ইশতিয়াক হাসান
আমাদের দেশে সাপ খুব পরিচিত প্রাণী। সাপ দেখলে, এমনকি নাম শুনলে আঁতকে ওঠেন এমন মানুষেরও অভাব নেই। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ বা অঞ্চলেই সাপের দেখা পাওয়া খুব সাধারণ ঘটনা। এই সরীসৃপটির পৃথিবীতে বাসও অন্তত ১৫ কোটি বছর ধরে। এখন যদি শোনেন বিশ্বে এমন কিছু এলাকা আছে যেখানে সাপ নেই, নিশ্চয় চমকে উঠবেন! তবে ঘটনা কিন্তু সত্যি।
আরও পরিষ্কারভাবে বললে এই দেশ এবং এলাকাগুলোতে প্রাকৃতিকভাবে সাপের বসতি নেই। তবে দুর্ঘটনাবশত কিংবা মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেওয়ার কারণে কোনো কোনোটিতে সাপ দেখা যেতে পারে কালেভদ্রে। এই অঞ্চলগুলোর কয়েকটিতে এমনকি সাপ পালা কিংবা বাইরে থেকে আনাও নিষিদ্ধ।
নিউজিল্যান্ড
অস্ট্রেলিয়া সাপের জন্য রীতিমতো বিখ্যাত। সেখানে ওশেনিয়ার আরেক দেশ নিউজিল্যান্ডে সাপই নেই। এ বাবদ ধন্যবাদ পেতে পারে দেশটির ভৌগোলিক অবস্থান। দক্ষিণ মেরুর কাছে অবস্থিত এ দেশটিতে সরীসৃপের কমতি নেই, তবে অভাব শুধু সাপের।
দেশটির ভূ-ভাগের চারপাশের সাগরে অবশ্য সাপ আছে। তবে এখানকার জমিতে সাপ পাবেন না। ধারণা করা হয়, অন্য কোনো স্থলভাগের সঙ্গে সংযোগ না থাকাই এর কারণ। তবে কালেভদ্রে হলেও সৈকতে যাওয়া মানুষেরা ইয়েলো-বেলিড সি স্নেকের দেখার কথা বলেছেন। গবেষকদের ধারণা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া এতে ভূমিকা রাখতে পারে।
এখন আপনি বলতেই পারেন, বাইরে থেকে কেউ যদি সাপ এনে ছেড়ে দেয়, তখন? এটা ঠেকাতে নিউজিল্যান্ডে আইন করে সাপ পোষা এমনকি বাইরে থেকে সাপ আমদানি নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। অর্থাৎ দেশটির কোনো চিড়িয়াখানায় পর্যন্ত সাপ নেই। শুনে অবাক হবেন, সাপ ধরায় দক্ষ ২০ জন লোককে নিউজিল্যান্ড সরকার নিয়োগ দিয়েছে দেশে এই সরীসৃপটিকে ঢোকানোর কোনো চেষ্টা হলে আটক করার জন্য। সাধারণত মালবোঝাই জাহাজ এবং উড়োজাহাজের করে সাপ পাচারের চেষ্টা হয় দেশটিতে।
আইসল্যান্ড
প্রচণ্ড শীতল আবহাওয়া এবং ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতার কারণে আইসল্যান্ডে কোনো বন্য সাপ নেই। শীতল রক্তের প্রাণীর সাপেরা এমনিতেই ঠান্ডায় শীতনিদ্রায় চলে যায়। আর আইসল্যান্ডে তো বারো মাসই শীত। কাজেই এই শীতল পরিবেশ এই সরীসৃপের জন্য একেবারেই অনুপযুক্ত। তবে কেউ কেউ ঘরের ভেতরের উষ্ণ পরিবেশে সাপ পোষেন। প্রকৃতিতে যেন এই সরীসৃপটি প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য তাদের সতর্ক থাকতে হয়।
আয়ারল্যান্ড
আয়ারল্যান্ডে সাপ না থাকার জন্য সর্বশেষ বরফযুগের দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন বেশির ভাগ বিজ্ঞানী। ১০ হাজার বছর আগে এটি শেষ হওয়া পর্যন্ত দ্বীপটি সরীসৃপের বসবাসের তুলনায় অনেক বেশি শীতল ছিল। সাগর অলঙ্ঘনীয় এক বাধা হয়ে ওঠার আগেই আয়ারল্যান্ডে পৌঁছে যায় বাদামি ভালুক, বুনো শূকর ও লিংক্সের মতো প্রাণী, কিন্তু সাপ কখনোই এটা করতে পারেনি
এদিকে ৬ হাজার ৫০০ বছর আগ পর্যন্ত ব্রিটেন ইউরোপের মূল ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সেতুর মাধ্যমে সংযুক্ত ছিল। ফলে এখানে কয়েক প্রজাতির সাপ আস্তানা গাড়ে। কিন্তু ব্রিটেনের সঙ্গে আয়ারল্যান্ডের স্থল যোগাযোগ প্রায় দুই হাজার বছর আগে হিমবাহ গলে ফুলে-ফেঁপে ওঠা সমুদ্রের কারণে কেটে যায়।
একমাত্র সরীসৃপ হিসেবে এখানে বসতি গাড়ার চেষ্টায় সফল হয়েছে কমন বা ভিভিপেরাস লিজার্ড। আয়ারল্যান্ডে এই একমাত্র স্থানীয় বা নিজস্ব সরীসৃপটি গত ১০ হাজার বছরের মধ্যে সেখানে আস্তানা গাড়ে। তবে আয়ারল্যান্ড গেলে ‘নকল এক সাপ’ আপনাকে বিভ্রান্ত করতে পারে। এটি পা নেই এমন একধরনের টিকটিকি বা ‘স্লো ওয়র্ম’। খুদে সাপ মনে করে বসা এই প্রাণীটি অবশ্য প্রকৃতপক্ষে আয়ারল্যান্ডের বাসিন্দা নয়। তবে আয়ারল্যান্ডে সাপ পোষায় কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
আলাস্কা
যুক্তরাষ্ট্রের যে দুটি অঙ্গরাজ্যে সাপ নেই বলে ধারণা করা হয় তার একটি আলাস্কা। অন্তত প্রাকৃতিকভাবে সাপের উপস্থিতির খবর এখন পর্যন্ত আলাস্কায় পাওয়া যায়নি। তার মানে এই নয় যে এখানকার পথে-ঘাটে বা ঝোপ-ঝাড়ে কখনো সাপ দেখেননি কেউ। ধারণা করা হয় এগুলো পোষা সাপ। কেউ ইচ্ছা করে ছেড়ে দিয়েছে নতুবা অসাবধানবশত বের হয়ে গিয়েছে।
১৯৭০-র দশকে অঙ্গরাজ্যটির দক্ষিণ-পূর্বের উষ্ণ প্রস্রবণগুলোর আশপাশে ‘গারটার স্নেকে’র দেখা মিলেছিল। তবে সাম্প্রতিক জরিপে এদের নাম-নিশানা পাওয়া যায়নি।
তবে সাপ এখানে মাঝে মাঝেই আলোচনায় এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ২০১৭ সালে। মেতানাসকা-সুসিতনা উপত্যকার এক বাড়ি থেকে স্যাম নামের ১৭ ফুট লম্বা এবং ১০০ পাউন্ড ওজনের একটি অজগর সাপ পালিয়ে যায়। এতে গাটা এলাকায় শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। সরকারি কর্তৃপক্ষ ছাড়াও এতে অংশ নেয় স্থানীয় জনসাধারণ। এর মধ্যে চার বছরের একটি বাচ্চা নিখোঁজ হলে অজগরটির ওপর সন্দেহ গিয়ে পড়ে। তবে সৌভাগ্যক্রমে শিশুটিকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাওয়া যায়। দু্ সপ্তাহ পর বিশালদেহী সরীসৃপটি নিজেই মালিকের বাড়িতে ফিরে এসে অবসান ঘটায় সব জল্পনা-কল্পনার।
আলাস্কাতে প্রাকৃতিকভাবে অনেকটাই সাপমুক্ত হওয়ার কারণ এখানকার প্রবল ঠান্ডা। আলাস্কায় ঠান্ডায় জমি জমে যায় এবং শীতকালে প্রচুর তুষারপাত হয়। এদিকে সাপ ঠান্ডা রক্তের প্রাণী এবং উষ্ণ জায়গায় বাস করে।
হাওয়াই
সাপের বিচরণ নেই যুক্তরাষ্ট্রের এমন দ্বিতীয় অঙ্গরাজ্য হাওয়াই। ভৌগলিকভাবে জায়গাটির বিচ্ছিন্নতা এখানে সাপ না থাকার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। এমনকি এখানে সাপ পোষাও নিষিদ্ধ। সাপসহ কেউ ধরা পড়লে তিন বছর পর্যন্ত জেল এবং দুই শ ডলার জরিমানা হতে পারে। কারণ হাওয়াইয়ের পরিবেশের সঙ্গে সাপ মানানসই নয়। এখানে প্রাকৃতিকভাবে সাপ না থাকায় এদের কোনো প্রাকৃতিক শত্রু নেই। ভুলে কোনোভাবে একবার জায়গাটির প্রকৃতিতে এই সরীসৃপরা ঢুকে পড়লে গোটা বাস্তুসংস্থানই ঝুঁকিতে পড়বে।
অবশ্য হাওয়াইয়ের কোনো কোনো চিড়িয়াখানায় সাপ পাবেন। তবে মানুষ পোষার জন্য চোরাই বাজার থেকে সাপ কেনার ঘটনা ঘটে। এমনকি প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়ার রেকর্ডও আছে। যেমন ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে হনুলুলু বিমানবন্দরের কাছে এক শ্রমিক দুই ফুট লম্বা একটা সাপ আবিষ্কার করেন। এদিকে ২০১১ সালের জুলাইয়ে নয় ফুটের একটি বোয়া কনস্ট্রিক্টর এবং সাত ফুট দীর্ঘ একটা অ্যালবিনো বার্মিজ অজগর ধরা পড়ে।
তবে একটি সাপ হাওয়াইয়ে পেলে খুব অবাক হবেন না। নির্বিষ এই সরীসৃপটিকে এমনকি সাপ নাও ভাবতে পারেন। আইল্যান্ড ব্লাইন্ড স্নেক নামের এই সাপটি ধারণা করা হয় ফিলিপাইন থেকে আমদানি করা হয়। কেউ কেউ একে কেঁচোর মতো কোনো প্রাণীও ভেবে বসেন। তবে এর দেখাও মেলে কালেভদ্রে।
গ্রিনল্যান্ড
গ্রিনল্যান্ডে সাপ না থাকার মূল কারণ এখানকার শীতল আবহাওয়া। এই আর্কটিক অঞ্চলটির তাপমাত্রা শূন্যের ওপরে উঠে কমই। এদিকে সাপের শরীরের বিপাক ক্রিয়ার জন্য উষ্ণ আবহাওয়া প্রয়োজন। তাই গ্রিনল্যান্ড এই সরীসৃপদের বসবাসের অনুপযোগী।
গ্রিনল্যান্ডের ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতাও সাপ না থাকার পেছনে ভূমিকা রেখেছে। চারপাশের সাগরের হিমশীতল জলও আশপাশের অঞ্চল থেকে এখানে আসার পথে বড় বাধা।
গ্রিনল্যান্ডে সাপের অনুপস্থিতির আরকটি কারণ ভূ-ভাগের বড় একটি অংশ হিমায়িত অবস্থায় থাকে। এই স্থায়ীভাবে হিমায়িত ভূমি প্রবল শীতের সময় সাপকে গর্ত করতে বা হাইবারনেশনের জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পেতে দেয় না। তা ছাড়া গ্রিনল্যান্ডের সীমিত জীববৈচিত্র্য সাপের কোনো প্রজাতির জন্য টিকে থাকা কঠিন করে তোলে।
এ ছাড়াও সাপমুক্ত আরও কিছু জায়গা আছে। অ্যান্টার্কটিকা পৃথিবীর একমাত্র মহাদেশ যেখানে সাপ নেই। ইতালির রোমের মধ্যে অবস্থিত ভ্যাটিকান সিটিতে সাপ কিংবা অন্য কোনো বন্যপ্রাণী নেই। ছোট ছোট বেশ কিছু দ্বীপও আছে যেগুলোতে সাপ নেই। অবশ্য এই দ্বীপগুলোর বেশির ভাগে মানুষও থাকে না।
সূত্র: পপুলার সায়েন্স, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, ট্রাভেল টু প্যারাডাইজ, অ্যাঙ্কোরেজ ডেইলি নিউজ, নিউজ এইটিন, দ্য স্টার, মিরাজ নিউজ, রিমোট ক্ল্যান
আমাদের দেশে সাপ খুব পরিচিত প্রাণী। সাপ দেখলে, এমনকি নাম শুনলে আঁতকে ওঠেন এমন মানুষেরও অভাব নেই। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ বা অঞ্চলেই সাপের দেখা পাওয়া খুব সাধারণ ঘটনা। এই সরীসৃপটির পৃথিবীতে বাসও অন্তত ১৫ কোটি বছর ধরে। এখন যদি শোনেন বিশ্বে এমন কিছু এলাকা আছে যেখানে সাপ নেই, নিশ্চয় চমকে উঠবেন! তবে ঘটনা কিন্তু সত্যি।
আরও পরিষ্কারভাবে বললে এই দেশ এবং এলাকাগুলোতে প্রাকৃতিকভাবে সাপের বসতি নেই। তবে দুর্ঘটনাবশত কিংবা মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেওয়ার কারণে কোনো কোনোটিতে সাপ দেখা যেতে পারে কালেভদ্রে। এই অঞ্চলগুলোর কয়েকটিতে এমনকি সাপ পালা কিংবা বাইরে থেকে আনাও নিষিদ্ধ।
নিউজিল্যান্ড
অস্ট্রেলিয়া সাপের জন্য রীতিমতো বিখ্যাত। সেখানে ওশেনিয়ার আরেক দেশ নিউজিল্যান্ডে সাপই নেই। এ বাবদ ধন্যবাদ পেতে পারে দেশটির ভৌগোলিক অবস্থান। দক্ষিণ মেরুর কাছে অবস্থিত এ দেশটিতে সরীসৃপের কমতি নেই, তবে অভাব শুধু সাপের।
দেশটির ভূ-ভাগের চারপাশের সাগরে অবশ্য সাপ আছে। তবে এখানকার জমিতে সাপ পাবেন না। ধারণা করা হয়, অন্য কোনো স্থলভাগের সঙ্গে সংযোগ না থাকাই এর কারণ। তবে কালেভদ্রে হলেও সৈকতে যাওয়া মানুষেরা ইয়েলো-বেলিড সি স্নেকের দেখার কথা বলেছেন। গবেষকদের ধারণা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া এতে ভূমিকা রাখতে পারে।
এখন আপনি বলতেই পারেন, বাইরে থেকে কেউ যদি সাপ এনে ছেড়ে দেয়, তখন? এটা ঠেকাতে নিউজিল্যান্ডে আইন করে সাপ পোষা এমনকি বাইরে থেকে সাপ আমদানি নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। অর্থাৎ দেশটির কোনো চিড়িয়াখানায় পর্যন্ত সাপ নেই। শুনে অবাক হবেন, সাপ ধরায় দক্ষ ২০ জন লোককে নিউজিল্যান্ড সরকার নিয়োগ দিয়েছে দেশে এই সরীসৃপটিকে ঢোকানোর কোনো চেষ্টা হলে আটক করার জন্য। সাধারণত মালবোঝাই জাহাজ এবং উড়োজাহাজের করে সাপ পাচারের চেষ্টা হয় দেশটিতে।
আইসল্যান্ড
প্রচণ্ড শীতল আবহাওয়া এবং ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতার কারণে আইসল্যান্ডে কোনো বন্য সাপ নেই। শীতল রক্তের প্রাণীর সাপেরা এমনিতেই ঠান্ডায় শীতনিদ্রায় চলে যায়। আর আইসল্যান্ডে তো বারো মাসই শীত। কাজেই এই শীতল পরিবেশ এই সরীসৃপের জন্য একেবারেই অনুপযুক্ত। তবে কেউ কেউ ঘরের ভেতরের উষ্ণ পরিবেশে সাপ পোষেন। প্রকৃতিতে যেন এই সরীসৃপটি প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য তাদের সতর্ক থাকতে হয়।
আয়ারল্যান্ড
আয়ারল্যান্ডে সাপ না থাকার জন্য সর্বশেষ বরফযুগের দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন বেশির ভাগ বিজ্ঞানী। ১০ হাজার বছর আগে এটি শেষ হওয়া পর্যন্ত দ্বীপটি সরীসৃপের বসবাসের তুলনায় অনেক বেশি শীতল ছিল। সাগর অলঙ্ঘনীয় এক বাধা হয়ে ওঠার আগেই আয়ারল্যান্ডে পৌঁছে যায় বাদামি ভালুক, বুনো শূকর ও লিংক্সের মতো প্রাণী, কিন্তু সাপ কখনোই এটা করতে পারেনি
এদিকে ৬ হাজার ৫০০ বছর আগ পর্যন্ত ব্রিটেন ইউরোপের মূল ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সেতুর মাধ্যমে সংযুক্ত ছিল। ফলে এখানে কয়েক প্রজাতির সাপ আস্তানা গাড়ে। কিন্তু ব্রিটেনের সঙ্গে আয়ারল্যান্ডের স্থল যোগাযোগ প্রায় দুই হাজার বছর আগে হিমবাহ গলে ফুলে-ফেঁপে ওঠা সমুদ্রের কারণে কেটে যায়।
একমাত্র সরীসৃপ হিসেবে এখানে বসতি গাড়ার চেষ্টায় সফল হয়েছে কমন বা ভিভিপেরাস লিজার্ড। আয়ারল্যান্ডে এই একমাত্র স্থানীয় বা নিজস্ব সরীসৃপটি গত ১০ হাজার বছরের মধ্যে সেখানে আস্তানা গাড়ে। তবে আয়ারল্যান্ড গেলে ‘নকল এক সাপ’ আপনাকে বিভ্রান্ত করতে পারে। এটি পা নেই এমন একধরনের টিকটিকি বা ‘স্লো ওয়র্ম’। খুদে সাপ মনে করে বসা এই প্রাণীটি অবশ্য প্রকৃতপক্ষে আয়ারল্যান্ডের বাসিন্দা নয়। তবে আয়ারল্যান্ডে সাপ পোষায় কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
আলাস্কা
যুক্তরাষ্ট্রের যে দুটি অঙ্গরাজ্যে সাপ নেই বলে ধারণা করা হয় তার একটি আলাস্কা। অন্তত প্রাকৃতিকভাবে সাপের উপস্থিতির খবর এখন পর্যন্ত আলাস্কায় পাওয়া যায়নি। তার মানে এই নয় যে এখানকার পথে-ঘাটে বা ঝোপ-ঝাড়ে কখনো সাপ দেখেননি কেউ। ধারণা করা হয় এগুলো পোষা সাপ। কেউ ইচ্ছা করে ছেড়ে দিয়েছে নতুবা অসাবধানবশত বের হয়ে গিয়েছে।
১৯৭০-র দশকে অঙ্গরাজ্যটির দক্ষিণ-পূর্বের উষ্ণ প্রস্রবণগুলোর আশপাশে ‘গারটার স্নেকে’র দেখা মিলেছিল। তবে সাম্প্রতিক জরিপে এদের নাম-নিশানা পাওয়া যায়নি।
তবে সাপ এখানে মাঝে মাঝেই আলোচনায় এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ২০১৭ সালে। মেতানাসকা-সুসিতনা উপত্যকার এক বাড়ি থেকে স্যাম নামের ১৭ ফুট লম্বা এবং ১০০ পাউন্ড ওজনের একটি অজগর সাপ পালিয়ে যায়। এতে গাটা এলাকায় শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। সরকারি কর্তৃপক্ষ ছাড়াও এতে অংশ নেয় স্থানীয় জনসাধারণ। এর মধ্যে চার বছরের একটি বাচ্চা নিখোঁজ হলে অজগরটির ওপর সন্দেহ গিয়ে পড়ে। তবে সৌভাগ্যক্রমে শিশুটিকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাওয়া যায়। দু্ সপ্তাহ পর বিশালদেহী সরীসৃপটি নিজেই মালিকের বাড়িতে ফিরে এসে অবসান ঘটায় সব জল্পনা-কল্পনার।
আলাস্কাতে প্রাকৃতিকভাবে অনেকটাই সাপমুক্ত হওয়ার কারণ এখানকার প্রবল ঠান্ডা। আলাস্কায় ঠান্ডায় জমি জমে যায় এবং শীতকালে প্রচুর তুষারপাত হয়। এদিকে সাপ ঠান্ডা রক্তের প্রাণী এবং উষ্ণ জায়গায় বাস করে।
হাওয়াই
সাপের বিচরণ নেই যুক্তরাষ্ট্রের এমন দ্বিতীয় অঙ্গরাজ্য হাওয়াই। ভৌগলিকভাবে জায়গাটির বিচ্ছিন্নতা এখানে সাপ না থাকার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। এমনকি এখানে সাপ পোষাও নিষিদ্ধ। সাপসহ কেউ ধরা পড়লে তিন বছর পর্যন্ত জেল এবং দুই শ ডলার জরিমানা হতে পারে। কারণ হাওয়াইয়ের পরিবেশের সঙ্গে সাপ মানানসই নয়। এখানে প্রাকৃতিকভাবে সাপ না থাকায় এদের কোনো প্রাকৃতিক শত্রু নেই। ভুলে কোনোভাবে একবার জায়গাটির প্রকৃতিতে এই সরীসৃপরা ঢুকে পড়লে গোটা বাস্তুসংস্থানই ঝুঁকিতে পড়বে।
অবশ্য হাওয়াইয়ের কোনো কোনো চিড়িয়াখানায় সাপ পাবেন। তবে মানুষ পোষার জন্য চোরাই বাজার থেকে সাপ কেনার ঘটনা ঘটে। এমনকি প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়ার রেকর্ডও আছে। যেমন ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে হনুলুলু বিমানবন্দরের কাছে এক শ্রমিক দুই ফুট লম্বা একটা সাপ আবিষ্কার করেন। এদিকে ২০১১ সালের জুলাইয়ে নয় ফুটের একটি বোয়া কনস্ট্রিক্টর এবং সাত ফুট দীর্ঘ একটা অ্যালবিনো বার্মিজ অজগর ধরা পড়ে।
তবে একটি সাপ হাওয়াইয়ে পেলে খুব অবাক হবেন না। নির্বিষ এই সরীসৃপটিকে এমনকি সাপ নাও ভাবতে পারেন। আইল্যান্ড ব্লাইন্ড স্নেক নামের এই সাপটি ধারণা করা হয় ফিলিপাইন থেকে আমদানি করা হয়। কেউ কেউ একে কেঁচোর মতো কোনো প্রাণীও ভেবে বসেন। তবে এর দেখাও মেলে কালেভদ্রে।
গ্রিনল্যান্ড
গ্রিনল্যান্ডে সাপ না থাকার মূল কারণ এখানকার শীতল আবহাওয়া। এই আর্কটিক অঞ্চলটির তাপমাত্রা শূন্যের ওপরে উঠে কমই। এদিকে সাপের শরীরের বিপাক ক্রিয়ার জন্য উষ্ণ আবহাওয়া প্রয়োজন। তাই গ্রিনল্যান্ড এই সরীসৃপদের বসবাসের অনুপযোগী।
গ্রিনল্যান্ডের ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতাও সাপ না থাকার পেছনে ভূমিকা রেখেছে। চারপাশের সাগরের হিমশীতল জলও আশপাশের অঞ্চল থেকে এখানে আসার পথে বড় বাধা।
গ্রিনল্যান্ডে সাপের অনুপস্থিতির আরকটি কারণ ভূ-ভাগের বড় একটি অংশ হিমায়িত অবস্থায় থাকে। এই স্থায়ীভাবে হিমায়িত ভূমি প্রবল শীতের সময় সাপকে গর্ত করতে বা হাইবারনেশনের জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পেতে দেয় না। তা ছাড়া গ্রিনল্যান্ডের সীমিত জীববৈচিত্র্য সাপের কোনো প্রজাতির জন্য টিকে থাকা কঠিন করে তোলে।
এ ছাড়াও সাপমুক্ত আরও কিছু জায়গা আছে। অ্যান্টার্কটিকা পৃথিবীর একমাত্র মহাদেশ যেখানে সাপ নেই। ইতালির রোমের মধ্যে অবস্থিত ভ্যাটিকান সিটিতে সাপ কিংবা অন্য কোনো বন্যপ্রাণী নেই। ছোট ছোট বেশ কিছু দ্বীপও আছে যেগুলোতে সাপ নেই। অবশ্য এই দ্বীপগুলোর বেশির ভাগে মানুষও থাকে না।
সূত্র: পপুলার সায়েন্স, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, ট্রাভেল টু প্যারাডাইজ, অ্যাঙ্কোরেজ ডেইলি নিউজ, নিউজ এইটিন, দ্য স্টার, মিরাজ নিউজ, রিমোট ক্ল্যান
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৯) দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর জলবায়ু ও পরিবেশ সাংবাদিকদের সংগঠন ‘সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম’ (সাকজেএফ) এর নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগেসেন্টমার্টিনের প্রবাল রক্ষায় সেখানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপকে কেন্দ্র করে গত কিছুদিন ধরেই আলোচনায় দ্বীপটি । এরই মধ্যে এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবাল আবিষ্কৃত হলো প্রশান্ত মহাসাগরে। অসংখ্য ক্ষুদ্র প্রাণী একসঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি প্রাচীরের পরিবর্তে একটি বিশালাকায় প্রবাল গঠন করেছে সেখা
১৬ ঘণ্টা আগেঢাকার বাতাস আজও অস্বাস্থ্যকর। বায়ুদূষণের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ওপরে উঠে দাঁড়িয়েছে পাঁচ এ। সকালে পরিমাপ অনুযায়ী ঢাকার বায়ুদূষণের স্কোর ১২৩। অন্যদিকে একদিনের ব্যবধানে আবারও বায়ুদূষণের শীর্ষে পাকিস্তানের লাহোর। গুরুতর বায়ুদূষণের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি। এ ছাড়া দূষণের শীর্ষ পাঁচ দেশের
১ দিন আগে‘পরিবেশ উপদেষ্টা বিদেশি পরামর্শে চলছেন কিন্তু দেশের মানুষের পরামর্শ ও দাবিদাওয়াকে পাত্তা দিচ্ছেন না। বিদেশি জার্নালের পরামর্শে তিনি নিজ দেশের পর্যটনশিল্প ও দ্বীপবাসীকে একটা মারাত্মক ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। যেটা কোনো দেশপ্রেমিক মানুষের কাজ হতে পারে না।’
১ দিন আগে