সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
আমার প্রিয় বিষয় হচ্ছে, যথাক্রমে প্রিয় মানুষ হচ্ছে আমার মা-বাবা। তাঁরা আমার ওপর খুব প্রভাব বিস্তার করেছেন। আমি একটা ছোট বই লিখেছিলাম ‘আমার পিতার মুখ’ নাম দিয়ে। সেখানে পিতার কথাটাই প্রধানত আছে; কিন্তু এটা আমি লেখার সময় অনুভব করেছি এবং অনুভব করি যে, যদিও ওটাকে ‘পিতার মুখ’ বলেছি; কিন্তু পিতার পেছনে মাতাও আছেন। আসল কথা হচ্ছে, আমার পিতার মধ্যেও মাতৃসুলভ গুণগুলো ছিল এবং স্বভাবও ছিল বলতে পারি। মা যেমন সন্তান লালনপালন করেন, আমার পিতাও সে রকম করতেন। ১৯৬৫ সালে আমার বাবা মারা যান। আমি তখন বিদেশে ছিলাম।
সে জন্য তাৎক্ষণিকভাবে আমার যে অনুভূতি তৈরি হয়েছিল, সেগুলো আমি একটি বড় প্রবন্ধ আকারে লিখেছি এবং সেটা পরে বইয়ের একটি অংশ করে ‘আমার পিতার মুখ’ নাম দিয়েছি। কিন্তু আমার মা-ও আমার প্রিয় মানুষ। বাবার মৃত্যুর পর দীর্ঘ সময় তিনি আমাদের সঙ্গে ছিলেন এবং তাঁর প্রভাবটা খুব বেশি করেই পড়েছে আমার ওপর। আমার বাবা বাইরে থাকতেন সরকারি কর্মোপলক্ষে। অতএব মায়ের প্রভাবটা আরও বেশি ছিল আমাদের ওপর। আমরা যেহেতু পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে বসবাস করি, পিতাই যেহেতু সংসারের প্রধান, সে জন্য বাবার প্রভাবটা আমরা মোটামুটি চিহ্নিত করতে পারি; কিন্তু মায়ের প্রভাবটা করতে পারি না। তবু আমার কাছে বাবার মতোই সমান প্রিয় মা।
প্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যদি একজনের কথাই বলি, তাহলে আমি বেছে নেব মওলানা ভাসানীকে। তাঁর কিছু দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে আমি একমত নই। তাঁর বিরুদ্ধে আমার প্রধান অভিযোগ, তিনি ধর্ম এবং রাজনীতিকে আলাদা করার ব্যাপারে সাহায্য করেননি। এটা আমাদের দেশের রাজনীতির জন্য, সমাজের জন্য খুব ক্ষতিকর বিষয় হয়েছে।
যাকে ধর্মনিরপেক্ষতা বলা হয়, যাকে ইহজাগতিকতা বলা হয়, এটা আমরা সৃষ্টি করতে পারিনি—আমাদের রাজনীতিতে, আমাদের সমাজে। মওলানা ভাসানী এই দুটোকে মিশিয়ে ফেলেছিলেন। ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা করতে পারেননি; মানে আমাদের সাহায্য করেননি। কিন্তু মওলানার যে গুণটা আমার ভালো লাগে, সেটা হলো তিনি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এবং সামন্তবাদবিরোধী রাজনীতিক ছিলেন। আমরা তাঁর সময়েও পাইনি, তাঁর পরেও পাইনি অমন রাজনীতিক। এই দুই প্রশ্নে তিনি অনমনীয় ছিলেন। আমরা দেখেছি, কেউ কেউ সামন্তবাদবিরোধী হন; কিন্তু সাম্রাজ্যবাদবিরোধী হন না, আবার কেউবা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী হন; কিন্তু সামন্তবাদবিরোধী হন না। কিন্তু মওলানা তাঁর যে সংস্কৃতি তাঁর যে পটভূমি, সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি সাম্রাজ্যবাদকে চিনলেন এবং সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে যে পুঁজিবাদ আছে, তা-ও তিনি চিহ্নিত করেছেন। অন্যদিকে যে সামন্তবাদী বন্ধনগুলো জমিদারি প্রথা থেকে শুরু করে অর্থাৎ কৃষকদের ওপর যে নানা রকম মহাজনি নির্যাতন, এটাও তিনি দেখেছেন, এটাও তাঁর প্রধান গুণ। আর দ্বিতীয় যে গুণ, সেটা হলো—মওলানা ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেননি। সবাই রাজনীতি করে ক্ষমতার জন্য, ক্ষমতা দখলের জন্য। অথচ তাঁর মধ্যে আমি দেখেছি, তিনি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেননি।
তিনি ক্ষমতায়ন করতে চেয়েছিলেন জনসাধারণকে। জনসাধারণকে ক্ষমতায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। সে জন্য তিনি কোনো দলে টিকে থাকতে পারেননি। ক্ষমতার রাজনীতিতে তিনি কখনো বিশ্বাসী ছিলেন না।
দেশের বাইরে আমার প্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব লেনিন। সমাজবদলের যে রাজনীতি, তিনি সে রাজনীতি করেছেন। সে রাজনীতি রাষ্ট্রক্ষমতা নেওয়ার জন্য নয়, সমাজবদলের রাজনীতি। তাঁর মধ্যে কোনো আপসকামিতা ছিল না। যাঁরা বিপ্লবী রাজনীতি করেন, তাঁরা অনেক সময় একপেশে হন। কিন্তু লেনিন সাহিত্যে উৎসাহী ছিলেন, সংগীতে উৎসাহী ছিলেন, অনবরত লিখতেন, পত্রিকা সম্পাদনা করতেন, অসাধারণ সাংগঠনিক ক্ষমতা ছিল, শক্তি ছিল তাঁর, অর্থাৎ লেনিন একজন পরিপূর্ণ মানুষ ছিলেন। বহুমাত্রিক মানুষ ছিলেন।
সাহিত্যিকদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ আমার খুবই প্রিয়। তাঁর কাছে আমরা সব সময় যেতে পারি। যেকোনো প্রয়োজনে যেতে পারি। যেমন, আনন্দের জন্য যেতে পারি। আমাদের বাংলা গদ্যকে বিদ্যাসাগর প্রাণ দিয়েছেন; কিন্তু রবীন্দ্রনাথ সেই প্রাণটা আরও বিকশিত করেছেন এবং বহুমাত্রিকতা দিয়েছেন। সে জন্য রবীন্দ্রনাথ বারবার পড়া যায়, বহুভাবে পড়া যায়। এরপর বিশ্বসাহিত্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় লেখক হলেন শেক্সপিয়ার। তিনি প্রিয় লেখক হওয়ার স্থূল কারণ হচ্ছে, আমি পেশায় ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষকতা করেছি। কাজেই শেক্সপিয়ার আমাকে পড়তে হয়েছে ছাত্রজীবনে। পেশাগত জীবনে যদি এ পেশায় জড়িত না-ও থাকতাম, তাহলেও আমি শেক্সপিয়ারকে সবচেয়ে প্রিয় লেখক বলতাম এ জন্য যে, তাঁর মধ্যে আমি যে গুণটা দেখি, সেটা সর্বজন প্রশংসিত এবং স্বীকৃত। তিনি তাঁর কালের মানুষ, তাঁর পরিস্থিতির মানুষ, তাঁর দেশের মানুষ; কিন্তু তিনি সর্বজনীন। তাঁর মধ্যে সর্বজনীনতা ছিল। তিনি এমন সব চরিত্র তৈরি করেছেন, যেগুলো চিরকালের মানুষ, একালেরও মানুষ। তাঁর মধ্যে শুধু নাট্যগুণ নয়, কাব্যগুণও দেখি। তাঁর কাব্যগুণও বৈচিত্র্যপূর্ণ। দুই প্রিয় লেখকের কথা বললাম। আরেকজন প্রিয় লেখক হলেন টলস্টয়। তিনি আরেক ধরনের লেখক। তিনি সম্পূর্ণ গদ্যলেখক ও ঔপন্যাসিক। তাঁকেও আমার ভালো লাগে। প্রতিটি মানুষ যে অসাধারণ প্রাণী, সেটা টলস্টয় যেভাবে তাঁর লেখায় উপস্থাপন করেছেন, তা কম লেখকই করতে পেরেছেন। হোমারের লেখার মধ্যেও আমরা ওই ব্যাপারটা পাই। কিন্তু তাঁর প্রতিটি চরিত্র স্বতন্ত্র। এটা আমরা টলস্টয়ের মধ্যে দেখি; যেমন, তাঁর যুদ্ধ ও শান্তি উপন্যাসের মধ্যে পাঁচ শর মতো চরিত্র আছে। পাঁচ শ চরিত্রকে তিনি স্বতন্ত্রভাবে দেখেছেন। প্রতিটি চরিত্র তাঁর কাছে আলাদা আলাদা মানুষ, এমনকি তাঁর কুকুরটাও। তাঁর এই যে একটা পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা, দাবির অন্তর্দৃষ্টি ছিল, তা অসাধারণ। তাঁর আরেকটি গুণ আমার আরও ভালো লাগে, তা হচ্ছে সাহিত্য সম্পর্কে তাঁর ধারণা। তিনি মনে করেন, সাহিত্য হচ্ছে একধরনের যোগাযোগ। মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ করে লেখা তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা তাঁর উপলব্ধি–এগুলো অন্যের মধ্যে সংক্রমিত করতে চান। এটা তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন। অন্যের মধ্যে সংক্রমিত করাই লেখকের দায়িত্ব। তাঁর এই বোধ এবং বিশ্বাস আমার কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য। সাহিত্যের কাজ হচ্ছে শুধু লেখা নয়, আনন্দ দেওয়া নয়, আনন্দের মধ্যে একটা সংক্রমণ ঘটানো—এই গভীরতা, এই ব্যাপকতা আমায় বেশ আলোড়িত করে। আমি বহু লেখকের লেখা পড়ি এবং পড়েছি, উল্লিখিত তিনজনকে আলাদা করে দেখি এবং তিনজনকে আমি মনে করি আমার প্রিয় লেখক।
কবিদের মধ্যে আমার প্রিয় জন কিটস ও জীবনানন্দ দাশ। কিটস ও জীবনানন্দের মধ্যে একটা সাযুজ্য আছে। সেটা হলো—তাঁদের দুজনের মধ্যে একটা রহস্যময়তা আছে। দ্বিতীয়ত, এই দুই কবির মধ্যে একটা সময় এবং ইতিহাসচেতনা আছে।
আমার প্রিয় চলচ্চিত্রকার চার্লি চ্যাপলিন। তাঁর ছবি আমার খুব ভালো লাগে এবং আমি খুব উপভোগ করি। চ্যাপলিনের কৌতুক ব্যঙ্গ-বিদ্রূপাত্মক হলেও মানুষের প্রতি তাঁর যে দরদ, তা আমার বেশ ভালো লাগে। আমি আইজেনস্টাইনের ছবিগুলোও খুব পছন্দ করি, সত্যজিৎ রায়ের ছবি, মৃণাল সেনের বাংলা ছবিও খুব প্রিয়।
অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যে আমার প্রিয় লরেন্স অলিভিয়ের। বাংলা ছবির মধ্যে অনেকেই আমার প্রিয় ছিলেন। ছবি বিশ্বাস, বাল্যকালে খুব পছন্দের ছিলেন। তাঁর বাচনভঙ্গি আমার খুবই প্রিয় ছিল। তারও আগে প্রমথেশ বড়ুয়ার কিছু ছবি আমরা দেখেছি, তাঁকেও পছন্দ করি। কিন্তু ছবি বিশ্বাস আমাদের খুব পছন্দের ছিলেন। জহর গাঙ্গুলীকে আমরা খুব পছন্দ করতাম তাঁর নিজস্বতার কারণে। কানন দেবীকে ভালো লাগত। উত্তম-সুচিত্রার ছবি আমরা দেখেছি, যখন আমরা কলেজ-ইউনিভার্সিটির ছাত্র। তখন তাঁরা খুব জনপ্রিয়।
পেইন্টিংয়ে আমার প্রিয় পিকাসো। তিনি বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং ক্রমাগত নিজেকে পরিবর্তন করেছেন। বলা যায়, এটা তাঁর বহুমাত্রিকতা। দ্বিতীয় কথা, তাঁর মধ্যে একটা অঙ্গীকার ছিল—সামাজিক, রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক। যেটা খুব ভালো লাগত। আমার প্রিয় শিল্পী জয়নুল আবেদিন। তাঁর সব ছবির মধ্যেই আমি একটা বলিষ্ঠতা দেখতে পাই। যে বলিষ্ঠতা বাঙালি জীবনের মধ্যে আছে হয়তো; কিন্তু সাধারণত এটা চোখে পড়ে না।
আমি সঙ্গপ্রিয়; কিন্তু বেশি লোকের আড্ডা পছন্দ করি না। ঘনিষ্ঠ লোকজনের মধ্যে আলাপ-আলোচনাটুকু আমি খুব উপভোগ করি। অনেক মানুষের হইচই আমার ভালো লাগে না। আড্ডা কথাটা আমার কাছে খুব অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। আমি বিশেষ করে যাঁদের সঙ্গে রুচিতে মেলে, দৃষ্টিভঙ্গিতে মেলে, তাঁদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করি। কিন্তু আড্ডা কথাটা আমার কাছে আলস্য মনে হয়। তবে যাঁরা লেখেন, যাঁরা চিন্তা করেন, তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগটা খুবই জরুরি, বিশেষ করে সমমনাদের মধ্যে।
মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ আমার কাছে প্রবলভাবে নাড়া দেওয়া প্রিয় মুহূর্ত। আমার কাছে মনে হতো, এটা অনেক দিনের একটা কঠিন রোগ, একটা দুঃসহ রোগ, সেটা কেটে গেল। যখন শুনলাম, তারা আত্মসমর্পণ করবে, ওই মুহূর্তটা বেশ নাড়া দেয়। আমি তো মনে করি, এটা একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এবং ওই মুহূর্তে আমি জড়িতও ছিলাম এই অর্থে যে, আমরা দেশের ভেতর অবরুদ্ধ ছিলাম। আমি জানতাম, আমার দুই রকমের বিপদ—আমি নাগরিক হিসেবে বাঙালি এবং আরেকটা বিপদ হচ্ছে—চিহ্নিত লোক হিসেবে টিক্কা খানের সমন বার্তা পেয়েছি, তারা খুঁজছে এবং এটা পরে প্রমাণিতও হয়েছে যে, ১৪ ডিসেম্বর আমার অনেক সহকর্মীবন্ধু শহীদ হয়েছেন। কিন্তু আমি বেঁচে গেছি। সেটা এ জন্য যে, আত্মগোপনে থাকায় আমার ঠিকানা তাদের জানা ছিল না। কাজেই আমি জানতাম, আমি দুভাবে বিপন্ন।
বিজয়ের ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে নির্দ্বিধায় বলতে পারি, আমরা অজস্র ত্যাগ-আত্মত্যাগে বিজয় ছিনিয়ে এনেছি সত্য; কিন্তু সেই বিজয়কে সর্বস্তরে এবং সব মানুষের দ্বারে পৌঁছে দিতে পারিনি। বিজয়ের ওই আনন্দ একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের পর আর এগোয়নি, ক্রমাগত পিছিয়ে পড়েছে। একটি গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়। অথচ কাঙ্ক্ষিত সেই স্বপ্নপূরণ গত ৫০ বছরে আর এগোল না। আমরা আশাবাদী বলেই প্রতিটি বিজয় দিবসে প্রত্যাশা রাখি কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নপূরণে। একটি বৈষম্যহীন, শ্রেণিহীন সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। সে জন্য আমাদের আরও ত্যাগস্বীকার করতে হবে, তা তো মিথ্যে নয়।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আমার প্রিয় বিষয় হচ্ছে, যথাক্রমে প্রিয় মানুষ হচ্ছে আমার মা-বাবা। তাঁরা আমার ওপর খুব প্রভাব বিস্তার করেছেন। আমি একটা ছোট বই লিখেছিলাম ‘আমার পিতার মুখ’ নাম দিয়ে। সেখানে পিতার কথাটাই প্রধানত আছে; কিন্তু এটা আমি লেখার সময় অনুভব করেছি এবং অনুভব করি যে, যদিও ওটাকে ‘পিতার মুখ’ বলেছি; কিন্তু পিতার পেছনে মাতাও আছেন। আসল কথা হচ্ছে, আমার পিতার মধ্যেও মাতৃসুলভ গুণগুলো ছিল এবং স্বভাবও ছিল বলতে পারি। মা যেমন সন্তান লালনপালন করেন, আমার পিতাও সে রকম করতেন। ১৯৬৫ সালে আমার বাবা মারা যান। আমি তখন বিদেশে ছিলাম।
সে জন্য তাৎক্ষণিকভাবে আমার যে অনুভূতি তৈরি হয়েছিল, সেগুলো আমি একটি বড় প্রবন্ধ আকারে লিখেছি এবং সেটা পরে বইয়ের একটি অংশ করে ‘আমার পিতার মুখ’ নাম দিয়েছি। কিন্তু আমার মা-ও আমার প্রিয় মানুষ। বাবার মৃত্যুর পর দীর্ঘ সময় তিনি আমাদের সঙ্গে ছিলেন এবং তাঁর প্রভাবটা খুব বেশি করেই পড়েছে আমার ওপর। আমার বাবা বাইরে থাকতেন সরকারি কর্মোপলক্ষে। অতএব মায়ের প্রভাবটা আরও বেশি ছিল আমাদের ওপর। আমরা যেহেতু পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে বসবাস করি, পিতাই যেহেতু সংসারের প্রধান, সে জন্য বাবার প্রভাবটা আমরা মোটামুটি চিহ্নিত করতে পারি; কিন্তু মায়ের প্রভাবটা করতে পারি না। তবু আমার কাছে বাবার মতোই সমান প্রিয় মা।
প্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যদি একজনের কথাই বলি, তাহলে আমি বেছে নেব মওলানা ভাসানীকে। তাঁর কিছু দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে আমি একমত নই। তাঁর বিরুদ্ধে আমার প্রধান অভিযোগ, তিনি ধর্ম এবং রাজনীতিকে আলাদা করার ব্যাপারে সাহায্য করেননি। এটা আমাদের দেশের রাজনীতির জন্য, সমাজের জন্য খুব ক্ষতিকর বিষয় হয়েছে।
যাকে ধর্মনিরপেক্ষতা বলা হয়, যাকে ইহজাগতিকতা বলা হয়, এটা আমরা সৃষ্টি করতে পারিনি—আমাদের রাজনীতিতে, আমাদের সমাজে। মওলানা ভাসানী এই দুটোকে মিশিয়ে ফেলেছিলেন। ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা করতে পারেননি; মানে আমাদের সাহায্য করেননি। কিন্তু মওলানার যে গুণটা আমার ভালো লাগে, সেটা হলো তিনি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এবং সামন্তবাদবিরোধী রাজনীতিক ছিলেন। আমরা তাঁর সময়েও পাইনি, তাঁর পরেও পাইনি অমন রাজনীতিক। এই দুই প্রশ্নে তিনি অনমনীয় ছিলেন। আমরা দেখেছি, কেউ কেউ সামন্তবাদবিরোধী হন; কিন্তু সাম্রাজ্যবাদবিরোধী হন না, আবার কেউবা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী হন; কিন্তু সামন্তবাদবিরোধী হন না। কিন্তু মওলানা তাঁর যে সংস্কৃতি তাঁর যে পটভূমি, সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি সাম্রাজ্যবাদকে চিনলেন এবং সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে যে পুঁজিবাদ আছে, তা-ও তিনি চিহ্নিত করেছেন। অন্যদিকে যে সামন্তবাদী বন্ধনগুলো জমিদারি প্রথা থেকে শুরু করে অর্থাৎ কৃষকদের ওপর যে নানা রকম মহাজনি নির্যাতন, এটাও তিনি দেখেছেন, এটাও তাঁর প্রধান গুণ। আর দ্বিতীয় যে গুণ, সেটা হলো—মওলানা ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেননি। সবাই রাজনীতি করে ক্ষমতার জন্য, ক্ষমতা দখলের জন্য। অথচ তাঁর মধ্যে আমি দেখেছি, তিনি ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেননি।
তিনি ক্ষমতায়ন করতে চেয়েছিলেন জনসাধারণকে। জনসাধারণকে ক্ষমতায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। সে জন্য তিনি কোনো দলে টিকে থাকতে পারেননি। ক্ষমতার রাজনীতিতে তিনি কখনো বিশ্বাসী ছিলেন না।
দেশের বাইরে আমার প্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব লেনিন। সমাজবদলের যে রাজনীতি, তিনি সে রাজনীতি করেছেন। সে রাজনীতি রাষ্ট্রক্ষমতা নেওয়ার জন্য নয়, সমাজবদলের রাজনীতি। তাঁর মধ্যে কোনো আপসকামিতা ছিল না। যাঁরা বিপ্লবী রাজনীতি করেন, তাঁরা অনেক সময় একপেশে হন। কিন্তু লেনিন সাহিত্যে উৎসাহী ছিলেন, সংগীতে উৎসাহী ছিলেন, অনবরত লিখতেন, পত্রিকা সম্পাদনা করতেন, অসাধারণ সাংগঠনিক ক্ষমতা ছিল, শক্তি ছিল তাঁর, অর্থাৎ লেনিন একজন পরিপূর্ণ মানুষ ছিলেন। বহুমাত্রিক মানুষ ছিলেন।
সাহিত্যিকদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ আমার খুবই প্রিয়। তাঁর কাছে আমরা সব সময় যেতে পারি। যেকোনো প্রয়োজনে যেতে পারি। যেমন, আনন্দের জন্য যেতে পারি। আমাদের বাংলা গদ্যকে বিদ্যাসাগর প্রাণ দিয়েছেন; কিন্তু রবীন্দ্রনাথ সেই প্রাণটা আরও বিকশিত করেছেন এবং বহুমাত্রিকতা দিয়েছেন। সে জন্য রবীন্দ্রনাথ বারবার পড়া যায়, বহুভাবে পড়া যায়। এরপর বিশ্বসাহিত্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় লেখক হলেন শেক্সপিয়ার। তিনি প্রিয় লেখক হওয়ার স্থূল কারণ হচ্ছে, আমি পেশায় ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষকতা করেছি। কাজেই শেক্সপিয়ার আমাকে পড়তে হয়েছে ছাত্রজীবনে। পেশাগত জীবনে যদি এ পেশায় জড়িত না-ও থাকতাম, তাহলেও আমি শেক্সপিয়ারকে সবচেয়ে প্রিয় লেখক বলতাম এ জন্য যে, তাঁর মধ্যে আমি যে গুণটা দেখি, সেটা সর্বজন প্রশংসিত এবং স্বীকৃত। তিনি তাঁর কালের মানুষ, তাঁর পরিস্থিতির মানুষ, তাঁর দেশের মানুষ; কিন্তু তিনি সর্বজনীন। তাঁর মধ্যে সর্বজনীনতা ছিল। তিনি এমন সব চরিত্র তৈরি করেছেন, যেগুলো চিরকালের মানুষ, একালেরও মানুষ। তাঁর মধ্যে শুধু নাট্যগুণ নয়, কাব্যগুণও দেখি। তাঁর কাব্যগুণও বৈচিত্র্যপূর্ণ। দুই প্রিয় লেখকের কথা বললাম। আরেকজন প্রিয় লেখক হলেন টলস্টয়। তিনি আরেক ধরনের লেখক। তিনি সম্পূর্ণ গদ্যলেখক ও ঔপন্যাসিক। তাঁকেও আমার ভালো লাগে। প্রতিটি মানুষ যে অসাধারণ প্রাণী, সেটা টলস্টয় যেভাবে তাঁর লেখায় উপস্থাপন করেছেন, তা কম লেখকই করতে পেরেছেন। হোমারের লেখার মধ্যেও আমরা ওই ব্যাপারটা পাই। কিন্তু তাঁর প্রতিটি চরিত্র স্বতন্ত্র। এটা আমরা টলস্টয়ের মধ্যে দেখি; যেমন, তাঁর যুদ্ধ ও শান্তি উপন্যাসের মধ্যে পাঁচ শর মতো চরিত্র আছে। পাঁচ শ চরিত্রকে তিনি স্বতন্ত্রভাবে দেখেছেন। প্রতিটি চরিত্র তাঁর কাছে আলাদা আলাদা মানুষ, এমনকি তাঁর কুকুরটাও। তাঁর এই যে একটা পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা, দাবির অন্তর্দৃষ্টি ছিল, তা অসাধারণ। তাঁর আরেকটি গুণ আমার আরও ভালো লাগে, তা হচ্ছে সাহিত্য সম্পর্কে তাঁর ধারণা। তিনি মনে করেন, সাহিত্য হচ্ছে একধরনের যোগাযোগ। মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ করে লেখা তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা তাঁর উপলব্ধি–এগুলো অন্যের মধ্যে সংক্রমিত করতে চান। এটা তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন। অন্যের মধ্যে সংক্রমিত করাই লেখকের দায়িত্ব। তাঁর এই বোধ এবং বিশ্বাস আমার কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য। সাহিত্যের কাজ হচ্ছে শুধু লেখা নয়, আনন্দ দেওয়া নয়, আনন্দের মধ্যে একটা সংক্রমণ ঘটানো—এই গভীরতা, এই ব্যাপকতা আমায় বেশ আলোড়িত করে। আমি বহু লেখকের লেখা পড়ি এবং পড়েছি, উল্লিখিত তিনজনকে আলাদা করে দেখি এবং তিনজনকে আমি মনে করি আমার প্রিয় লেখক।
কবিদের মধ্যে আমার প্রিয় জন কিটস ও জীবনানন্দ দাশ। কিটস ও জীবনানন্দের মধ্যে একটা সাযুজ্য আছে। সেটা হলো—তাঁদের দুজনের মধ্যে একটা রহস্যময়তা আছে। দ্বিতীয়ত, এই দুই কবির মধ্যে একটা সময় এবং ইতিহাসচেতনা আছে।
আমার প্রিয় চলচ্চিত্রকার চার্লি চ্যাপলিন। তাঁর ছবি আমার খুব ভালো লাগে এবং আমি খুব উপভোগ করি। চ্যাপলিনের কৌতুক ব্যঙ্গ-বিদ্রূপাত্মক হলেও মানুষের প্রতি তাঁর যে দরদ, তা আমার বেশ ভালো লাগে। আমি আইজেনস্টাইনের ছবিগুলোও খুব পছন্দ করি, সত্যজিৎ রায়ের ছবি, মৃণাল সেনের বাংলা ছবিও খুব প্রিয়।
অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যে আমার প্রিয় লরেন্স অলিভিয়ের। বাংলা ছবির মধ্যে অনেকেই আমার প্রিয় ছিলেন। ছবি বিশ্বাস, বাল্যকালে খুব পছন্দের ছিলেন। তাঁর বাচনভঙ্গি আমার খুবই প্রিয় ছিল। তারও আগে প্রমথেশ বড়ুয়ার কিছু ছবি আমরা দেখেছি, তাঁকেও পছন্দ করি। কিন্তু ছবি বিশ্বাস আমাদের খুব পছন্দের ছিলেন। জহর গাঙ্গুলীকে আমরা খুব পছন্দ করতাম তাঁর নিজস্বতার কারণে। কানন দেবীকে ভালো লাগত। উত্তম-সুচিত্রার ছবি আমরা দেখেছি, যখন আমরা কলেজ-ইউনিভার্সিটির ছাত্র। তখন তাঁরা খুব জনপ্রিয়।
পেইন্টিংয়ে আমার প্রিয় পিকাসো। তিনি বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং ক্রমাগত নিজেকে পরিবর্তন করেছেন। বলা যায়, এটা তাঁর বহুমাত্রিকতা। দ্বিতীয় কথা, তাঁর মধ্যে একটা অঙ্গীকার ছিল—সামাজিক, রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক। যেটা খুব ভালো লাগত। আমার প্রিয় শিল্পী জয়নুল আবেদিন। তাঁর সব ছবির মধ্যেই আমি একটা বলিষ্ঠতা দেখতে পাই। যে বলিষ্ঠতা বাঙালি জীবনের মধ্যে আছে হয়তো; কিন্তু সাধারণত এটা চোখে পড়ে না।
আমি সঙ্গপ্রিয়; কিন্তু বেশি লোকের আড্ডা পছন্দ করি না। ঘনিষ্ঠ লোকজনের মধ্যে আলাপ-আলোচনাটুকু আমি খুব উপভোগ করি। অনেক মানুষের হইচই আমার ভালো লাগে না। আড্ডা কথাটা আমার কাছে খুব অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। আমি বিশেষ করে যাঁদের সঙ্গে রুচিতে মেলে, দৃষ্টিভঙ্গিতে মেলে, তাঁদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করি। কিন্তু আড্ডা কথাটা আমার কাছে আলস্য মনে হয়। তবে যাঁরা লেখেন, যাঁরা চিন্তা করেন, তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগটা খুবই জরুরি, বিশেষ করে সমমনাদের মধ্যে।
মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ আমার কাছে প্রবলভাবে নাড়া দেওয়া প্রিয় মুহূর্ত। আমার কাছে মনে হতো, এটা অনেক দিনের একটা কঠিন রোগ, একটা দুঃসহ রোগ, সেটা কেটে গেল। যখন শুনলাম, তারা আত্মসমর্পণ করবে, ওই মুহূর্তটা বেশ নাড়া দেয়। আমি তো মনে করি, এটা একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এবং ওই মুহূর্তে আমি জড়িতও ছিলাম এই অর্থে যে, আমরা দেশের ভেতর অবরুদ্ধ ছিলাম। আমি জানতাম, আমার দুই রকমের বিপদ—আমি নাগরিক হিসেবে বাঙালি এবং আরেকটা বিপদ হচ্ছে—চিহ্নিত লোক হিসেবে টিক্কা খানের সমন বার্তা পেয়েছি, তারা খুঁজছে এবং এটা পরে প্রমাণিতও হয়েছে যে, ১৪ ডিসেম্বর আমার অনেক সহকর্মীবন্ধু শহীদ হয়েছেন। কিন্তু আমি বেঁচে গেছি। সেটা এ জন্য যে, আত্মগোপনে থাকায় আমার ঠিকানা তাদের জানা ছিল না। কাজেই আমি জানতাম, আমি দুভাবে বিপন্ন।
বিজয়ের ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে নির্দ্বিধায় বলতে পারি, আমরা অজস্র ত্যাগ-আত্মত্যাগে বিজয় ছিনিয়ে এনেছি সত্য; কিন্তু সেই বিজয়কে সর্বস্তরে এবং সব মানুষের দ্বারে পৌঁছে দিতে পারিনি। বিজয়ের ওই আনন্দ একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের পর আর এগোয়নি, ক্রমাগত পিছিয়ে পড়েছে। একটি গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়। অথচ কাঙ্ক্ষিত সেই স্বপ্নপূরণ গত ৫০ বছরে আর এগোল না। আমরা আশাবাদী বলেই প্রতিটি বিজয় দিবসে প্রত্যাশা রাখি কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নপূরণে। একটি বৈষম্যহীন, শ্রেণিহীন সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। সে জন্য আমাদের আরও ত্যাগস্বীকার করতে হবে, তা তো মিথ্যে নয়।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪