নুরুল আমিন হাসান, উত্তরা (ঢাকা)
রাজধানীর তুরাগের বাসিন্দাদের কাছে আতঙ্কের নাম পুলিশ। সোর্সের মাধ্যমে যাকে-তাকে ধরে নিয়ে মাদক মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া আটক করে নগদ, বাকি ও কিস্তিতে তাঁরা ঘুষ-চাঁদা নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
রাজধানীর তুরাগ এলাকায় আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এ ঘটনায় তুরাগের দিয়াবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (আইসি) উপপরিদর্শক (এসআই) টিএম আল আমিন ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. ওয়াসিমকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এরপরও আতঙ্ক কমেনি জনসাধারণের।
আজকের পত্রিকার হাতে আসা একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রিকশাচালক জাবেদ ও দিয়াবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই ওয়াসিম ঘুষের টাকা লেনদেন নিয়ে কথা বলছেন। সেখানে রিকশাচালক জাবেদ বলেন, ‘স্যার, আমি তো ১৭ হাজার টাকা মিলাইবার পারি নাই।’ এ সময় এএসআই ওয়াসিম বলেন, ‘তরে মাইরা লামু কিন্তু। একাবারে মাইরা লামু।’ নিরুপায় রিকশাচালক জাবেদ বলেন, ‘মারেন কাটেন যাই করেন স্যার, আল্লাহ বাঁচাইলে কালকা আপনারে টাকা দিয়া থুইয়া আইমু।’ এএসআই ওয়াসিম বলেন, ‘এত কিছু বুঝি না। তরে তাড়াতাড়ি আইতে কইতাছি।’
জাবেদ হোসেন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার আব্দুল গফুরের ছেলে। বর্তমানে তিনি তুরাগের বাউনিয়া এলাকায় থাকেন। ওই কথোপকথনের বিষয়ে জানতে চাইলে জাবেদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গাঁজার পোঁটলা পাইয়াই ওয়াসিম স্যার বলতেছে, ‘টেহা দে। আমি তহন তিন হাজার টেহা দেই। তারপর আবার রিকশা বেইচ্চা আইনা ১৭ হাজার টেহা দেই।’
জাবেদ বলেন, ‘টাকাটা দিছি দুই কিস্তিতে। একবার তিন হাজার টাকা দিয়া বিদায় করছি। আরেকবার রিকশা বেইচ্চা ১৭ হাজার টাকা দিছি। আমি মুখ খোলার (জানাজানি হলে) পর থেকে আমাকে বিসরাইতেছে (খুঁজতেছে)। পাইলে আমাকে মেরে ফেলবে। আগেও হুমকি দিয়েছিল। জাতীয় নির্বাচনের পরদিন ধইরা চালানও দিছিল।’
কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজের কারণে তাঁর দুই লাখ টাকা নামছে। এর কারণে আমারে ধরে ট্যাপেন্টা ও গাঁজা দিয়ে মামলা করে ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। এক মাস ১৫ দিন থেকে বের হইছি। অথচ আমার কাছে কিছুই পায় নাই।’
ক্যান্টনমেন্টের বালুঘাট এলাকার বাসিন্দা ও গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ী তানজিন হোসেন আদর বলেন, ‘আমি তুরাগের পুকুরপাড়ে চাচার বাসায় গিয়েছিলাম। তখন সাদা পোশাকে এএসআই ওয়াসিম আমাকে ধরে একবার ডিবি, আরেকবার পুলিশ পরিচয় দিয়ে তল্লাশি শুরু করে। এরপর পকেট থেকে মোবাইল ফোন ও ব্যবসার ১৭ হাজার টাকা নিয়ে বলে, ‘‘তর কাছে মাদক পাওয়া গেছে, আমি ভিডিও করব। তুই স্বীকার করবি। নাহলে তকে ধরে মামলা দিব।’’ স্বীকার করতে না চাইলে বিভিন্ন ভয়ভীতি হুমকি দেখায়। একা থাকায় কিছুই বলতে পারিনি।’
আদর বলেন, ‘পকেট থেকে ১৭ হাজার টাকা নিয়ে যাওয়ার পরও আরও ২০ হাজার টাকা দাবি করে সে। দুই দিনের মধ্যে সেই টাকা না দিলে মাদক মামলার আসামি বানিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয়।’
বটতলার এস টি সরকার ফার্মেসির মালিক এম এ হুসাইন সরকার অভিযোগ করে বলেন, ‘এক নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির কাছে ব্যথা ও ঘুমের ওষুধ বিক্রি না করায় দোকানে বিশৃঙ্খলা করে। পরে ওই ব্যক্তিই ফোন করে পুলিশ নিয়ে আসে। তখন এএসআই ওয়াসিম আমাকে ধরে গার্ডরুমে নিয়ে যায়। পরে যেন এমন না হয়, তাই সেখানে এসআই আল আমিন বিচার করে আমার কাছ থেকে দুই হাজার টাকা নেয়। আবার একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষরও রেখে দেয়।’
বাদালদি মসজিদ সংলগ্ন সরকারি খাস জমিতে ঘর করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন মো. তাহাজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বাদালদী মসজিদে ওয়াজের দিন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ওয়াসিম সিভিল পোশাকে আমার ছেলে ও তাঁর বন্ধুকে ধইরা নিয়া গার্ডরুমে নিয়া ২০ হাজার টাকা দাবি করছে। ওই দিন খবর পেয়ে রাত ১টার দিকে ৬ হাজার টাকা দিয়ে তাঁদের ছাড়ায়ে আনি। পরদিন বিকেল বেলা সোর্স মোস্তফা এসে বাকি ৬ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।’
এলাকার লোকজনের অভিযোগ, এএসআই ওয়াসিমের সঙ্গে একটি সাইড ব্যাগ থাকে। সেই ব্যাগে সব সময়ই মাদক থাকে। নিরীহ মানুষ ধরার পর টাকা না দিলে সেই মাদক দিয়েই ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। আবার সোর্স নাইজেরিয়ান জামান, মোস্তফা ও নুরুর মাধ্যমে চেকের সময় মাদক পকেটে মাদক ঢুকিয়ে দিয়ে টাকা-পয়সা আদায় করা হয়। সবকিছুর নেতৃত্ব দেন ফাঁড়ির আইসি এসআই আল আমিন।
তাঁদের অভিযোগ, প্রায়ই মানুষকে ধরে বাউনিয়া বটতলার সিভিল অ্যাভিয়েশনের গার্ড রুমে ধরে নিয়ে যায় ওয়াসিম ও আল আমিন। তখন গার্ড রুমকে বানানো হয় আদালত। আর ওই আদালতের বিচারক থাকেন এসআই আল আমিন।
কী কী মাদক থাকতে জানতে চাইলে বাসিন্দারা বলেন, ট্যাপেন্টা, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা সবই থাকে তার (ওয়াসিম) কাছে। যখন যেটা দরকার মনে করে, তখন সেটা দিয়েই মানুষকে ফাঁসিয়ে দেয়।
বাউনিয়ার জলিলের গ্যারেজে বসবাস করে নাইজেরিয়ার নাগরিক জামান। সেখানকার রিকশাচালক ও মিস্ত্রিরা বলেন, ‘এএসআই ওয়াসিম স্যার তাঁকে রাখতে বলছে। সে শুধু রাতে এসে ঘুমায়, আর সারা দিন ওয়াসিম স্যারের সঙ্গে থাকে। কোনো কামকাজ করে না। শুধু পুলিশের সোর্স হিসাবে কাজ করে। জামান আমাদের জানিয়েছে, সে আট মাস জেল খেটেছে। তাঁর বাংলাদেশে সাজা হয়েছিল।’
পথেই দেখা হয় ওই নাইজেরিয়ান সোর্সের সঙ্গে। সোর্স জামান বলেন, ‘পুলিশ ইজ মাই বস। আই অ্যাম নাইজেরিয়ান, হি ইজ বাংলাদেশি। আই এম অ্যা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, অ্যা র্যাপার, অ্যা সিঙ্গার। ব্যাট আই হ্যাভ নো ম্যানি, নো হাউজ। ওয়াসিম হেল্পস মি।’
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, দিয়াবাড়ি পুলিশ ফাঁড়িতে যোগদানের পূর্বে এসআই আল আমিন ডিএমপির বিমানবন্দর থানায় ছিলেন। তৎকালীন সিভিল অ্যাভিয়েশনের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ও বাউনিয়ার আবুল কাশেমকে এক প্যাকেট আমদানি নিষিদ্ধ এক প্যাকেট বিদেশি সিগারেটসহ আটক করে এসআই আল আমিন। সিগারেটের প্যাকেটটি আবুল কাশেমের আরেক সহকর্মী তাঁকে দিয়ে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হচ্ছিলেন। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ওই সহকর্মী সেটি তাঁর দাবি করলেও তদন্তের নামে যাচাই বাছা্ইয়ের কথা বলে থানার হাজতে ঢুকিয়ে রাখা হয়। পরে তাঁকে রিমান্ড ও মামলার ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা আদায় করা হয়। কাশেম পর পর দুইবারের স্টোকের রোগী হওয়ায় তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পাননি।
তুরাগের ধউর এলাকায় গত ১৩ মার্চ রাতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের রোষানলে পড়েন স্থায়ীয় সংবাদকর্মী সাইফুল ইসলাম। এ ঘটনায় তিনি উত্তরার উপকমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগও দেন। ওই সময়ের ভিডিও ফুটেজটিও রয়েছে আজকের পত্রিকার হাতে। সাইফুল বলেন, ‘একটি সিএনজি থেকে পুলিশ ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০০ টাকা নিয়েছে। সেটির কারণ জানতে চাইলে আমাকে ধরে বক্সে নিয়ে যায় এএসআই ওয়াসিম ও তাঁর সোর্স সুমন। সেখানে নিয়ে আমাকে ছিনতাইকারী বানানোর চেষ্টা চালায় তাঁরা।’
২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বরের একটি জিডির ছবি আসে আজকের পত্রিকার হাতে। জিডির নম্বর ৩০৬, সময় ১২টা ২০ মিনিট, বাদী এসআই আল আমিন। জিডিতে উল্লেখ রয়েছে, এএসআই ওয়াসিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন লোকদের আটক করে হয়রানিসহ মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি ওসি সাহেবসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে ঊর্ধ্বতন স্যারদের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে জিডি করে প্রতিবেদনের নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে জিডি করা হল। এএসআই ওয়াসিমকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হলো।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, সিটি করপোরেশন একদিকে জসিমউদ্দিনের পাকার মাথায় অবৈধ ফুটপাত উচ্ছেদ করে, অন্যদিকে ফাঁড়ির প্রশ্রয়ে উচ্ছেদের পরই সেটি আবার দখল করে শুরু করা হয় চাঁদাবাজি। শতাধিক দোকান থেকে দৈনিক আদায় করা হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। অপরদিকে দিয়াবাড়ি বউবাজের হাজারো দোকান থেকে একইভাবে চাঁদাবাজি করেন শ্রমিক লীগ নেতা রোস্তম আলী ও তাঁর সহযোগীরা। সেটিও একদিকে রাজউক উচ্ছেদ করলেও অন্যদিকে বসে পড়ে। এসব ফুটপাত থেকে দৈনিক এবং তুরাগের প্রতিটি রিকশার গ্যারেজ থেকে পুলিশ ফাঁড়ির নামে সপ্তাহে ৫০০ টাকা করে তোলার অভিযোগও রয়েছে।
পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৪ মার্চ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে ডিএমপির আইএডি শাখার উপ-কমিশনারকে আহ্বায়ক ও ক্রাইম বিভাগের কমিউনিটি পুলিশের শুভ কুমার ঘোষ ও প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. ফেরদাউছ হোসেনকে সদস্য করা হয়েছে।
এ ছাড়া ডিএমপির উত্তরা বিভাগের পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি গঠনের পরই এএসআই ওয়াসিমকে ফাঁড়ি থেকে বদলি করে তুরাগ থানায় সংযুক্ত করা হয়। পরে গত ১৫ মার্চ আবার ফাঁড়ির আইসি এসআই আল আমিন ও এএসআই মো. ওয়াসিমকে সাময়িক বরখাস্ত করেন উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. শাহজাহান।
অভিযোগ প্রসঙ্গে দিয়াবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির আইসি এসআই টিএম আল আমিন নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এএসআই মো. ওয়াসিম মানসিক বিকারগ্রস্ত। সে এতই বেপরোয়া যে তাঁর বিষয়টি আমি জিডি ও নোট করে আমার ঊর্ধ্বতন স্যারদের জানিয়েছি। তাঁরা তাঁর বদলি করে দেবেন বলেছিলেন।’
অপরদিকে এএসআই মো. ওয়াসিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কাজ করি। তাই একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে।’
সোর্স জামানের বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াসিম বলেন, ‘নাইজেরিয়ার জামান একজন মুসলিম, তাঁর কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। তাই আমি বিনা স্বার্থেই খাওয়াই।’
দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের বিষয়ে উত্তরা জোনের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শাহজাহান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নানা অনিয়মের অভিযোগে তাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা তদন্ত করছেন। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী বাকি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাজধানীর তুরাগের বাসিন্দাদের কাছে আতঙ্কের নাম পুলিশ। সোর্সের মাধ্যমে যাকে-তাকে ধরে নিয়ে মাদক মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া আটক করে নগদ, বাকি ও কিস্তিতে তাঁরা ঘুষ-চাঁদা নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
রাজধানীর তুরাগ এলাকায় আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এ ঘটনায় তুরাগের দিয়াবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (আইসি) উপপরিদর্শক (এসআই) টিএম আল আমিন ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. ওয়াসিমকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এরপরও আতঙ্ক কমেনি জনসাধারণের।
আজকের পত্রিকার হাতে আসা একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রিকশাচালক জাবেদ ও দিয়াবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই ওয়াসিম ঘুষের টাকা লেনদেন নিয়ে কথা বলছেন। সেখানে রিকশাচালক জাবেদ বলেন, ‘স্যার, আমি তো ১৭ হাজার টাকা মিলাইবার পারি নাই।’ এ সময় এএসআই ওয়াসিম বলেন, ‘তরে মাইরা লামু কিন্তু। একাবারে মাইরা লামু।’ নিরুপায় রিকশাচালক জাবেদ বলেন, ‘মারেন কাটেন যাই করেন স্যার, আল্লাহ বাঁচাইলে কালকা আপনারে টাকা দিয়া থুইয়া আইমু।’ এএসআই ওয়াসিম বলেন, ‘এত কিছু বুঝি না। তরে তাড়াতাড়ি আইতে কইতাছি।’
জাবেদ হোসেন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার আব্দুল গফুরের ছেলে। বর্তমানে তিনি তুরাগের বাউনিয়া এলাকায় থাকেন। ওই কথোপকথনের বিষয়ে জানতে চাইলে জাবেদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গাঁজার পোঁটলা পাইয়াই ওয়াসিম স্যার বলতেছে, ‘টেহা দে। আমি তহন তিন হাজার টেহা দেই। তারপর আবার রিকশা বেইচ্চা আইনা ১৭ হাজার টেহা দেই।’
জাবেদ বলেন, ‘টাকাটা দিছি দুই কিস্তিতে। একবার তিন হাজার টাকা দিয়া বিদায় করছি। আরেকবার রিকশা বেইচ্চা ১৭ হাজার টাকা দিছি। আমি মুখ খোলার (জানাজানি হলে) পর থেকে আমাকে বিসরাইতেছে (খুঁজতেছে)। পাইলে আমাকে মেরে ফেলবে। আগেও হুমকি দিয়েছিল। জাতীয় নির্বাচনের পরদিন ধইরা চালানও দিছিল।’
কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজের কারণে তাঁর দুই লাখ টাকা নামছে। এর কারণে আমারে ধরে ট্যাপেন্টা ও গাঁজা দিয়ে মামলা করে ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। এক মাস ১৫ দিন থেকে বের হইছি। অথচ আমার কাছে কিছুই পায় নাই।’
ক্যান্টনমেন্টের বালুঘাট এলাকার বাসিন্দা ও গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ী তানজিন হোসেন আদর বলেন, ‘আমি তুরাগের পুকুরপাড়ে চাচার বাসায় গিয়েছিলাম। তখন সাদা পোশাকে এএসআই ওয়াসিম আমাকে ধরে একবার ডিবি, আরেকবার পুলিশ পরিচয় দিয়ে তল্লাশি শুরু করে। এরপর পকেট থেকে মোবাইল ফোন ও ব্যবসার ১৭ হাজার টাকা নিয়ে বলে, ‘‘তর কাছে মাদক পাওয়া গেছে, আমি ভিডিও করব। তুই স্বীকার করবি। নাহলে তকে ধরে মামলা দিব।’’ স্বীকার করতে না চাইলে বিভিন্ন ভয়ভীতি হুমকি দেখায়। একা থাকায় কিছুই বলতে পারিনি।’
আদর বলেন, ‘পকেট থেকে ১৭ হাজার টাকা নিয়ে যাওয়ার পরও আরও ২০ হাজার টাকা দাবি করে সে। দুই দিনের মধ্যে সেই টাকা না দিলে মাদক মামলার আসামি বানিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয়।’
বটতলার এস টি সরকার ফার্মেসির মালিক এম এ হুসাইন সরকার অভিযোগ করে বলেন, ‘এক নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির কাছে ব্যথা ও ঘুমের ওষুধ বিক্রি না করায় দোকানে বিশৃঙ্খলা করে। পরে ওই ব্যক্তিই ফোন করে পুলিশ নিয়ে আসে। তখন এএসআই ওয়াসিম আমাকে ধরে গার্ডরুমে নিয়ে যায়। পরে যেন এমন না হয়, তাই সেখানে এসআই আল আমিন বিচার করে আমার কাছ থেকে দুই হাজার টাকা নেয়। আবার একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষরও রেখে দেয়।’
বাদালদি মসজিদ সংলগ্ন সরকারি খাস জমিতে ঘর করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন মো. তাহাজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বাদালদী মসজিদে ওয়াজের দিন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ওয়াসিম সিভিল পোশাকে আমার ছেলে ও তাঁর বন্ধুকে ধইরা নিয়া গার্ডরুমে নিয়া ২০ হাজার টাকা দাবি করছে। ওই দিন খবর পেয়ে রাত ১টার দিকে ৬ হাজার টাকা দিয়ে তাঁদের ছাড়ায়ে আনি। পরদিন বিকেল বেলা সোর্স মোস্তফা এসে বাকি ৬ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।’
এলাকার লোকজনের অভিযোগ, এএসআই ওয়াসিমের সঙ্গে একটি সাইড ব্যাগ থাকে। সেই ব্যাগে সব সময়ই মাদক থাকে। নিরীহ মানুষ ধরার পর টাকা না দিলে সেই মাদক দিয়েই ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। আবার সোর্স নাইজেরিয়ান জামান, মোস্তফা ও নুরুর মাধ্যমে চেকের সময় মাদক পকেটে মাদক ঢুকিয়ে দিয়ে টাকা-পয়সা আদায় করা হয়। সবকিছুর নেতৃত্ব দেন ফাঁড়ির আইসি এসআই আল আমিন।
তাঁদের অভিযোগ, প্রায়ই মানুষকে ধরে বাউনিয়া বটতলার সিভিল অ্যাভিয়েশনের গার্ড রুমে ধরে নিয়ে যায় ওয়াসিম ও আল আমিন। তখন গার্ড রুমকে বানানো হয় আদালত। আর ওই আদালতের বিচারক থাকেন এসআই আল আমিন।
কী কী মাদক থাকতে জানতে চাইলে বাসিন্দারা বলেন, ট্যাপেন্টা, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা সবই থাকে তার (ওয়াসিম) কাছে। যখন যেটা দরকার মনে করে, তখন সেটা দিয়েই মানুষকে ফাঁসিয়ে দেয়।
বাউনিয়ার জলিলের গ্যারেজে বসবাস করে নাইজেরিয়ার নাগরিক জামান। সেখানকার রিকশাচালক ও মিস্ত্রিরা বলেন, ‘এএসআই ওয়াসিম স্যার তাঁকে রাখতে বলছে। সে শুধু রাতে এসে ঘুমায়, আর সারা দিন ওয়াসিম স্যারের সঙ্গে থাকে। কোনো কামকাজ করে না। শুধু পুলিশের সোর্স হিসাবে কাজ করে। জামান আমাদের জানিয়েছে, সে আট মাস জেল খেটেছে। তাঁর বাংলাদেশে সাজা হয়েছিল।’
পথেই দেখা হয় ওই নাইজেরিয়ান সোর্সের সঙ্গে। সোর্স জামান বলেন, ‘পুলিশ ইজ মাই বস। আই অ্যাম নাইজেরিয়ান, হি ইজ বাংলাদেশি। আই এম অ্যা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, অ্যা র্যাপার, অ্যা সিঙ্গার। ব্যাট আই হ্যাভ নো ম্যানি, নো হাউজ। ওয়াসিম হেল্পস মি।’
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, দিয়াবাড়ি পুলিশ ফাঁড়িতে যোগদানের পূর্বে এসআই আল আমিন ডিএমপির বিমানবন্দর থানায় ছিলেন। তৎকালীন সিভিল অ্যাভিয়েশনের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ও বাউনিয়ার আবুল কাশেমকে এক প্যাকেট আমদানি নিষিদ্ধ এক প্যাকেট বিদেশি সিগারেটসহ আটক করে এসআই আল আমিন। সিগারেটের প্যাকেটটি আবুল কাশেমের আরেক সহকর্মী তাঁকে দিয়ে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হচ্ছিলেন। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ওই সহকর্মী সেটি তাঁর দাবি করলেও তদন্তের নামে যাচাই বাছা্ইয়ের কথা বলে থানার হাজতে ঢুকিয়ে রাখা হয়। পরে তাঁকে রিমান্ড ও মামলার ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা আদায় করা হয়। কাশেম পর পর দুইবারের স্টোকের রোগী হওয়ায় তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পাননি।
তুরাগের ধউর এলাকায় গত ১৩ মার্চ রাতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের রোষানলে পড়েন স্থায়ীয় সংবাদকর্মী সাইফুল ইসলাম। এ ঘটনায় তিনি উত্তরার উপকমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগও দেন। ওই সময়ের ভিডিও ফুটেজটিও রয়েছে আজকের পত্রিকার হাতে। সাইফুল বলেন, ‘একটি সিএনজি থেকে পুলিশ ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০০ টাকা নিয়েছে। সেটির কারণ জানতে চাইলে আমাকে ধরে বক্সে নিয়ে যায় এএসআই ওয়াসিম ও তাঁর সোর্স সুমন। সেখানে নিয়ে আমাকে ছিনতাইকারী বানানোর চেষ্টা চালায় তাঁরা।’
২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বরের একটি জিডির ছবি আসে আজকের পত্রিকার হাতে। জিডির নম্বর ৩০৬, সময় ১২টা ২০ মিনিট, বাদী এসআই আল আমিন। জিডিতে উল্লেখ রয়েছে, এএসআই ওয়াসিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন লোকদের আটক করে হয়রানিসহ মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি ওসি সাহেবসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে ঊর্ধ্বতন স্যারদের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে জিডি করে প্রতিবেদনের নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে জিডি করা হল। এএসআই ওয়াসিমকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হলো।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, সিটি করপোরেশন একদিকে জসিমউদ্দিনের পাকার মাথায় অবৈধ ফুটপাত উচ্ছেদ করে, অন্যদিকে ফাঁড়ির প্রশ্রয়ে উচ্ছেদের পরই সেটি আবার দখল করে শুরু করা হয় চাঁদাবাজি। শতাধিক দোকান থেকে দৈনিক আদায় করা হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। অপরদিকে দিয়াবাড়ি বউবাজের হাজারো দোকান থেকে একইভাবে চাঁদাবাজি করেন শ্রমিক লীগ নেতা রোস্তম আলী ও তাঁর সহযোগীরা। সেটিও একদিকে রাজউক উচ্ছেদ করলেও অন্যদিকে বসে পড়ে। এসব ফুটপাত থেকে দৈনিক এবং তুরাগের প্রতিটি রিকশার গ্যারেজ থেকে পুলিশ ফাঁড়ির নামে সপ্তাহে ৫০০ টাকা করে তোলার অভিযোগও রয়েছে।
পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৪ মার্চ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে ডিএমপির আইএডি শাখার উপ-কমিশনারকে আহ্বায়ক ও ক্রাইম বিভাগের কমিউনিটি পুলিশের শুভ কুমার ঘোষ ও প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. ফেরদাউছ হোসেনকে সদস্য করা হয়েছে।
এ ছাড়া ডিএমপির উত্তরা বিভাগের পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি গঠনের পরই এএসআই ওয়াসিমকে ফাঁড়ি থেকে বদলি করে তুরাগ থানায় সংযুক্ত করা হয়। পরে গত ১৫ মার্চ আবার ফাঁড়ির আইসি এসআই আল আমিন ও এএসআই মো. ওয়াসিমকে সাময়িক বরখাস্ত করেন উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. শাহজাহান।
অভিযোগ প্রসঙ্গে দিয়াবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির আইসি এসআই টিএম আল আমিন নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এএসআই মো. ওয়াসিম মানসিক বিকারগ্রস্ত। সে এতই বেপরোয়া যে তাঁর বিষয়টি আমি জিডি ও নোট করে আমার ঊর্ধ্বতন স্যারদের জানিয়েছি। তাঁরা তাঁর বদলি করে দেবেন বলেছিলেন।’
অপরদিকে এএসআই মো. ওয়াসিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কাজ করি। তাই একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে।’
সোর্স জামানের বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াসিম বলেন, ‘নাইজেরিয়ার জামান একজন মুসলিম, তাঁর কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। তাই আমি বিনা স্বার্থেই খাওয়াই।’
দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের বিষয়ে উত্তরা জোনের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শাহজাহান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নানা অনিয়মের অভিযোগে তাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা তদন্ত করছেন। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী বাকি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাজধানীর হাজারীবাগ পার্কের পাশে ছুরিকাঘাতে শাহদাত হোসেন আকবর ওরফে শান্ত (১৭) নামে এক কিশোর খুন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাজারীবাগ পার্কের পাশে মাদ্রাসার গলিতে গিয়াস উদ্দিনের বাড়ির সামনে এই ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে।
১ মিনিট আগেনড়াইলের কালিয়ায় চিরকুট পাঠিয়ে হত্যার হুমকির পর ধানখেত থেকে এক শিশুর হাত বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার নড়াগাতী থানার খাশিয়াল ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
২ মিনিট আগেনওগাঁর মান্দায় একটি ক্লাবের কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ৫টি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় আরও ৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এ সময় প্রতিপক্ষের মারধরে চারজন আহত হন।
৯ মিনিট আগেজামালপুরের ইসলামপুরে ঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণা চেষ্টার অভিযোগে ছয়জন নারীকে থানায় সোপর্দ করেন এলাকাবাসী। পুলিশ তাঁদেরকে নাশকতার পরিকল্পনা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। গ্রেপ্তার নারীদের দাবি, তাঁরা একটি চক্রের প্রতারণার শিকার।
৩৮ মিনিট আগে