১২ লাখ টাকার কমলা বিক্রির আশা জয়নালের

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১০: ৪৪
ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার উত্তর বঠিনা গ্রামে নিজের বাগানের কমলা দেখাচ্ছেন জয়নাল আবেদীন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সমতলভূমিতে দার্জিলিং কমলা চাষ করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার উত্তর বঠিনা গ্রামের জয়নাল আবেদীন। তাঁর বাগানে ফলন ভালো দেখা দিয়েছে। ১২ লাখ টাকার ফল বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন জয়নাল আবেদীন। তাঁকে দেখে কমলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় অনেকে।

সম্প্রতি বঠিনা গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, জয়নাল আবেদীন ২০১৯ সালে নিজ উদ্যোগে ৬ বিঘা জমিতে শুরু করেন কমলা ও মাল্টার চাষ। চায়না ম্যান্ডারিন, দার্জিলিং কমলা ও বারি ১ মাল্টা জাতের চারা গাছ রোপণ করেন। বর্তমানে তাঁর বাগানে ৫৫০টি গাছে শোভা পাচ্ছে কমলা ও মাল্টা। প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ৪০ থেকে ৬০ কেজি ফলন আসতে পারে বলে মনে করছেন জয়নাল আবেদীন। শুধু ফলই নয়, চারা-কলম বিক্রি করেও ভালো আয় করছেন তিনি।

জয়নাল আবেদীনের বাগানে দেখা গেছে, থোকায় থোকায় ঝুলছে মিষ্টি কমলা ও মাল্টা। এসব কমলা আকারে বড়, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থীরা পাইকারি দরে কমলা কিনছেন এবং গাছের চারা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন।

জয়নাল আবেদীনের কমলা বাগান পরিচর্যা করছেন শ্রমিকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জয়নাল আবেদীনের কমলা বাগান পরিচর্যা করছেন শ্রমিকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগানেই কথা হয় দক্ষিণ বঠিনা গ্রামের শাহের আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, জয়নাল আবেদীনের বাগানে ভালো ফলন দেখে তিনি কমলা চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন। কমলার বাগান করার জন্য দুই বিঘা জমি প্রস্তুত করেছেন।

বাগান ঘুরতে আসা স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের মনে হচ্ছে ভারতের দার্জিলিংয়ে বেড়াতে এসেছি। খুবই ভালো লাগছে। এমন বাগান আরও হওয়া দরকার।

কমলা চাষের শুরুর কথা বলতে গিয়ে জয়নাল আবেদীন বলেন, চাকরির সুবাদে চুয়াডাঙ্গায় জেলাতে যাই। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়। সেখানে গিয়ে কমলার খেত দেখি এবং সেখানকার কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করি। সেখান থেকে ৫০০টি কমলা ও মাল্টা চারা নিয়ে আসি। চারা রোপণের এক বছর পর গাছে ফল আসতে শুরু করে। এ ছাড়া বর্তমানে কলমপদ্ধতিতে বাগানে ৬ হাজার উৎপাদিত চারা রয়েছে। চলতি বছর আরও কয়েক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে কমলার গাছ লাগিয়ে আরও একটি বাগান গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিয়েছি।

গাছে ধরে আছে কমলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছে ধরে আছে কমলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

জয়নাল আবেদীন জানান, তাঁর বাগানে অন্য বছরের তুলনায় এবার ভালো ফলন হয়েছে। গত বছর ৫ লাখ টাকায় কমলা বিক্রি করলেও এবার প্রায় ১২ লাখ টাকার কমলা ও মাল্টা বিক্রির আশা করছেন।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ৩৪ হেক্টর জমিতে কমলা ও ১২৫ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ের মাটিতে অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি থাকায় লেবু জাতীয় ফলের ভালো ফলন হয়। তাই কমলা ও মালটার স্বাদ, মান ও গুনে আমদানি করা ফলের মতোই থাকে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোছাম্মৎ শামীমা নাজনীন বলেন, মাটিতে বিশেষ কিছু গুণ রয়েছে, যা কমলা চাষের জন্য বিশেষ প্রয়োজন। এ জেলার মাটিতে অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি থাকায় সব ধরনের লেবু জাতীয় ফলন আশাতীত হচ্ছে। কমলা চাষের এ সফলতা জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে আমরা চেষ্টা করছি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত