আমিনুল ইসলাম নাবিল
আজকাল নাটকে ‘ঢাকাইয়া ভাষার’ বেশ ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন্য আঞ্চলিক ভাষার মতো এ ভাষাকেও হাস্যরস ও কৌতুকের অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এমন নানা কারণে ভাষা হিসেবে তথাকথিত ঢাকাইয়া ভাষা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা হারাতে বসেছে। ফলত নিজেদের ভাষার প্রতি অনীহা তৈরি হচ্ছে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে।
ঢাকার আদি ভাষা নিয়ে যারা কাজ করছেন তাঁরা বলছেন, ঢাকাইয়া ভাষায় মূলত দুটি উপভাষা রয়েছে— ‘কুট্টি’ ও ‘সোব্বাসী’। একটা সময় পুরান ঢাকার পরিবারগুলোতে উভয় উপভাষারই প্রচলন ছিল। তবে তরুণ প্রজন্ম এখন ক্রমশ রাজধানীতে চলতি মিশ্র বাংলার দিকে ঝুঁকছে।
ঢাকাইয়া ভাষার ব্যবহার কমে আসার আরেকটি বড় কারণ— আদি ঢাকাইয়াদের অনেকেই এখন আর জন্মস্থানে থাকেন না। নানা কারণে তাঁরা বসত গড়েছেন অন্য কোথাও। আবার পুরান ঢাকাতেও আগমন ঘটেছে নানা অঞ্চলের মানুষের। তার প্রভাব পড়ছে স্থানীয় ভাষায়। পরিবারগুলোও এখন সন্তানদের ঢাকাইয়া ভাষায় কথা বলতে নিরুৎসাহিত করে।
পোলা (ছেলে), মাইয়া (মেয়ে), পোলাপাইন (ছেলে-মেয়ে), হাছা (সত্যি), ক্যালা (কেন), কেমতে (কীভাবে), হুন (শোন), খাইয়া (খেয়ে), থন (থেকে), কল্লা (গলা), কদু (লাউ), মাগার (কিন্তু), আমি বি (আমিও), দেহি (দেখি), যাইয়া (গিয়ে), যাইতাছি (যাচ্ছি), করমু (করব)— এগুলো ঢাকাইয়া কুট্টি ভাষার শব্দ। এখন আর আদতে এগুলোর ব্যবহার নেই বললেই চলে। নাটক কিংবা সিনেমায় বিনোদনের খোরাক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কুট্টি ভাষা। এর ফলে একরকম বিকৃতিই হচ্ছে এ উপভাষার।
অন্যদিকে ‘চাদনীঘাট’ থেকে ‘চান্নিঘাট’, ‘রায় সাহেব বাজার’ থেকে ‘রাসাবাজার’, ‘শেখ সাহেব বাজার’ থেকে ‘সিক্সাবাজার’ বা মুন্ডা ভাষার শব্দ ‘বইনটি’ (বটি) থেকে সোব্বাসী ‘বায়ঠি’, ফারসি ‘তখ্ত’ সোব্বাসীতে ‘তাক্তা’ হয়ে গেছে, সেভাবেই সুখবাস থেকে হয়েছে সোব্বাস।
ঢাকাইয়া আঞ্চলিক ভাষার বদলে তরুণ প্রজন্ম কেন প্রমিত ভাষার দিকে ঝুঁকছে জানতে চাইলে ঢাকাইয়া সংস্কৃতি কর্মী ও বাচিক শিল্পী আরিফা আলম সোনিয়া বলেন, ‘ঢাকাইয়া ভাষা দুই ধরনের। একটি. সোব্বাসী আর দ্বিতীয়টি. কুট্টি। দুটোই ঢাকার ভাষা। ভাষা দুটোই এখন বিলুপ্তির পথে। আগে পরিবারগুলোতে দুই ধরনের ভাষারই প্রচলন ছিল। এখনো চর্চা অব্যাহত রাখা উচিত। ভাষা আমাদের শিকড়। নিজেদের ভাষার শিকড়কে আঁকড়ে ধরতে না পারলে ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণই হুমকির মুখে পরবে। ভাষা মানেই আমাদের মায়ের ভাষা, মাকে ভালোবাসি মায়ের মুখের বুলিও ভালোবাসি।’
এ বিষয়ে পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা, মিল্লাত উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কলামিস্ট আরাফাতুর রহমান শাওনের সঙ্গে কথা হয়। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আধুনিকতার ছোঁয়ায় তরুণ প্রজন্ম ঢাকাইয়া ভাষা চর্চায় অনীহা দেখাচ্ছে। এছাড়া এলাকায় স্থানীয় মানুষ কমে যাচ্ছে, তাঁরা অনেকেই পুরান ঢাকা থেকে বেরিয়ে অন্যত্র বসবাস শুরু করেছে। ফলে ভাষার যে সম্প্রসারণ সেটি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভাষা হলো যোগাযোগের মাধ্যম, কেউ কথা বললেতো সেটির প্রত্যুত্তর পেতে হবে। তা যদি না হয়, তাহলেতো ভাষার ব্যবহার কমবেই।’
নাটক-সিনেমায় ঢাকাইয়া আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার প্রসঙ্গে এই কলামিস্ট বলেন, ‘ভাষাটিকে বর্তমানে হাস্যরস হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। এটির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এটি তরুণ প্রজন্মের মাঝে ঢাকাইয়া আঞ্চলিক ভাষা চর্চায় অনীহা তৈরি করছে। অন্যদিকে শিক্ষার প্রসারে প্রমিত ভাষার চর্চা বাড়ছে। সামাজিকভাবে ঢাকাইয়া আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার চেয়ে প্রমিত উচ্চারণে কথা বলতে পারলে সেটিকে বেশি স্মার্টনেস হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এখন আর তেমন ঢাকাইয়া আঞ্চলিক ভাষা শোনাই যায় না। আমার দূর ধারণা, অচিরেই ঢাকাইয়া আঞ্চলিক ভাষা হারিয়ে যাবে।’
ঢাকাইয়া আঞ্চলিক ভাষার শব্দ ভান্ডার আমাদের মূল্যবান সম্পদ। এর রক্ষণাবেক্ষণ হওয়া দরকার। তবে সবচেয়ে জরুরি চর্চা অব্যাহত রাখা বলে মত দেন তরুণ এই শিক্ষক।
উর্দুর সঙ্গে এক ধরনের সংমিশ্রণ থাকায় ঢাকাইয়া আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহারে অনীহা চলে আসছে কিনা জানতে চাইলে পুরান ঢাকার স্থানীয় একাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এটি (সোব্বাসী) শুনতে অনেকটা উর্দুর মতো শোনালেও এটি উর্দু নয়। বরং সোব্বাসী স্বতন্ত্র একটি উপভাষা। বর্তমানে এ উপভাষার ব্যবহার একরকম নেই বললেই চলে। তবে পরিবার কিংবা বন্ধুমহলে সীমিত পরিসরে এখনো এ উপভাষার প্রচলন আছে। যেভাবে এ উপভাষার প্রচলন কমে আসছে এতে করে কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলেই আশঙ্কা তাঁদের।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, বাংলার সুবাদার ইসলাম খাঁ চিশতী ১৬১০ সালে যখন ঢাকায় পদার্পণ করেন, তখন তাঁর সঙ্গে অসংখ্য উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ভারতীয়, আফগান, ইরান-আরবি তথা বহিরাগত মুসলমান ও হিন্দু ঢাকায় এসেছিল এবং এই আগমন পরবর্তী আরও প্রায় ২৫০ বছর ধরে চলমান ছিল। এই ব্যাপক জনগোষ্ঠী বর্তমান পুরোনো ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে বসতি স্থাপন করেছিল এবং এদের বংশধররাই বর্তমানে পুরোনো ঢাকার আদি অধিবাসী।
১৬১০ সাল থেকেই ঢাকায় বসবাসকারী সব উচ্চপদস্থ-নিম্নপদস্থ পরিবারগুলোর মধ্যে আরবি, ইংরেজি, গুজরাটি, তুর্কি, পালি, পর্তুগিজ, ফরাসি, ফারসি, মুণ্ডা, সংস্কৃত, বাংলা, হিন্দুস্তানি (উর্দু, হিন্দি) ভাষার মিশ্রণে নতুন এক মিশ্র কথ্য ভাষার প্রচলন শুরু হয়; যা এখনো ঢাকার আদি অধিবাসীদের মুখের ভাষা। পুরোনো ঢাকার আদি অধিবাসীরা এই ভাষায় পরিবারে, সমাজে, হাট-বাজারে, সামাজিক অনুষ্ঠানে কথাবার্তা বলতেন। তবে ঠিক কতসংখ্যক মানুষ এই ভাষা ব্যবহার করতেন এর হিসাব কখনো করা হয়নি; হয়তো কেউ এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেননি। এই মিশ্রিত ঢাকাইয়া ভাষাকে বর্তমানে আদি ঢাকাইয়ারা ‘সোব্বাসী’ ভাষা বলেন এবং নিজেদের ‘সোব্বাস/সোব্বাসী’ বলে পরিচয় দেন।
সোব্বাসী উপভাষা রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন সহযোগী অধ্যাপক মো. শাহাবুদ্দিন সাবু। তিনি সাভার সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত। ‘বাংলা-ঢাকাইয়া সোব্বাসী ডিকশনারি’ নামে একটি অভিধান প্রণয়ন করেছেন। এটিই সোব্বাসী ভাষার একমাত্র অভিধান বলে দাবি করা হয়।
আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘উর্দু এবং সোব্বাসী সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাষা। আমরা যারা সোব্বাসী আছি, তাঁরা ইসলাম খাঁ চিশতীর সময়, ১৬-১৭ শতকের দিকে ঢাকায় এসেছি। অন্যদিকে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পাটনা, ঊড়িষ্যা, বিহার থেকে অসংখ্য মানুষ প্রবেশ করে। তাঁদের ভাষা ছিল উর্দু। ফলে অনেকেই উর্দু আর সোব্বাসীর পার্থক্য করতে পারে না। উর্দুর সঙ্গে সোব্বাসীকে মিলিয়ে ফেলে। তবে আমরা যারা সোব্বাসী আছি, আমরা ঠিকই পার্থক্যটা বুঝতে পারি।’
সোব্বাসী ভাষার ব্যবহার কমে আসার বিষয়ে শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘মানুষজন উর্দু আর সোব্বাসীকে এক মনে করায় ঢাকাইয়া পরিবারগুলো বিশেষ করে ১৯৭১ সালের পরে সোব্বাসী ব্যবহার থেকে অনেকটাই সরে আসে। তবে নিজ নিজ পরিবারে এখনো সোব্বাসী ভাষায় কথা বলার প্রচলন আছে।’
মুক্তিযুদ্ধে উর্দুভাষী বিহারি জনগোষ্ঠীর ভূমিকার কারণে একাত্তর পরবর্তী পরিস্থিতিতে সোব্বাসী ভাষাভাষিরা নিজেদের গুটিয়ে নেন। ভুল করে কেউ যাতে তাঁদের বিহারি হিসেবে চিহ্নিত না করেন— সে জন্য ঘরের বাইরে সোব্বাসী ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে শুরু করেন, সন্তানদেরও বাংলা বলতে উৎসাহিত করেন।
তবে এখনো ৬ থেকে ৭ লাখ মানুষ সোব্বাসীতে কথা বলেন বলে দাবি করেন মো. শাহাবুদ্দিন। তবে স্বীকৃতি না থাকায় ও মানুষেরা এটিকে উর্দু মনে করায় এ উপভাষা এক সময় বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলে তাঁর আশঙ্কা।
এদিকে ‘ঢাকাইয়া কুট্টি ভাষার অভিধান’ বই থেকে জানা যায়, ১৬০৮ সালে মতান্তরে ১৬১০ সালের জুলাই মাসের কোনো এক সময় দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীরের মনোনীত বাংলার সুবেদার ইসলাম খাঁ চিশতী ঢাকার বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী সবচেয়ে উঁচু ভূমি চাদনীঘাটে তাঁর নৌবহর নোঙর করেন। তিনি সুবা বাংলার রাজধানী হিসেবে শহর ঢাকার পত্তন করেন। তিনি এ অঞ্চলকে ‘জাহাঙ্গীরনগর’ নামকরণ করলেও পূর্বকালের ধারাবাহিকতায় এ জনপথের মানুষ ‘ঢাকা’ নামটিকে স্থায়ীভাবে ধারণ করেন। ঢাকার আশপাশ থেকে অসংখ্য মানুষ কাজের সন্ধানে এ অঞ্চলে আসেন।
বহু অঞ্চলের মানুষের সংমিশ্রণে ঢাকার প্রাচীন জনপদ ঘিরে নতুন একটি ভাষার উদ্ভব ঘটে। এই ভাষার নামই ‘কুট্টি’। আদি ঢাকার মানুষের কেউ কেউ এখনো কুট্টি ভাষায় কথা বলেন। বাংলা, উর্দু, হিন্দি, ফারসি ভাষার সংমিশ্রণে এই ভাষার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছে।
কুট্টি ভাষাকে অনেকে ঢাকার আদি ভাষা বলে মনে করেন। কিন্তু কুট্টি ভাষা ঢাকার আদি অধিবাসীদের ভাষা নয়। কুট্টি ভাষার সৃষ্টি হয়েছে ঢাকার বাইরে থেকে আসা একদল মানুষের নিজস্ব সৃজন কারুকাজের ধারাবাহিকতায়। মোশাররফ হোসেন ভূঞা তাঁর ‘ঢাকাইয়া কুট্টি ভাষার অভিধান’ বইয়ে এমনটিই লিখেছেন।
কুট্টি নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বইটিতে বলা হয়েছে, মোগল আমল মূলত কুট্টি সম্প্রদায় ও কুট্টি ভাষার উৎপত্তির কাল। ১৮ শতকের মধ্য ভাগ থেকে পূর্ববঙ্গে চাল একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য ছিল। চাল রপ্তানিকারকেরা ছিলেন মাড়োয়ারি ও মধ্য ভারতের মানুষ। তাঁরা পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধান সংগ্রহ করতেন। সংগৃহীত ধান ঢেঁকিতে ভানতে বা কুটতে হতো। এসব ধান কুটতে ঢাকার আশপাশ এলাকা থেকে শ্রমিক আসত। শ্রমিক-ব্যবসায়ী ও দিল্লির সৈন্যদের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে একটি ভাষার উদ্ভব ঘটে। সেটিই কালের পরিক্রমায় ‘কুট্টি’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
সোব্বাসী ও কুট্টি ভাষার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। দুটিই ঢাকার নগর উপভাষা হলেও ভিন্নতা আছে। যেমন—১. বাংলা: বসতে দিলে ঘুমাতে চায়। সোব্বাসী: বায়েটনে দেনেসে শোনে মাঙতা। কুট্টি: বইবার দিলে হুইবার চায়। ২. বাংলা: কুকুরের পেটে ঘি হজম হয় না। সোব্বাসী: কোত্তাকা পেটমে ঘি হাজাম হোতানি। কুট্টি: কুত্তার প্যাটে গি অজম অহে না। ৩. বাংলা: কুঁজোর আবার চিত হয়ে ঘুমানোর শখ। সোব্বাসী: কুজাকা ফের চেত হোকে শোনেকা শাওখ। কুট্টি: গুজার বি আবার চিত অয়া হুইবার সক।
কুট্টি নাকি সোব্বাসী কোনটি বেশি পুরোনো— এ প্রশ্নে শাহাবুদ্দিন সাবু বলেন, ‘সোব্বাসী বেশি পুরোনো। তবে দুটোকেই প্রাচীন বলা যায়। ১৭৭০-এর পর কুট্টি ভাষার আবির্ভাব। অন্যদিকে সোব্বাসীর আবির্ভাব ১৬১০-এর দিকে। সোব্বাসী পুরোনো হলেও স্বীকৃতিতে এগিয়ে কুট্টি। কেননা ঢাকাইয়া ভাষা বলতে এখন মানুষ কুট্টি ভাষাকেই বোঝে। নাটক-সিনেমাতেও কুট্টি ভাষার ব্যবহার রয়েছে। যেহেতু এটি ডকুমেন্টেড হয়ে যাচ্ছে ফলে কুট্টি ভাষা আরও কিছুদিন টিকে থাকবে। তবে সোব্বাসী বিলুপ্ত হতে সময় লাগবে না।’
নাটক-সিনেমাতে অবশ্য কুট্টি ভাষার ৭০ ভাগও ঠিকমতো ব্যবহার করা হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন করা হয় বলে মনে করেন শাহাবুদ্দিন।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্য কাওয়ালি সোব্বাসী ভাষার কি না জানতে চাইলে শাহাবুদ্দিন সাবু বলেন, ‘কাওয়ালি উর্দু ভাষার। সেগুলো সোব্বাসী নয়। “ঢাকাইয়া উর্দু” নামে যেটাকে বলা হয়ে থাকে সেটি মূলত সোব্বাসী। সোব্বাসীকে ঢাকাইয়া উর্দু নামে চালানোর শুরুটা মূলত ১৯৭১ সালের পরে। গ্রাম থেকে যখন মানুষ ঢাকায় এল তখন তাঁরা সোব্বাসীকেই ঢাকাইয়া উর্দু নামে ডাকতে শুরু করে। সোব্বাসীকেই ঢাকাইয়া উর্দু নামে চালানো হয়।’
আজকাল নাটকে ‘ঢাকাইয়া ভাষার’ বেশ ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন্য আঞ্চলিক ভাষার মতো এ ভাষাকেও হাস্যরস ও কৌতুকের অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এমন নানা কারণে ভাষা হিসেবে তথাকথিত ঢাকাইয়া ভাষা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা হারাতে বসেছে। ফলত নিজেদের ভাষার প্রতি অনীহা তৈরি হচ্ছে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে।
ঢাকার আদি ভাষা নিয়ে যারা কাজ করছেন তাঁরা বলছেন, ঢাকাইয়া ভাষায় মূলত দুটি উপভাষা রয়েছে— ‘কুট্টি’ ও ‘সোব্বাসী’। একটা সময় পুরান ঢাকার পরিবারগুলোতে উভয় উপভাষারই প্রচলন ছিল। তবে তরুণ প্রজন্ম এখন ক্রমশ রাজধানীতে চলতি মিশ্র বাংলার দিকে ঝুঁকছে।
ঢাকাইয়া ভাষার ব্যবহার কমে আসার আরেকটি বড় কারণ— আদি ঢাকাইয়াদের অনেকেই এখন আর জন্মস্থানে থাকেন না। নানা কারণে তাঁরা বসত গড়েছেন অন্য কোথাও। আবার পুরান ঢাকাতেও আগমন ঘটেছে নানা অঞ্চলের মানুষের। তার প্রভাব পড়ছে স্থানীয় ভাষায়। পরিবারগুলোও এখন সন্তানদের ঢাকাইয়া ভাষায় কথা বলতে নিরুৎসাহিত করে।
পোলা (ছেলে), মাইয়া (মেয়ে), পোলাপাইন (ছেলে-মেয়ে), হাছা (সত্যি), ক্যালা (কেন), কেমতে (কীভাবে), হুন (শোন), খাইয়া (খেয়ে), থন (থেকে), কল্লা (গলা), কদু (লাউ), মাগার (কিন্তু), আমি বি (আমিও), দেহি (দেখি), যাইয়া (গিয়ে), যাইতাছি (যাচ্ছি), করমু (করব)— এগুলো ঢাকাইয়া কুট্টি ভাষার শব্দ। এখন আর আদতে এগুলোর ব্যবহার নেই বললেই চলে। নাটক কিংবা সিনেমায় বিনোদনের খোরাক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কুট্টি ভাষা। এর ফলে একরকম বিকৃতিই হচ্ছে এ উপভাষার।
অন্যদিকে ‘চাদনীঘাট’ থেকে ‘চান্নিঘাট’, ‘রায় সাহেব বাজার’ থেকে ‘রাসাবাজার’, ‘শেখ সাহেব বাজার’ থেকে ‘সিক্সাবাজার’ বা মুন্ডা ভাষার শব্দ ‘বইনটি’ (বটি) থেকে সোব্বাসী ‘বায়ঠি’, ফারসি ‘তখ্ত’ সোব্বাসীতে ‘তাক্তা’ হয়ে গেছে, সেভাবেই সুখবাস থেকে হয়েছে সোব্বাস।
ঢাকাইয়া আঞ্চলিক ভাষার বদলে তরুণ প্রজন্ম কেন প্রমিত ভাষার দিকে ঝুঁকছে জানতে চাইলে ঢাকাইয়া সংস্কৃতি কর্মী ও বাচিক শিল্পী আরিফা আলম সোনিয়া বলেন, ‘ঢাকাইয়া ভাষা দুই ধরনের। একটি. সোব্বাসী আর দ্বিতীয়টি. কুট্টি। দুটোই ঢাকার ভাষা। ভাষা দুটোই এখন বিলুপ্তির পথে। আগে পরিবারগুলোতে দুই ধরনের ভাষারই প্রচলন ছিল। এখনো চর্চা অব্যাহত রাখা উচিত। ভাষা আমাদের শিকড়। নিজেদের ভাষার শিকড়কে আঁকড়ে ধরতে না পারলে ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণই হুমকির মুখে পরবে। ভাষা মানেই আমাদের মায়ের ভাষা, মাকে ভালোবাসি মায়ের মুখের বুলিও ভালোবাসি।’
এ বিষয়ে পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা, মিল্লাত উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কলামিস্ট আরাফাতুর রহমান শাওনের সঙ্গে কথা হয়। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আধুনিকতার ছোঁয়ায় তরুণ প্রজন্ম ঢাকাইয়া ভাষা চর্চায় অনীহা দেখাচ্ছে। এছাড়া এলাকায় স্থানীয় মানুষ কমে যাচ্ছে, তাঁরা অনেকেই পুরান ঢাকা থেকে বেরিয়ে অন্যত্র বসবাস শুরু করেছে। ফলে ভাষার যে সম্প্রসারণ সেটি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভাষা হলো যোগাযোগের মাধ্যম, কেউ কথা বললেতো সেটির প্রত্যুত্তর পেতে হবে। তা যদি না হয়, তাহলেতো ভাষার ব্যবহার কমবেই।’
নাটক-সিনেমায় ঢাকাইয়া আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার প্রসঙ্গে এই কলামিস্ট বলেন, ‘ভাষাটিকে বর্তমানে হাস্যরস হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। এটির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এটি তরুণ প্রজন্মের মাঝে ঢাকাইয়া আঞ্চলিক ভাষা চর্চায় অনীহা তৈরি করছে। অন্যদিকে শিক্ষার প্রসারে প্রমিত ভাষার চর্চা বাড়ছে। সামাজিকভাবে ঢাকাইয়া আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার চেয়ে প্রমিত উচ্চারণে কথা বলতে পারলে সেটিকে বেশি স্মার্টনেস হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এখন আর তেমন ঢাকাইয়া আঞ্চলিক ভাষা শোনাই যায় না। আমার দূর ধারণা, অচিরেই ঢাকাইয়া আঞ্চলিক ভাষা হারিয়ে যাবে।’
ঢাকাইয়া আঞ্চলিক ভাষার শব্দ ভান্ডার আমাদের মূল্যবান সম্পদ। এর রক্ষণাবেক্ষণ হওয়া দরকার। তবে সবচেয়ে জরুরি চর্চা অব্যাহত রাখা বলে মত দেন তরুণ এই শিক্ষক।
উর্দুর সঙ্গে এক ধরনের সংমিশ্রণ থাকায় ঢাকাইয়া আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহারে অনীহা চলে আসছে কিনা জানতে চাইলে পুরান ঢাকার স্থানীয় একাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এটি (সোব্বাসী) শুনতে অনেকটা উর্দুর মতো শোনালেও এটি উর্দু নয়। বরং সোব্বাসী স্বতন্ত্র একটি উপভাষা। বর্তমানে এ উপভাষার ব্যবহার একরকম নেই বললেই চলে। তবে পরিবার কিংবা বন্ধুমহলে সীমিত পরিসরে এখনো এ উপভাষার প্রচলন আছে। যেভাবে এ উপভাষার প্রচলন কমে আসছে এতে করে কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলেই আশঙ্কা তাঁদের।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, বাংলার সুবাদার ইসলাম খাঁ চিশতী ১৬১০ সালে যখন ঢাকায় পদার্পণ করেন, তখন তাঁর সঙ্গে অসংখ্য উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ভারতীয়, আফগান, ইরান-আরবি তথা বহিরাগত মুসলমান ও হিন্দু ঢাকায় এসেছিল এবং এই আগমন পরবর্তী আরও প্রায় ২৫০ বছর ধরে চলমান ছিল। এই ব্যাপক জনগোষ্ঠী বর্তমান পুরোনো ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে বসতি স্থাপন করেছিল এবং এদের বংশধররাই বর্তমানে পুরোনো ঢাকার আদি অধিবাসী।
১৬১০ সাল থেকেই ঢাকায় বসবাসকারী সব উচ্চপদস্থ-নিম্নপদস্থ পরিবারগুলোর মধ্যে আরবি, ইংরেজি, গুজরাটি, তুর্কি, পালি, পর্তুগিজ, ফরাসি, ফারসি, মুণ্ডা, সংস্কৃত, বাংলা, হিন্দুস্তানি (উর্দু, হিন্দি) ভাষার মিশ্রণে নতুন এক মিশ্র কথ্য ভাষার প্রচলন শুরু হয়; যা এখনো ঢাকার আদি অধিবাসীদের মুখের ভাষা। পুরোনো ঢাকার আদি অধিবাসীরা এই ভাষায় পরিবারে, সমাজে, হাট-বাজারে, সামাজিক অনুষ্ঠানে কথাবার্তা বলতেন। তবে ঠিক কতসংখ্যক মানুষ এই ভাষা ব্যবহার করতেন এর হিসাব কখনো করা হয়নি; হয়তো কেউ এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেননি। এই মিশ্রিত ঢাকাইয়া ভাষাকে বর্তমানে আদি ঢাকাইয়ারা ‘সোব্বাসী’ ভাষা বলেন এবং নিজেদের ‘সোব্বাস/সোব্বাসী’ বলে পরিচয় দেন।
সোব্বাসী উপভাষা রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন সহযোগী অধ্যাপক মো. শাহাবুদ্দিন সাবু। তিনি সাভার সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত। ‘বাংলা-ঢাকাইয়া সোব্বাসী ডিকশনারি’ নামে একটি অভিধান প্রণয়ন করেছেন। এটিই সোব্বাসী ভাষার একমাত্র অভিধান বলে দাবি করা হয়।
আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘উর্দু এবং সোব্বাসী সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাষা। আমরা যারা সোব্বাসী আছি, তাঁরা ইসলাম খাঁ চিশতীর সময়, ১৬-১৭ শতকের দিকে ঢাকায় এসেছি। অন্যদিকে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পাটনা, ঊড়িষ্যা, বিহার থেকে অসংখ্য মানুষ প্রবেশ করে। তাঁদের ভাষা ছিল উর্দু। ফলে অনেকেই উর্দু আর সোব্বাসীর পার্থক্য করতে পারে না। উর্দুর সঙ্গে সোব্বাসীকে মিলিয়ে ফেলে। তবে আমরা যারা সোব্বাসী আছি, আমরা ঠিকই পার্থক্যটা বুঝতে পারি।’
সোব্বাসী ভাষার ব্যবহার কমে আসার বিষয়ে শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘মানুষজন উর্দু আর সোব্বাসীকে এক মনে করায় ঢাকাইয়া পরিবারগুলো বিশেষ করে ১৯৭১ সালের পরে সোব্বাসী ব্যবহার থেকে অনেকটাই সরে আসে। তবে নিজ নিজ পরিবারে এখনো সোব্বাসী ভাষায় কথা বলার প্রচলন আছে।’
মুক্তিযুদ্ধে উর্দুভাষী বিহারি জনগোষ্ঠীর ভূমিকার কারণে একাত্তর পরবর্তী পরিস্থিতিতে সোব্বাসী ভাষাভাষিরা নিজেদের গুটিয়ে নেন। ভুল করে কেউ যাতে তাঁদের বিহারি হিসেবে চিহ্নিত না করেন— সে জন্য ঘরের বাইরে সোব্বাসী ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে শুরু করেন, সন্তানদেরও বাংলা বলতে উৎসাহিত করেন।
তবে এখনো ৬ থেকে ৭ লাখ মানুষ সোব্বাসীতে কথা বলেন বলে দাবি করেন মো. শাহাবুদ্দিন। তবে স্বীকৃতি না থাকায় ও মানুষেরা এটিকে উর্দু মনে করায় এ উপভাষা এক সময় বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলে তাঁর আশঙ্কা।
এদিকে ‘ঢাকাইয়া কুট্টি ভাষার অভিধান’ বই থেকে জানা যায়, ১৬০৮ সালে মতান্তরে ১৬১০ সালের জুলাই মাসের কোনো এক সময় দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীরের মনোনীত বাংলার সুবেদার ইসলাম খাঁ চিশতী ঢাকার বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী সবচেয়ে উঁচু ভূমি চাদনীঘাটে তাঁর নৌবহর নোঙর করেন। তিনি সুবা বাংলার রাজধানী হিসেবে শহর ঢাকার পত্তন করেন। তিনি এ অঞ্চলকে ‘জাহাঙ্গীরনগর’ নামকরণ করলেও পূর্বকালের ধারাবাহিকতায় এ জনপথের মানুষ ‘ঢাকা’ নামটিকে স্থায়ীভাবে ধারণ করেন। ঢাকার আশপাশ থেকে অসংখ্য মানুষ কাজের সন্ধানে এ অঞ্চলে আসেন।
বহু অঞ্চলের মানুষের সংমিশ্রণে ঢাকার প্রাচীন জনপদ ঘিরে নতুন একটি ভাষার উদ্ভব ঘটে। এই ভাষার নামই ‘কুট্টি’। আদি ঢাকার মানুষের কেউ কেউ এখনো কুট্টি ভাষায় কথা বলেন। বাংলা, উর্দু, হিন্দি, ফারসি ভাষার সংমিশ্রণে এই ভাষার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছে।
কুট্টি ভাষাকে অনেকে ঢাকার আদি ভাষা বলে মনে করেন। কিন্তু কুট্টি ভাষা ঢাকার আদি অধিবাসীদের ভাষা নয়। কুট্টি ভাষার সৃষ্টি হয়েছে ঢাকার বাইরে থেকে আসা একদল মানুষের নিজস্ব সৃজন কারুকাজের ধারাবাহিকতায়। মোশাররফ হোসেন ভূঞা তাঁর ‘ঢাকাইয়া কুট্টি ভাষার অভিধান’ বইয়ে এমনটিই লিখেছেন।
কুট্টি নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বইটিতে বলা হয়েছে, মোগল আমল মূলত কুট্টি সম্প্রদায় ও কুট্টি ভাষার উৎপত্তির কাল। ১৮ শতকের মধ্য ভাগ থেকে পূর্ববঙ্গে চাল একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য ছিল। চাল রপ্তানিকারকেরা ছিলেন মাড়োয়ারি ও মধ্য ভারতের মানুষ। তাঁরা পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধান সংগ্রহ করতেন। সংগৃহীত ধান ঢেঁকিতে ভানতে বা কুটতে হতো। এসব ধান কুটতে ঢাকার আশপাশ এলাকা থেকে শ্রমিক আসত। শ্রমিক-ব্যবসায়ী ও দিল্লির সৈন্যদের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে একটি ভাষার উদ্ভব ঘটে। সেটিই কালের পরিক্রমায় ‘কুট্টি’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
সোব্বাসী ও কুট্টি ভাষার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। দুটিই ঢাকার নগর উপভাষা হলেও ভিন্নতা আছে। যেমন—১. বাংলা: বসতে দিলে ঘুমাতে চায়। সোব্বাসী: বায়েটনে দেনেসে শোনে মাঙতা। কুট্টি: বইবার দিলে হুইবার চায়। ২. বাংলা: কুকুরের পেটে ঘি হজম হয় না। সোব্বাসী: কোত্তাকা পেটমে ঘি হাজাম হোতানি। কুট্টি: কুত্তার প্যাটে গি অজম অহে না। ৩. বাংলা: কুঁজোর আবার চিত হয়ে ঘুমানোর শখ। সোব্বাসী: কুজাকা ফের চেত হোকে শোনেকা শাওখ। কুট্টি: গুজার বি আবার চিত অয়া হুইবার সক।
কুট্টি নাকি সোব্বাসী কোনটি বেশি পুরোনো— এ প্রশ্নে শাহাবুদ্দিন সাবু বলেন, ‘সোব্বাসী বেশি পুরোনো। তবে দুটোকেই প্রাচীন বলা যায়। ১৭৭০-এর পর কুট্টি ভাষার আবির্ভাব। অন্যদিকে সোব্বাসীর আবির্ভাব ১৬১০-এর দিকে। সোব্বাসী পুরোনো হলেও স্বীকৃতিতে এগিয়ে কুট্টি। কেননা ঢাকাইয়া ভাষা বলতে এখন মানুষ কুট্টি ভাষাকেই বোঝে। নাটক-সিনেমাতেও কুট্টি ভাষার ব্যবহার রয়েছে। যেহেতু এটি ডকুমেন্টেড হয়ে যাচ্ছে ফলে কুট্টি ভাষা আরও কিছুদিন টিকে থাকবে। তবে সোব্বাসী বিলুপ্ত হতে সময় লাগবে না।’
নাটক-সিনেমাতে অবশ্য কুট্টি ভাষার ৭০ ভাগও ঠিকমতো ব্যবহার করা হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন করা হয় বলে মনে করেন শাহাবুদ্দিন।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্য কাওয়ালি সোব্বাসী ভাষার কি না জানতে চাইলে শাহাবুদ্দিন সাবু বলেন, ‘কাওয়ালি উর্দু ভাষার। সেগুলো সোব্বাসী নয়। “ঢাকাইয়া উর্দু” নামে যেটাকে বলা হয়ে থাকে সেটি মূলত সোব্বাসী। সোব্বাসীকে ঢাকাইয়া উর্দু নামে চালানোর শুরুটা মূলত ১৯৭১ সালের পরে। গ্রাম থেকে যখন মানুষ ঢাকায় এল তখন তাঁরা সোব্বাসীকেই ঢাকাইয়া উর্দু নামে ডাকতে শুরু করে। সোব্বাসীকেই ঢাকাইয়া উর্দু নামে চালানো হয়।’
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪