বাগেরহাটের ইউএনওর ব্যাংক হিসাবে রহস্যজনক কোটি টাকা লেনদেন

এস. এস শোহান, বাগেরহাট 
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯: ৪৭
আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১: ২৪

ব্যাংক হিসাবটির নাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বাগেরহাট। হিসাব নম্বর ১০৮৩৩০১০০১৯৬৮। তবে এই হিসাব খোলা হয়েছে খুলনার এক নারীর জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে। খোলার চার মাসে কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে এই হিসাবে।

তবে সুমি বেগম নামে যে নারীর জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তিনি বাগেরহাট সদর উপজেলা প্রশাসনের কোনো কর্মী নন। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কোনোভাবে তিনি সম্পৃক্তও নন। ইউএনও কার্যালয় ও ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ওই ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসন দাবি করেছে, বিষয়টির সমাধান হয়ে গেছে। তবে জড়িতদের পরিচয় কিংবা তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না তা এড়িয়ে গেছে।

হিসাবের বিবরণী থেকে জানা যায় ২০২৩ সালের ১৮ নভেম্বর ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় ওই হিসাব নম্বরটি চালু করা হয়। এর এক দিন পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি চেকের মাধ্যমে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের ৪৮ লাখ ৫৪ হাজার ৩০২ টাকা ৪৯ পয়সা জমা হয় হিসাবে। কয়েক দিনের মধ্যে একাধিক উপায়ে প্রায় সব টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়। এভাবে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ছয়টি ধাপে মোট ৯৭ লাখ ৪ হাজার ৩০২ টাকা ৪৯ পয়সা ওই অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী, সেখানে ১০১ টাকা জমা রয়েছে।

ব্যাংকে সুমি বেগমের ঠিকানা দেওয়া হয় খুলনার রূপসা উপজেলার চর রূপসা এলাকায়। সেই সূত্রে রূপসা উপজেলার চর রূপসা এলাকায় দিনভর বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে এবং খোঁজ নিয়ে সুমি বেগমের সন্ধান মেলেনি।

ব্যাংক এশিয়ার খুলনা শাখায় গেলে জানা যায়, বাগেরহাটের একটি এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা থেকে খোলা হয়েছে অ্যাকাউন্টটি। বাগেরহাটে দায়িত্বরত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রতিনিধি মামুনুর রশীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বাগেরহাট শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ফকিরহাট উপজেলার ফলতিতা বাজারে দেখা করার কথা বলেন। নির্ধারিত সময়ে সেখানে গেলে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। দীর্ঘ সময় বাজার ও স্থানীয় এজেন্ট শাখায় অপেক্ষা করলেও তিনি আসেননি। পরে কল দিয়ে দেখা করা সম্ভব নয় জানিয়ে বিষয়টির ব্যাখ্যায় সংশ্লিষ্ট এজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে অভিযুক্ত এজেন্ট ও জড়িতদের পরিচয় জানাতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে বাগেরহাট সদরের ইউএনও দীপংকর দাশ (এক সপ্তাহ আগে পদোন্নতি পেয়ে খুলনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দিয়েছেন) বলেন, যোগসাজশ ছাড়া এটি সম্ভব নয়।

পরে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সদ্য যোগ দিয়েছেন জানিয়ে বলেন, ‘সমাধান হয়ে গেছে বিষয়টির। খোয়া যায়নি রাষ্ট্রের কোনো অর্থ।’ তবে কী ধরনের সমাধান বা কারা জড়িত ছিল এ কাজে, সে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

সন্দেহজনক ব্যাংক হিসাবটিতে যে সময়ে লেনদেন হয়েছে, ওই সময়ে বাগেরহাট সদরের ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মো. রাশেদুজ্জামান এখন নড়াইলের কালিয়ার ইউএনও হিসেবে কর্মরত। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য তাঁকে কয়েকবার ফোন করা হলেও ধরেননি। আজকের পত্রিকার ঢাকা অফিস থেকে ফোন করা হলেও তিনি কেটে দেন।

বাগেরহাট সদর উপজেলার নবনিযুক্ত ইউএনও সঞ্জীব দাশ বলেন, ‘আমি এখানে সদ্য যোগদান করেছি। যার কারণে বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানলাম। পুরো বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়, অগ্রাধিকার প্রকৌশলীদের

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার সময় বাড়ল

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

ব্যাংক খাতে নতুন নীতিমালা: আটকে গেল ২৫৮ কর্মকর্তার জিএম পদে পদোন্নতি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত