মোনায়েম সরকার
তত্ত্বগতভাবে সেক্যুলারিজমের ধারণা কয়েক শতাব্দী ধরে পাশ্চাত্যে এবং তারপরে প্রাচ্যে বিকাশ লাভ করেছে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশে বাস্তব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে সেক্যুলারিজমের স্বীকৃতি বঙ্গবন্ধুরই অবদান। শেখ মুজিব বাস্তব ঘটনাবলি দেখে উপলব্ধি করেছিলেন, সাম্প্রদায়িকতা, জাতিবিদ্বেষ, গণহত্যা, যুদ্ধবিগ্রহ মানুষের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনে।
সেক্যুলারিজম, গণতন্ত্র এবং মানবতাবাদই মানুষকে মুক্তির পথে নিয়ে যেতে পারে। মুজিবের বাল্য ও কৈশোরকাল কেটেছে গ্রামে, যেখানে তিনি গণতান্ত্রিক চেতনার অধিকারী সাধারণ মানুষের সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। তাঁর উচ্চশিক্ষা লাভ ঘটেছিল সেকালের আর দশজন শিক্ষিত মুসলমানের মতো কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে। চল্লিশের দশকে কলকাতায় অবস্থান করে এবং মুসলিম ছাত্র-জনতার নেতা হিসেবে তিনি পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও বিশ্বপরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করেছিলেন। ১৯৩৯-৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, যুদ্ধের ফলস্বরূপ তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ (তথা পঞ্চাশের মন্বন্তর) হিটলারের ইহুদিনিধন ও অকল্পনীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ছেচল্লিশে কলকাতার দাঙ্গা এবং দেশ বিভাগকালীন নানা স্থানের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতি ঘটনা শেখ মুজিবকে বিচলিত করেছিল এবং মানবমুক্তির প্রকৃত পথের সন্ধান খোঁজার জন্য তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের স্বভাবজাত অসাম্প্রদায়িক মানবতাবোধও তাঁকে অসাম্প্রদায়িক সেক্যুলার চিন্তার দিকে নিয়ে যায়। পাকিস্তানের জন্মলগ্নে মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক নীতির প্রভাবে পূর্ব বাংলার মুসলিম জনগণের মধ্যে যে সাম্প্রদায়িক চিন্তার সৃষ্টি হয়েছিল, বঙ্গবন্ধুই বাংলার জনগণকে সেই সাম্প্রদায়িক প্রভাব থেকে মুক্ত করেন এবং অবশেষে স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় নীতির একটি মূলস্তম্ভরূপে স্বীকৃতি দেন।
অতীত ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখব, মানুষ প্রকৃত অর্থে মানুষ হওয়ার জন্য যুগ যুগ ধরেই সাধনা করেছে। বিভিন্ন ধর্মের উদ্ভব সেই সাধনার ফল। আবহমানকাল থেকে মানুষ জগৎ ও জীবন সম্পর্কে ভেবেছে, ধর্ম সম্বন্ধেও ভেবেছে। বর্তমানকালে প্রচলিত ধর্মগুলোর সবই প্রাচীন। প্রায় সব ধর্মেই সহনশীলতা এবং অন্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতি সৌভ্রাতৃত্বের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ব্যবহারিক ও বাস্তব ক্ষেত্রে ঐক্যের চেয়ে বিরোধই প্রাধান্য পেয়েছে। মানুষের মানুষ হওয়ার সাধনা আজও সফলকাম হয়নি। সব ধর্মই ঘোষণা করেছে, সব মানুষ ভাই ভাই।
অথচ আমরা দেখেছি, হিন্দুরা বৌদ্ধদের হত্যা করেছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ও হিন্দুদের প্রতি অসহিষ্ণু হয়েছে। ইহুদি ও খ্রিষ্টান যেন জন্মশত্রু, দীর্ঘকাল ধরে মধ্যপ্রাচ্য ইহুদি ও মুসলিমদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। আমরা দেখছি, একই সম্প্রদায়ের মধ্যে মারামারি হয়েছে ও হচ্ছে; যেমন শিয়া-সুন্নি, রোমান-ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্টদের মধ্যে বিরোধ আজও লেগেই আছে। যুগে যুগে ধর্মবিদ্বেষ, গোষ্ঠীবিদ্বেষ মানুষকে অমানুষে পরিণত করছে। বর্তমানেও এই ধারা বজায় রয়েছে পৃথিবীর অনেক দেশে।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিপুল উৎকর্ষের যুগেও ধর্মের বিকৃতি যে কী ভয়াবহ হতে পারে এর নৃশংস রূপ আমরা উপমহাদেশে অর্ধশতাব্দী ধরে প্রত্যক্ষ করেছি। ১৯৪৬-৪৭ সালে মুসলমান হিন্দুকে, হিন্দু মুসলমানকে এবং অতঃপর ১৯৭১-এ মুসলমান মুসলমানকে ধর্মের নামে কী নির্মমভাবে হত্যা করেছে। বাংলাদেশের বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার জীবন্ত সাক্ষী আমরা, বহু দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণা, ত্যাগতিতিক্ষার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে।
কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, ১৯৪৭ সালে বাংলার মানুষেরাই স্বেচ্ছায় মুসলিম লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান নামক কৃত্রিম রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার পশ্চিম প্রান্তের একাধিক জাতিগোষ্ঠী, যাদের ভাষা-সংস্কৃতি, রুটি-রুজি, পোশাকপরিচ্ছদ সবই ভিন্ন রকমের, মিল শুধু ধর্মের, সেদিন ধর্মকে জাতীয়তার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু ইসলাম ধর্মের সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের আদর্শ পূর্ব বাংলার মানুষকে সুবিচার দিতে ব্যর্থ হয়।
পশ্চিম পাকিস্তানি শোষক ও শাসকচক্রের হাতে শোষিত ও বঞ্চিত হতে লাগল পূর্ব বাংলার মানুষ। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সালের মধ্যেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল ভাষা আন্দোলন, সেই আন্দোলনের স্রোতে ভেসে গেল দ্বিজাতিতত্ত্ব, ক্রমে ক্রমে বিকাশ লাভ করল ভাষাভিত্তিক জাতীয়তা। স্বৈরাচারী মুসলিম লীগের শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে সূচিত হলো গণতান্ত্রিক সংগ্রাম। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন সেক্যুলার গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বীজ বপন করে। এরপর চুয়ান্নর নির্বাচন, বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আন্দোলন দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গড়া পাকিস্তানের পতন ত্বরান্বিত করে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, চূড়ান্ত পর্বে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর রচিত হয়। আন্দোলনের প্রতিটি পর্বে বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
উল্লেখ্য, শুধু শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম জনগোষ্ঠী হয়তো এত অল্প কালপর্বে অসাম্প্রদায়িক ভাষাভিত্তিক সেক্যুলার জাতীয়তায় বিশ্বাসী হতে পারত না, যদি না সাম্রাজ্যবাদী আর পশ্চিম পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শোষণ পরিবর্তনটাকে দ্রুততর করত। পশ্চিমাদের শোষণের অনিবার্য ফলস্বরূপ আমরা জোট বেঁধেছি প্রবল এক জাতীয়তাবাদী ও সেক্যুলার গণতান্ত্রিক ধারার ঐক্যবোধের মাধ্যমে, যেমন প্রচণ্ড তাপ আর শক্তির প্রভাবে অঙ্গার রূপান্তরিত হয় হীরকখণ্ডে। তেমনি শেখ মুজিব ক্যাটালিস্টের ভূমিকা পালন করেছেন, এমনকি কারাগারে বন্দী থেকেও। পশ্চিম পাকিস্তানি শোষণ-নির্যাতন এবং উৎপীড়নের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড গণপ্রতিরোধের মধ্য দিয়ে মুজিবের বিকাশ ও উদয় ঘটেছে শেখ মুজিব, মুজিব ভাই, বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা হিসেবে। বঙ্গবন্ধুর অন্তরের প্রবল দেশপ্রেম আর সেক্যুলার চেতনার সঙ্গে গণমানুষের সহজাত মানবতাবাদী জাতীয়তাবোধের সংমিশ্রণে বিকশিত হয়েছিল এক মহান জনদরদি সেক্যুলার গণতান্ত্রিক নেতার, যাঁর নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বলেছি, আমরা বাঙালি, এই আমাদের প্রথম ও বড় পরিচয়।
বাঙালি জাতির বিশিষ্ট চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে আদিমকালের উপজাতীয় গোষ্ঠীর বিশেষ অবদান থাকলেও এ কথা অনস্বীকার্য যে আধুনিক সেক্যুলার বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা আধুনিক যুগেরই সৃষ্টি। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতাকে কেন্দ্র করে উপমহাদেশে যে সেক্যুলার জাতীয়তার সূচনা হয়েছিল, এর প্রথম মূর্ত রূপ ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ। ইউরোপীয় রেনেসাঁর অনুসরণে উপমহাদেশে প্রথম সামাজিক-সাংস্কৃতিক নবজাগরণকে বাংলার নবজাগরণ বা বাংলার রেনেসাঁস নামে অভিহিত করা হয়। নবজাগরণের যুগে বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য মনীষীর বিস্তারিত কর্মকাণ্ডের ফলস্বরূপ বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে। উনিশ শতকের নবজাগরণ পূর্ব বাংলার মুসলিম সমাজ ও নিম্নবর্ণের হিন্দু সমাজকে প্রভাবিত করতে পারেনি। ওই নবজাগরণের নানা প্রকার অসম্পূর্ণতা ছিল, যা বাঙালি জাতির পরিপূর্ণ বিকাশকে দীর্ঘকাল ধরে বাধাগ্রস্ত করেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওই অসম্পূর্ণ নবজাগরণকে সম্পূর্ণতা দান করেছেন। বস্তুত বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারণায় এক নতুন যাত্রা সংযোজন করে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে সেক্যুলার গণতান্ত্রিক ধারায় পরিপূর্ণ রূপ দান করেছেন। নতুন মাত্রা সংযোজনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু তাঁর সুসম্পূর্ণ বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্পর্শে বাংলাদেশের মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারায় ও গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদ হচ্ছে ভাষাভিত্তিক, চেতনাভিত্তিক ও সংস্কৃতিভিত্তিক জাতীয়তাবাদ, কিন্তু কোনোক্রমেই ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ নয়; এ হচ্ছে সেক্যুলারিজমভিত্তিক জাতীয়তাবাদ। বাংলাদেশে সেক্যুলার চেতনা তথা ধর্মনিরপেক্ষতার উন্মেষ ও বিকাশের এই হচ্ছে গোড়ার কথা। এই পথে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের জন্ম।
কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা সম্বন্ধে আমাদের অনেকের মনে, এমনকি দায়িত্বশীল মহলেও সুস্পষ্ট ধারণার অভাব রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ধর্মনিরপেক্ষতা এক কঠিন সাধনার বস্তু, সামাজিক জীবনে তার প্রয়োগ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই আজ আর এক ধর্মের লোক বসবাস করে না, বিভিন্ন ধর্ম-বিশ্বাসী লোক একই রাষ্ট্র ও সমাজে পাশাপাশি বসবাস করে। তাই গণতান্ত্রিক কোনো রাষ্ট্রই কোনো বিশেষ ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারে না এবং এটা বাঞ্ছনীয় ও অপরিহার্য যে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে সমাজ ও রাষ্ট্র নিরপেক্ষ থাকবে। প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বিশ্বাস তার নিজস্ব। ধর্ম আছে এবং থাকবে, বিভিন্ন ধর্মমত ও পথ আছে বলেই সেক্যুলারিজম, অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশে ঐতিহাসিক অনিবার্যতার কারণেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা, অর্থাৎ সেক্যুলারিজমকে মৌলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল। সংবিধানে ১২ নম্বর অনুচ্ছেদ ছিল নিম্নরূপ: ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা:
‘ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের জন্য:
ক. সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা,
খ. রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ধর্মকে মর্যাদা দান,
গ. রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার,
ঘ. কোনো বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তার ওপর নিপীড়ন বিলোপ করা হইবে।’
১৯৭৮ সালে জেনারেল জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমানের দ্বিতীয় ঘোষণাপত্রের আদেশ বলে ১২ নম্বর অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করেছেন এবং সেই বিলুপ্তি আজও বহাল রয়েছে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দুই দশক অতিবাহিত হয়েছে, বাঙালি জাতির বিবেক পুনঃজাগরিক হতে চলেছে, দেশপ্রেমিক জনগণ এখন বুঝতে পেরেছে, বঙ্গবন্ধুই আমাদের ঐতিহ্য, বঙ্গবন্ধুই আমাদের দিশারি। আজও বাংলাদেশের রাজনীতি মূলত বঙ্গবন্ধুর সেক্যুলার গণতান্ত্রিক ধারার পক্ষে-বিপক্ষে আবর্তিত হচ্ছে। নবজাগরণের এই পর্বে বঙ্গবন্ধুর নামে ইতিহাসের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর পথ ধরেই আমাদের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে প্রতিহত ও পরাজিত করে সেক্যুলার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
তত্ত্বগতভাবে সেক্যুলারিজমের ধারণা কয়েক শতাব্দী ধরে পাশ্চাত্যে এবং তারপরে প্রাচ্যে বিকাশ লাভ করেছে। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশে বাস্তব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে সেক্যুলারিজমের স্বীকৃতি বঙ্গবন্ধুরই অবদান। শেখ মুজিব বাস্তব ঘটনাবলি দেখে উপলব্ধি করেছিলেন, সাম্প্রদায়িকতা, জাতিবিদ্বেষ, গণহত্যা, যুদ্ধবিগ্রহ মানুষের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনে।
সেক্যুলারিজম, গণতন্ত্র এবং মানবতাবাদই মানুষকে মুক্তির পথে নিয়ে যেতে পারে। মুজিবের বাল্য ও কৈশোরকাল কেটেছে গ্রামে, যেখানে তিনি গণতান্ত্রিক চেতনার অধিকারী সাধারণ মানুষের সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। তাঁর উচ্চশিক্ষা লাভ ঘটেছিল সেকালের আর দশজন শিক্ষিত মুসলমানের মতো কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে। চল্লিশের দশকে কলকাতায় অবস্থান করে এবং মুসলিম ছাত্র-জনতার নেতা হিসেবে তিনি পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও বিশ্বপরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন করেছিলেন। ১৯৩৯-৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, যুদ্ধের ফলস্বরূপ তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ (তথা পঞ্চাশের মন্বন্তর) হিটলারের ইহুদিনিধন ও অকল্পনীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ছেচল্লিশে কলকাতার দাঙ্গা এবং দেশ বিভাগকালীন নানা স্থানের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতি ঘটনা শেখ মুজিবকে বিচলিত করেছিল এবং মানবমুক্তির প্রকৃত পথের সন্ধান খোঁজার জন্য তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের স্বভাবজাত অসাম্প্রদায়িক মানবতাবোধও তাঁকে অসাম্প্রদায়িক সেক্যুলার চিন্তার দিকে নিয়ে যায়। পাকিস্তানের জন্মলগ্নে মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক নীতির প্রভাবে পূর্ব বাংলার মুসলিম জনগণের মধ্যে যে সাম্প্রদায়িক চিন্তার সৃষ্টি হয়েছিল, বঙ্গবন্ধুই বাংলার জনগণকে সেই সাম্প্রদায়িক প্রভাব থেকে মুক্ত করেন এবং অবশেষে স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় নীতির একটি মূলস্তম্ভরূপে স্বীকৃতি দেন।
অতীত ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখব, মানুষ প্রকৃত অর্থে মানুষ হওয়ার জন্য যুগ যুগ ধরেই সাধনা করেছে। বিভিন্ন ধর্মের উদ্ভব সেই সাধনার ফল। আবহমানকাল থেকে মানুষ জগৎ ও জীবন সম্পর্কে ভেবেছে, ধর্ম সম্বন্ধেও ভেবেছে। বর্তমানকালে প্রচলিত ধর্মগুলোর সবই প্রাচীন। প্রায় সব ধর্মেই সহনশীলতা এবং অন্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতি সৌভ্রাতৃত্বের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ব্যবহারিক ও বাস্তব ক্ষেত্রে ঐক্যের চেয়ে বিরোধই প্রাধান্য পেয়েছে। মানুষের মানুষ হওয়ার সাধনা আজও সফলকাম হয়নি। সব ধর্মই ঘোষণা করেছে, সব মানুষ ভাই ভাই।
অথচ আমরা দেখেছি, হিন্দুরা বৌদ্ধদের হত্যা করেছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ও হিন্দুদের প্রতি অসহিষ্ণু হয়েছে। ইহুদি ও খ্রিষ্টান যেন জন্মশত্রু, দীর্ঘকাল ধরে মধ্যপ্রাচ্য ইহুদি ও মুসলিমদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। আমরা দেখছি, একই সম্প্রদায়ের মধ্যে মারামারি হয়েছে ও হচ্ছে; যেমন শিয়া-সুন্নি, রোমান-ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্টদের মধ্যে বিরোধ আজও লেগেই আছে। যুগে যুগে ধর্মবিদ্বেষ, গোষ্ঠীবিদ্বেষ মানুষকে অমানুষে পরিণত করছে। বর্তমানেও এই ধারা বজায় রয়েছে পৃথিবীর অনেক দেশে।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিপুল উৎকর্ষের যুগেও ধর্মের বিকৃতি যে কী ভয়াবহ হতে পারে এর নৃশংস রূপ আমরা উপমহাদেশে অর্ধশতাব্দী ধরে প্রত্যক্ষ করেছি। ১৯৪৬-৪৭ সালে মুসলমান হিন্দুকে, হিন্দু মুসলমানকে এবং অতঃপর ১৯৭১-এ মুসলমান মুসলমানকে ধর্মের নামে কী নির্মমভাবে হত্যা করেছে। বাংলাদেশের বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার জীবন্ত সাক্ষী আমরা, বহু দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণা, ত্যাগতিতিক্ষার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে।
কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, ১৯৪৭ সালে বাংলার মানুষেরাই স্বেচ্ছায় মুসলিম লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান নামক কৃত্রিম রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার পশ্চিম প্রান্তের একাধিক জাতিগোষ্ঠী, যাদের ভাষা-সংস্কৃতি, রুটি-রুজি, পোশাকপরিচ্ছদ সবই ভিন্ন রকমের, মিল শুধু ধর্মের, সেদিন ধর্মকে জাতীয়তার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু ইসলাম ধর্মের সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের আদর্শ পূর্ব বাংলার মানুষকে সুবিচার দিতে ব্যর্থ হয়।
পশ্চিম পাকিস্তানি শোষক ও শাসকচক্রের হাতে শোষিত ও বঞ্চিত হতে লাগল পূর্ব বাংলার মানুষ। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সালের মধ্যেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল ভাষা আন্দোলন, সেই আন্দোলনের স্রোতে ভেসে গেল দ্বিজাতিতত্ত্ব, ক্রমে ক্রমে বিকাশ লাভ করল ভাষাভিত্তিক জাতীয়তা। স্বৈরাচারী মুসলিম লীগের শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে সূচিত হলো গণতান্ত্রিক সংগ্রাম। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন সেক্যুলার গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বীজ বপন করে। এরপর চুয়ান্নর নির্বাচন, বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আন্দোলন দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গড়া পাকিস্তানের পতন ত্বরান্বিত করে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, চূড়ান্ত পর্বে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর রচিত হয়। আন্দোলনের প্রতিটি পর্বে বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
উল্লেখ্য, শুধু শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম জনগোষ্ঠী হয়তো এত অল্প কালপর্বে অসাম্প্রদায়িক ভাষাভিত্তিক সেক্যুলার জাতীয়তায় বিশ্বাসী হতে পারত না, যদি না সাম্রাজ্যবাদী আর পশ্চিম পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শোষণ পরিবর্তনটাকে দ্রুততর করত। পশ্চিমাদের শোষণের অনিবার্য ফলস্বরূপ আমরা জোট বেঁধেছি প্রবল এক জাতীয়তাবাদী ও সেক্যুলার গণতান্ত্রিক ধারার ঐক্যবোধের মাধ্যমে, যেমন প্রচণ্ড তাপ আর শক্তির প্রভাবে অঙ্গার রূপান্তরিত হয় হীরকখণ্ডে। তেমনি শেখ মুজিব ক্যাটালিস্টের ভূমিকা পালন করেছেন, এমনকি কারাগারে বন্দী থেকেও। পশ্চিম পাকিস্তানি শোষণ-নির্যাতন এবং উৎপীড়নের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড গণপ্রতিরোধের মধ্য দিয়ে মুজিবের বিকাশ ও উদয় ঘটেছে শেখ মুজিব, মুজিব ভাই, বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা হিসেবে। বঙ্গবন্ধুর অন্তরের প্রবল দেশপ্রেম আর সেক্যুলার চেতনার সঙ্গে গণমানুষের সহজাত মানবতাবাদী জাতীয়তাবোধের সংমিশ্রণে বিকশিত হয়েছিল এক মহান জনদরদি সেক্যুলার গণতান্ত্রিক নেতার, যাঁর নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বলেছি, আমরা বাঙালি, এই আমাদের প্রথম ও বড় পরিচয়।
বাঙালি জাতির বিশিষ্ট চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে আদিমকালের উপজাতীয় গোষ্ঠীর বিশেষ অবদান থাকলেও এ কথা অনস্বীকার্য যে আধুনিক সেক্যুলার বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা আধুনিক যুগেরই সৃষ্টি। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতাকে কেন্দ্র করে উপমহাদেশে যে সেক্যুলার জাতীয়তার সূচনা হয়েছিল, এর প্রথম মূর্ত রূপ ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ। ইউরোপীয় রেনেসাঁর অনুসরণে উপমহাদেশে প্রথম সামাজিক-সাংস্কৃতিক নবজাগরণকে বাংলার নবজাগরণ বা বাংলার রেনেসাঁস নামে অভিহিত করা হয়। নবজাগরণের যুগে বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য মনীষীর বিস্তারিত কর্মকাণ্ডের ফলস্বরূপ বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে। উনিশ শতকের নবজাগরণ পূর্ব বাংলার মুসলিম সমাজ ও নিম্নবর্ণের হিন্দু সমাজকে প্রভাবিত করতে পারেনি। ওই নবজাগরণের নানা প্রকার অসম্পূর্ণতা ছিল, যা বাঙালি জাতির পরিপূর্ণ বিকাশকে দীর্ঘকাল ধরে বাধাগ্রস্ত করেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওই অসম্পূর্ণ নবজাগরণকে সম্পূর্ণতা দান করেছেন। বস্তুত বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারণায় এক নতুন যাত্রা সংযোজন করে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে সেক্যুলার গণতান্ত্রিক ধারায় পরিপূর্ণ রূপ দান করেছেন। নতুন মাত্রা সংযোজনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু তাঁর সুসম্পূর্ণ বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্পর্শে বাংলাদেশের মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারায় ও গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদ হচ্ছে ভাষাভিত্তিক, চেতনাভিত্তিক ও সংস্কৃতিভিত্তিক জাতীয়তাবাদ, কিন্তু কোনোক্রমেই ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ নয়; এ হচ্ছে সেক্যুলারিজমভিত্তিক জাতীয়তাবাদ। বাংলাদেশে সেক্যুলার চেতনা তথা ধর্মনিরপেক্ষতার উন্মেষ ও বিকাশের এই হচ্ছে গোড়ার কথা। এই পথে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের জন্ম।
কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা সম্বন্ধে আমাদের অনেকের মনে, এমনকি দায়িত্বশীল মহলেও সুস্পষ্ট ধারণার অভাব রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ধর্মনিরপেক্ষতা এক কঠিন সাধনার বস্তু, সামাজিক জীবনে তার প্রয়োগ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই আজ আর এক ধর্মের লোক বসবাস করে না, বিভিন্ন ধর্ম-বিশ্বাসী লোক একই রাষ্ট্র ও সমাজে পাশাপাশি বসবাস করে। তাই গণতান্ত্রিক কোনো রাষ্ট্রই কোনো বিশেষ ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারে না এবং এটা বাঞ্ছনীয় ও অপরিহার্য যে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে সমাজ ও রাষ্ট্র নিরপেক্ষ থাকবে। প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বিশ্বাস তার নিজস্ব। ধর্ম আছে এবং থাকবে, বিভিন্ন ধর্মমত ও পথ আছে বলেই সেক্যুলারিজম, অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশে ঐতিহাসিক অনিবার্যতার কারণেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা, অর্থাৎ সেক্যুলারিজমকে মৌলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল। সংবিধানে ১২ নম্বর অনুচ্ছেদ ছিল নিম্নরূপ: ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা:
‘ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের জন্য:
ক. সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা,
খ. রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ধর্মকে মর্যাদা দান,
গ. রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার,
ঘ. কোনো বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তার ওপর নিপীড়ন বিলোপ করা হইবে।’
১৯৭৮ সালে জেনারেল জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমানের দ্বিতীয় ঘোষণাপত্রের আদেশ বলে ১২ নম্বর অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করেছেন এবং সেই বিলুপ্তি আজও বহাল রয়েছে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দুই দশক অতিবাহিত হয়েছে, বাঙালি জাতির বিবেক পুনঃজাগরিক হতে চলেছে, দেশপ্রেমিক জনগণ এখন বুঝতে পেরেছে, বঙ্গবন্ধুই আমাদের ঐতিহ্য, বঙ্গবন্ধুই আমাদের দিশারি। আজও বাংলাদেশের রাজনীতি মূলত বঙ্গবন্ধুর সেক্যুলার গণতান্ত্রিক ধারার পক্ষে-বিপক্ষে আবর্তিত হচ্ছে। নবজাগরণের এই পর্বে বঙ্গবন্ধুর নামে ইতিহাসের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর পথ ধরেই আমাদের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে প্রতিহত ও পরাজিত করে সেক্যুলার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪