ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে পঙ্গু হন নির্মাণশ্রমিক মিলন, অর্থাভাবে বন্ধ মেয়ের লেখাপড়া

শ্যামপুর-কদমতলী (ঢাকা), প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ২১: ১০
আন্দোলনের সময় ঘাতকের বুলেট মিলনের বাঁ পায়ের হাঁটু ছিদ্র করে বেরিয়ে যায়। ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালীর দশমিনা থানার চানপুরা গ্রামের যুবক মিলন। স্ত্রী ও একমাত্র কন্যাকে নিয়ে থাকতেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার মাতুয়াইলের স্বপন মৃধা রোডের, বাইতুস সালাম জামে মসজিদ এলাকার ৪০৬/১ নম্বর বাড়িতে। গত ২০ জুলাই শনিবার দুপুরে স্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘একজনের কাছে টাকা পাবো, সেটা আনতে যাচ্ছি। তুমি ঠিকমতো থেকো। খাওয়া-দাওয়া করিও।’

এরপর বাড়ি থেকে বের হয়ে যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন মিলন। সেখানে আন্দোলনের সময় ঘাতকের বুলেট তাঁর বাঁ পায়ের হাঁটু ছিদ্র করে বেরিয়ে যায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মিলন। এখন পঙ্গু হয়ে বিছানায়।

মিলনের স্ত্রী লাকি বেগম বলেন, ‘গত ২০ জুলাই শনিবার দুপুরে একজনের কাছে টাকা পাবো বলে বেরিয়ে যায়। আমি যেতে নিষেধ করি। কিন্তু সে কথা না শুনে আসতেছি বলে বেরিয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ঘণ্টাখানেক পরে আমার ভাশুর আমাকে ফোন দিয়ে জানায় মিলন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তখন আমি আমার খালু শ্বশুরকে ফোন দিলে সে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে আসছি। এরপর চিকিৎসা শেষে তাকে বাসায় আনা হয়।

লাকি বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার স্বামী কয়েক মাস যাবৎ কোনো কাজ করতে পারে না। ছোট বাচ্চাটাকে নিয়ে এক বেলা খাই, আরেক বেলা না খেয়ে থাকি। অবস্থা বেগতিক দেখে গত কয়েক মাস যাবৎ আমি একটি সমিতিতে মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করি। সামান্য বেতন পাই। এই বেতন দিয়ে ঘর ভাড়া, সংসার চালানো ও স্বামীর দামি দামি ওষুধ কেনা সম্ভব হয় না। এদিকে মাদ্রাসার বেতন দিতে না পারায় মেয়েটার লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’

নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন মো. মিলন (৩২)। স্ত্রীসহ থাকেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার মাতুয়াইলের স্বপন মৃধা রোডের, বাইতুস সালাম জামে মসজিদ এলাকার ৪০৬ / ১ নম্বর বাড়িতে। গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার দশমিনা থানার চানপুরা গ্রামে। স্ত্রী, আট বছরের এক মেয়ে নিয়ে মাতুয়াইলে এক কক্ষ নিয়ে থাকেন মিলন। নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে ভালোই চলছিল মিলনের সংসার। কিন্তু কয়েক মাস যাবৎ পঙ্গুত্ববরণ করে কাজ করতে না পারায় খুবই মানবিক জীবন যাপন করতে হচ্ছে মিলনের পুরো পরিবারকে। স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে মিলনের। নিয়মিত বেতন দিতে না পারায় মাদ্রাসা পড়ুয়া মেয়ের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

মিলন বলেন, ‘আমি তো দেশের জন্য আন্দোলনে গিয়েছিলাম। গুলিতে পঙ্গু হয়ে বিছানায় পড়ে আছি। হাঁটতে পারি না। কিন্তু কেউ কোন খবর নেয়নি। কেউ সাহায্য সহযোগিতার হাতও বাড়ায়নি। এখন আমি টাকার অভাবে ওষুধ খাইতে পারি না। কবে থেকে কাজ করতে পারব, তাও বলতে পারছি না। স্ত্রী ও ছোট মেয়েটাকে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট সাহায্য সহযোগিতার জন্য বিনীত প্রার্থনা করছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আবু সাঈদকে ৪–৫ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়—শেখ হাসিনার দাবির সত্যতা কতটুকু

মেট্রোরেল থেকে আমলাদের বিদায়, অগ্রাধিকার প্রকৌশলীদের

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার সময় বাড়ল

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

ব্যাংক খাতে নতুন নীতিমালা: আটকে গেল ২৫৮ কর্মকর্তার জিএম পদে পদোন্নতি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত