পদ্মা সেতু চালুর পর আমূল পরিবর্তন এসেছে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থায়। বাসে রাজধানী থেকে বরিশালে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় আসা সম্ভব। তবে এ সফলতাও যেন ম্লান এ অঞ্চলের মহাসড়কে নানা অব্যবস্থাপনায়। বিশেষ করে নগরের মধ্যে ১২ কিলোমিটার পথে এখন যানজটে নাকাল যাত্রীরা। এর কারণ অপ্রশস্ত সড়ক, অবৈধ স্থাপনা ও যানবাহন।

এদিকে এ সমস্যা সমাধানে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ফোর লেন, এমনকি জমি অধিগ্রহণেরও কোনো আশার বাণী দেখাতে পাড়ছে না। এ কারণে দিন দিন মহাসড়কে ভোগান্তি আর ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।

প্রতিদিন কাশিপুর থেকে কর্মস্থল গোড়াচাঁদ দাস রোডে আসেন ব্যবসায়ী সুজন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর সুফলের খুশিও ম্লান হয়ে যাচ্ছে। রাস্তা অপ্রশস্ত হওয়ায় সব সময়ই এখানে যানজট লেগে থাকে। এতে প্রায় কাশিপুর থেকে রূপাতলী পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনাও ঘটছে।

এ ছাড়া সাগরদি বাজার থেকে রূপাতলী বাস টার্মিনাল পর্যন্তও একই অবস্থা। যানজটে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। যদিও রূপাতলী থেকে সড়কে অবৈধ স্থাপনা মাঝেমধ্যে অপসারণ করছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, ভাঙ্গা-কুয়াকাটা মহাসড়ক ফোর লেনে উন্নীত করার প্রস্তাব ২০১৮ সালে একনেকে অনুমোদন হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১ হাজার ৮৬৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা জমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই জমি অধিগ্রহণের তেমন কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।

সওজের সার্ভেয়ার মো. আরিফুর রহমান বলেন, ফোর লেনের জন্য চার জেলায় জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। এর মধ্যে গৌরনদী, উজিরপুরের কাজ শেষ হয়েছে। বাকেরগঞ্জের কাজ চলমান। কিন্তু সদর উপজেলা তথা নগরের মধ্যের ২০ কিলোমিটারে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করা যায়নি। ভুরঘাটা থেকে লেবুখালী পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার ফোর লেন হবে।

ফরিদপুরে একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা মাসুদ আহমেদ প্রতি বৃহস্পতিবার বরিশালে বাড়িতে আসেন। তিনি বলেন, ‘ফোর লেন কবে হবে তার নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ অত্যন্ত জরুরি।’

এই ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, এ সড়কে যান চলাচল বেড়েছে। কিন্তু রাস্তা আগের মতোই সরু। দুটি বাস পাশাপাশি চলাও ঝুঁকি। এ অবস্থা চলতে থাকলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। মহাসড়কের যত দুর্ভোগ বরিশালে ঢুকলেই।

বিআরটিসি বাসের চালক মনিরুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বাসের গতি এখন আর ৫০ থেকে ৬০-এর বেশি ওঠানো কঠিন। বিশেষ করে ভুরঘাটা থেকে বরিশাল সরু সড়কের কারণে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

বরিশাল সওজ বিভাগের প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমনকে এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলেও পাওয়া যায়নি।

নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের বরিশালের সিনিয়র প্লানার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বরিশাল নগরে যানবাহনের চাপ বেড়েছে।

নগরায়ণের হারও বাড়ছে। এ কারণে মহাসড়ক ফোর লেন ও বাইপাস বাস্তবায়ন প্রয়োজন।