৪ শিশুকে চাপা দেওয়া গাড়ির গতিবেগ ৯৫ কিমি, চালকের চোখে ছিল ঘুম

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৬: ৫৭

কুষ্টিয়ার খোকসায় মাইক্রোবাসের চাপায় চার শিশু নিহতের ঘটনায় মাইক্রোবাসচালক কাবের আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বরাত দিয়ে র‍্যাব জানিয়েছে, প্রায় ১০ ঘণ্টা টানা গাড়ি চালানোর কারণে তিনি ক্লান্ত ছিলেন। তাঁর চোখে ঘুম ছিল। 

গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মেহেরপুরের গাংনী থানার ঈদগাহপাড়া থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। 

আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে র‍্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

র‍্যাব সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে মক্তব থেকে পড়া শেষ করে বাড়ি ফেরার সময় কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক সড়কের শিমুলিয়া এলাকায় সড়ক পার হওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারানো একটি মাইক্রোবাস পাঁচ শিশুকে চাপা দিয়ে পাশের পুকুরে পড়ে যায়। মাইক্রোবাসের চাপায় ঘটনাস্থলেই মিম খাতুন (১২) নামের এক শিশু মারা যায়। 

দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় বাকি শিশুদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তানজিলা আক্তার (১৪), মারিয়া খাতুন (১১) ও যুথী খাতুন (৯) মারা যায়। মারাত্মক আহত হয় ফাতেমা খাতুন (৯)। 

এই ঘটনার পর থেকে মাইক্রোবাসচালক পলাতক ছিল। ঘটনার দিন পুলিশ বাদী হয়ে মাইক্রোবাসচালকের বিরুদ্ধে খোকসা থানায় একটি মামলা করেন। 

গ্রেপ্তার মাইক্রোবাসচালক কাবের আলী (২৮) চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানার আমতৈল গ্রামের সারোয়ার উদ্দিনের ছেলে। 

কোম্পানি কমান্ডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খান বলেন, ‘পলাতক মাইক্রোবাসচালককে ধরতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। এর আগে মেহেরপুরের গাংনীতে দুবার অভিযান চালিয়েও তাকে ধরা সম্ভব হয়নি। সে তার বোনের বাড়িতে লুকিয়ে ছিল।’ 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চালক কাবের আলী জানিয়েছে, তিনি আগের দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে প্রবাসফেরত একজন যাত্রীসহ ছয়জনকে নিয়ে আলমডাঙ্গায় ফিরছিলেন। গাড়ির গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ৯৫ কিলোমিটার। দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানোর ফলে তিনি ক্লান্ত ছিলেন। যার ফলে ঘুম ঘুম চোখে তিনি গাড়ি চালাচ্ছিলেন। 

তিনি জানিয়েছেন, পাঁচজন শিশু রাস্তার ডান দিকে যাওয়ার সময় হঠাৎ দুই শিশু বাঁদিকে এসে রাস্তা পার হতে গেলে চালক গাড়িটি আবারও ডান দিকে টার্ন নেয়। তখন শিশুরা আবার বাঁদিক থেকে ডান দিকে চলে আসলে চাপা পড়ে। তবে এমনটা হওয়ার কথা না। তিনি সেল্ফ ডিফেন্সের জন্য এমন কথা বলতে পারেন। কারণ শিশুরা রাস্তা পার হলে একসঙ্গেই পার হওয়ার কথা। 

দুর্ঘটনার পর মাইক্রোবাসে থাকা ছয় যাত্রীকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে। ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন চালক। 

মোহাম্মদ ইলিয়াস খান আরও বলেন, মাইক্রোবাসটির মালিক মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন। তাঁর কাছ থেকে চালকের মোবাইল ফোন নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গ্রেপ্তার কাবের আলীকে চৌড়হাস হাইওয়ে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, মিমকে ঘটনাস্থল থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী তানজিলা খাতুন ও নুসরাত ইসলাম মারিয়া মারা যায় খোকসা ও কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে। তারা আপন দুই বোন। দুজনেই শিমুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। 

দুর্ঘটনায় নিহত মিম তাদের আপন চাচাতো বোন। সে পড়ত গ্রামের পূর্বাসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে। এ ছাড়া হাসপাতালে নিহত যুথী মিমের সহপাঠী ছিল। তাদের সবার বাড়ি শিমুলিয়া কুঠিপাড়ায়। বাড়িও পাশাপাশি। গ্রামের কবরস্থানে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হয়েছে তিন পরিবারের চার কন্যাশিশুকে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ–পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশ ‘মবের মুল্লুক’: সামিনা লুৎফা

বাংলাদেশের বন্দরে পাকিস্তানের কার্গো জাহাজ, ‘ঐতিহাসিক’ বলা হচ্ছে যে কারণে

পরশুরামে ছুরিকাঘাতে তরুণ নিহত

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সংলাপ শুরু কাল, চলবে পুরো নভেম্বর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত