তিন কোটির সড়ক ৬ মাসও টেকেনি

আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২: ৪৪

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলায় একটি সড়ক সংস্কারকাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বালুর পরিবর্তে মাটি ও নিম্নমানের ইট দিয়ে সড়কটি সংস্কার করায় কাজ শেষের ছয় মাসের মধ্যেই পিচ ও খোয়া উঠে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়। তিন কিলোমিটার সড়কটি সংস্কারে প্রায় তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।

উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কাদাকাটি এলাকা থেকে হলদেপোতা ব্রিজ পর্যন্ত এক কিলোমিটার এবং দুর্গাপুর অংশে দুই কিলোমিটার সড়ক সংস্কারকাজের ঠিকাদার ছিলেন সোহেল আহম্মেদ। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাইয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ২২ সালের আগস্টে। ২০২৩ সালের আগস্টে ঠিকাদারের দায়বদ্ধতার সময় পার হওয়ার আগেই সড়কে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়। বর্তমানে এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আশাশুনির কুল্যা-বাঁকা সড়কটি ব্যস্ততম পাকা সড়ক। সাতক্ষীরা জেলার সঙ্গে খুলনার দক্ষিণাঞ্চলের সংযোগ সড়ক এটি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সড়ক সংস্কারের সময় নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের প্রতিবাদ করলে পিস্তল তাক করে গুলি করার হুমকি দিতেন ঠিকাদার। কাদাকাটি গ্রামের আরিজুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারের অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারতেন না। পিস্তল তাক করে গুলি করার হুমকি দিতেন। তিনি গোপালগঞ্জের লোক, আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দিতেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে প্রকৌশলীসহ সরকারি কর্মকর্তারা কথা বলার সাহস পেতেন না।

ট্রাকচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, সড়ক দিয়ে গাড়ি চালানো যায় না। যন্ত্রাংশ ভেঙে যায়। গর্তে পড়ে যানবাহন উল্টে যায়। গর্তে পানি জমে এমন অবস্থা তৈরি হয়। কুল্যা-বাঁকা সড়কটি জনগুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কখনো এই সড়কের সমস্যা সমাধান হচ্ছে না।

কাদাকাটি বাজারের চা-দোকানি আব্দুল আজিজ বলেন, ‘ঠিকাদার ভেকু মেশিন দিয়ে সড়কের নিচ থেকে মাটি কেটে পাশে রাখেন। পরে বালুর পরিবর্তে সেই মাটি আবার সড়কে ফেলে রোলিং করেছেন। এটা দেখে আমরা বাধা দিই। তখন ঠিকাদার সোহেল প্রকাশ্যে পিস্তল উঁচিয়ে আমাদের হত্যার হুমকি দেন।’

কাদাকাটি গ্রামের মক্কা পুকুরপাড়ের আজমল হোসেন বলেন, পুকুরপাড়ে রাস্তার পাইলিং করার কথা ছিল ১৫ ইঞ্চি। ঠিকাদার করেছেন ১০ ইঞ্চি। ঢালাইসহ সব কাজ এমন মানহীন হয়েছে যে সড়ক ধসে পড়েছে।

আশাশুনি উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তুহিনুজ্জামান তুহিন বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ কুল্যা-বাঁকা সড়কটি বেহাল দশায় পরিণত হওয়ার জন্য মূল দায়ী ঠিকাদার সোহেল। তিনি নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়ক সংস্কার করেছেন। তাঁর অনিয়মের প্রতিবাদ করলে অস্ত্র উঁচিয়ে ভয় দেখিয়েছেন। তিনি পরিচয় দিয়েছেন গোপালগঞ্জের লোক হিসেবে। সে সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে আমরা প্রতিবাদ করতে পারিনি। এখন সময় এসেছে বিচার চাওয়ার। আমরা তাঁর বিচার চাই।’

পিস্তল তাক করার অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদার সোহেল আহম্মেদ বলেন, ‘আমার বাড়ি গোপালগঞ্জে নয়, বাগেরহাটে। আর আমি আওয়ামী লীগের নেতা নই, একসময় শিবিরের কর্মী ছিলাম। কাজ ঠিকভাবে হয়েছে।’

আশাশুনি উপজেলা প্রকৌশলী অনিন্দ্য দেব সরকার বলেন, সড়কের দুই পাশে পানি থাকায় রাস্তার ক্ষতি বেশি হয়েছে। সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে মেরামতের জন্য ঠিকাদারের দায়বদ্ধতার মেয়াদ এক বছর আগে শেষ হয়েছে। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ–পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশ ‘মবের মুল্লুক’: সামিনা লুৎফা

বাংলাদেশের বন্দরে পাকিস্তানের কার্গো জাহাজ, ‘ঐতিহাসিক’ বলা হচ্ছে যে কারণে

পরশুরামে ছুরিকাঘাতে তরুণ নিহত

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সংলাপ শুরু কাল, চলবে পুরো নভেম্বর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত