শাহানা হুদা রঞ্জনা
ছয়-সাত বছর আগে ধানমন্ডি লেকের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় মাঝবয়সী এক নারী আমাকে বললেন, ‘মাথায় কাপড় দেন নাই কেন? কাপড় দেন।’ আমিও প্রায় মধ্যবয়স্ক এক নারী, কাজ করে খাই। কাজের সুবাদে নানাজনের সাথে চলতে-ফিরতে হয়, গ্রামে-গঞ্জে যেতে হয়। এর আগে এই নসিহত আমাকে কেউ করেনি। আচমকা একজন অপরিচিত নারীর কাছ থেকে এই কথা শুনে আমি দাঁড়ালাম। দেখি তিনি ওড়না ও হিজাব পরিহিত।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনি কি আমাকে চেনেন? চেনেন না। তাহলে কেন আমাকে মাথায় কাপড় দিতে বললেন?’ জবাবে বললেন, ‘আপনার ভালার জন্যই কইলাম।’ বললাম, ‘আপনি যে মাথায় হিজাব পরে, গায়ে ওড়না পেঁচিয়ে রেখেছেন, আমি কি আপনাকে এগুলো ফেলে দিতে বলেছি? আপনার ইচ্ছা আপনি দিয়েছেন। কিন্তু আমাকে বা অন্য কাউকে গায়ে পড়ে এসব পরামর্শ দেবেন না।’
এই সমাজে কিছু মানুষ আছে, যাদের গায়ে পড়ে নারীদের উপদেশ দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই প্রবণতা এখন আর শুধু মুখের কথায় সীমাবদ্ধ নেই; রীতিমতো আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। দেড়-দুই বছর ধরে দেখছি, দেশের বিভিন্ন জায়গায় পোশাকের কারণে নারীর ওপর হামলা হচ্ছে।
এই তো কিছুদিন আগে (৯ জুন ২০২২) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অল্পবয়সী এক মেয়ে রিকশায় চড়ে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল আরোহী লোকগুলো তাঁর জামা টেনে ছিঁড়ে দিয়েছে। তারা শুধু জামা ছিঁড়ে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, উল্টো কুৎসিত ভাষায় গালাগাল করেছে মেয়েটিকে। তখন রাস্তার একজন মানুষও এগিয়ে আসেনি, দাঁড়ায়নি মেয়েটির পাশে।
নরসিংদী রেলস্টেশনে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মেয়েটিকেও একইভাবে পোশাক নিয়ে হেনস্তা করা হয়েছিল। মারধর, গালাগাল করে চরম অপমান করা হয়েছিল। এই ঘটনাগুলো সমাজে এমনি এমনি ঘটছে না। একশ্রেণির অসভ্য-ইতর লোক নোংরা উদ্দেশ্য নিয়ে এই কাজগুলো করছে। তাদের উদ্দেশ্য—নারীকে অপমানিত করে গুহার জীবনে পাঠিয়ে দেওয়া।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ৪০১ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, আর ৫৮ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা গেছেন ১৯ জন, আর আত্মহত্যা করেছেন ৪ জন। এ ছাড়া ৭৫ জন নারী স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন, ৬৫ জন নানাভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। একই সময়ে ৪৫৪টি শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে, তাদের মধ্যে ৫৬ জনের বয়স ৬ বছরের কম। আর ৭-১২ বছর বয়সী শিশু আছে ৯৪টি।
যে মেয়ে বা ছেলেটি যৌন নিপীড়ন, শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, সে ছাড়া এই সমাজ এগুলো নিয়ে কথা বলে না, আওয়াজ তোলে না। নারী বা মানবাধিকার সংগঠনগুলো কিছু বললেও তেমন লাভ হয় না। সরকার এবং সাধারণ জনতা মনে করে, নারী বা শিশুর যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের শিকার হওয়া নিয়ে শুধু গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোই মাতামাতি করে। এটা তেমন বড় কোনো অপরাধ বা ইস্যু নয়।
সরকার মনে করে, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, গণধর্ষণের জন্য আইন করা আছে, আর করণীয় কী হতে পারে? কিন্তু আমরা দেখছি, এই অপরাধগুলোর ক্ষেত্রে প্রথাগত ও আইনি শাস্তি কোনো কাজেই আসছে না। কারণ, লম্বা পথ পেরিয়ে, বহু প্রতিকূল পরিস্থিতি পাশ কাটিয়ে, রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এবং সমাজের কুৎসিত মতামতকে অগ্রাহ্য করে একজন ভিকটিম ও তার পরিবারকে বিচারকের দরজায় পৌঁছাতে হয়, যা অধিকাংশ পরিবার বা ব্যক্তির পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
পরিবারে, সমাজে, দেশে একটা বড় পরিবর্তন দরকার। নারী আক্রান্ত হলে তার আচরণ, পোশাক, চলাফেরা—এসবকেই দায়ী করা হয়। কিন্তু এ প্রশ্নের উত্তর কেউ দেয় না যে, ৬৪ বছরের নারী অথবা ৪ বছরের শিশু কেন ধর্ষণের শিকার হচ্ছে?
আমাদের সমাজ খুব অদ্ভুত। কোনো মেয়ে ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির শিকার হলে সবাই চুপ করে থাকি। খুব বিচ্ছিন্নভাবে কিছু প্রতিবাদ হয়, কিছু নিন্দাজ্ঞাপন করা হয়। সবাই ঘরে বসে ভাবি, যাদের মেয়ে ভুক্তভোগী, মাথাব্যথা তাদের। আর তাই তো এই দেশে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে বড় কোনো আন্দোলন গড়ে ওঠেনি।
নারী যখন বিচারের জন্য থানায় যান, বা আইনের দ্বারস্থ হন, তখন তাঁকে ভয়াবহ ট্রমার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। হেনস্তার কোনো শেষ থাকে না। এই পুরো ব্যবস্থার মধ্যে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। আর তা শুরু করতে হবে পরিবার থেকে। আমাদের পরিবারগুলোতে সব সময় মেয়েকে ভালো হয়ে চলতে শেখানো হয়। বিপরীতে ছেলেদের এর ১০ শতাংশও শেখানো হয় না। ছেলেদের শেখানো উচিত নারীকে অসম্মান, নির্যাতন, যৌন হয়রানি বা ধর্ষণ ঘৃণিত অপরাধ। সমাজ পরিবর্তনের জন্য পড়াশোনা শেখানোর চেয়েও এই শিক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশে সংসারের মুখ্য উপার্জনকারী হিসেবে নারীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটলেই নারীর মুক্তি ঘটবে—এটা যে সত্য নয়, তা নারীর বুঝতে কষ্ট হয় না। সমাজ মনে করে, পুরুষ স্বাধীন, বহির্মুখী, ক্ষমতাধর, চরিত্রবান এবং বীর। নারীও এভাবেই পুরুষকে মেনে নিয়েছে। নিয়ম শুধু নারীর জন্য, লজ্জাও নারীর এবং পরাধীন শুধু নারীই।
নারীশিক্ষার হার বেড়েছে, বিভিন্ন খাতে কর্মসংস্থানের হার বেড়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর প্রাধান্য লক্ষণীয়, রাজনীতিতে নারী নেতৃত্ব চোখে পড়ার মতো। দেশের সার্বিক এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে নারীর ভূমিকার কথা গুরুত্ব দিয়ে বলা হচ্ছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী, উড়োজাহাজ বা গাড়ি চালানো, পর্বতারোহণ, সাংবাদিকতা, বিজ্ঞানী, ফুটবলার, ক্রিকেটার, রেফারি, গ্লাইডার, সার্ফার ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে নারী এগিয়ে গেলেও এখনো সিংহভাগ নারীকে কারও না কারও ‘কেয়ারঅফ’-এ থাকতে হয়।
সমাজ চেষ্টা করে, কীভাবে নারীর অহংবোধকে ধ্বংস করা যায়? কারণ, তাহলে নারীকে ‘কেয়ারঅফ’-এ রাখতে সুবিধা হয়। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর উন্নতি হলেও এই এক জায়গায় এসে যেন সব স্থবির হয়ে আছে। বিভিন্ন সামাজিক বিধিনিষেধের বেড়াজালে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। এ কারণে অনেক নারী প্রকৃত অর্থে ক্ষমতায়িত হতেই পারেন না। সে যতই এগোতে চাক, তাকে পেছন থেকে টেনে ধরা হয়।
লেখক: সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন
ছয়-সাত বছর আগে ধানমন্ডি লেকের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় মাঝবয়সী এক নারী আমাকে বললেন, ‘মাথায় কাপড় দেন নাই কেন? কাপড় দেন।’ আমিও প্রায় মধ্যবয়স্ক এক নারী, কাজ করে খাই। কাজের সুবাদে নানাজনের সাথে চলতে-ফিরতে হয়, গ্রামে-গঞ্জে যেতে হয়। এর আগে এই নসিহত আমাকে কেউ করেনি। আচমকা একজন অপরিচিত নারীর কাছ থেকে এই কথা শুনে আমি দাঁড়ালাম। দেখি তিনি ওড়না ও হিজাব পরিহিত।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনি কি আমাকে চেনেন? চেনেন না। তাহলে কেন আমাকে মাথায় কাপড় দিতে বললেন?’ জবাবে বললেন, ‘আপনার ভালার জন্যই কইলাম।’ বললাম, ‘আপনি যে মাথায় হিজাব পরে, গায়ে ওড়না পেঁচিয়ে রেখেছেন, আমি কি আপনাকে এগুলো ফেলে দিতে বলেছি? আপনার ইচ্ছা আপনি দিয়েছেন। কিন্তু আমাকে বা অন্য কাউকে গায়ে পড়ে এসব পরামর্শ দেবেন না।’
এই সমাজে কিছু মানুষ আছে, যাদের গায়ে পড়ে নারীদের উপদেশ দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই প্রবণতা এখন আর শুধু মুখের কথায় সীমাবদ্ধ নেই; রীতিমতো আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। দেড়-দুই বছর ধরে দেখছি, দেশের বিভিন্ন জায়গায় পোশাকের কারণে নারীর ওপর হামলা হচ্ছে।
এই তো কিছুদিন আগে (৯ জুন ২০২২) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অল্পবয়সী এক মেয়ে রিকশায় চড়ে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল আরোহী লোকগুলো তাঁর জামা টেনে ছিঁড়ে দিয়েছে। তারা শুধু জামা ছিঁড়ে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, উল্টো কুৎসিত ভাষায় গালাগাল করেছে মেয়েটিকে। তখন রাস্তার একজন মানুষও এগিয়ে আসেনি, দাঁড়ায়নি মেয়েটির পাশে।
নরসিংদী রেলস্টেশনে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মেয়েটিকেও একইভাবে পোশাক নিয়ে হেনস্তা করা হয়েছিল। মারধর, গালাগাল করে চরম অপমান করা হয়েছিল। এই ঘটনাগুলো সমাজে এমনি এমনি ঘটছে না। একশ্রেণির অসভ্য-ইতর লোক নোংরা উদ্দেশ্য নিয়ে এই কাজগুলো করছে। তাদের উদ্দেশ্য—নারীকে অপমানিত করে গুহার জীবনে পাঠিয়ে দেওয়া।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ৪০১ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, আর ৫৮ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা গেছেন ১৯ জন, আর আত্মহত্যা করেছেন ৪ জন। এ ছাড়া ৭৫ জন নারী স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন, ৬৫ জন নানাভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। একই সময়ে ৪৫৪টি শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে, তাদের মধ্যে ৫৬ জনের বয়স ৬ বছরের কম। আর ৭-১২ বছর বয়সী শিশু আছে ৯৪টি।
যে মেয়ে বা ছেলেটি যৌন নিপীড়ন, শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, সে ছাড়া এই সমাজ এগুলো নিয়ে কথা বলে না, আওয়াজ তোলে না। নারী বা মানবাধিকার সংগঠনগুলো কিছু বললেও তেমন লাভ হয় না। সরকার এবং সাধারণ জনতা মনে করে, নারী বা শিশুর যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের শিকার হওয়া নিয়ে শুধু গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোই মাতামাতি করে। এটা তেমন বড় কোনো অপরাধ বা ইস্যু নয়।
সরকার মনে করে, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, গণধর্ষণের জন্য আইন করা আছে, আর করণীয় কী হতে পারে? কিন্তু আমরা দেখছি, এই অপরাধগুলোর ক্ষেত্রে প্রথাগত ও আইনি শাস্তি কোনো কাজেই আসছে না। কারণ, লম্বা পথ পেরিয়ে, বহু প্রতিকূল পরিস্থিতি পাশ কাটিয়ে, রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এবং সমাজের কুৎসিত মতামতকে অগ্রাহ্য করে একজন ভিকটিম ও তার পরিবারকে বিচারকের দরজায় পৌঁছাতে হয়, যা অধিকাংশ পরিবার বা ব্যক্তির পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
পরিবারে, সমাজে, দেশে একটা বড় পরিবর্তন দরকার। নারী আক্রান্ত হলে তার আচরণ, পোশাক, চলাফেরা—এসবকেই দায়ী করা হয়। কিন্তু এ প্রশ্নের উত্তর কেউ দেয় না যে, ৬৪ বছরের নারী অথবা ৪ বছরের শিশু কেন ধর্ষণের শিকার হচ্ছে?
আমাদের সমাজ খুব অদ্ভুত। কোনো মেয়ে ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির শিকার হলে সবাই চুপ করে থাকি। খুব বিচ্ছিন্নভাবে কিছু প্রতিবাদ হয়, কিছু নিন্দাজ্ঞাপন করা হয়। সবাই ঘরে বসে ভাবি, যাদের মেয়ে ভুক্তভোগী, মাথাব্যথা তাদের। আর তাই তো এই দেশে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে বড় কোনো আন্দোলন গড়ে ওঠেনি।
নারী যখন বিচারের জন্য থানায় যান, বা আইনের দ্বারস্থ হন, তখন তাঁকে ভয়াবহ ট্রমার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। হেনস্তার কোনো শেষ থাকে না। এই পুরো ব্যবস্থার মধ্যে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। আর তা শুরু করতে হবে পরিবার থেকে। আমাদের পরিবারগুলোতে সব সময় মেয়েকে ভালো হয়ে চলতে শেখানো হয়। বিপরীতে ছেলেদের এর ১০ শতাংশও শেখানো হয় না। ছেলেদের শেখানো উচিত নারীকে অসম্মান, নির্যাতন, যৌন হয়রানি বা ধর্ষণ ঘৃণিত অপরাধ। সমাজ পরিবর্তনের জন্য পড়াশোনা শেখানোর চেয়েও এই শিক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশে সংসারের মুখ্য উপার্জনকারী হিসেবে নারীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটলেই নারীর মুক্তি ঘটবে—এটা যে সত্য নয়, তা নারীর বুঝতে কষ্ট হয় না। সমাজ মনে করে, পুরুষ স্বাধীন, বহির্মুখী, ক্ষমতাধর, চরিত্রবান এবং বীর। নারীও এভাবেই পুরুষকে মেনে নিয়েছে। নিয়ম শুধু নারীর জন্য, লজ্জাও নারীর এবং পরাধীন শুধু নারীই।
নারীশিক্ষার হার বেড়েছে, বিভিন্ন খাতে কর্মসংস্থানের হার বেড়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর প্রাধান্য লক্ষণীয়, রাজনীতিতে নারী নেতৃত্ব চোখে পড়ার মতো। দেশের সার্বিক এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে নারীর ভূমিকার কথা গুরুত্ব দিয়ে বলা হচ্ছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী, উড়োজাহাজ বা গাড়ি চালানো, পর্বতারোহণ, সাংবাদিকতা, বিজ্ঞানী, ফুটবলার, ক্রিকেটার, রেফারি, গ্লাইডার, সার্ফার ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে নারী এগিয়ে গেলেও এখনো সিংহভাগ নারীকে কারও না কারও ‘কেয়ারঅফ’-এ থাকতে হয়।
সমাজ চেষ্টা করে, কীভাবে নারীর অহংবোধকে ধ্বংস করা যায়? কারণ, তাহলে নারীকে ‘কেয়ারঅফ’-এ রাখতে সুবিধা হয়। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর উন্নতি হলেও এই এক জায়গায় এসে যেন সব স্থবির হয়ে আছে। বিভিন্ন সামাজিক বিধিনিষেধের বেড়াজালে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। এ কারণে অনেক নারী প্রকৃত অর্থে ক্ষমতায়িত হতেই পারেন না। সে যতই এগোতে চাক, তাকে পেছন থেকে টেনে ধরা হয়।
লেখক: সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪