আমিনুল ইসলাম নাবিল
দীর্ঘ সাত বছরের বেশি সময় ধরে ইয়েমেনে জাতিসংঘ-সমর্থিত সরকার ও বিদ্রোহী হুতিদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ চলছে। ক্ষমতাচ্যুত সরকারের পক্ষ নিয়ে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সৌদি সামরিক জোট। অন্যদিকে অভিযোগ আছে, পর্দার আড়াল থেকে হুতিদের সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে ইরান। তাই ইয়েমেনে প্রত্যক্ষভাবে লড়াইটা ইয়েমেন সরকার বনাম হুতি বিদ্রোহীদের মধ্যকার হলেও পরোক্ষভাবে লড়াইটা সৌদি বনাম ইরানের।
গৃহযুদ্ধ, আঞ্চলিক আধিপত্যের এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত হাজার হাজার ইয়েমেনি নাগরিক নিহত হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, দেশটিতে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করেছে, ইয়েমেনের ৫০ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে এবং আরও ৫০ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া সংঘাতের কারণে ৪০ লাখ মানুষ এরই মধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বিবিসি বলছে, ইয়েমেনে ২০১৫ সালে যুদ্ধ শুরুর পর এ পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি শিশু প্রাণ হারিয়েছে।
মানব ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীন বসতি আর আরব বিশ্বের সবচেয়ে গরিব দেশ ইয়েমেন গৃহযুদ্ধের কারণে পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
তবে বিধ্বস্ত ইয়েমেনে এবার স্থিতিশীলতা ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যুদ্ধ থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা জেগেছে। কেননা ইয়েমেনে সব পক্ষের সম্মতিতে ২ এপ্রিল থেকে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। যুদ্ধবিরতি শুরুর পাঁচ দিন পরই অর্থাৎ ৭ এপ্রিল ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবদ-রাব্বু মনসুর হাদি।
এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট হাদি বলেন, ‘আমি অপরিবর্তনীয়ভাবে সংবিধান, উপসাগরীয় উদ্যোগ এবং তাদের নির্বাহী ব্যবস্থার সঙ্গে সংগতি রেখে আমার পূর্ণ ক্ষমতা প্রেসিডেনশিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিলের কাছে হস্তান্তর করছি।’
প্রেসিডেন্ট হাদি আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সময়টিতে এই কাউন্সিল ইয়েমেনের রাজনৈতিক, সামরিক এবং নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয় সামাল দেবে। গোটা ইয়েমেনে একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছার জন্য এবং চূড়ান্ত একটি রাজনৈতিক সমাধানের জন্য এই কাউন্সিল হুতিদের সঙ্গে আলোচনায়ও বসবে।’
প্রেসিডেনশিয়াল কাউন্সিলের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, ‘প্রেসিডেনশিয়াল কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠা ইয়েমেনে নতুন অধ্যায় শুরুতে অবদান রাখবে। প্রেসিডেনশিয়াল কাউন্সিল গঠন ইয়েমেনকে যুদ্ধের অবস্থা থেকে শান্তি ও উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাবে। ইয়েমেনের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি দেখতে চায় সৌদি।’
এমনকি ইয়েমেনের জন্য ৩০০ কোটি ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে সৌদি আরব। এই অর্থ ইয়েমেনের উন্নয়ন, ব্যাংকিং খাত এবং পেট্রোলিয়াম কেনার কাজে ব্যবহার করা হবে। ৩০০ কোটি ডলারের মধ্যে সৌদি আরব দেবে ২০০ কোটি ডলার আর সংযুক্ত আরব আমিরাত দেবে ১০০ কোটি ডলার।
এ ছাড়া ইয়েমেনের জনগণের দুর্ভোগ কমাতে এবং তাদের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য ২০২২ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে আরও ৩০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে।
জর্ডান, আরব লিগ এবং উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি) ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবদ-রাব্বু মনসুর হাদির পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে এবং প্রেসিডেনশিয়াল কাউন্সিলের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছে। এ ছাড়া আরব বিশ্ব, মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা ইয়েমেনের নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানিয়েছে।
আজ রোববার এক টুইট বার্তায় সৌদি আরবের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী যুবরাজ খালিদ বিন সালমান বলেছেন, ‘প্রেসিডেনশিয়াল কাউন্সিলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর একটি ঐতিহাসিক এবং সাহসী পদক্ষেপ।’
সামগ্রিক এসব বিষয় থেকে এটি স্পষ্ট যে, ইয়েমেনসহ পুরো আরব বিশ্বে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করার লক্ষ্যে এক ধাপ এগিয়ে গেল সৌদি আরব। কেননা দেশটি একদিকে যেমন ইয়েমেনের নতুন নেতৃত্বকে সমর্থন দিচ্ছে, অন্যদিকে বড় বড় অনুদানের ঘোষণা দিয়ে ইয়েমেনকে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এতে আরব বিশ্বে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করছে দেশটি। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, তারা ইয়েমেনের নতুন নেতৃত্বকে হুতিদের সঙ্গে বিবাদ মেটানোর তাগিদ দিচ্ছে। ইরানের মদদপুষ্ট হুতিদের থামানো গেলে ইয়েমেনের কলকাঠি সৌদির হাতেই চলে আসবে।
ইয়েমেন ইস্যুতে মোড়লের ভূমিকা রেখে সৌদি এখন বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। ইয়েমেন ইস্যুতে এখন অনেকটাই দৃশ্যপটের বাইরে চলে গেছে ইরান। তাই এ কথা বলাই যায়, সৌদির হাত ধরে ইয়েমেনে স্থিতিশীলতা ফেরার জোরালো সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
প্রেসিডেনশিয়াল কাউন্সিলের দায়িত্ব পাওয়া আল-আলিমির সঙ্গে সৌদি আরব এবং ইয়েমেনের রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
ইয়েমেনি জনগণের উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে শুক্রবার আল-আলিমি বলেছেন, ‘প্রেসিডেনশিয়াল কাউন্সিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবগুলো মেনে চলবে। প্রেসিডেনশিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিল আমাদের ইয়েমেনি জনগণকে যুদ্ধের অবসান এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।’
আল-আলিমি আরও বলেন, ‘এই কাউন্সিল একটি শান্তি পরিষদ, এটি যুদ্ধকালীন কোনো পরিষদ নয়। তবে এটি একটি প্রতিরক্ষা, শক্তি এবং ঐক্য পরিষদও বটে। যার লক্ষ্য জাতির সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এবং নাগরিকদের রক্ষা করা।’
ইয়েমেনে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও মানবিক সহায়তার জন্য সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটকে ধন্যবাদ জানান আল-আলিমি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনরুজ্জীবিত ও সংস্কার করার অঙ্গীকার করেন তিনি। তিনি ইয়েমেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার জন্য আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের, প্রধানত জাতিসংঘ এবং মার্কিন ইয়েমেন দূতদের ধন্যবাদ জানান।
তবে হুতিরা যে একদমই দমে যাচ্ছে, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। কেননা শুক্রবার আরব নিউজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রেসিডেনশিয়াল কাউন্সিল ক্ষমতা বুঝে নেওয়ার পর ইয়েমেনের কেন্দ্রীয় শহর মারিবে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে হুতিরা। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
আরব নিউজকে সামরিক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা হুতিদের আক্রমণের ধার কমিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি এবং তাদের একটি সামরিক যান ধ্বংস করেছি।’
প্রসঙ্গত, ইয়েমেনে অস্থিতিশীলতা বেশ পুরোনো। হুতিরা ২০১৪ সালের শুরুর দিকে ইয়েমেনের সাআদা রাজ্য দখলে নিয়ে সবার নজরে আসে। এরপর তারা দেশটির রাজধানী সানাও দখলে নেয়। সৌদি সামরিক জোট ২০১৫ সালের মার্চে হুতিদের দমন করে হাদি সরকারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা শুরু করে।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইয়েমেনের লড়াইয়ের শুরুটা হয় আরব বসন্ত দিয়ে, যার মাধ্যমে আসলে দেশটিতে স্থিতিশীলতা আসবে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু আরব বসন্তের অন্য ঘটনাগুলোর মতো এখানেও ঘটেছে উল্টো। ২০১১ সালে দেশটির দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লাহ সালেহকে তাঁর ডেপুটি আবদারাবুহ মানসুর হাদির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হাদিকে অনেকগুলো সংকটের মুখোমুখি হতে হয়। আল-কায়েদার হামলা, দক্ষিণে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা, আবদুল্লাহ সালেহের প্রতি অনেক সামরিক কর্মকর্তার আনুগত্য। এর বাইরে দুর্নীতি, বেকারত্ব আর খাদ্যসংকট তো রয়েছেই।
নতুন প্রেসিডেন্টের দুর্বলতার সুযোগে ইয়েমেনের জাইদি শিয়া মুসলিম নেতৃত্বে হুতি বিদ্রোহীরা সাআদা প্রদেশ এবং আশপাশের এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এ সময় অনেক সুন্নিও তাদের সমর্থন জোগায়। এরপর বিদ্রোহীরা সানা অঞ্চলেরও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
পরের মাসে প্রেসিডেন্ট হাদি দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর এডেন থেকে পালিয়ে যান। পুনরায় হাদিকে ক্ষমতায় আনতে সৌদি আরব আর অন্য আটটি সুন্নি দেশ এক জোট হয়ে ইয়েমেনে অভিযান শুরু করে। এই জোটকে সহায়তা করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য আর ফ্রান্স।
উল্লেখ্য, কৌশলগতভাবে ইয়েমেন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দেশটি বাব আল-মানদাবের ওপর বসে আছে, যা লোহিত সাগর আর গালফ অব এডেনের সংযোগস্থল। এ পথ দিয়েই সারা বিশ্বে সর্বাধিক জ্বালানি তেলের সরবরাহ হয়ে থাকে।
বিশ্লেষণ সম্পর্কিত পড়ুন:
দীর্ঘ সাত বছরের বেশি সময় ধরে ইয়েমেনে জাতিসংঘ-সমর্থিত সরকার ও বিদ্রোহী হুতিদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ চলছে। ক্ষমতাচ্যুত সরকারের পক্ষ নিয়ে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সৌদি সামরিক জোট। অন্যদিকে অভিযোগ আছে, পর্দার আড়াল থেকে হুতিদের সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে ইরান। তাই ইয়েমেনে প্রত্যক্ষভাবে লড়াইটা ইয়েমেন সরকার বনাম হুতি বিদ্রোহীদের মধ্যকার হলেও পরোক্ষভাবে লড়াইটা সৌদি বনাম ইরানের।
গৃহযুদ্ধ, আঞ্চলিক আধিপত্যের এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত হাজার হাজার ইয়েমেনি নাগরিক নিহত হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, দেশটিতে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করেছে, ইয়েমেনের ৫০ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে এবং আরও ৫০ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া সংঘাতের কারণে ৪০ লাখ মানুষ এরই মধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বিবিসি বলছে, ইয়েমেনে ২০১৫ সালে যুদ্ধ শুরুর পর এ পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি শিশু প্রাণ হারিয়েছে।
মানব ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীন বসতি আর আরব বিশ্বের সবচেয়ে গরিব দেশ ইয়েমেন গৃহযুদ্ধের কারণে পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
তবে বিধ্বস্ত ইয়েমেনে এবার স্থিতিশীলতা ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যুদ্ধ থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা জেগেছে। কেননা ইয়েমেনে সব পক্ষের সম্মতিতে ২ এপ্রিল থেকে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। যুদ্ধবিরতি শুরুর পাঁচ দিন পরই অর্থাৎ ৭ এপ্রিল ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবদ-রাব্বু মনসুর হাদি।
এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট হাদি বলেন, ‘আমি অপরিবর্তনীয়ভাবে সংবিধান, উপসাগরীয় উদ্যোগ এবং তাদের নির্বাহী ব্যবস্থার সঙ্গে সংগতি রেখে আমার পূর্ণ ক্ষমতা প্রেসিডেনশিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিলের কাছে হস্তান্তর করছি।’
প্রেসিডেন্ট হাদি আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সময়টিতে এই কাউন্সিল ইয়েমেনের রাজনৈতিক, সামরিক এবং নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয় সামাল দেবে। গোটা ইয়েমেনে একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছার জন্য এবং চূড়ান্ত একটি রাজনৈতিক সমাধানের জন্য এই কাউন্সিল হুতিদের সঙ্গে আলোচনায়ও বসবে।’
প্রেসিডেনশিয়াল কাউন্সিলের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, ‘প্রেসিডেনশিয়াল কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠা ইয়েমেনে নতুন অধ্যায় শুরুতে অবদান রাখবে। প্রেসিডেনশিয়াল কাউন্সিল গঠন ইয়েমেনকে যুদ্ধের অবস্থা থেকে শান্তি ও উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাবে। ইয়েমেনের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি দেখতে চায় সৌদি।’
এমনকি ইয়েমেনের জন্য ৩০০ কোটি ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে সৌদি আরব। এই অর্থ ইয়েমেনের উন্নয়ন, ব্যাংকিং খাত এবং পেট্রোলিয়াম কেনার কাজে ব্যবহার করা হবে। ৩০০ কোটি ডলারের মধ্যে সৌদি আরব দেবে ২০০ কোটি ডলার আর সংযুক্ত আরব আমিরাত দেবে ১০০ কোটি ডলার।
এ ছাড়া ইয়েমেনের জনগণের দুর্ভোগ কমাতে এবং তাদের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য ২০২২ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে আরও ৩০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে।
জর্ডান, আরব লিগ এবং উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি) ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবদ-রাব্বু মনসুর হাদির পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে এবং প্রেসিডেনশিয়াল কাউন্সিলের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছে। এ ছাড়া আরব বিশ্ব, মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা ইয়েমেনের নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানিয়েছে।
আজ রোববার এক টুইট বার্তায় সৌদি আরবের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী যুবরাজ খালিদ বিন সালমান বলেছেন, ‘প্রেসিডেনশিয়াল কাউন্সিলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর একটি ঐতিহাসিক এবং সাহসী পদক্ষেপ।’
সামগ্রিক এসব বিষয় থেকে এটি স্পষ্ট যে, ইয়েমেনসহ পুরো আরব বিশ্বে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করার লক্ষ্যে এক ধাপ এগিয়ে গেল সৌদি আরব। কেননা দেশটি একদিকে যেমন ইয়েমেনের নতুন নেতৃত্বকে সমর্থন দিচ্ছে, অন্যদিকে বড় বড় অনুদানের ঘোষণা দিয়ে ইয়েমেনকে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এতে আরব বিশ্বে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করছে দেশটি। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, তারা ইয়েমেনের নতুন নেতৃত্বকে হুতিদের সঙ্গে বিবাদ মেটানোর তাগিদ দিচ্ছে। ইরানের মদদপুষ্ট হুতিদের থামানো গেলে ইয়েমেনের কলকাঠি সৌদির হাতেই চলে আসবে।
ইয়েমেন ইস্যুতে মোড়লের ভূমিকা রেখে সৌদি এখন বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। ইয়েমেন ইস্যুতে এখন অনেকটাই দৃশ্যপটের বাইরে চলে গেছে ইরান। তাই এ কথা বলাই যায়, সৌদির হাত ধরে ইয়েমেনে স্থিতিশীলতা ফেরার জোরালো সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
প্রেসিডেনশিয়াল কাউন্সিলের দায়িত্ব পাওয়া আল-আলিমির সঙ্গে সৌদি আরব এবং ইয়েমেনের রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
ইয়েমেনি জনগণের উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে শুক্রবার আল-আলিমি বলেছেন, ‘প্রেসিডেনশিয়াল কাউন্সিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবগুলো মেনে চলবে। প্রেসিডেনশিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিল আমাদের ইয়েমেনি জনগণকে যুদ্ধের অবসান এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।’
আল-আলিমি আরও বলেন, ‘এই কাউন্সিল একটি শান্তি পরিষদ, এটি যুদ্ধকালীন কোনো পরিষদ নয়। তবে এটি একটি প্রতিরক্ষা, শক্তি এবং ঐক্য পরিষদও বটে। যার লক্ষ্য জাতির সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এবং নাগরিকদের রক্ষা করা।’
ইয়েমেনে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও মানবিক সহায়তার জন্য সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটকে ধন্যবাদ জানান আল-আলিমি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনরুজ্জীবিত ও সংস্কার করার অঙ্গীকার করেন তিনি। তিনি ইয়েমেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার জন্য আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের, প্রধানত জাতিসংঘ এবং মার্কিন ইয়েমেন দূতদের ধন্যবাদ জানান।
তবে হুতিরা যে একদমই দমে যাচ্ছে, সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। কেননা শুক্রবার আরব নিউজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রেসিডেনশিয়াল কাউন্সিল ক্ষমতা বুঝে নেওয়ার পর ইয়েমেনের কেন্দ্রীয় শহর মারিবে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে হুতিরা। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
আরব নিউজকে সামরিক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা হুতিদের আক্রমণের ধার কমিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি এবং তাদের একটি সামরিক যান ধ্বংস করেছি।’
প্রসঙ্গত, ইয়েমেনে অস্থিতিশীলতা বেশ পুরোনো। হুতিরা ২০১৪ সালের শুরুর দিকে ইয়েমেনের সাআদা রাজ্য দখলে নিয়ে সবার নজরে আসে। এরপর তারা দেশটির রাজধানী সানাও দখলে নেয়। সৌদি সামরিক জোট ২০১৫ সালের মার্চে হুতিদের দমন করে হাদি সরকারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা শুরু করে।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইয়েমেনের লড়াইয়ের শুরুটা হয় আরব বসন্ত দিয়ে, যার মাধ্যমে আসলে দেশটিতে স্থিতিশীলতা আসবে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু আরব বসন্তের অন্য ঘটনাগুলোর মতো এখানেও ঘটেছে উল্টো। ২০১১ সালে দেশটির দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লাহ সালেহকে তাঁর ডেপুটি আবদারাবুহ মানসুর হাদির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হাদিকে অনেকগুলো সংকটের মুখোমুখি হতে হয়। আল-কায়েদার হামলা, দক্ষিণে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা, আবদুল্লাহ সালেহের প্রতি অনেক সামরিক কর্মকর্তার আনুগত্য। এর বাইরে দুর্নীতি, বেকারত্ব আর খাদ্যসংকট তো রয়েছেই।
নতুন প্রেসিডেন্টের দুর্বলতার সুযোগে ইয়েমেনের জাইদি শিয়া মুসলিম নেতৃত্বে হুতি বিদ্রোহীরা সাআদা প্রদেশ এবং আশপাশের এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এ সময় অনেক সুন্নিও তাদের সমর্থন জোগায়। এরপর বিদ্রোহীরা সানা অঞ্চলেরও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
পরের মাসে প্রেসিডেন্ট হাদি দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর এডেন থেকে পালিয়ে যান। পুনরায় হাদিকে ক্ষমতায় আনতে সৌদি আরব আর অন্য আটটি সুন্নি দেশ এক জোট হয়ে ইয়েমেনে অভিযান শুরু করে। এই জোটকে সহায়তা করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য আর ফ্রান্স।
উল্লেখ্য, কৌশলগতভাবে ইয়েমেন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দেশটি বাব আল-মানদাবের ওপর বসে আছে, যা লোহিত সাগর আর গালফ অব এডেনের সংযোগস্থল। এ পথ দিয়েই সারা বিশ্বে সর্বাধিক জ্বালানি তেলের সরবরাহ হয়ে থাকে।
বিশ্লেষণ সম্পর্কিত পড়ুন:
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৮ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৮ দিন আগে