নাজমুল হাসান সাগর, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) থেকে
রেললাইনের পাত ঘেঁষে পড়ে আছে বিচ্ছিন্ন একটি আঙুল, তাঁর গোড়ায় জমাটবাধা রক্ত। লম্বা সেই আঙুলের নখে ফিকে হওয়া মেহেদির রং। নানা বয়সী উৎসুক মানুষ সেই আঙুল দেখছিলেন ভয়ার্ত চোখে, সেখানে পিনপতন নীরবতা। হঠাৎই এক তরুণী বলে উঠলেন, ‘আহারে!’
পাশে থাকা আরেক মধ্যবয়সী নারী বলে উঠলেন, ‘কী সুন্দর নখ, মেহেদিও দিয়েছিল ৷’ দ্বিতীয়জনের কথা শেষ না হতেই আরেকজন বলে উঠলেন, ‘জীবনে বেঁচে থাকার চেয়ে বড় কিছু আর নাই।’
গতকাল সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে ভৈরব জংশনের জগন্নাথপুর আউটার স্টেশনে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর দিন মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থল দেখতে এসেছেন হাজার হাজার মানুষ। রেললাইনে পড়ে থাকা মানুষের ছিন্নভিন্ন অঙ্গগুলোর দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলেন হাজার হাজার মানুষ। উৎসুক কয়েকজন মানুষের স্থানীয় ভাষার কথোপকথন ছিল এগুলো।
যেখানে আঙুল পড়ে ছিল তার কয়েক হাত দূরেই রেললাইনের স্লিপারে লেগে থাকতে দেখা গেছে মানুষের মাথার মগজ, পড়ে আছে ভাঙা খুলি। সেসবের ওপর ভনভনে করছে মাছি। উৎসুক জনতা নাক-মুখ ঢেকে সেগুলো দেখছে। কেউ কেউ আবার না দেখেই সেগুলো পা দিয়ে মাড়িয়ে যাচ্ছে। এতে আবার দুই-একজন ক্ষিপ্ত হচ্ছে মাড়িয়ে যাওয়া ব্যক্তির কাণ্ডজ্ঞান দেখে। আব্দুল জলিল নামে এক ব্যক্তি মাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি মানতে না পেরে অচেনা লোকের উদ্দেশ্য করে আপন মনে বলতে শুরু করলেন, ‘মানুষের চোখ ও বিবেক বলতে কিছু নেই। এই সব জায়গা দিয়ে যাওয়ার সময় চোখ-কান খোলা রাখতে হয়। বিবেকহীন মানুষ, কীভাবে এটা পা দিয়ে মাড়িয়ে গেল।’
তারও কয়েক গজ দূরে আরও একটি বিচ্ছিন্ন বৃদ্ধা আঙুল। সেটি দেখে একজন মন্তব্য করলেন, ‘মনে হয় লোকটা বয়স্ক ছিল।’ শুধু ছিন্নভিন্ন অঙ্গই নয়, পড়ে থাকা বিয়ের মুকুট, কনের বেনারসির লাল টুকটুকে ওড়না, টিটির মাথার টুপি আর এখানে সেখানে পড়ে থাকা নানা ধরনের জুতাও বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখছে উৎসুক জনতা। বেলা যত বাড়ছে ঘটনাস্থল ঘিরে উৎসুক জনতার ভীড় তত বাড়ছে। মুখে মুখেই রটে যাচ্ছে দুর্ঘটনার ভয়াবহতার কথা।
ঘটনার পরই গতকাল সবার আগে উদ্ধার কাজে এসে যোগ দেয় ভৈরব নদী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ফায়ার ফাইটাররা। নয় সদস্যের এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন স্টেশনের ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) নুরুল কবির সরকার। তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ হয় আজকের পত্রিকার। শুরুর দিকের উদ্ধার কাজে থেকে নিজ হাতে ১৪টি মরদেহ ও অন্তত ১০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন এই কর্মকর্তা ৷
নুরুল কবির বলেন, ‘এসবে আমরা অভ্যস্ত, তবে ক্ষতিগ্রস্ত বগির ভেতরে ঢুকে প্রথম দেখায় আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। মানুষের মৃত্যু কত নির্মম ভাবে হতে পারে সেটা এখানে না দেখলে কেউ কল্পনাই করতে পারবেন না।’ তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলতে শুরু করলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত একটি বগির মাঝে গিয়ে দেখি একজন মহিলা দুটি ছোট বাচ্চা দুই হাতে জড়িয়ে ধরে আছে। বাচ্চারাও ওই মহিলাকে জড়িয়ে ধরে আছে। মহিলার মাথা ফেটে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছিল তখনো। বাচ্চা দুটোর একজনের পা ভেঙে নড়বড়ে আর একজনের পিঠে আঘাত। অনেক রক্ত বের হচ্ছিল। যতটুকু বুঝেছি যে বাচ্চাটার পিঠে আঘাতে তার মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। তাড়াতাড়ি কাছে গিয়ে দেখলাম তিনজনই স্পট ডেথ! জীবন কত ঠুনকো, তাই না?’
রক্তে ভেসে গেছে বগির মেঝে। কার রক্ত কার সঙ্গে মিছে গেছে কেউ বলতে পারে না। বলার উপায়ও নেই। এসব বলতে বলতে এই কর্মকর্তার চোখ দুটো বড় হয়ে যাচ্ছিল। সেই চোখে প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠছিল মর্মান্তিকতা ও বীভৎসতার! এবার তিনি বললেন, আমি যাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছি তাদের বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের গরিব মানুষ৷ তাদের পোশাক আসাকেই সেটা বোঝা যায়। যেভাবে তাদের শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটা চোখে দেখা গেলেও মুখে বর্ণনা করা কঠিন। আমি শুধু ভাবি এই মানুষগুলো চিকিৎসা করে সুস্থ জীবনে ফিরতে পারবে তো? এই ধরনের আহতদের চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা খরচ হয় ৷ সেটা তারা জোগাড় করতে পারবে তো! অনেকেই বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন আবার কেউ চিকিৎসা করে বাঁচলেও সারাটা জীবন পঙ্গুত্ব নিয়ে কাটাতে হবে।’
এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু ও ৮০ জন আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস। একজন বাদে মৃত সবাইকে শনাক্ত করে তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে ৷ আহতদের মধ্যে অন্তত বিশজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন ভৈরব, নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে।
রেললাইনের পাত ঘেঁষে পড়ে আছে বিচ্ছিন্ন একটি আঙুল, তাঁর গোড়ায় জমাটবাধা রক্ত। লম্বা সেই আঙুলের নখে ফিকে হওয়া মেহেদির রং। নানা বয়সী উৎসুক মানুষ সেই আঙুল দেখছিলেন ভয়ার্ত চোখে, সেখানে পিনপতন নীরবতা। হঠাৎই এক তরুণী বলে উঠলেন, ‘আহারে!’
পাশে থাকা আরেক মধ্যবয়সী নারী বলে উঠলেন, ‘কী সুন্দর নখ, মেহেদিও দিয়েছিল ৷’ দ্বিতীয়জনের কথা শেষ না হতেই আরেকজন বলে উঠলেন, ‘জীবনে বেঁচে থাকার চেয়ে বড় কিছু আর নাই।’
গতকাল সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে ভৈরব জংশনের জগন্নাথপুর আউটার স্টেশনে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর দিন মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থল দেখতে এসেছেন হাজার হাজার মানুষ। রেললাইনে পড়ে থাকা মানুষের ছিন্নভিন্ন অঙ্গগুলোর দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলেন হাজার হাজার মানুষ। উৎসুক কয়েকজন মানুষের স্থানীয় ভাষার কথোপকথন ছিল এগুলো।
যেখানে আঙুল পড়ে ছিল তার কয়েক হাত দূরেই রেললাইনের স্লিপারে লেগে থাকতে দেখা গেছে মানুষের মাথার মগজ, পড়ে আছে ভাঙা খুলি। সেসবের ওপর ভনভনে করছে মাছি। উৎসুক জনতা নাক-মুখ ঢেকে সেগুলো দেখছে। কেউ কেউ আবার না দেখেই সেগুলো পা দিয়ে মাড়িয়ে যাচ্ছে। এতে আবার দুই-একজন ক্ষিপ্ত হচ্ছে মাড়িয়ে যাওয়া ব্যক্তির কাণ্ডজ্ঞান দেখে। আব্দুল জলিল নামে এক ব্যক্তি মাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি মানতে না পেরে অচেনা লোকের উদ্দেশ্য করে আপন মনে বলতে শুরু করলেন, ‘মানুষের চোখ ও বিবেক বলতে কিছু নেই। এই সব জায়গা দিয়ে যাওয়ার সময় চোখ-কান খোলা রাখতে হয়। বিবেকহীন মানুষ, কীভাবে এটা পা দিয়ে মাড়িয়ে গেল।’
তারও কয়েক গজ দূরে আরও একটি বিচ্ছিন্ন বৃদ্ধা আঙুল। সেটি দেখে একজন মন্তব্য করলেন, ‘মনে হয় লোকটা বয়স্ক ছিল।’ শুধু ছিন্নভিন্ন অঙ্গই নয়, পড়ে থাকা বিয়ের মুকুট, কনের বেনারসির লাল টুকটুকে ওড়না, টিটির মাথার টুপি আর এখানে সেখানে পড়ে থাকা নানা ধরনের জুতাও বেশ আগ্রহ নিয়ে দেখছে উৎসুক জনতা। বেলা যত বাড়ছে ঘটনাস্থল ঘিরে উৎসুক জনতার ভীড় তত বাড়ছে। মুখে মুখেই রটে যাচ্ছে দুর্ঘটনার ভয়াবহতার কথা।
ঘটনার পরই গতকাল সবার আগে উদ্ধার কাজে এসে যোগ দেয় ভৈরব নদী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ফায়ার ফাইটাররা। নয় সদস্যের এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন স্টেশনের ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) নুরুল কবির সরকার। তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ হয় আজকের পত্রিকার। শুরুর দিকের উদ্ধার কাজে থেকে নিজ হাতে ১৪টি মরদেহ ও অন্তত ১০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন এই কর্মকর্তা ৷
নুরুল কবির বলেন, ‘এসবে আমরা অভ্যস্ত, তবে ক্ষতিগ্রস্ত বগির ভেতরে ঢুকে প্রথম দেখায় আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। মানুষের মৃত্যু কত নির্মম ভাবে হতে পারে সেটা এখানে না দেখলে কেউ কল্পনাই করতে পারবেন না।’ তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলতে শুরু করলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত একটি বগির মাঝে গিয়ে দেখি একজন মহিলা দুটি ছোট বাচ্চা দুই হাতে জড়িয়ে ধরে আছে। বাচ্চারাও ওই মহিলাকে জড়িয়ে ধরে আছে। মহিলার মাথা ফেটে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছিল তখনো। বাচ্চা দুটোর একজনের পা ভেঙে নড়বড়ে আর একজনের পিঠে আঘাত। অনেক রক্ত বের হচ্ছিল। যতটুকু বুঝেছি যে বাচ্চাটার পিঠে আঘাতে তার মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। তাড়াতাড়ি কাছে গিয়ে দেখলাম তিনজনই স্পট ডেথ! জীবন কত ঠুনকো, তাই না?’
রক্তে ভেসে গেছে বগির মেঝে। কার রক্ত কার সঙ্গে মিছে গেছে কেউ বলতে পারে না। বলার উপায়ও নেই। এসব বলতে বলতে এই কর্মকর্তার চোখ দুটো বড় হয়ে যাচ্ছিল। সেই চোখে প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠছিল মর্মান্তিকতা ও বীভৎসতার! এবার তিনি বললেন, আমি যাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছি তাদের বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের গরিব মানুষ৷ তাদের পোশাক আসাকেই সেটা বোঝা যায়। যেভাবে তাদের শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটা চোখে দেখা গেলেও মুখে বর্ণনা করা কঠিন। আমি শুধু ভাবি এই মানুষগুলো চিকিৎসা করে সুস্থ জীবনে ফিরতে পারবে তো? এই ধরনের আহতদের চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা খরচ হয় ৷ সেটা তারা জোগাড় করতে পারবে তো! অনেকেই বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন আবার কেউ চিকিৎসা করে বাঁচলেও সারাটা জীবন পঙ্গুত্ব নিয়ে কাটাতে হবে।’
এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু ও ৮০ জন আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস। একজন বাদে মৃত সবাইকে শনাক্ত করে তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে ৷ আহতদের মধ্যে অন্তত বিশজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন ভৈরব, নরসিংদী ও কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে।
রাজধানীর হাজারীবাগ পার্কের পাশে ছুরিকাঘাতে শাহদাত হোসেন আকবর ওরফে শান্ত (১৭) নামে এক কিশোর খুন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাজারীবাগ পার্কের পাশে মাদ্রাসার গলিতে গিয়াস উদ্দিনের বাড়ির সামনে এই ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে।
১ ঘণ্টা আগেনড়াইলের কালিয়ায় চিরকুট পাঠিয়ে হত্যার হুমকির পর ধানখেত থেকে এক শিশুর হাত বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার নড়াগাতী থানার খাশিয়াল ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
১ ঘণ্টা আগেনওগাঁর মান্দায় একটি ক্লাবের কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ৫টি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় আরও ৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এ সময় প্রতিপক্ষের মারধরে চারজন আহত হন।
১ ঘণ্টা আগেজামালপুরের ইসলামপুরে ঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণা চেষ্টার অভিযোগে ছয়জন নারীকে থানায় সোপর্দ করেন এলাকাবাসী। পুলিশ তাঁদেরকে নাশকতার পরিকল্পনা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। গ্রেপ্তার নারীদের দাবি, তাঁরা একটি চক্রের প্রতারণার শিকার।
২ ঘণ্টা আগে