নোয়াখালীর সুবর্ণচরের ৭০০ একর খাসজমি দুই চেয়ারম্যানের দখলে

সুবর্ণচর (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৪, ১১: ২৬

নোয়াখালী সুবর্ণচরে প্রায় ৭০০ একর খাসজমি দখলের অভিযোগ উঠেছে বর্তমান ও সাবেক দুই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে তাঁরা উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চরলক্ষ্মী, উরিরচর ও চরনোমান মৌজার ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ওই জমির ফসল নষ্ট করে অর্ধশতাধিক পুকুর খননকাজ চালাচ্ছেন।

অভিযুক্ত দুজন হলেন কবিরহাটের ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল কোম্পানী ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব জমি পাঁচ শতাধিক ভূমিহীন কৃষকের দখলে চাষাবাদ হতো। ২০১৪ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) সমুদ্র গবেষণার জন্য ৪০০ একর খাসজমি সরকারের কাছে বরাদ্দ চায়। ওই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করেন। এর পর থেকে শেখ হাসিনা সমুদ্রবিজ্ঞান ও সামুদ্রিক সম্পদ ইনস্টিটিউট স্থাপনে সেখান থেকে ১৫০ একর খাসজমি বন্দোবস্ত প্রক্রিয়াধীন। নোবিপ্রবির প্রস্তাবিত জায়গার বাইরে বাকি জমি ভূমিহীন পরিবার চাষাবাদ করে আসছিল। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনের পর থেকে একটি প্রভাবশালীমহল ভূমিহীনদের ভয়ভীতি দেখিয়ে পুরো জমি দখল করতে শুরু করে।

স্থানীয়রা জানান, প্রস্তাবিত শেখ হাসিনা সমুদ্রবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট সাইনবোর্ড থাকলেও বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যান এবং তাঁদের লোকজন ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে যাচ্ছেন।

এদিকে গত মঙ্গলবার দুপুরে অবৈধ দখলদারদের এমন একচেটিয়া দখল ও হুমকির প্রতিবাদে উপজেলার চরলক্ষ্মী গ্রামে বিক্ষোভ মিছিল করেন শতাধিক ভুক্তভোগী।

ভুক্তভোগীরা জানান, কামাল কোম্পানী ও আবুল কালাম আজাদ দুই সপ্তাহ ধরে ৩০ থেকে ৪০টি ভেকু মেশিন দিয়ে ৭০০ একর জায়গাজুড়ে প্রজেক্ট করার কাজ শুরু করেন।

ভুক্তভোগীরা বলেন, ৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে তাঁরা সেখানে বসবাস করছেন। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচন শেষ হওয়ার পর একটি মহল তাঁদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘরবাড়ি ভেঙে উচ্ছেদ করে দেয়। ১০০ একরের মতো জায়গায় তাঁদের রোপণ করা শিম, শসা, কচুসহ নানা প্রজাতির সবজি ও মাছের ঘের ধ্বংস করে দেয়। ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না।

অভিযোগের বিষয়ে ধানসিঁড়ি ইউপি চেয়ারম্যান কামাল কোম্পানী বলেন, ‘এ জমির মালিক শাহজাহান নামের এক প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি আমাকে পাওয়ার (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) দিয়েছেন জায়গাটি দেখাশোনার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা হলে তারা কাগজ থাকলে জায়গা নিয়ে যাবে। তাদের জায়গা কেউ ধরে রাখতে পারবে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিতসহ খাসজমি দখলে নিয়ে চলছে ভেকু মেশিন দিয়ে পুকুর খননকাজ। বর্তমান ও সাবেক দুই ইউপি চেয়ারম্যান এ কাজ করছেন। ছবিটি সম্প্রতি নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চরনোমান এলাকা থেকে তোলা। 	আজকের পত্রিকা সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি জমি দখলের সঙ্গে জড়িত নই।’

সুবর্ণচর উপজেলা কমিশনার (ভূমি) অশোক বিক্রম চাকমা বলেন, অবৈধ দখলের অভিযোগ পেয়ে দুই দফা অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে ১১টি মাটি কাটার ভেকু মেশিন জব্দ করে কয়েকটি সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড এবং লাল পতাকা টানানো হয়। একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

নোবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক মো. দিদার-উল-আলম বলেন, ওই জায়গা শেখ হাসিনা সমুদ্রবিজ্ঞান ও সামুদ্রিক সম্পদ ইনস্টিটিউটের প্রস্তাবিত স্থান। ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত ভূমিতে অবৈধভাবে কোনো রূপ স্থাপনা নির্মাণসহ অবৈধভাবে দখল আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। উক্ত জমি অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভূমিহীনদের বিনা নোটিশে তাড়িয়ে দেওয়া অমানবিক। ভূমিহীনদের পুনর্বাসন না করে কোনো কিছু করা ঠিক না। এত কিছু থাকার পরও যাঁরা খাসজমির দখল চান, তাঁরা মানসিকভাবে অসুস্থ।

আরও খবর পড়ুন:

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ–পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশ ‘মবের মুল্লুক’: সামিনা লুৎফা

বাংলাদেশের বন্দরে পাকিস্তানের কার্গো জাহাজ, ‘ঐতিহাসিক’ বলা হচ্ছে যে কারণে

পরশুরামে ছুরিকাঘাতে তরুণ নিহত

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সংলাপ শুরু কাল, চলবে পুরো নভেম্বর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত