আশরাফ-উল-আলম, ঢাকা
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের প্রতিবাদে পুরো পাকিস্তান আমলেই আন্দোলন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৮ সাল থেকে পূর্ব পাকিস্তানে মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। সেই সময় থেকেই শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনামলে তিনি প্রায় চৌদ্দ বছর কারাভোগ করেন। ১৮বার তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে বিখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। এই মামলার নানা তথ্য বিভিন্ন উৎস থেকে জানা গেলেও এর নথিপত্র কোথায় আছে, তা এখনো অজানা।
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়, তার মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বিখ্যাত। তিনিসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা করেছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার। বঙ্গবন্ধুকে এক নম্বর আসামি করা হয় এতে। বাকি ৩৪ জন ছিলেন তৎকালীন সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী এবং সরকারি কর্মকর্তা।
বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, ১৯৬৭ সালে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর তিনি আটক থাকা অবস্থায় ১৯৬৮ সালের ৬ জানুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১টার সময় আগের মামলা থেকে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। জেলগেট থেকেই আবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে হেফাজতে নেওয়া হয়। অন্য ৩৪ জনকেও এর আগে ও পরে গ্রেপ্তার করা হয়। শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের মুখে ক্যান্টনমেন্টেই একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। কিন্তু ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রচণ্ড চাপের মুখে ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবকে মুক্তি দেওয়া হয়।
ঘটনাবহুল এই মামলায় ১১ জন সাক্ষী, চারজন রাজসাক্ষী ছিলেন। তিনজন বিচারক বিচারকাজ পরিচালনা করেছিলেন। বিখ্যাত মামলা হওয়ায় এই মামলার তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেলেও মূল মামলা বা মামলা-সংক্রান্ত নথিপত্র কোথায় আছে, তা অজানা।
এই মামলায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল শেখ মুজিবের আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য, চারজন রাজসাক্ষীর বক্তব্য। রাজসাক্ষীরা শেষ মুহূর্তে শেখ মুজিবকে সমর্থন করে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মামলা হওয়ায় এর নথি সংরক্ষণে থাকার কথা।
শুধু এই মামলাই নয় বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গেছে, শেখ মুজিব এবং তখনকার সময়ে আন্দোলনরত বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের নামে অনেক মামলা হয়েছিল। কোনো মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধুর নামে একের পর এক মামলা হচ্ছিল। কারণে-অকারণে শুধু হয়রানি করার জন্য এসব মামলা করা হতো। এ রকম শুধু ঢাকায় ৩৬টি মামলা হয়েছিল বলে কথিত আছে। শেখ মুজিবুর রহমান একসময় বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। পর্যায়ক্রমে তিনি হয়ে ওঠেন জাতির জনক। তাঁর বিরুদ্ধে করা সব মামলাই তাই ঐতিহাসিক। সব মামলার নথিই সংরক্ষিত রাখা তাই ঐতিহাসিক দাবি। কিন্তু কোনো মামলাই সংরক্ষিত নেই। ঢাকার আদালতের কোনো রেকর্ডরুমেই এসব মামলার অস্তিত্ব এখন নেই।
সবগুলো মামলার সন্ধান পাওয়া না গেলেও কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে পুরোনো পত্রিকা ঘেঁটে। সেখান থেকে দেখা গেছে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা হয়েছিল রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে। একটি প্রতারণার মামলাও করা হয়েছিল। বাকি মামলাগুলো ছিল পূর্ব পাকিস্তান জননিরাপত্তা আইনে করা। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ এবং পুলিশকে মারধর করার অভিযোগেও কয়েকটি মামলা হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—রাষ্ট্রদ্রোহের তিনটি মামলা। ১৯৬৪ সালের মার্চ মাসে পল্টন ময়দানে শেখ মুজিব বক্তব্য দেন। পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন দমন-পীড়নের প্রতিবাদে ওই সভায় তিনি জনসাধারণকে উসকানি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করে ১৯৬৪ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলা বাতিলের দাবিতে হাইকোর্টে আবেদন জানানোর পরও হাইকোর্ট ওই আবেদন খারিজ করেন। বিশিষ্ট আইনজীবী বি বি রায় চৌধুরী শেখ মুজিবের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন। ১৯৬৬ সালের ২৯ জানুয়ারি এই মামলায় দুটি ধারায় শেখ মুজিবকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আরেকটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছিল ১৯৬৩ সালে। ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর পল্টন ময়দানে এক সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ায় শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত কমিশনারের আদালতে ওই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। এর পর ১৯৬৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি জুলুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে পল্টনের জনসভায় বক্তব্য দেওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহের আরেকটি মামলা করা হয়। তৎকালীন ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট এম এ মালেকের আদালতে এই মামলার শুনানি হয়। এর পর ১৯৬৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার আউটার স্টেডিয়ামে এক বক্তৃতাকে কেন্দ্র করে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান জননিরাপত্তা আইনের ৭-৩ ধারায় ১৯৬৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর আরেকটি মামলা হয়।
এ ছাড়া ১৯৬৫ সালে সাভারে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের গাড়িতে ‘পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও’ শিরোনামে প্রচারপত্র নিক্ষেপের অপরাধে শেখ মুজিবুর রহমান, শাহ আজিজুর রহমানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে জননিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। তৎকালীন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হকের আদালতে এই মামলা চলে। ১৯৬৬ সালের ২৯ জানুয়ারি জননিরাপত্তা আইনে করা আরেকটি মামলায় শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরদিন দৈনিক সংবাদে এ সম্পর্কিত খবর ছাপা হয়।
১৯৫০ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের আগমন উপলক্ষে দুর্ভিক্ষ বিরোধী মিছিল হয়। ওই মিছিলে শেখ মুজিব নেতৃত্ব দেন। সেখান থেকে তাঁকে আটক করে তাঁর বিরুদ্ধে জননিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। ওই মামলায় দুই বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে। ১৯৫৮ সালের ১১ অক্টোবর সামরিক শাসনের প্রতিবাদে মিছিল করে আবারও আটক হন শেখ মুজিব। তখনো জননিরাপত্তা আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওই মামলার বিচার চলে।
সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি কারাগারে থাকা অবস্থায় ১৯৫৯ সালের ১০ ডিসেম্বর শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে একটি প্রতারণা মামলা হয়। ওই মামলায় মহিউদ্দিন ও আজিজুল ইসলাম খন্দকার নামের আরও দুই ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, মোমেনশাহীর (বর্তমানে ময়মনসিংহ) ইব্রাহিম আলী এবং অন্য ছয় ব্যক্তির কাছ থেকে সরকারি চাকরির আশ্বাস দিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন শেখ মুজিব। এই মামলার বিচার করেন ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট কে এম রহমান। তিনি অবশ্য শেখ মুজিবকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন।
১৯৪৮ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অপরাধে শেখ মুজিবকে ১১ মার্চ বন্দী করা হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে খাজা নাজিম উদ্দিনের সরকারের সমঝোতা চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ মার্চ তিনি মুক্তি পান। এতে তাঁকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় আটক করা হয়েছিল।
ঢাকার আরমানিটোলা ময়দানে ১৯৪৯ সালের ১১ অক্টোবর নবগঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জনসভায় মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, আতাউর রহমান খান, শামসুল হক ও শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ বক্তৃতা করেন। জনসভা শেষে মিছিলের নেতৃত্ব দেন শেখ মুজিবুর রহমান। ওই মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় ১৭ অক্টোবর ঢাকার কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। বেআইনি সমাবেশ ও পুলিশকে আহত করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ১৪৭ ও ৩২৫ ধারায় এবং জননিরাপত্তা আইনের ৭(৩) ধারায় মামলা হয়। শেখ মুজিব, মৌলভি শামসুল হকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে একই বছর ২৬ ডিসেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। ডিসেম্বরে শেষ সপ্তাহে শেখ মুজিবকে ওইই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। ওই মামলাও ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন ছিল।
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে হওয়া এসব মামলার খবরগুলো তৎকালীন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই খবরগুলো থেকেই মামলাগুলোর বিষয়ে এসব তথ্য জানা যায়। গত কয়েক দিনে এসব মামলার খোঁজ নিতে ঢাকার আদালতের নথি সংরক্ষণ রুম বা রেকর্ড রুমে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু এসব মামলার হদিস কেউ দিতে পারেননি। ঢাকার জেলা প্রশাসকের দপ্তরের নথি সংরক্ষণাগার বা রেকর্ডরুমে যোগাযোগ করা হলে রেকর্ড কিপার মাসুদুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই রেকর্ডরুমে মামলা-সংক্রান্ত কোনো নথিপত্র নেই। আগে যেসব নথিপত্র ছিল, তার কিছু জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমে এবং কিছু জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রেকর্ডরুমে পাঠানো হয়েছিল বলে শুনেছি।’
জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমের দায়িত্বে নিয়োজিত রেকর্ড কিপার আতাউর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল, তিনি এই প্রথম তা শুনলেন। তিনি বলেন, ‘ওই আমলে আমরা চাকরি করিনি। তখনকার কেউ হয়তো বেঁচে নেই। এই রেকর্ডরুমে এই ধরনের কোনো মামলার নথি আছে বলে আমার জানা নেই।’
জেলা জজ পদমর্যাদার এক বিচারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার ৩৬টি মামলা করেছিলেন বলে তিনি জানেন। এই মামলাগুলো একসময় জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমে ছিল। কিন্তু নথিগুলোর অস্তিত্ব এখন আর নেই। তিনি মনে করেন, ঐতিহাসিক কারণে এই মামলার নথিগুলো সংরক্ষণে রাখা উচিত ছিল। কীভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি পাকিস্তান সরকার নির্যাতন চালিয়েছিল, তার নমুনা এই মামলাগুলো।
এসব মামলার নথি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঢাকার সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ আহমেদ গাজী। আদালত অঙ্গনে প্রতি ১২ বছর পর পুরোনো নথি ধ্বংসের একটা প্রথা চালু আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতি ১২ বছর পর পর পুরোনো নথি ধ্বংস করার একটা প্রথা চালু আছে। বঙ্গবন্ধুর নামে দায়ের করা মামলা অবশ্যই ইতিহাসের অংশ। এসব মামলা যদি ধ্বংস করা হয়ে থাকে, সেটা ঠিক হয়নি। ধ্বংস হয়ে না থাকলে তা খুঁজে বের করে সংরক্ষণ করা উচিত।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জাতির পিতা। তাঁর জীবনের প্রতিটি ঘটনাই ঐতিহাসিক গুরুত্ব রাখে উল্লেখ করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আইনজীবী কাজী নজীবুল্লাহ হিরু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের জাতির জনক। তাঁর জীবনের প্রতিটি ঘটনাই ইতিহাস। তাঁর বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের করা মামলাগুলোর প্রতিটিই ইতিহাসের অংশ। আর এই ইতিহাস সংরক্ষণের দায়িত্ব সবার।’
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের প্রতিবাদে পুরো পাকিস্তান আমলেই আন্দোলন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৮ সাল থেকে পূর্ব পাকিস্তানে মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। সেই সময় থেকেই শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন। পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসনামলে তিনি প্রায় চৌদ্দ বছর কারাভোগ করেন। ১৮বার তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে বিখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। এই মামলার নানা তথ্য বিভিন্ন উৎস থেকে জানা গেলেও এর নথিপত্র কোথায় আছে, তা এখনো অজানা।
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়, তার মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বিখ্যাত। তিনিসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা করেছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার। বঙ্গবন্ধুকে এক নম্বর আসামি করা হয় এতে। বাকি ৩৪ জন ছিলেন তৎকালীন সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী এবং সরকারি কর্মকর্তা।
বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, ১৯৬৭ সালে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের পর তিনি আটক থাকা অবস্থায় ১৯৬৮ সালের ৬ জানুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১টার সময় আগের মামলা থেকে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। জেলগেট থেকেই আবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে হেফাজতে নেওয়া হয়। অন্য ৩৪ জনকেও এর আগে ও পরে গ্রেপ্তার করা হয়। শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের মুখে ক্যান্টনমেন্টেই একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। কিন্তু ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রচণ্ড চাপের মুখে ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবকে মুক্তি দেওয়া হয়।
ঘটনাবহুল এই মামলায় ১১ জন সাক্ষী, চারজন রাজসাক্ষী ছিলেন। তিনজন বিচারক বিচারকাজ পরিচালনা করেছিলেন। বিখ্যাত মামলা হওয়ায় এই মামলার তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেলেও মূল মামলা বা মামলা-সংক্রান্ত নথিপত্র কোথায় আছে, তা অজানা।
এই মামলায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল শেখ মুজিবের আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য, চারজন রাজসাক্ষীর বক্তব্য। রাজসাক্ষীরা শেষ মুহূর্তে শেখ মুজিবকে সমর্থন করে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মামলা হওয়ায় এর নথি সংরক্ষণে থাকার কথা।
শুধু এই মামলাই নয় বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা গেছে, শেখ মুজিব এবং তখনকার সময়ে আন্দোলনরত বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের নামে অনেক মামলা হয়েছিল। কোনো মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধুর নামে একের পর এক মামলা হচ্ছিল। কারণে-অকারণে শুধু হয়রানি করার জন্য এসব মামলা করা হতো। এ রকম শুধু ঢাকায় ৩৬টি মামলা হয়েছিল বলে কথিত আছে। শেখ মুজিবুর রহমান একসময় বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। পর্যায়ক্রমে তিনি হয়ে ওঠেন জাতির জনক। তাঁর বিরুদ্ধে করা সব মামলাই তাই ঐতিহাসিক। সব মামলার নথিই সংরক্ষিত রাখা তাই ঐতিহাসিক দাবি। কিন্তু কোনো মামলাই সংরক্ষিত নেই। ঢাকার আদালতের কোনো রেকর্ডরুমেই এসব মামলার অস্তিত্ব এখন নেই।
সবগুলো মামলার সন্ধান পাওয়া না গেলেও কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে পুরোনো পত্রিকা ঘেঁটে। সেখান থেকে দেখা গেছে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা হয়েছিল রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে। একটি প্রতারণার মামলাও করা হয়েছিল। বাকি মামলাগুলো ছিল পূর্ব পাকিস্তান জননিরাপত্তা আইনে করা। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ এবং পুলিশকে মারধর করার অভিযোগেও কয়েকটি মামলা হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—রাষ্ট্রদ্রোহের তিনটি মামলা। ১৯৬৪ সালের মার্চ মাসে পল্টন ময়দানে শেখ মুজিব বক্তব্য দেন। পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন দমন-পীড়নের প্রতিবাদে ওই সভায় তিনি জনসাধারণকে উসকানি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করে ১৯৬৪ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলা বাতিলের দাবিতে হাইকোর্টে আবেদন জানানোর পরও হাইকোর্ট ওই আবেদন খারিজ করেন। বিশিষ্ট আইনজীবী বি বি রায় চৌধুরী শেখ মুজিবের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন। ১৯৬৬ সালের ২৯ জানুয়ারি এই মামলায় দুটি ধারায় শেখ মুজিবকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আরেকটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছিল ১৯৬৩ সালে। ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর পল্টন ময়দানে এক সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ায় শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত কমিশনারের আদালতে ওই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। এর পর ১৯৬৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি জুলুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে পল্টনের জনসভায় বক্তব্য দেওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহের আরেকটি মামলা করা হয়। তৎকালীন ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট এম এ মালেকের আদালতে এই মামলার শুনানি হয়। এর পর ১৯৬৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার আউটার স্টেডিয়ামে এক বক্তৃতাকে কেন্দ্র করে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান জননিরাপত্তা আইনের ৭-৩ ধারায় ১৯৬৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর আরেকটি মামলা হয়।
এ ছাড়া ১৯৬৫ সালে সাভারে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের গাড়িতে ‘পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও’ শিরোনামে প্রচারপত্র নিক্ষেপের অপরাধে শেখ মুজিবুর রহমান, শাহ আজিজুর রহমানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে জননিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। তৎকালীন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হকের আদালতে এই মামলা চলে। ১৯৬৬ সালের ২৯ জানুয়ারি জননিরাপত্তা আইনে করা আরেকটি মামলায় শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। পরদিন দৈনিক সংবাদে এ সম্পর্কিত খবর ছাপা হয়।
১৯৫০ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের আগমন উপলক্ষে দুর্ভিক্ষ বিরোধী মিছিল হয়। ওই মিছিলে শেখ মুজিব নেতৃত্ব দেন। সেখান থেকে তাঁকে আটক করে তাঁর বিরুদ্ধে জননিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। ওই মামলায় দুই বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে। ১৯৫৮ সালের ১১ অক্টোবর সামরিক শাসনের প্রতিবাদে মিছিল করে আবারও আটক হন শেখ মুজিব। তখনো জননিরাপত্তা আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওই মামলার বিচার চলে।
সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি কারাগারে থাকা অবস্থায় ১৯৫৯ সালের ১০ ডিসেম্বর শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে একটি প্রতারণা মামলা হয়। ওই মামলায় মহিউদ্দিন ও আজিজুল ইসলাম খন্দকার নামের আরও দুই ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, মোমেনশাহীর (বর্তমানে ময়মনসিংহ) ইব্রাহিম আলী এবং অন্য ছয় ব্যক্তির কাছ থেকে সরকারি চাকরির আশ্বাস দিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন শেখ মুজিব। এই মামলার বিচার করেন ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট কে এম রহমান। তিনি অবশ্য শেখ মুজিবকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন।
১৯৪৮ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অপরাধে শেখ মুজিবকে ১১ মার্চ বন্দী করা হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে খাজা নাজিম উদ্দিনের সরকারের সমঝোতা চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ মার্চ তিনি মুক্তি পান। এতে তাঁকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় আটক করা হয়েছিল।
ঢাকার আরমানিটোলা ময়দানে ১৯৪৯ সালের ১১ অক্টোবর নবগঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জনসভায় মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, আতাউর রহমান খান, শামসুল হক ও শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ বক্তৃতা করেন। জনসভা শেষে মিছিলের নেতৃত্ব দেন শেখ মুজিবুর রহমান। ওই মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় ১৭ অক্টোবর ঢাকার কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। বেআইনি সমাবেশ ও পুলিশকে আহত করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ১৪৭ ও ৩২৫ ধারায় এবং জননিরাপত্তা আইনের ৭(৩) ধারায় মামলা হয়। শেখ মুজিব, মৌলভি শামসুল হকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে একই বছর ২৬ ডিসেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। ডিসেম্বরে শেষ সপ্তাহে শেখ মুজিবকে ওইই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। ওই মামলাও ঢাকার প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন ছিল।
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে হওয়া এসব মামলার খবরগুলো তৎকালীন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই খবরগুলো থেকেই মামলাগুলোর বিষয়ে এসব তথ্য জানা যায়। গত কয়েক দিনে এসব মামলার খোঁজ নিতে ঢাকার আদালতের নথি সংরক্ষণ রুম বা রেকর্ড রুমে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু এসব মামলার হদিস কেউ দিতে পারেননি। ঢাকার জেলা প্রশাসকের দপ্তরের নথি সংরক্ষণাগার বা রেকর্ডরুমে যোগাযোগ করা হলে রেকর্ড কিপার মাসুদুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই রেকর্ডরুমে মামলা-সংক্রান্ত কোনো নথিপত্র নেই। আগে যেসব নথিপত্র ছিল, তার কিছু জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমে এবং কিছু জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রেকর্ডরুমে পাঠানো হয়েছিল বলে শুনেছি।’
জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমের দায়িত্বে নিয়োজিত রেকর্ড কিপার আতাউর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল, তিনি এই প্রথম তা শুনলেন। তিনি বলেন, ‘ওই আমলে আমরা চাকরি করিনি। তখনকার কেউ হয়তো বেঁচে নেই। এই রেকর্ডরুমে এই ধরনের কোনো মামলার নথি আছে বলে আমার জানা নেই।’
জেলা জজ পদমর্যাদার এক বিচারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার ৩৬টি মামলা করেছিলেন বলে তিনি জানেন। এই মামলাগুলো একসময় জেলা জজ আদালতের রেকর্ডরুমে ছিল। কিন্তু নথিগুলোর অস্তিত্ব এখন আর নেই। তিনি মনে করেন, ঐতিহাসিক কারণে এই মামলার নথিগুলো সংরক্ষণে রাখা উচিত ছিল। কীভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি পাকিস্তান সরকার নির্যাতন চালিয়েছিল, তার নমুনা এই মামলাগুলো।
এসব মামলার নথি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঢাকার সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ আহমেদ গাজী। আদালত অঙ্গনে প্রতি ১২ বছর পর পুরোনো নথি ধ্বংসের একটা প্রথা চালু আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতি ১২ বছর পর পর পুরোনো নথি ধ্বংস করার একটা প্রথা চালু আছে। বঙ্গবন্ধুর নামে দায়ের করা মামলা অবশ্যই ইতিহাসের অংশ। এসব মামলা যদি ধ্বংস করা হয়ে থাকে, সেটা ঠিক হয়নি। ধ্বংস হয়ে না থাকলে তা খুঁজে বের করে সংরক্ষণ করা উচিত।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জাতির পিতা। তাঁর জীবনের প্রতিটি ঘটনাই ঐতিহাসিক গুরুত্ব রাখে উল্লেখ করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আইনজীবী কাজী নজীবুল্লাহ হিরু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের জাতির জনক। তাঁর জীবনের প্রতিটি ঘটনাই ইতিহাস। তাঁর বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের করা মামলাগুলোর প্রতিটিই ইতিহাসের অংশ। আর এই ইতিহাস সংরক্ষণের দায়িত্ব সবার।’
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪