অনুপম হায়াৎ
চলচ্চিত্র হলো স্বপ্নের দেশ। পাশ্চাত্যে এর আবিষ্কার। আমাদের দেশে সেই ১৮৯৮ সালে ঢাকায় প্রথম চলচ্চিত্র দেখানো হয়। মানিকগঞ্জের হীরালাল সেন কলকাতায় প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। উপমহাদেশের চলচ্চিত্রের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় তাঁকে। তাই বলা যায়, এই বাংলার সঙ্গে চলচ্চিত্রের যোগসূত্র শুরু থেকেই। চলচ্চিত্র নির্মাণের আগেই অবশ্য এখানে সিনেমা হল গড়ে ওঠে। বেশির ভাগ সময় চলত বিদেশি ছবি। ইউরোপ-আমেরিকার পাশাপাশি ভারতের ছবি চলত এ দেশে। এখানে নিজস্ব ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠে আরও অনেক পরে। অন্যান্য দেশের গল্প, কাহিনি, সংস্কৃতির সঙ্গে মানুষের ব্যাপকভাবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয় সিনেমার মাধ্যমে।
ঢাকায় প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন নবাব পরিবারের কয়েকজন সংস্কৃতিমনা তরুণ। এই তরুণেরাই ২০-এর দশকের শেষ দিকে ঢাকায় গড়ে তোলেন ‘ঢাকা ইস্ট বেঙ্গল সিনেমাটোগ্রাফ সোসাইটি’ নামের একটি সংগঠন। তাঁদের হাত ধরেই নির্মিত হয় ঢাকার প্রথম চলচ্চিত্র ‘দ্য লাস্ট কিস’। ১৯৩১ সালে মুক্তি পায় ছবিটি।
এটা ছিল একটা বড় পদক্ষেপ। আমি একে যুদ্ধ বলে অভিহিত করব। নিজস্ব কোনো স্টুডিও নেই, ক্যামেরা নেই, কলাকুশলী নেই—এমন অবস্থায় নবাব পরিবারের তরুণেরা ঝুঁকি নিলেন। সেখানে হিন্দু-মুসলিম সম্মিলিতভাবে কাজটি করেছেন। এটা একটা সম্প্রীতিরও লক্ষণ। ছবিটির পরিচালক অম্বুজপ্রসন্ন গুপ্ত। তিনি জগন্নাথ কলেজের তৎকালীন ক্রীড়াশিক্ষক ছিলেন। নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন ঢাকা নবাব পরিবারের সদস্য খাজা আজমল, আর নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন ললিতা। ললিতা ছিলেন বাদামতলী পতিতালয়ের বাসিন্দা। পতিতালয়ের আরও অনেকেই ছবিটিতে অভিনয় করেন।
তত দিনে কলকাতায় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে। অনেকেই কলকাতার চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত হন। কলকাতা ছিল তখন ভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক রাজধানী। বাংলাদেশ থেকে গিয়েছিলেন ফতেহ লোহানি, ওবায়দুল হক, আনোয়ারা খাতুন প্রমুখ। তখন তো শেরে বাংলাকেও রাজনীতি করতে কলকাতায় যেতে হতো। চাঁদপুরের নাসিরউদ্দিনকে পত্রিকা বের করার জন্য কলকাতায় যেতে হতো।
সাতচল্লিশোত্তর পরিবেশে এই বাংলায় চলচ্চিত্র নির্মাণের কথা ভাবা হয়। রাজনৈতিক, সামাজিক কিংবা সাংস্কৃতিকভাবে এই অঞ্চল যে অবহেলিত ছিল, সেই অবহেলা থেকে উত্তরণের জন্য ’৪৭ একটা সুযোগ সৃষ্টি করে দিল। যদিও শোষক পাকিস্তানি সরকার বরাবরই বাঙালির শিল্প, সাহিত্যর মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। পূর্ববঙ্গ নিয়ে এটাই যেন ছিল তাঁদের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা।
ভাষা আন্দোলনের চেতনা থেকেই একটা নব উদ্দীপনা তৈরি হয়। সেই চেতনা থেকেই মনে করা হয় এখানে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা উচিত। আব্বাসউদ্দিন আহমেদ, আব্দুল জব্বার খানসহ আরও অনেকেই এই বাংলায় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি গড়ার চেষ্টা করলেন। বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র আব্দুল জব্বার খান পরিচালিত ‘মুখ ও মুখোশ’ মুক্তি পায় ১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট। এই বাংলায় তখন কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই ছবি নির্মাণের। একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই ছবি নির্মাণ করলেন আব্দুল জব্বার খান ও তাঁর সঙ্গীরা। এই সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ব্যাপক পরিবর্তন শুরু হলো। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে চলচ্চিত্র-ভাষার গতিতেও পরিবর্তন আসা শুরু হলো। ভাষা আন্দোলনের সময় শহীদদের স্মরণে এই অঞ্চলে যত সিনেমা হল ছিল, তা বন্ধ রাখা হয়েছিল।
এর আগে ১৯৫৩-৫৪ সালের দিকে এই অঞ্চলে প্রাদেশিক সরকারের ফিল্ম ডিভিশন তৈরি হয়। এর প্রধান হলেন নাজির আহমেদ। তিনি বিবিসিতে কাজ করতেন। এই অঞ্চল নিয়ে তিনি বেশ কিছু ডকুমেন্টারি তৈরি করেন। ফিল্ম ডিভিশন তৈরি হওয়ার পর তিনি স্বপ্ন দেখলেন এখানে ইন্ডাস্ট্রি করার। ইন্ডাস্ট্রি করতে হলে তো স্টুডিও দরকার। পশ্চিমবঙ্গ ও লাহোরে যেভাবে ছবি হচ্ছিল, তাতে করে এখানেও একটি ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল। বঙ্গবন্ধু যখন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী হলেন, নাজির আহমেদ তাঁর সঙ্গে দেখা করলেন স্টুডিওর ব্যাপারে কথা বলার জন্য। নাজির আহমেদ ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ব্যাচমেট। তাঁরা একসঙ্গে ইসলামিয়া কলেজে পড়েছেন। বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিকভাবেই এই পরামর্শটা গ্রহণ করলেন। বঙ্গবন্ধু জানতেন সিনেমাও মুক্তির অন্যতম বড় হাতিয়ার হয়ে উঠবে। নাজির আহমেদও কিন্তু এই বাংলার শিল্প-সংস্কৃতি বা চলচ্চিত্রের খুবই গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। তিনি ‘নজরুলগীতি’ ও ‘নজরুলসংগীত’ শব্দ দুটির প্রচলন শুরু করেন। এর আগে বলা হতো নজরুলের গান। ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বরে তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার।
তৎকালীন শিল্প দপ্তরের সচিব আজগর আলী শাহ্ ও উপসচিব আবুল খায়ের বিষয়টি শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে উত্থাপন করেন। তাঁরই নির্দেশে শিল্প দপ্তর সচিব আবুল খায়ের ও নাজির আহমেদ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা বিলের যাবতীয় কাগজপত্র তৈরি করে বঙ্গবন্ধুর কাছে উপস্থাপন করেন। প্রাদেশিক পরিষদের শেষ অধিবেশনের দিন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধু এই বিল উত্থাপন করেন। ১৯৫৭ সালে ৩ এপ্রিল প্রাদেশিক আইন পরিষদের অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু এফডিসির বিলটি উত্থাপন করেন এবং কোনো ধরনের আপত্তি ছাড়াই এফডিসি বিলটি পাস হয়। ১৯৫৭ সালে এফডিসি প্রতিষ্ঠা হলে নাজির আহমেদ প্রথম অপারেটিভ ডিরেক্টর হন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন আবুল খায়ের। মাত্র দেড় বছরের মধ্যে নাজির আহমেদ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় স্বয়ংসম্পূর্ণ ও উন্নত মানের একটি চলচ্চিত্র স্টুডিও তৈরি করতে সক্ষম হন। নাজির আহমেদ ১৯৬২ সাল পর্যন্ত এফডিসিতে কর্মরত ছিলেন। এফডিসি প্রতিষ্ঠার পর বিশিষ্ট কবি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিল্পী, চলচ্চিত্রকার, কাহিনিকার, চিত্রগ্রাহক ও পরিচালকের আগমনে মুখরিত হয় আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প। প্রতিষ্ঠার পর ‘আসিয়া’, ‘আকাশ আর মাটি’, ‘মাটির পাহাড়’, ‘জাগো হুয়া সাভেরা’, ‘এদেশ তোমার আমার’ নামের বাংলা ছবিগুলো এফডিসি কর্তৃক নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়। এই সময় পশ্চিম পাকিস্তানিরাও এখানে ‘হামসফর’ নামে একটা ছবি নির্মাণ করেন। ছবিটির নায়িকা ছিলেন আমাদের সুমিতা দেবী।
পরের পর্ব পড়ুন আগামীকাল
অনুপম হায়াৎ: চলচ্চিত্র গবেষক ও বিশ্লেষক। চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সাবেক সদস্য।
অনুলিখন: মীর রাকিব হাসান
চলচ্চিত্র হলো স্বপ্নের দেশ। পাশ্চাত্যে এর আবিষ্কার। আমাদের দেশে সেই ১৮৯৮ সালে ঢাকায় প্রথম চলচ্চিত্র দেখানো হয়। মানিকগঞ্জের হীরালাল সেন কলকাতায় প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। উপমহাদেশের চলচ্চিত্রের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় তাঁকে। তাই বলা যায়, এই বাংলার সঙ্গে চলচ্চিত্রের যোগসূত্র শুরু থেকেই। চলচ্চিত্র নির্মাণের আগেই অবশ্য এখানে সিনেমা হল গড়ে ওঠে। বেশির ভাগ সময় চলত বিদেশি ছবি। ইউরোপ-আমেরিকার পাশাপাশি ভারতের ছবি চলত এ দেশে। এখানে নিজস্ব ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠে আরও অনেক পরে। অন্যান্য দেশের গল্প, কাহিনি, সংস্কৃতির সঙ্গে মানুষের ব্যাপকভাবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হয় সিনেমার মাধ্যমে।
ঢাকায় প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন নবাব পরিবারের কয়েকজন সংস্কৃতিমনা তরুণ। এই তরুণেরাই ২০-এর দশকের শেষ দিকে ঢাকায় গড়ে তোলেন ‘ঢাকা ইস্ট বেঙ্গল সিনেমাটোগ্রাফ সোসাইটি’ নামের একটি সংগঠন। তাঁদের হাত ধরেই নির্মিত হয় ঢাকার প্রথম চলচ্চিত্র ‘দ্য লাস্ট কিস’। ১৯৩১ সালে মুক্তি পায় ছবিটি।
এটা ছিল একটা বড় পদক্ষেপ। আমি একে যুদ্ধ বলে অভিহিত করব। নিজস্ব কোনো স্টুডিও নেই, ক্যামেরা নেই, কলাকুশলী নেই—এমন অবস্থায় নবাব পরিবারের তরুণেরা ঝুঁকি নিলেন। সেখানে হিন্দু-মুসলিম সম্মিলিতভাবে কাজটি করেছেন। এটা একটা সম্প্রীতিরও লক্ষণ। ছবিটির পরিচালক অম্বুজপ্রসন্ন গুপ্ত। তিনি জগন্নাথ কলেজের তৎকালীন ক্রীড়াশিক্ষক ছিলেন। নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন ঢাকা নবাব পরিবারের সদস্য খাজা আজমল, আর নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন ললিতা। ললিতা ছিলেন বাদামতলী পতিতালয়ের বাসিন্দা। পতিতালয়ের আরও অনেকেই ছবিটিতে অভিনয় করেন।
তত দিনে কলকাতায় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে। অনেকেই কলকাতার চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত হন। কলকাতা ছিল তখন ভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক রাজধানী। বাংলাদেশ থেকে গিয়েছিলেন ফতেহ লোহানি, ওবায়দুল হক, আনোয়ারা খাতুন প্রমুখ। তখন তো শেরে বাংলাকেও রাজনীতি করতে কলকাতায় যেতে হতো। চাঁদপুরের নাসিরউদ্দিনকে পত্রিকা বের করার জন্য কলকাতায় যেতে হতো।
সাতচল্লিশোত্তর পরিবেশে এই বাংলায় চলচ্চিত্র নির্মাণের কথা ভাবা হয়। রাজনৈতিক, সামাজিক কিংবা সাংস্কৃতিকভাবে এই অঞ্চল যে অবহেলিত ছিল, সেই অবহেলা থেকে উত্তরণের জন্য ’৪৭ একটা সুযোগ সৃষ্টি করে দিল। যদিও শোষক পাকিস্তানি সরকার বরাবরই বাঙালির শিল্প, সাহিত্যর মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। পূর্ববঙ্গ নিয়ে এটাই যেন ছিল তাঁদের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা।
ভাষা আন্দোলনের চেতনা থেকেই একটা নব উদ্দীপনা তৈরি হয়। সেই চেতনা থেকেই মনে করা হয় এখানে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা উচিত। আব্বাসউদ্দিন আহমেদ, আব্দুল জব্বার খানসহ আরও অনেকেই এই বাংলায় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি গড়ার চেষ্টা করলেন। বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র আব্দুল জব্বার খান পরিচালিত ‘মুখ ও মুখোশ’ মুক্তি পায় ১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট। এই বাংলায় তখন কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই ছবি নির্মাণের। একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই ছবি নির্মাণ করলেন আব্দুল জব্বার খান ও তাঁর সঙ্গীরা। এই সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ব্যাপক পরিবর্তন শুরু হলো। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে চলচ্চিত্র-ভাষার গতিতেও পরিবর্তন আসা শুরু হলো। ভাষা আন্দোলনের সময় শহীদদের স্মরণে এই অঞ্চলে যত সিনেমা হল ছিল, তা বন্ধ রাখা হয়েছিল।
এর আগে ১৯৫৩-৫৪ সালের দিকে এই অঞ্চলে প্রাদেশিক সরকারের ফিল্ম ডিভিশন তৈরি হয়। এর প্রধান হলেন নাজির আহমেদ। তিনি বিবিসিতে কাজ করতেন। এই অঞ্চল নিয়ে তিনি বেশ কিছু ডকুমেন্টারি তৈরি করেন। ফিল্ম ডিভিশন তৈরি হওয়ার পর তিনি স্বপ্ন দেখলেন এখানে ইন্ডাস্ট্রি করার। ইন্ডাস্ট্রি করতে হলে তো স্টুডিও দরকার। পশ্চিমবঙ্গ ও লাহোরে যেভাবে ছবি হচ্ছিল, তাতে করে এখানেও একটি ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল। বঙ্গবন্ধু যখন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী হলেন, নাজির আহমেদ তাঁর সঙ্গে দেখা করলেন স্টুডিওর ব্যাপারে কথা বলার জন্য। নাজির আহমেদ ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ব্যাচমেট। তাঁরা একসঙ্গে ইসলামিয়া কলেজে পড়েছেন। বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিকভাবেই এই পরামর্শটা গ্রহণ করলেন। বঙ্গবন্ধু জানতেন সিনেমাও মুক্তির অন্যতম বড় হাতিয়ার হয়ে উঠবে। নাজির আহমেদও কিন্তু এই বাংলার শিল্প-সংস্কৃতি বা চলচ্চিত্রের খুবই গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। তিনি ‘নজরুলগীতি’ ও ‘নজরুলসংগীত’ শব্দ দুটির প্রচলন শুরু করেন। এর আগে বলা হতো নজরুলের গান। ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বরে তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার।
তৎকালীন শিল্প দপ্তরের সচিব আজগর আলী শাহ্ ও উপসচিব আবুল খায়ের বিষয়টি শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে উত্থাপন করেন। তাঁরই নির্দেশে শিল্প দপ্তর সচিব আবুল খায়ের ও নাজির আহমেদ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা বিলের যাবতীয় কাগজপত্র তৈরি করে বঙ্গবন্ধুর কাছে উপস্থাপন করেন। প্রাদেশিক পরিষদের শেষ অধিবেশনের দিন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধু এই বিল উত্থাপন করেন। ১৯৫৭ সালে ৩ এপ্রিল প্রাদেশিক আইন পরিষদের অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু এফডিসির বিলটি উত্থাপন করেন এবং কোনো ধরনের আপত্তি ছাড়াই এফডিসি বিলটি পাস হয়। ১৯৫৭ সালে এফডিসি প্রতিষ্ঠা হলে নাজির আহমেদ প্রথম অপারেটিভ ডিরেক্টর হন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন আবুল খায়ের। মাত্র দেড় বছরের মধ্যে নাজির আহমেদ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় স্বয়ংসম্পূর্ণ ও উন্নত মানের একটি চলচ্চিত্র স্টুডিও তৈরি করতে সক্ষম হন। নাজির আহমেদ ১৯৬২ সাল পর্যন্ত এফডিসিতে কর্মরত ছিলেন। এফডিসি প্রতিষ্ঠার পর বিশিষ্ট কবি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিল্পী, চলচ্চিত্রকার, কাহিনিকার, চিত্রগ্রাহক ও পরিচালকের আগমনে মুখরিত হয় আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প। প্রতিষ্ঠার পর ‘আসিয়া’, ‘আকাশ আর মাটি’, ‘মাটির পাহাড়’, ‘জাগো হুয়া সাভেরা’, ‘এদেশ তোমার আমার’ নামের বাংলা ছবিগুলো এফডিসি কর্তৃক নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়। এই সময় পশ্চিম পাকিস্তানিরাও এখানে ‘হামসফর’ নামে একটা ছবি নির্মাণ করেন। ছবিটির নায়িকা ছিলেন আমাদের সুমিতা দেবী।
পরের পর্ব পড়ুন আগামীকাল
অনুপম হায়াৎ: চলচ্চিত্র গবেষক ও বিশ্লেষক। চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সাবেক সদস্য।
অনুলিখন: মীর রাকিব হাসান
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪