এম এস রানা
তখনো দেশে সাদা-কালো টিভির রাজত্ব। কারও কারও বাসায় অবশ্য রঙিন টিভি ঠাঁই করে নিয়েছিল। সবার ঘরে আবার টিভি ছিল না। যাদের বাসায় ছিল, তাদের বেশির ভাগের বাড়ির ছাদে বা চালের ওপর ঝুলত অ্যালুমিনিয়ামের পাতিলের ঢাকনা। টিভির অ্যানটেনা হিসেবে কাজ করত ওটা। সন্ধ্যায় ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়ার পরপরই রেডিও-টিভিতে বেজে উঠত জাতীয় কবি নজরুলের ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ’ গানটি। শুরু হয়ে যেত ঈদের শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। ততক্ষণে দেশের একমাত্র টিভি চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রস্তুত ঈদের অনুষ্ঠান নিয়ে।
এসব অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ঈদের নাটক, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, গানের অনুষ্ঠান ইত্যাদি। এখন দেশে টিভি চ্যানেল বেড়েছে। অনুষ্ঠানের ধরনে খুব বেশি পরিবর্তন না এলেও পরিমাণ বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে মান নিয়ে প্রশ্ন। ঈদের দিন, ঈদের দ্বিতীয় দিন, ঈদের তৃতীয় দিন এভাবেই চলত ঈদের অনুষ্ঠান। যাদের বাড়িতে টিভি ছিল, সন্ধ্যার পর ওই বাড়িতে জড়ো হতো আশপাশের বাড়ির মানুষজন। গ্রামের চিত্রটা আরও ভিন্ন! এমনও ছিল আশপাশের দু-তিন গ্রামে একটিমাত্র বাড়িতেই টিভি আছে, তাই ওই বাড়ির টিভিটা ঘর থেকে নামিয়ে বারান্দায় বা উঠোনের এক পাশে এনে রাখা হতো। উঠোনজুড়ে জমত পুরো গ্রামের মানুষের ভিড়।
ঈদের নাটকের বিশেষ আকর্ষণ ছিল আমজাদ হোসেনের ‘জব্বার আলী’ চরিত্রটি নিয়ে তৈরি নাটক। প্রতিটি নাটকেই ফুটে উঠত জব্বার আলীর দ্বৈত চরিত্র। টুপি মাথায় নামাজ পড়ছেন কিংবা হাতে তসবিহ গুনছেন, অন্যদিকে অর্থ উপার্জনের আশায় দুই নম্বরি করে পুলিশের হাতে ধরা পড়ছেন। তাঁর এই গল্পে সঙ্গী হয়েছেন জবা কুসুম রোকন দুলালের মা, অর্থাৎ তাঁর স্ত্রী; তাঁর মা, ছেলে-মেয়েসহ আত্মীয়-পরিজন। ঈদে প্রচারিত জব্বার আলী সিরিজের প্রতিটি নাটকের শেষভাগেই জব্বার আলী তাঁর ভুল বুঝতে পেরে অনুতাপে ভোগেন এবং জেলে বসে বা জেল থেকে বেরিয়ে ঈদের সেমাই খান। সিরিয়াস বিষয়ের সঙ্গে কমেডি যেমন থাকত, তেমনি ঠাঁই মিলত পারিবারিক আবহের। আরও যেসব নাটক হতো, সব কটিই প্রিভিউ কমিটির সুতীক্ষ্ণ নজরদারির মধ্য দিয়ে পর্দা পর্যন্ত পৌঁছাত। ফলে নিশ্চিত করা যেত নাটকের মান কিংবা গল্পের আবেদন। দক্ষ অভিনয়শৈলীর গুণে চরিত্রগুলো যেন হয়ে উঠত আশপাশের অতি পরিচিতজন। সব মিলিয়ে পুরো নাটক দর্শকের জন্য উপভোগ্য হয়ে উঠত।
এ ছাড়া অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বা আনিসুল হকদের মতো উপস্থাপকদের আনন্দমেলা কিংবা হানিফ সংকেতের ইত্যাদিও ছিল অন্যতম আকর্ষণ। অনুষ্ঠান দুটি এখনো বিটিভিতে চলে। আনন্দমেলায় উপস্থাপকের পরিবর্তন ঘটলেও ইত্যাদি দর্শকের মন জয় করে যাচ্ছে হানিফ সংকেতের গ্রন্থনা ও উপস্থাপনাতেই। আরও ছিল গানের অনুষ্ঠান। এসব অনুষ্ঠানে গান গাইতেন সাবিনা ইয়াসমীন, রুনা লায়লার মতো শিল্পীরা। ছিল সিনেমার গান নিয়ে ছায়াছন্দ। পরবর্তী সময়ে ব্যান্ড শোও জনপ্রিয় হয়।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাটক নির্মাণের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকেই ছিলেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে মেধাবী এবং পরীক্ষিত। সবার পরিকল্পিত টিমওয়ার্কের মধ্য দিয়েই তৈরি হতো একেকটি নাটক। অডিশনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন করা হতো অভিনয়শিল্পীদের। পরিপূর্ণ রিহার্সালের পরেই হতো শুটিং। এসব কারণে সেসব নাটকের প্রতি দর্শকের আগ্রহ তৈরি হতো স্বাভাবিকভাবেই। অভিনেতা আজিজুল হাকিম একবার সেই দিনগুলোর বাস্তবতা তুলে ধরে বলেছিলেন, ‘আগে নাটকের মধ্যে একটা বাস্তবতা থাকত, সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকত। নাটকের গল্পের মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক বক্তব্য তুলে ধরা হতো। পরিবারের সব সদস্য একসঙ্গে টিভি নাটক দেখতাম। তাই গল্পগুলোও সেভাবেই সাজানো হতো।’
সময়ের বিবর্তনে আত্মপ্রকাশ করে বেসরকারি টিভি চ্যানেল। বাড়তে থাকে নাটকসহ সব ধরনের অনুষ্ঠান নির্মাণের চাহিদা ও সংখ্যা। আত্মপ্রকাশ করে একঝাঁক তরুণ নাট্যনির্মাতা ও অভিনেতা। সংস্কৃতিকর্মীদের একটি বড় অংশ নাট্যাভিনয়কে পেশা হিসেবে নিতে শুরু করেন। চাহিদা ও জোগানের চমৎকার সমন্বয়ে টিভি নাটক সমৃদ্ধ হতে থাকে। পরিবর্তন আসে নাটকের বিষয়বৈচিত্র্যে, গল্পে, অভিনয়ে এবং নির্মাণশৈলীতে। প্রযুক্তির কল্যাণে বাড়তে থাকে স্যাটেলাইট চ্যানেলের সংখ্যা, এমনকি আত্মপ্রকাশ করে অনলাইন চ্যানেল এবং হালের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম।
ভালো নাটকের পাশাপাশি বাড়তে থাকে মন্দ নাটকের সংখ্যাও। রিহার্সাল তো নয়ই, বরং কোনো কোনো নাটকের সত্যিকার চিত্রনাট্য তৈরি হতো না। আবার কখনো কখনো চিত্রনাট্য থাকলেও অভিনয়শিল্পীরা সেটা অনুসরণ করতে চাইতেন না। চ্যানেল বাড়ায় কাজের সুযোগ বেড়েছে। তাই অডিশন তো দূরের কথা, ভালো অভিনেতাদের শিডিউল পাওয়াটাই কঠিন হয়ে দাঁড়াল।
একসময় তাই প্রশ্নের মুখে পড়ে যায় নাটকের মান এবং জনপ্রিয়তা। পুরো নাটক দেখে তৃপ্তি পাওয়া দর্শকের চেয়ে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দেখা ‘ভিউ’ সংখ্যাই হয়ে দাঁড়ায় জনপ্রিয়তার বিশেষ মানদণ্ড।
প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নের কারণেও আমাদের নাটক বদলে গেছে। স্যাটেলাইট চ্যানেল আর ইন্টারনেটের কল্যাণে দর্শকের সামনে এসেছে চোখধাঁধানো আয়োজনের বিশালত্ব আর প্রযুক্তির মায়ায় জড়ানো সিরিজ, সিনেমা। অনলাইনসহ দর্শকের সামনে যখন প্রচুর অপশন, সেই মুগ্ধতায় বাংলা নাটক থেকে চোখ সরাল দর্শক। সেই চোখ ফেরাতে বৈচিত্র্যের সন্ধানে নামলেন নির্মাতারা। বদলে গেল গল্প, পরিবর্তন এল ভাষার ব্যবহারেও। একসময় প্রমিত বাংলা ভাষা ও আঞ্চলিক ভাষার নাটক নির্মাণের সংখ্যা ছিল অসংখ্য। এখন আবার নিত্যব্যবহার্য ভাষায় নাটক নির্মাণ হতে দেখা যাচ্ছে। শিল্পীসংকট কাটাতে শিল্পী তৈরির প্রক্রিয়াও চলল। কিন্তু স্বল্প বাজেট, স্বল্পায়োজন, স্বল্পসংখ্যক প্রযোজক, অভিনয়শিল্পী নিয়ে প্রতিযোগিতাটা কঠিনই হয়ে পড়ল। ফলে দীর্ঘদিনের টিভি নাটকের আবেদনটাই যেন নষ্ট
হতে বসল।
এমনই পরিস্থিতিতে দর্শক যখন এক্সপেরিমেন্টাল নাটক দেখতে দেখতে ক্লান্ত, তখন হুট করেই এই বাংলার চিরচেনা, সাধারণ আর আবেগঘন এক গল্প দর্শকের হৃদয়কে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়। হিট হয়ে যায় ‘বড় ছেলে’র মতো নাটক। আমাদের নাটকে মধ্যবিত্ত বাঙালির আবেগটাই যে বড় সত্য, সেটাই আবার প্রমাণিত হয়।
হালে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আর অনলাইনের সুবাদে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় আছে বাংলা টিভি নাটক। অনলাইনে আয়ের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় বাড়ছে টিভি নাটকের বাজেট, বাড়ছে শুটিংয়ের আয়োজন। কারিগরি বিষয়গুলোরও উন্নতি হয়েছে বেশ। এখন প্রায়ই অভিনয়শিল্পীদের মুখে শোনা যায় সেই ফেলে আসা দিনের কথা, শুটিংয়ের আগে এখন রিহার্সাল করতে হচ্ছে তাঁদের। চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে নিতে দিনরাত সময় দিয়ে তৈরি করতে হচ্ছে নিজেকে। ফলটাও পাচ্ছেন তেমনি। ভালো হচ্ছে চরিত্র ও অভিনয়, দর্শকপ্রিয় হচ্ছে নাটক, সিনেমা। ফিরতে শুরু করেছে হারাতে বসা বাংলা নাটকের আবেদন, নতুন করে, নতুন আঙ্গিকে।
লেখক: বিভাগীয় প্রধান, বিনোদন, আজকের পত্রিকা
তখনো দেশে সাদা-কালো টিভির রাজত্ব। কারও কারও বাসায় অবশ্য রঙিন টিভি ঠাঁই করে নিয়েছিল। সবার ঘরে আবার টিভি ছিল না। যাদের বাসায় ছিল, তাদের বেশির ভাগের বাড়ির ছাদে বা চালের ওপর ঝুলত অ্যালুমিনিয়ামের পাতিলের ঢাকনা। টিভির অ্যানটেনা হিসেবে কাজ করত ওটা। সন্ধ্যায় ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়ার পরপরই রেডিও-টিভিতে বেজে উঠত জাতীয় কবি নজরুলের ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ’ গানটি। শুরু হয়ে যেত ঈদের শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। ততক্ষণে দেশের একমাত্র টিভি চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রস্তুত ঈদের অনুষ্ঠান নিয়ে।
এসব অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ঈদের নাটক, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, গানের অনুষ্ঠান ইত্যাদি। এখন দেশে টিভি চ্যানেল বেড়েছে। অনুষ্ঠানের ধরনে খুব বেশি পরিবর্তন না এলেও পরিমাণ বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে মান নিয়ে প্রশ্ন। ঈদের দিন, ঈদের দ্বিতীয় দিন, ঈদের তৃতীয় দিন এভাবেই চলত ঈদের অনুষ্ঠান। যাদের বাড়িতে টিভি ছিল, সন্ধ্যার পর ওই বাড়িতে জড়ো হতো আশপাশের বাড়ির মানুষজন। গ্রামের চিত্রটা আরও ভিন্ন! এমনও ছিল আশপাশের দু-তিন গ্রামে একটিমাত্র বাড়িতেই টিভি আছে, তাই ওই বাড়ির টিভিটা ঘর থেকে নামিয়ে বারান্দায় বা উঠোনের এক পাশে এনে রাখা হতো। উঠোনজুড়ে জমত পুরো গ্রামের মানুষের ভিড়।
ঈদের নাটকের বিশেষ আকর্ষণ ছিল আমজাদ হোসেনের ‘জব্বার আলী’ চরিত্রটি নিয়ে তৈরি নাটক। প্রতিটি নাটকেই ফুটে উঠত জব্বার আলীর দ্বৈত চরিত্র। টুপি মাথায় নামাজ পড়ছেন কিংবা হাতে তসবিহ গুনছেন, অন্যদিকে অর্থ উপার্জনের আশায় দুই নম্বরি করে পুলিশের হাতে ধরা পড়ছেন। তাঁর এই গল্পে সঙ্গী হয়েছেন জবা কুসুম রোকন দুলালের মা, অর্থাৎ তাঁর স্ত্রী; তাঁর মা, ছেলে-মেয়েসহ আত্মীয়-পরিজন। ঈদে প্রচারিত জব্বার আলী সিরিজের প্রতিটি নাটকের শেষভাগেই জব্বার আলী তাঁর ভুল বুঝতে পেরে অনুতাপে ভোগেন এবং জেলে বসে বা জেল থেকে বেরিয়ে ঈদের সেমাই খান। সিরিয়াস বিষয়ের সঙ্গে কমেডি যেমন থাকত, তেমনি ঠাঁই মিলত পারিবারিক আবহের। আরও যেসব নাটক হতো, সব কটিই প্রিভিউ কমিটির সুতীক্ষ্ণ নজরদারির মধ্য দিয়ে পর্দা পর্যন্ত পৌঁছাত। ফলে নিশ্চিত করা যেত নাটকের মান কিংবা গল্পের আবেদন। দক্ষ অভিনয়শৈলীর গুণে চরিত্রগুলো যেন হয়ে উঠত আশপাশের অতি পরিচিতজন। সব মিলিয়ে পুরো নাটক দর্শকের জন্য উপভোগ্য হয়ে উঠত।
এ ছাড়া অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বা আনিসুল হকদের মতো উপস্থাপকদের আনন্দমেলা কিংবা হানিফ সংকেতের ইত্যাদিও ছিল অন্যতম আকর্ষণ। অনুষ্ঠান দুটি এখনো বিটিভিতে চলে। আনন্দমেলায় উপস্থাপকের পরিবর্তন ঘটলেও ইত্যাদি দর্শকের মন জয় করে যাচ্ছে হানিফ সংকেতের গ্রন্থনা ও উপস্থাপনাতেই। আরও ছিল গানের অনুষ্ঠান। এসব অনুষ্ঠানে গান গাইতেন সাবিনা ইয়াসমীন, রুনা লায়লার মতো শিল্পীরা। ছিল সিনেমার গান নিয়ে ছায়াছন্দ। পরবর্তী সময়ে ব্যান্ড শোও জনপ্রিয় হয়।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাটক নির্মাণের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকেই ছিলেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে মেধাবী এবং পরীক্ষিত। সবার পরিকল্পিত টিমওয়ার্কের মধ্য দিয়েই তৈরি হতো একেকটি নাটক। অডিশনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন করা হতো অভিনয়শিল্পীদের। পরিপূর্ণ রিহার্সালের পরেই হতো শুটিং। এসব কারণে সেসব নাটকের প্রতি দর্শকের আগ্রহ তৈরি হতো স্বাভাবিকভাবেই। অভিনেতা আজিজুল হাকিম একবার সেই দিনগুলোর বাস্তবতা তুলে ধরে বলেছিলেন, ‘আগে নাটকের মধ্যে একটা বাস্তবতা থাকত, সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকত। নাটকের গল্পের মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক বক্তব্য তুলে ধরা হতো। পরিবারের সব সদস্য একসঙ্গে টিভি নাটক দেখতাম। তাই গল্পগুলোও সেভাবেই সাজানো হতো।’
সময়ের বিবর্তনে আত্মপ্রকাশ করে বেসরকারি টিভি চ্যানেল। বাড়তে থাকে নাটকসহ সব ধরনের অনুষ্ঠান নির্মাণের চাহিদা ও সংখ্যা। আত্মপ্রকাশ করে একঝাঁক তরুণ নাট্যনির্মাতা ও অভিনেতা। সংস্কৃতিকর্মীদের একটি বড় অংশ নাট্যাভিনয়কে পেশা হিসেবে নিতে শুরু করেন। চাহিদা ও জোগানের চমৎকার সমন্বয়ে টিভি নাটক সমৃদ্ধ হতে থাকে। পরিবর্তন আসে নাটকের বিষয়বৈচিত্র্যে, গল্পে, অভিনয়ে এবং নির্মাণশৈলীতে। প্রযুক্তির কল্যাণে বাড়তে থাকে স্যাটেলাইট চ্যানেলের সংখ্যা, এমনকি আত্মপ্রকাশ করে অনলাইন চ্যানেল এবং হালের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম।
ভালো নাটকের পাশাপাশি বাড়তে থাকে মন্দ নাটকের সংখ্যাও। রিহার্সাল তো নয়ই, বরং কোনো কোনো নাটকের সত্যিকার চিত্রনাট্য তৈরি হতো না। আবার কখনো কখনো চিত্রনাট্য থাকলেও অভিনয়শিল্পীরা সেটা অনুসরণ করতে চাইতেন না। চ্যানেল বাড়ায় কাজের সুযোগ বেড়েছে। তাই অডিশন তো দূরের কথা, ভালো অভিনেতাদের শিডিউল পাওয়াটাই কঠিন হয়ে দাঁড়াল।
একসময় তাই প্রশ্নের মুখে পড়ে যায় নাটকের মান এবং জনপ্রিয়তা। পুরো নাটক দেখে তৃপ্তি পাওয়া দর্শকের চেয়ে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দেখা ‘ভিউ’ সংখ্যাই হয়ে দাঁড়ায় জনপ্রিয়তার বিশেষ মানদণ্ড।
প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নের কারণেও আমাদের নাটক বদলে গেছে। স্যাটেলাইট চ্যানেল আর ইন্টারনেটের কল্যাণে দর্শকের সামনে এসেছে চোখধাঁধানো আয়োজনের বিশালত্ব আর প্রযুক্তির মায়ায় জড়ানো সিরিজ, সিনেমা। অনলাইনসহ দর্শকের সামনে যখন প্রচুর অপশন, সেই মুগ্ধতায় বাংলা নাটক থেকে চোখ সরাল দর্শক। সেই চোখ ফেরাতে বৈচিত্র্যের সন্ধানে নামলেন নির্মাতারা। বদলে গেল গল্প, পরিবর্তন এল ভাষার ব্যবহারেও। একসময় প্রমিত বাংলা ভাষা ও আঞ্চলিক ভাষার নাটক নির্মাণের সংখ্যা ছিল অসংখ্য। এখন আবার নিত্যব্যবহার্য ভাষায় নাটক নির্মাণ হতে দেখা যাচ্ছে। শিল্পীসংকট কাটাতে শিল্পী তৈরির প্রক্রিয়াও চলল। কিন্তু স্বল্প বাজেট, স্বল্পায়োজন, স্বল্পসংখ্যক প্রযোজক, অভিনয়শিল্পী নিয়ে প্রতিযোগিতাটা কঠিনই হয়ে পড়ল। ফলে দীর্ঘদিনের টিভি নাটকের আবেদনটাই যেন নষ্ট
হতে বসল।
এমনই পরিস্থিতিতে দর্শক যখন এক্সপেরিমেন্টাল নাটক দেখতে দেখতে ক্লান্ত, তখন হুট করেই এই বাংলার চিরচেনা, সাধারণ আর আবেগঘন এক গল্প দর্শকের হৃদয়কে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়। হিট হয়ে যায় ‘বড় ছেলে’র মতো নাটক। আমাদের নাটকে মধ্যবিত্ত বাঙালির আবেগটাই যে বড় সত্য, সেটাই আবার প্রমাণিত হয়।
হালে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আর অনলাইনের সুবাদে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় আছে বাংলা টিভি নাটক। অনলাইনে আয়ের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় বাড়ছে টিভি নাটকের বাজেট, বাড়ছে শুটিংয়ের আয়োজন। কারিগরি বিষয়গুলোরও উন্নতি হয়েছে বেশ। এখন প্রায়ই অভিনয়শিল্পীদের মুখে শোনা যায় সেই ফেলে আসা দিনের কথা, শুটিংয়ের আগে এখন রিহার্সাল করতে হচ্ছে তাঁদের। চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে নিতে দিনরাত সময় দিয়ে তৈরি করতে হচ্ছে নিজেকে। ফলটাও পাচ্ছেন তেমনি। ভালো হচ্ছে চরিত্র ও অভিনয়, দর্শকপ্রিয় হচ্ছে নাটক, সিনেমা। ফিরতে শুরু করেছে হারাতে বসা বাংলা নাটকের আবেদন, নতুন করে, নতুন আঙ্গিকে।
লেখক: বিভাগীয় প্রধান, বিনোদন, আজকের পত্রিকা
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরলেন। সেদিন অপরাহ্ণে রেসকোর্সে অলিখিত স্বতঃস্ফূর্ত ভাষণ দিয়েছিলেন। যে ভাষণটি আমি শুনেছিলাম—১৭ মিনিটের। ভাষণে একটি জায়গায় তিনি বলেছিলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে,
২৬ মার্চ ২০২৪১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে যে চার রাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল তার একটি সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র মানে বৈষম্যের অবসান। সমাজতন্ত্র মানে ন্যায্যতা। সমাজতন্ত্র মানে সবার শিক্ষা, চিকিৎসা, মাথাগোঁজার ঠাঁই, কাজের সুযোগ। সমাজতন্ত্র মানে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ, প্রয়োজন অনুয
২৬ মার্চ ২০২৪স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার চালিকা শক্তি হিসেবে চারটি মৌলনীতি গ্রহণ করেছিলেন। এগুলো হলো: জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র। আজ ৫২ বছর পর দেখছি, এই মৌলনীতিগুলোর প্রতিটির সূচক এত নিচে নেমে গেছে যে, বলা চলে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলনীতি বলে এখন আর কিছু নেই। জাতীয়তা দুই ভাগে বি
২৬ মার্চ ২০২৪বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা যেতে পারে, রাষ্ট্র হিসেবে নবীন, কিন্তু এর সভ্যতা সুপ্রাচীন। নদীবেষ্টিত গাঙেয় উপত্যকায় পলিবাহিত উর্বর ভূমি যেমন উপচে পড়া শস্যসম্ভারে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি নদীর ভাঙনের খেলায় রাতারাতি বিলুপ্ত হয়েছে বহু জনপদ। এরপরও সভ্যতার নানা চিহ্ন এখানে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাঙালিত্বের বৈশিষ
২৬ মার্চ ২০২৪