সুরভী ছন্দা, সিডনি (অস্ট্রেলিয়া)
রিতাপা ফোন করেই জানতে চেয়েছিলেন সারা দিন কী করেছি, ঈদ কীভাবে পালন করেছি। সত্যি বলতে কি, ওর ফোনের পরই জানতে পেরেছিলাম যে সেদিন ঈদ ছিল, সিডনির বাঙালিরা ঈদ পালন করেছে। সিডনিতে ওটাই ছিল আমাদের প্রথম ঈদ।
আজ থেকে ২৭ বছর আগের গল্প এটা। সেদিন সন্ধ্যায় ছেলের বাবা কাজ থেকে ফিরে কাছের ইন্ডিয়ান দোকান থেকে প্রয়োজনীয় বাজার করেছে, রাতেই পোলাও-মাংস, সেমাই রেঁধেছি, ঈদ পালন করেছি, একাকী, শুধুই নিজেরা। মাত্র কয়েক শ বাঙালির সেদিনের সিডনি আজ অনেক বদলে গেছে, বাঙালির সংখ্যা বেড়েছে। পরিচিত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। বাঙালিরা এখন চাঁদরাতে মেলার আয়োজন করে। রমজানে ইফতার উৎসব করে। চাঁদ কোথায় দেখা গেল, সেটা নিয়ে বিতর্ক হয়। খালি চোখে চাঁদ দেখা না গেলে ঈদ উদ্যাপন করা যাবে কি না, সেই বিতর্ক হয়। সৌদি আরব কবে ঈদ করবে সেটা আলোচনা হয়, আরও কত-কী!
এখন আর ইন্ডিয়ান দোকানে যেতে হয় না, অনেক বাঙালি দোকান। কালিজিরা কিংবা চিনিগুঁড়া চাল, খেজুরের গুড়, হলুদের গুঁড়া, কৌটায় আদা-রসুন বাটা, সবকিছুই পাওয়া যায়, আর ইউটিউবের কল্যাণে সবকিছুর রেসিপি।
সিডনিতে এখন অনেক বাঙালি। ঘটা করে ঈদ উৎসব হয়। বেশ কয়েকটা ঈদ জামাত হয়। ছেলেরা দেশের মতো করে পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে ঈদ-জামাতে যায়। আমি পছন্দের শাড়ি পরি, লালটিপ দিই, কন্যা কখনো কখনো সালোয়ার-কামিজ পরে। লুচি, সবজি ভাজি, সেমাই-পায়েস দিয়েই সকালটা শুরু হয়। দুপুরে পোলাও-মাংস কিংবা কাচ্চি বিরিয়ানি। আর বিকেলে বাঙালি বন্ধু-আত্মীয়দের বাসায় বেড়াতে যাওয়া। অনেকেই আবার হাতে বানানো গরম-গরম লুচি আর সবজির স্বাদ নিতে আমাদের আতিথ্য গ্রহণ করেন।
উৎসবের আনন্দটা বড় বেশি অন্তর্নিহিত, বাইরে কী হচ্ছে তা বড় ব্যাপার নয়, মন কীভাবে সাড়া দেয় সেটাই মুখ্য, ভেতরটা কীভাবে আন্দোলিত হচ্ছে, সেটাই আসল। ঈদ আমার কাছে এমনই। সারাটা দিন অকারণেই ভালো লাগে। সব খাবারেই মায়ের হাতের রান্নার সেই স্বাদ ফিরে আসে, ছোটবেলার মতো বন্ধুদের সঙ্গে পাড়া বেড়াতে ইচ্ছে হয়। আজকাল নাকি বাংলাদেশের বিত্তবানেরা ঈদের ছুটিতে বিদেশে যায়, কোলাহল থেকে দূরে চলে যায়। আর আমার মন বারবার দেশের মাটিতে ফিরে আসে, আজিমপুরের সেই ছোটবেলায় ফিরে আসে।
আমাদের সন্তানেরা হয়তোবা আমাদের মতো করে ঈদ আনন্দে উদ্বেলিত হয় না, বিশেষ করে যারা এই সিডনিতে বড় হচ্ছে। ওদের অনুভূতি-আবেগ একটু অন্য রকম, পরিবেশ পারিপার্শ্বিকতা সমাজ বাস্তবতা একটু আলাদা, উৎসবের ভাবনাটা বড় বেশি সাদামাটা কিংবা অস্পষ্ট। দোষ দেওয়ার কিছু নেই, চারাগাছ অন্য মাটিতে রোপণ করেছি, গোলাপের রং একটু অন্য রকম হতেও পারে।
অস্ট্রেলিয়ায় ঈদে কোনো সরকারি ছুটি নেই। সমস্যা শুরু হয় তখনই যখন ঈদ কোনো কর্মদিবসে পড়ে। নিরন্তর চেষ্টা চলে এক দিন এগিয়ে কিংবা পিছিয়ে ছুটির দিনে ফেলার। আর তা না হলে উৎসবের দ্বিতীয় অধ্যায় ওই ছুটির দিনেই শুরু হয়।
নতুন জুতার মনে হয় আলাদা একটা গন্ধ আছে। আমার ছোটবেলায় তেমনটাই মনে হতো। ঈদের আগে বাবা ঢাকার নিউমার্কেটের বাটার দোকান থেকে এক জোড়া লাল রঙের ফিতেওয়ালা জুতা কিনে দিতেন, ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত ওটা লুকিয়ে রাখতাম, মাঝে মাঝে গন্ধ শুঁকতাম। নতুন জুতায় প্রায়ই পায়ে ফোসকা পড়ত, কিন্তু কখনো কষ্ট পেয়েছি মনে হয় না। সিডনিতে ছেলেমেয়েকে ঈদে নতুন জামাকাপড়-জুতা কিনে দিতে চেয়েছি। নতুন পোশাক যে উৎসবের অংশ এরা তা বুঝতে চায় না, কিনতে চায় না, আবেগহীন অনুভূতি।
সিডনি বদলে গেছে, বদলে যাচ্ছে। রমজানে সুপার মার্কেটে এখন খোরমা খেজুর বিক্রি হয়, দামি ডিপার্টমেন্ট স্টোরে ঈদ মোবারক লেখা ব্যানার ফেস্টুন দেখা যায়, আমাদের সন্তানেরা বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ধর্মচর্চা সম্বন্ধে জানতে চায়, আগ্রহ প্রকাশ করে। এখন আর সেই ২৭ বছর আগের, ঈদ ভুলে যাওয়া ঈদ নেই।
রিতাপা ফোন করেই জানতে চেয়েছিলেন সারা দিন কী করেছি, ঈদ কীভাবে পালন করেছি। সত্যি বলতে কি, ওর ফোনের পরই জানতে পেরেছিলাম যে সেদিন ঈদ ছিল, সিডনির বাঙালিরা ঈদ পালন করেছে। সিডনিতে ওটাই ছিল আমাদের প্রথম ঈদ।
আজ থেকে ২৭ বছর আগের গল্প এটা। সেদিন সন্ধ্যায় ছেলের বাবা কাজ থেকে ফিরে কাছের ইন্ডিয়ান দোকান থেকে প্রয়োজনীয় বাজার করেছে, রাতেই পোলাও-মাংস, সেমাই রেঁধেছি, ঈদ পালন করেছি, একাকী, শুধুই নিজেরা। মাত্র কয়েক শ বাঙালির সেদিনের সিডনি আজ অনেক বদলে গেছে, বাঙালির সংখ্যা বেড়েছে। পরিচিত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। বাঙালিরা এখন চাঁদরাতে মেলার আয়োজন করে। রমজানে ইফতার উৎসব করে। চাঁদ কোথায় দেখা গেল, সেটা নিয়ে বিতর্ক হয়। খালি চোখে চাঁদ দেখা না গেলে ঈদ উদ্যাপন করা যাবে কি না, সেই বিতর্ক হয়। সৌদি আরব কবে ঈদ করবে সেটা আলোচনা হয়, আরও কত-কী!
এখন আর ইন্ডিয়ান দোকানে যেতে হয় না, অনেক বাঙালি দোকান। কালিজিরা কিংবা চিনিগুঁড়া চাল, খেজুরের গুড়, হলুদের গুঁড়া, কৌটায় আদা-রসুন বাটা, সবকিছুই পাওয়া যায়, আর ইউটিউবের কল্যাণে সবকিছুর রেসিপি।
সিডনিতে এখন অনেক বাঙালি। ঘটা করে ঈদ উৎসব হয়। বেশ কয়েকটা ঈদ জামাত হয়। ছেলেরা দেশের মতো করে পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে ঈদ-জামাতে যায়। আমি পছন্দের শাড়ি পরি, লালটিপ দিই, কন্যা কখনো কখনো সালোয়ার-কামিজ পরে। লুচি, সবজি ভাজি, সেমাই-পায়েস দিয়েই সকালটা শুরু হয়। দুপুরে পোলাও-মাংস কিংবা কাচ্চি বিরিয়ানি। আর বিকেলে বাঙালি বন্ধু-আত্মীয়দের বাসায় বেড়াতে যাওয়া। অনেকেই আবার হাতে বানানো গরম-গরম লুচি আর সবজির স্বাদ নিতে আমাদের আতিথ্য গ্রহণ করেন।
উৎসবের আনন্দটা বড় বেশি অন্তর্নিহিত, বাইরে কী হচ্ছে তা বড় ব্যাপার নয়, মন কীভাবে সাড়া দেয় সেটাই মুখ্য, ভেতরটা কীভাবে আন্দোলিত হচ্ছে, সেটাই আসল। ঈদ আমার কাছে এমনই। সারাটা দিন অকারণেই ভালো লাগে। সব খাবারেই মায়ের হাতের রান্নার সেই স্বাদ ফিরে আসে, ছোটবেলার মতো বন্ধুদের সঙ্গে পাড়া বেড়াতে ইচ্ছে হয়। আজকাল নাকি বাংলাদেশের বিত্তবানেরা ঈদের ছুটিতে বিদেশে যায়, কোলাহল থেকে দূরে চলে যায়। আর আমার মন বারবার দেশের মাটিতে ফিরে আসে, আজিমপুরের সেই ছোটবেলায় ফিরে আসে।
আমাদের সন্তানেরা হয়তোবা আমাদের মতো করে ঈদ আনন্দে উদ্বেলিত হয় না, বিশেষ করে যারা এই সিডনিতে বড় হচ্ছে। ওদের অনুভূতি-আবেগ একটু অন্য রকম, পরিবেশ পারিপার্শ্বিকতা সমাজ বাস্তবতা একটু আলাদা, উৎসবের ভাবনাটা বড় বেশি সাদামাটা কিংবা অস্পষ্ট। দোষ দেওয়ার কিছু নেই, চারাগাছ অন্য মাটিতে রোপণ করেছি, গোলাপের রং একটু অন্য রকম হতেও পারে।
অস্ট্রেলিয়ায় ঈদে কোনো সরকারি ছুটি নেই। সমস্যা শুরু হয় তখনই যখন ঈদ কোনো কর্মদিবসে পড়ে। নিরন্তর চেষ্টা চলে এক দিন এগিয়ে কিংবা পিছিয়ে ছুটির দিনে ফেলার। আর তা না হলে উৎসবের দ্বিতীয় অধ্যায় ওই ছুটির দিনেই শুরু হয়।
নতুন জুতার মনে হয় আলাদা একটা গন্ধ আছে। আমার ছোটবেলায় তেমনটাই মনে হতো। ঈদের আগে বাবা ঢাকার নিউমার্কেটের বাটার দোকান থেকে এক জোড়া লাল রঙের ফিতেওয়ালা জুতা কিনে দিতেন, ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত ওটা লুকিয়ে রাখতাম, মাঝে মাঝে গন্ধ শুঁকতাম। নতুন জুতায় প্রায়ই পায়ে ফোসকা পড়ত, কিন্তু কখনো কষ্ট পেয়েছি মনে হয় না। সিডনিতে ছেলেমেয়েকে ঈদে নতুন জামাকাপড়-জুতা কিনে দিতে চেয়েছি। নতুন পোশাক যে উৎসবের অংশ এরা তা বুঝতে চায় না, কিনতে চায় না, আবেগহীন অনুভূতি।
সিডনি বদলে গেছে, বদলে যাচ্ছে। রমজানে সুপার মার্কেটে এখন খোরমা খেজুর বিক্রি হয়, দামি ডিপার্টমেন্ট স্টোরে ঈদ মোবারক লেখা ব্যানার ফেস্টুন দেখা যায়, আমাদের সন্তানেরা বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ধর্মচর্চা সম্বন্ধে জানতে চায়, আগ্রহ প্রকাশ করে। এখন আর সেই ২৭ বছর আগের, ঈদ ভুলে যাওয়া ঈদ নেই।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪