জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এ দেশে নেমে এসেছিল অমানিশার অন্ধকার। হত্যাকে তারা ভেবেছিল উৎসব। রক্তই ছিল তাদের গন্তব্য। ট্যাংক আর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে খুনির দল বেরিয়েছিল দেশের রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করার জন্য। রাষ্ট্রপতি যিনি, তিনি ছিলেন এ দেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপকার।
কত বড় বড় নেতারই না জন্ম হয়েছে এ দেশে, কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো কে আর মাটির ভাষায় বলেছেন, ‘দাবায়া রাখতে পারবা না’, ‘বলে দেবার চাই?’ তার মতো কে একবুক সাহস নিয়ে বারবার দাঁড়িয়েছে মৃত্যুর মুখোমুখি?
বঙ্গবন্ধুর ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া বুকের কথা বলব একটু পরে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী মহিতুল ইসলামের জবানবন্দি পড়তে গিয়ে শেখ রাসেল হত্যাকাণ্ডের বর্ণনায় শোকে বিহ্বল হয়ে যেতে হয়।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাড়িটায় ১১ বছর বয়সী রাসেলকে হত্যা করা হয়েছিল সবার শেষে। শিশুটি চোখের সামনে রক্ত দেখে, প্রিয়জনদের লাশ থেকে ভয়ার্ত কণ্ঠে মহিতুলকে বলেছিল, ‘ভাইয়া, আমাকে মারবে না তো?’ বলেছিল, ‘মায়ের কাছে যাব।’ নিচ থেকে রাসেলকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দোতলার সেই ঘরটায়। তারপর মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে গুলি করা হয়েছিল। শেখ কামালকে হত্যা করে যে নারকীয়তার সূচনা, শেখ রাসেলকে হত্যা করার মাধ্যমে তা শেষ। এর মধ্যে মুজিব পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানা দেশে ছিলেন না বলে বেঁচে গিয়েছিলেন। হত্যাকাণ্ড শেষ করার পর মেজর বজলুল হুদা বলেন, ‘অল আর ফিনিশ্ড।’
সেই ১৫ আগস্টে ঘাতকদের সামনে বুক চিতিয়ে বঙ্গবন্ধু গর্জে উঠে বলেছিলেন, ‘তোরা কী চাস? কোথায় নিয়ে যেতে চাস আমাকে?’ উত্তরে ঘাতকদের বুলেটে ছিন্নভিন্ন হয়েছিল তাঁর বিশাল বুক। এ বুকেই তিনি ধারণ করেছিলেন বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের মানুষের যত দুঃখ, যত ক্লেশ, যত আনন্দ, যত উৎসব।
১৫ আগস্ট শুধু ব্যক্তি মুজিবকেই কি হত্যা করা হয়েছিল? না। এই হত্যাকাণ্ড শুধু একজন মানুষকে হত্যা করা নয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার অর্থ আমাদের আবহমান ইতিহাসকে হত্যা করা। ইতিহাসের ধারাবাহিকতাকে হত্যা করা।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দেশের চাকা উল্টো দিকে ঘুরে গিয়েছিল। সে সময় দেশটাকে মিনি পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা চলেছিল। ‘বাংলাদেশ বেতার’ হয়ে গিয়েছিল ‘রেডিও পাকিস্তান’-এর আদলে ‘রেডিও বাংলাদেশ’, ‘জয় বাংলা’ হয়ে যায় ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’-এর আদলে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রেতাত্মা ফিরে এসেছিল এই দেশে। তার ছায়া কিন্তু ক্রমাগত বড় হয়ে উঠেছে। একসময় সামরিক শাসকেরা ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নামটাই মুছে দিতে চেয়েছিল কিংবা তাঁকে বানাতে চেয়েছিল খলনায়ক। কিন্তু ইতিহাসই ইতিহাস হয়। বানানো গল্প নয়। তাই বঙ্গবন্ধু জাতির নায়ক হয়েই ফিরে ফিরে আসেন বারবার। কারণ, তাঁকে ছাড়া ইতিহাস গড়ে তোলা যায় না।
শোক দিবসের কর্মসূচি
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে স্থাপিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। সেখানে রাষ্ট্রপতির পরে শ্রদ্ধা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ৭টায় প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টে নিহতদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। বেলা ১১টায় হেলিকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রীর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে। ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে জাতির পিতার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন তিনি।
সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে আওয়ামী লীগ। সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, কবর জিয়ারত, দোয়া ও মোনাজাত করা হবে।
বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করা হবে। এ ছাড়া মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। দুপুরে সারা দেশে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় অসচ্ছল, এতিম ও দুস্থ মানুষদের মাঝে খাদ্য বিতরণ ও গণভোজের আয়োজন করছেন আওয়ামী লীগসহ দলটির সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এ দেশে নেমে এসেছিল অমানিশার অন্ধকার। হত্যাকে তারা ভেবেছিল উৎসব। রক্তই ছিল তাদের গন্তব্য। ট্যাংক আর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে খুনির দল বেরিয়েছিল দেশের রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করার জন্য। রাষ্ট্রপতি যিনি, তিনি ছিলেন এ দেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপকার।
কত বড় বড় নেতারই না জন্ম হয়েছে এ দেশে, কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো কে আর মাটির ভাষায় বলেছেন, ‘দাবায়া রাখতে পারবা না’, ‘বলে দেবার চাই?’ তার মতো কে একবুক সাহস নিয়ে বারবার দাঁড়িয়েছে মৃত্যুর মুখোমুখি?
বঙ্গবন্ধুর ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া বুকের কথা বলব একটু পরে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী মহিতুল ইসলামের জবানবন্দি পড়তে গিয়ে শেখ রাসেল হত্যাকাণ্ডের বর্ণনায় শোকে বিহ্বল হয়ে যেতে হয়।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাড়িটায় ১১ বছর বয়সী রাসেলকে হত্যা করা হয়েছিল সবার শেষে। শিশুটি চোখের সামনে রক্ত দেখে, প্রিয়জনদের লাশ থেকে ভয়ার্ত কণ্ঠে মহিতুলকে বলেছিল, ‘ভাইয়া, আমাকে মারবে না তো?’ বলেছিল, ‘মায়ের কাছে যাব।’ নিচ থেকে রাসেলকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দোতলার সেই ঘরটায়। তারপর মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে গুলি করা হয়েছিল। শেখ কামালকে হত্যা করে যে নারকীয়তার সূচনা, শেখ রাসেলকে হত্যা করার মাধ্যমে তা শেষ। এর মধ্যে মুজিব পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানা দেশে ছিলেন না বলে বেঁচে গিয়েছিলেন। হত্যাকাণ্ড শেষ করার পর মেজর বজলুল হুদা বলেন, ‘অল আর ফিনিশ্ড।’
সেই ১৫ আগস্টে ঘাতকদের সামনে বুক চিতিয়ে বঙ্গবন্ধু গর্জে উঠে বলেছিলেন, ‘তোরা কী চাস? কোথায় নিয়ে যেতে চাস আমাকে?’ উত্তরে ঘাতকদের বুলেটে ছিন্নভিন্ন হয়েছিল তাঁর বিশাল বুক। এ বুকেই তিনি ধারণ করেছিলেন বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডের মানুষের যত দুঃখ, যত ক্লেশ, যত আনন্দ, যত উৎসব।
১৫ আগস্ট শুধু ব্যক্তি মুজিবকেই কি হত্যা করা হয়েছিল? না। এই হত্যাকাণ্ড শুধু একজন মানুষকে হত্যা করা নয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার অর্থ আমাদের আবহমান ইতিহাসকে হত্যা করা। ইতিহাসের ধারাবাহিকতাকে হত্যা করা।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দেশের চাকা উল্টো দিকে ঘুরে গিয়েছিল। সে সময় দেশটাকে মিনি পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা চলেছিল। ‘বাংলাদেশ বেতার’ হয়ে গিয়েছিল ‘রেডিও পাকিস্তান’-এর আদলে ‘রেডিও বাংলাদেশ’, ‘জয় বাংলা’ হয়ে যায় ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’-এর আদলে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রেতাত্মা ফিরে এসেছিল এই দেশে। তার ছায়া কিন্তু ক্রমাগত বড় হয়ে উঠেছে। একসময় সামরিক শাসকেরা ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নামটাই মুছে দিতে চেয়েছিল কিংবা তাঁকে বানাতে চেয়েছিল খলনায়ক। কিন্তু ইতিহাসই ইতিহাস হয়। বানানো গল্প নয়। তাই বঙ্গবন্ধু জাতির নায়ক হয়েই ফিরে ফিরে আসেন বারবার। কারণ, তাঁকে ছাড়া ইতিহাস গড়ে তোলা যায় না।
শোক দিবসের কর্মসূচি
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে স্থাপিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। সেখানে রাষ্ট্রপতির পরে শ্রদ্ধা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ৭টায় প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টে নিহতদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। বেলা ১১টায় হেলিকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রীর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে। ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে জাতির পিতার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন তিনি।
সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে আওয়ামী লীগ। সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, কবর জিয়ারত, দোয়া ও মোনাজাত করা হবে।
বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করা হবে। এ ছাড়া মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। দুপুরে সারা দেশে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় অসচ্ছল, এতিম ও দুস্থ মানুষদের মাঝে খাদ্য বিতরণ ও গণভোজের আয়োজন করছেন আওয়ামী লীগসহ দলটির সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪