গোলাম ওয়াদুদ, ঢাকা
পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর চাপিয়ে দেওয়া রাষ্ট্রভাষার বিরোধিতা করে মায়ের ভাষায় কথা বলার দাবিতে লড়াইয়ের দিনটি আজ। শাসকেরা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার পর ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ছাত্ররা। এদিন ঢাকার রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে মাতৃভাষার দাবি প্রতিষ্ঠিত করেন তাঁরা।
১৯৫২ সালের এই দিনে সকাল ৯টায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করেন ছাত্ররা। তখন ক্যাম্পাস পুলিশ বেষ্টিত ছিল। উপাচার্য পুলিশকে গুলি চালাতে নিষেধ করেন ও ছাত্রদের সেখান থেকে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন। ছাত্ররা যখন চলে যাচ্ছিলেন তখন ১৪৪ ধারা লঙ্ঘনের জন্য কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের সংবাদ পেয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা পূর্ব বাংলা গণপরিষদ অবরোধ করে সেখানে তাঁদের প্রস্তাব জানান। ছাত্রদের একটি দল ভবনের মধ্যে দ্রুত ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি চালায়। নিহত হন সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ অনেকে। হত্যাকাণ্ডের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে শহর জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট, অফিস ও গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়, শুরু হয় সর্বাত্মক ধর্মঘট। এভাবেই বুকের তাজা রক্ত দিয়ে ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
একুশে ফেব্রুয়ারি এখন দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক দিবস। জাতিসংঘ দিনটিকে স্বীকৃতি দিয়ে ১৯৯৯ সালে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে পৃথিবীজুড়ে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
বাঙালিদের মতো আরও অনেকে দেশেই মানুষকে ভাষার জন্য স্বৈরাচার শাসকদের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে এবং এখন লড়ছে। সেখানে ঝরেছে রক্ত। নিজেদের ভাষার মর্যাদার দাবিতে যেসব দেশে আন্দোলন হয়েছে এর মধ্যে অন্যতম—ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, কানাডা ও লাটভিয়া।
১৯৬৫ সালে ভারতে ভাষার জন্য সবচেয়ে বড় আন্দোলন হয়। হিন্দিকে একমাত্র সরকারি ভাষা ঘোষণা দেওয়া হলে ১৯৬৫ সালের ২৬ জানুয়ারি তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। দলে দলে মানুষ রাজপথে নেমে আসে। প্রায় দুই মাস ধরে সহিংসতা চলে দক্ষিণাঞ্চলে, বিশেষ করে মাদ্রাজে। ১০০-৫০০ লোক প্রাণ হারায়। সারা দক্ষিণ ভারত বিশেষভাবে তামিলনাড়ু উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রতিবাদে আত্মাহুতির ঘটনাও ঘটে। আন্দোলনের পক্ষাবলম্বনকারী রাজনৈতিক দলগুলো ১৯৬৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজয়ী হয়। বিজয়ী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে ভারত ইউনিয়ন ত্যাগ করারও হুমকি দেওয়া হয়।
শেষ পর্যন্ত ১৯৬৭ সালে হিন্দির সঙ্গে ইংরেজিকেও ব্যবহারিক সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয়—আন্দোলনটি হয়েছিল হিন্দিকে একমাত্র সরকারি ভাষা ঘোষণা করার বিরুদ্ধে। কেননা তাহলে হিন্দি মাতৃভাষা ভাষিরা সুবিধা পেত এবং অন্যান্য সবার নিজ মাতৃভাষা এবং ইংরেজির সঙ্গে সঙ্গে হিন্দিটাও শিখতে হতো। এতে স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরা পিছিয়ে পড়তেন। সবচেয়ে প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ত আইসিএস (ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস) পরীক্ষায়, কারণ এ পরীক্ষা শুধু হিন্দিতে দিতে হতো।
শুধু মাদ্রাজ নয়, ভাষার জন্য আন্দোলন হয়েছিল আসামেও। ১৯৬১ সালে তৎকালীন প্রাদেশিক সরকার অহমীয় ভাষাকে আসামের একমাত্র সরকারি ভাষা করেছিল। যার বিরুদ্ধে আন্দোলনটি হয়। পরে অবশ্য বাংলাকেও স্বীকৃতি দেয় প্রাদেশিক সরকার। এই আন্দোলনে প্রাণ হারান ১১ জন।
এদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকাতেও হয়েছে ভাষার জন্য আন্দোলন। দক্ষিণ আফ্রিকার ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে বাংলাদেশের বায়ান্নর বাংলা ভাষা আন্দোলনের কিছুটা মিল রয়েছে। বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন করেন ছাত্ররা। দক্ষিণ আফ্রিকাতেও ভাষার জন্য ছাত্ররা আন্দোলন করেছেন। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আন্দোলন করেছেন, আর আফ্রিকাতে স্কুলের ছাত্ররা আন্দোলন করেছে। ১৯৭৬ সালে ১৬ জুন গাউটাংয়ের জোহানেসবার্গ শহরের সোয়েটোতে এ আন্দোলন সংঘটিত হয়।
আফ্রিকান ভাষায় (দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত শ্বেতাঙ্গ ডাচদের জার্মান-ডাচ ভাষার মিশ্রণ) শিক্ষাদান স্কুলে বাধ্যতামূলক করলে স্কুলের শিশু–কিশোরেরা এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে—কারণ তারা মাতৃভাষা জুলু এবং ব্যবহারিক লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা ইংরেজিতে শিক্ষা নিতে বেশি আগ্রহী ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদ সভা ডাকা হয়। এতে যোগ দেন সাধারণ নাগরিক ও অভিভাবকেরা।
প্রতিবাদ সভায় যাওয়ার মুহূর্তে পুলিশ গুলি চালায়। গুলিতে ২০০ জনের বেশি নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশ স্কুলছাত্র।
যুক্তরাষ্ট্রেও ভাষার জন্য আন্দোলন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে অনেক নেটিভ আমেরিকান ভাষা ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসকদের হাতে ধ্বংস হয়েছে। তাঁদের ভাষা রক্ষার্থে দীর্ঘ ২০ বছর আন্দোলন এবং আলোচনা হয়। অবশেষে ১৯৯০ সালের ৩০ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নেটিভ-আদি-স্থানীয় ভাষা রক্ষা এবং সংরক্ষণের জন্য একটি আইন পাস হয়। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক অঙ্গরাজ্যে ইংরেজির আধিপত্য কমেছে।
লাটভিয়ার মানুষেরা কয়েকশ বছর ধরে রুশ ভাষা ব্যবহার করেছে। কিন্তু এখন তাঁরা রুশ ভাষা প্রত্যাখ্যান করছেন। ২০১২ সালের শুরুর দিকে লাটভিয়ানরা সাবেক সোভিয়েত দখলদারদের ভাষাকে সরকারি মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে বাল্টিক দেশেটি ২১ লাখের মানুষের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের মাতৃভাষা রুশ। শুধু ভাষার কারণে কয়েক দশক ধরে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। কিন্তু লাটভিয়ার মূল অধিবাসীদের কাছে এ গণভোটের আয়োজনটাই ছিল দেশের স্বাধীনতা পুনর্দখলের পাঁয়তারা। যেখানে অর্ধশতাব্দী সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলে থাকার পর মাত্র তিন দশক আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর স্বাধীনতা পায় লাটভিয়া। অনেক লাটভিয়া এখানে রুশ ভাষাকে এখনো দখলদারদের ভাষা বলে বিবেচনা করেন। এ নিয়ে রয়েছে অভ্যন্তরীণ অবিশ্বাস ও অনাস্থা।
একই অবস্থা ইউক্রেনে। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল যেটি দনবাস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়—এখানে অধিকাংশ মানুষ রুশ ভাষী। ভাষার কারণে বহুদিন ধরেই তাঁরা বৈষম্যের শিকার হওয়ার অভিযোগ করছেন। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে সেসব এলাকার বিদ্রোহীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। অনেকে এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলে। এর আগে ২০১৪ সালের রুশ ভাষী অধ্যুষিত ক্রিমিয়া দখলে নিয়েছে রাশিয়া।
১৯৮০ সালের ২০ মে এবং ১৯৯৫ সালের ৩০ অক্টোবর ভাষার জন্য আন্দোলন সংঘটিত হয় কানাডায়। ভাষার প্রশ্নে কুইবেক রাজ্যের ফরাসিভাষীরা স্বতন্ত্র রাষ্ট্র চেয়েছিলেন। তবে সেই আন্দোলন খুব একটা জোরদার হয়নি।
এ ছাড়া, বেলজিয়াম, স্পেন, ইউরোপের বলকান অঞ্চলসহ আরও বেশ কিছু জায়গায় ভাষার জন্য আন্দোলন হয়েছে এবং হচ্ছে। কোথাও সহিংস আবার কোথাও হয়েছে অহিংস আন্দোলন।
ভাষার প্রশ্নে কেউই ছাড় দিতে রাজি হয়নি। যেমনটা ছাড় দেয়নি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা, তেমনি আফ্রিকার স্কুলের শিশুরা। মায়ের ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় রক্ত দিতে দ্বিধা করেনি।
পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর চাপিয়ে দেওয়া রাষ্ট্রভাষার বিরোধিতা করে মায়ের ভাষায় কথা বলার দাবিতে লড়াইয়ের দিনটি আজ। শাসকেরা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার পর ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ছাত্ররা। এদিন ঢাকার রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে মাতৃভাষার দাবি প্রতিষ্ঠিত করেন তাঁরা।
১৯৫২ সালের এই দিনে সকাল ৯টায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করেন ছাত্ররা। তখন ক্যাম্পাস পুলিশ বেষ্টিত ছিল। উপাচার্য পুলিশকে গুলি চালাতে নিষেধ করেন ও ছাত্রদের সেখান থেকে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন। ছাত্ররা যখন চলে যাচ্ছিলেন তখন ১৪৪ ধারা লঙ্ঘনের জন্য কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের সংবাদ পেয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা পূর্ব বাংলা গণপরিষদ অবরোধ করে সেখানে তাঁদের প্রস্তাব জানান। ছাত্রদের একটি দল ভবনের মধ্যে দ্রুত ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি চালায়। নিহত হন সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ অনেকে। হত্যাকাণ্ডের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে শহর জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট, অফিস ও গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়, শুরু হয় সর্বাত্মক ধর্মঘট। এভাবেই বুকের তাজা রক্ত দিয়ে ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
একুশে ফেব্রুয়ারি এখন দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক দিবস। জাতিসংঘ দিনটিকে স্বীকৃতি দিয়ে ১৯৯৯ সালে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে পৃথিবীজুড়ে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
বাঙালিদের মতো আরও অনেকে দেশেই মানুষকে ভাষার জন্য স্বৈরাচার শাসকদের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে এবং এখন লড়ছে। সেখানে ঝরেছে রক্ত। নিজেদের ভাষার মর্যাদার দাবিতে যেসব দেশে আন্দোলন হয়েছে এর মধ্যে অন্যতম—ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, কানাডা ও লাটভিয়া।
১৯৬৫ সালে ভারতে ভাষার জন্য সবচেয়ে বড় আন্দোলন হয়। হিন্দিকে একমাত্র সরকারি ভাষা ঘোষণা দেওয়া হলে ১৯৬৫ সালের ২৬ জানুয়ারি তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। দলে দলে মানুষ রাজপথে নেমে আসে। প্রায় দুই মাস ধরে সহিংসতা চলে দক্ষিণাঞ্চলে, বিশেষ করে মাদ্রাজে। ১০০-৫০০ লোক প্রাণ হারায়। সারা দক্ষিণ ভারত বিশেষভাবে তামিলনাড়ু উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রতিবাদে আত্মাহুতির ঘটনাও ঘটে। আন্দোলনের পক্ষাবলম্বনকারী রাজনৈতিক দলগুলো ১৯৬৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজয়ী হয়। বিজয়ী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে ভারত ইউনিয়ন ত্যাগ করারও হুমকি দেওয়া হয়।
শেষ পর্যন্ত ১৯৬৭ সালে হিন্দির সঙ্গে ইংরেজিকেও ব্যবহারিক সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয়—আন্দোলনটি হয়েছিল হিন্দিকে একমাত্র সরকারি ভাষা ঘোষণা করার বিরুদ্ধে। কেননা তাহলে হিন্দি মাতৃভাষা ভাষিরা সুবিধা পেত এবং অন্যান্য সবার নিজ মাতৃভাষা এবং ইংরেজির সঙ্গে সঙ্গে হিন্দিটাও শিখতে হতো। এতে স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরা পিছিয়ে পড়তেন। সবচেয়ে প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ত আইসিএস (ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস) পরীক্ষায়, কারণ এ পরীক্ষা শুধু হিন্দিতে দিতে হতো।
শুধু মাদ্রাজ নয়, ভাষার জন্য আন্দোলন হয়েছিল আসামেও। ১৯৬১ সালে তৎকালীন প্রাদেশিক সরকার অহমীয় ভাষাকে আসামের একমাত্র সরকারি ভাষা করেছিল। যার বিরুদ্ধে আন্দোলনটি হয়। পরে অবশ্য বাংলাকেও স্বীকৃতি দেয় প্রাদেশিক সরকার। এই আন্দোলনে প্রাণ হারান ১১ জন।
এদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকাতেও হয়েছে ভাষার জন্য আন্দোলন। দক্ষিণ আফ্রিকার ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে বাংলাদেশের বায়ান্নর বাংলা ভাষা আন্দোলনের কিছুটা মিল রয়েছে। বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন করেন ছাত্ররা। দক্ষিণ আফ্রিকাতেও ভাষার জন্য ছাত্ররা আন্দোলন করেছেন। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আন্দোলন করেছেন, আর আফ্রিকাতে স্কুলের ছাত্ররা আন্দোলন করেছে। ১৯৭৬ সালে ১৬ জুন গাউটাংয়ের জোহানেসবার্গ শহরের সোয়েটোতে এ আন্দোলন সংঘটিত হয়।
আফ্রিকান ভাষায় (দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত শ্বেতাঙ্গ ডাচদের জার্মান-ডাচ ভাষার মিশ্রণ) শিক্ষাদান স্কুলে বাধ্যতামূলক করলে স্কুলের শিশু–কিশোরেরা এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে—কারণ তারা মাতৃভাষা জুলু এবং ব্যবহারিক লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা ইংরেজিতে শিক্ষা নিতে বেশি আগ্রহী ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদ সভা ডাকা হয়। এতে যোগ দেন সাধারণ নাগরিক ও অভিভাবকেরা।
প্রতিবাদ সভায় যাওয়ার মুহূর্তে পুলিশ গুলি চালায়। গুলিতে ২০০ জনের বেশি নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশ স্কুলছাত্র।
যুক্তরাষ্ট্রেও ভাষার জন্য আন্দোলন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে অনেক নেটিভ আমেরিকান ভাষা ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসকদের হাতে ধ্বংস হয়েছে। তাঁদের ভাষা রক্ষার্থে দীর্ঘ ২০ বছর আন্দোলন এবং আলোচনা হয়। অবশেষে ১৯৯০ সালের ৩০ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নেটিভ-আদি-স্থানীয় ভাষা রক্ষা এবং সংরক্ষণের জন্য একটি আইন পাস হয়। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক অঙ্গরাজ্যে ইংরেজির আধিপত্য কমেছে।
লাটভিয়ার মানুষেরা কয়েকশ বছর ধরে রুশ ভাষা ব্যবহার করেছে। কিন্তু এখন তাঁরা রুশ ভাষা প্রত্যাখ্যান করছেন। ২০১২ সালের শুরুর দিকে লাটভিয়ানরা সাবেক সোভিয়েত দখলদারদের ভাষাকে সরকারি মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে বাল্টিক দেশেটি ২১ লাখের মানুষের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের মাতৃভাষা রুশ। শুধু ভাষার কারণে কয়েক দশক ধরে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। কিন্তু লাটভিয়ার মূল অধিবাসীদের কাছে এ গণভোটের আয়োজনটাই ছিল দেশের স্বাধীনতা পুনর্দখলের পাঁয়তারা। যেখানে অর্ধশতাব্দী সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলে থাকার পর মাত্র তিন দশক আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর স্বাধীনতা পায় লাটভিয়া। অনেক লাটভিয়া এখানে রুশ ভাষাকে এখনো দখলদারদের ভাষা বলে বিবেচনা করেন। এ নিয়ে রয়েছে অভ্যন্তরীণ অবিশ্বাস ও অনাস্থা।
একই অবস্থা ইউক্রেনে। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল যেটি দনবাস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়—এখানে অধিকাংশ মানুষ রুশ ভাষী। ভাষার কারণে বহুদিন ধরেই তাঁরা বৈষম্যের শিকার হওয়ার অভিযোগ করছেন। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে সেসব এলাকার বিদ্রোহীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। অনেকে এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলে। এর আগে ২০১৪ সালের রুশ ভাষী অধ্যুষিত ক্রিমিয়া দখলে নিয়েছে রাশিয়া।
১৯৮০ সালের ২০ মে এবং ১৯৯৫ সালের ৩০ অক্টোবর ভাষার জন্য আন্দোলন সংঘটিত হয় কানাডায়। ভাষার প্রশ্নে কুইবেক রাজ্যের ফরাসিভাষীরা স্বতন্ত্র রাষ্ট্র চেয়েছিলেন। তবে সেই আন্দোলন খুব একটা জোরদার হয়নি।
এ ছাড়া, বেলজিয়াম, স্পেন, ইউরোপের বলকান অঞ্চলসহ আরও বেশ কিছু জায়গায় ভাষার জন্য আন্দোলন হয়েছে এবং হচ্ছে। কোথাও সহিংস আবার কোথাও হয়েছে অহিংস আন্দোলন।
ভাষার প্রশ্নে কেউই ছাড় দিতে রাজি হয়নি। যেমনটা ছাড় দেয়নি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা, তেমনি আফ্রিকার স্কুলের শিশুরা। মায়ের ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় রক্ত দিতে দ্বিধা করেনি।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪