বরিশাল: ঋণের বোঝা মেটাতে কিডনি বিক্রি করতে চাওয়া সেই লেখককে অনুদান দেবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। বরিশালের সাহিত্য ও শিল্পাঙ্গনের পরিচিত এই মুখ হলেন সাইফুল্লাহ নবীন। আজ বুধবার সকালে প্রতিমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সাল তাঁকে ফোন করে মন্ত্রনলায় থেকে তাকে ১ লাখ টাকা অনুদান দেওয়ার কথা জানান। এ জন্য তাঁকে আবেদন করতেও বলা হয়।

সাইফুল্লাহ নবীন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে তাঁকে ১ লাখ টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত রোববার ( ২৭ জুন) বরিশাল মেহেন্দীগঞ্জের নগরীর প্রাণকেন্দ্র অশ্বিনী কুমার হলের সামনে প্লাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে কিডনি বিক্রির আহ্বান জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এই লেখক। প্লাকার্ডে লেখা ছিল- ‘করোনা! ২ বছরের অসহায় মানুষ, অসহায় আমি, কাজ নেই, কর্ম নেই, ৩ লক্ষ টাকা ঋণি, ঋণ পরিশোধ করতে কিডনি বিক্রি।'

জানা গেছে, করোনার সংকটময় পরিস্থিতিতে উপার্জনের সব পথ হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঋণে জর্জরিত হয়ে কিডনি বিক্রি করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের গল্প লেখক, শিশু সাহিত্যিক এবং চিত্রশিল্পী সাইফুল্লাহ নবীন।

সাইফুল্লাহ নবীনের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চরহোগলা গ্রামে। গল্প লেখার পাশাপাশি ঢাকায় বাংলা একাডেমির একুশের বই মেলায় বর্ণমালা শিল্প ও স্টল সাঁজসজ্জার কাজ করতেন তিনি। তাঁর প্রকাশিত ৪৯টি বই বাজারে রয়েছে। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ১০টি, শিশুতোষ গল্পের বই ২১টি, উপন্যাস ১৪টি এবং শিশুদের ছবি আঁকার বই রয়েছে ৪টি।

সাইফুল্লাহ নবীন জানান, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে উপার্জনের সব পথ বন্ধ হয়। বই বিক্রি শূন্যের কোঠায় চলে যায়। সাইনবোর্ড বা ছবি আকার কাজও নেই বললে চলে। বই লেখার সম্মানের টাকাও দিচ্ছেন না প্রকাশকেরা। আর্থিক সংকটের কারণে গত দুই বছরে জমি বন্ধক এবং আত্মীয়-স্বজদের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা ধার-দেনা করে সংসারের ব্যয় মিটিয়েছেন বলে জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, তাঁর বড় ছেলে বিএসসিতে, একমাত্র মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে এবং ছোট ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়েন। পরিচিত মানুষের কাছে টাকা ধার চাইলে তাঁরা মুখ ফিরিয়ে নেন। পাওনাদাররা টাকার চাপ দিচ্ছেন। যে কারণে তিনি বাধ্য হয়ে বরিশাল নগরীতে মানববন্ধন করলে তা দৃষ্টিগোচর হয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর।

তিনি জানান, টাকা পেলে করোনায় জনগণকে সচেতন করতে এর একাংশ ব্যয় করে নগরীতে প্রচারণা চালাবেন। লেখক নবীন আক্ষেপ করে জানান, সারা বাংলাদেশের কবি সাহিত্যিকেরা আজ অবহেলিত। তিনি টাকা চান না। বরং অজোপারাগাঁও এ বসে মুক্তিযুদ্ধের যেসব বই লিখেছেন সেগুলোর মাধ্যমে একটি চাকরি চান তিনি।