আব্দুর রহমান
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় বিগত কয়েক মাস ধরে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আলোচনা চালাচ্ছে সৌদি আরব ও ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে পরিষ্কার করে বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব ও ইসরায়েল তাদের দুই প্রধান মিত্র এবং তাদের মধ্যকার মৈত্রী ওয়াশিংটনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। আরেক ধাপ এগিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন তো বলেই ফেলেছেন, এ দুই দেশের মৈত্রী তাদের ‘জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ’।
সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিষয়টি এমন সময়ে সামনে এসেছে, যার মাত্র কয়েক মাস আগেই রিয়াদ দীর্ঘ সময়ের বৈরী ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করেছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রচারমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, প্রতিনিয়তই সৌদি আরব ও ইসরায়েল পরস্পরের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিনিময়ে সৌদি আরব কী চায়
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিনিময়ে রিয়াদ স্পষ্ট কিছু বিষয় অর্জন করতে চায়। যেমন—সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চায়, যার আওতায় সৌদি আরব দেশটি থেকে অবাধে অস্ত্র আমদানি করার সুযোগ চায়। পাশাপাশি বেসামরিক উদ্দেশ্যে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহারের উদ্দেশ্যে মার্কিন প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তা চায় দেশটি।
পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়টি নিয়ে সৌদি আরব উদ্বিগ্নও। কারণ ইরানের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে ইরান সব সময়ই এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে ইরানের প্রসঙ্গ টেনে সৌদি যুবরাজ যুক্তরাষ্ট্রে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র পায়, তবে সৌদি আরবের হাতেও অস্ত্র থাকা উচিত।’ এ থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে সম্ভবত ইরানের প্রতিবাদ অগ্রাহ্য করবে।
রিয়াদ আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সৃষ্টি। তবে ইসরায়েল সরকার বিষয়টিকে কীভাবে নেবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। কারণ, দেশটির ইতিহাসে যত সরকার এসেছে, তারা সবাই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয়টিকে ধর্মীয় জায়গা থেকে বিবেচনা করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছে।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সৃষ্টি প্রসঙ্গে ফক্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌদি যুবরাজ বলেন, ‘আমরা কোন পথে যাচ্ছি তা বিবেচনায় রাখতে হবে। তবে আমরা আশা করি এটি আমাদের এমন একটি জায়গায় পৌঁছে দেবে, যা ফিলিস্তিনিদের জীবনকে সহজ করবে এবং ইসরায়েলকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তি হিসেবে স্বীকার করে নেবে।’
এর বাইরে সৌদি আরব ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগের অন্যতম প্রস্তাবক। এই শান্তি উদ্যোগের মূল শর্তগুলো হলো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা। বিনিময়ে ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনের দখল করা ভূমি ছেড়ে দিতে হবে এবং সিরিয়াকে গোলান মালভূমি ফেরত দিতে হবে।
সেই শান্তি উদ্যোগে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করা ফিলিস্তিনি এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি ন্যায্য সমাধান বের করার কথাও বলা হয়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ক্ষেত্রে সৌদি আরব এই শর্ত আবারও সামনে হাজির করেছে।
ইসরায়েলের অবস্থান কী
গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন আশা প্রকাশ করে বলেছেন, খুব শিগগিরই সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। তিনি বলেছেন, ‘দুই দেশের মধ্যে এখনো যে ব্যবধান রয়েছে তা পূরণ করা যাবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি মনে করি, অবশ্যই এই সম্ভাবনা আছে যে—২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে বা চার-পাঁচ মাসের মধ্যেই আমরা এমন একটি পর্যায়ে যেতে সক্ষম হব যেখানে একটি চুক্তির বিষয়বস্তু চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।’
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাশি হেঞ্জবি বলেছেন, সৌদি আরব যে পারমাণবিক কর্মসূচি নিতে করতে চাচ্ছে সেটি এই চুক্তির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। তিনি আরও বলেছেন, বিশ্বের কয়েক ডজন দেশ এমন বেসামরিক উদ্দেশ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। এর কারণে দেশটির প্রতিবেশী বা অন্য কেউ বিপদের মুখে পড়বে না। অর্থাৎ, সৌদি আরবের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইসরায়েলের তরফ থেকে কোনো বাধা নেই।
সৌদি আরবে পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়টি মেনে নিলেও ফিলিস্তিন ইস্যুতে এখনো কড়া অবস্থানে ইসরায়েল সরকার। কারণ দেশটির ক্ষমতাসীন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে কোনো ধরনের ছাড় এবং পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপন বন্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনের প্রতিক্রিয়া কী
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সম্মতি আদায়ে সৌদি আরব তাদের আর্থিক সহায়তা পুনরায় চালু করার প্রস্তাব দিয়েছে। ২০২১ সালের সেই সাহায্য পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিল রিয়াদ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত আগস্টে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের একটি প্রতিনিধি দল রিয়াদে গিয়েছিল নিজস্ব শর্তগুলো আলোচনা করতে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবিত শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, ইসরায়েল অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে মার্কিন কনস্যুলেট আবারও চালু করা। ২০১৯ সালের তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পূর্ব জেরুজালেমকে ইসরায়েলের অংশ বলে স্বীকৃতি দিয়ে সেখানে ফিলিস্তিনিদের জন্য খোলা কনস্যুলেট বন্ধ করে দেন। এ ছাড়া জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রে পূর্ণাঙ্গ সমর্থনও দাবি করেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
এর বাইরে, ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরসহ অন্যান্য ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ওপর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ দেওয়া এবং এসব অঞ্চল থেকে অবৈধ ইসরায়েলি সেনাচৌকি সরিয়ে নেওয়া।
সৌদি আরবের ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ তুলনামূলক নমনীয় আচরণ করছে। কারণ এর আগে, ২০২০ সালে যখন সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তখন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলেছিল—এর মাধ্যমে দেশ দুটি ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করল।
ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ইরান। এ বিষয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভাষণে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন—‘আমরা বিশ্বাস করি যে, এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের শাসকদের সম্পর্ক ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের প্রতিরোধ আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বলে বিবেচিত হবে।’
তবে সৌদি আরব ইরানের আপত্তি বা প্রতিবাদ কতটা গ্রাহ্য করবে এবং ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে কতটা সফল হবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলার কোনো সুযোগে নেই। কারণ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে তুলনামূলক নমনীয় আচরণ দেখা গেলেও ইসরায়েলি মন্ত্রী বেন-গাভিরের মন্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট যে, তাঁরা শিগগিরই ফিলিস্তিন ইস্যুতে খুব বেশি ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়। এই অবস্থায় ফিলিস্তিন ইস্যুকে বাদ দিয়ে সৌদি আরব সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে এগিয়ে গেলে কীভাবে যাবে তাই দেখার বিষয়।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, রয়টার্স ও এএফপি
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় বিগত কয়েক মাস ধরে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আলোচনা চালাচ্ছে সৌদি আরব ও ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে পরিষ্কার করে বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব ও ইসরায়েল তাদের দুই প্রধান মিত্র এবং তাদের মধ্যকার মৈত্রী ওয়াশিংটনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। আরেক ধাপ এগিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন তো বলেই ফেলেছেন, এ দুই দেশের মৈত্রী তাদের ‘জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ’।
সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিষয়টি এমন সময়ে সামনে এসেছে, যার মাত্র কয়েক মাস আগেই রিয়াদ দীর্ঘ সময়ের বৈরী ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করেছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রচারমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, প্রতিনিয়তই সৌদি আরব ও ইসরায়েল পরস্পরের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিনিময়ে সৌদি আরব কী চায়
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিনিময়ে রিয়াদ স্পষ্ট কিছু বিষয় অর্জন করতে চায়। যেমন—সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চায়, যার আওতায় সৌদি আরব দেশটি থেকে অবাধে অস্ত্র আমদানি করার সুযোগ চায়। পাশাপাশি বেসামরিক উদ্দেশ্যে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহারের উদ্দেশ্যে মার্কিন প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তা চায় দেশটি।
পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়টি নিয়ে সৌদি আরব উদ্বিগ্নও। কারণ ইরানের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে ইরান সব সময়ই এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে ইরানের প্রসঙ্গ টেনে সৌদি যুবরাজ যুক্তরাষ্ট্রে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র পায়, তবে সৌদি আরবের হাতেও অস্ত্র থাকা উচিত।’ এ থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে সম্ভবত ইরানের প্রতিবাদ অগ্রাহ্য করবে।
রিয়াদ আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সৃষ্টি। তবে ইসরায়েল সরকার বিষয়টিকে কীভাবে নেবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। কারণ, দেশটির ইতিহাসে যত সরকার এসেছে, তারা সবাই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয়টিকে ধর্মীয় জায়গা থেকে বিবেচনা করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছে।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সৃষ্টি প্রসঙ্গে ফক্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌদি যুবরাজ বলেন, ‘আমরা কোন পথে যাচ্ছি তা বিবেচনায় রাখতে হবে। তবে আমরা আশা করি এটি আমাদের এমন একটি জায়গায় পৌঁছে দেবে, যা ফিলিস্তিনিদের জীবনকে সহজ করবে এবং ইসরায়েলকে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তি হিসেবে স্বীকার করে নেবে।’
এর বাইরে সৌদি আরব ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগের অন্যতম প্রস্তাবক। এই শান্তি উদ্যোগের মূল শর্তগুলো হলো ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা। বিনিময়ে ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনের দখল করা ভূমি ছেড়ে দিতে হবে এবং সিরিয়াকে গোলান মালভূমি ফেরত দিতে হবে।
সেই শান্তি উদ্যোগে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করা ফিলিস্তিনি এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি ন্যায্য সমাধান বের করার কথাও বলা হয়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ক্ষেত্রে সৌদি আরব এই শর্ত আবারও সামনে হাজির করেছে।
ইসরায়েলের অবস্থান কী
গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন আশা প্রকাশ করে বলেছেন, খুব শিগগিরই সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। তিনি বলেছেন, ‘দুই দেশের মধ্যে এখনো যে ব্যবধান রয়েছে তা পূরণ করা যাবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি মনে করি, অবশ্যই এই সম্ভাবনা আছে যে—২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে বা চার-পাঁচ মাসের মধ্যেই আমরা এমন একটি পর্যায়ে যেতে সক্ষম হব যেখানে একটি চুক্তির বিষয়বস্তু চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।’
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাশি হেঞ্জবি বলেছেন, সৌদি আরব যে পারমাণবিক কর্মসূচি নিতে করতে চাচ্ছে সেটি এই চুক্তির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। তিনি আরও বলেছেন, বিশ্বের কয়েক ডজন দেশ এমন বেসামরিক উদ্দেশ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। এর কারণে দেশটির প্রতিবেশী বা অন্য কেউ বিপদের মুখে পড়বে না। অর্থাৎ, সৌদি আরবের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইসরায়েলের তরফ থেকে কোনো বাধা নেই।
সৌদি আরবে পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়টি মেনে নিলেও ফিলিস্তিন ইস্যুতে এখনো কড়া অবস্থানে ইসরায়েল সরকার। কারণ দেশটির ক্ষমতাসীন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের জন্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে কোনো ধরনের ছাড় এবং পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপন বন্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনের প্রতিক্রিয়া কী
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সম্মতি আদায়ে সৌদি আরব তাদের আর্থিক সহায়তা পুনরায় চালু করার প্রস্তাব দিয়েছে। ২০২১ সালের সেই সাহায্য পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিল রিয়াদ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত আগস্টে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের একটি প্রতিনিধি দল রিয়াদে গিয়েছিল নিজস্ব শর্তগুলো আলোচনা করতে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবিত শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, ইসরায়েল অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে মার্কিন কনস্যুলেট আবারও চালু করা। ২০১৯ সালের তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পূর্ব জেরুজালেমকে ইসরায়েলের অংশ বলে স্বীকৃতি দিয়ে সেখানে ফিলিস্তিনিদের জন্য খোলা কনস্যুলেট বন্ধ করে দেন। এ ছাড়া জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রে পূর্ণাঙ্গ সমর্থনও দাবি করেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
এর বাইরে, ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরসহ অন্যান্য ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ওপর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ দেওয়া এবং এসব অঞ্চল থেকে অবৈধ ইসরায়েলি সেনাচৌকি সরিয়ে নেওয়া।
সৌদি আরবের ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ তুলনামূলক নমনীয় আচরণ করছে। কারণ এর আগে, ২০২০ সালে যখন সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তখন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলেছিল—এর মাধ্যমে দেশ দুটি ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করল।
ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ইরান। এ বিষয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভাষণে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন—‘আমরা বিশ্বাস করি যে, এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের শাসকদের সম্পর্ক ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের প্রতিরোধ আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বলে বিবেচিত হবে।’
তবে সৌদি আরব ইরানের আপত্তি বা প্রতিবাদ কতটা গ্রাহ্য করবে এবং ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে কতটা সফল হবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলার কোনো সুযোগে নেই। কারণ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে তুলনামূলক নমনীয় আচরণ দেখা গেলেও ইসরায়েলি মন্ত্রী বেন-গাভিরের মন্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট যে, তাঁরা শিগগিরই ফিলিস্তিন ইস্যুতে খুব বেশি ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়। এই অবস্থায় ফিলিস্তিন ইস্যুকে বাদ দিয়ে সৌদি আরব সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে এগিয়ে গেলে কীভাবে যাবে তাই দেখার বিষয়।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, রয়টার্স ও এএফপি
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
২ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৬ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৮ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৮ দিন আগে