ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
মানুষের জিহ্বার ভিন্ন ভিন্ন অংশে ভিন্ন রকম স্বাদ অনুভূত হয়। জিহ্বার অগ্রভাগে মিষ্টতা, অগ্রভাগের দুই পাশে লবণাক্ততা, পশ্চাতে তিক্ততা এবং পশ্চাতের দুই পাশ টক—এমন তথ্য পাঠ্যবইয়ের কল্যাণে শিক্ষার্থীদের কাছে খুব পরিচিত।
বহুল প্রচলিত এই ধারণা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের বিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানের কোনো কোনো পাঠ্যপুস্তকে পাওয়া যায়। মানবদেহের সংবেদী অঙ্গ নিয়ে জাতীয় শিক্ষক বাতায়নের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনেও জিহ্বার অংশভেদে স্বাদের ভিন্নতা নিয়ে প্রচলিত তথ্যটি দেখা যায়। ড. গাজী আসমত ও গাজী আজমলের লেখা উচ্চমাধ্যমিকের জীববিজ্ঞান বইয়ের দ্বিতীয় পত্রেও (২০২১ সংস্করণ) জিহ্বার অংশভেদে ভিন্ন স্বাদের অনুভূতির কথা রয়েছে। বাংলাদেশের পুরোনো শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়েও ‘জিহ্বার স্বাদ কোরকের’ এই চিত্র ছিল। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এ তথ্য ছড়িয়েছে। তবে কেবল বাংলাদেশের বইগুলোতেও নয়, বিশ্বজুড়েই বই-পুস্তকে জিহ্বার অংশভেদে স্বাদের ভিন্নতা নিয়ে এ তথ্য জায়গা করে নিয়েছে।
কিন্তু আসলেই কি জিহ্বার অংশভেদে স্বাদ অনুভবের ভিন্নতা হয়? মিষ্টতা, লবণাক্ততা, তিক্ততা ও টক স্বাদ অনুভবের জন্য জিহ্বার অংশ কি নির্দিষ্ট আছে? এসব প্রশ্নের উত্তর সন্ধানে বিজ্ঞানবিষয়ক ওয়েবসাইট লাইভ সায়েন্সে ২০০৬ সালের আগস্টের এক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
সেখানে বলা হয়, মিষ্টি, টক, নোনতা ও তিতা—এই চার স্বাদের অনুভূতির সঙ্গে জিহ্বার চারটি অংশকে সম্পৃক্ত করে প্রচারিত তথ্য ও চিত্র ভুল। এখন পর্যন্ত পাঁচ ধরনের মৌলিক স্বাদ শনাক্ত হয়েছে বলে বিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণা জার্নাল নেচার জানিয়েছে। এগুলো হলো মিষ্টি, নোনতা, তিতা, টক ও উমামি। উমামি হচ্ছে, মনোসোডিয়াম গ্লুটামেটের স্বাদ, যা সাধারণত চায়নিজ খাবারে পাওয়া যায়।
লাইভ সায়েন্স বলছে, এসব স্বাদ জিহ্বার সব অংশই শনাক্ত করতে পারে। জিহ্বা কীভাবে টক স্বাদ অনুভব করে, তা নিয়ে নেচার জার্নালে ২০০৬ সালের ২৩ আগস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে লাইভ সায়েন্স জানায়, বিজ্ঞানীরা জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে ইঁদুরের ওপর গবেষণা করে এমন এক প্রোটিন শনাক্ত করেছেন, যা জিহ্বায় টক স্বাদ চিহ্নিত করতে পারে। এটি একই সঙ্গে নষ্ট বা অপরিপক্ব খাবার চিনতে মানুষসহ অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীকে সহায়তা করে।
লাইভ সায়েন্সের ওয়েবসাইট থেকে আরও জানা যায়, স্বাদ শনাক্তকারী কোষগুলো খুব সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে। ১৯৭৪ সালে স্বাদ গবেষণায় প্রথম অগ্রগতি হয়। তখনই জানা যায়, জিহ্বার স্বাদকোরকের মানচিত্রটি মূলত একটি শতাব্দীপ্রাচীন ভুল। এটা যে ভুল, সেটা ঘরে বসেই প্রমাণ করা সম্ভব। যেমন জিহ্বার সম্মুখভাগে শুধু মিষ্টি স্বাদ অনুভূত হয় বলে ধারণা প্রচলিত আছে। কিন্তু এক চিমটি লবণ জিবের আগায় রাখলে নিশ্চিতভাবেই নোনতা স্বাদ অনুভূত হবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজে ২০১৭ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুগ যুগ ধরে স্বাদ অনুভব-সংক্রান্ত জিহ্বার চিত্রটি শত শত পাঠ্যবইয়ে ছাপা হয়েছে। দাবি করা হয়, এই চিত্রের উৎপত্তি ডেভিড পাউলি হ্যানিগ নামে একজন জার্মান বিজ্ঞানীর ১৯০১ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র থেকে। মানুষের জিহ্বার বিভিন্ন অংশে নোনতা, মিষ্টি, টক ও তেতো নমুনা ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি আবিষ্কার করেন, মানুষের স্বাদকোরকের সংবেদনশীলতা জিহ্বার বিভিন্ন অংশে পরিবর্তিত হয়।
তিনি জিহ্বার অগ্রভাগ ও প্রান্তগুলোকে বিভিন্ন স্বাদের প্রতি সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল মনে করেছিলেন। যদিও গবেষণায় এই সংবেদনশীলতা স্বাদের ওপর নির্ভর করে এমন কোনো দাবি তিনি করেননি। তবে গবেষণালব্ধ তথ্যগুলোকে গ্রাফের মাধ্যমে উপস্থাপন করার সময় ওই গ্রাফে ধারণা দেওয়া হয়েছিল, জিহ্বার বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন স্বাদের সঙ্গে সম্পর্কিত।
স্বাদ অনুভব-সংক্রান্ত জিহ্বার চিত্রটি কীভাবে এল, তা নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার শীর্ষস্থানীয় স্বাদবিষয়ক বিজ্ঞানী স্টিভেন মুঙ্গেরের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, স্টিভেন মুঙ্গেরের মতে চিত্রটি এডউইন বোরিং নামের একজন মনোবিজ্ঞানীর ব্যাখ্যা থেকে এসেছে। এডউইন বোরিং মানুষের উপলব্ধি এবং ইন্দ্রিয় সম্পর্কে একটি বই লিখেছিলেন। এই বইয়ে বিভিন্ন স্বাদের জন্য জিহ্বার বিভিন্ন অংশ রয়েছে—এমন চিত্রও অন্তর্ভুক্ত করা হয়; যা এখন পাঠ্যবইগুলোতে দেখা যায়। স্টিভেন মুঙ্গের বলেন, জিহ্বার বিভিন্ন অংশ যেকোনো কিছুর স্বাদ গ্রহণ করতে পারে। তবে জিহ্বার কিছু অংশ নির্দিষ্ট স্বাদের জন্য কিছুটা বেশি সংবেদনশীল। যদিও এই সংবেদনশীলতা খুবই অল্প।
কানাডার দ্য ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর শতাব্দীপ্রাচীন স্টুডেন্ট নিউজপেপার দ্য ভার্সিটির জিহ্বার স্বাদকোরক-সম্পর্কিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জিহ্বার স্বাদকোরকের বহুল প্রচলিত চিত্রটি ভুল ধারণা। আধুনিক শারীরতত্ত্ব মতে, এই চিত্রের কোনো ভিত্তি নেই। প্রকৃতপক্ষে জিহ্বার সব স্বাদকোরকই সব ধরনের স্বাদ শনাক্ত করতে পারে। মনে করা হয়, এই ভুল ধারণার জন্ম স্বাদ অনুভূতির শারীরতত্ত্বের ওপর ডেভিড পাউলি হ্যানিগ নামে ১৯০১ সালে একজন গবেষকের প্রকাশিত গবেষণা নিয়ে ডা. এডউইন বোরিং নামে একজন চিকিৎসকের দুর্বল বিশ্লেষণ থেকে।
মূল গবেষণাটিতে শুধু জিহ্বাজুড়ে মৌলিক স্বাদগুলো শনাক্ত করার জন্য সংবেদনশীলতার পরিবর্তনগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। ডা. বোরিং তাঁর বিশ্লেষণে এসব পরিবর্তনকে অতিরঞ্জিত করেন, যা পরে আলাদা স্বাদের জন্য জিহ্বার প্রতিটি অংশ একচেটিয়াভাবে দায়ী—এমন দাবিতে রূপান্তরিত হয়। দাবিটি ১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গের শারীরতত্ত্ব বিভাগের গবেষক ভার্জিনিয়া কলিংসের গবেষণার আগপর্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। ভার্জিনিয়া কলিংস প্রমাণ করেন, স্বাদ গ্রহণের অনুভূতি স্বাদকোরক বা জিহ্বার অংশভেদে আলাদা হয় না।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন সায়েন্সে প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা যায়, জিহ্বার স্বাদ অনুভূতির যে চিত্র পাওয়া যায়, সেটি এরই মধ্যে শারীরতত্ত্ব ও স্নায়ুবিজ্ঞানীদের মাধ্যমে অগ্রহণযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। জিহ্বায় থাকা স্বাদকোরক সব স্বাদের জন্যই সমানভাবে সাড়া দেয়।
জিহ্বার স্বাদকোরকগুলোর কাজের ব্যাপারে স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইনের বরাতে জানা যায়, পুরো জিহ্বা পাঁচটি মৌলিক স্বাদ শনাক্ত করতে পারে। স্বাদভেদে জিহ্বার আলাদা অংশ নেই। তবে সাধারণভাবে কেন্দ্রের তুলনায় জিহ্বার দুই পাশ সব স্বাদের প্রতি বেশি সংবেদনশীল। যখন কেউ কিছু খায়, স্বাদকোরকগুলো খাদ্যে থাকা রাসায়নিক উপাদানগুলো বিশ্লেষণ করে মস্তিষ্কে সংকেত প্রেরণ করে এবং এর মাধ্যমে ওই ব্যক্তি স্বাদের অনুভূতি উপলব্ধি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ওয়েবসাইটেও স্বাদভেদে জিহ্বার ভিন্ন ভিন্ন অংশ নির্দিষ্ট থাকার তথ্যকে ভুল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ওয়েবসাইটে বলা হয়, জিহ্বার ভিন্ন ভিন্ন অংশ ভিন্ন স্বাদ গ্রহণ করে—এটি ভুল ধারণা। প্রকৃতপক্ষে জিহ্বার সব স্বাদকোরকই পাঁচটি মৌলিক স্বাদ শনাক্ত করতে পারে। মূলত জিহ্বার কিছু অংশ কিছু স্বাদের প্রতি অন্য অংশের তুলনায় কিছুটা বেশি সংবেদনশীল।
ওপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট, স্বাদের অনুভূতি গ্রহণে জিহ্বার আলাদা কোনো অংশ নেই। সব অংশই সমানভাবে পাঁচটি মৌলিক স্বাদই অনুভব করতে পারে। ‘অন দ্য সাইকোফিজিকস অব টেস্টস’ অর্থাৎ স্বাদের মনোভৌতিক বিষয়ে গবেষণা করেন জার্মান গবেষক ডেভিড পাউলি হ্যানিগ। তাঁর গবেষণাকে দুর্বলভাবে বিশ্লেষণ করে ডা. এডউইন বোরিং নামে একজন চিকিৎসক জিহ্বার অংশভেদে স্বাদ অনুভূতির বৈচিত্র্যের প্রচলিত চিত্রটি তৈরি করেন।
মানুষের জিহ্বার ভিন্ন ভিন্ন অংশে ভিন্ন রকম স্বাদ অনুভূত হয়। জিহ্বার অগ্রভাগে মিষ্টতা, অগ্রভাগের দুই পাশে লবণাক্ততা, পশ্চাতে তিক্ততা এবং পশ্চাতের দুই পাশ টক—এমন তথ্য পাঠ্যবইয়ের কল্যাণে শিক্ষার্থীদের কাছে খুব পরিচিত।
বহুল প্রচলিত এই ধারণা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের বিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানের কোনো কোনো পাঠ্যপুস্তকে পাওয়া যায়। মানবদেহের সংবেদী অঙ্গ নিয়ে জাতীয় শিক্ষক বাতায়নের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনেও জিহ্বার অংশভেদে স্বাদের ভিন্নতা নিয়ে প্রচলিত তথ্যটি দেখা যায়। ড. গাজী আসমত ও গাজী আজমলের লেখা উচ্চমাধ্যমিকের জীববিজ্ঞান বইয়ের দ্বিতীয় পত্রেও (২০২১ সংস্করণ) জিহ্বার অংশভেদে ভিন্ন স্বাদের অনুভূতির কথা রয়েছে। বাংলাদেশের পুরোনো শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়েও ‘জিহ্বার স্বাদ কোরকের’ এই চিত্র ছিল। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এ তথ্য ছড়িয়েছে। তবে কেবল বাংলাদেশের বইগুলোতেও নয়, বিশ্বজুড়েই বই-পুস্তকে জিহ্বার অংশভেদে স্বাদের ভিন্নতা নিয়ে এ তথ্য জায়গা করে নিয়েছে।
কিন্তু আসলেই কি জিহ্বার অংশভেদে স্বাদ অনুভবের ভিন্নতা হয়? মিষ্টতা, লবণাক্ততা, তিক্ততা ও টক স্বাদ অনুভবের জন্য জিহ্বার অংশ কি নির্দিষ্ট আছে? এসব প্রশ্নের উত্তর সন্ধানে বিজ্ঞানবিষয়ক ওয়েবসাইট লাইভ সায়েন্সে ২০০৬ সালের আগস্টের এক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
সেখানে বলা হয়, মিষ্টি, টক, নোনতা ও তিতা—এই চার স্বাদের অনুভূতির সঙ্গে জিহ্বার চারটি অংশকে সম্পৃক্ত করে প্রচারিত তথ্য ও চিত্র ভুল। এখন পর্যন্ত পাঁচ ধরনের মৌলিক স্বাদ শনাক্ত হয়েছে বলে বিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণা জার্নাল নেচার জানিয়েছে। এগুলো হলো মিষ্টি, নোনতা, তিতা, টক ও উমামি। উমামি হচ্ছে, মনোসোডিয়াম গ্লুটামেটের স্বাদ, যা সাধারণত চায়নিজ খাবারে পাওয়া যায়।
লাইভ সায়েন্স বলছে, এসব স্বাদ জিহ্বার সব অংশই শনাক্ত করতে পারে। জিহ্বা কীভাবে টক স্বাদ অনুভব করে, তা নিয়ে নেচার জার্নালে ২০০৬ সালের ২৩ আগস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে লাইভ সায়েন্স জানায়, বিজ্ঞানীরা জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে ইঁদুরের ওপর গবেষণা করে এমন এক প্রোটিন শনাক্ত করেছেন, যা জিহ্বায় টক স্বাদ চিহ্নিত করতে পারে। এটি একই সঙ্গে নষ্ট বা অপরিপক্ব খাবার চিনতে মানুষসহ অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীকে সহায়তা করে।
লাইভ সায়েন্সের ওয়েবসাইট থেকে আরও জানা যায়, স্বাদ শনাক্তকারী কোষগুলো খুব সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে। ১৯৭৪ সালে স্বাদ গবেষণায় প্রথম অগ্রগতি হয়। তখনই জানা যায়, জিহ্বার স্বাদকোরকের মানচিত্রটি মূলত একটি শতাব্দীপ্রাচীন ভুল। এটা যে ভুল, সেটা ঘরে বসেই প্রমাণ করা সম্ভব। যেমন জিহ্বার সম্মুখভাগে শুধু মিষ্টি স্বাদ অনুভূত হয় বলে ধারণা প্রচলিত আছে। কিন্তু এক চিমটি লবণ জিবের আগায় রাখলে নিশ্চিতভাবেই নোনতা স্বাদ অনুভূত হবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজে ২০১৭ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুগ যুগ ধরে স্বাদ অনুভব-সংক্রান্ত জিহ্বার চিত্রটি শত শত পাঠ্যবইয়ে ছাপা হয়েছে। দাবি করা হয়, এই চিত্রের উৎপত্তি ডেভিড পাউলি হ্যানিগ নামে একজন জার্মান বিজ্ঞানীর ১৯০১ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র থেকে। মানুষের জিহ্বার বিভিন্ন অংশে নোনতা, মিষ্টি, টক ও তেতো নমুনা ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি আবিষ্কার করেন, মানুষের স্বাদকোরকের সংবেদনশীলতা জিহ্বার বিভিন্ন অংশে পরিবর্তিত হয়।
তিনি জিহ্বার অগ্রভাগ ও প্রান্তগুলোকে বিভিন্ন স্বাদের প্রতি সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল মনে করেছিলেন। যদিও গবেষণায় এই সংবেদনশীলতা স্বাদের ওপর নির্ভর করে এমন কোনো দাবি তিনি করেননি। তবে গবেষণালব্ধ তথ্যগুলোকে গ্রাফের মাধ্যমে উপস্থাপন করার সময় ওই গ্রাফে ধারণা দেওয়া হয়েছিল, জিহ্বার বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন স্বাদের সঙ্গে সম্পর্কিত।
স্বাদ অনুভব-সংক্রান্ত জিহ্বার চিত্রটি কীভাবে এল, তা নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার শীর্ষস্থানীয় স্বাদবিষয়ক বিজ্ঞানী স্টিভেন মুঙ্গেরের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, স্টিভেন মুঙ্গেরের মতে চিত্রটি এডউইন বোরিং নামের একজন মনোবিজ্ঞানীর ব্যাখ্যা থেকে এসেছে। এডউইন বোরিং মানুষের উপলব্ধি এবং ইন্দ্রিয় সম্পর্কে একটি বই লিখেছিলেন। এই বইয়ে বিভিন্ন স্বাদের জন্য জিহ্বার বিভিন্ন অংশ রয়েছে—এমন চিত্রও অন্তর্ভুক্ত করা হয়; যা এখন পাঠ্যবইগুলোতে দেখা যায়। স্টিভেন মুঙ্গের বলেন, জিহ্বার বিভিন্ন অংশ যেকোনো কিছুর স্বাদ গ্রহণ করতে পারে। তবে জিহ্বার কিছু অংশ নির্দিষ্ট স্বাদের জন্য কিছুটা বেশি সংবেদনশীল। যদিও এই সংবেদনশীলতা খুবই অল্প।
কানাডার দ্য ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর শতাব্দীপ্রাচীন স্টুডেন্ট নিউজপেপার দ্য ভার্সিটির জিহ্বার স্বাদকোরক-সম্পর্কিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জিহ্বার স্বাদকোরকের বহুল প্রচলিত চিত্রটি ভুল ধারণা। আধুনিক শারীরতত্ত্ব মতে, এই চিত্রের কোনো ভিত্তি নেই। প্রকৃতপক্ষে জিহ্বার সব স্বাদকোরকই সব ধরনের স্বাদ শনাক্ত করতে পারে। মনে করা হয়, এই ভুল ধারণার জন্ম স্বাদ অনুভূতির শারীরতত্ত্বের ওপর ডেভিড পাউলি হ্যানিগ নামে ১৯০১ সালে একজন গবেষকের প্রকাশিত গবেষণা নিয়ে ডা. এডউইন বোরিং নামে একজন চিকিৎসকের দুর্বল বিশ্লেষণ থেকে।
মূল গবেষণাটিতে শুধু জিহ্বাজুড়ে মৌলিক স্বাদগুলো শনাক্ত করার জন্য সংবেদনশীলতার পরিবর্তনগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। ডা. বোরিং তাঁর বিশ্লেষণে এসব পরিবর্তনকে অতিরঞ্জিত করেন, যা পরে আলাদা স্বাদের জন্য জিহ্বার প্রতিটি অংশ একচেটিয়াভাবে দায়ী—এমন দাবিতে রূপান্তরিত হয়। দাবিটি ১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গের শারীরতত্ত্ব বিভাগের গবেষক ভার্জিনিয়া কলিংসের গবেষণার আগপর্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। ভার্জিনিয়া কলিংস প্রমাণ করেন, স্বাদ গ্রহণের অনুভূতি স্বাদকোরক বা জিহ্বার অংশভেদে আলাদা হয় না।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন সায়েন্সে প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা যায়, জিহ্বার স্বাদ অনুভূতির যে চিত্র পাওয়া যায়, সেটি এরই মধ্যে শারীরতত্ত্ব ও স্নায়ুবিজ্ঞানীদের মাধ্যমে অগ্রহণযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। জিহ্বায় থাকা স্বাদকোরক সব স্বাদের জন্যই সমানভাবে সাড়া দেয়।
জিহ্বার স্বাদকোরকগুলোর কাজের ব্যাপারে স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইনের বরাতে জানা যায়, পুরো জিহ্বা পাঁচটি মৌলিক স্বাদ শনাক্ত করতে পারে। স্বাদভেদে জিহ্বার আলাদা অংশ নেই। তবে সাধারণভাবে কেন্দ্রের তুলনায় জিহ্বার দুই পাশ সব স্বাদের প্রতি বেশি সংবেদনশীল। যখন কেউ কিছু খায়, স্বাদকোরকগুলো খাদ্যে থাকা রাসায়নিক উপাদানগুলো বিশ্লেষণ করে মস্তিষ্কে সংকেত প্রেরণ করে এবং এর মাধ্যমে ওই ব্যক্তি স্বাদের অনুভূতি উপলব্ধি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ওয়েবসাইটেও স্বাদভেদে জিহ্বার ভিন্ন ভিন্ন অংশ নির্দিষ্ট থাকার তথ্যকে ভুল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ওয়েবসাইটে বলা হয়, জিহ্বার ভিন্ন ভিন্ন অংশ ভিন্ন স্বাদ গ্রহণ করে—এটি ভুল ধারণা। প্রকৃতপক্ষে জিহ্বার সব স্বাদকোরকই পাঁচটি মৌলিক স্বাদ শনাক্ত করতে পারে। মূলত জিহ্বার কিছু অংশ কিছু স্বাদের প্রতি অন্য অংশের তুলনায় কিছুটা বেশি সংবেদনশীল।
ওপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট, স্বাদের অনুভূতি গ্রহণে জিহ্বার আলাদা কোনো অংশ নেই। সব অংশই সমানভাবে পাঁচটি মৌলিক স্বাদই অনুভব করতে পারে। ‘অন দ্য সাইকোফিজিকস অব টেস্টস’ অর্থাৎ স্বাদের মনোভৌতিক বিষয়ে গবেষণা করেন জার্মান গবেষক ডেভিড পাউলি হ্যানিগ। তাঁর গবেষণাকে দুর্বলভাবে বিশ্লেষণ করে ডা. এডউইন বোরিং নামে একজন চিকিৎসক জিহ্বার অংশভেদে স্বাদ অনুভূতির বৈচিত্র্যের প্রচলিত চিত্রটি তৈরি করেন।
বাংলাদেশে এক হিন্দু নারীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে দাবিতে মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে ১৮ সেকেন্ডের ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে, রক্তাক্ত এক নারীকে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দীপক শর্মা নামের একটি ভারতীয় এক্স হ্যান্ডল থেকে ভিডিওটি টুইট করে দাবি করা হয়, ‘ভিড
২০ ঘণ্টা আগেআওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সাবরিনা চৌধুরী নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় এমন দাবিতে স্ক্রিনশটটি পোস্ট করে লেখেন, ‘Sabnam Faria কিছুক্ষণ আগে একটা পোস্ট করলেন ৫ মিনিট পর ডিলিট করে দিলেন।’
২ দিন আগেএলিস থমাস নামের এক ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স গবেষকের বরাত দিয়ে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছে এআই পরিচালিত বট নেটওয়ার্ক।
২ দিন আগেগত বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ‘প্রবাসী জীবন’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটি আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক শেয়ার হয়েছে। রিয়েকশন পড়েছে ৪ হাজারের বেশি। ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৪২ হাজার বার।
৩ দিন আগে