অনলাইন ডেস্ক
পাকিস্তান থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার একদিন পর যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে তাঁর কৌশলগত বিষয়ক উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার জানিয়েছিলেন, তিনি ‘পশ্চিম পাকিস্তানকে’ রক্ষা করতে পেরেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের গোপন নথির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭১ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয় এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে। ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উভয় রণাঙ্গনে মাত্র দুই সপ্তাহের যুদ্ধ শেষে আত্মসমর্পণপত্রে সই করে পাকিস্তান। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে কিসিঞ্জারের করা ওই প্রশংসাবাণীটি এমন এক প্রেক্ষাপটে করা হয়েছিল, যখন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটি তাদের কূটনৈতিক পরাজয় দেখতে পেয়েছিল। যুদ্ধ শুরুর সাড়ে আট মাসের মাথায় এক গোপন বৈঠকে তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল যে, সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে বশে আনার বিষয়ে তারা পাকিস্তানি জেনারেল ইয়াহিয়া খানের ওপর ভ্রান্ত আস্থা স্থাপন করেছিল।
জেনারেল এ এ কে নিয়াজির আত্মসমর্পণপত্রে সই এবং ভারতীয় সময় ১৭ ডিসেম্বর পশ্চিম রণাঙ্গনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অস্ত্রবিরতির ঘোষণার ১৬ ঘণ্টার মাথায় হেনরি কিসিঞ্জার তাঁর বস রিচার্ড নিক্সনকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘অভিনন্দন মি. প্রেসিডেন্ট। আপনি পশ্চিম পাকিস্তানকে রক্ষা করেছেন।’
এই অদ্ভুত আলাপচারিতা নিয়ে এনডিটিভি কথা বলেছে বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক আর চক্রবর্তীর সঙ্গে। বর্তমানে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ওপর বই লেখায় ব্যস্ত এই কূটনীতিক সেই আলাপচারিতা সম্পর্কে এনডিটিভিকে বলেন, ‘কিসিঞ্জারের ভূমিকা ছিল বেশ সংশয়পূর্ণ। সংঘাতের মাসগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের মূল লক্ষ্যই ছিল পাকিস্তানিদের মধ্যস্থতায় চীনের সঙ্গে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা। তাঁর এই মন্তব্যকে সেই হতাশাজনক পরিস্থিতিতে পাকিস্তানিদের আস্থায় নেওয়ার জন্য বা নিতান্তই কড়া বসকে খুশি করার একটি পদ্ধতি হিসেবে পাঠ করা যেতে পারে।’
যদিও এটা সত্য যে, এটি ছিল তেমনই একটি স্বাধীনতা যুদ্ধ, যা সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র একেবারে শুরু থেকেই বুঝে উঠতে পারেনি। এই আলাপের সাড়ে আট মাস আগে ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ হেনরি কিসিঞ্জার রিচার্ড নিক্সনকে ফোনে বলেছিলেন, পূর্বাঞ্চলে পাকিস্তান বিদ্রোহ দমনে সফল হবে। আর প্রেসিডেন্ট নিক্সন এই বিশ্বাসের পক্ষে উপস্থাপন করেছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ আক্রমণের উদাহরণকে।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশে হামলার পরপর ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে বলেছিলেন, ‘মনে হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ ইয়াহিয়া নিয়ে নিয়েছেন...সব বিশেষজ্ঞই বলছেন, সাড়ে ৭ কোটি মানুষের (বাংলাদেশের সে সময়ের জনসংখ্যা) ওপর মাত্র ৩০ হাজার লোক (পূর্বাঞ্চলে অবস্থান করা পাকিস্তানি সৈন্য সংখ্যা) নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না...এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত।’
এই বার্তার উত্তরে প্রেসিডেন্ট নিক্সন বলেছিলেন, বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্র বাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রণ খুব স্বাভাবিক একটা বিষয় এবং প্রতিষ্ঠিত সত্য। তিনি বলেছিলেন, ‘ইনকা দখলের সময় স্প্যানিশরা কী করেছিল, সেদিকে দেখুন। দেখুন, ভারত দখলের সময় ব্রিটিশরা কী করেছিল।’
প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি প্রথম আনুগত্য প্রদর্শন করা পাকিস্তানি কূটনীতিকদের অন্যতম এবং নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত সাবেক বাংলাদেশ হাইকমিশনার তারিক করিম। এ বিষয়ে তিনি এনডিটিভিকে বলেন, ‘মার্কিনরা পরিস্থিতি বুঝতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল। মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ও ইতিহাসের দিকবদলের গতি অনুধাবনে তারা ব্যর্থ হয়েছিল।’
১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর সামনে যখন পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা ভেঙে পড়ছিল, তখন রিচার্ড নিক্সন ও হেনরি কিসিঞ্জার ব্যস্ত ছিলেন যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার বা যুদ্ধ থামানোর পরিকল্পনা করতে। রিচার্ড নিক্সন ও মার্কিন আইনমন্ত্রী নিউটন মিশেলের সঙ্গে এক বৈঠকে হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, তিনি ইরানের শাহের কাছ থেকে প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছানোর জন্য একটি বার্তা পেয়েছেন, যেখানে শাহ (বিপর্যস্ত পাকিস্তানের) জন্য গোলাবারুদ পাঠাতে পারবেন বলে উল্লেখ করেছেন। এই মেধাবী কূটনীতিক এও বলেছিলেন যে, ইসরায়েলের হাত থেকে রক্ষার জন্য জর্ডানে ইরান যুদ্ধবিমান পাঠাবে, আর জর্ডান ভারতের বিরুদ্ধের যুদ্ধের জন্য পাকিস্তানকে যুদ্ধবিমান দেবে।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এই আশঙ্কাও ব্যক্ত করেছিলেন যে, পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধজয়ের পর ভারত পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যাপকভাবে হামলা চালাতে পারে। কিসিঞ্জার বলেছিলেন, ‘ভারতের পরিকল্পনা এখন স্পষ্ট। তারা পূর্ব পাকিস্তান থেকে তাদের বাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানের দিকে নিয়ে যাবে। তারপর তারা পাকিস্তানের পদাতিক ও বিমানবাহিনীকে গুঁড়িয়ে দেবে, কাশ্মীর দখলের পরই তারা থামবে।’ তিনি এও বলেছিলেন, ‘এসব যখন ঘটবে, তখন পশ্চিম পাকিস্তানের কেন্দ্রবিমুখ অঞ্চলগুলো স্বাধীন হবে। বেলুচিস্তান ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চল এই স্বাধীনতা পেতে যাচ্ছে। পশ্চিম পাকিস্তান আরেকটি জটিল আফগানিস্তানে পরিণত হতে যাচ্ছে।’
এই ভয়াবহ সতর্কতা কাজ করেছিল বলা যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন সেই আলোচনাতেই ভিয়েতনাম থেকে মার্কিন সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরে প্রেরণের প্রতিশ্রুতি দেন, যা ছিল আদতে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে মার্কিন নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার একটি অজুহাত। নিক্সন বলেছিলেন, ‘এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার পাঠানোর কথা কি ভাবছেন? আমি এটি তাৎক্ষণিক করতে চাই। আমি ২৪ ঘণ্টাও অপেক্ষা করতে চাই না।’
সে সময় এই নৌবহরকে সবচেয়ে ভয়াবহ নৌশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এই পরিস্থিতিতে ভারতের হাতে থাকা কম শক্তির এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারকে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল, যাতে প্রত্যুত্তর দেওয়া যায়।
চলতি বছর ভারতের কাছ থেকে পদ্মশ্রী পদক পাওয়া বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আল জহির এনডিটিভিকে বলেন, ‘ (সে সময়) প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট রবার্ট কেনেডির ভাই ও ডেমোক্র্যাট নেতা টেড কেনেডি আমাদের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু রিপাবলিকানরা ছিলেন একচোখা। যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর পাঠানোটা আমাদের যুদ্ধে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। কারণ, রাশিয়া দ্রুততার সঙ্গে তাদের নৌবহর পাঠিয়েছিল, যাতে পশ্চিমা পদক্ষেপের পাল্টা জবাব দেওয়া যায়।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্কিন নীতি নিয়ে ১৯৭২ সালে নিক্সন ও কিসিঞ্জারের মধ্যে হওয়া এক আলাপে কিসিঞ্জার বলেছিলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান আমরা যা করেছি, এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে চীনা বিকল্পটি ধরে রাখতে এটি কীভাবে কাজ করেছে, তা কারও বোধগম্য নয়। বাংলাদেশকে আমরা কেন অভিশাপ দিতে যাব?’
পাকিস্তান থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার একদিন পর যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে তাঁর কৌশলগত বিষয়ক উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার জানিয়েছিলেন, তিনি ‘পশ্চিম পাকিস্তানকে’ রক্ষা করতে পেরেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের গোপন নথির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭১ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয় এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে। ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উভয় রণাঙ্গনে মাত্র দুই সপ্তাহের যুদ্ধ শেষে আত্মসমর্পণপত্রে সই করে পাকিস্তান। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে কিসিঞ্জারের করা ওই প্রশংসাবাণীটি এমন এক প্রেক্ষাপটে করা হয়েছিল, যখন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটি তাদের কূটনৈতিক পরাজয় দেখতে পেয়েছিল। যুদ্ধ শুরুর সাড়ে আট মাসের মাথায় এক গোপন বৈঠকে তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল যে, সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে বশে আনার বিষয়ে তারা পাকিস্তানি জেনারেল ইয়াহিয়া খানের ওপর ভ্রান্ত আস্থা স্থাপন করেছিল।
জেনারেল এ এ কে নিয়াজির আত্মসমর্পণপত্রে সই এবং ভারতীয় সময় ১৭ ডিসেম্বর পশ্চিম রণাঙ্গনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অস্ত্রবিরতির ঘোষণার ১৬ ঘণ্টার মাথায় হেনরি কিসিঞ্জার তাঁর বস রিচার্ড নিক্সনকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘অভিনন্দন মি. প্রেসিডেন্ট। আপনি পশ্চিম পাকিস্তানকে রক্ষা করেছেন।’
এই অদ্ভুত আলাপচারিতা নিয়ে এনডিটিভি কথা বলেছে বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক আর চক্রবর্তীর সঙ্গে। বর্তমানে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ওপর বই লেখায় ব্যস্ত এই কূটনীতিক সেই আলাপচারিতা সম্পর্কে এনডিটিভিকে বলেন, ‘কিসিঞ্জারের ভূমিকা ছিল বেশ সংশয়পূর্ণ। সংঘাতের মাসগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের মূল লক্ষ্যই ছিল পাকিস্তানিদের মধ্যস্থতায় চীনের সঙ্গে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা। তাঁর এই মন্তব্যকে সেই হতাশাজনক পরিস্থিতিতে পাকিস্তানিদের আস্থায় নেওয়ার জন্য বা নিতান্তই কড়া বসকে খুশি করার একটি পদ্ধতি হিসেবে পাঠ করা যেতে পারে।’
যদিও এটা সত্য যে, এটি ছিল তেমনই একটি স্বাধীনতা যুদ্ধ, যা সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র একেবারে শুরু থেকেই বুঝে উঠতে পারেনি। এই আলাপের সাড়ে আট মাস আগে ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ হেনরি কিসিঞ্জার রিচার্ড নিক্সনকে ফোনে বলেছিলেন, পূর্বাঞ্চলে পাকিস্তান বিদ্রোহ দমনে সফল হবে। আর প্রেসিডেন্ট নিক্সন এই বিশ্বাসের পক্ষে উপস্থাপন করেছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ আক্রমণের উদাহরণকে।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশে হামলার পরপর ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে বলেছিলেন, ‘মনে হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ ইয়াহিয়া নিয়ে নিয়েছেন...সব বিশেষজ্ঞই বলছেন, সাড়ে ৭ কোটি মানুষের (বাংলাদেশের সে সময়ের জনসংখ্যা) ওপর মাত্র ৩০ হাজার লোক (পূর্বাঞ্চলে অবস্থান করা পাকিস্তানি সৈন্য সংখ্যা) নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না...এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত।’
এই বার্তার উত্তরে প্রেসিডেন্ট নিক্সন বলেছিলেন, বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্র বাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রণ খুব স্বাভাবিক একটা বিষয় এবং প্রতিষ্ঠিত সত্য। তিনি বলেছিলেন, ‘ইনকা দখলের সময় স্প্যানিশরা কী করেছিল, সেদিকে দেখুন। দেখুন, ভারত দখলের সময় ব্রিটিশরা কী করেছিল।’
প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি প্রথম আনুগত্য প্রদর্শন করা পাকিস্তানি কূটনীতিকদের অন্যতম এবং নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত সাবেক বাংলাদেশ হাইকমিশনার তারিক করিম। এ বিষয়ে তিনি এনডিটিভিকে বলেন, ‘মার্কিনরা পরিস্থিতি বুঝতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল। মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ও ইতিহাসের দিকবদলের গতি অনুধাবনে তারা ব্যর্থ হয়েছিল।’
১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর সামনে যখন পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা ভেঙে পড়ছিল, তখন রিচার্ড নিক্সন ও হেনরি কিসিঞ্জার ব্যস্ত ছিলেন যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার বা যুদ্ধ থামানোর পরিকল্পনা করতে। রিচার্ড নিক্সন ও মার্কিন আইনমন্ত্রী নিউটন মিশেলের সঙ্গে এক বৈঠকে হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, তিনি ইরানের শাহের কাছ থেকে প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছানোর জন্য একটি বার্তা পেয়েছেন, যেখানে শাহ (বিপর্যস্ত পাকিস্তানের) জন্য গোলাবারুদ পাঠাতে পারবেন বলে উল্লেখ করেছেন। এই মেধাবী কূটনীতিক এও বলেছিলেন যে, ইসরায়েলের হাত থেকে রক্ষার জন্য জর্ডানে ইরান যুদ্ধবিমান পাঠাবে, আর জর্ডান ভারতের বিরুদ্ধের যুদ্ধের জন্য পাকিস্তানকে যুদ্ধবিমান দেবে।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এই আশঙ্কাও ব্যক্ত করেছিলেন যে, পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধজয়ের পর ভারত পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যাপকভাবে হামলা চালাতে পারে। কিসিঞ্জার বলেছিলেন, ‘ভারতের পরিকল্পনা এখন স্পষ্ট। তারা পূর্ব পাকিস্তান থেকে তাদের বাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানের দিকে নিয়ে যাবে। তারপর তারা পাকিস্তানের পদাতিক ও বিমানবাহিনীকে গুঁড়িয়ে দেবে, কাশ্মীর দখলের পরই তারা থামবে।’ তিনি এও বলেছিলেন, ‘এসব যখন ঘটবে, তখন পশ্চিম পাকিস্তানের কেন্দ্রবিমুখ অঞ্চলগুলো স্বাধীন হবে। বেলুচিস্তান ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চল এই স্বাধীনতা পেতে যাচ্ছে। পশ্চিম পাকিস্তান আরেকটি জটিল আফগানিস্তানে পরিণত হতে যাচ্ছে।’
এই ভয়াবহ সতর্কতা কাজ করেছিল বলা যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন সেই আলোচনাতেই ভিয়েতনাম থেকে মার্কিন সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরে প্রেরণের প্রতিশ্রুতি দেন, যা ছিল আদতে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে মার্কিন নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার একটি অজুহাত। নিক্সন বলেছিলেন, ‘এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার পাঠানোর কথা কি ভাবছেন? আমি এটি তাৎক্ষণিক করতে চাই। আমি ২৪ ঘণ্টাও অপেক্ষা করতে চাই না।’
সে সময় এই নৌবহরকে সবচেয়ে ভয়াবহ নৌশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এই পরিস্থিতিতে ভারতের হাতে থাকা কম শক্তির এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারকে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল, যাতে প্রত্যুত্তর দেওয়া যায়।
চলতি বছর ভারতের কাছ থেকে পদ্মশ্রী পদক পাওয়া বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আল জহির এনডিটিভিকে বলেন, ‘ (সে সময়) প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট রবার্ট কেনেডির ভাই ও ডেমোক্র্যাট নেতা টেড কেনেডি আমাদের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু রিপাবলিকানরা ছিলেন একচোখা। যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর পাঠানোটা আমাদের যুদ্ধে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। কারণ, রাশিয়া দ্রুততার সঙ্গে তাদের নৌবহর পাঠিয়েছিল, যাতে পশ্চিমা পদক্ষেপের পাল্টা জবাব দেওয়া যায়।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় মার্কিন নীতি নিয়ে ১৯৭২ সালে নিক্সন ও কিসিঞ্জারের মধ্যে হওয়া এক আলাপে কিসিঞ্জার বলেছিলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান আমরা যা করেছি, এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে চীনা বিকল্পটি ধরে রাখতে এটি কীভাবে কাজ করেছে, তা কারও বোধগম্য নয়। বাংলাদেশকে আমরা কেন অভিশাপ দিতে যাব?’
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪