নূরুননবী শান্ত
ঈদের সেকাল খুব একটা প্রাচীন নয়। এই উপমহাদেশে ঈদ উদ্যাপনের সূচনা মোগলদের হাতে। এদিকে, শামসুজ্জামান খান লিখেছেন, বর্তমান বাংলাদেশে ধর্ম-সামাজিক সত্তার জাগরণী ধীরে ধীরে সংগঠিত হয়েছে ১৯৩০-এর দশকে। ১৯৩৭ সালে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের বাংলার প্রধানমন্ত্রী হওয়া এবং দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের ঔদার্যে বেঙ্গল প্যাক্ট স্বাক্ষর হওয়ার ফলে যে নতুন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি মুসলমান সমাজের বিকাশ ঘটে, তাদের হাতেই সাংস্কৃতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ঈদ উৎসবের সূচনা।
মোগল প্রভাব সংকুচিত হওয়ার যথেষ্ট পরে ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে মাদারীপুরের হাজী শরীয়তুল্লাহ ফরায়েজি আন্দোলনের সূচনা করলে সারা বাংলার মতো রংপুর অঞ্চলেও বিধর্মীদের (ইংরেজ) শাসনাধীনে মুসলমানদের ধর্মীয় ফরজ আদায় ব্যতীত ঈদের জামাত, এমনকি জুমার জামাতও বন্ধ রাখা হয়। এই পরিস্থিতিতে রংপুরে আসেন উত্তর প্রদেশের ধর্ম ও সমাজসংস্কারক মাওলানা শাহ কেরামত আলী জৈনপুরী। তিনি তাঁর সংস্কারবাদী ‘তাইউনি আন্দোলন’-এর অংশ হিসেবে ফরায়েজি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বাহাসে লিপ্ত হন। তিনি যুক্তি দেন, যেহেতু ব্রিটিশরা স্থানীয় জনগণের ধর্মকর্মে হস্তক্ষেপ করছে না, সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পন্থা হিসেবে মুসলমান সমাজের দুই ঈদ ও জুমার নামাজ বন্ধ রাখা শরিয়তসম্মত নয়। একাধিক বাহাসে জয়লাভের পর ১৮৬১ সালের দিকে মুসলমান সমাজে জুমার জামাত ও ঈদের বড় জামাত পুনরায় অনুষ্ঠিত হতে শুরু করে। ১৮৭০ সালের ৩০ মে অসুস্থতাজনিত কারণে মাওলানা কেরামত আলী দেহত্যাগ করেন এবং রংপুরে তাঁর মাজার প্রতিষ্ঠিত হয়। অনুমান করা যায়, ১৮৬১ সাল থেকেই নবরূপে রংপুরে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে, যা কালক্রমে ধর্মীয় উৎসবের সীমানা অতিক্রম করে সামাজিক উৎসবের রূপ লাভ করে।
এখানে রংপুর অঞ্চলের কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তির স্মৃতিচারণের ওপর ভিত্তি করে গত শতকের ষাটের দশকের রংপুরের গ্রামেগঞ্জে ঈদের চেহারা কেমন ছিল, তার একটি সংক্ষিপ্ত ছবি তুলে ধরা হয়েছে।
ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি ঈদকে ঘিরে সামাজিক আয়োজন ছিল বিস্তর। পাড়ায় পাড়ায় নব্য শিক্ষিত ছেলেরা রোজার মাসজুড়ে মহড়া দিত ঈদের পরের দিন নাট্যাভিনয় করবে বলে। এসব ক্ষেত্রে সমাজের স্বতঃস্ফূর্ত ও প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। তবে, ঈদ উদ্যাপনের শুরু হতো চাঁদ দেখার উত্তেজনার ভেতর দিয়ে। চাঁদ দেখা না গেলে ঈদ হতো না। কোনো এলাকায় চাঁদ দেখাকে ঘিরে দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটত। তখন গ্রামের সামর্থ্যবানদের দুই-এক ঘরে রেডিও উঠেছে। একদল রেডিও ঘোষণাকে বিশ্বাস করত। মেঘ বা অন্য কারণে চাঁদ না দেখা গেলেও তারা রেডিও ঘোষণা মোতাবেক ঈদ জামাতের আয়োজন করত। কিন্তু আরেক দল কিছুতেই চাঁদ না দেখে ঈদ করার পক্ষপাতী ছিল না। এ নিয়ে অনেক এলাকাতেই বিবাদ ঘটত। এমনকি পাশাপাশি দুই গ্রামে দুই দিন ঈদ হওয়ার ঘটনার কথাও কেউ কেউ মনে করতে পারেন। তবে, পশ্চিম আকাশে সরু বাঁকা ঈদের চাঁদ দেখে উল্লাস করা, সালাম বিনিময় করা ও কোলাকুলি করার সেই উদ্বেল আনন্দ আজকাল কমই চোখে পড়ে। চাঁদ দেখার পরদিন ঈদ হবে বলে, আগের রাতের নাম ‘চান্দরাত’।
চান্দরাতে বউ-ঝি ও কিশোরীদের ঘুমানোর জো ছিল না। সারা রাত চলত সেমাই বানানো আর গল্প। রংপুরের ঈদে সবচেয়ে জনপ্রিয় সেমাই ছিল হাতে বানানো ঠেলা সেমাই বা ডলা সেমাই। কাঠের পিঁড়িতে মেয়েরা হাতের তালুর একপাশ দিয়ে চালের আটার গোলা ঠেলে ঠেলে সরু শঙ্কুর মতো সেমাই বানিয়ে গুড়গোলা দুধে ভিজিয়ে রাখত সারা রাত। সেমাইয়ের জন্য ঈদের আগের দিন গৃহস্থবাড়ির লোকেরা দুধ কিনতে দর-কষাকষি করত না। গৃহস্থ মানে যারা কৃষিজমির মালিক। রংপুরের ভাষায় ‘গেরস্ত’। যার বেশি জমি, নিজেদের হাল-গরু, সে বড় ‘গেরস্ত’। যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা আরেকটু ভালো ছিল, তারা ভাগে গরু বা খাসি জবাই দিত গোশত-পোলাও খাওয়ার জন্য। গরিব প্রতিবেশীদের বাদ দিয়ে খাওয়া ঈদের দিন একেবারেই চলত না। এ বাড়ি, ও বাড়ি সেমাই খেতে যাওয়ার জন্য দাওয়াত পাওয়ার অপেক্ষা কেউ না করলেও, দাওয়াত দেওয়া ছিল অনিবার্য সামাজিক রীতি। দল বেঁধে প্রতিবেশীদের বাড়িতে খাওয়া ঈদের প্রধানতম দিক। ঈদের দিন যে বাড়িতে বেশি মানুষ খেতে আসত, সে বাড়িকে সৌভাগ্যের বাড়ি বিবেচনা করা হতো।
ষাটের দশকের রংপুরে জলাভূমির অভাব ছিল না। প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই মাছুয়াপাড়া ছিল। অর্থাৎ, জেলেপল্লি। মাছুয়ারা সাধারণত ছিল সনাতন ধর্মানুসারী। ঈদের দিন সকালে বাছা বাছা মাছ নিয়ে যেত তারা গৃহস্থবাড়িতে। গৃহস্থের বউ তাদের ফেরাত না, সম্মান করে বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি টাকা বা চাল বকশিশ দিত। এবং অবশ্যই সেমাই আপ্যায়ন থাকত। অন্যান্য পেশার সনাতন মানুষেরা, যেমন, কামার, কুমার কিংবা পালকির বেহারাগিরি ছেড়ে যারা তখন ঝাড়ুদার, কিংবা ঘোষ (দই বানায় ও বেচে) অথবা গৃহস্থের আধিয়ার, তারাও ঈদের দিন মুসলমান বাড়ি থেকে সেমাই-খই-মুড়ি নিয়ে এসে খেতে পারত। ঈদ সত্যিই সবার উৎসব ছিল।
ফিতরার একটা অংশ ঈদের জামাতের ইমামের জন্য রাখা হতো। পরে অবশ্য জানা গেল, ইমামের জন্য আলাদা হাদিয়া দিতে হবে। ফিতরা গরিব-মিসকিনদের হক। গৃহস্থের কাচারি ঘর থেকে ফিতরার চাল বিতরণ ছিল উৎসবের অংশ। গরিব-মিসকিন মানুষেরা দল বেঁধে গৃহস্থবাড়ি থেকে ফিতরা সংগ্রহ করত।
ঈদের দিন বিকেলে খেলার আয়োজন থাকত। বিশেষ করে, হা-ডু-ডু ও লাঠিখেলা। খেলায় হিন্দু-মুসলমান খেলোয়াড়ের সমন্বয় ঘটত। জয়ীরা বকশিশ পেত। বালকদের মার্বেল খেলাও চলত। বাউদিয়া যুবকেরা মুরব্বিদের লুকিয়ে তাস-পাশা খেলতেও বসে যেত আড়ালে-আবডালে। ঈদের পরের দিন কোনো গাঁয়ে নাটক হতো, আবার কোথাও বসত ঈদমেলা। আর ছিল আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ানো। আত্মীয়-স্বজন মানে ‘সাগাই’। ঈদে ‘সাগাই-মিলন’ না হলে উৎসব পূর্ণ হতো না। সাগাই-মিলন চলত ঈদের পরের সপ্তাহজুড়ে। মিলনই ছিল ঈদ উৎসবের মাহাত্ম্য।
গল্পকার, অনুবাদক
ঈদের সেকাল খুব একটা প্রাচীন নয়। এই উপমহাদেশে ঈদ উদ্যাপনের সূচনা মোগলদের হাতে। এদিকে, শামসুজ্জামান খান লিখেছেন, বর্তমান বাংলাদেশে ধর্ম-সামাজিক সত্তার জাগরণী ধীরে ধীরে সংগঠিত হয়েছে ১৯৩০-এর দশকে। ১৯৩৭ সালে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের বাংলার প্রধানমন্ত্রী হওয়া এবং দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের ঔদার্যে বেঙ্গল প্যাক্ট স্বাক্ষর হওয়ার ফলে যে নতুন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি মুসলমান সমাজের বিকাশ ঘটে, তাদের হাতেই সাংস্কৃতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ঈদ উৎসবের সূচনা।
মোগল প্রভাব সংকুচিত হওয়ার যথেষ্ট পরে ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে মাদারীপুরের হাজী শরীয়তুল্লাহ ফরায়েজি আন্দোলনের সূচনা করলে সারা বাংলার মতো রংপুর অঞ্চলেও বিধর্মীদের (ইংরেজ) শাসনাধীনে মুসলমানদের ধর্মীয় ফরজ আদায় ব্যতীত ঈদের জামাত, এমনকি জুমার জামাতও বন্ধ রাখা হয়। এই পরিস্থিতিতে রংপুরে আসেন উত্তর প্রদেশের ধর্ম ও সমাজসংস্কারক মাওলানা শাহ কেরামত আলী জৈনপুরী। তিনি তাঁর সংস্কারবাদী ‘তাইউনি আন্দোলন’-এর অংশ হিসেবে ফরায়েজি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বাহাসে লিপ্ত হন। তিনি যুক্তি দেন, যেহেতু ব্রিটিশরা স্থানীয় জনগণের ধর্মকর্মে হস্তক্ষেপ করছে না, সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পন্থা হিসেবে মুসলমান সমাজের দুই ঈদ ও জুমার নামাজ বন্ধ রাখা শরিয়তসম্মত নয়। একাধিক বাহাসে জয়লাভের পর ১৮৬১ সালের দিকে মুসলমান সমাজে জুমার জামাত ও ঈদের বড় জামাত পুনরায় অনুষ্ঠিত হতে শুরু করে। ১৮৭০ সালের ৩০ মে অসুস্থতাজনিত কারণে মাওলানা কেরামত আলী দেহত্যাগ করেন এবং রংপুরে তাঁর মাজার প্রতিষ্ঠিত হয়। অনুমান করা যায়, ১৮৬১ সাল থেকেই নবরূপে রংপুরে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে, যা কালক্রমে ধর্মীয় উৎসবের সীমানা অতিক্রম করে সামাজিক উৎসবের রূপ লাভ করে।
এখানে রংপুর অঞ্চলের কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তির স্মৃতিচারণের ওপর ভিত্তি করে গত শতকের ষাটের দশকের রংপুরের গ্রামেগঞ্জে ঈদের চেহারা কেমন ছিল, তার একটি সংক্ষিপ্ত ছবি তুলে ধরা হয়েছে।
ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি ঈদকে ঘিরে সামাজিক আয়োজন ছিল বিস্তর। পাড়ায় পাড়ায় নব্য শিক্ষিত ছেলেরা রোজার মাসজুড়ে মহড়া দিত ঈদের পরের দিন নাট্যাভিনয় করবে বলে। এসব ক্ষেত্রে সমাজের স্বতঃস্ফূর্ত ও প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। তবে, ঈদ উদ্যাপনের শুরু হতো চাঁদ দেখার উত্তেজনার ভেতর দিয়ে। চাঁদ দেখা না গেলে ঈদ হতো না। কোনো এলাকায় চাঁদ দেখাকে ঘিরে দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটত। তখন গ্রামের সামর্থ্যবানদের দুই-এক ঘরে রেডিও উঠেছে। একদল রেডিও ঘোষণাকে বিশ্বাস করত। মেঘ বা অন্য কারণে চাঁদ না দেখা গেলেও তারা রেডিও ঘোষণা মোতাবেক ঈদ জামাতের আয়োজন করত। কিন্তু আরেক দল কিছুতেই চাঁদ না দেখে ঈদ করার পক্ষপাতী ছিল না। এ নিয়ে অনেক এলাকাতেই বিবাদ ঘটত। এমনকি পাশাপাশি দুই গ্রামে দুই দিন ঈদ হওয়ার ঘটনার কথাও কেউ কেউ মনে করতে পারেন। তবে, পশ্চিম আকাশে সরু বাঁকা ঈদের চাঁদ দেখে উল্লাস করা, সালাম বিনিময় করা ও কোলাকুলি করার সেই উদ্বেল আনন্দ আজকাল কমই চোখে পড়ে। চাঁদ দেখার পরদিন ঈদ হবে বলে, আগের রাতের নাম ‘চান্দরাত’।
চান্দরাতে বউ-ঝি ও কিশোরীদের ঘুমানোর জো ছিল না। সারা রাত চলত সেমাই বানানো আর গল্প। রংপুরের ঈদে সবচেয়ে জনপ্রিয় সেমাই ছিল হাতে বানানো ঠেলা সেমাই বা ডলা সেমাই। কাঠের পিঁড়িতে মেয়েরা হাতের তালুর একপাশ দিয়ে চালের আটার গোলা ঠেলে ঠেলে সরু শঙ্কুর মতো সেমাই বানিয়ে গুড়গোলা দুধে ভিজিয়ে রাখত সারা রাত। সেমাইয়ের জন্য ঈদের আগের দিন গৃহস্থবাড়ির লোকেরা দুধ কিনতে দর-কষাকষি করত না। গৃহস্থ মানে যারা কৃষিজমির মালিক। রংপুরের ভাষায় ‘গেরস্ত’। যার বেশি জমি, নিজেদের হাল-গরু, সে বড় ‘গেরস্ত’। যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা আরেকটু ভালো ছিল, তারা ভাগে গরু বা খাসি জবাই দিত গোশত-পোলাও খাওয়ার জন্য। গরিব প্রতিবেশীদের বাদ দিয়ে খাওয়া ঈদের দিন একেবারেই চলত না। এ বাড়ি, ও বাড়ি সেমাই খেতে যাওয়ার জন্য দাওয়াত পাওয়ার অপেক্ষা কেউ না করলেও, দাওয়াত দেওয়া ছিল অনিবার্য সামাজিক রীতি। দল বেঁধে প্রতিবেশীদের বাড়িতে খাওয়া ঈদের প্রধানতম দিক। ঈদের দিন যে বাড়িতে বেশি মানুষ খেতে আসত, সে বাড়িকে সৌভাগ্যের বাড়ি বিবেচনা করা হতো।
ষাটের দশকের রংপুরে জলাভূমির অভাব ছিল না। প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই মাছুয়াপাড়া ছিল। অর্থাৎ, জেলেপল্লি। মাছুয়ারা সাধারণত ছিল সনাতন ধর্মানুসারী। ঈদের দিন সকালে বাছা বাছা মাছ নিয়ে যেত তারা গৃহস্থবাড়িতে। গৃহস্থের বউ তাদের ফেরাত না, সম্মান করে বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি টাকা বা চাল বকশিশ দিত। এবং অবশ্যই সেমাই আপ্যায়ন থাকত। অন্যান্য পেশার সনাতন মানুষেরা, যেমন, কামার, কুমার কিংবা পালকির বেহারাগিরি ছেড়ে যারা তখন ঝাড়ুদার, কিংবা ঘোষ (দই বানায় ও বেচে) অথবা গৃহস্থের আধিয়ার, তারাও ঈদের দিন মুসলমান বাড়ি থেকে সেমাই-খই-মুড়ি নিয়ে এসে খেতে পারত। ঈদ সত্যিই সবার উৎসব ছিল।
ফিতরার একটা অংশ ঈদের জামাতের ইমামের জন্য রাখা হতো। পরে অবশ্য জানা গেল, ইমামের জন্য আলাদা হাদিয়া দিতে হবে। ফিতরা গরিব-মিসকিনদের হক। গৃহস্থের কাচারি ঘর থেকে ফিতরার চাল বিতরণ ছিল উৎসবের অংশ। গরিব-মিসকিন মানুষেরা দল বেঁধে গৃহস্থবাড়ি থেকে ফিতরা সংগ্রহ করত।
ঈদের দিন বিকেলে খেলার আয়োজন থাকত। বিশেষ করে, হা-ডু-ডু ও লাঠিখেলা। খেলায় হিন্দু-মুসলমান খেলোয়াড়ের সমন্বয় ঘটত। জয়ীরা বকশিশ পেত। বালকদের মার্বেল খেলাও চলত। বাউদিয়া যুবকেরা মুরব্বিদের লুকিয়ে তাস-পাশা খেলতেও বসে যেত আড়ালে-আবডালে। ঈদের পরের দিন কোনো গাঁয়ে নাটক হতো, আবার কোথাও বসত ঈদমেলা। আর ছিল আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ানো। আত্মীয়-স্বজন মানে ‘সাগাই’। ঈদে ‘সাগাই-মিলন’ না হলে উৎসব পূর্ণ হতো না। সাগাই-মিলন চলত ঈদের পরের সপ্তাহজুড়ে। মিলনই ছিল ঈদ উৎসবের মাহাত্ম্য।
গল্পকার, অনুবাদক
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪