এ কে এম ফাহিম মাশরুর
আমাদের কাজ চাকরিপ্রত্যাশীদের নিয়ে। খুঁজে বের করার চেষ্টা করি কোথায় কাজের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে, কীভাবে একজন চাকরিপ্রত্যাশী তাঁর কাঙ্ক্ষিত চাকরিটা পেতে পারেন। এ দেশে জব সেক্টরের অবস্থা কেমন, নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে কি না, কোন ধরনের কাজের সুযোগ দিন দিন বাড়ছে ইত্যাদি প্রশ্নই আমরা শুনি।
কাজের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়, যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে বের হচ্ছেন, তাঁদের জন্য চাকরি পাওয়াটা দিন দিন খুবই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। যাঁরা স্নাতক শেষ করছেন কেবল, চাকরির ক্ষেত্রে তাঁদের চাহিদা অনেক কম। তাঁদের প্রায় ৬০ শতাংশই চাকরি পাচ্ছেন না; বরং যাঁরা উচ্চশিক্ষা না নিয়ে চাকরিতে ঢুকছেন, তাঁদের জন্য চাকরি পাওয়াটা অনেক সহজ। বলা যেতে পারে, যে চাকরির ক্ষেত্রে গ্র্যাজুয়েশন লাগে না, সেখানে অনেক কাজের সুযোগ। তাই যাঁরা কম শিক্ষিত, তাঁদের কাজ পেতে সমস্যা হয় না।
আরেকটু গভীরে গেলেই বিষয়টি ভালোভাবে বোঝা যাবে। আমাদের দেশে যেহেতু গার্মেন্টস খাত দিন দিন উন্নত হচ্ছে, তাই সেখানে এই অল্পশিক্ষিত মানুষের বিশাল কাজের সুযোগ থাকছে। কোভিডের পরে অন্যান্য খাতে কাজের সুযোগ কমে গেলেও পোশাকশিল্প খাতে চাহিদা কিন্তু কমেনি; বরং বাইরের দেশে আরও বেড়ে গেছে। এর অর্থ হলো, এই জব মার্কেট আরও বিস্তৃত হচ্ছে।
সেই সঙ্গে ইনফরমাল জব, যেমন ডেলিভারিম্যানের কথাই বলতে পারি। ঢাকা শহরে প্রতিনিয়ত ডেলিভারিম্যানের চাহিদা বেড়ে চলেছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেবা নিশ্চিত করার জন্য লাখ লাখ ডেলিভারিম্যানের দরকার হচ্ছে। অনেক কোম্পানি তাঁদের নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তাঁদের বেতনও ভালো, ২৫-৩০ হাজার টাকা। তাই বলব, কাজের সুযোগ আছে।
তবে চাকরির জন্য যাঁরা আবেদন করে থাকেন, তাঁদের বেশির ভাগই অফিস জবের জন্য বেশি সিভি দিয়ে থাকেন। আগেই বলেছি, এই চাকরিগুলোর সুযোগ অনেক কম; বরং বর্তমানে ফ্যাক্টরি জব বা ডেলিভারিম্যান—এ ধরনের কাজের সুযোগ অনেক বেশি। আগের মতো এখন টেলিকম কোম্পানি বা ব্যাংকগুলো বেশি লোকবল নিচ্ছে না। সরকারি জবও অনেক কম। আগে আমাদের এসএমই সেক্টরে একটা বড় অঙ্কের মানুষের কাজ করার সুযোগ ছিল। কিন্তু কোভিডের কারণে যেহেতু আমাদের এসএমই সেক্টরও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাই কোভিড-পরবর্তী সময়ে এখানেও নতুন কাজের ক্ষেত্র সেভাবে তৈরি হয়নি। এ জন্য যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করছেন, তাঁদের জন্য সুযোগটা অনেক কমে গেছে।
আবার দেখা যায়, আমাদের যে শিক্ষাব্যবস্থা, সেখানে শিক্ষার্থীরা খুব বেশি বাস্তব জ্ঞান নিয়ে বের হতে পারেন না। তাই চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান কাজের ক্ষেত্রে যে ধরনের তৈরি প্রার্থী খুঁজে থাকে, ঠিক সে রকমটা বেশির ভাগ সময়ই পায় না। এমন অনেক হয়, যখন চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট নিতে চায় এবং তাতে যে ধরনের স্কিলড চাওয়া হয়, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই থাকে না। বিষয়টা নিয়ে আসলে চাকরিদাতাদের এমনভাবে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হয়, যেখানে ধরেই নিতে হয় তারা যাঁদের নেবে, তাঁদের তিন থেকে চার মাস ট্রেনিং করানোর ব্যবস্থা করাতে হবে। ট্রেনিংয়ের সময় তাঁদের বেতন দিতে হবে। এখন সমস্যাটা হচ্ছে, চাকরিপ্রত্যাশীদের অনেক বেশি বেতনের আকাঙ্ক্ষা থাকে, যা চাকরিদাতারা দিতে পারে না। কারণ, তারা চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে শুরুতেই আউটপুট পাবে না। তাই ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদেরও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
এদিকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর পড়াশোনার কারিকুলামের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির চাহিদার মিল নেই। অর্থাৎ, ইন্ডাস্ট্রিতে যে ধরনের জ্ঞানসম্পন্ন লোকবল দরকার হয়, তা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তৈরি করতে পারে না। এটা আসলে কেবল বাংলাদেশের নয়, বরং সারা বিশ্বেরই সমস্যা। তবে অন্যান্য দেশ ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করে থাকে, যেখানে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন অফিসে কাজের অভিজ্ঞতা লাভ করে। বাংলাদেশে ইন্টার্নশিপের সুযোগ আসলে সেভাবে নেই। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজগুলোর পক্ষ থেকে সেভাবে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করা হয় না। যদি এই ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে দক্ষ জনবল তৈরি করা সম্ভব। তখন হয়তো চাকরিদাতারা ফ্রেশারদের নিতে আগ্রহী হবে।
একটু খেয়াল করলে দেখা যায়, আমাদের সমস্যাগুলো আসলে বহুমুখী। দেশের অনেক শিক্ষার্থী কিছু অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের ওপর অনেক বেশি পড়াশোনা করে থাকে, যেমন বিবিএ। দেশে এত বিবিএ পড়াশোনা করা লোকের দরকার নেই। এ মুহূর্তে টেকনিক্যাল বিষয়ে পড়াশোনা করা লোকের অনেক বেশি প্রয়োজন। কারণ, এই সেক্টরগুলো এখন উন্নত হচ্ছে। টেক্সটাইল বিষয়ের ওপর যাঁরা পড়াশোনা করেন, তাঁদের কিন্তু বসে থাকতে হয় না; বরং সঙ্গে সঙ্গেই চাকরি হয়ে যায়। এর কারণ হলো, বাজারে চাহিদা রয়েছে। আবার বিপরীত দিকে দেখা যায়, অনেকে ৭-৮ লাখ টাকা খরচ করে বিবিএ পাসের পরও অনেক সময় চাকরি পান না। এর কারণটা কী, সেটাও আমাদের বুঝতে হবে।
আমাদের অভিভাবকদেরও বুঝতে হবে, সাধারণ বিষয়ে পড়ানোর চেয়ে যদি টেকনিক্যাল বিষয়ে পড়াশোনা করানো হয়, সেটা অনেক ভালো হবে। কারণ, দিন দিন চাকরির বাজারে টেকনিক্যাল সাবজেক্টের চাহিদা বাড়ছে।
তাই চাকরিপ্রত্যাশীরা যেন মনে না করেন, শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ডিগ্রি দিয়েই চাকরি হয়ে যাবে। চাকরি পেতে হলে অবশ্যই কিছু বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। যাঁরা ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট, তাঁরা কত টাকা বেতন, সেদিকে যেন না তাকান। কম বেতন হলেও অভিজ্ঞতার জন্য চাকরিতে ঢুকে পড়তে হবে। তারপর যখন অভিজ্ঞতা হবে, তখন চাহিদা এমনিতেই বেড়ে যাবে। কিন্তু তাঁরা যদি প্রথমেই চিন্তা করেন, ২০-২৫ হাজার টাকা বেতন লাগবে, তা না হলে চাকরিতে ঢুকবেন না, সে ক্ষেত্রে বাস্তবিক অর্থে কোনো লাভ হবে না।
এভাবে যদি মাসের পর মাস বেকার থেকে যান, তাতে নিজেরই ক্ষতি। তাই কম বেতন হলেও যেকোনো একটা চাকরিতে ঢুকে পড়া উচিত, অভিজ্ঞতা অর্জন করা উচিত। দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেতন আপনা-আপনিই বেড়ে যাবে। বেতন চাওয়ার কিছু নেই, এখানে মুলামুলির সুযোগও কম। কারণ, প্রতিটি কোম্পানির নির্দিষ্ট কাঠামো থাকে। তাই বেতন চাইলেই যে কোম্পানি তাঁদের বেতন দিতে পারবে, এমনটা না-ও হতে পারে। যদি কেউ দক্ষ হন, তাহলে কোম্পানি তাঁকে এমনিতেই উচ্চ বেতন দেবে। কারণ, যোগ্য লোককে তাদের ধরে রাখতে হবে। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন, তিনি কাজ পারেন, তাহলে কোম্পানি তাঁকে নিজের স্বার্থেই বেশি বেতন দেবে।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা, বিডি জবস ও সাবেক সভাপতি, বেসিস
অনুলিখন: রোকনুজ্জামান মনি
আমাদের কাজ চাকরিপ্রত্যাশীদের নিয়ে। খুঁজে বের করার চেষ্টা করি কোথায় কাজের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে, কীভাবে একজন চাকরিপ্রত্যাশী তাঁর কাঙ্ক্ষিত চাকরিটা পেতে পারেন। এ দেশে জব সেক্টরের অবস্থা কেমন, নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে কি না, কোন ধরনের কাজের সুযোগ দিন দিন বাড়ছে ইত্যাদি প্রশ্নই আমরা শুনি।
কাজের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়, যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে বের হচ্ছেন, তাঁদের জন্য চাকরি পাওয়াটা দিন দিন খুবই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। যাঁরা স্নাতক শেষ করছেন কেবল, চাকরির ক্ষেত্রে তাঁদের চাহিদা অনেক কম। তাঁদের প্রায় ৬০ শতাংশই চাকরি পাচ্ছেন না; বরং যাঁরা উচ্চশিক্ষা না নিয়ে চাকরিতে ঢুকছেন, তাঁদের জন্য চাকরি পাওয়াটা অনেক সহজ। বলা যেতে পারে, যে চাকরির ক্ষেত্রে গ্র্যাজুয়েশন লাগে না, সেখানে অনেক কাজের সুযোগ। তাই যাঁরা কম শিক্ষিত, তাঁদের কাজ পেতে সমস্যা হয় না।
আরেকটু গভীরে গেলেই বিষয়টি ভালোভাবে বোঝা যাবে। আমাদের দেশে যেহেতু গার্মেন্টস খাত দিন দিন উন্নত হচ্ছে, তাই সেখানে এই অল্পশিক্ষিত মানুষের বিশাল কাজের সুযোগ থাকছে। কোভিডের পরে অন্যান্য খাতে কাজের সুযোগ কমে গেলেও পোশাকশিল্প খাতে চাহিদা কিন্তু কমেনি; বরং বাইরের দেশে আরও বেড়ে গেছে। এর অর্থ হলো, এই জব মার্কেট আরও বিস্তৃত হচ্ছে।
সেই সঙ্গে ইনফরমাল জব, যেমন ডেলিভারিম্যানের কথাই বলতে পারি। ঢাকা শহরে প্রতিনিয়ত ডেলিভারিম্যানের চাহিদা বেড়ে চলেছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেবা নিশ্চিত করার জন্য লাখ লাখ ডেলিভারিম্যানের দরকার হচ্ছে। অনেক কোম্পানি তাঁদের নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তাঁদের বেতনও ভালো, ২৫-৩০ হাজার টাকা। তাই বলব, কাজের সুযোগ আছে।
তবে চাকরির জন্য যাঁরা আবেদন করে থাকেন, তাঁদের বেশির ভাগই অফিস জবের জন্য বেশি সিভি দিয়ে থাকেন। আগেই বলেছি, এই চাকরিগুলোর সুযোগ অনেক কম; বরং বর্তমানে ফ্যাক্টরি জব বা ডেলিভারিম্যান—এ ধরনের কাজের সুযোগ অনেক বেশি। আগের মতো এখন টেলিকম কোম্পানি বা ব্যাংকগুলো বেশি লোকবল নিচ্ছে না। সরকারি জবও অনেক কম। আগে আমাদের এসএমই সেক্টরে একটা বড় অঙ্কের মানুষের কাজ করার সুযোগ ছিল। কিন্তু কোভিডের কারণে যেহেতু আমাদের এসএমই সেক্টরও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাই কোভিড-পরবর্তী সময়ে এখানেও নতুন কাজের ক্ষেত্র সেভাবে তৈরি হয়নি। এ জন্য যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করছেন, তাঁদের জন্য সুযোগটা অনেক কমে গেছে।
আবার দেখা যায়, আমাদের যে শিক্ষাব্যবস্থা, সেখানে শিক্ষার্থীরা খুব বেশি বাস্তব জ্ঞান নিয়ে বের হতে পারেন না। তাই চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান কাজের ক্ষেত্রে যে ধরনের তৈরি প্রার্থী খুঁজে থাকে, ঠিক সে রকমটা বেশির ভাগ সময়ই পায় না। এমন অনেক হয়, যখন চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট নিতে চায় এবং তাতে যে ধরনের স্কিলড চাওয়া হয়, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই থাকে না। বিষয়টা নিয়ে আসলে চাকরিদাতাদের এমনভাবে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হয়, যেখানে ধরেই নিতে হয় তারা যাঁদের নেবে, তাঁদের তিন থেকে চার মাস ট্রেনিং করানোর ব্যবস্থা করাতে হবে। ট্রেনিংয়ের সময় তাঁদের বেতন দিতে হবে। এখন সমস্যাটা হচ্ছে, চাকরিপ্রত্যাশীদের অনেক বেশি বেতনের আকাঙ্ক্ষা থাকে, যা চাকরিদাতারা দিতে পারে না। কারণ, তারা চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে শুরুতেই আউটপুট পাবে না। তাই ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদেরও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
এদিকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর পড়াশোনার কারিকুলামের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির চাহিদার মিল নেই। অর্থাৎ, ইন্ডাস্ট্রিতে যে ধরনের জ্ঞানসম্পন্ন লোকবল দরকার হয়, তা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তৈরি করতে পারে না। এটা আসলে কেবল বাংলাদেশের নয়, বরং সারা বিশ্বেরই সমস্যা। তবে অন্যান্য দেশ ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করে থাকে, যেখানে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন অফিসে কাজের অভিজ্ঞতা লাভ করে। বাংলাদেশে ইন্টার্নশিপের সুযোগ আসলে সেভাবে নেই। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজগুলোর পক্ষ থেকে সেভাবে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করা হয় না। যদি এই ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে দক্ষ জনবল তৈরি করা সম্ভব। তখন হয়তো চাকরিদাতারা ফ্রেশারদের নিতে আগ্রহী হবে।
একটু খেয়াল করলে দেখা যায়, আমাদের সমস্যাগুলো আসলে বহুমুখী। দেশের অনেক শিক্ষার্থী কিছু অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের ওপর অনেক বেশি পড়াশোনা করে থাকে, যেমন বিবিএ। দেশে এত বিবিএ পড়াশোনা করা লোকের দরকার নেই। এ মুহূর্তে টেকনিক্যাল বিষয়ে পড়াশোনা করা লোকের অনেক বেশি প্রয়োজন। কারণ, এই সেক্টরগুলো এখন উন্নত হচ্ছে। টেক্সটাইল বিষয়ের ওপর যাঁরা পড়াশোনা করেন, তাঁদের কিন্তু বসে থাকতে হয় না; বরং সঙ্গে সঙ্গেই চাকরি হয়ে যায়। এর কারণ হলো, বাজারে চাহিদা রয়েছে। আবার বিপরীত দিকে দেখা যায়, অনেকে ৭-৮ লাখ টাকা খরচ করে বিবিএ পাসের পরও অনেক সময় চাকরি পান না। এর কারণটা কী, সেটাও আমাদের বুঝতে হবে।
আমাদের অভিভাবকদেরও বুঝতে হবে, সাধারণ বিষয়ে পড়ানোর চেয়ে যদি টেকনিক্যাল বিষয়ে পড়াশোনা করানো হয়, সেটা অনেক ভালো হবে। কারণ, দিন দিন চাকরির বাজারে টেকনিক্যাল সাবজেক্টের চাহিদা বাড়ছে।
তাই চাকরিপ্রত্যাশীরা যেন মনে না করেন, শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ডিগ্রি দিয়েই চাকরি হয়ে যাবে। চাকরি পেতে হলে অবশ্যই কিছু বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। যাঁরা ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট, তাঁরা কত টাকা বেতন, সেদিকে যেন না তাকান। কম বেতন হলেও অভিজ্ঞতার জন্য চাকরিতে ঢুকে পড়তে হবে। তারপর যখন অভিজ্ঞতা হবে, তখন চাহিদা এমনিতেই বেড়ে যাবে। কিন্তু তাঁরা যদি প্রথমেই চিন্তা করেন, ২০-২৫ হাজার টাকা বেতন লাগবে, তা না হলে চাকরিতে ঢুকবেন না, সে ক্ষেত্রে বাস্তবিক অর্থে কোনো লাভ হবে না।
এভাবে যদি মাসের পর মাস বেকার থেকে যান, তাতে নিজেরই ক্ষতি। তাই কম বেতন হলেও যেকোনো একটা চাকরিতে ঢুকে পড়া উচিত, অভিজ্ঞতা অর্জন করা উচিত। দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেতন আপনা-আপনিই বেড়ে যাবে। বেতন চাওয়ার কিছু নেই, এখানে মুলামুলির সুযোগও কম। কারণ, প্রতিটি কোম্পানির নির্দিষ্ট কাঠামো থাকে। তাই বেতন চাইলেই যে কোম্পানি তাঁদের বেতন দিতে পারবে, এমনটা না-ও হতে পারে। যদি কেউ দক্ষ হন, তাহলে কোম্পানি তাঁকে এমনিতেই উচ্চ বেতন দেবে। কারণ, যোগ্য লোককে তাদের ধরে রাখতে হবে। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন, তিনি কাজ পারেন, তাহলে কোম্পানি তাঁকে নিজের স্বার্থেই বেশি বেতন দেবে।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা, বিডি জবস ও সাবেক সভাপতি, বেসিস
অনুলিখন: রোকনুজ্জামান মনি
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪