কুমিল্লার হোমনায় চাঞ্চল্যকর তিন খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার আক্তার হোসেন আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মাহমুদাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর সাক্ষী না রাখতে ঘুমন্ত দুই শিশু তিশামণি ও সাহেদকেও হত্যা করেন।

হোমনা সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মীর মহসীন মাসুদ রানা আজ রোববার এই প্রতিবেদককে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আক্তার হোসেন স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছেন, তিনি মাহমুদাকে চাচি সম্বোধন করতেন। তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে মাহমুদা ৪৭ হাজার টাকা ধার নেন। গত বুধবার ওই টাকা দেওয়ার কথা বলেই মাহমুদা তাঁকে বাড়িতে ডেকে নেন। শিঙাড়া নিয়ে রাত ৮টার দিকে তিনি ওই বাড়িতে যান। সেখানে খেয়েদেয়ে রাত ১০টার মধ্যে সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। আক্তারকে ঘরের মেঝেতে ঘুমাতে দেওয়া হয়। এর আগে টাকাপয়সার লেনদেন নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। সেই রাগে-ক্ষোভে রাত ২টার দিকে প্রথমে মাহমুদাকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন আক্তার।

মীর মহসীন মাসুদ রানা আরও বলেন, এ সময় মাহমুদার একমাত্র ছেলে শাহেদ (৯) ও ভাশুরের মেয়ে তিশামণি (১৪) ঘুমিয়ে ছিল। আক্তারের মনে হয়, তিনি যে এই ঘরে ছিলেন, সাহেদ ও তিশামণি দেখেছে। তারা তো সকালে লোকজনকে বিষয়টি বলে দেবে। তাই শাহেদ ও তিশামণিকেও একই কায়দায় হত্যা করেন তিনি। পরে কাঠের একটি লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে থেঁতলে রক্তাক্ত জখম করে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করেন। ভোরে ফজরের আজানের আগেই আক্তার পালিয়ে যান। 

গত বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার বড় ঘাগটিয়া গ্রামের শাহপরানের ঘর থেকে তাঁর স্ত্রী মাহমুদা আক্তার (২৭) একমাত্র ছেলে শাহেদ (৯) ও তার ফুপাতো ভাইয়ের মেয়ে দুলালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী তিশামণির (১৪) লাশ উদ্ধার করে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। পরে এ ঘটনায় নিহত মাহমুদা আক্তারের বাবা উপজেলার শ্রীমদ্দি গ্রামের বাসিন্দা মো. আবুল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হোমনা থানায় হত্যা মামলা করেন।

পরদিন শুক্রবার প্রযুক্তির সহায়তায় হোমনা পৌরসভার শ্রীমদ্দি চরেরগাঁও গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে আক্তারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর শনিবার তাঁর জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য কুমিল্লায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়। জবানবন্দি রেকর্ডের পর তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।