আমিনুল ইসলাম নাবিল
আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল ছোট অর্থনীতির দেশ ‘কিংডম অব ইসোয়াতিনি’। দেশটি সোয়াজিল্যান্ড নামেও পরিচিত। আফ্রিকার শেষ পূর্ণ রাজতন্ত্রের দেশ এটি। জনসংখ্যা মাত্র ১২ লাখ। এখানকার মানুষের গড় আয়ু অনেক কম। দেশটির প্রাপ্তবয়স্কদের আনুমানিক ২৬ শতাংশ এইচআইভি আক্রান্ত। এমন একটি দেশের রাজা তৃতীয় মাসাওয়াতি শাসন টিকিয়ে রাখতে যন্তর–মন্তর ও গিলোটিন একসঙ্গেই চালাচ্ছেন।
১৯৬৮ সালে দেশটি ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। তবে বর্তমানে নিজ দেশেই পরাধীন জীবন কাটাচ্ছেন ইসোয়াতিনির জনগণ। কারণ, দেশটির রাজা তৃতীয় মাসাওয়াতি কেড়ে নিয়েছেন তাঁদের সব অধিকার। রাজতন্ত্রবিরোধী বিক্ষোভ দমনে বেছে নিয়েছেন হত্যার পথ। দেশজুড়ে কারফিউ জারি করেছেন। বন্ধ করে দিয়েছেন ইন্টারনেট–সংযোগ। দেশের সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেছেন। বিরোধী মতের মানুষদের দিচ্ছেন কারাদণ্ড। নাগরিকদের দমনে মাঠে নামিয়েছেন সেনাবাহিনী।
ফলে দেশটিতে রাজতন্ত্রবিরোধী মনোভাব জোরদার হচ্ছে। অধিকাংশ মানুষই বহুদলীয় গণতন্ত্র চাইছেন। এতে আফ্রিকায় রাজতন্ত্রের বিদায়ী ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে।
ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির সাংবাদিকেরা চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে নিশ্চিত করেছেন রাজতন্ত্রবিরোধী বিক্ষোভে সামরিক বাহিনীর হাতে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। যদিও দেশটির সরকারের দাবি, প্রতিরোধের অংশ হিসেবে এবং মানুষের সম্পদ রক্ষায় ব্যবস্থা নিয়েছে সামরিক বাহিনী। এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে সামরিক বাহিনীর হাতে ২৭ জন নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করেছে দেশটির সরকার।
বরাবরের মতোই অন্য যেকোনো কট্টর শাসকের মতোই বিক্ষোভকারীদের দাঙ্গাবাজ ও বিদেশি দালাল বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ৫৩ বছর বয়সী রাজা তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে ষড়যন্ত্র বলেও মনে করেছেন। এদিকে বিক্ষোভকারীরা বলছেন, এখানকার ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ৪৬ শতাংশের বেশি মানুষ বেকার। তরুণদের জন্য এখানে কোনো সুযোগ নেই।
সোয়াজিল্যান্ডের মানুষেরা অত্যন্ত গরিব হলেও রাজা তৃতীয় মাসাওয়াতির সম্পদের অভাব নেই। ২০১৪ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনে উঠে আসে তাঁর সম্পদের পরিমাণ। সেই সময়ে তাঁর সম্পদের পরিমাণ ছিল কমপক্ষে ৫ কোটি মার্কিন ডলারের সমতুল্য।
তৃতীয় মাসাওয়াতির জীবনযাপনও ভীষণ বিলাসবহুল। আগেকার দিনের যেকোনো রাজার মতোই তাঁর রয়েছে বহু স্ত্রী। অবশ্য আফ্রিকার বহু স্থানে বহুবিবাহ এখনো বেশ প্রচলিত বিষয়। তারপরও তাঁর নারীপ্রীতির কথা সর্বজনবিদিত। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজা তৃতীয় মাসাওয়াতি ১৫ জন স্ত্রী নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রাসাদ দখল করে আয়েশি জীবন যাপন করছেন। যদিও ঘোষিত স্ত্রীর বাইরের সম্পর্কগুলো বিবেচনায় নিলে এই সংখ্যা বেশ বড় হবে বলেই দাবি অনেকের।
১৯৬৮ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা অর্জন করলেও দেশটিতে এখনো চলে রাজার ডিক্রি। এই যে সোয়াজিল্যান্ড হিসেবে সমধিক পরিচিত দেশটি ২০১৮ সালে হঠাৎ করেই ইসোয়াতিনি হয়ে গেল, তাও কিন্তু রাজার ডিক্রিতেই। ১৮ বছর বয়সে সিংহাসনে আসীন হওয়া রাজা তৃতীয় মাসাওয়াতির হঠাৎ খেয়ালে শত বছরের নামটি খসে পড়ল দেশটির গা থেকে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও মোজাম্বিকের মাঝে স্থলসীমানাবেষ্টিত এই দেশের রকমসকম এমনই। রাজার খেয়াল হলো তো, তাই আইন। সংবিধান একটা আছে বটে। তবে তাও রাজার ইচ্ছার অধীন। নাম বদলের ক্ষেত্রেই যেমন বিস্তর সমালোচনা ঠেলে তিনি ঠিকই সংবিধান বদলে ফেললেন।
এমনিতে দেশটি প্রতিবেশী দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল। দেশটির বার্ষিক মোট আমদানির ৭০ শতাংশই হয় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। আবার রপ্তানিরও ৬০ শতাংশ হয় সে দেশেই। বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের নিয়মকানুনের চেয়ে এই ইসোয়াতিনির নিয়মকানুন কিছুটা আলাদা। ‘কর্তার ইচ্ছায় কর্ম’—এই নীতিই মেনে চলে সবকিছু। তৃতীয় মাসাওয়াতির বাবাই যেমন ইচ্ছা হলো তো রাজনৈতিক দল গড়লেন। আবার ইচ্ছা হলো সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করলেন। দেশটিতে সংবাদপত্রও আছে। তবে সেই থাকাটা কেমন, তা নিশ্চয় বুঝিয়ে বলতে হবে না।
তবে এত কিছুর পরও রাজার গুণকীর্তনের লোকও কিন্তু রয়েছে। দেশটির অর্থমন্ত্রী নিল রিজকেনবার্গ রাজার পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, ইসোয়াতিনিতে গণতন্ত্র আছে। কেননা বাজেটের অনুমোদন কিন্তু সংসদ থেকেই নিতে হয়। যুক্তি বটে! তবে বিরোধীরা বলছেন ভিন্ন কথা। পিপলস ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের নেতা ওয়ান্ডাইল ডালডলু বলেন, রাজা তৃতীয় মাসাওয়াতির পক্ষে পেশাদারি, নৈতিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে রাজ্য পরিচালনা সম্ভব নয়। রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত সম্পদের মধ্যে কোনো সুস্পষ্ট পার্থক্য এখানে নেই।
আরেক মন্ত্রী মানকোবা খুমালোর দাবি, দেশের তরুণদের বেকারত্বের জন্য রাজা উদ্বিগ্ন। কিন্তু এই উদ্বেগের কোনো বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় না; বরং পাশের দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় কাজ করে দেশে পাঠানো অর্থের ওপর অবধারিতভাবে বসে যায় ‘রাজকর’। দেশটির সাধারণ মানুষের মধ্যে দারিদ্র্য বেশ প্রকট। কিন্তু ওই যে রাজা—‘ভরপেট না–ও খাই, রাজকর দেওয়া চাই।’ ইসোয়াতিনি বা সোয়াজিল্যান্ডের দশা অনেকটা তাই।
দেশটিতে এখন রাজতন্ত্রের অবসানের দাবিতে বিক্ষোভ হচ্ছে। এই বিক্ষোভ সময়ের সঙ্গে বেশ জোরালো হচ্ছে। কিন্তু অনেকটা বিচ্ছিন্ন এই দেশে চলমান বিক্ষোভ নিয়ে কারও তেমন মাথাব্যথা নেই। দেশটির সাবেক এক কূটনীতিকের কথা উদ্ধৃত করেছে দ্য ইকোনমিস্ট। তিনি বলছেন, ইসোয়াতিনি একরকম আলোচনার বাইরের একটি দেশ। এখানে কী হচ্ছে, না হচ্ছে—এসব নিয়ে আলোচনা কম। এখানে মাত্র আটটি দেশের মিশন রয়েছে।
তারপরও সেখানকার মানুষ বিক্ষোভ করছে। তারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দাবি তুলছে জোরেশোরে। রাজার প্রতি আস্থাহীনতা বাড়ছে ক্রমশ। আপাতদৃষ্টিতে দেখে মনে হচ্ছে, রাজা সব আন্দোলন থামিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু ভেতরে-ভেতরে রাজার জনপ্রিয়তা হ্রাস পাচ্ছে। ২০১৫ সালের এক জরিপে দেখা গিয়েছিল, দেশটির ৭৯ শতাংশ মানুষ রাজার প্রতি আস্থাশীল ছিলেন। কিন্তু এ বছরের শুরুতে জরিপে দেখা যায়, রাজার প্রতি আস্থা কমে ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে।
দেশটির অধিকাংশ মানুষই বহুদলীয় গণতন্ত্র সমর্থন করেন। তাঁরাই তাঁদের নেতা নির্বাচিত করতে চান। রাজা তৃতীয় মাসাওয়াতি যত দিন ক্ষমতায় থাকবেন, তত দিন দেশটিতে রাজতন্ত্রবিরোধী এই মনোভাব বাড়তে থাকবে। রাজতন্ত্র থেকে দেশটির জনগণ ক্রমশ গণতন্ত্রের দিকেই ধাবিত হচ্ছেন। এবারের বিক্ষোভেই যেমন, তাঁরা নিজেদের নিপীড়িত হওয়াকে বেশ ভালোভাবেই চিহ্নিত করতে পেরেছেন। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে সাদা হাঁটুর নিচে প্রাণ গেছে জর্জ ফ্লয়েডের (কৃষ্ণাঙ্গ), আর এখানে কালো হাঁটুর নিচে প্রাণ যাচ্ছে কালো মানুষের। এই বোধটি অর্জন করাই অনেক বড় ব্যাপার। নিজের পরাধীনতাকে অনুধাবন করতে পারা সোয়াজিল্যান্ডবাসীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ফলে আফ্রিকার শেষ রাজা কত দিন সিংহাসনে থাকতে পারবেন—তা আর হলফ করে বলা যাচ্ছে না।
আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল ছোট অর্থনীতির দেশ ‘কিংডম অব ইসোয়াতিনি’। দেশটি সোয়াজিল্যান্ড নামেও পরিচিত। আফ্রিকার শেষ পূর্ণ রাজতন্ত্রের দেশ এটি। জনসংখ্যা মাত্র ১২ লাখ। এখানকার মানুষের গড় আয়ু অনেক কম। দেশটির প্রাপ্তবয়স্কদের আনুমানিক ২৬ শতাংশ এইচআইভি আক্রান্ত। এমন একটি দেশের রাজা তৃতীয় মাসাওয়াতি শাসন টিকিয়ে রাখতে যন্তর–মন্তর ও গিলোটিন একসঙ্গেই চালাচ্ছেন।
১৯৬৮ সালে দেশটি ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। তবে বর্তমানে নিজ দেশেই পরাধীন জীবন কাটাচ্ছেন ইসোয়াতিনির জনগণ। কারণ, দেশটির রাজা তৃতীয় মাসাওয়াতি কেড়ে নিয়েছেন তাঁদের সব অধিকার। রাজতন্ত্রবিরোধী বিক্ষোভ দমনে বেছে নিয়েছেন হত্যার পথ। দেশজুড়ে কারফিউ জারি করেছেন। বন্ধ করে দিয়েছেন ইন্টারনেট–সংযোগ। দেশের সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেছেন। বিরোধী মতের মানুষদের দিচ্ছেন কারাদণ্ড। নাগরিকদের দমনে মাঠে নামিয়েছেন সেনাবাহিনী।
ফলে দেশটিতে রাজতন্ত্রবিরোধী মনোভাব জোরদার হচ্ছে। অধিকাংশ মানুষই বহুদলীয় গণতন্ত্র চাইছেন। এতে আফ্রিকায় রাজতন্ত্রের বিদায়ী ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে।
ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির সাংবাদিকেরা চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে নিশ্চিত করেছেন রাজতন্ত্রবিরোধী বিক্ষোভে সামরিক বাহিনীর হাতে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। যদিও দেশটির সরকারের দাবি, প্রতিরোধের অংশ হিসেবে এবং মানুষের সম্পদ রক্ষায় ব্যবস্থা নিয়েছে সামরিক বাহিনী। এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে সামরিক বাহিনীর হাতে ২৭ জন নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করেছে দেশটির সরকার।
বরাবরের মতোই অন্য যেকোনো কট্টর শাসকের মতোই বিক্ষোভকারীদের দাঙ্গাবাজ ও বিদেশি দালাল বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ৫৩ বছর বয়সী রাজা তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে ষড়যন্ত্র বলেও মনে করেছেন। এদিকে বিক্ষোভকারীরা বলছেন, এখানকার ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ৪৬ শতাংশের বেশি মানুষ বেকার। তরুণদের জন্য এখানে কোনো সুযোগ নেই।
সোয়াজিল্যান্ডের মানুষেরা অত্যন্ত গরিব হলেও রাজা তৃতীয় মাসাওয়াতির সম্পদের অভাব নেই। ২০১৪ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনে উঠে আসে তাঁর সম্পদের পরিমাণ। সেই সময়ে তাঁর সম্পদের পরিমাণ ছিল কমপক্ষে ৫ কোটি মার্কিন ডলারের সমতুল্য।
তৃতীয় মাসাওয়াতির জীবনযাপনও ভীষণ বিলাসবহুল। আগেকার দিনের যেকোনো রাজার মতোই তাঁর রয়েছে বহু স্ত্রী। অবশ্য আফ্রিকার বহু স্থানে বহুবিবাহ এখনো বেশ প্রচলিত বিষয়। তারপরও তাঁর নারীপ্রীতির কথা সর্বজনবিদিত। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজা তৃতীয় মাসাওয়াতি ১৫ জন স্ত্রী নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রাসাদ দখল করে আয়েশি জীবন যাপন করছেন। যদিও ঘোষিত স্ত্রীর বাইরের সম্পর্কগুলো বিবেচনায় নিলে এই সংখ্যা বেশ বড় হবে বলেই দাবি অনেকের।
১৯৬৮ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা অর্জন করলেও দেশটিতে এখনো চলে রাজার ডিক্রি। এই যে সোয়াজিল্যান্ড হিসেবে সমধিক পরিচিত দেশটি ২০১৮ সালে হঠাৎ করেই ইসোয়াতিনি হয়ে গেল, তাও কিন্তু রাজার ডিক্রিতেই। ১৮ বছর বয়সে সিংহাসনে আসীন হওয়া রাজা তৃতীয় মাসাওয়াতির হঠাৎ খেয়ালে শত বছরের নামটি খসে পড়ল দেশটির গা থেকে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও মোজাম্বিকের মাঝে স্থলসীমানাবেষ্টিত এই দেশের রকমসকম এমনই। রাজার খেয়াল হলো তো, তাই আইন। সংবিধান একটা আছে বটে। তবে তাও রাজার ইচ্ছার অধীন। নাম বদলের ক্ষেত্রেই যেমন বিস্তর সমালোচনা ঠেলে তিনি ঠিকই সংবিধান বদলে ফেললেন।
এমনিতে দেশটি প্রতিবেশী দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল। দেশটির বার্ষিক মোট আমদানির ৭০ শতাংশই হয় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। আবার রপ্তানিরও ৬০ শতাংশ হয় সে দেশেই। বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের নিয়মকানুনের চেয়ে এই ইসোয়াতিনির নিয়মকানুন কিছুটা আলাদা। ‘কর্তার ইচ্ছায় কর্ম’—এই নীতিই মেনে চলে সবকিছু। তৃতীয় মাসাওয়াতির বাবাই যেমন ইচ্ছা হলো তো রাজনৈতিক দল গড়লেন। আবার ইচ্ছা হলো সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করলেন। দেশটিতে সংবাদপত্রও আছে। তবে সেই থাকাটা কেমন, তা নিশ্চয় বুঝিয়ে বলতে হবে না।
তবে এত কিছুর পরও রাজার গুণকীর্তনের লোকও কিন্তু রয়েছে। দেশটির অর্থমন্ত্রী নিল রিজকেনবার্গ রাজার পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, ইসোয়াতিনিতে গণতন্ত্র আছে। কেননা বাজেটের অনুমোদন কিন্তু সংসদ থেকেই নিতে হয়। যুক্তি বটে! তবে বিরোধীরা বলছেন ভিন্ন কথা। পিপলস ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের নেতা ওয়ান্ডাইল ডালডলু বলেন, রাজা তৃতীয় মাসাওয়াতির পক্ষে পেশাদারি, নৈতিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে রাজ্য পরিচালনা সম্ভব নয়। রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত সম্পদের মধ্যে কোনো সুস্পষ্ট পার্থক্য এখানে নেই।
আরেক মন্ত্রী মানকোবা খুমালোর দাবি, দেশের তরুণদের বেকারত্বের জন্য রাজা উদ্বিগ্ন। কিন্তু এই উদ্বেগের কোনো বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় না; বরং পাশের দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় কাজ করে দেশে পাঠানো অর্থের ওপর অবধারিতভাবে বসে যায় ‘রাজকর’। দেশটির সাধারণ মানুষের মধ্যে দারিদ্র্য বেশ প্রকট। কিন্তু ওই যে রাজা—‘ভরপেট না–ও খাই, রাজকর দেওয়া চাই।’ ইসোয়াতিনি বা সোয়াজিল্যান্ডের দশা অনেকটা তাই।
দেশটিতে এখন রাজতন্ত্রের অবসানের দাবিতে বিক্ষোভ হচ্ছে। এই বিক্ষোভ সময়ের সঙ্গে বেশ জোরালো হচ্ছে। কিন্তু অনেকটা বিচ্ছিন্ন এই দেশে চলমান বিক্ষোভ নিয়ে কারও তেমন মাথাব্যথা নেই। দেশটির সাবেক এক কূটনীতিকের কথা উদ্ধৃত করেছে দ্য ইকোনমিস্ট। তিনি বলছেন, ইসোয়াতিনি একরকম আলোচনার বাইরের একটি দেশ। এখানে কী হচ্ছে, না হচ্ছে—এসব নিয়ে আলোচনা কম। এখানে মাত্র আটটি দেশের মিশন রয়েছে।
তারপরও সেখানকার মানুষ বিক্ষোভ করছে। তারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দাবি তুলছে জোরেশোরে। রাজার প্রতি আস্থাহীনতা বাড়ছে ক্রমশ। আপাতদৃষ্টিতে দেখে মনে হচ্ছে, রাজা সব আন্দোলন থামিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু ভেতরে-ভেতরে রাজার জনপ্রিয়তা হ্রাস পাচ্ছে। ২০১৫ সালের এক জরিপে দেখা গিয়েছিল, দেশটির ৭৯ শতাংশ মানুষ রাজার প্রতি আস্থাশীল ছিলেন। কিন্তু এ বছরের শুরুতে জরিপে দেখা যায়, রাজার প্রতি আস্থা কমে ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে।
দেশটির অধিকাংশ মানুষই বহুদলীয় গণতন্ত্র সমর্থন করেন। তাঁরাই তাঁদের নেতা নির্বাচিত করতে চান। রাজা তৃতীয় মাসাওয়াতি যত দিন ক্ষমতায় থাকবেন, তত দিন দেশটিতে রাজতন্ত্রবিরোধী এই মনোভাব বাড়তে থাকবে। রাজতন্ত্র থেকে দেশটির জনগণ ক্রমশ গণতন্ত্রের দিকেই ধাবিত হচ্ছেন। এবারের বিক্ষোভেই যেমন, তাঁরা নিজেদের নিপীড়িত হওয়াকে বেশ ভালোভাবেই চিহ্নিত করতে পেরেছেন। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে সাদা হাঁটুর নিচে প্রাণ গেছে জর্জ ফ্লয়েডের (কৃষ্ণাঙ্গ), আর এখানে কালো হাঁটুর নিচে প্রাণ যাচ্ছে কালো মানুষের। এই বোধটি অর্জন করাই অনেক বড় ব্যাপার। নিজের পরাধীনতাকে অনুধাবন করতে পারা সোয়াজিল্যান্ডবাসীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ফলে আফ্রিকার শেষ রাজা কত দিন সিংহাসনে থাকতে পারবেন—তা আর হলফ করে বলা যাচ্ছে না।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১৭ ঘণ্টা আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৭ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৮ দিন আগে