মারুফ ইসলাম
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রতিষ্ঠানগুলো এখন সেই পরীক্ষা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার গ্রেপ্তার হতে পারেন বলে ট্রাম্প নিজেই গত শনিবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথে দেওয়া এক পোস্টে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তাঁকে যেন গ্রেপ্তার করতে না পারে, সে জন্য সমর্থকদের বিক্ষোভ করারও আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ট্রাম্প কেন গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কা করছেন? কারণ পর্ন স্টার স্টর্মি ড্যানিয়েলস যৌন সম্পর্কের কথা ফাঁস করার পর তাঁর মুখ বন্ধ করার জন্য অর্থ দেওয়ার অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ও মামলা শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকে আরও বিভাজিত করবে। যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিকভাবে এক কঠিন অগ্নিপরীক্ষার দিকে যাচ্ছে বলে ধারণা তাঁদের। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মাধ্যমে রিপাবলিকান পার্টির ওপর ট্রাম্পের কতটা প্রভাব রয়েছে, সেটিও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফলকে উল্টে দেওয়ার চেষ্টা ও হোয়াইট হাউস ছাড়ার পরেও শ্রেণিবদ্ধ নথিগুলো পরিচালনার অভিযোগে একাধিক তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই অন্যতম ধনকুবের, সাবেক রিয়্যালিটি টিভি তারকা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করা হবে—এমন কোনো আনুষ্ঠানিক নোটিশ ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগের কার্যালয় থেকে এখনো পাননি ট্রাম্প। তবে একটি গ্র্যান্ড জুরি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। এ জন্য ট্রাম্পের আইনজীবীরা অভিযোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে মামলা করেন স্টেফানি গ্রেগরি ক্লিফোর্ড, যিনি পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে স্টর্মি ড্যানিয়েলস নামে পরিচিত। এক টুইটার পোস্টে তিনি লেখেন, ‘নীরব থাকার যে চুক্তি ট্রাম্পের সঙ্গে স্টেফানির হয়েছিল, তা মূলত অকার্যকর। কারণ এতে ট্রাম্প স্বাক্ষর করেননি।’
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, স্টেফানির মুখ বন্ধ রাখতে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক মাস আগে ট্রাম্প তাঁকে ১ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার দিয়েছিলেন। পরে স্টেফানিকে অর্থ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও এর সঙ্গে ট্রাম্প বা তাঁর প্রচারণা দলের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলে দাবি করেছিলেন ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের আইনজীবী মাইকেল কোহেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, স্টর্মির অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে ট্রাম্প ‘প্রচারণার অর্থ আইন’ লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারেন। তবে ট্রাম্প বলছেন, তিনি কোনো ভুল করেননি।
২০২৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই নির্বাচনের প্রচারণার অংশ হিসেবে এখন থেকেই নানা ধরনের বিতর্কিত কাজ করতে শুরু করছেন তিনি। যেমন কৌঁসুলিদের ভয় দেখানোর চেষ্টা, তৃণমূল সমর্থকদের একত্রিত করা, তাঁর পক্ষে সমাবেশ করার জন্য রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ কর্মকর্তাদের চাপ দেওয়া ইত্যাদি।
গত শনিবার ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যালে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আপনারা বিক্ষোভ করুন। আমাদের জাতীয়তাবোধ আবার ফিরিয়ে আনুন।’ তাঁর এই আহ্বান ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারিকে মনে করিয়ে দেয়। ওই দিন নির্বাচনের ফলাফল বানচাল করতে ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের বিক্ষোভের আহ্বান জানিয়ে টুইটারে পোস্ট করেছিলেন। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ট্রাম্প সমর্থকেরা ক্যাপিটল হিলে সহিংসতা চালিয়েছিল।
ট্রাম্পের আইনজীবী আলিনা হাব্বা বলেছেন, ‘ট্রাম্পকে নিছক অপকর্মের জন্য অভিযুক্ত করা হলে এর পরিণতি হবে গুরুতর। আমাদের দেশ এক আতঙ্কিত সময় পার করছে। আমরা চাই না কেউ কাউকে আঘাত করুক।’
ট্রাম্পের সমর্থকদের শান্ত থাকা উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, উৎসাহী সমর্থকদের ওপর প্রচণ্ড দখল রয়েছে ট্রাম্পের। এ কারণে রিপাবলিকান দলের বেশির ভাগ আইনপ্রণেতা তাঁদের ক্যারিয়ারের স্বার্থেই ট্রাম্পকে খুশি রাখার চেষ্টা করবেন।
সিএনএনের এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে বলা হয়, তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগকে সর্বোচ্চ মাত্রায় রাজনীতিকরণ করবেন ট্রাম্প এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করতে যা করা প্রয়োজন সবই করবেন তিনি।
ইতিমধ্যে তার কিছু নজির দেখা যাচ্ছে। গত রোববার স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি বলেছেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুর্বল।
একই ধরনের মন্তব্য করেছেন হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির চেয়ারম্যান জিম জর্ডান। তিনি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আইনভঙ্গ করেছেন বলে আমরা মনে করি না।’
ট্রাম্পের গত শনিবারের পোস্টের পর অনেক রিপাবলিকান সমালোচককেও ট্রাম্পের পাশে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে। যেমন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, যিনি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মনোনয়নের জন্য ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন, তিনি এবিসি নিউজকে বলেছেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হচ্ছে। আমার পক্ষ থেকে আমি বলতে পারি, এ ধরনের দৃশ্য আমেরিকার জনগণ দেখতে চায় না।
ট্রাম্পের কঠোর সমালোচক নিউ হ্যাম্পশায়ারের রিপাবলিকান গভর্নর ক্রিস সুনুনু বলেছেন, ‘ব্র্যাগের তদন্ত ট্রাম্পের প্রতি মানুষের সহানুভূতিই তৈরি করবে। আমি আজ সকালে কিছু মানুষের সঙ্গে কফি খাচ্ছিলাম। তারা কেউই ট্রাম্পের সমর্থক নন। তারপরও তাঁরা বলেছেন, ট্রাম্পকে অযাচিতভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে।’
ট্রাম্প নানা কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য প্রেসিডেন্ট থেকে আলাদা। তিনি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের মার্কিন ঐতিহ্যকে বাধা দিতে চেয়েছিলেন এবং ২০২০ সালের নির্বাচনের পর পরাজয়ে ব্যাপারে মিথ্যাচার করেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয়, তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা হবে। সুতরাং বলার অপেক্ষা রাখে না, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলাগুলো আইনত ন্যায্য হলেও নিউ ইয়র্ক ও জর্জিয়ার কৌঁসুলি এবং বিচার বিভাগ এই মুহূর্তে একটি বিপজ্জনক ও অজানা মুহূর্তের মুখোমুখি।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এসব মামলা ও বিচারপ্রক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির ওপর নানাভাবে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। যেমন- ট্রাম্প ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার প্রচারণা হিসেবে নিজেকে এখন থেকেই একজন নিপীড়িত-নির্যাতিত প্রার্থী হিসেবে প্রচার করতে শুরু করেছেন। তিনি পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলে শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবেন বলেও ঘোষণা দিচ্ছেন।
ট্রাম্প অভিযুক্ত হলেও সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে সাংবিধানিক সুরক্ষা পাবেন। তিনি বারবার এ মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রচার করেছেন। এতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন, তাতে সন্দেহ নেই।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তকে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে প্রচার করবেন ট্রাম্প। এতে বিরোধীরা ঘায়েল হবে এবং তিনি রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। তাঁর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী রন ডিস্যান্ডিস ও নিকি হ্যালি দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়বেন। তাঁরা ট্রাম্পের পক্ষেও দাঁড়াতে পারেন।
ইতিমধ্যেই রন ডিস্যান্ডিস এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের পক্ষ নিয়ে বলেছেন, ‘আপনার যদি এমন একজন কৌঁসুলি থাকে, যিনি প্রতিদিন ঘটতে থাকা অপরাধগুলো উপেক্ষা করেন আর বহু বছর আগের পুরোনো ‘হাশ মানি’ সম্পর্কিত পর্নস্টারের মামলা নিয়ে মেতে থাকেন, তাহলে বুঝবেন, এটি একটি রাজনৈতিক এজেন্ডার উদাহরণ। আমি মনে করি, এটি একটি ভুল কাজ।’
প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে রিপাবলিকানদের মনোনয়নের এখনো এক বছর বাকি। সুতরাং এখনই এটি বলা অসম্ভব যে ভোটার ও নির্বাচকমণ্ডলীরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন। তাঁরা ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দেবেন কিনা, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে তাঁর মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে এ মামলা যে প্রভাব রাখবে, তাতে সন্দেহ নেই।
পর্নস্টার স্টর্মি ড্যানিয়েলসের মামলাই ট্রাম্পের জীবনে সবচেয়ে বড় বিপদ হিসেবে নেমে এসেছে, তা নয়। বরং তাঁর বিরুদ্ধে ক্যাপিটল হিলে আক্রমণের উসকানির অভিযোগের তদন্ত চলছে। এ ছাড়া ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার জন্য জর্জিয়ার স্থানীয় কর্মকর্তাদের চাপ দিয়েছিলেন বলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। সে বিষয়েও তদন্ত চলছে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগের মূল ভিত্তি হবে—আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়, এমনকি তিনি যদি সাবেক প্রেসিডেন্টও হোন। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পকে দোষী প্রমাণ করা কঠিন হবে।
ট্রাম্পকে বিচারের মুখোমুখি করার ফলে রাজনৈতিক বিভাজন বাড়বে কিনা এবং এ বিভাজন আমেরিকার জাতীয় স্বার্থে বড় ধরনের আঘাত করবে কিনা, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে যে এর প্রভাব পড়বে, তাতে কারোরই সন্দেহ নেই।
আরও একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হচ্ছে, ছয় বছর আগের একটি পুরোনো মামলা কেন নির্বাচনের এই আগ মুহূর্তে সামনে আনা হলো, সেটি নিয়ে জনমনে অবশ্যই প্রশ্ন উঠবে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ট্রাম্প সবচেয়ে বিতর্কিত উপায়েই তাঁর রাজনৈতিক প্রচারণা চালাবেন। তাঁর এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে।
সূত্র: সিএনএন, বিবিসি ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দিয়েছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রতিষ্ঠানগুলো এখন সেই পরীক্ষা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার গ্রেপ্তার হতে পারেন বলে ট্রাম্প নিজেই গত শনিবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথে দেওয়া এক পোস্টে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তাঁকে যেন গ্রেপ্তার করতে না পারে, সে জন্য সমর্থকদের বিক্ষোভ করারও আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ট্রাম্প কেন গ্রেপ্তার হওয়ার আশঙ্কা করছেন? কারণ পর্ন স্টার স্টর্মি ড্যানিয়েলস যৌন সম্পর্কের কথা ফাঁস করার পর তাঁর মুখ বন্ধ করার জন্য অর্থ দেওয়ার অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ও মামলা শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকে আরও বিভাজিত করবে। যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিকভাবে এক কঠিন অগ্নিপরীক্ষার দিকে যাচ্ছে বলে ধারণা তাঁদের। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মাধ্যমে রিপাবলিকান পার্টির ওপর ট্রাম্পের কতটা প্রভাব রয়েছে, সেটিও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফলকে উল্টে দেওয়ার চেষ্টা ও হোয়াইট হাউস ছাড়ার পরেও শ্রেণিবদ্ধ নথিগুলো পরিচালনার অভিযোগে একাধিক তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই অন্যতম ধনকুবের, সাবেক রিয়্যালিটি টিভি তারকা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করা হবে—এমন কোনো আনুষ্ঠানিক নোটিশ ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগের কার্যালয় থেকে এখনো পাননি ট্রাম্প। তবে একটি গ্র্যান্ড জুরি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। এ জন্য ট্রাম্পের আইনজীবীরা অভিযোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে মামলা করেন স্টেফানি গ্রেগরি ক্লিফোর্ড, যিনি পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে স্টর্মি ড্যানিয়েলস নামে পরিচিত। এক টুইটার পোস্টে তিনি লেখেন, ‘নীরব থাকার যে চুক্তি ট্রাম্পের সঙ্গে স্টেফানির হয়েছিল, তা মূলত অকার্যকর। কারণ এতে ট্রাম্প স্বাক্ষর করেননি।’
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, স্টেফানির মুখ বন্ধ রাখতে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক মাস আগে ট্রাম্প তাঁকে ১ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার দিয়েছিলেন। পরে স্টেফানিকে অর্থ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও এর সঙ্গে ট্রাম্প বা তাঁর প্রচারণা দলের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলে দাবি করেছিলেন ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের আইনজীবী মাইকেল কোহেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, স্টর্মির অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে ট্রাম্প ‘প্রচারণার অর্থ আইন’ লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারেন। তবে ট্রাম্প বলছেন, তিনি কোনো ভুল করেননি।
২০২৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই নির্বাচনের প্রচারণার অংশ হিসেবে এখন থেকেই নানা ধরনের বিতর্কিত কাজ করতে শুরু করছেন তিনি। যেমন কৌঁসুলিদের ভয় দেখানোর চেষ্টা, তৃণমূল সমর্থকদের একত্রিত করা, তাঁর পক্ষে সমাবেশ করার জন্য রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ কর্মকর্তাদের চাপ দেওয়া ইত্যাদি।
গত শনিবার ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যালে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আপনারা বিক্ষোভ করুন। আমাদের জাতীয়তাবোধ আবার ফিরিয়ে আনুন।’ তাঁর এই আহ্বান ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারিকে মনে করিয়ে দেয়। ওই দিন নির্বাচনের ফলাফল বানচাল করতে ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের বিক্ষোভের আহ্বান জানিয়ে টুইটারে পোস্ট করেছিলেন। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ট্রাম্প সমর্থকেরা ক্যাপিটল হিলে সহিংসতা চালিয়েছিল।
ট্রাম্পের আইনজীবী আলিনা হাব্বা বলেছেন, ‘ট্রাম্পকে নিছক অপকর্মের জন্য অভিযুক্ত করা হলে এর পরিণতি হবে গুরুতর। আমাদের দেশ এক আতঙ্কিত সময় পার করছে। আমরা চাই না কেউ কাউকে আঘাত করুক।’
ট্রাম্পের সমর্থকদের শান্ত থাকা উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, উৎসাহী সমর্থকদের ওপর প্রচণ্ড দখল রয়েছে ট্রাম্পের। এ কারণে রিপাবলিকান দলের বেশির ভাগ আইনপ্রণেতা তাঁদের ক্যারিয়ারের স্বার্থেই ট্রাম্পকে খুশি রাখার চেষ্টা করবেন।
সিএনএনের এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে বলা হয়, তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগকে সর্বোচ্চ মাত্রায় রাজনীতিকরণ করবেন ট্রাম্প এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করতে যা করা প্রয়োজন সবই করবেন তিনি।
ইতিমধ্যে তার কিছু নজির দেখা যাচ্ছে। গত রোববার স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি বলেছেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুর্বল।
একই ধরনের মন্তব্য করেছেন হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির চেয়ারম্যান জিম জর্ডান। তিনি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আইনভঙ্গ করেছেন বলে আমরা মনে করি না।’
ট্রাম্পের গত শনিবারের পোস্টের পর অনেক রিপাবলিকান সমালোচককেও ট্রাম্পের পাশে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে। যেমন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, যিনি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মনোনয়নের জন্য ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন, তিনি এবিসি নিউজকে বলেছেন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হচ্ছে। আমার পক্ষ থেকে আমি বলতে পারি, এ ধরনের দৃশ্য আমেরিকার জনগণ দেখতে চায় না।
ট্রাম্পের কঠোর সমালোচক নিউ হ্যাম্পশায়ারের রিপাবলিকান গভর্নর ক্রিস সুনুনু বলেছেন, ‘ব্র্যাগের তদন্ত ট্রাম্পের প্রতি মানুষের সহানুভূতিই তৈরি করবে। আমি আজ সকালে কিছু মানুষের সঙ্গে কফি খাচ্ছিলাম। তারা কেউই ট্রাম্পের সমর্থক নন। তারপরও তাঁরা বলেছেন, ট্রাম্পকে অযাচিতভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে।’
ট্রাম্প নানা কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য প্রেসিডেন্ট থেকে আলাদা। তিনি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের মার্কিন ঐতিহ্যকে বাধা দিতে চেয়েছিলেন এবং ২০২০ সালের নির্বাচনের পর পরাজয়ে ব্যাপারে মিথ্যাচার করেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয়, তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা হবে। সুতরাং বলার অপেক্ষা রাখে না, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলাগুলো আইনত ন্যায্য হলেও নিউ ইয়র্ক ও জর্জিয়ার কৌঁসুলি এবং বিচার বিভাগ এই মুহূর্তে একটি বিপজ্জনক ও অজানা মুহূর্তের মুখোমুখি।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এসব মামলা ও বিচারপ্রক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির ওপর নানাভাবে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। যেমন- ট্রাম্প ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার প্রচারণা হিসেবে নিজেকে এখন থেকেই একজন নিপীড়িত-নির্যাতিত প্রার্থী হিসেবে প্রচার করতে শুরু করেছেন। তিনি পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলে শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবেন বলেও ঘোষণা দিচ্ছেন।
ট্রাম্প অভিযুক্ত হলেও সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে সাংবিধানিক সুরক্ষা পাবেন। তিনি বারবার এ মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রচার করেছেন। এতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন, তাতে সন্দেহ নেই।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তকে পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে প্রচার করবেন ট্রাম্প। এতে বিরোধীরা ঘায়েল হবে এবং তিনি রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। তাঁর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী রন ডিস্যান্ডিস ও নিকি হ্যালি দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়বেন। তাঁরা ট্রাম্পের পক্ষেও দাঁড়াতে পারেন।
ইতিমধ্যেই রন ডিস্যান্ডিস এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের পক্ষ নিয়ে বলেছেন, ‘আপনার যদি এমন একজন কৌঁসুলি থাকে, যিনি প্রতিদিন ঘটতে থাকা অপরাধগুলো উপেক্ষা করেন আর বহু বছর আগের পুরোনো ‘হাশ মানি’ সম্পর্কিত পর্নস্টারের মামলা নিয়ে মেতে থাকেন, তাহলে বুঝবেন, এটি একটি রাজনৈতিক এজেন্ডার উদাহরণ। আমি মনে করি, এটি একটি ভুল কাজ।’
প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে রিপাবলিকানদের মনোনয়নের এখনো এক বছর বাকি। সুতরাং এখনই এটি বলা অসম্ভব যে ভোটার ও নির্বাচকমণ্ডলীরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন। তাঁরা ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দেবেন কিনা, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে তাঁর মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে এ মামলা যে প্রভাব রাখবে, তাতে সন্দেহ নেই।
পর্নস্টার স্টর্মি ড্যানিয়েলসের মামলাই ট্রাম্পের জীবনে সবচেয়ে বড় বিপদ হিসেবে নেমে এসেছে, তা নয়। বরং তাঁর বিরুদ্ধে ক্যাপিটল হিলে আক্রমণের উসকানির অভিযোগের তদন্ত চলছে। এ ছাড়া ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার জন্য জর্জিয়ার স্থানীয় কর্মকর্তাদের চাপ দিয়েছিলেন বলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। সে বিষয়েও তদন্ত চলছে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগের মূল ভিত্তি হবে—আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়, এমনকি তিনি যদি সাবেক প্রেসিডেন্টও হোন। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পকে দোষী প্রমাণ করা কঠিন হবে।
ট্রাম্পকে বিচারের মুখোমুখি করার ফলে রাজনৈতিক বিভাজন বাড়বে কিনা এবং এ বিভাজন আমেরিকার জাতীয় স্বার্থে বড় ধরনের আঘাত করবে কিনা, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে যে এর প্রভাব পড়বে, তাতে কারোরই সন্দেহ নেই।
আরও একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হচ্ছে, ছয় বছর আগের একটি পুরোনো মামলা কেন নির্বাচনের এই আগ মুহূর্তে সামনে আনা হলো, সেটি নিয়ে জনমনে অবশ্যই প্রশ্ন উঠবে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ট্রাম্প সবচেয়ে বিতর্কিত উপায়েই তাঁর রাজনৈতিক প্রচারণা চালাবেন। তাঁর এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে।
সূত্র: সিএনএন, বিবিসি ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
২ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৬ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৮ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৮ দিন আগে