ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
অমাবস্যা–পূর্ণিমা নিয়ে নানা সংস্কার প্রচলিত আছে। এমনই একটি সংস্কার অমাবস্যায়–পূর্ণিমায় বাড়ে বাতের ব্যথা। এমন সংস্কারের কী বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে, নাকি এটি কেবলই মানুষের অন্ধ বিশ্বাস?
আর কেনই বা হয় বাতের ব্যথা? বাতরোগ বর্তমান বিশ্বে খুবই সাধারণ, বিশেষ করে পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের ক্ষেত্রে। তবে শিশু থেকে যেকোনো বয়সের মানুষই বাতে আক্রান্ত হতে পারে। এটি পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
বাত অস্থিসন্ধিতে ব্যথা এবং প্রদাহের মতো সমস্যাগুলোর জন্য দায়ী। অস্থসন্ধি বলতে বোঝায়, যেখানে দুই বা তার বেশি হাড় মিলিত হয়। ১০০ টিরও বেশি বিভিন্ন ধরনের বাত আছে। এটি সাধারণত চলমান বা দীর্ঘস্থায়ী একটি শারীরিক সমস্যা।
বাতের সবচেয়ে সাধারণ দুটি ধরন হলো—
অস্টিওআরথ্রাইটিস: এটি বাতের সবচেয়ে সাধারণ রূপ। বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ এতে আক্রান্ত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে তরুণেরাও এতে আক্রান্ত হতে পারে। এটি সাধারণত হাত, হাঁটু, নিতম্ব এবং মেরুদণ্ডের অস্থসন্ধিতে দেখা দেয়। যদিও অস্টিওআরথ্রাইটিস যেকোনো অস্থিসন্ধিরই ক্ষতি করতে পারে।
রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস: এই ধরনের বাতে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা অস্টিওআরথ্রাইটিসের তুলনায় কম। এটি সাধারণত দেখা দেয় ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে। নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি আক্রান্ত হয়।
এটি শরীরের ‘অটো ইমিউন অবস্থা’, অর্থাৎ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অতি সংবেদনশীল হয়ে পড়লে অস্থিসন্ধিগুলোতে ব্যথা এবং ফোলাভাব সৃষ্টি করে। সময়ের সঙ্গে এটি অস্থিসন্ধির আরও ক্ষতি করতে পারে এবং শরীরের অন্যান্য প্রত্যঙ্গকেও প্রভাবিত করতে পারে।
এই দুই প্রকারের বাইরে বাতের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ধরনগুলো হলো:
গেঁটে বাত: গেঁটে বাত বা গাউট (ইংরেজি: Gout) হচ্ছে একটি প্রদাহজনিত রোগ। এতে সাইনোভিয়াল অস্থিসন্ধি ও এর আশপাশের টিস্যুতে মনোসোডিয়াম ইউরেট মনোহাইড্রেট ক্রিস্টাল জমা হয়। সাধারণত মাত্র ১–২ শতাংশ মানুষ এই ধরনের বাতে আক্রান্ত হয়। তবে নারীদের তুলনায় পুরুষেরা ৫ গুণ বেশি আক্রান্ত হয়।
অ্যানকিলোজিং স্পন্ডিলাইটিস: এই ধরনের বাত পিঠের নিচের জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিগুলোতে প্রভাব ফেলে।
সোরিয়াটিক আরথ্রাইটিস: এই ধরনের বাত সোরিয়াসিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের হয়।
জুভেনাইল আরথ্রাইটিস: ১৬ বছরের কম বয়সীদের এবং কিশোরদের মধ্যে এই ধরনের বাত দেখা দেয়।
বাত কেন হয়?
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স মেডিসিন জানায়, বাত কেন হয় তা নির্ভর করে বাতের ধরনের ওপর। অস্টিওআরথ্রাইটিস সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির আলাদা হয়ে যাওয়া বা এর ওপর অতিরিক্ত চাপের কারণে হয়। রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিসসহ আরও বেশ কিছু বাতের ক্ষেত্রে শরীরের ইমিউন সিস্টেম নিজস্ব টিস্যুতে আক্রমণের কারণে হয়। অস্থিসন্ধিতে ক্রিস্টাল জমা হওয়ার কারণে গাউট বা গেঁটে বাত হয়।
বাতের কিছু ধরন আবার জিনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। যেসব মানুষের জেনেটিক মার্কার (একটি নির্দিষ্ট ডিএনএ ক্রম) ‘HLA–B 27 ’, তাদের অ্যানকিলোজিং স্পন্ডিলাইটিসের ঝুঁকি বেশি থাকে। আবার বাতের কিছু ধরনের কারণ জানা যায় না।
বাতের সঙ্গে আবহাওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে কি?
এই প্রশ্নের উত্তরে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের প্রকাশনা হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিংয়ের জ্যেষ্ঠ ফ্যাকাল্টি এডিটর রবার্ট এইচ. শমারলিং বলেন, মেডিকেল মিথ বা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণাগুলোর সত্যাসত্য যাচাই করা কঠিন। যেমন, দীর্ঘদিন ধরে মানুষের মধ্যে প্রচলিত যে, আবহাওয়া বাতের ব্যথাকে প্রভাবিত করে। আমার অনেক রোগী বাতের ব্যথা এবং আবহাওয়ার মধ্যে স্পষ্ট সংযোগ লক্ষ্য করেন।
কেউ কেউ এই সংযোগ সম্পর্কে এতটাই বিশ্বাসী যে, তারা মনে করে, আবহাওয়াবিদদের চেয়ে তারা আবহাওয়ার ভালো ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে! হতে পারে যে তাদের এই ধারণা সত্য। কিন্তু বিজ্ঞান এটিকে সমর্থন করে না। খুব সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বর্ষাকাল এবং পিঠ বা জয়েন্টে ব্যথার লক্ষণগুলোর মধ্যে কোনো সংযোগ পাওয়া যায়নি। এই গবেষণা পর্যাপ্ত পরিমাণ ডেটার ওপর ভিত্তি করেই করা হয়েছিল।
রবার্ট এইচ. শমারলিং বলেন, তবে আমার রোগীরা যখন বলেন, তাঁরা অস্থিসন্ধির ব্যথা লক্ষ্য করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারেন, আমি তাঁদের বিশ্বাস করি। কারণ, অনেক মানুষ এই দুইয়ের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পান এবং এটিকে অস্বীকার করা যায় না। যদিও এটি গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের বিপরীত। কিন্তু আমি যেহেতু বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করি, তাই যতক্ষণ আমি প্রমাণ না পাচ্ছি, আমার কাছে আবহাওয়ার সঙ্গে বাতের ব্যথার সম্পর্ক সন্দেহের তালিকাতেই থাকবে।
বাত নিয়ে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের আরথ্রাইটিস ফাউন্ডেশন জানায়, অস্থিসন্ধির ব্যথা এবং আবহাওয়ার মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপারে খুব বেশি তথ্য–উপাত্ত পাওয়া যায় না। তবে কিছু কিছু গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিদর্শন পাওয়া যায়, যদিও এগুলো বিদ্যমান কিছু ফলাফলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যেমন, ২০১৯ সালের একটি ব্রিটিশ গবেষণায় অস্থিসন্ধির ব্যথা এবং আবহাওয়ার তিনটি উপাদানের মধ্যে সম্পর্ক পাওয়া যায়। যথা, বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা, বায়ুচাপ এবং বায়ুর গতি। তবে তাপমাত্রার সঙ্গে ব্যথার কোনো তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। আবার ২০১৫ সালে ক্ষুদ্র পরিসরে চালানো কিছু গবেষণায় বাতের ব্যথার সঙ্গে তাপমাত্রার সম্পর্ক পাওয়া যায়।
সর্বোপরি, আবহাওয়া যদি প্রকৃতপক্ষে বাতের ব্যথাকে প্রভাবিত করেও তবে গবেষণাগুলোর ফলাফল বলছে, বাতের ব্যথার সঙ্গে আবহাওয়ার সংযোগ পরিষ্কার নয় এবং এটি সরাসরি নাও হতে পারে।
অমাবস্যা–পূর্ণিমার সঙ্গে কি বাতের ব্যথার সম্পর্ক আছে?
বিশ্ব আরথ্রাইটিস দিবস উপলক্ষে ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর ভারতের হায়দরাবাদের যশোদা হসপিটালসের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও অর্থোপেডিক সার্জন ডা. শশী কন্থ জি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমসে একটি নিবন্ধ লেখেন। এই নিবন্ধে তিনি বাত নিয়ে প্রচলিত বিভিন্ন ভুল ধারণা খণ্ডন করেন। পূর্ণিমায় বাতের ব্যথা বাড়ে এ প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, এটা সম্পূর্ণ ভুল এবং বহুল প্রচলিত মিথ। দুটির মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। এটি কিছুটা কাকতালীয়, কিছুটা মানসিক।
বিভিন্ন ধরনের ব্যথা নিরাময়ে কাজ করা কলকাতাকেন্দ্রিক সমব্যথী পেইন ক্লিনিকের ওয়েবসাইটেও এই প্রসঙ্গে একটি প্রশ্নোত্তর পর্বে বলা হয়েছে, এটি একটি সাধারণ ভুল ধারণা। দীর্ঘস্থায়ী বাতের ব্যথার মতো কিছু ব্যথা সময়ে সময়ে বাড়ে বা কমে। কিন্তু এর সঙ্গে চন্দ্রচক্র বা পূর্ণিমার কোনো সম্পর্ক এখনো পাওয়া যায়নি।
একইভাবে অমাবস্যার সঙ্গেও বাতের ব্যথার কোনো সম্পর্ক নিয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য–উপাত্ত পাওয়া যায় না।
যেহেতু, বাতের ব্যথার সঙ্গে অমাবস্যা বা পূর্ণিমার সম্পর্ক মেডিকেল মিথ বা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণাগুলোর একটি এবং সাধারণ মানুষ দুইয়ের মধ্যে যোগসূত্রও পান, তাই রবার্ট এইচ. শমারলিংয়ের ভাষায় বলতে হয়, এ বিষয়ে যেহেতু কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি, তাই এটি এখন পর্যন্ত প্রমাণিত না।
(ডিসক্লেইমার: এই প্রতিবেদন আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের সাধারণ ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনের আওতাভুক্ত নয়। এটি অমাবস্যা বা পূর্ণিমার সঙ্গে বাতের ব্যথার সম্পর্ক নিয়ে ইন্টারনেটে নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি। এটি স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক কোনো নিবন্ধ নয়। যেহেতু বিষয়টি চিকিৎসা সম্পর্কিত, তাই ভবিষ্যতে এটি পরিবর্তন হলেও হতে পারে।)
অমাবস্যা–পূর্ণিমা নিয়ে নানা সংস্কার প্রচলিত আছে। এমনই একটি সংস্কার অমাবস্যায়–পূর্ণিমায় বাড়ে বাতের ব্যথা। এমন সংস্কারের কী বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে, নাকি এটি কেবলই মানুষের অন্ধ বিশ্বাস?
আর কেনই বা হয় বাতের ব্যথা? বাতরোগ বর্তমান বিশ্বে খুবই সাধারণ, বিশেষ করে পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের ক্ষেত্রে। তবে শিশু থেকে যেকোনো বয়সের মানুষই বাতে আক্রান্ত হতে পারে। এটি পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
বাত অস্থিসন্ধিতে ব্যথা এবং প্রদাহের মতো সমস্যাগুলোর জন্য দায়ী। অস্থসন্ধি বলতে বোঝায়, যেখানে দুই বা তার বেশি হাড় মিলিত হয়। ১০০ টিরও বেশি বিভিন্ন ধরনের বাত আছে। এটি সাধারণত চলমান বা দীর্ঘস্থায়ী একটি শারীরিক সমস্যা।
বাতের সবচেয়ে সাধারণ দুটি ধরন হলো—
অস্টিওআরথ্রাইটিস: এটি বাতের সবচেয়ে সাধারণ রূপ। বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ এতে আক্রান্ত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে তরুণেরাও এতে আক্রান্ত হতে পারে। এটি সাধারণত হাত, হাঁটু, নিতম্ব এবং মেরুদণ্ডের অস্থসন্ধিতে দেখা দেয়। যদিও অস্টিওআরথ্রাইটিস যেকোনো অস্থিসন্ধিরই ক্ষতি করতে পারে।
রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস: এই ধরনের বাতে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা অস্টিওআরথ্রাইটিসের তুলনায় কম। এটি সাধারণত দেখা দেয় ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে। নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি আক্রান্ত হয়।
এটি শরীরের ‘অটো ইমিউন অবস্থা’, অর্থাৎ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অতি সংবেদনশীল হয়ে পড়লে অস্থিসন্ধিগুলোতে ব্যথা এবং ফোলাভাব সৃষ্টি করে। সময়ের সঙ্গে এটি অস্থিসন্ধির আরও ক্ষতি করতে পারে এবং শরীরের অন্যান্য প্রত্যঙ্গকেও প্রভাবিত করতে পারে।
এই দুই প্রকারের বাইরে বাতের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ধরনগুলো হলো:
গেঁটে বাত: গেঁটে বাত বা গাউট (ইংরেজি: Gout) হচ্ছে একটি প্রদাহজনিত রোগ। এতে সাইনোভিয়াল অস্থিসন্ধি ও এর আশপাশের টিস্যুতে মনোসোডিয়াম ইউরেট মনোহাইড্রেট ক্রিস্টাল জমা হয়। সাধারণত মাত্র ১–২ শতাংশ মানুষ এই ধরনের বাতে আক্রান্ত হয়। তবে নারীদের তুলনায় পুরুষেরা ৫ গুণ বেশি আক্রান্ত হয়।
অ্যানকিলোজিং স্পন্ডিলাইটিস: এই ধরনের বাত পিঠের নিচের জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিগুলোতে প্রভাব ফেলে।
সোরিয়াটিক আরথ্রাইটিস: এই ধরনের বাত সোরিয়াসিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের হয়।
জুভেনাইল আরথ্রাইটিস: ১৬ বছরের কম বয়সীদের এবং কিশোরদের মধ্যে এই ধরনের বাত দেখা দেয়।
বাত কেন হয়?
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স মেডিসিন জানায়, বাত কেন হয় তা নির্ভর করে বাতের ধরনের ওপর। অস্টিওআরথ্রাইটিস সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির আলাদা হয়ে যাওয়া বা এর ওপর অতিরিক্ত চাপের কারণে হয়। রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিসসহ আরও বেশ কিছু বাতের ক্ষেত্রে শরীরের ইমিউন সিস্টেম নিজস্ব টিস্যুতে আক্রমণের কারণে হয়। অস্থিসন্ধিতে ক্রিস্টাল জমা হওয়ার কারণে গাউট বা গেঁটে বাত হয়।
বাতের কিছু ধরন আবার জিনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। যেসব মানুষের জেনেটিক মার্কার (একটি নির্দিষ্ট ডিএনএ ক্রম) ‘HLA–B 27 ’, তাদের অ্যানকিলোজিং স্পন্ডিলাইটিসের ঝুঁকি বেশি থাকে। আবার বাতের কিছু ধরনের কারণ জানা যায় না।
বাতের সঙ্গে আবহাওয়ার কোনো সম্পর্ক আছে কি?
এই প্রশ্নের উত্তরে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের প্রকাশনা হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিংয়ের জ্যেষ্ঠ ফ্যাকাল্টি এডিটর রবার্ট এইচ. শমারলিং বলেন, মেডিকেল মিথ বা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণাগুলোর সত্যাসত্য যাচাই করা কঠিন। যেমন, দীর্ঘদিন ধরে মানুষের মধ্যে প্রচলিত যে, আবহাওয়া বাতের ব্যথাকে প্রভাবিত করে। আমার অনেক রোগী বাতের ব্যথা এবং আবহাওয়ার মধ্যে স্পষ্ট সংযোগ লক্ষ্য করেন।
কেউ কেউ এই সংযোগ সম্পর্কে এতটাই বিশ্বাসী যে, তারা মনে করে, আবহাওয়াবিদদের চেয়ে তারা আবহাওয়ার ভালো ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে! হতে পারে যে তাদের এই ধারণা সত্য। কিন্তু বিজ্ঞান এটিকে সমর্থন করে না। খুব সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বর্ষাকাল এবং পিঠ বা জয়েন্টে ব্যথার লক্ষণগুলোর মধ্যে কোনো সংযোগ পাওয়া যায়নি। এই গবেষণা পর্যাপ্ত পরিমাণ ডেটার ওপর ভিত্তি করেই করা হয়েছিল।
রবার্ট এইচ. শমারলিং বলেন, তবে আমার রোগীরা যখন বলেন, তাঁরা অস্থিসন্ধির ব্যথা লক্ষ্য করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারেন, আমি তাঁদের বিশ্বাস করি। কারণ, অনেক মানুষ এই দুইয়ের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পান এবং এটিকে অস্বীকার করা যায় না। যদিও এটি গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের বিপরীত। কিন্তু আমি যেহেতু বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করি, তাই যতক্ষণ আমি প্রমাণ না পাচ্ছি, আমার কাছে আবহাওয়ার সঙ্গে বাতের ব্যথার সম্পর্ক সন্দেহের তালিকাতেই থাকবে।
বাত নিয়ে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের আরথ্রাইটিস ফাউন্ডেশন জানায়, অস্থিসন্ধির ব্যথা এবং আবহাওয়ার মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপারে খুব বেশি তথ্য–উপাত্ত পাওয়া যায় না। তবে কিছু কিছু গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিদর্শন পাওয়া যায়, যদিও এগুলো বিদ্যমান কিছু ফলাফলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যেমন, ২০১৯ সালের একটি ব্রিটিশ গবেষণায় অস্থিসন্ধির ব্যথা এবং আবহাওয়ার তিনটি উপাদানের মধ্যে সম্পর্ক পাওয়া যায়। যথা, বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা, বায়ুচাপ এবং বায়ুর গতি। তবে তাপমাত্রার সঙ্গে ব্যথার কোনো তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। আবার ২০১৫ সালে ক্ষুদ্র পরিসরে চালানো কিছু গবেষণায় বাতের ব্যথার সঙ্গে তাপমাত্রার সম্পর্ক পাওয়া যায়।
সর্বোপরি, আবহাওয়া যদি প্রকৃতপক্ষে বাতের ব্যথাকে প্রভাবিত করেও তবে গবেষণাগুলোর ফলাফল বলছে, বাতের ব্যথার সঙ্গে আবহাওয়ার সংযোগ পরিষ্কার নয় এবং এটি সরাসরি নাও হতে পারে।
অমাবস্যা–পূর্ণিমার সঙ্গে কি বাতের ব্যথার সম্পর্ক আছে?
বিশ্ব আরথ্রাইটিস দিবস উপলক্ষে ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর ভারতের হায়দরাবাদের যশোদা হসপিটালসের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও অর্থোপেডিক সার্জন ডা. শশী কন্থ জি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমসে একটি নিবন্ধ লেখেন। এই নিবন্ধে তিনি বাত নিয়ে প্রচলিত বিভিন্ন ভুল ধারণা খণ্ডন করেন। পূর্ণিমায় বাতের ব্যথা বাড়ে এ প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, এটা সম্পূর্ণ ভুল এবং বহুল প্রচলিত মিথ। দুটির মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। এটি কিছুটা কাকতালীয়, কিছুটা মানসিক।
বিভিন্ন ধরনের ব্যথা নিরাময়ে কাজ করা কলকাতাকেন্দ্রিক সমব্যথী পেইন ক্লিনিকের ওয়েবসাইটেও এই প্রসঙ্গে একটি প্রশ্নোত্তর পর্বে বলা হয়েছে, এটি একটি সাধারণ ভুল ধারণা। দীর্ঘস্থায়ী বাতের ব্যথার মতো কিছু ব্যথা সময়ে সময়ে বাড়ে বা কমে। কিন্তু এর সঙ্গে চন্দ্রচক্র বা পূর্ণিমার কোনো সম্পর্ক এখনো পাওয়া যায়নি।
একইভাবে অমাবস্যার সঙ্গেও বাতের ব্যথার কোনো সম্পর্ক নিয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য–উপাত্ত পাওয়া যায় না।
যেহেতু, বাতের ব্যথার সঙ্গে অমাবস্যা বা পূর্ণিমার সম্পর্ক মেডিকেল মিথ বা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণাগুলোর একটি এবং সাধারণ মানুষ দুইয়ের মধ্যে যোগসূত্রও পান, তাই রবার্ট এইচ. শমারলিংয়ের ভাষায় বলতে হয়, এ বিষয়ে যেহেতু কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি, তাই এটি এখন পর্যন্ত প্রমাণিত না।
(ডিসক্লেইমার: এই প্রতিবেদন আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের সাধারণ ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনের আওতাভুক্ত নয়। এটি অমাবস্যা বা পূর্ণিমার সঙ্গে বাতের ব্যথার সম্পর্ক নিয়ে ইন্টারনেটে নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি। এটি স্বাস্থ্য পরামর্শ বিষয়ক কোনো নিবন্ধ নয়। যেহেতু বিষয়টি চিকিৎসা সম্পর্কিত, তাই ভবিষ্যতে এটি পরিবর্তন হলেও হতে পারে।)
বাংলাদেশে এক হিন্দু নারীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে দাবিতে মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে ১৮ সেকেন্ডের ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে, রক্তাক্ত এক নারীকে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দীপক শর্মা নামের একটি ভারতীয় এক্স হ্যান্ডল থেকে ভিডিওটি টুইট করে দাবি করা হয়, ‘ভিড
১ দিন আগেআওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সাবরিনা চৌধুরী নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় এমন দাবিতে স্ক্রিনশটটি পোস্ট করে লেখেন, ‘Sabnam Faria কিছুক্ষণ আগে একটা পোস্ট করলেন ৫ মিনিট পর ডিলিট করে দিলেন।’
২ দিন আগেএলিস থমাস নামের এক ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স গবেষকের বরাত দিয়ে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছে এআই পরিচালিত বট নেটওয়ার্ক।
৩ দিন আগেগত বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ‘প্রবাসী জীবন’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটি আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক শেয়ার হয়েছে। রিয়েকশন পড়েছে ৪ হাজারের বেশি। ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৪২ হাজার বার।
৩ দিন আগে