প্রথম জিজ্ঞাসায় নির্বাচন নিয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখালেন না মো. ইউনুস। টানা তিন দিনের ছুটিতে রংপুরে যাচ্ছেন তিনি। তিন দিনের ছুটির সঙ্গে আলাদা করে আরও তিন দিন ছুটি নিয়েছেন তিনি বাড়ি যাওয়ার জন্য। ছুটির উপলক্ষ নির্বাচন হওয়ায় একটু ইতস্তত করে জানালেন, ‘ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছি, পরিবেশ ভালো হলে ভোট দেব।’ 

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ইউনুসের মতো অনেকেই আজ শুক্রবার সকাল থেকেই ভিড় করেছেন ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড়ে মুখরিত হয়েছে উঠেছে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মগুলো। ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় যেন একটু বেশিই যাত্রী দেখা গেল। বিশেষ করে ১০টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়া আখাউড়াগামী কমিউটার ট্রেনটি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। 

আগামী রোববার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এদিন দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ফলে শুক্র, শনি ও রবিবার টানা তিন দিনের ছুটি। ছুটিতে ঢাকা ছাড়লেও ভোটের প্রশ্নে সবাই ইতস্তত ভাব দেখালেন। কেউ কেউ বিরূপ মন্তব্যও করে বসলেন। অনেকেই সুযোগ ও পরিবেশের কথা জানিয়ে বললেন, এলাকায় গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চান তারা। 

কমলাপুর স্টেশনে বিভিন্ন কমিউটার ট্রেনের টিকিটের জন্য লাইন ছিল দীর্ঘ। সকাল থেকে সব ট্রেনই আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা দেরি করে ছেড়েছে। আখাউড়া কমিউটার ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার পর যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে রংপুর এক্সপ্রেসের জন্য। এই ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার সময় ৯টা ১০ মিনিট লেখা থাকলেও ১০টা ৩০ মিনিটেও সেটি প্ল্যাটফর্মে এসে পৌঁছায়নি। স্টেশনের ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডে ট্রেনটি ছাড়ার সম্ভাব্য সময় দেওয়া ছিল ১০টা ২০ মিনিট। 

রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী সৈয়দ মেহেদি হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, স্কুল ছুটি থাকায় বাচ্চারা আগেই রংপুরে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেছে। নির্বাচনের কারণে তিন দিনের ছুটি পাওয়ায় তিনিও বাড়ি যাচ্ছেন তাদের ঢাকায় আনতে। রংপুরের ভোটার সৈয়দ মেহেদি বলেন, ‘ভোটের দিন পরিবেশ ভালো থাকলে কেন্দ্রে যাব।’ তবে তাঁর উদ্দেশ্য ভোট দেওয়ার জন্য বাড়িতে যাওয়া নয়, বরং পরিবারকে সময় দেওয়া। ছুটি মিলে যাওয়ায় সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি তিনি। 

একই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেল আরেক অপেক্ষমাণ যাত্রী জহিরুল ইসলামের কাছ থেকেও। জহিরুল জানান, ছুটির কারণেই তিনি বাড়িতে যাচ্ছেন। তবে সুযোগ পেলে তিনি ভোট দিয়ে আসবেন। 

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) অংশগ্রহণ করেনি। দলটি ভোটের বিরোধিতা সাধারণসহ মানুষকে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছে। এ লক্ষ্যে জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছে দলটি। তবে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। এমনকি কোনো এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে। 

এদিকে অনেকেই মনে করেন, বিএনপি না থাকায় ভোট হবে অনেকটা একতরফা। একটি নির্দিষ্ট দলের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ায় ভোটার উপস্থিতি কম থাকবে বলেও ধারণা করছেন তাঁরা। আখাউড়াগামী এক যাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানালেন, ছুটিতে বাড়ি গেলেও তিনি ভোট দিতে যাবেন না। তাঁর পছন্দের দল ও প্রার্থী নির্বাচনে নেই। তাই ভোট নিয়ে কোনো আগ্রহও কাজ করছে না তাঁর। 

একই রকম বক্তব্য পাওয়া গেল আরেক যাত্রীর কাছ থেকেও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই যাত্রী বলেন, ‘এই নির্বাচনে একটি দলই ভাগ হয়ে ভোট করছে। জিতলেও তারা, হারলেও তারা। তাই ভোট দিয়ে কী লাভ! ছুটি, তাই বাড়ি যাচ্ছি।’ 

কমলাপুর স্টেশনে যাত্রীদের ভিড়ের সঙ্গে চোখে পড়ে নিরাপত্তাও। রেল পুলিশের সঙ্গে অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীও স্টেশনে সক্রিয়। কমলাপুরের স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মানুষ আগে থেকেই টিকিট কেটে রেখেছে। অগ্রিম টিকিট শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। 

কমলাপুরের মতো ভিড় রয়েছে সদরঘাটেও। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন বিভাগের (ঢাকা নদীবন্দর, সদরঘাট) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সূত্রে জানা যায়, অন্যান্য দিনের তুলনায় যাত্রীর চাপ মোটামুটি বেশি। টানা তিন দিনের ছুটিতে যাত্রীর চাপ রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকেই যাত্রীর চাপ বেড়েছে। বরিশাল ও চাঁদপুর অঞ্চলে যাত্রীর চাপ বেশি। বৃহস্পতিবার ৬৫টি লঞ্চ ঢাকা ছেড়েছে। আজও এমন সংখ্যাই থাকবে। 

এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে মিলিয়ে ৭২ ঘণ্টা দেশে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। এই নিষেধাজ্ঞা শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শুরু হয়ে সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত বহাল থাকবে। একই সঙ্গে ভোটের আগের দিন থেকে ভোটের পরদিন সকাল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ট্রাক, পিকআপ ও মাইক্রোবাস।