মুহম্মদ জাফর ইকবাল
পৃথিবীর ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ভাষণের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু আমার ধারণা, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণটির সঙ্গে অন্য কোনো ভাষণের তুলনা করা সম্ভব নয়। তিনি যখন ভাষণটি দিয়েছিলেন, তখন পুরো দেশ সামরিক শাসনের আওতায়; প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সবে জাতীয় সংসদের অধিবেশন বাতিল করেছেন; যে কারণে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। বলতে গেলে দেশটি কার্যত অচল, যেটুকু চলছে তাও বঙ্গবন্ধুর অঙ্গুলিনির্দেশে। পুরো দেশ একটি দিকনির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছে এবং সেই দিকনির্দেশনাটি ৭ মার্চ দেওয়া হবে বলে মানুষের আশা।
বঙ্গবন্ধুকে ভাষণটি এমনভাবে দিতে হবে, যাতে পৃথিবীর সামনে তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত হতে না হয়; আবার একই সঙ্গে তিনি বাঙালির প্রাণের দাবি মুক্তি এবং স্বাধীনতার কথাটি বলতে পারেন। এটি রেডিও, টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণ নয়, সরাসরি লাখ লাখ শ্রোতার সামনে দাঁড়িয়ে দেওয়া ভাষণ। এটি লিখিত নয়, স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ। সেই ভাষণের ভেতর যে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, তেজ আর দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ভালোবাসা লুকিয়ে ছিল, সেটি আজও বিন্দুমাত্র ম্লান হয়নি। বাংলাদেশ যত দিন বেঁচে থাকবে, তত দিন ভাষণটি দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।
এই ভাষণটি সত্যিকারভাবে অনুভব করতে হলে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে শুনতে হবে; তাঁর কথা বলার ভঙ্গিটি নিজের চোখে দেখতে হবে; তাঁর আবেগ, ক্রোধ, ক্ষোভ এবং বেদনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, ভাষণের মর্ম উপলব্ধি করতে গেলে ১৯৭১ সালের উত্তাল মার্চ সম্পর্কে জানতে হবে, পাকিস্তানি মিলিটারি-সৃষ্ট ভয়াবহ ও আতঙ্কজনক বিভীষিকার পরিবেশটি বুঝতে হবে। কেউ যদি এই পুরো বিষয় অনুভব করতে পারেন, তাহলে ৭ মার্চের ভাষণটি নিশ্চিতভাবে তাঁর ভেতরে বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধুর অবদান নিয়ে নতুন এক উপলব্ধির জন্ম দেবে।
এই লেখার শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের দুটি লাইন উল্লেখ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে কেন এই কথাগুলো বলেছিলেন, সেটি বুঝতে হলে তিনি লাইন দুটির ঠিক আগে এবং পরে কী বলেছিলেন, সেটিও জানতে হবে। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণের মাঝামাঝি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের একটি বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছিলেন। ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বাতিল করে দেওয়ার পর ওই সময়কার পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালিদের যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, সেটাকে প্রশমিত করার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে টেলিফোনে তাঁর কথা হয়েছে এবং তিনি ১০ মার্চ গোলটেবিল বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছেন। বৈঠকে বসতে রাজি হওয়ার কথা অস্বীকার করে বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বলেন, ‘জনাব ইয়াহিয়া খান সাহেব, আপনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, দেখে যান কীভাবে আমার গরিবের উপরে, আমার বাংলার মানুষের বুকের উপরে গুলি করা হয়েছে, কী করে আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে, কী করে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, আপনি আসুন, দেখুন, বিচার করুন।’ অর্থাৎ উত্তাল মার্চের বিক্ষোভকে নিয়ন্ত্রণের জন্য পাকিস্তানি মিলিটারি দেশে গোলাগুলি করে যে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছিল, সেই হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করা পর্যন্ত, তার বিচার না করা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে কোনো গোলটেবিল বৈঠকে আগ্রহী ছিলেন না। তাঁর ভাষণের একটু পরেই তিনি সেটা আরও কঠিনভাবে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘কার সঙ্গে বসব? যারা আমার মানুষের বুকের রক্ত নিয়েছে তাদের সঙ্গে বসব?’
বঙ্গবন্ধুর বাচনভঙ্গি ছিল খুবই সহজ-সরল এবং মর্মস্পর্শী। সম্ভবত এ কারণেই তিনি দেশের সাধারণ মানুষের কাছে এত সহজে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। মানুষকে হত্যা করার বিষয়টি কত-না ভিন্ন উপায়ে বলা সম্ভব। বঙ্গবন্ধু সেটিকে বলেছেন ‘মায়ের কোল খালি করা’ এবং সম্ভবত এই বাক্য চয়নের জন্যই কথাগুলো মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করে।
এখানে একটা বিষয় কিন্তু লক্ষ করতে হবে, বঙ্গবন্ধু এ ভাষণটি দিয়েছেন মার্চ মাসের ৭ তারিখ। তখনো কিন্তু প্রকৃত গণহত্যা শুরু হয়নি। বিক্ষোভ চলছে পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে।
বাঙালিদের বিক্ষোভ দমন করার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানি মিলিটারি বিক্ষোভকারীদের গুলি করে মারছে। আর এই হত্যাকাণ্ডগুলোই বঙ্গবন্ধুকে বিক্ষুব্ধ এবং দুঃখভারাক্রান্ত করে তোলে। ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী সত্যিকারের গণহত্যা শুরু করে এবং সেই গণহত্যা যে পৃথিবীর ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার ইতিহাস হিসেবে পরিচিত হবে, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ সেটি জানতেন না।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের একটা বিষয় লক্ষ করার মতো। তিনি কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আর দেশকে একান্তভাবেই নিজের বলে মনে করতেন। ‘কী করে আমাদের মায়ের কোল খালি করা হয়েছে’ না বলে তিনি বলেছেন, ‘কী করে আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে।’ এ দেশের দুঃখী মায়েরা ছিলেন তাঁর নিজের মা। তাঁর ভাষণেই আমরা প্রমাণ পাই যে বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সমার্থক। ৭ মার্চের ভাষণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং উদ্দীপক কথাগুলো হচ্ছে এর শেষ বাক্যটি, যেখানে মুক্তি ও স্বাধীনতার সংগ্রামের কথা বলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ভাষণের মাঝামাঝি কিন্তু এ কথাগুলো আরও একবার বলেছিলেন। তখন কিন্তু ‘আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’ না বলে ‘আমার মুক্তির সংগ্রাম’ বলেছিলেন! পুরো দেশের, দেশের সব মানুষের দায়ভার একা নিজের ওপর নেওয়ার এ রকম উদাহরণ আমার মনে হয় পৃথিবীতে খুব বেশি নেই। সেটি সম্ভব হয়েছে শুধু বঙ্গবন্ধুর মতো একজন নেতার পক্ষেই!
• তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে অজিত কুমার সরকার সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ: রাজনীতির মহাকাব্য’ গ্রন্থ থেকে
লেখক: শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক
পৃথিবীর ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ভাষণের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু আমার ধারণা, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণটির সঙ্গে অন্য কোনো ভাষণের তুলনা করা সম্ভব নয়। তিনি যখন ভাষণটি দিয়েছিলেন, তখন পুরো দেশ সামরিক শাসনের আওতায়; প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সবে জাতীয় সংসদের অধিবেশন বাতিল করেছেন; যে কারণে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। বলতে গেলে দেশটি কার্যত অচল, যেটুকু চলছে তাও বঙ্গবন্ধুর অঙ্গুলিনির্দেশে। পুরো দেশ একটি দিকনির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছে এবং সেই দিকনির্দেশনাটি ৭ মার্চ দেওয়া হবে বলে মানুষের আশা।
বঙ্গবন্ধুকে ভাষণটি এমনভাবে দিতে হবে, যাতে পৃথিবীর সামনে তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত হতে না হয়; আবার একই সঙ্গে তিনি বাঙালির প্রাণের দাবি মুক্তি এবং স্বাধীনতার কথাটি বলতে পারেন। এটি রেডিও, টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণ নয়, সরাসরি লাখ লাখ শ্রোতার সামনে দাঁড়িয়ে দেওয়া ভাষণ। এটি লিখিত নয়, স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ। সেই ভাষণের ভেতর যে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, তেজ আর দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ভালোবাসা লুকিয়ে ছিল, সেটি আজও বিন্দুমাত্র ম্লান হয়নি। বাংলাদেশ যত দিন বেঁচে থাকবে, তত দিন ভাষণটি দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।
এই ভাষণটি সত্যিকারভাবে অনুভব করতে হলে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে শুনতে হবে; তাঁর কথা বলার ভঙ্গিটি নিজের চোখে দেখতে হবে; তাঁর আবেগ, ক্রোধ, ক্ষোভ এবং বেদনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, ভাষণের মর্ম উপলব্ধি করতে গেলে ১৯৭১ সালের উত্তাল মার্চ সম্পর্কে জানতে হবে, পাকিস্তানি মিলিটারি-সৃষ্ট ভয়াবহ ও আতঙ্কজনক বিভীষিকার পরিবেশটি বুঝতে হবে। কেউ যদি এই পুরো বিষয় অনুভব করতে পারেন, তাহলে ৭ মার্চের ভাষণটি নিশ্চিতভাবে তাঁর ভেতরে বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধুর অবদান নিয়ে নতুন এক উপলব্ধির জন্ম দেবে।
এই লেখার শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের দুটি লাইন উল্লেখ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে কেন এই কথাগুলো বলেছিলেন, সেটি বুঝতে হলে তিনি লাইন দুটির ঠিক আগে এবং পরে কী বলেছিলেন, সেটিও জানতে হবে। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণের মাঝামাঝি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের একটি বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছিলেন। ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বাতিল করে দেওয়ার পর ওই সময়কার পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালিদের যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, সেটাকে প্রশমিত করার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে টেলিফোনে তাঁর কথা হয়েছে এবং তিনি ১০ মার্চ গোলটেবিল বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছেন। বৈঠকে বসতে রাজি হওয়ার কথা অস্বীকার করে বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বলেন, ‘জনাব ইয়াহিয়া খান সাহেব, আপনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, দেখে যান কীভাবে আমার গরিবের উপরে, আমার বাংলার মানুষের বুকের উপরে গুলি করা হয়েছে, কী করে আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে, কী করে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, আপনি আসুন, দেখুন, বিচার করুন।’ অর্থাৎ উত্তাল মার্চের বিক্ষোভকে নিয়ন্ত্রণের জন্য পাকিস্তানি মিলিটারি দেশে গোলাগুলি করে যে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছিল, সেই হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করা পর্যন্ত, তার বিচার না করা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে কোনো গোলটেবিল বৈঠকে আগ্রহী ছিলেন না। তাঁর ভাষণের একটু পরেই তিনি সেটা আরও কঠিনভাবে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘কার সঙ্গে বসব? যারা আমার মানুষের বুকের রক্ত নিয়েছে তাদের সঙ্গে বসব?’
বঙ্গবন্ধুর বাচনভঙ্গি ছিল খুবই সহজ-সরল এবং মর্মস্পর্শী। সম্ভবত এ কারণেই তিনি দেশের সাধারণ মানুষের কাছে এত সহজে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। মানুষকে হত্যা করার বিষয়টি কত-না ভিন্ন উপায়ে বলা সম্ভব। বঙ্গবন্ধু সেটিকে বলেছেন ‘মায়ের কোল খালি করা’ এবং সম্ভবত এই বাক্য চয়নের জন্যই কথাগুলো মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করে।
এখানে একটা বিষয় কিন্তু লক্ষ করতে হবে, বঙ্গবন্ধু এ ভাষণটি দিয়েছেন মার্চ মাসের ৭ তারিখ। তখনো কিন্তু প্রকৃত গণহত্যা শুরু হয়নি। বিক্ষোভ চলছে পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে।
বাঙালিদের বিক্ষোভ দমন করার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানি মিলিটারি বিক্ষোভকারীদের গুলি করে মারছে। আর এই হত্যাকাণ্ডগুলোই বঙ্গবন্ধুকে বিক্ষুব্ধ এবং দুঃখভারাক্রান্ত করে তোলে। ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী সত্যিকারের গণহত্যা শুরু করে এবং সেই গণহত্যা যে পৃথিবীর ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার ইতিহাস হিসেবে পরিচিত হবে, বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ সেটি জানতেন না।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের একটা বিষয় লক্ষ করার মতো। তিনি কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আর দেশকে একান্তভাবেই নিজের বলে মনে করতেন। ‘কী করে আমাদের মায়ের কোল খালি করা হয়েছে’ না বলে তিনি বলেছেন, ‘কী করে আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে।’ এ দেশের দুঃখী মায়েরা ছিলেন তাঁর নিজের মা। তাঁর ভাষণেই আমরা প্রমাণ পাই যে বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সমার্থক। ৭ মার্চের ভাষণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং উদ্দীপক কথাগুলো হচ্ছে এর শেষ বাক্যটি, যেখানে মুক্তি ও স্বাধীনতার সংগ্রামের কথা বলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ভাষণের মাঝামাঝি কিন্তু এ কথাগুলো আরও একবার বলেছিলেন। তখন কিন্তু ‘আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’ না বলে ‘আমার মুক্তির সংগ্রাম’ বলেছিলেন! পুরো দেশের, দেশের সব মানুষের দায়ভার একা নিজের ওপর নেওয়ার এ রকম উদাহরণ আমার মনে হয় পৃথিবীতে খুব বেশি নেই। সেটি সম্ভব হয়েছে শুধু বঙ্গবন্ধুর মতো একজন নেতার পক্ষেই!
• তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে অজিত কুমার সরকার সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ: রাজনীতির মহাকাব্য’ গ্রন্থ থেকে
লেখক: শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪