শরিফুল হাসান
তিবছরই বিশ্বের সম্ভাবনাময় তরুণ সংগঠক, উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবকের তালিকা প্রকাশ করে বিশ্বখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস। ২০২২ সালে সেই তালিকায় স্থান পেয়েছেন ৭ বাংলাদেশি। তাঁদের মধ্যে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি সরবরাহ নিয়ে কাজ করা তরুণ রাফায়াত ও ইয়াসির যেমন রয়েছেন, তেমনি আছেন অ্যাপভিত্তিক নিরাপদ পরিবহনসেবা শাটলের উদ্যোক্তা জাওয়াদ ও রিয়াসাতের মতো তরুণেরাও।
গত বছর ফোর্বসের এ তালিকায় ৯ বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীর নাম এসেছিল। ২০১১ সাল থেকে বিশ্বের তরুণ নেতৃত্ব নিয়ে এই তালিকা করছে ফোর্বস। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট ২৫ জন বাংলাদেশি তাঁদের অনুসরণীয় কাজের জন্য এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
ওদিকে বিশ্বজুড়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে তরুণ নেতৃত্ব বাছাই করে জাতিসংঘ। ২০২০ সালে সারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ১৭ জন তরুণকে এ ক্ষেত্রে নেতা হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। সেই ছোট্ট তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশি তরুণ জাহিন রাজিন। জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, প্রযুক্তির কল্যাণে ভবিষ্যৎ বদলে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন জাহিন।
শুধু দেশে নয়, বাংলাদেশি তরুণেরা সাড়া ফেলছেন প্রবাসেও। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করছেন কোটি প্রবাসী। তাঁদের মধ্যে অনেক তরুণ নিজেদের কাজ আর উদ্ভাবন দিয়ে বাংলাদেশের পতাকাকে উঁচু করছেন। বিশ্বের প্রযুক্তি রাজধানী সানফ্রান্সিসকোর সিলিকন ভ্যালির বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানেও রয়েছেন বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি তরুণ।
বিশ্ববিখ্যাত অনলাইন সার্চ ইঞ্জিন গুগলে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন বাঙালি প্রযুক্তিবিদ। তাঁদের একজন সফল বাংলাদেশি প্রযুক্তিবিদ শিশির খান। আলোচিত গুগল ম্যাপ তৈরি এবং এর উন্নয়নে জড়িত থেকে গোটা পৃথিবীকে তিনি হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছেন।
তিন সপ্তাহে দুই কোটি ব্যবহারকারী জুটিয়ে ফেসবুককে রীতিমতো কাঁপিয়ে দিয়েছিল গুগল প্লাস বা জি প্লাস। এর নেপথ্যে ছিলেন বাংলাদেশি সফটওয়্যার প্রকৌশলী জাহিদ সবুর। ইউটিউবের তিনজন প্রতিষ্ঠাতার একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জাওয়েদ করিম। শুধু ইউটিউব নয়, পোর্টেবল ত্রিমাত্রিক গ্রাফিকস, সলভিং ড্যাড পাজল, থ্রি-ডি স্প্রিং সিমুলেশন, রোবটিক ওয়েবক্যাম, রেডিওসিটি ইনজিন, রে-ট্রেসার, লাইফ থ্রিডি, কোয়াক ২ মডেল ভিউয়ারসহ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্ভাবক তিনি।
বিজ্ঞানবিষয়ক মার্কিন সাময়িকী সায়েন্সনিউজের দৃষ্টিতে ২০২০ সালের উল্লেখযোগ্য ১০ বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন বাংলাদেশের তনিমা তাসনিম। রহস্যঘেরা ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরের বেড়ে ওঠা এবং পরিবেশের ওপর এর প্রভাব নিয়ে পূর্ণাঙ্গ চিত্র এঁকে বিশ্বের সেরা ১০ বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন তনিমা। যুক্তরাষ্ট্রের ডার্টমাউথ কলেজে গবেষণা করেন তিনি।
এই তো কয়েক বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা তাদের সবচেয়ে কনিষ্ঠ নারীকর্মী মাহমুদা সুলতানাকে তাঁর ন্যানো ম্যাটেরিয়াল নিয়ে গবেষণা ও মহাকাশে ক্ষুদ্র এবং যুগান্তকারী ডিটেক্টর ও ডিভাইস তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য ‘বর্ষসেরা উদ্ভাবক’ স্বীকৃতি দেয়।
কেবল প্রযুক্তিগত দিক দিকে নয়, মানবিক দিক বিবেচনায়ও এগিয়ে বাংলাদেশের তারুণ্য। নানা সংকট সমাধানে তাঁরা কাজ করছেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক বাংলাদেশি সাদ আহমেদের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী হৃৎপিণ্ডের জিনগত গঠনপ্রকৃতির সন্ধান করছেন, যাতে ভ্রূণ অবস্থা থেকে হৃৎপিণ্ডের গঠনপ্রকৃতি এবং এর মাধ্যমে বংশগত হৃদ্রোগের কারণ খুঁজে বের করা যায়। সারা পৃথিবী তাঁর এই কাজের দিকে নজর রাখছে।
একইভাবে ক্যানসারের চিকিৎসা উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশি গবেষক ড. দেবানন্দ সরকার। কম খরচে নিউমোনিয়া নিরাময়ের উদ্ভাবক বাংলাদেশি চিকিৎসক মোহাম্মদ যোবায়ের চিশতি। কয়েক বছর আগে পারকিনসন্স রোগের কারণ অনুসন্ধানে অবদানের জন্য ইউরোপিয়ান ইয়ং ইনভেস্টিগেটর অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তরুণ ড. মিরাতুল মুকিত।
--নাফিস বিন জাফর অস্কারজয়ী প্রথম বাংলাদেশি। এ পর্যন্ত তিনি অস্কার জিতেছেন দুবার। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী একজন সফল সফটওয়্যার প্রকৌশলী এবং অ্যানিমেশন বিশেষজ্ঞ।
প্রবাসে যেমন আছেন, তেমনি দেশে বসেও দুনিয়া জয় করছেন বাংলাদেশের তরুণেরা। তাঁদের সেই উদ্ভাবন এখন আছে মহাকাশেও। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো অনেক আগে থেকেই ক্ষুদ্রাকৃতির কৃত্রিম উপগ্রহ (ন্যানো স্যাটেলাইট) মহাকাশে পাঠিয়েছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশও ওই তালিকায় নিজের স্থান করে নিয়েছে ব্র্যাক অন্বেষা কৃত্রিম উপগ্রহটি উৎক্ষেপণের মাধ্যমে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা এবং বর্তমানে জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে গবেষণারত শিক্ষার্থী রায়হানা শামস ইসলাম, আব্দুল্লাহিল কাফি ও মায়সূন ইবনে মনোয়ার—এই তিনজন মিলে বাংলাদেশের প্রথম এই ন্যানো স্যাটেলাইট নির্মাণ করেছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় আরেক বাংলাদেশি তরুণ লাবিবের গল্পটাও দারুণ। লাবিব তাজওয়ার রহমান ‘নিউবিলিটি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা। নিউবিলিটি দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলভিত্তিক একটি কোম্পানি, যারা ভিশন-বেইজড লোকালাইজেশন এবং পথ-পরিকল্পনা প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় ফুড ডেলিভারি রোবট তৈরি করবে। অর্থাৎ মানুষ নয়, তাদের তৈরি রোবটই সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় অর্ডার করা খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছে।
উদ্ভাবনের এই যে শক্তি, সেটা কিন্তু প্রতিনিয়ত বাড়ছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার্স সম্পন্ন করা সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল তৈরি করেছেন পণ্যবাহী ড্রোন। রিচার্জেবল ব্যাটারিচালিত মোটরসাইকেল তৈরি করেছেন মুক্তাগাছার আবু বকর। পাবনার আটঘরিয়া কলেজের সহকারী অধ্যাপক কৃষিবিদ জাফর সাদেক ও তাঁর সহোদর শৌখিন জ্যোতির্বিদ মো. আবদুল্লাহ সাদেক দেশের প্রচলিত কৃষিব্যবস্থা আমূল বদলে দেওয়ার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এম মনজুর হোসেন আবিষ্কার করেছেন এমন এক প্রাকৃতিক হিমাগার, যেটি বিদ্যুৎ ছাড়াই চলবে।
চট্টগ্রামের এক তরুণ জয় বড়ুয়া আত্মীয়স্বজন ও স্কুলের সহপাঠী বন্ধুদের কাছে ছোটবেলা থেকেই পরিচিত ছিলেন খুদে বিজ্ঞানী হিসেবে। নানা ধরনের উদ্ভাবন করলেও তাঁর সাড়াজাগানো একটি উদ্ভাবন হলো স্নায়বিক আবেদনে সাড়া দিতে সক্ষম এমন রোবটিকস হ্যান্ড তথা কৃত্রিম হাত তৈরি।
এই তো বছর দুয়েক আগে রোবটিকস নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান দখল করে বাংলাদেশি তরুণদের একটি দল, যারা ঢাকার বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রী। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড, পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াড, আর্থ সায়েন্স অলিম্পিয়াড, বায়োলজি অলিম্পিয়াড কিংবা আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াড—সবখানেই ভালো করছেন বাংলাদেশের তরুণেরা।
চাকরি না খুঁজে আজকাল উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হয়ে চাকরি দেওয়ার চেষ্টা করছেন অনেক তরুণ। ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ে তো দারুণ সব কাজ করছেন বাংলাদেশের তরুণেরা। পিছিয়ে নেই নারীরাও। দেশের নানা প্রান্ত থেকে রাজিনা, সোনিয়া, সুমাইয়া, নাফিসারাও হাজার হাজার ডলার আয় করছেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে জীবন বদলে ফেলছেন তরুণেরা। রাজশাহীর খায়রুল আলম তো ফ্রিল্যান্সিং করে কয়েক বছরে মাল্টি-মাল্টি-মিলিয়নিয়ার। তিনজন নিয়ে যাত্রা শুরু করা খায়রুল আলমের প্রতিষ্ঠান ‘ফ্লিট বাংলাদেশ’-এ এখন কাজ করছেন ৫৫০ জন। একসময় কম্পিউটার কেনার টাকা না থাকলেও এখন তিনি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রতি মাসে বেতন দেন এক কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা। রাজশাহীতে বসেই কাজ করেন আমাজন, ওয়ালমার্টের মতো জায়ান্ট কোম্পানির সঙ্গে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার গল্প ফোর্বস, আন্ট্রাপ্রেইনারের মতো বিশ্ব সাময়িকীতেও স্থান পেয়ে শুধু স্বাভাবিক সময়ে নয়, করোনার দুঃসময়েও বাংলাদেশের তরুণেরা মেলে ধরছেন নিজেদের। অবশ্য সাফল্যের পাশাপাশি তরুণদের হতাশাও দেখা যায়, বিশেষ করে করোনাকালে। অর্ধশত বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার সংবাদ চোখে পড়েছে গত তিন বছরে। কাজেই তরুণদের কথাও শুনতে হবে। তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও যত্ন দিতে হবে। অবশ্য অনেক তরুণ-তরুণীও এ নিয়ে ভাবছেন। এই যেমন ফাইরুজ ফাইজা বিথার।
ব্র্যাক তরুণদের মূল্যবোধ ও উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করে। এ জন্য করা হয়েছে ‘আমরা নতুন নেটওয়ার্ক’। সেখানে তরুণদের নানা সমস্যা নিয়ে কাজ করতে বলা হয়। খুলনায় ‘আমরা নতুন নেটওয়ার্ক’-এর কর্মশালায় ফাইরুজ ও তাঁর বন্ধুরা মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে কাজ করার উদ্যোগ নেন। করোনাকালে তাঁরা অনলাইনে মনের স্কুল প্রতিষ্ঠা করে সেই কাজটা করেন। ওই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের ‘গোলকিপার্স গ্লোবাল গোলস চেঞ্জমেকার অ্যাওয়ার্ড-২০২১’। দেশে কিংবা বিদেশে এমন আরও অনেক বাংলাদেশি আছেন, যাঁরা সত্যিকারের আইকন। বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাস দেখাচ্ছেন কীভাবে মানুষের পাশে থাকা যায়। তাঁর মতো অনেক তরুণ আছেন, যাঁরা জনপ্রিয়তা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথাকথিত ‘সেলিব্রিটি’ তকমার বাইরে কাজ করে চলেছেন দেশ ও আপামর জনসাধারণের মঙ্গলে।
এই যে সব সময় নতুন কিছু উদ্ভাবন, সেটাই তারুণ্যের শক্তি, একটা দেশের শক্তি। আর সেই শক্তিতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। কারণ, জাতিসংঘের সংজ্ঞায় যাঁদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে, তাঁরাই তরুণ। বিশ্বব্যাপী এই তরুণের সংখ্যা এখন ১৮০ কোটি। আবার ১৭ কোটির বেশি জনসংখ্যার বাংলাদেশে তরুণের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। বাংলাদেশে এই সুবিধা থাকবে ২০৪০ সাল পর্যন্ত। কাজেই ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য তারুণ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অবশ্য বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং সব অর্জনেই ভূমিকা ছিল তারুণ্যের। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আর প্রযুক্তির এই সময়েও ভরসা তরুণেরাই। ২০৪১ সালে বাংলাদেশের যে রূপকল্প, সেটি অর্জন করতে হবে তারুণ্যের উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে। কারণ, তারুণ্যের উদ্ভাবনী শক্তিই এনে দেবে বাংলাদেশের সমৃদ্ধি।
শরিফুল হাসান, প্রোগ্রাম হেড, মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ইয়ুথ ইনিশিয়েটিভস, ব্র্যাক
তিবছরই বিশ্বের সম্ভাবনাময় তরুণ সংগঠক, উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবকের তালিকা প্রকাশ করে বিশ্বখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস। ২০২২ সালে সেই তালিকায় স্থান পেয়েছেন ৭ বাংলাদেশি। তাঁদের মধ্যে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি সরবরাহ নিয়ে কাজ করা তরুণ রাফায়াত ও ইয়াসির যেমন রয়েছেন, তেমনি আছেন অ্যাপভিত্তিক নিরাপদ পরিবহনসেবা শাটলের উদ্যোক্তা জাওয়াদ ও রিয়াসাতের মতো তরুণেরাও।
গত বছর ফোর্বসের এ তালিকায় ৯ বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীর নাম এসেছিল। ২০১১ সাল থেকে বিশ্বের তরুণ নেতৃত্ব নিয়ে এই তালিকা করছে ফোর্বস। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট ২৫ জন বাংলাদেশি তাঁদের অনুসরণীয় কাজের জন্য এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
ওদিকে বিশ্বজুড়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে তরুণ নেতৃত্ব বাছাই করে জাতিসংঘ। ২০২০ সালে সারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ১৭ জন তরুণকে এ ক্ষেত্রে নেতা হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। সেই ছোট্ট তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশি তরুণ জাহিন রাজিন। জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, প্রযুক্তির কল্যাণে ভবিষ্যৎ বদলে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন জাহিন।
শুধু দেশে নয়, বাংলাদেশি তরুণেরা সাড়া ফেলছেন প্রবাসেও। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করছেন কোটি প্রবাসী। তাঁদের মধ্যে অনেক তরুণ নিজেদের কাজ আর উদ্ভাবন দিয়ে বাংলাদেশের পতাকাকে উঁচু করছেন। বিশ্বের প্রযুক্তি রাজধানী সানফ্রান্সিসকোর সিলিকন ভ্যালির বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানেও রয়েছেন বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি তরুণ।
বিশ্ববিখ্যাত অনলাইন সার্চ ইঞ্জিন গুগলে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন বাঙালি প্রযুক্তিবিদ। তাঁদের একজন সফল বাংলাদেশি প্রযুক্তিবিদ শিশির খান। আলোচিত গুগল ম্যাপ তৈরি এবং এর উন্নয়নে জড়িত থেকে গোটা পৃথিবীকে তিনি হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছেন।
তিন সপ্তাহে দুই কোটি ব্যবহারকারী জুটিয়ে ফেসবুককে রীতিমতো কাঁপিয়ে দিয়েছিল গুগল প্লাস বা জি প্লাস। এর নেপথ্যে ছিলেন বাংলাদেশি সফটওয়্যার প্রকৌশলী জাহিদ সবুর। ইউটিউবের তিনজন প্রতিষ্ঠাতার একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জাওয়েদ করিম। শুধু ইউটিউব নয়, পোর্টেবল ত্রিমাত্রিক গ্রাফিকস, সলভিং ড্যাড পাজল, থ্রি-ডি স্প্রিং সিমুলেশন, রোবটিক ওয়েবক্যাম, রেডিওসিটি ইনজিন, রে-ট্রেসার, লাইফ থ্রিডি, কোয়াক ২ মডেল ভিউয়ারসহ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্ভাবক তিনি।
বিজ্ঞানবিষয়ক মার্কিন সাময়িকী সায়েন্সনিউজের দৃষ্টিতে ২০২০ সালের উল্লেখযোগ্য ১০ বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন বাংলাদেশের তনিমা তাসনিম। রহস্যঘেরা ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরের বেড়ে ওঠা এবং পরিবেশের ওপর এর প্রভাব নিয়ে পূর্ণাঙ্গ চিত্র এঁকে বিশ্বের সেরা ১০ বিজ্ঞানীর তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন তনিমা। যুক্তরাষ্ট্রের ডার্টমাউথ কলেজে গবেষণা করেন তিনি।
এই তো কয়েক বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা তাদের সবচেয়ে কনিষ্ঠ নারীকর্মী মাহমুদা সুলতানাকে তাঁর ন্যানো ম্যাটেরিয়াল নিয়ে গবেষণা ও মহাকাশে ক্ষুদ্র এবং যুগান্তকারী ডিটেক্টর ও ডিভাইস তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য ‘বর্ষসেরা উদ্ভাবক’ স্বীকৃতি দেয়।
কেবল প্রযুক্তিগত দিক দিকে নয়, মানবিক দিক বিবেচনায়ও এগিয়ে বাংলাদেশের তারুণ্য। নানা সংকট সমাধানে তাঁরা কাজ করছেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক বাংলাদেশি সাদ আহমেদের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী হৃৎপিণ্ডের জিনগত গঠনপ্রকৃতির সন্ধান করছেন, যাতে ভ্রূণ অবস্থা থেকে হৃৎপিণ্ডের গঠনপ্রকৃতি এবং এর মাধ্যমে বংশগত হৃদ্রোগের কারণ খুঁজে বের করা যায়। সারা পৃথিবী তাঁর এই কাজের দিকে নজর রাখছে।
একইভাবে ক্যানসারের চিকিৎসা উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশি গবেষক ড. দেবানন্দ সরকার। কম খরচে নিউমোনিয়া নিরাময়ের উদ্ভাবক বাংলাদেশি চিকিৎসক মোহাম্মদ যোবায়ের চিশতি। কয়েক বছর আগে পারকিনসন্স রোগের কারণ অনুসন্ধানে অবদানের জন্য ইউরোপিয়ান ইয়ং ইনভেস্টিগেটর অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তরুণ ড. মিরাতুল মুকিত।
--নাফিস বিন জাফর অস্কারজয়ী প্রথম বাংলাদেশি। এ পর্যন্ত তিনি অস্কার জিতেছেন দুবার। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী একজন সফল সফটওয়্যার প্রকৌশলী এবং অ্যানিমেশন বিশেষজ্ঞ।
প্রবাসে যেমন আছেন, তেমনি দেশে বসেও দুনিয়া জয় করছেন বাংলাদেশের তরুণেরা। তাঁদের সেই উদ্ভাবন এখন আছে মহাকাশেও। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো অনেক আগে থেকেই ক্ষুদ্রাকৃতির কৃত্রিম উপগ্রহ (ন্যানো স্যাটেলাইট) মহাকাশে পাঠিয়েছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশও ওই তালিকায় নিজের স্থান করে নিয়েছে ব্র্যাক অন্বেষা কৃত্রিম উপগ্রহটি উৎক্ষেপণের মাধ্যমে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা এবং বর্তমানে জাপানের কিউশু ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে গবেষণারত শিক্ষার্থী রায়হানা শামস ইসলাম, আব্দুল্লাহিল কাফি ও মায়সূন ইবনে মনোয়ার—এই তিনজন মিলে বাংলাদেশের প্রথম এই ন্যানো স্যাটেলাইট নির্মাণ করেছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় আরেক বাংলাদেশি তরুণ লাবিবের গল্পটাও দারুণ। লাবিব তাজওয়ার রহমান ‘নিউবিলিটি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা। নিউবিলিটি দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলভিত্তিক একটি কোম্পানি, যারা ভিশন-বেইজড লোকালাইজেশন এবং পথ-পরিকল্পনা প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় ফুড ডেলিভারি রোবট তৈরি করবে। অর্থাৎ মানুষ নয়, তাদের তৈরি রোবটই সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় অর্ডার করা খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছে।
উদ্ভাবনের এই যে শক্তি, সেটা কিন্তু প্রতিনিয়ত বাড়ছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার্স সম্পন্ন করা সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল তৈরি করেছেন পণ্যবাহী ড্রোন। রিচার্জেবল ব্যাটারিচালিত মোটরসাইকেল তৈরি করেছেন মুক্তাগাছার আবু বকর। পাবনার আটঘরিয়া কলেজের সহকারী অধ্যাপক কৃষিবিদ জাফর সাদেক ও তাঁর সহোদর শৌখিন জ্যোতির্বিদ মো. আবদুল্লাহ সাদেক দেশের প্রচলিত কৃষিব্যবস্থা আমূল বদলে দেওয়ার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এম মনজুর হোসেন আবিষ্কার করেছেন এমন এক প্রাকৃতিক হিমাগার, যেটি বিদ্যুৎ ছাড়াই চলবে।
চট্টগ্রামের এক তরুণ জয় বড়ুয়া আত্মীয়স্বজন ও স্কুলের সহপাঠী বন্ধুদের কাছে ছোটবেলা থেকেই পরিচিত ছিলেন খুদে বিজ্ঞানী হিসেবে। নানা ধরনের উদ্ভাবন করলেও তাঁর সাড়াজাগানো একটি উদ্ভাবন হলো স্নায়বিক আবেদনে সাড়া দিতে সক্ষম এমন রোবটিকস হ্যান্ড তথা কৃত্রিম হাত তৈরি।
এই তো বছর দুয়েক আগে রোবটিকস নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান দখল করে বাংলাদেশি তরুণদের একটি দল, যারা ঢাকার বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রী। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড, পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, ইনফরমেটিকস অলিম্পিয়াড, আর্থ সায়েন্স অলিম্পিয়াড, বায়োলজি অলিম্পিয়াড কিংবা আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াড—সবখানেই ভালো করছেন বাংলাদেশের তরুণেরা।
চাকরি না খুঁজে আজকাল উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হয়ে চাকরি দেওয়ার চেষ্টা করছেন অনেক তরুণ। ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিংয়ে তো দারুণ সব কাজ করছেন বাংলাদেশের তরুণেরা। পিছিয়ে নেই নারীরাও। দেশের নানা প্রান্ত থেকে রাজিনা, সোনিয়া, সুমাইয়া, নাফিসারাও হাজার হাজার ডলার আয় করছেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে জীবন বদলে ফেলছেন তরুণেরা। রাজশাহীর খায়রুল আলম তো ফ্রিল্যান্সিং করে কয়েক বছরে মাল্টি-মাল্টি-মিলিয়নিয়ার। তিনজন নিয়ে যাত্রা শুরু করা খায়রুল আলমের প্রতিষ্ঠান ‘ফ্লিট বাংলাদেশ’-এ এখন কাজ করছেন ৫৫০ জন। একসময় কম্পিউটার কেনার টাকা না থাকলেও এখন তিনি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রতি মাসে বেতন দেন এক কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা। রাজশাহীতে বসেই কাজ করেন আমাজন, ওয়ালমার্টের মতো জায়ান্ট কোম্পানির সঙ্গে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার গল্প ফোর্বস, আন্ট্রাপ্রেইনারের মতো বিশ্ব সাময়িকীতেও স্থান পেয়ে শুধু স্বাভাবিক সময়ে নয়, করোনার দুঃসময়েও বাংলাদেশের তরুণেরা মেলে ধরছেন নিজেদের। অবশ্য সাফল্যের পাশাপাশি তরুণদের হতাশাও দেখা যায়, বিশেষ করে করোনাকালে। অর্ধশত বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার সংবাদ চোখে পড়েছে গত তিন বছরে। কাজেই তরুণদের কথাও শুনতে হবে। তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও যত্ন দিতে হবে। অবশ্য অনেক তরুণ-তরুণীও এ নিয়ে ভাবছেন। এই যেমন ফাইরুজ ফাইজা বিথার।
ব্র্যাক তরুণদের মূল্যবোধ ও উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করে। এ জন্য করা হয়েছে ‘আমরা নতুন নেটওয়ার্ক’। সেখানে তরুণদের নানা সমস্যা নিয়ে কাজ করতে বলা হয়। খুলনায় ‘আমরা নতুন নেটওয়ার্ক’-এর কর্মশালায় ফাইরুজ ও তাঁর বন্ধুরা মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে কাজ করার উদ্যোগ নেন। করোনাকালে তাঁরা অনলাইনে মনের স্কুল প্রতিষ্ঠা করে সেই কাজটা করেন। ওই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের ‘গোলকিপার্স গ্লোবাল গোলস চেঞ্জমেকার অ্যাওয়ার্ড-২০২১’। দেশে কিংবা বিদেশে এমন আরও অনেক বাংলাদেশি আছেন, যাঁরা সত্যিকারের আইকন। বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাস দেখাচ্ছেন কীভাবে মানুষের পাশে থাকা যায়। তাঁর মতো অনেক তরুণ আছেন, যাঁরা জনপ্রিয়তা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথাকথিত ‘সেলিব্রিটি’ তকমার বাইরে কাজ করে চলেছেন দেশ ও আপামর জনসাধারণের মঙ্গলে।
এই যে সব সময় নতুন কিছু উদ্ভাবন, সেটাই তারুণ্যের শক্তি, একটা দেশের শক্তি। আর সেই শক্তিতে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। কারণ, জাতিসংঘের সংজ্ঞায় যাঁদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে, তাঁরাই তরুণ। বিশ্বব্যাপী এই তরুণের সংখ্যা এখন ১৮০ কোটি। আবার ১৭ কোটির বেশি জনসংখ্যার বাংলাদেশে তরুণের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। বাংলাদেশে এই সুবিধা থাকবে ২০৪০ সাল পর্যন্ত। কাজেই ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য তারুণ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অবশ্য বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং সব অর্জনেই ভূমিকা ছিল তারুণ্যের। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আর প্রযুক্তির এই সময়েও ভরসা তরুণেরাই। ২০৪১ সালে বাংলাদেশের যে রূপকল্প, সেটি অর্জন করতে হবে তারুণ্যের উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে। কারণ, তারুণ্যের উদ্ভাবনী শক্তিই এনে দেবে বাংলাদেশের সমৃদ্ধি।
শরিফুল হাসান, প্রোগ্রাম হেড, মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ইয়ুথ ইনিশিয়েটিভস, ব্র্যাক
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪