মন্টি বৈষ্ণব, ঢাকা
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা ছাত্রীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে পড়ছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে আখ্যা পাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন, বাস, ক্যাম্পাসের ভেতরে এমনকি ছাত্রীদের হলের সামনেই যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা।
প্রশ্ন হচ্ছে নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীরা কেন অনিরাপদ থাকবেন? তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব-কর্তব্য কী? তারা কি এসব ঘটনায় অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা না করে সর্বদাই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত থাকবেন?
যে ঘটনার কথা বলতে চাই, সেটি খুব বেশি দিন আগের ঘটনা নয়। গত রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পাঁচজন তরুণের মাধ্যমে একজন ছাত্রী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। ভুক্তভোগীর মতে, ওই পাঁচজন তরুণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। নিপীড়ক শিক্ষার্থীরা এমনকি এই যৌন নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করেছেন। এ সময় ভুক্তভোগীর সঙ্গে থাকা বন্ধু প্রতিবাদ করলে তিনিও তাদের নির্যাতনের শিকার হন। পরে ভুক্তভোগীর ও তাঁর বন্ধুর মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে দুজনকে ছেড়ে দেয় তারা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা এটিই প্রথম না। এর আগেও এমন হয়েছে। এর আগে ছাত্রলীগের চার কর্মীর বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এলেও ক্ষমতাধরদের বিরুদ্ধে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিতে পারেনি। আগের মতো এবারও তারা নিষ্ক্রিয়। এতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
এবারের ঘটনার পর সহপাঠীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া অনাচারের বিচার চাইতে আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছে জানতে চান, রাত ১০টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের হেনস্তা করা বৈধ কিনা? আন্দোলনের একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় না এনে ছাত্রীদের রাতে হলে ফেরার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেন। আন্দোলনরত বিভিন্ন ছাত্রী হলের ছাত্রীরা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে উপাচার্য বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। ছাত্রীদের এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন ছাত্ররাও। প্রতিবাদে শামিল হন শিক্ষকেরাও।
বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের খবরে প্রকাশ—আন্দোলনের একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা না করলে প্রক্টরিয়াল বডিসহ পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এ আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে চারটি দাবি তুলে ধরেছেন। দাবিগুলো হলো—
১. ছাত্রীদের হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো সময়সীমা না রাখা
২. যৌন নিপীড়ন সেল বাতিল করে নতুন সেল গঠন করা
৩. আগামী চার কর্মদিবসের মধ্যে চলমান ঘটনাগুলোর বিচার ও সুষ্ঠু সমাধান করা
৪. সমাধানে ব্যর্থ হলে প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ
এর মধ্যে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে অজ্ঞাত পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন। এ সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হককে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের স্বাক্ষর করা এ নোটিশ দেওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হকের এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে।
সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিয়ে জোর সংশয় কাজ করছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। প্রশাসনের নির্লিপ্ততা তাদের আরও বেশি শঙ্কিত করে তুলেছে। এ বিষয়ে আন্দোলনরত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফী নীতু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে একের পর এক যৌন নিপীড়নের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যৌন নিপীড়নের এসব ঘটনার কোনোটার বিচার হচ্ছে না। অপরাধী বুক ফুলিয়ে দাপট দেখিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে অন্যরা এ ধরনের কাজে ভয় না পেয়ে বরং উৎসাহিত হচ্ছে। বলা যায়, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে। আবার অন্যদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে হলে ফেরার সময়সীমা নির্ধারণ করে ছাত্রীদের বন্দী করে রাখার পাঁয়তারা চলছে, যা মেনে নেওয়া ছাত্রীদের পক্ষে সম্ভব নয়। যৌন নিপীড়নের ঘটনার একমাত্র সমাধান হতে পারে প্রতিটি ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা।’
আন্দোলনের মূল লক্ষ্য কী জানতে চাইলে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আন্দোলন করছি বিচার পাওয়ার জন্য। ছাত্র-ছাত্রী নির্বিশেষে সবার জন্যই নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতের জন্য। আমরা ক্যাম্পাসে নির্ভয়ে চলাফেরা করতে চাই।’
অথচ একটি শঙ্কামুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার উপাদান কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। শিক্ষার্থীদের, বিশেষত ছাত্রীদের যৌন হয়রানি থেকে মুক্ত থাকতে এবং আশ্রয় হিসেবে দুটি আলাদা কমিটি রয়েছে। এর একটি ‘যৌন হয়রানি নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্র’ নামের সাত সদস্যের কমিটি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক প্রণীত ‘উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ নীতিমালা’ অনুসারে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার (প্রো–ভাইস চ্যান্সেলর)। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের নির্দেশনায় ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ সদস্যের একটি ‘অভিযোগ কমিটি’ গঠন করা হয়। এ কমিটির আহ্বায়ক কাজী শামীমা সুলতানা (পদার্থ বিভাগ)। এ পর্যন্ত এই কমিটিতে তিনটি ঘটনার অভিযোগ এসেছে। ঘটনা তিনটি হলো—১. খালেদা জিয়া হলের একজন ছাত্রীর হেনস্তা; ২. ফরেস্ট্রি বিভাগের শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী হেনস্তা এবং ৩. ছাত্রলীগের চারজন কর্মী কর্তৃক দুই ছাত্রী হেনস্তা।
এ দুই কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. লায়লা খালেদা। তাঁর কাছে এ দুই কমিটির কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ন সম্পর্কিত ঘটনাগুলো প্রথমে অভিযোগ কমিটিতে আসে। পরে অভিযোগ কমিটির পক্ষ থেকে অভিযোগপত্রগুলো যাচাই-বাছাই করে ঊর্ধ্বতন কমিটি; অর্থাৎ, যৌন হয়রানি নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রে জমা হয়। এ পর্যন্ত তিনটি অভিযোগ পেয়েছি। গতকাল আমরা এই তিনটি অভিযোগ চূড়ান্তকরণের জন্য বৈঠকে বসি। এখন অভিযোগগুলোর চূড়ান্ত পর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। আগামী রোববার বা সোমবার আমরা এ অভিযোগপত্রের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করব।’
অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন দীর্ঘ সময় পর প্রকাশের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. লায়লা খালেদা বলেন, ‘করোনাকালসহ বিভিন্ন কারণে আমরা দুই কমিটির সদস্যরা সভা করতে পারিনি।’ সাম্প্রতিক ছাত্রী হেনস্তার ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনা তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এই তদন্ত কমিটি চার কার্যদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযোগ কমিটির কাছে জমা দেবে। অভিযোগ কমিটির পক্ষ থেকে সে প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করে ঊর্ধ্বতন কমিটির কাছে জমা দেওয়া হবে।’
কিন্তু এ ধরনের ঘটনা তো আর একটি-দুটি হয়নি। আগের ঘটনাগুলোর কোনো বিচার সেভাবে না হওয়ায় দায় বেড়েছে। আজ তাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সরাসরি প্রশ্ন তুলছেন—রাত ১০টার পর ছাত্রী হেনস্তা বৈধ কি-না। কারণ, বিচার না করে, অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় না এনে প্রশাসনই প্রকারান্তরে এই বৈধতা দিয়ে বসে আছে।
এ থেকে মুক্তির উপায় তবে কী? এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুবর্ণা মজুমদার বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রজুড়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিরাজ করছে। এই ধরনের ঘটনায় অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বিচার পাচ্ছেন না। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রভাব পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। এ কারণে এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা, আগের সব ঘটনাকে ছাপিয়ে গেছে। ভুক্তভোগীকে বিচারের আশায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এটা সেই বিচারহীনতার সংস্কৃতির ফলাফল।’
এবারের ঘটনায় জড়িত দুজনকে শনাক্তের কথা অবশ্য আজ শুক্রবার জানিয়েছে চবি প্রশাসন। যদিও সংশ্লিষ্ট থানা এখনো কিছু জানে না বলে জানিয়েছে। শনাক্ত দুজনের নাম-পরিচয়ও প্রশাসন প্রকাশ করেনি। এদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্যদের নাগালের বাইরে। প্রশাসন এ ক্ষেত্রে ওই শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার প্রশ্নটিকে সামনে আনলেও এ নিয়েও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এই ধরনের ঘটনায় প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা নিতে না পারার কারণ সম্পর্কে অধ্যাপক সুবর্ণা মজুমদার বলেন, ‘প্রশাসন এ ধরনের ঘটনায় পদক্ষেপ নিতে পারছে না। কারণ প্রশাসনে যারা দায়িত্বে থাকেন, তাঁরা আসলে ক্ষমতাকাঠামোর কাছাকাছি থাকতে চান। স্বাভাবিকভাবে এখানে তাঁদের ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত। এই ব্যক্তিগত লাভের কারণে তাঁরা ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তাই এই ধরনের ঘটনায় প্রশাসন নির্লিপ্ত থাকেন। আর এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন।’
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও তাদের প্রতি সমর্থন জানানো শিক্ষক—সবার মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ নিয়ে একটা সংশয় রয়েছে। পূর্ব অভিজ্ঞতা ভালো না হওয়ার কারণেই এমন সংশয়। এ নিয়ে সুবর্ণা মজুমদার বলেন, ‘এই তদন্ত কমাটির তো দরকার ছিল না। কারণ, এ ধরনের ঘটনার তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি কমিটি আছে। একটি অভিযোগ কমিটি; আরেকটি যৌন হয়রানি নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্র। কর্তৃপক্ষ কেন এই দুটি কমিটিকে কার্যকর করছে না। কেন এই দুই কমিটিকে পাশ কাঠিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো? এতে বোঝা যাচ্ছে যে, অতীতের ঘটনাগুলোর মতো এই তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাও ধামাচাপা দেওয়া হবে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ঘটনা সারা দেশের শিক্ষার্থীদেরই আলোড়িত করেছে। সারা দেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে বিচলিত বোধ করছেন। এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বলেন, ‘প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না কারণ, প্রশাসন সরকার দলীয় এবং অভিযুক্তরাও ছাত্রলীগের বলে জানা যাচ্ছে। যাদের অনুকম্পায় সরকার-দলীয় প্রশাসন ক্ষমতায় টিকে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস প্রশাসনের নেই বলেই মনে হয়। ঘটনার চার-পাঁচ দিন পার হয়ে গেলেও তাই অভিযুক্তদের ধরার সাহস হয়নি। বরং ছাত্রীদের হলে ঢোকার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তাই নারী নির্যাতনকারীদের নয়, প্রশাসন শাস্তি দিতে চায় সব হলের ছাত্রীদের। এর মাধ্যমে নিজেরাই প্রমাণ করেছে যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের নিরাপত্তা নেই।’ তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছিল। তখন সামাজিক কারণে কেউ প্রকাশ করত না, চেপে যেত। এখন ছাত্রীরা প্রতিবাদ করছেন। আমি বরং বলব, এত প্রতিবাদ সত্ত্বেও এই ধরনের ঘটনা কমছে না। কারণ যখন যে দল রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে, তাদের অঙ্গসংগঠনের ছেলেরা এসব কাজে নেতৃত্ব দেয়। আর প্রশাসন নিজেদের গদি বাঁচানোর স্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে না। নির্যাতিতকেই অভিযুক্ত করা হয় বারবার। দুঃখজনক যে, শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই কাজ করে চলেছে।’
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা ছাত্রীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে পড়ছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে আখ্যা পাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন, বাস, ক্যাম্পাসের ভেতরে এমনকি ছাত্রীদের হলের সামনেই যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা।
প্রশ্ন হচ্ছে নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীরা কেন অনিরাপদ থাকবেন? তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব-কর্তব্য কী? তারা কি এসব ঘটনায় অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা না করে সর্বদাই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত থাকবেন?
যে ঘটনার কথা বলতে চাই, সেটি খুব বেশি দিন আগের ঘটনা নয়। গত রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পাঁচজন তরুণের মাধ্যমে একজন ছাত্রী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। ভুক্তভোগীর মতে, ওই পাঁচজন তরুণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। নিপীড়ক শিক্ষার্থীরা এমনকি এই যৌন নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করেছেন। এ সময় ভুক্তভোগীর সঙ্গে থাকা বন্ধু প্রতিবাদ করলে তিনিও তাদের নির্যাতনের শিকার হন। পরে ভুক্তভোগীর ও তাঁর বন্ধুর মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে দুজনকে ছেড়ে দেয় তারা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনা এটিই প্রথম না। এর আগেও এমন হয়েছে। এর আগে ছাত্রলীগের চার কর্মীর বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এলেও ক্ষমতাধরদের বিরুদ্ধে কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিতে পারেনি। আগের মতো এবারও তারা নিষ্ক্রিয়। এতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
এবারের ঘটনার পর সহপাঠীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া অনাচারের বিচার চাইতে আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছে জানতে চান, রাত ১০টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের হেনস্তা করা বৈধ কিনা? আন্দোলনের একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় না এনে ছাত্রীদের রাতে হলে ফেরার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেন। আন্দোলনরত বিভিন্ন ছাত্রী হলের ছাত্রীরা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে উপাচার্য বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। ছাত্রীদের এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন ছাত্ররাও। প্রতিবাদে শামিল হন শিক্ষকেরাও।
বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের খবরে প্রকাশ—আন্দোলনের একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা না করলে প্রক্টরিয়াল বডিসহ পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এ আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে চারটি দাবি তুলে ধরেছেন। দাবিগুলো হলো—
১. ছাত্রীদের হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো সময়সীমা না রাখা
২. যৌন নিপীড়ন সেল বাতিল করে নতুন সেল গঠন করা
৩. আগামী চার কর্মদিবসের মধ্যে চলমান ঘটনাগুলোর বিচার ও সুষ্ঠু সমাধান করা
৪. সমাধানে ব্যর্থ হলে প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ
এর মধ্যে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে অজ্ঞাত পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন। এ সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হককে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের স্বাক্ষর করা এ নোটিশ দেওয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হকের এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে।
সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিয়ে জোর সংশয় কাজ করছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। প্রশাসনের নির্লিপ্ততা তাদের আরও বেশি শঙ্কিত করে তুলেছে। এ বিষয়ে আন্দোলনরত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফী নীতু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে একের পর এক যৌন নিপীড়নের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যৌন নিপীড়নের এসব ঘটনার কোনোটার বিচার হচ্ছে না। অপরাধী বুক ফুলিয়ে দাপট দেখিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে অন্যরা এ ধরনের কাজে ভয় না পেয়ে বরং উৎসাহিত হচ্ছে। বলা যায়, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে। আবার অন্যদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে হলে ফেরার সময়সীমা নির্ধারণ করে ছাত্রীদের বন্দী করে রাখার পাঁয়তারা চলছে, যা মেনে নেওয়া ছাত্রীদের পক্ষে সম্ভব নয়। যৌন নিপীড়নের ঘটনার একমাত্র সমাধান হতে পারে প্রতিটি ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা।’
আন্দোলনের মূল লক্ষ্য কী জানতে চাইলে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আন্দোলন করছি বিচার পাওয়ার জন্য। ছাত্র-ছাত্রী নির্বিশেষে সবার জন্যই নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতের জন্য। আমরা ক্যাম্পাসে নির্ভয়ে চলাফেরা করতে চাই।’
অথচ একটি শঙ্কামুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার উপাদান কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। শিক্ষার্থীদের, বিশেষত ছাত্রীদের যৌন হয়রানি থেকে মুক্ত থাকতে এবং আশ্রয় হিসেবে দুটি আলাদা কমিটি রয়েছে। এর একটি ‘যৌন হয়রানি নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্র’ নামের সাত সদস্যের কমিটি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক প্রণীত ‘উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ নীতিমালা’ অনুসারে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার (প্রো–ভাইস চ্যান্সেলর)। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের নির্দেশনায় ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ সদস্যের একটি ‘অভিযোগ কমিটি’ গঠন করা হয়। এ কমিটির আহ্বায়ক কাজী শামীমা সুলতানা (পদার্থ বিভাগ)। এ পর্যন্ত এই কমিটিতে তিনটি ঘটনার অভিযোগ এসেছে। ঘটনা তিনটি হলো—১. খালেদা জিয়া হলের একজন ছাত্রীর হেনস্তা; ২. ফরেস্ট্রি বিভাগের শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী হেনস্তা এবং ৩. ছাত্রলীগের চারজন কর্মী কর্তৃক দুই ছাত্রী হেনস্তা।
এ দুই কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. লায়লা খালেদা। তাঁর কাছে এ দুই কমিটির কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ন সম্পর্কিত ঘটনাগুলো প্রথমে অভিযোগ কমিটিতে আসে। পরে অভিযোগ কমিটির পক্ষ থেকে অভিযোগপত্রগুলো যাচাই-বাছাই করে ঊর্ধ্বতন কমিটি; অর্থাৎ, যৌন হয়রানি নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রে জমা হয়। এ পর্যন্ত তিনটি অভিযোগ পেয়েছি। গতকাল আমরা এই তিনটি অভিযোগ চূড়ান্তকরণের জন্য বৈঠকে বসি। এখন অভিযোগগুলোর চূড়ান্ত পর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। আগামী রোববার বা সোমবার আমরা এ অভিযোগপত্রের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করব।’
অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন দীর্ঘ সময় পর প্রকাশের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. লায়লা খালেদা বলেন, ‘করোনাকালসহ বিভিন্ন কারণে আমরা দুই কমিটির সদস্যরা সভা করতে পারিনি।’ সাম্প্রতিক ছাত্রী হেনস্তার ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনা তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এই তদন্ত কমিটি চার কার্যদিবসে তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযোগ কমিটির কাছে জমা দেবে। অভিযোগ কমিটির পক্ষ থেকে সে প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করে ঊর্ধ্বতন কমিটির কাছে জমা দেওয়া হবে।’
কিন্তু এ ধরনের ঘটনা তো আর একটি-দুটি হয়নি। আগের ঘটনাগুলোর কোনো বিচার সেভাবে না হওয়ায় দায় বেড়েছে। আজ তাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সরাসরি প্রশ্ন তুলছেন—রাত ১০টার পর ছাত্রী হেনস্তা বৈধ কি-না। কারণ, বিচার না করে, অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় না এনে প্রশাসনই প্রকারান্তরে এই বৈধতা দিয়ে বসে আছে।
এ থেকে মুক্তির উপায় তবে কী? এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুবর্ণা মজুমদার বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রজুড়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিরাজ করছে। এই ধরনের ঘটনায় অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বিচার পাচ্ছেন না। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রভাব পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। এ কারণে এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা, আগের সব ঘটনাকে ছাপিয়ে গেছে। ভুক্তভোগীকে বিচারের আশায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এটা সেই বিচারহীনতার সংস্কৃতির ফলাফল।’
এবারের ঘটনায় জড়িত দুজনকে শনাক্তের কথা অবশ্য আজ শুক্রবার জানিয়েছে চবি প্রশাসন। যদিও সংশ্লিষ্ট থানা এখনো কিছু জানে না বলে জানিয়েছে। শনাক্ত দুজনের নাম-পরিচয়ও প্রশাসন প্রকাশ করেনি। এদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্যদের নাগালের বাইরে। প্রশাসন এ ক্ষেত্রে ওই শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার প্রশ্নটিকে সামনে আনলেও এ নিয়েও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এই ধরনের ঘটনায় প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা নিতে না পারার কারণ সম্পর্কে অধ্যাপক সুবর্ণা মজুমদার বলেন, ‘প্রশাসন এ ধরনের ঘটনায় পদক্ষেপ নিতে পারছে না। কারণ প্রশাসনে যারা দায়িত্বে থাকেন, তাঁরা আসলে ক্ষমতাকাঠামোর কাছাকাছি থাকতে চান। স্বাভাবিকভাবে এখানে তাঁদের ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত। এই ব্যক্তিগত লাভের কারণে তাঁরা ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তাই এই ধরনের ঘটনায় প্রশাসন নির্লিপ্ত থাকেন। আর এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন।’
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও তাদের প্রতি সমর্থন জানানো শিক্ষক—সবার মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ নিয়ে একটা সংশয় রয়েছে। পূর্ব অভিজ্ঞতা ভালো না হওয়ার কারণেই এমন সংশয়। এ নিয়ে সুবর্ণা মজুমদার বলেন, ‘এই তদন্ত কমাটির তো দরকার ছিল না। কারণ, এ ধরনের ঘটনার তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি কমিটি আছে। একটি অভিযোগ কমিটি; আরেকটি যৌন হয়রানি নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্র। কর্তৃপক্ষ কেন এই দুটি কমিটিকে কার্যকর করছে না। কেন এই দুই কমিটিকে পাশ কাঠিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো? এতে বোঝা যাচ্ছে যে, অতীতের ঘটনাগুলোর মতো এই তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাও ধামাচাপা দেওয়া হবে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ঘটনা সারা দেশের শিক্ষার্থীদেরই আলোড়িত করেছে। সারা দেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে বিচলিত বোধ করছেন। এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বলেন, ‘প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না কারণ, প্রশাসন সরকার দলীয় এবং অভিযুক্তরাও ছাত্রলীগের বলে জানা যাচ্ছে। যাদের অনুকম্পায় সরকার-দলীয় প্রশাসন ক্ষমতায় টিকে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস প্রশাসনের নেই বলেই মনে হয়। ঘটনার চার-পাঁচ দিন পার হয়ে গেলেও তাই অভিযুক্তদের ধরার সাহস হয়নি। বরং ছাত্রীদের হলে ঢোকার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তাই নারী নির্যাতনকারীদের নয়, প্রশাসন শাস্তি দিতে চায় সব হলের ছাত্রীদের। এর মাধ্যমে নিজেরাই প্রমাণ করেছে যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের নিরাপত্তা নেই।’ তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছিল। তখন সামাজিক কারণে কেউ প্রকাশ করত না, চেপে যেত। এখন ছাত্রীরা প্রতিবাদ করছেন। আমি বরং বলব, এত প্রতিবাদ সত্ত্বেও এই ধরনের ঘটনা কমছে না। কারণ যখন যে দল রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে, তাদের অঙ্গসংগঠনের ছেলেরা এসব কাজে নেতৃত্ব দেয়। আর প্রশাসন নিজেদের গদি বাঁচানোর স্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে না। নির্যাতিতকেই অভিযুক্ত করা হয় বারবার। দুঃখজনক যে, শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই কাজ করে চলেছে।’
রাজধানীর হাজারীবাগ পার্কের পাশে ছুরিকাঘাতে শাহদাত হোসেন আকবর ওরফে শান্ত (১৭) নামে এক কিশোর খুন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাজারীবাগ পার্কের পাশে মাদ্রাসার গলিতে গিয়াস উদ্দিনের বাড়ির সামনে এই ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে।
২৮ মিনিট আগেনড়াইলের কালিয়ায় চিরকুট পাঠিয়ে হত্যার হুমকির পর ধানখেত থেকে এক শিশুর হাত বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার নড়াগাতী থানার খাশিয়াল ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
৩০ মিনিট আগেনওগাঁর মান্দায় একটি ক্লাবের কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ৫টি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সময় আরও ৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এ সময় প্রতিপক্ষের মারধরে চারজন আহত হন।
৩৭ মিনিট আগেজামালপুরের ইসলামপুরে ঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণা চেষ্টার অভিযোগে ছয়জন নারীকে থানায় সোপর্দ করেন এলাকাবাসী। পুলিশ তাঁদেরকে নাশকতার পরিকল্পনা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। গ্রেপ্তার নারীদের দাবি, তাঁরা একটি চক্রের প্রতারণার শিকার।
১ ঘণ্টা আগে