সেখানে পাওয়া যায়নি। পোস্টে সংযুক্ত একটি ছবিতে ভাইরাল ভিডিওতে থাকা ব্যানারটি দেখা যায়। ব্যানারটি থেকে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে।
এসব পোস্ট থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, বাংলাদেশের শিক্ষকদের নতুন কারিকুলামের ওপর প্রশিক্ষণের দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির সঙ্গে নতুন কারিকুলামের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং ভিডিওটি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উদ্যোগে বাস্তবায়িত ৬ দিনব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক (গণিত) প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সময়ে ধারণকৃত।
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বক্তব্য
গত রোববার (৩ ডিসেম্বর) এনসিটিবির সচিব মোসা. নাজমা আখতার স্বাক্ষরিত একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচার করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে এনসিটিবি। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা প্রচার সংবলিত কনটেন্ট আপলোড, শেয়ার বা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। হিন্দি গানের সঙ্গে স্কুলের পোশাক পরা কিছু ছেলেমেয়ে ও ব্যক্তির অশ্লীল নাচ আপলোড করে বলা হচ্ছে, শিক্ষাক্রমের নির্দেশনা, যা মিথ্যা। কিছু লোক ব্যাঙের লাফ বা হাঁসের ডাক দিচ্ছে—এমন ভিডিও আপলোড করে বলা হচ্ছে, এটি নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশ, যা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার।
এনসিটিবির এই বিজ্ঞপ্তির খবর আজকের পত্রিকাসহ দেশের প্রায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশে চলতি বছর প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আগামী বছর বাস্তবায়ন করা হবে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। এ নতুন পাঠ্যক্রম বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্তত দুটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভিডিওগুলোর সঙ্গে নতুন কারিকুলামের কোনো সম্পর্ক নেই। এর একটি ভিডিও ভারতের আসামের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের এবং অন্যটি ২০২২ সালের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উদ্যোগে বাস্তবায়িত ৬ দিনব্যাপী গণিত অলিম্পিয়াড কৌশল ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক (গণিত) প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের অংশ।
বাংলাদেশে এক হিন্দু নারীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে দাবিতে মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে ১৮ সেকেন্ডের ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে, রক্তাক্ত এক নারীকে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দীপক শর্মা নামের একটি ভারতীয় এক্স হ্যান্ডল থেকে ভিডিওটি টুইট করে দাবি করা হয়, ‘ভিড
১ দিন আগেআওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সাবরিনা চৌধুরী নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় এমন দাবিতে স্ক্রিনশটটি পোস্ট করে লেখেন, ‘Sabnam Faria কিছুক্ষণ আগে একটা পোস্ট করলেন ৫ মিনিট পর ডিলিট করে দিলেন।’
২ দিন আগেএলিস থমাস নামের এক ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স গবেষকের বরাত দিয়ে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছে এআই পরিচালিত বট নেটওয়ার্ক।
৩ দিন আগেগত বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ‘প্রবাসী জীবন’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটি আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক শেয়ার হয়েছে। রিয়েকশন পড়েছে ৪ হাজারের বেশি। ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৪২ হাজার বার।
৩ দিন আগে