ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওন। ৭১ হাজার ৭৪০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ দেশে বসবাস করে অন্তত ১৬টি জাতিগোষ্ঠী, যেগুলোর প্রতিটির আলাদা ভাষা ও রীতিনীতি আছে। সিয়েরা লিওনের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক, যার সূচনা হয় তিন দশকের বেশি আগের গৃহযুদ্ধের সূত্র ধরে। প্রায় এক যুগ পর ২০০২ সালে এই গৃহযুদ্ধের সময় শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং অবসানের পর দেশটির পুনর্গঠনে জাতিসংঘের অধীনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা অনন্য ভূমিকা পালন করে।
২০০২ সালের পর থেকে ফেব্রুয়ারি এলেই গণমাধ্যমে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে, তা হলো- সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা বা অন্যতম রাষ্ট্রীয় ভাষা বা দাপ্তরিক ভাষা বাংলা। দেশের বিভিন্ন স্তরের পাঠ্যপুস্তকেও এ তথ্য জায়গা পেয়েছিল। যেমন, সদ্যবিদায়ী শিক্ষাক্রমের নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ বইয়ের ‘জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ’ অধ্যায়েও বাংলাকে সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উল্লেখ করা ছিল।
আসলেই কি বাংলা দেশটির দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
সিয়েরা লিওনের ভাষা পরিস্থিতি
ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকান ইনস্টিটিউটের সৌজন্যে ২০১৪ সালে যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করে। ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকান ইনস্টিটিউটের জার্নালে মূল নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৭ সালে। এই নিবন্ধ থেকে জানা যায়, সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা ইংরেজি। এটি দেশটির আনুষ্ঠানিক শিক্ষা, সরকার, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, সংবাদ মাধ্যম, আন্তর্জাতিক যোগাযোগসহ সবক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এর বাইরে দেশটির স্বীকৃত, সংবাদ মাধ্যমে বহুল প্রচারিত এবং আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ও সাহিত্যে স্বল্পমাত্রায় ব্যবহৃত চারটি জাতীয় ভাষা হলো- ক্রিও, লিম্বা, মেন্দে এবং তেমনে। অর্থাৎ সিয়েরা লিওন একটি বহুভাষিক রাষ্ট্র।
সিয়েরা লিওনের ভাষাগত রাজনীতি নিয়ে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে আফ্রিকান জার্নাল অব পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসে প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে জানা যায়, ১৯৬১ সালে ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতা লাভ করে দেশটি। ঔপনিবেশিক শাসনের সময় থেকেই সেখানে ইংরেজি একমাত্র সরকারি ও অভিজাত ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত। যদিও দেশটির জাতিগোষ্ঠীরা ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলে। এসব ভাষার মধ্যে ক্রিও নামের ভাষা দেশটির রাজধানী ফ্রিটাউনে লিংগুয়া ফ্রাংকা হিসেবে ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ শহরটির অধিকাংশ মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। দেশটিতে রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়ন ও শিক্ষা ব্যবস্থায় ইংরেজিকে ব্যবহার করা হয়।
সিয়েরা লিওনের মাতৃভাষা নিয়ে ২০১০ সালের মার্চে টেইলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস গ্রুপের জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে দেশটিতে ব্যবহৃত ভাষা নিয়ে আলোচনা পাওয়া যায়। ওই নিবন্ধে দেশটিকে বহুভাষিক রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দেশটির জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষাসহ বাইরের বেশকিছু ভাষাও দেশটিতে প্রচলিত। এর মধ্যে আছে ইংরেজি, ফরাসি ও আরবি। গবেষণাগুলো থেকে বাংলা ভাষা সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।
সম্ভাব্য সংঘাত, হুমকি চিহ্নিতকরণ এবং সমাধান, মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ ও প্রচার এবং সুশাসনের জন্য সংস্কার সুসংহত করার লক্ষ্যে সিয়েরা লিওন সরকারকে সহায়তা দিতে ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউনাইটেড ন্যাশনস ইন্টিগ্রেটেড পিসবিল্ডিং অফিস ইন সিয়েরালিওন (ইউএনআইপিএসআইএল)।
ইউএনআইপিএসআইএলের ওয়েবসাইট থেকে সিয়েরা লিওনের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়। এখানে সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে কেবল ইংরেজির নাম উল্লেখ আছে। এর বাইরে ক্রিওকে বহুল ব্যবহৃত ভাষা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানেও বাংলা ভাষা সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।
ট্রান্সলেটর উইথ আউট বর্ডারস নামে অনুবাদ নিয়ে কাজ করা একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে দেশটিতে অনুষ্ঠিত আদম শুমারি অনুযায়ী, সিয়েরা লিওনে ১৮টি প্রধান ভাষা আছে। এর মধ্যে ক্রিও সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষা। এটি দেশটিতে লিংগুয়া ফ্রাংকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যদিও দেশটির মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ তাদের প্রধান ভাষা হিসেবে এটি ব্যবহার করে। এর বাইরে মেন্দে ও তেমনেও আছে। তবে সরকারি ভাষা হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রশাসন এবং সংবাদ মাধ্যমে ইংরেজি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
বাংলা ভাষা ও সিয়েরা লিওন
শিক্ষামূলক জিওগ্রাফি ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাসে সিয়েরা লিওনের ভাষা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এ থেকে দেশটিতে অন্তত ২৩টি ভাষা প্রচলিত থাকার কথা জানা যায়। সিয়েরা লিওনের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য নিজস্ব ভাষা ব্যবহার করে।
সিয়েরা লিওনের ভ্রমণ বিষয়ক ওয়েবসাইট ভিজিট সিয়েরা লিওন থেকেও প্রায় একই তথ্য জানা যায়। এতে বলা হয়, সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা ইংরেজি। দেশটিতে ২৩টি ভাষা প্রচলিত আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ভাষা হলো- মেন্দে, তেমনে, লিম্বা এবং ক্রিও। তবে এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ক্রিও।
ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাসে উল্লেখ করা হয়, সাবেক ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক হিসেবে দেশটির সরকারি ভাষা ইংরেজি। ক্রিও দেশটিতে লিংগুয়া ফ্রাংকা হিসেবে বহুল ব্যবহৃত। এটি দেশটির প্রায় সাড়ে ১০ শতাংশ মানুষের মাতৃভাষা হলেও দেশটির জনসংখ্যার ৯৭ শতাংশ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। তবে ভাষাটির কোনো সরকারি স্বীকৃতি নেই। দেশটিতে ব্যবহৃত অন্যান্য ভাষার মধ্যে আছে মেন্দে, তেম্নে এবং লিম্বা।
এই ওয়েবসাইট থেকে সিয়েরা লিওনে বাংলা ভাষার উপস্থিতি সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। ওয়েবসাইটটিতে বলা হয়, সিয়েরা লিওন দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে দেশটির নাগরিকরা বাংলা ভাষা ব্যবহার করে না। কারণ, বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি ‘অনারারি স্ট্যাটাস’ বা সম্মানসূচক।
কমেনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সংগঠন কমেনওয়েলথ চেম্বার অব কমার্সের ওয়েবসাইট থেকে সিয়েরা লিওন সম্পর্কে একটি নিবন্ধ পাওয়া যায়। নিবন্ধটিতে সিয়েরা লিওনে গৃহযুদ্ধ এবং বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০২ সালের ডিসেম্বরে দেশটি বাংলাকে ‘অনারারি অফিসিয়াল ল্যাংগুয়েজ’ বা সম্মানসূচক সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দেয়।
দেশীয় সংবাদ মাধ্যমের তথ্যে যা ছিল
কমেনওয়েলথ চেম্বার অব কমার্সের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যের সূত্রে দেশের ২০০২ সালের সংবাদপত্রগুলোর আর্কাইভ খোঁজে দেখে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
পুরোনো পত্রিকার সংগ্রহশালা সংগ্রামের নোটবুকের মাধ্যমে ২০০২ সালের ২৮ ডিসেম্বর দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার শেষ পাতায় ‘বাংলা সিয়েরা লিওনের অন্যতম সরকারি ভাষা’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সিয়েরা লিওন সরকার বাংলা ভাষাকে দেশটির অন্যান্য অফিসিয়াল ভাষার মত সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব আহমেদ তেজান কাব্বাহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পুনঃনির্মিত একটি সড়ক উদ্বোধনকালে এই ঘোষণা দেন। একই তথ্য পাওয়া যায় একই দিনে দৈনিক প্রথম আলো, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার থেকে।
অর্থাৎ ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস, কমেনওয়েলথ চেম্বার অব কমার্সের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির সরকারি বা দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। বরং এটি ছিল সম্মানসূচক স্বীকৃতি। বিপরীতে দেশীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিয়েরা লিওন দেশটির অন্যান্য অফিসিয়াল ভাষার মত সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে।
প্রকৃত তথ্য কি
বাংলা ভাষাকে সিয়েরা লিওনের লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতির দাবিটির সত্যতার খোঁজে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক (আইএফসিএন) স্বীকৃত পশ্চিম আফ্রিকাভিত্তিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান দুবাওয়ার একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। দুবাওয়া নাইজেরিয়া, ঘানা, সিয়েরা লিওন, লাইবেরিয়া এবং গাম্বিয়াতে কার্যক্রম পরিচালনা করে। সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি নিয়ে ২০২৩ সালের মার্চে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে দুবাওয়া।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীন হওয়া দেশটির মানুষ অনেকগুলো ভাষায় কথা বলে। তবে এগুলোর কোনোটিই দেশটির সরকারি ভাষা হিসেবে ব্যবহার হয় না। দেশটিতে রাষ্ট্রের স্বীকৃত ভাষা ইংরেজি। বাংলা ভাষার স্বীকৃতি নিয়ে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রয়াত আলহাজ্ব আহমেদ তেজান কাব্বাহর বক্তব্যের বিষয়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায় না।
তথ্যটির সত্যতা যাচাইয়ে দুবাওয়া সিয়েরা লিওনের রাজধানী ফ্রি টাউন কেন্দ্রিক ভাষা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান দ্য ইনস্টিটিউট ফর সিয়েরা লিওনিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজেসের (টিআইএসএলএল) প্রোগ্রাম ডিরেক্টর লামিন এইচ কার্গবুয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি বলেন, বাংলা কখনোই সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা ব্যবহার হয়নি বা এমন কোনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রয়াত আলহাজ্ব আহমেদ তেজান কাব্বাহর বাংলাকে সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ সম্পর্কে তিনি অবগত। প্রেসিডেন্ট কাব্বাহ বাংলাকে সিয়েরা লিওনের ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বা স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে বলেছিলেন। কিন্তু সেটি সরকারি ভাষা হিসেবে নয়।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট কাব্বাহ দেশটির গৃহযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকার ও দেশটির জনগণের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এমন মন্তব্য করেছিলেন। তবে কখনোই বাংলাকে সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়নি। প্রেসিডেন্ট কাব্বাহ এমন স্বীকৃতি দিয়েছেন বলে যদি ধরেও নেই, তারপরও সিয়েরা লিওনের নাগরিকদের কাছে বাংলা স্বীকৃত ভাষা হিসেবে গৃহীত হয়নি এবং দেশটির কোথাও বাংলা ব্যবহৃত হয় না।’
তিনি দুবাওয়াকে আরও বলেন, সিয়েরা লিওনের একমাত্র সরকারি ভাষা ইংরেজি। ইংরেজির বাইরে দেশটিতে ব্যবহৃত অন্যান্য ভাষাগুলো ব্যবহৃত হয় কেবল অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগের জন্য।
একই প্রসঙ্গে সিয়েরা লিওনের ২৫ বছরের বেশি শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে জড়িত সিয়া টেংবেহ নামের এক শিক্ষিকা দুবাওয়াকে বলেন, তাঁর ২৫ বছরের শিক্ষকতা পেশায় কোনো প্রেসিডেন্ট বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দেশটির সরকারি ভাষা পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো ঘোষণা সম্পর্কে তিনি অবগত নন। সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা কেবল ইংরেজি।
প্রসঙ্গত, বাংলা ভাষার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সিয়েরা লিওনের প্রেসিডেন্ট প্রয়াত আলহাজ্ব আহমেদ তেজান কাব্বাহ ২০০৩ সালের ২১ অক্টোবর তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। ওই সময়ের পত্রিকাগুলোর আর্কাইভ বা পুরোনো সংস্করণ খুঁজেও সেই সময় তাঁর সফরকালে বাংলাকে দেশটির দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়ে কোনো আলোচনা পাওয়া যায় না।
উপরোক্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এটি স্পষ্ট, বাংলা সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়টি সঠিক নয়। দেশটির একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ইংরেজি। দেশটিতে সংঘঠিত প্রায় ১১ বছরের গৃহযুদ্ধে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রেসিডেন্ট কাব্বাহ বাংলাকে সিয়েরা লিওনের ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বা স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে বলেছিলেন। কিন্তু সেটি সরকারি ভাষা হিসেবে নয়। পরে এটিই সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা বাংলা ঘোষণা করা হয়েছে দাবিতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওন। ৭১ হাজার ৭৪০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ দেশে বসবাস করে অন্তত ১৬টি জাতিগোষ্ঠী, যেগুলোর প্রতিটির আলাদা ভাষা ও রীতিনীতি আছে। সিয়েরা লিওনের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক, যার সূচনা হয় তিন দশকের বেশি আগের গৃহযুদ্ধের সূত্র ধরে। প্রায় এক যুগ পর ২০০২ সালে এই গৃহযুদ্ধের সময় শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং অবসানের পর দেশটির পুনর্গঠনে জাতিসংঘের অধীনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা অনন্য ভূমিকা পালন করে।
২০০২ সালের পর থেকে ফেব্রুয়ারি এলেই গণমাধ্যমে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়ে, তা হলো- সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা বা অন্যতম রাষ্ট্রীয় ভাষা বা দাপ্তরিক ভাষা বাংলা। দেশের বিভিন্ন স্তরের পাঠ্যপুস্তকেও এ তথ্য জায়গা পেয়েছিল। যেমন, সদ্যবিদায়ী শিক্ষাক্রমের নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ বইয়ের ‘জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ’ অধ্যায়েও বাংলাকে সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উল্লেখ করা ছিল।
আসলেই কি বাংলা দেশটির দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
সিয়েরা লিওনের ভাষা পরিস্থিতি
ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকান ইনস্টিটিউটের সৌজন্যে ২০১৪ সালে যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করে। ইন্টারন্যাশনাল আফ্রিকান ইনস্টিটিউটের জার্নালে মূল নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৭ সালে। এই নিবন্ধ থেকে জানা যায়, সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা ইংরেজি। এটি দেশটির আনুষ্ঠানিক শিক্ষা, সরকার, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, সংবাদ মাধ্যম, আন্তর্জাতিক যোগাযোগসহ সবক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এর বাইরে দেশটির স্বীকৃত, সংবাদ মাধ্যমে বহুল প্রচারিত এবং আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ও সাহিত্যে স্বল্পমাত্রায় ব্যবহৃত চারটি জাতীয় ভাষা হলো- ক্রিও, লিম্বা, মেন্দে এবং তেমনে। অর্থাৎ সিয়েরা লিওন একটি বহুভাষিক রাষ্ট্র।
সিয়েরা লিওনের ভাষাগত রাজনীতি নিয়ে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে আফ্রিকান জার্নাল অব পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসে প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে জানা যায়, ১৯৬১ সালে ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতা লাভ করে দেশটি। ঔপনিবেশিক শাসনের সময় থেকেই সেখানে ইংরেজি একমাত্র সরকারি ও অভিজাত ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত। যদিও দেশটির জাতিগোষ্ঠীরা ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলে। এসব ভাষার মধ্যে ক্রিও নামের ভাষা দেশটির রাজধানী ফ্রিটাউনে লিংগুয়া ফ্রাংকা হিসেবে ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ শহরটির অধিকাংশ মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। দেশটিতে রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়ন ও শিক্ষা ব্যবস্থায় ইংরেজিকে ব্যবহার করা হয়।
সিয়েরা লিওনের মাতৃভাষা নিয়ে ২০১০ সালের মার্চে টেইলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস গ্রুপের জার্নালে প্রকাশিত এক নিবন্ধে দেশটিতে ব্যবহৃত ভাষা নিয়ে আলোচনা পাওয়া যায়। ওই নিবন্ধে দেশটিকে বহুভাষিক রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দেশটির জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষাসহ বাইরের বেশকিছু ভাষাও দেশটিতে প্রচলিত। এর মধ্যে আছে ইংরেজি, ফরাসি ও আরবি। গবেষণাগুলো থেকে বাংলা ভাষা সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।
সম্ভাব্য সংঘাত, হুমকি চিহ্নিতকরণ এবং সমাধান, মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ ও প্রচার এবং সুশাসনের জন্য সংস্কার সুসংহত করার লক্ষ্যে সিয়েরা লিওন সরকারকে সহায়তা দিতে ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউনাইটেড ন্যাশনস ইন্টিগ্রেটেড পিসবিল্ডিং অফিস ইন সিয়েরালিওন (ইউএনআইপিএসআইএল)।
ইউএনআইপিএসআইএলের ওয়েবসাইট থেকে সিয়েরা লিওনের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়। এখানে সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে কেবল ইংরেজির নাম উল্লেখ আছে। এর বাইরে ক্রিওকে বহুল ব্যবহৃত ভাষা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানেও বাংলা ভাষা সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।
ট্রান্সলেটর উইথ আউট বর্ডারস নামে অনুবাদ নিয়ে কাজ করা একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে দেশটিতে অনুষ্ঠিত আদম শুমারি অনুযায়ী, সিয়েরা লিওনে ১৮টি প্রধান ভাষা আছে। এর মধ্যে ক্রিও সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষা। এটি দেশটিতে লিংগুয়া ফ্রাংকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যদিও দেশটির মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ তাদের প্রধান ভাষা হিসেবে এটি ব্যবহার করে। এর বাইরে মেন্দে ও তেমনেও আছে। তবে সরকারি ভাষা হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রশাসন এবং সংবাদ মাধ্যমে ইংরেজি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
বাংলা ভাষা ও সিয়েরা লিওন
শিক্ষামূলক জিওগ্রাফি ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাসে সিয়েরা লিওনের ভাষা নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এ থেকে দেশটিতে অন্তত ২৩টি ভাষা প্রচলিত থাকার কথা জানা যায়। সিয়েরা লিওনের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য নিজস্ব ভাষা ব্যবহার করে।
সিয়েরা লিওনের ভ্রমণ বিষয়ক ওয়েবসাইট ভিজিট সিয়েরা লিওন থেকেও প্রায় একই তথ্য জানা যায়। এতে বলা হয়, সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা ইংরেজি। দেশটিতে ২৩টি ভাষা প্রচলিত আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ভাষা হলো- মেন্দে, তেমনে, লিম্বা এবং ক্রিও। তবে এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ক্রিও।
ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাসে উল্লেখ করা হয়, সাবেক ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক হিসেবে দেশটির সরকারি ভাষা ইংরেজি। ক্রিও দেশটিতে লিংগুয়া ফ্রাংকা হিসেবে বহুল ব্যবহৃত। এটি দেশটির প্রায় সাড়ে ১০ শতাংশ মানুষের মাতৃভাষা হলেও দেশটির জনসংখ্যার ৯৭ শতাংশ মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। তবে ভাষাটির কোনো সরকারি স্বীকৃতি নেই। দেশটিতে ব্যবহৃত অন্যান্য ভাষার মধ্যে আছে মেন্দে, তেম্নে এবং লিম্বা।
এই ওয়েবসাইট থেকে সিয়েরা লিওনে বাংলা ভাষার উপস্থিতি সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যায়। ওয়েবসাইটটিতে বলা হয়, সিয়েরা লিওন দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে দেশটির নাগরিকরা বাংলা ভাষা ব্যবহার করে না। কারণ, বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি ‘অনারারি স্ট্যাটাস’ বা সম্মানসূচক।
কমেনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সংগঠন কমেনওয়েলথ চেম্বার অব কমার্সের ওয়েবসাইট থেকে সিয়েরা লিওন সম্পর্কে একটি নিবন্ধ পাওয়া যায়। নিবন্ধটিতে সিয়েরা লিওনে গৃহযুদ্ধ এবং বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০২ সালের ডিসেম্বরে দেশটি বাংলাকে ‘অনারারি অফিসিয়াল ল্যাংগুয়েজ’ বা সম্মানসূচক সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দেয়।
দেশীয় সংবাদ মাধ্যমের তথ্যে যা ছিল
কমেনওয়েলথ চেম্বার অব কমার্সের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যের সূত্রে দেশের ২০০২ সালের সংবাদপত্রগুলোর আর্কাইভ খোঁজে দেখে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
পুরোনো পত্রিকার সংগ্রহশালা সংগ্রামের নোটবুকের মাধ্যমে ২০০২ সালের ২৮ ডিসেম্বর দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার শেষ পাতায় ‘বাংলা সিয়েরা লিওনের অন্যতম সরকারি ভাষা’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সিয়েরা লিওন সরকার বাংলা ভাষাকে দেশটির অন্যান্য অফিসিয়াল ভাষার মত সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব আহমেদ তেজান কাব্বাহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পুনঃনির্মিত একটি সড়ক উদ্বোধনকালে এই ঘোষণা দেন। একই তথ্য পাওয়া যায় একই দিনে দৈনিক প্রথম আলো, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার থেকে।
অর্থাৎ ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস, কমেনওয়েলথ চেম্বার অব কমার্সের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির সরকারি বা দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। বরং এটি ছিল সম্মানসূচক স্বীকৃতি। বিপরীতে দেশীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিয়েরা লিওন দেশটির অন্যান্য অফিসিয়াল ভাষার মত সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে।
প্রকৃত তথ্য কি
বাংলা ভাষাকে সিয়েরা লিওনের লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতির দাবিটির সত্যতার খোঁজে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক (আইএফসিএন) স্বীকৃত পশ্চিম আফ্রিকাভিত্তিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান দুবাওয়ার একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। দুবাওয়া নাইজেরিয়া, ঘানা, সিয়েরা লিওন, লাইবেরিয়া এবং গাম্বিয়াতে কার্যক্রম পরিচালনা করে। সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি নিয়ে ২০২৩ সালের মার্চে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে দুবাওয়া।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীন হওয়া দেশটির মানুষ অনেকগুলো ভাষায় কথা বলে। তবে এগুলোর কোনোটিই দেশটির সরকারি ভাষা হিসেবে ব্যবহার হয় না। দেশটিতে রাষ্ট্রের স্বীকৃত ভাষা ইংরেজি। বাংলা ভাষার স্বীকৃতি নিয়ে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রয়াত আলহাজ্ব আহমেদ তেজান কাব্বাহর বক্তব্যের বিষয়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায় না।
তথ্যটির সত্যতা যাচাইয়ে দুবাওয়া সিয়েরা লিওনের রাজধানী ফ্রি টাউন কেন্দ্রিক ভাষা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান দ্য ইনস্টিটিউট ফর সিয়েরা লিওনিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজেসের (টিআইএসএলএল) প্রোগ্রাম ডিরেক্টর লামিন এইচ কার্গবুয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি বলেন, বাংলা কখনোই সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা ব্যবহার হয়নি বা এমন কোনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রয়াত আলহাজ্ব আহমেদ তেজান কাব্বাহর বাংলাকে সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ সম্পর্কে তিনি অবগত। প্রেসিডেন্ট কাব্বাহ বাংলাকে সিয়েরা লিওনের ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বা স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে বলেছিলেন। কিন্তু সেটি সরকারি ভাষা হিসেবে নয়।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট কাব্বাহ দেশটির গৃহযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকার ও দেশটির জনগণের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এমন মন্তব্য করেছিলেন। তবে কখনোই বাংলাকে সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়নি। প্রেসিডেন্ট কাব্বাহ এমন স্বীকৃতি দিয়েছেন বলে যদি ধরেও নেই, তারপরও সিয়েরা লিওনের নাগরিকদের কাছে বাংলা স্বীকৃত ভাষা হিসেবে গৃহীত হয়নি এবং দেশটির কোথাও বাংলা ব্যবহৃত হয় না।’
তিনি দুবাওয়াকে আরও বলেন, সিয়েরা লিওনের একমাত্র সরকারি ভাষা ইংরেজি। ইংরেজির বাইরে দেশটিতে ব্যবহৃত অন্যান্য ভাষাগুলো ব্যবহৃত হয় কেবল অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগের জন্য।
একই প্রসঙ্গে সিয়েরা লিওনের ২৫ বছরের বেশি শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে জড়িত সিয়া টেংবেহ নামের এক শিক্ষিকা দুবাওয়াকে বলেন, তাঁর ২৫ বছরের শিক্ষকতা পেশায় কোনো প্রেসিডেন্ট বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দেশটির সরকারি ভাষা পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো ঘোষণা সম্পর্কে তিনি অবগত নন। সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা কেবল ইংরেজি।
প্রসঙ্গত, বাংলা ভাষার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সিয়েরা লিওনের প্রেসিডেন্ট প্রয়াত আলহাজ্ব আহমেদ তেজান কাব্বাহ ২০০৩ সালের ২১ অক্টোবর তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন। ওই সময়ের পত্রিকাগুলোর আর্কাইভ বা পুরোনো সংস্করণ খুঁজেও সেই সময় তাঁর সফরকালে বাংলাকে দেশটির দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়ে কোনো আলোচনা পাওয়া যায় না।
উপরোক্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এটি স্পষ্ট, বাংলা সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়টি সঠিক নয়। দেশটির একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ইংরেজি। দেশটিতে সংঘঠিত প্রায় ১১ বছরের গৃহযুদ্ধে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রেসিডেন্ট কাব্বাহ বাংলাকে সিয়েরা লিওনের ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বা স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে বলেছিলেন। কিন্তু সেটি সরকারি ভাষা হিসেবে নয়। পরে এটিই সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা বাংলা ঘোষণা করা হয়েছে দাবিতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলাদেশে এক হিন্দু নারীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে দাবিতে মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে ১৮ সেকেন্ডের ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে, রক্তাক্ত এক নারীকে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দীপক শর্মা নামের একটি ভারতীয় এক্স হ্যান্ডল থেকে ভিডিওটি টুইট করে দাবি করা হয়, ‘ভিড
২০ ঘণ্টা আগেআওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সাবরিনা চৌধুরী নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় এমন দাবিতে স্ক্রিনশটটি পোস্ট করে লেখেন, ‘Sabnam Faria কিছুক্ষণ আগে একটা পোস্ট করলেন ৫ মিনিট পর ডিলিট করে দিলেন।’
২ দিন আগেএলিস থমাস নামের এক ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স গবেষকের বরাত দিয়ে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছে এআই পরিচালিত বট নেটওয়ার্ক।
২ দিন আগেগত বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ‘প্রবাসী জীবন’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটি আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক শেয়ার হয়েছে। রিয়েকশন পড়েছে ৪ হাজারের বেশি। ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৪২ হাজার বার।
৩ দিন আগে