ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল কামরাঙা। পাকা কামরাঙার মিষ্টি স্বাদ, রঙের কারণে এটি বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ-প্রশান্ত এবং পূর্ব-এশিয়া অংশে বহুকাল ধরেই জনপ্রিয়। তবে চাঁদের কলঙ্কের মতো এই ফলেরও নামেও আছে বদনাম। কামরাঙা ফল নিয়ে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর ‘একটুখানি বিজ্ঞান পরিবার’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের হরমোন বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল হালিমের সৌজন্যে একটি কবিতা খুঁজে পাওয়া যায়। কবিতার সঙ্গে ‘কামরাঙা খেয়ে শরীরের ক্ষতি করছেন না তো?’ শিরোনামে একটি ফটোকার্ডও জুড়ে দেওয়া হয়।
২০ চরণের কবিতাটিতে কামরাঙার ভয়াবহতা উল্লেখ করে লেখা,...‘একটি কথা আজ থেকে/রাখতে হবে স্মরণ/এ ফল খেয়ে করতে পারে কেউ/হঠাৎ মৃত্যুবরণ।...সকল প্রকার কামরাঙা থেকে রব সাবধান/এটি খেতে করছে বারণ/চিকিৎসা বিজ্ঞান।’
২০২১ সালে ফেসবুকে প্রচারিত আরেকটি ফটোকার্ডে কামরাঙাকে ‘বিষ ফল’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ২০২৩ সালে সায়েন্স বি নামের একটি বিজ্ঞান ভিত্তিক পেজের ফটোকার্ডেও কামরাঙাকে ‘বিষাক্ত ফল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও ফটোকার্ডটিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বৃক্ক বা কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। কিডনি ফেইলিয়র, বৃক্কে পাথরসহ যে কোনো দুর্বল কিডনির রোগীদের বিষক্রিয়া হয়। এতে হেঁচকি হওয়া, বমি হওয়া, বমি বমি ভাব এবং মাঝে মাঝে মৃত্যু ঘটানোর মতো ঘটনা ঘটে। তবে সুস্থ বৃক্কের জন্য কামরাঙা ক্ষতিকর নয়।’
কামরাঙার এই বদনাম যদিও কেবল আমাদের দেশেই নয়, ছড়িয়ে আছে বিশ্বব্যাপী। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান স্নোপস ২০০৯ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, ‘কামরাঙা মানুষকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে’—এমন তথ্য ইন্টারনেটে অন্তত ২০০৮ সালের মে মাস থেকেই প্রচার হয়ে আসছে। এই তথ্য কীভাবে ছড়াল তা জানা যায় না।
কামরাঙা কি আসলেই এত ভয়াবহ বা বিষাক্ত? কামরাঙা খেলে সব মানুষেরই কি শরীরের ক্ষতি হয়?
এসব প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণা পাওয়া যায়। মালয়েশিয়ার এআইএমএসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ো টেকনোলজি বিভাগ ও ইউনিভার্সিটি সেন্স মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ ইন মলিকুলার মেডিসিনের একদল গবেষকের করা কামরাঙার পুষ্টিকর, ঔষধি এবং বিষাক্ত বৈশিষ্ট্য নিয়ে করা এই গবেষণা থেকে জানা যায়, কামরাঙা পুষ্টি ও ঔষধি গুণে ভরপুর। তবে কামরাঙায় থাকা অক্সালেট ও ক্যারামবক্সিনের কারণে এটি কিডনি সমস্যাযুক্ত রোগীদের জন্য বিষাক্ত।
দেশটির ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন কামরাঙা ফল সম্পর্কে জানায়, গবেষণায় দেখা গেছে কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য কামরাঙা ক্ষতিকর। কামরাঙায় নিউরোটক্সিন নামের পদার্থ থাকে। এটি মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করতে পারে এবং স্নায়বিক ব্যাধি সৃষ্টি করতে পারে। সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ-স্বাভাবিক কিডনি যাদের, তারা এই নিউরোটক্সিন শরীর থেকে বের করে দিতে পারে। কিন্তু যাদের কিডনি সমস্যা আছে, তাদের পক্ষে এটি সম্ভব না। ফলে এটি শরীরে থেকে মারাত্মক অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই কারও কিডনি সমস্যা থাকলে তাঁর কামরাঙা না খাওয়া উচিত।
স্বাস্থ্য বিষয়ক সংবাদ ও তথ্য প্রকাশকারী আমেরিকান করপোরেশন প্রতিষ্ঠান ওয়েব এমডিও তাঁদের ওয়েবসাইটে একই তথ্য দিয়েছে। কিডনি জটিলতায় ভোগা ব্যক্তিরা কামরাঙা খেলে তাঁদের মধ্যে যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে, তার মধ্যে আছে হেঁচকি, মানসিক বিভ্রান্তি, খিঁচুনি, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ওয়েব এমডি আরও জানায়, নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ তথা, বোসুটিনিব, প্যানোবিনোস্ট্যাট, ভেনেটোক্ল্যাক্স জাতীয় ওষুধ গ্রহণের সময় কামরাঙা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
কামরাঙা প্রসঙ্গে সিঙ্গাপুরের সরকারি খাদ্য কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েবসাইটে জানায়, কামরাঙা ফলের অনেক স্বাস্থ্যকর উপকার আছে। সুস্থ স্বাভাবিক যেকোনো ব্যক্তি পরিমিত পরিমাণে নিরাপদে কামরাঙা খেতে পারেন। তবে কিছু কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে কামরাঙা খাওয়ার ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
যেমন, কামরাঙায় অক্সালিক অ্যাসিড থাকায় এটি যাদের কিডনি সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে। অক্সালিক অ্যাসিড শরীরের ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলোর ব্যবহারের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাই কারও যদি কিডনির সমস্যা থাকে বা নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ সেবন করেন, তাহলে কোনো খারাপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে কামরাঙা বা এর জুস থেকে সাবধান থাকা ভালো।
স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন মেডিকেল নিউজ টুডের ওয়েবসাইটে কামরাঙার স্বাস্থ্যকর উপকারিতা সম্পর্কে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কামরাঙা ফাইবার সমৃদ্ধ ফল। একটি মাঝারি আকৃতির (৯১ গ্রাম) কামরাঙায় থাকে ২৮ ক্যালরি, শর্করা থাকে ৬ দশমিক ১ গ্রাম, প্রোটিন থাকে ১ গ্রাম এবং ফাইবার থাকে ২ দশমিক ৫ গ্রাম। এতে সেলুলোজ থাকে ৬০ শতাংশ, হেমিসেলুলোজ থাকে ২৭ শতাংশ এবং ১৩ শতাংশ পেকটিন থাকে।
এ ছাড়া কামরাঙার মধ্যে ভিটামিন এবং খনিজের বিপুল সম্ভার রয়েছে। যেমন, এর মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন সি এবং গ্যালিক অ্যাসিড, যা কোষের ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়তা করে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের বরাত দিয়ে ম্যাগাজিনটি জানায়, একই মাপের একটি কামরাঙায় ১২১ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম, ৩১. ৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি,১০. ৯ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ৯. ১ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম, ২. ৭৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ১.৮ গ্রাম সোডিয়াম থাকে।
অর্থাৎ একজন মানুষ একটি মাঝারি আকারের কামরাঙা থেকে একবারেই ৩১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ করতে পারেন। যেখানে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের দিনে ৯০ মিলিগ্রাম এবং একজন নারীর ৭৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ প্রয়োজন। তবে গর্ভকালীন সময়ে একজন নারীর ৮৫ মিলিগ্রাম এবং সন্তানকে দুগ্ধপানের সময়ে ১২০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি প্রয়োজন হয়।
তবে ফলটির অতিরিক্ত খাওয়াতে কিছু ঝুঁকির কথাও উল্লেখ করেছে ম্যাগাজিনটি। ম্যাগাজিনটি জানায়, কাঁচা বা অতিরিক্ত এই ফল খাওয়াতে কিছু ঝুঁকি আছে। যেমন:
কিডনিতে পাথর: কামরাঙায় অক্সালেট বা অক্সালিক অ্যাসিড থাকে। যা প্রাকৃতিকভাবে বিটরুট, পালংশাকেও বিদ্যমান। মানুষের শরীরও অক্সালেট তৈরি করে এবং প্রাকৃতিকভাবে মূত্রের মাধ্যমে নিঃসরণ করে। যদি কেউ অতিরিক্ত মাত্রায় এই অক্সালেট গ্রহণ করে তাহলে এর ফলে কিডনিতে পাথর ও কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
হজমে সমস্যা: কাঁচা কামরাঙায় অক্সালেটের মাত্রা বেশি থাকে এবং এটি খাওয়ার ফলে হজমে সমস্যা বা বমি হতে পারে। তাই পাকা কামরাঙা খাওয়া উচিত।
কিডনি সমস্যায় জটিলতা: কারও যদি কিডনিতে সমস্যা থাকে, তাহলে তাঁদের কামরাঙা না খাওয়া বা খেলেও কমিয়ে খাওয়া উচিত। এই ধরনের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কামরাঙা স্নায়বিক জটিলতা তৈরি করতে পারে। কারও কিডনি জটিলতা না থাকলেও অতিরিক্ত কামরাঙা খাওয়া কিডনির ক্ষতি করতে পারে। এ ছাড়া কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ গ্রহণের সময় কামরাঙা খাওয়া মানবদেহে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
সর্বোপরি ম্যাগাজিনটি জানায়, কারও যদি কিডনিতে সমস্যা থাকে এবং কোনো ওষুধ সেবনের মধ্য দিয়ে যায়, তাহলে তাঁর কামরাঙা খাওয়ার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া জরুরি।
উল্লিখিত আলোচনা থেকে স্পষ্ট, কামরাঙা পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ একটি ফল। সুস্থ–স্বাভাবিক কারও জন্য ফলটি খাওয়া বারণ এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই এবং এটিকে ঢালাওভাবে কোথাও বিষাক্ত উল্লেখ করা হয়নি। তারা পরিমিত পর্যায়ে ফলটি খেতে পারেন। মূলত, ফলটিতে থাকা অক্সালিক অ্যাসিড উপাদানের জন্য এটি কিডনিতে সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল কামরাঙা। পাকা কামরাঙার মিষ্টি স্বাদ, রঙের কারণে এটি বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ-প্রশান্ত এবং পূর্ব-এশিয়া অংশে বহুকাল ধরেই জনপ্রিয়। তবে চাঁদের কলঙ্কের মতো এই ফলেরও নামেও আছে বদনাম। কামরাঙা ফল নিয়ে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর ‘একটুখানি বিজ্ঞান পরিবার’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের হরমোন বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুল হালিমের সৌজন্যে একটি কবিতা খুঁজে পাওয়া যায়। কবিতার সঙ্গে ‘কামরাঙা খেয়ে শরীরের ক্ষতি করছেন না তো?’ শিরোনামে একটি ফটোকার্ডও জুড়ে দেওয়া হয়।
২০ চরণের কবিতাটিতে কামরাঙার ভয়াবহতা উল্লেখ করে লেখা,...‘একটি কথা আজ থেকে/রাখতে হবে স্মরণ/এ ফল খেয়ে করতে পারে কেউ/হঠাৎ মৃত্যুবরণ।...সকল প্রকার কামরাঙা থেকে রব সাবধান/এটি খেতে করছে বারণ/চিকিৎসা বিজ্ঞান।’
২০২১ সালে ফেসবুকে প্রচারিত আরেকটি ফটোকার্ডে কামরাঙাকে ‘বিষ ফল’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ২০২৩ সালে সায়েন্স বি নামের একটি বিজ্ঞান ভিত্তিক পেজের ফটোকার্ডেও কামরাঙাকে ‘বিষাক্ত ফল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও ফটোকার্ডটিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বৃক্ক বা কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। কিডনি ফেইলিয়র, বৃক্কে পাথরসহ যে কোনো দুর্বল কিডনির রোগীদের বিষক্রিয়া হয়। এতে হেঁচকি হওয়া, বমি হওয়া, বমি বমি ভাব এবং মাঝে মাঝে মৃত্যু ঘটানোর মতো ঘটনা ঘটে। তবে সুস্থ বৃক্কের জন্য কামরাঙা ক্ষতিকর নয়।’
কামরাঙার এই বদনাম যদিও কেবল আমাদের দেশেই নয়, ছড়িয়ে আছে বিশ্বব্যাপী। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান স্নোপস ২০০৯ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, ‘কামরাঙা মানুষকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে’—এমন তথ্য ইন্টারনেটে অন্তত ২০০৮ সালের মে মাস থেকেই প্রচার হয়ে আসছে। এই তথ্য কীভাবে ছড়াল তা জানা যায় না।
কামরাঙা কি আসলেই এত ভয়াবহ বা বিষাক্ত? কামরাঙা খেলে সব মানুষেরই কি শরীরের ক্ষতি হয়?
এসব প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণা পাওয়া যায়। মালয়েশিয়ার এআইএমএসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ো টেকনোলজি বিভাগ ও ইউনিভার্সিটি সেন্স মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ ইন মলিকুলার মেডিসিনের একদল গবেষকের করা কামরাঙার পুষ্টিকর, ঔষধি এবং বিষাক্ত বৈশিষ্ট্য নিয়ে করা এই গবেষণা থেকে জানা যায়, কামরাঙা পুষ্টি ও ঔষধি গুণে ভরপুর। তবে কামরাঙায় থাকা অক্সালেট ও ক্যারামবক্সিনের কারণে এটি কিডনি সমস্যাযুক্ত রোগীদের জন্য বিষাক্ত।
দেশটির ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশন কামরাঙা ফল সম্পর্কে জানায়, গবেষণায় দেখা গেছে কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য কামরাঙা ক্ষতিকর। কামরাঙায় নিউরোটক্সিন নামের পদার্থ থাকে। এটি মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করতে পারে এবং স্নায়বিক ব্যাধি সৃষ্টি করতে পারে। সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ-স্বাভাবিক কিডনি যাদের, তারা এই নিউরোটক্সিন শরীর থেকে বের করে দিতে পারে। কিন্তু যাদের কিডনি সমস্যা আছে, তাদের পক্ষে এটি সম্ভব না। ফলে এটি শরীরে থেকে মারাত্মক অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই কারও কিডনি সমস্যা থাকলে তাঁর কামরাঙা না খাওয়া উচিত।
স্বাস্থ্য বিষয়ক সংবাদ ও তথ্য প্রকাশকারী আমেরিকান করপোরেশন প্রতিষ্ঠান ওয়েব এমডিও তাঁদের ওয়েবসাইটে একই তথ্য দিয়েছে। কিডনি জটিলতায় ভোগা ব্যক্তিরা কামরাঙা খেলে তাঁদের মধ্যে যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে, তার মধ্যে আছে হেঁচকি, মানসিক বিভ্রান্তি, খিঁচুনি, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ওয়েব এমডি আরও জানায়, নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ তথা, বোসুটিনিব, প্যানোবিনোস্ট্যাট, ভেনেটোক্ল্যাক্স জাতীয় ওষুধ গ্রহণের সময় কামরাঙা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
কামরাঙা প্রসঙ্গে সিঙ্গাপুরের সরকারি খাদ্য কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েবসাইটে জানায়, কামরাঙা ফলের অনেক স্বাস্থ্যকর উপকার আছে। সুস্থ স্বাভাবিক যেকোনো ব্যক্তি পরিমিত পরিমাণে নিরাপদে কামরাঙা খেতে পারেন। তবে কিছু কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে কামরাঙা খাওয়ার ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
যেমন, কামরাঙায় অক্সালিক অ্যাসিড থাকায় এটি যাদের কিডনি সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে। অক্সালিক অ্যাসিড শরীরের ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলোর ব্যবহারের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাই কারও যদি কিডনির সমস্যা থাকে বা নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ সেবন করেন, তাহলে কোনো খারাপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে কামরাঙা বা এর জুস থেকে সাবধান থাকা ভালো।
স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন মেডিকেল নিউজ টুডের ওয়েবসাইটে কামরাঙার স্বাস্থ্যকর উপকারিতা সম্পর্কে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কামরাঙা ফাইবার সমৃদ্ধ ফল। একটি মাঝারি আকৃতির (৯১ গ্রাম) কামরাঙায় থাকে ২৮ ক্যালরি, শর্করা থাকে ৬ দশমিক ১ গ্রাম, প্রোটিন থাকে ১ গ্রাম এবং ফাইবার থাকে ২ দশমিক ৫ গ্রাম। এতে সেলুলোজ থাকে ৬০ শতাংশ, হেমিসেলুলোজ থাকে ২৭ শতাংশ এবং ১৩ শতাংশ পেকটিন থাকে।
এ ছাড়া কামরাঙার মধ্যে ভিটামিন এবং খনিজের বিপুল সম্ভার রয়েছে। যেমন, এর মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন সি এবং গ্যালিক অ্যাসিড, যা কোষের ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়তা করে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের বরাত দিয়ে ম্যাগাজিনটি জানায়, একই মাপের একটি কামরাঙায় ১২১ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম, ৩১. ৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি,১০. ৯ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ৯. ১ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম, ২. ৭৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ১.৮ গ্রাম সোডিয়াম থাকে।
অর্থাৎ একজন মানুষ একটি মাঝারি আকারের কামরাঙা থেকে একবারেই ৩১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ করতে পারেন। যেখানে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের দিনে ৯০ মিলিগ্রাম এবং একজন নারীর ৭৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি গ্রহণ প্রয়োজন। তবে গর্ভকালীন সময়ে একজন নারীর ৮৫ মিলিগ্রাম এবং সন্তানকে দুগ্ধপানের সময়ে ১২০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি প্রয়োজন হয়।
তবে ফলটির অতিরিক্ত খাওয়াতে কিছু ঝুঁকির কথাও উল্লেখ করেছে ম্যাগাজিনটি। ম্যাগাজিনটি জানায়, কাঁচা বা অতিরিক্ত এই ফল খাওয়াতে কিছু ঝুঁকি আছে। যেমন:
কিডনিতে পাথর: কামরাঙায় অক্সালেট বা অক্সালিক অ্যাসিড থাকে। যা প্রাকৃতিকভাবে বিটরুট, পালংশাকেও বিদ্যমান। মানুষের শরীরও অক্সালেট তৈরি করে এবং প্রাকৃতিকভাবে মূত্রের মাধ্যমে নিঃসরণ করে। যদি কেউ অতিরিক্ত মাত্রায় এই অক্সালেট গ্রহণ করে তাহলে এর ফলে কিডনিতে পাথর ও কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
হজমে সমস্যা: কাঁচা কামরাঙায় অক্সালেটের মাত্রা বেশি থাকে এবং এটি খাওয়ার ফলে হজমে সমস্যা বা বমি হতে পারে। তাই পাকা কামরাঙা খাওয়া উচিত।
কিডনি সমস্যায় জটিলতা: কারও যদি কিডনিতে সমস্যা থাকে, তাহলে তাঁদের কামরাঙা না খাওয়া বা খেলেও কমিয়ে খাওয়া উচিত। এই ধরনের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কামরাঙা স্নায়বিক জটিলতা তৈরি করতে পারে। কারও কিডনি জটিলতা না থাকলেও অতিরিক্ত কামরাঙা খাওয়া কিডনির ক্ষতি করতে পারে। এ ছাড়া কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ গ্রহণের সময় কামরাঙা খাওয়া মানবদেহে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
সর্বোপরি ম্যাগাজিনটি জানায়, কারও যদি কিডনিতে সমস্যা থাকে এবং কোনো ওষুধ সেবনের মধ্য দিয়ে যায়, তাহলে তাঁর কামরাঙা খাওয়ার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া জরুরি।
উল্লিখিত আলোচনা থেকে স্পষ্ট, কামরাঙা পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ একটি ফল। সুস্থ–স্বাভাবিক কারও জন্য ফলটি খাওয়া বারণ এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই এবং এটিকে ঢালাওভাবে কোথাও বিষাক্ত উল্লেখ করা হয়নি। তারা পরিমিত পর্যায়ে ফলটি খেতে পারেন। মূলত, ফলটিতে থাকা অক্সালিক অ্যাসিড উপাদানের জন্য এটি কিডনিতে সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে এক হিন্দু নারীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে দাবিতে মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে ১৮ সেকেন্ডের ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে, রক্তাক্ত এক নারীকে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দীপক শর্মা নামের একটি ভারতীয় এক্স হ্যান্ডল থেকে ভিডিওটি টুইট করে দাবি করা হয়, ‘ভিড
২০ ঘণ্টা আগেআওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সাবরিনা চৌধুরী নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় এমন দাবিতে স্ক্রিনশটটি পোস্ট করে লেখেন, ‘Sabnam Faria কিছুক্ষণ আগে একটা পোস্ট করলেন ৫ মিনিট পর ডিলিট করে দিলেন।’
২ দিন আগেএলিস থমাস নামের এক ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স গবেষকের বরাত দিয়ে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছে এআই পরিচালিত বট নেটওয়ার্ক।
২ দিন আগেগত বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ‘প্রবাসী জীবন’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটি আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক শেয়ার হয়েছে। রিয়েকশন পড়েছে ৪ হাজারের বেশি। ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৪২ হাজার বার।
৩ দিন আগে