আশরাফ-উল-আলম, ঢাকা
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর সাড়ে ৪টা/৫টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আক্রমণ করে উচ্চাভিলাষী কতিপয় সেনা কর্মকর্তা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী (আবাসিক) মহিতুল ইসলাম। তিনি ওই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তৎকালীন পুলিশের বিশেষ শাখার উপ পুলিশ সুপার (ডিএসপি) নুরুল ইসলাম (পরবর্তীতে এসপি), বঙ্গবন্ধুর সেনারক্ষী হাবিলদার কুদ্দুস সিকদার, নায়েক সুবেদার আবদুল গনি, সেনাসদস্য সোহরাব আলী প্রমুখ। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর বাড়ির গৃহকর্মী আবদুর রহমান রমা ও সেলিমও প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁরা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দেন। তাঁদের বর্ণনায় জানা যায়, কী ঘটেছিল সেই রাতে।
বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম ঘটনার পর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর কেউ কিছু করতে পারছে না। চারদিকে থমথমে অবস্থা। কিছুদিন নিশ্চুপ থাকেন তিনি। কিন্তু প্রতিনিয়তই মনে হতে থাকে যে, অত্যন্ত নির্মম ও নৃশংস সেই হত্যাকাণ্ড, যা তিনি দেখেছেন, তার বিচার না হলে সেটা হবে জাতির জন্য কলঙ্কজনক। ঘটনার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর তিনি ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে মহিতুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, তিনি ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঘুমিয়েছিলেন। ১৪ আগস্ট রাত ৮/৯ টার দিকে বঙ্গবন্ধু বাসায় ফেরেন। তাঁর সঙ্গেও রক্ষীরা চলে যান। রাত ১টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু বাড়িতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে গল্প করেন। এর পর তিনি শুতে যান। ভোর আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে বঙ্গবন্ধু টেলিফোন অপারেটরকে ফোন দেন। অপারেটর আবদুল মতিন ফোন ধরেন। মহিতুল ইসলামকে ডেকে তোলেন মতিন। মহিতুল ফোন ধরলে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সেরনিয়াবাতের (আব্দুর রব সেরনিয়াবাত) বাসায় দুষ্কৃতকারীরা আক্রমণ করছে। জলদি পুলিশ কন্ট্রোল রুমে লাগা।’
সঙ্গে সঙ্গে মহিতুল পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু লাইন না পাওয়ায় গণভবনে ফোন করেন। সেখানে টেলিফোন রিসিভ করলেও কেউ কথা বলেনি। এ সময় বঙ্গবন্ধু দোতলা থেকে নিচে নেমে আসেন। মহিতুল ‘হ্যালো হ্যালো’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু মহিতুলের হাত থেকে রিসিভার নিয়ে বলে, ‘আমি প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব বলছি।’ ঠিক সেই মুহূর্তে এক ঝাঁক গুলি জানালার কাচ ভেঙে অফিস ঘরের দেয়ালে লাগে। অনর্গল গুলি আসতে থাকে। বঙ্গবন্ধু টেবিলের পাশে শুয়ে পড়েন। মহিতুলকেও শুয়ে পড়তে বলেন। কিছুক্ষণ পর গুলি বন্ধ হয়। ওপর থেকে বঙ্গবন্ধুর কাজের ছেলে পাঞ্জাবি ও চশমা নিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধু তা পরেন। পরে তিনি বারান্দায় যান। তিনি বলেন, ‘আর্মি সেন্ট্রি, পুলিশ সেন্ট্রি এত গুলি চলছে, তোমরা কী করো?’ এই বলে বঙ্গবন্ধু ওপরে উঠে যান। এরপরই শেখ কামাল নিচে বারান্দায় আসেন। তিনি বলেন, ‘আর্মি, পুলিশ ভাই আপনারা আমার সঙ্গে আসেন।’ বলার সঙ্গে সঙ্গে তিন-চারজন কালো ও খাকি পোশাক পরা লোক অস্ত্রসহ শেখ কামালের সামনে এসে দাঁড়ান। ডিএসপি নুরুল ইসলাম ও মহিতুল পেছনে ছিলেন। এ সময় মেজর বজলুল হুদা শেখ কামালকে গুলি করেন। শেখ কামাল পড়ে গিয়েও বলেন, ‘আমি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল।’ ওরা সঙ্গে সঙ্গে কামালকে আবার গুলি করে। তিনি সেখানেই মারা যান। ডিএসপি নুরুল ইসলাম ও মহিতুলকে চুল ধরে টেনে নিয়ে বাড়ির মূল ফটকে লাইনে দাঁড় করানো হয়। সেখানে পুলিশের লোক ও টেলিফোন অপারেটর মতিনকেও দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসেরকেও সেখানে দাঁড় করানো হয়। রান্না ঘর থেকে বুড়ি (গৃহকর্মী) ও রাখাল আজিজকেও নিয়ে আসা হয়। অস্ত্রধারী লোকেরা গুলি করতে করতে ওপরে ওঠে। এ সময় বঙ্গবন্ধুর উচ্চকণ্ঠ শোনা যায়।
মূল ফটকের লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা শেখ নাসের খুনিদের বলেন, ‘স্যার আমি তো রাজনীতি করি না। আমি ব্যবসা-বাণিজ্য করে খাই।’ তখন পাশে দাঁড়ানো একজন অস্ত্রধারী বলেন, ‘শেখ মুজিব ইজ ব্যাটার দ্যান নাসের।’ আরেকজন বলেন, ‘ঠিক আছে নাসের সাহেব পাশের রুমে গিয়ে বসেন।’ নাসের পাশের কক্ষে যান। একটু পরই তাঁকে সেখানে গুলি করে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর আগে শেখ নাসের পানি চান। কিন্তু তাঁকে পানি না দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করতে আবার গুলি করা হয়। তিনি মারা যান। এ সময় শিশু রাসেল ও গৃহকর্মী রমাকে নিচে নিয়ে আসা হয়। শিশু রাসেল রমা ও মহিতুলকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে। সে বলে, ‘ভাইয়া আমাকে মারবে না তো। পরে খাকি পোশাকধারী একজন জোর করে রাসেলকে নিয়ে যায়। রাসেল মায়ের কাছে যেতে চায়। মায়ের কাছে নেওয়ার কথা বলে তাকে ভেতরে নিয়ে যায়। একটু পরই গুলির শব্দ শোনা যায়। এদিকে ওপরের তলায় বঙ্গবন্ধু, শেখ ফজিলাতুন্নেছা, শেখ জামাল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী ও এসবির একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে ঘাতকেরা।
মহিতুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, মেজর ফারুক, মেজর নুর, মেজর ডালিম, মেজর বজলুল হুদাকে তিনি হত্যাকাণ্ডের সময় অন্যদের সঙ্গে ৩২ নম্বরের বাড়িতে দেখেছেন। হত্যাকাণ্ড শেষ হওয়ার পর বাড়ির মূল ফটকের কাছে বজলুল হুদা মেজর ফারুককে বলেন, ‘অল আর ফিনিশড।’ পুরো ঘটনার সময় বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে দিয়ে ট্যাংক যাওয়া-আসা করে। ট্যাংকের ওপর সেনাবাহিনীর লোকজন ছিল।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম (তৎকালীন ডিএসবির প্রোটেকশন ফোর্স হিসেবে বঙ্গবন্ধুর বাসার গার্ডদের চার্জে ছিলেন) সাক্ষ্যে বলেন, ১৪ আগস্ট দিবাগত রাত আনুমানিক ১টার সময় তিনি ও একজন পুলিশ সার্জেন্ট বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে নিচের তলার বৈঠকখানায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর পিএ কাম রিসেপশনিস্ট মহিতুল ইসলাম সেখানে ছিলেন। ভোর আনুমানিক ৫টার সময় দোতলা থেকে বঙ্গবন্ধুর গলার আওয়াজ শুনতে পান তিনি। এর পর মহিতুলের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি ঘটনার বর্ণনা দেন।
হত্যার আগে বঙ্গবন্ধু খুনিদের প্রশ্ন করেন, ‘তোরা কী চাস?’—এমন বর্ণনা এসেছে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে কাজ করা আবদুর রহমান শেখ রমার সাক্ষ্য থেকে। বঙ্গবন্ধু নিচে নামার পর আবার ওপরে ওঠার বর্ণনা দিয়ে রমা বলেন, ‘একসময় বঙ্গবন্ধু তাঁর শোয়ার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। কিছুক্ষণের জন্য গোলাগুলি থেমে যায়। এর পর বঙ্গবন্ধু বের হন। তাঁকে খুনিরা ঘিরে ধরে। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তোরা কী চাস? আমাকে কোথায় নিয়ে যাবি?’ খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে সিঁড়িতে নিয়ে যায়। সিঁড়ির দুই-তিন ধাপ নেওয়ার পর তাঁকে গুলি করা হয়। রমা তখন বঙ্গবন্ধুর পেছনে ছিলেন। খুনিরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুই কে?’ রমা উত্তর দেন, তিনি এ বাসায় কাজ করেন। তাঁকে তারা বলে, ‘তুই ওপরে যা।’ রমা ওপরে গিয়ে বেগম মুজিবকে বলেন, ‘আম্মা আর্মিরা সাহেবকে গুলি করেছে।’ বেগম মুজিব এ সময় বাড়ির অন্য সবাইকে নিয়ে বাথরুমে আশ্রয় নেন। পরে বেগম মুজিব বলেন, ‘মরলে সবাই একসঙ্গে মরব। তোরা বের হয়ে আয়।’ এর আগেই খুনিরা বেগম মুজিবের কক্ষে ধাক্কা মারে। বেগম মুজিব বের হয়ে আসেন। সবাই তখন তাঁকে নিচে নামানোর চেষ্টা করে। বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখে তিনি চিৎকার করেন। বলেন, ‘আমি নিচে যাব না। আমাকে এখনেই মেরে ফেল।’ এর পর সবাইকে দোতলায় নিয়ে যায়। সবাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সেই দিন বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের আরেক গৃহকর্মী সেলিম শয়নকক্ষের সামনে করিডরে ঘুমিয়ে ছিলেন। গোলাগুলির শব্দে তিনি শেখ কামালের কক্ষের বাথরুমে আশ্রয় নেন। উঁকি দিয়ে ঘটনা দেখতে গেলে তাঁকে টেনে বাইরে এনে গুলি করা হয়। তাঁকে টেনে বঙ্গবন্ধুর সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু এ সময় বলেন, ‘ছেলেটি অনেক দিন আমার কাছে আছে। তাকে কে গুলি করল। তোরা কেন বেয়াদবি করছিস?’ এরপরই বঙ্গবন্ধুকে গুলি করা হয়।
নারীদের আর্ত চিৎকার
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বেগম মুজিবসহ বাড়ির নারীদের নিচে নামানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বেগম মুজিব সিঁড়িতেই তাঁদের মারতে বলেন। খুনিরা এ সময় তাঁদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর শয়নকক্ষে নিয়ে যান। এর পর তাঁদের গুলি করা হয়। এ সময় আর্ত চিৎকার শোনা যায়। মহিতুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, নারীদের আহাজারি, আর আর্ত চিৎকারও তিনি শোনেন। কিন্তু এসব খুনিদের মন গলাতে পারেনি। কুদ্দুস সিকদার, সেলিম, রমা, নুরুল ইসলামও তাঁদের সাক্ষ্যে বাড়ির মহিলাদের চিৎকারের বর্ণনা দেন জবানবন্দিতে।
বঙ্গবন্ধুর সেনারক্ষী হাবিলদার কুদ্দুস সিকদার বলেন, তিনি ওই রাতে ৩২ নম্বরে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে সিঁড়িতে নেওয়ার পর তিনি খুনিদের বিভিন্ন প্রশ্ন করার সময় মেজর নুর ও মেজর বজলুল হুদা ইংরেজিতে কী কী যেন বলেন। তাঁদের হাতে থাকা স্টেনগান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে তাঁরা গুলি করেন। আজিজ পাশা ও রিসালদার মোসলেম বেগম মুজিব, শেখ জামাল, সুলতানা কামাল, রোজী জামালকে গুলি করে হত্যা করে।
বঙ্গবন্ধুর পরনে লুঙ্গি গায়ে পাঞ্জাবি ছিল
যখন গুলি করা হয়, তখন বঙ্গবন্ধুর পরনে লুঙ্গি, গায়ে পাঞ্জাবি ছিল। চোখে চশমা, হাতে সিগারেটের পাইপ ও একটি ম্যাচ ছিল। কুদ্দুস সিকদার তাঁর জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন।
মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে খুনিরা
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সবাইকে খুন করার পর সেনা জোয়ানরা ওই বাড়ির আলমারি ও আসবাবপত্র তছনছ করে। বিভিন্ন স্থান থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। আলমারির ড্রয়ার খুলেও জোয়ানরা কিছু মালামাল নেয়। সুবেদার মেজর ওয়াহাবও (আবদুল ওয়াহাব জোয়ারদার) জোয়ানদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি একটি ব্রিফকেস, সোনার গয়না, বিদেশি মুদ্রা, রেডিও, টেলিভিশন নিয়ে নিচে থাকা একটি গাড়িতে তোলেন। অন্য জিনিসপত্র অন্য জোয়ানরা ব্যাগে করে নিয়ে যায়। ওই বাড়ি ও লাশ পাহারা দেওয়ার জন্য কুদ্দুস সিকদারকে রেখে যান। এর মধ্যে কর্নেল জামিলের লাশ একটি গাড়িতে করে ওই বাড়িতে আনা হয়।
এই মামলায় আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মহিউদ্দিন (আর্টিলারি), তাহের উদ্দিন ঠাকুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। প্রত্যেকে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন। ওই রাতে বিভিন্ন অপারেশনেও ছিলেন তাঁরা। তবে তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে ঠিক যখন হত্যা করা হয়, তখন উপস্থিত ছিলেন না। আগে-পরে ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর সাড়ে ৪টা/৫টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আক্রমণ করে উচ্চাভিলাষী কতিপয় সেনা কর্মকর্তা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী (আবাসিক) মহিতুল ইসলাম। তিনি ওই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তৎকালীন পুলিশের বিশেষ শাখার উপ পুলিশ সুপার (ডিএসপি) নুরুল ইসলাম (পরবর্তীতে এসপি), বঙ্গবন্ধুর সেনারক্ষী হাবিলদার কুদ্দুস সিকদার, নায়েক সুবেদার আবদুল গনি, সেনাসদস্য সোহরাব আলী প্রমুখ। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর বাড়ির গৃহকর্মী আবদুর রহমান রমা ও সেলিমও প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁরা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দেন। তাঁদের বর্ণনায় জানা যায়, কী ঘটেছিল সেই রাতে।
বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম ঘটনার পর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর কেউ কিছু করতে পারছে না। চারদিকে থমথমে অবস্থা। কিছুদিন নিশ্চুপ থাকেন তিনি। কিন্তু প্রতিনিয়তই মনে হতে থাকে যে, অত্যন্ত নির্মম ও নৃশংস সেই হত্যাকাণ্ড, যা তিনি দেখেছেন, তার বিচার না হলে সেটা হবে জাতির জন্য কলঙ্কজনক। ঘটনার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর তিনি ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে মহিতুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, তিনি ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঘুমিয়েছিলেন। ১৪ আগস্ট রাত ৮/৯ টার দিকে বঙ্গবন্ধু বাসায় ফেরেন। তাঁর সঙ্গেও রক্ষীরা চলে যান। রাত ১টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু বাড়িতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে গল্প করেন। এর পর তিনি শুতে যান। ভোর আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে বঙ্গবন্ধু টেলিফোন অপারেটরকে ফোন দেন। অপারেটর আবদুল মতিন ফোন ধরেন। মহিতুল ইসলামকে ডেকে তোলেন মতিন। মহিতুল ফোন ধরলে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সেরনিয়াবাতের (আব্দুর রব সেরনিয়াবাত) বাসায় দুষ্কৃতকারীরা আক্রমণ করছে। জলদি পুলিশ কন্ট্রোল রুমে লাগা।’
সঙ্গে সঙ্গে মহিতুল পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু লাইন না পাওয়ায় গণভবনে ফোন করেন। সেখানে টেলিফোন রিসিভ করলেও কেউ কথা বলেনি। এ সময় বঙ্গবন্ধু দোতলা থেকে নিচে নেমে আসেন। মহিতুল ‘হ্যালো হ্যালো’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু মহিতুলের হাত থেকে রিসিভার নিয়ে বলে, ‘আমি প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব বলছি।’ ঠিক সেই মুহূর্তে এক ঝাঁক গুলি জানালার কাচ ভেঙে অফিস ঘরের দেয়ালে লাগে। অনর্গল গুলি আসতে থাকে। বঙ্গবন্ধু টেবিলের পাশে শুয়ে পড়েন। মহিতুলকেও শুয়ে পড়তে বলেন। কিছুক্ষণ পর গুলি বন্ধ হয়। ওপর থেকে বঙ্গবন্ধুর কাজের ছেলে পাঞ্জাবি ও চশমা নিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধু তা পরেন। পরে তিনি বারান্দায় যান। তিনি বলেন, ‘আর্মি সেন্ট্রি, পুলিশ সেন্ট্রি এত গুলি চলছে, তোমরা কী করো?’ এই বলে বঙ্গবন্ধু ওপরে উঠে যান। এরপরই শেখ কামাল নিচে বারান্দায় আসেন। তিনি বলেন, ‘আর্মি, পুলিশ ভাই আপনারা আমার সঙ্গে আসেন।’ বলার সঙ্গে সঙ্গে তিন-চারজন কালো ও খাকি পোশাক পরা লোক অস্ত্রসহ শেখ কামালের সামনে এসে দাঁড়ান। ডিএসপি নুরুল ইসলাম ও মহিতুল পেছনে ছিলেন। এ সময় মেজর বজলুল হুদা শেখ কামালকে গুলি করেন। শেখ কামাল পড়ে গিয়েও বলেন, ‘আমি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল।’ ওরা সঙ্গে সঙ্গে কামালকে আবার গুলি করে। তিনি সেখানেই মারা যান। ডিএসপি নুরুল ইসলাম ও মহিতুলকে চুল ধরে টেনে নিয়ে বাড়ির মূল ফটকে লাইনে দাঁড় করানো হয়। সেখানে পুলিশের লোক ও টেলিফোন অপারেটর মতিনকেও দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসেরকেও সেখানে দাঁড় করানো হয়। রান্না ঘর থেকে বুড়ি (গৃহকর্মী) ও রাখাল আজিজকেও নিয়ে আসা হয়। অস্ত্রধারী লোকেরা গুলি করতে করতে ওপরে ওঠে। এ সময় বঙ্গবন্ধুর উচ্চকণ্ঠ শোনা যায়।
মূল ফটকের লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা শেখ নাসের খুনিদের বলেন, ‘স্যার আমি তো রাজনীতি করি না। আমি ব্যবসা-বাণিজ্য করে খাই।’ তখন পাশে দাঁড়ানো একজন অস্ত্রধারী বলেন, ‘শেখ মুজিব ইজ ব্যাটার দ্যান নাসের।’ আরেকজন বলেন, ‘ঠিক আছে নাসের সাহেব পাশের রুমে গিয়ে বসেন।’ নাসের পাশের কক্ষে যান। একটু পরই তাঁকে সেখানে গুলি করে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর আগে শেখ নাসের পানি চান। কিন্তু তাঁকে পানি না দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করতে আবার গুলি করা হয়। তিনি মারা যান। এ সময় শিশু রাসেল ও গৃহকর্মী রমাকে নিচে নিয়ে আসা হয়। শিশু রাসেল রমা ও মহিতুলকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে। সে বলে, ‘ভাইয়া আমাকে মারবে না তো। পরে খাকি পোশাকধারী একজন জোর করে রাসেলকে নিয়ে যায়। রাসেল মায়ের কাছে যেতে চায়। মায়ের কাছে নেওয়ার কথা বলে তাকে ভেতরে নিয়ে যায়। একটু পরই গুলির শব্দ শোনা যায়। এদিকে ওপরের তলায় বঙ্গবন্ধু, শেখ ফজিলাতুন্নেছা, শেখ জামাল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী ও এসবির একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে ঘাতকেরা।
মহিতুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, মেজর ফারুক, মেজর নুর, মেজর ডালিম, মেজর বজলুল হুদাকে তিনি হত্যাকাণ্ডের সময় অন্যদের সঙ্গে ৩২ নম্বরের বাড়িতে দেখেছেন। হত্যাকাণ্ড শেষ হওয়ার পর বাড়ির মূল ফটকের কাছে বজলুল হুদা মেজর ফারুককে বলেন, ‘অল আর ফিনিশড।’ পুরো ঘটনার সময় বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে দিয়ে ট্যাংক যাওয়া-আসা করে। ট্যাংকের ওপর সেনাবাহিনীর লোকজন ছিল।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম (তৎকালীন ডিএসবির প্রোটেকশন ফোর্স হিসেবে বঙ্গবন্ধুর বাসার গার্ডদের চার্জে ছিলেন) সাক্ষ্যে বলেন, ১৪ আগস্ট দিবাগত রাত আনুমানিক ১টার সময় তিনি ও একজন পুলিশ সার্জেন্ট বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে নিচের তলার বৈঠকখানায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর পিএ কাম রিসেপশনিস্ট মহিতুল ইসলাম সেখানে ছিলেন। ভোর আনুমানিক ৫টার সময় দোতলা থেকে বঙ্গবন্ধুর গলার আওয়াজ শুনতে পান তিনি। এর পর মহিতুলের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি ঘটনার বর্ণনা দেন।
হত্যার আগে বঙ্গবন্ধু খুনিদের প্রশ্ন করেন, ‘তোরা কী চাস?’—এমন বর্ণনা এসেছে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে কাজ করা আবদুর রহমান শেখ রমার সাক্ষ্য থেকে। বঙ্গবন্ধু নিচে নামার পর আবার ওপরে ওঠার বর্ণনা দিয়ে রমা বলেন, ‘একসময় বঙ্গবন্ধু তাঁর শোয়ার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। কিছুক্ষণের জন্য গোলাগুলি থেমে যায়। এর পর বঙ্গবন্ধু বের হন। তাঁকে খুনিরা ঘিরে ধরে। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তোরা কী চাস? আমাকে কোথায় নিয়ে যাবি?’ খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে সিঁড়িতে নিয়ে যায়। সিঁড়ির দুই-তিন ধাপ নেওয়ার পর তাঁকে গুলি করা হয়। রমা তখন বঙ্গবন্ধুর পেছনে ছিলেন। খুনিরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুই কে?’ রমা উত্তর দেন, তিনি এ বাসায় কাজ করেন। তাঁকে তারা বলে, ‘তুই ওপরে যা।’ রমা ওপরে গিয়ে বেগম মুজিবকে বলেন, ‘আম্মা আর্মিরা সাহেবকে গুলি করেছে।’ বেগম মুজিব এ সময় বাড়ির অন্য সবাইকে নিয়ে বাথরুমে আশ্রয় নেন। পরে বেগম মুজিব বলেন, ‘মরলে সবাই একসঙ্গে মরব। তোরা বের হয়ে আয়।’ এর আগেই খুনিরা বেগম মুজিবের কক্ষে ধাক্কা মারে। বেগম মুজিব বের হয়ে আসেন। সবাই তখন তাঁকে নিচে নামানোর চেষ্টা করে। বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখে তিনি চিৎকার করেন। বলেন, ‘আমি নিচে যাব না। আমাকে এখনেই মেরে ফেল।’ এর পর সবাইকে দোতলায় নিয়ে যায়। সবাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সেই দিন বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের আরেক গৃহকর্মী সেলিম শয়নকক্ষের সামনে করিডরে ঘুমিয়ে ছিলেন। গোলাগুলির শব্দে তিনি শেখ কামালের কক্ষের বাথরুমে আশ্রয় নেন। উঁকি দিয়ে ঘটনা দেখতে গেলে তাঁকে টেনে বাইরে এনে গুলি করা হয়। তাঁকে টেনে বঙ্গবন্ধুর সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু এ সময় বলেন, ‘ছেলেটি অনেক দিন আমার কাছে আছে। তাকে কে গুলি করল। তোরা কেন বেয়াদবি করছিস?’ এরপরই বঙ্গবন্ধুকে গুলি করা হয়।
নারীদের আর্ত চিৎকার
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বেগম মুজিবসহ বাড়ির নারীদের নিচে নামানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বেগম মুজিব সিঁড়িতেই তাঁদের মারতে বলেন। খুনিরা এ সময় তাঁদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর শয়নকক্ষে নিয়ে যান। এর পর তাঁদের গুলি করা হয়। এ সময় আর্ত চিৎকার শোনা যায়। মহিতুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, নারীদের আহাজারি, আর আর্ত চিৎকারও তিনি শোনেন। কিন্তু এসব খুনিদের মন গলাতে পারেনি। কুদ্দুস সিকদার, সেলিম, রমা, নুরুল ইসলামও তাঁদের সাক্ষ্যে বাড়ির মহিলাদের চিৎকারের বর্ণনা দেন জবানবন্দিতে।
বঙ্গবন্ধুর সেনারক্ষী হাবিলদার কুদ্দুস সিকদার বলেন, তিনি ওই রাতে ৩২ নম্বরে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে সিঁড়িতে নেওয়ার পর তিনি খুনিদের বিভিন্ন প্রশ্ন করার সময় মেজর নুর ও মেজর বজলুল হুদা ইংরেজিতে কী কী যেন বলেন। তাঁদের হাতে থাকা স্টেনগান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে তাঁরা গুলি করেন। আজিজ পাশা ও রিসালদার মোসলেম বেগম মুজিব, শেখ জামাল, সুলতানা কামাল, রোজী জামালকে গুলি করে হত্যা করে।
বঙ্গবন্ধুর পরনে লুঙ্গি গায়ে পাঞ্জাবি ছিল
যখন গুলি করা হয়, তখন বঙ্গবন্ধুর পরনে লুঙ্গি, গায়ে পাঞ্জাবি ছিল। চোখে চশমা, হাতে সিগারেটের পাইপ ও একটি ম্যাচ ছিল। কুদ্দুস সিকদার তাঁর জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন।
মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে খুনিরা
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সবাইকে খুন করার পর সেনা জোয়ানরা ওই বাড়ির আলমারি ও আসবাবপত্র তছনছ করে। বিভিন্ন স্থান থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। আলমারির ড্রয়ার খুলেও জোয়ানরা কিছু মালামাল নেয়। সুবেদার মেজর ওয়াহাবও (আবদুল ওয়াহাব জোয়ারদার) জোয়ানদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি একটি ব্রিফকেস, সোনার গয়না, বিদেশি মুদ্রা, রেডিও, টেলিভিশন নিয়ে নিচে থাকা একটি গাড়িতে তোলেন। অন্য জিনিসপত্র অন্য জোয়ানরা ব্যাগে করে নিয়ে যায়। ওই বাড়ি ও লাশ পাহারা দেওয়ার জন্য কুদ্দুস সিকদারকে রেখে যান। এর মধ্যে কর্নেল জামিলের লাশ একটি গাড়িতে করে ওই বাড়িতে আনা হয়।
এই মামলায় আসামি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মহিউদ্দিন (আর্টিলারি), তাহের উদ্দিন ঠাকুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। প্রত্যেকে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন। ওই রাতে বিভিন্ন অপারেশনেও ছিলেন তাঁরা। তবে তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে ঠিক যখন হত্যা করা হয়, তখন উপস্থিত ছিলেন না। আগে-পরে ছিলেন।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪