হেফাজত নেতাদের চাপে নারায়ণগঞ্জে হচ্ছে না লালন মেলা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯: ২৪
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১: ০৯
নারায়ণগঞ্জ সদরের মধ্য নরসিংহপুর গ্রামে মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমি প্রাঙ্গণে সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার আয়োজন করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার কাশিপুরের মধ্য নরসিংহপুর গ্রামে ‘মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমি’ প্রাঙ্গণে আয়োজিত ‘মহতী সাধু সঙ্গ ও লালন মেলা’ আয়োজনের অনুমতি বাতিল করেছে জেলা প্রশাসন। নিরাপত্তার কারণ এবং স্থানীয় হেফাজত নেতাদের আপত্তির জেরে এই অনুমতি বাতিল করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক। তিনি বলেন, ‘এই মেলা বন্ধের জন্য স্থানীয় হেফাজতের নেতারা দাবি জানিয়েছেন। মেলার অনুমতি দেওয়া হলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় আমরা লালন মেলার অনুমতি দেইনি।’

এর আগে, ১৫ নভেম্বর হেফাজতে ইসলামের নেতা–কর্মীরা এই মেলাকে ইমান বিধ্বংসী আখ্যা দিয়ে মেলা বন্ধে মিছিল করে। পরে মুক্তিধাম আশ্রমের অদূরে জড়ো হয়ে সেখানে বক্তব্য দেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল আউয়াল।

তিনি বক্তব্যে বলেন, ‘অন্যায়কে প্রতিহত করতে আমরা এখানে সমবেত হয়েছি। আমাদের তৌহিদি জনতা নারায়ণগঞ্জে কম নাই। প্রয়োজনে তৌহিদি জনতাকে নিয়ে আমরা সামনে বাড়ব, কী করে এটি (লালন মেলা) বন্ধ করা যায়, সেটি আমরা দেখব। প্রশাসনকে বলব, এখানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যেতে পারে। মুসলিম তৌহিদি জনতা আপস করতে রাজি না। প্রয়োজনে আমরা হাত দিয়ে বাধা দেব। যা কিছু এখানে হচ্ছে, এগুলো বন্ধ করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই যেন এটা না হয়। অপ্রীতিকর কিছু হলে তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে।’

হেফাজত নেতা আব্দুল আউয়ালের হুমকির প্রতিবাদে ২০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করে মুক্তিধাম আশ্রমের লোকজন এবং নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা। মানববন্ধনে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সিনিয়র সহসভাপতি রফিউর রাব্বী বলেন, ‘প্রশাসনের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের মতপ্রকাশ, ধর্ম পালন এবং শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা। নির্বিঘ্নে লালন মেলা আয়োজনের জন্য রাষ্ট্র ও সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আপনাদের কাজ করতে হবে। এই দেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ রয়েছে। সকল ধর্ম, বর্ণ ও মতের মানুষের বসবাস এই দেশে। এখানে প্রত্যেকের নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা রয়েছে। নিজের মত আরেকজনের ওপর চাপিয়ে দিয়ে তার কণ্ঠরোধ করা শুধু ‘২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধেই নয়, এটি আমাদের সংবিধানেরও বিরোধিতা।’

নারায়ণগঞ্জ সদরের মধ্য নরসিংহপুর গ্রামে মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমি প্রাঙ্গণে সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার আয়োজন করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
নারায়ণগঞ্জ সদরের মধ্য নরসিংহপুর গ্রামে মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমি প্রাঙ্গণে সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার আয়োজন করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

আয়োজকেরা জানান, সাত বছর ধরে এখানে মহতী সাধু সঙ্গ ও লালন মেলা আয়োজন করে আসছিলেন তাঁরা। মুক্তিধাম আশ্রম ও লালন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ফকির শাহ জালাল বলেন, ‘১০ বছর আগে আমার জমিতে আশ্রম প্রতিষ্ঠা করি। সাত বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লালন ভক্তরা এখানে আসেন। আমরা তো কারও বিরুদ্ধে কিছু বলি না। আমাদের মতো করে সাঁইজির গান চর্চা করি, ভক্তদের মাঝে খাবার বিতরণ করি। এমন পরিস্থিতি আগে কখনো হয়নি। এলাকার মানুষও বাধা দেয়নি। কিন্তু এবার তৌহিদি জনতা বলছে মেলা বন্ধ না করলে সব ভেঙে ফেলবে।’

শাহ জালাল বলেন, ‘গত ১৪ অক্টোবর মহতী সাধু সঙ্গ ও লালন মেলা আয়োজনের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর অনুমতি চাওয়া হয়। ইতিমধ্যে এই আয়োজনের জন্য কার্ড ছাপানো এবং বিতরণ করা হয়ে গেছে। তৌহিদি জনতার হুমকির পর ১৯ নভেম্বর পুলিশ সুপারের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছি। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে শেষ পর্যন্ত জেলা প্রশাসন তাদের অনুমতি প্রদান করেনি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়, অগ্রাধিকার প্রকৌশলীদের

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার সময় বাড়ল

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

ব্যাংক খাতে নতুন নীতিমালা: আটকে গেল ২৫৮ কর্মকর্তার জিএম পদে পদোন্নতি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত