হায়দার আকবর খান রনো
ঈদ, পূজা-পার্বণ ইত্যাদি সামাজিক উৎসব। এসব আনন্দ-উৎসবে মানুষ ধর্মনির্বিশেষে একসঙ্গে মিলিত হয়। নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি করার মাধ্যমে পালিত হয় এসব উৎসব।
আমার ছেলেবেলার ঈদ আর বড়বেলার ঈদের স্মৃতির মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। আমি যদি আমার ছেলেবেলার কথা বলি, তাহলে তো বুঝতে হবে, তখন আমি অনেক ছোট ছিলাম। আর এখন আমি ৮০ বছরের বৃদ্ধ। এর মধ্যে আবার এখন চোখে দেখতে পাই না। এ ছাড়া ছোটবেলার মন-মানসিকতার সঙ্গে এখনকার মন-মানসিকতার মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। এখন আমি সারা দিন ঘরের মধ্যে থাকি। ঘর থেকে বের হতে হলে সঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বের হতে হয়। তাই ঈদের দিন ঘর থেকে বের হওয়া হয় না। ঈদের দিন পরিচিত আত্মীয়স্বজন দেখা করতে আসেন।
আমার শৈশব কেটেছে কলকাতায় নানুর বাড়িতে। সেখানে ঈদের দিন প্রচুর লোকের সমাগম হতো। পাড়ার বন্ধুবান্ধব, আমরা যারা একই বয়সী ছিলাম, সবাই মিলে রাস্তায় হই-হুল্লোড় করে কাটাতাম। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ঘুরে বেড়াতাম। সবার বাড়িতে ঈদের যে সেমাই রান্না হতো, সেটা খেতাম। সে সময় দেখেছি, একজন লোক ঠেলাগাড়ি করে আইসক্রিম বিক্রি করতে আসতেন। ঈদের দিনে সে আইসক্রিম খাওয়া ছিল আমাদের জন্য বেশ উপভোগের বিষয়। আমরা যারা মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান, তারা এ আইসক্রিম কিনে খেয়ে অনেক খুশি হতাম।
কিন্তু দেখতাম, একেবারে গরিব ঘরের সন্তানেরা সে আইসক্রিম কিনে খেতে পারত না। তারা ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকত। এই যে ধনী-গরিবের বৈষম্য, এ বৈষম্য সেদিন যেমন ছিল, আজকে এসে তা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। বৈষম্যটা এত বেশি বেড়ে গেছে যে এখন ঈদ বলতে ধনীদের ঈদ পালনটা চোখে বেশি ধরা পড়ে। এখন মধ্যবিত্তেরা একভাবে ঈদের সময় কাটান আর গরিবেরা অর্থকষ্টের মধ্যেই ঈদ পালন করেন। ঈদের আনন্দ গরিবেরা ধনীদের মতো উপভোগ করতে পারেন না।
এখানে নজরুলের ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’ গানের একটি লাইন মনে পড়ে। লাইনটি হলো ‘যারা জীবন ভরে রাখছে রোজা, নিত্য উপবাসী’। আসলে তারা তো প্রতিদিন রোজা রাখে, মানে প্রতিদিন অনাহারে থাকে। সে রকম পরিবারের সংখ্যা এখন অনেক বেশি। তাদের কাছে ঈদ খুব বেশি আনন্দের বিষয় নয়। এটুকু আনন্দের বিষয় হতে পারে যে এদিনে তারা তাদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত যারা ধনী, তাদের কাছ থেকে হয়তো কিছু অধিক টাকা ভিক্ষা পেতে পারে।
ঈদের জামাতে ধনী-গরিব পাশাপাশি দাঁড়ায়। জামাত শেষে কোলাকুলি করে। সব ঠিক আছে। কিন্তু নামাজ শেষে ঈদের মাঠ থেকে নামার পর দুই শ্রেণির মানুষ দুই দিকে পথ চলতে থাকে। এ সময় হাজার কোটি টাকার মালিক সৃষ্টি হয়েছে, যেটা তখনকার দিনে কল্পনাও করা যেত না। ঈদের সময় এরা প্রচুর টাকা খরচ করে। পাশাপাশি মধ্যবিত্তরা কোনোরকমে ঈদের উৎসব পালন করে। আর একেবারে গরিব যারা, তাদের কাছে সেদিনকার ঈদ যা ছিল, আজকের ঈদও তা-ই আছে। তারা তো ঠিকঠাক ঈদের পোশাকও কিনতে পারে না। আজকের আর সেদিনকার ঈদের মধ্যে মিল শুধু বৈষম্যে।
হায়দার আকবর খান রনো, লেখক ও রাজনীতিবিদ
অনুলিখন: মন্টি বৈষ্ণব
ঈদ, পূজা-পার্বণ ইত্যাদি সামাজিক উৎসব। এসব আনন্দ-উৎসবে মানুষ ধর্মনির্বিশেষে একসঙ্গে মিলিত হয়। নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি করার মাধ্যমে পালিত হয় এসব উৎসব।
আমার ছেলেবেলার ঈদ আর বড়বেলার ঈদের স্মৃতির মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। আমি যদি আমার ছেলেবেলার কথা বলি, তাহলে তো বুঝতে হবে, তখন আমি অনেক ছোট ছিলাম। আর এখন আমি ৮০ বছরের বৃদ্ধ। এর মধ্যে আবার এখন চোখে দেখতে পাই না। এ ছাড়া ছোটবেলার মন-মানসিকতার সঙ্গে এখনকার মন-মানসিকতার মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। এখন আমি সারা দিন ঘরের মধ্যে থাকি। ঘর থেকে বের হতে হলে সঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বের হতে হয়। তাই ঈদের দিন ঘর থেকে বের হওয়া হয় না। ঈদের দিন পরিচিত আত্মীয়স্বজন দেখা করতে আসেন।
আমার শৈশব কেটেছে কলকাতায় নানুর বাড়িতে। সেখানে ঈদের দিন প্রচুর লোকের সমাগম হতো। পাড়ার বন্ধুবান্ধব, আমরা যারা একই বয়সী ছিলাম, সবাই মিলে রাস্তায় হই-হুল্লোড় করে কাটাতাম। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ঘুরে বেড়াতাম। সবার বাড়িতে ঈদের যে সেমাই রান্না হতো, সেটা খেতাম। সে সময় দেখেছি, একজন লোক ঠেলাগাড়ি করে আইসক্রিম বিক্রি করতে আসতেন। ঈদের দিনে সে আইসক্রিম খাওয়া ছিল আমাদের জন্য বেশ উপভোগের বিষয়। আমরা যারা মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান, তারা এ আইসক্রিম কিনে খেয়ে অনেক খুশি হতাম।
কিন্তু দেখতাম, একেবারে গরিব ঘরের সন্তানেরা সে আইসক্রিম কিনে খেতে পারত না। তারা ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকত। এই যে ধনী-গরিবের বৈষম্য, এ বৈষম্য সেদিন যেমন ছিল, আজকে এসে তা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। বৈষম্যটা এত বেশি বেড়ে গেছে যে এখন ঈদ বলতে ধনীদের ঈদ পালনটা চোখে বেশি ধরা পড়ে। এখন মধ্যবিত্তেরা একভাবে ঈদের সময় কাটান আর গরিবেরা অর্থকষ্টের মধ্যেই ঈদ পালন করেন। ঈদের আনন্দ গরিবেরা ধনীদের মতো উপভোগ করতে পারেন না।
এখানে নজরুলের ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’ গানের একটি লাইন মনে পড়ে। লাইনটি হলো ‘যারা জীবন ভরে রাখছে রোজা, নিত্য উপবাসী’। আসলে তারা তো প্রতিদিন রোজা রাখে, মানে প্রতিদিন অনাহারে থাকে। সে রকম পরিবারের সংখ্যা এখন অনেক বেশি। তাদের কাছে ঈদ খুব বেশি আনন্দের বিষয় নয়। এটুকু আনন্দের বিষয় হতে পারে যে এদিনে তারা তাদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত যারা ধনী, তাদের কাছ থেকে হয়তো কিছু অধিক টাকা ভিক্ষা পেতে পারে।
ঈদের জামাতে ধনী-গরিব পাশাপাশি দাঁড়ায়। জামাত শেষে কোলাকুলি করে। সব ঠিক আছে। কিন্তু নামাজ শেষে ঈদের মাঠ থেকে নামার পর দুই শ্রেণির মানুষ দুই দিকে পথ চলতে থাকে। এ সময় হাজার কোটি টাকার মালিক সৃষ্টি হয়েছে, যেটা তখনকার দিনে কল্পনাও করা যেত না। ঈদের সময় এরা প্রচুর টাকা খরচ করে। পাশাপাশি মধ্যবিত্তরা কোনোরকমে ঈদের উৎসব পালন করে। আর একেবারে গরিব যারা, তাদের কাছে সেদিনকার ঈদ যা ছিল, আজকের ঈদও তা-ই আছে। তারা তো ঠিকঠাক ঈদের পোশাকও কিনতে পারে না। আজকের আর সেদিনকার ঈদের মধ্যে মিল শুধু বৈষম্যে।
হায়দার আকবর খান রনো, লেখক ও রাজনীতিবিদ
অনুলিখন: মন্টি বৈষ্ণব
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪