অনলাইন ডেস্ক
লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে। এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়তেই জোর গুঞ্জন উঠেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহ বড় কোনো সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। বিগত বেশ কিছুদিন ধরে চলতে থাকা উভয় পক্ষের হুমকি-ধমকি ও পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা ও মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, যেকোনো সময় শুরু হতে পারে ভয়াবহ যুদ্ধ। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে যে, সত্যিই কি ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ সংঘাতে জড়াচ্ছে।
গত ২২ জুন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক বিবৃতির পর এই আশঙ্কা আরও উসকে দিয়েছে। বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইসরায়েল এখন গাজা থেকে ‘সামরিক দৃষ্টি’ সরিয়ে লেবাননের ওপর নিবদ্ধ করবে। তিনি আরও বলেন, রাফাহে অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এখন তা লেবাননে সরিয়ে নেওয়া হবে। বিশ্লেষকদের অনুমান, ইসরায়েল লেবাননে আগ্রাসন চালালে তাতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোও জড়িয়ে যাবে।
বিগত কয়েক মাস ধরে লেবাননে চালানো ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ১ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। নিহত হয়েছে অন্তত ৪৩৫ জন। ইসরায়েলের দাবি, এর মধ্যে ৩৪৯ জনই হিজবুল্লাহর সদস্য। ইসরায়েলের তথ্যমতে, লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহর সশস্ত্র হামলায় এখন পর্যন্ত ১৫ ইসরায়েলি সৈন্য ও ১০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকেই ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ উভয় পক্ষই সীমান্ত পেরিয়ে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে আসছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২১ জুন পর্যন্ত উভয় পক্ষ লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তের উভয় পাশে ৭ হাজার ৪০০ হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে লেবাননে ইসরায়েলি হামলা ৬ হাজার ১৪২ এবং ইসরায়েলে হিজবুল্লাহর হামলা ১ হাজার ২৫৮ টি। এসব হামলায় ৫৬৪ জন নিহত হয়েছে।
হিজবুল্লাহর প্রধান সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ গত ৯ মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলি নির্বিচারে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, তাঁর দল ইসরায়েলে আক্রমণ তখনই বন্ধ করবে, যখন দেশটি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে। এই অবস্থায় বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ইসরায়েল যদি সামরিক শক্তির বড় একটি অংশ লেবানন সীমান্তে মোতায়েন করে, তবু হিজবুল্লাহ তার অবস্থানে অটল থাকবে।
হিজবুল্লাহর ওপর দুটি বইয়ের লেখক আমাল সা’দ বলেন, ‘আমি মনে করি না যে গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া হিজবুল্লাহ অন্য কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেবে। ফলে বলা যায়, এমনটা হলে যুদ্ধ চলতেই থাকবে।’
আমাল সা’দ আরও বলেন, ‘নাসরুল্লাহ বলেছেন, হামাস বিজয়ী না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা লড়াই চালিয়ে যাবেন। হামাস দুর্বল হয়ে পড়লেও হিজবুল্লাহ বসে থাকবে না। এখানে একটি কৌশলগত উদ্দেশ্য আছে। হিজবুল্লাহ কখনোই হামাসকে পরিত্যাগ করবে না।’
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির হিসাব অনুসারে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু চাইলেই এখন গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে পারবেন না। কারণ হিসেবে সামনে আসছে, নেতানিয়াহু জোটের কট্টরপন্থী নেতাদের হামাসকে চিরতরে নির্মূল করার জোরালো দাবি। ফলে, নেতানিয়াহু এখন যুদ্ধবিরতিতে গেলে ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকিতে পড়বেন।
তবে হামাসকে চিরতরে নির্মূলের বিষয়ে সন্দেহ আছে খোদ ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মধ্যেই। তাঁদের মতে, হামাস শুধু একটি গোষ্ঠীই নয়, এটি একটি আদর্শ। গত ১৯ জুন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান জাচি হানেবি এমন মন্তব্য করেছেন। তাঁদের মতে, হামাস একটি আদর্শের নাম, যা কখনোই নির্মূল করা সম্ভব নয়।
যাই হোক, এই বাস্তবতা মেনে হোক আর অন্য কিছু বিবেচনা করে হোক—ইসরায়েল গাজাসংক্রান্ত নীতিতে আরও নমনীয় হতে চাইছে বা পরিবর্তন আনতে চাইছে। এরই লক্ষ্যে দেশটি হামাসকে লক্ষ্য করে গাজায় সামরিক হামলা অব্যাহত রাখবে এবং একই সঙ্গে এলাকাটিতে হামাসের রাজনৈতিক বিকল্প খুঁজতে থাকবে। গাজায় আগ্রাসনের তীব্রতা কমিয়ে লেবাননে নজর দিলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে দুটি ফ্রন্টে জড়িত হওয়ার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। তবে ইসরায়েল বলছে, ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহকে মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত।
হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ ও তাঁর দল প্রতিনিয়তই শক্তিমত্তা ও দৃঢ় অবস্থান প্রদর্শন করে চলেছেন। গত ১৯ জুন নাসরুল্লাহ জানান, ১ লাখের বেশি যোদ্ধা আছে তাঁর দলে। এ ছাড়া আঞ্চলিক অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরও সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁকে। তবে তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি বলেও উল্লেখ করেন। কারণ হিসেবে নাসরুল্লাহ বলেন, ইসরায়েলকে মোকাবিলা করতে হিজবুল্লাহর নিজেরই যথেষ্ট সেনা আছে।
নাসরুল্লাহর এই বক্তব্যের এক দিন আগে হিজবুল্লাহ একটি ড্রোন ফুটেজ প্রকাশ করে। ফুটেজে ইসরায়েলি বন্দরনগরী হাইফার চিত্র ধরা পড়ে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি মূলত একটি অপ্রকাশ্য হুমকি, যা নির্দেশ করে যে শহরটি যেকোনো সময় হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।
সম্প্রতি প্রকাশিত আরেক ভিডিওতে ইসরায়েলের অভ্যন্তর ও ভূমধ্যসাগর উপকূলবর্তী একাধিক স্থানকে হিজবুল্লাহর সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হিসেবে দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে বৈরুতের লেবানিজ আমেরিকান ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইমাদ সালামে বলেছেন, ‘এসব ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলকে আসন্ন যুদ্ধের ব্যয় ও পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করতে চাইছে।’
নাসরুল্লাহ এর আগে ইসরায়েল থেকে দূরে থাকার জন্য ভূমধ্যসাগরের দেশ সাইপ্রাসকে হুমকি দিয়েছিলেন। প্রত্যুত্তরে সাইপ্রাস জানায়, তারা কোনো সংঘাতে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেবে না।
মার্কিন থিংকট্যাংক গ্লোবাল গার্ডিয়ান রিস্ক ম্যানেজমেন্টের গবেষক ও সাবেক মার্কিন স্পেশাল ফোর্স কর্মকর্তা শেঠ ক্রুমরিচ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘৮ অক্টোবরের পর থেকে সাইপ্রাস ইসরায়েলের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে উঠেছে। কারণ, আগে ইসরায়েলি রিজার্ভ সেনারা এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারপর ইসরায়েলে যেত।’
তবে নাসরুল্লাহর এই হুমকি কেবল সাইপ্রাসকে নয় বরং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি ছিল। এ বিষয়ে ইমাদ সালামে বলেন, ‘নাসরুল্লাহর হুমকিটি ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি, যাতে তারা ইসরায়েলকে সমর্থন করা থেকে বিরত থাকে।’
শেষ পর্যন্ত ইসরায়েল যদি হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে, তবে হিজবুল্লাহ তাৎক্ষণিকভাবে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। এ বিষয়ে লেবাননের বৈরুতের সেন্ট জোসেফ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক করিম এমিল বিতার বলেন, ‘ইসরায়েল সীমান্তবর্তী দক্ষিণ লেবাননে ছোট ও দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের ক্ষেত্রে হিজবুল্লাহর কৌশল প্রস্তুত। সেই সঙ্গে বড় পরিসরের যুদ্ধের জন্যও গোষ্ঠীটির কৌশল নির্ধারিত আছে বলেই মনে হয়।’
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যকার হতে যাওয়া সম্ভাব্য এই যুদ্ধকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইমাদ সালামে ‘স্বল্প-তীব্রতার অসামঞ্জস্যপূর্ণ যুদ্ধ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। যা স্বল্প-ব্যয়, দক্ষ ও কার্যকর সংঘর্ষের মাধ্যমে শত্রুর রক্তক্ষরণ ঘটাবে। এটি মূলত বর্তমান সংঘাতেরই ধারাবাহিকতা।
ধারণা করা হচ্ছে, বড় পরিসরে যুদ্ধ শুরু হলে তার তীব্রতা ছড়িয়ে পড়তে পারে পুরো লেবাননে। যেমনটা এর আগে ২০০৬ সালে ইসরায়েল কর্তৃক লেবাননে হামলার সময় দেখা গিয়েছিল। এমনটা হলে লেবাননের কৌশলগত অবকাঠামোগুলোতে—যেমন বৈরুত বিমানবন্দর—আঘাত হানতে পারে ইসরায়েল।
কিছু বিশ্লেষকের মতে, দক্ষিণ লেবাননে সীমিত পরিসরে ইসরায়েলি স্থল আক্রমণ সম্ভব, যদিও তা উভয় পক্ষের জন্যই অনেক হতাহতের কারণ হতে পারে। এ বিষয়ে এমিল বিতার বলছেন, ‘হিজবুল্লাহ সম্ভবত এমনটা চায় না। হিজবুল্লাহ এবং ইরান সরকারের এই উপলব্ধি আছে যে, একটি যুদ্ধ লেবাননের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ধ্বংসাত্মক হবে।’
পাল্টাপাল্টি সামরিক পদক্ষেপের তীব্র হুমকির পাশাপাশি চলছে কূটনৈতিক আলোচনাও। সম্প্রতি মার্কিন বিশেষ দূত আমোস হচস্টাইন তেল আবিব ও বৈরুতে সফরে গিয়েছিলেন। এ সময় তিনি লেবানন স্পিকার ও হিজবুল্লাহর মিত্র নবীহ বেরির মাধ্যমে হিজবুল্লাহর কাছে বার্তা পাঠিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসের সঙ্গে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পশ্চিমা কূটনীতিক বলেছেন, হচস্টাইন হিজবুল্লাহকে জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে বড় পরিসরে যুদ্ধে বাধা দেবে এমন ধারণা পোষণ করা ভুল হবে। একই সঙ্গে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল ফরাসি কূটনীতিকদের মাধ্যমে বার্তা লেনদেন করছে বিতার বলেছেন, উভয় পক্ষই মূলত সম্মানজনক প্রস্থানের কৌশল যাচাইবাছাই করছে।
এ বিষয়ে এমিল বিতার বলেন, যদি এই আলোচনায় ইসরায়েলকে বোঝানো সম্ভব হয় হিজবুল্লাহর মিত্ররা ইসরায়েল সীমান্তে অবস্থান করবে না এবং ইসরায়েলকে আক্রমণ করতে হিজবুল্লাহর রাদওয়ান বাহিনীকে ব্যবহার করা হবে না, তাহলে যুদ্ধ না-ও এগোতে পারে।
যদিও কূটনৈতিক পদক্ষেপ চলমান, তবু ভয়, একটি ভুল সিদ্ধান্তে যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। কারণ কোনো পক্ষই তাদের বিরোধীদের নৈতিক বিজয় ঘোষণা করার সুযোগ দেবে না। এ ছাড়া, হিজবুল্লাহ যুদ্ধ বন্ধ করার একমাত্র পূর্বশর্ত হিসেবে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে তাদের অবস্থানে অটল রয়েছে। এমিল বিতার বলেন, ‘আমরা এমন পরিস্থিতিতে রয়েছি, যেখানে দু পক্ষই নিজেদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বিবেচনা করছে।’
এমিল বিতারের মতে, ‘হিজবুল্লাহ জানে যে, তাদের সমর্থকসহ লেবাননের জনগণের বড় একটি অংশই নতুন করে যুদ্ধ চায় না। উভয় পক্ষই এ ধরনের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিচ্ছে। তবে আমরা এমন পরিস্থিতিতে রয়েছি, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এ সময় উভয় পক্ষের যে কোনো ভুল সিদ্ধান্তের এই অঞ্চলে ভয়াবহ যুদ্ধের শুরু করতে পারে।’
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আসিফ মাহমুদ
লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে। এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়তেই জোর গুঞ্জন উঠেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে হিজবুল্লাহ বড় কোনো সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। বিগত বেশ কিছুদিন ধরে চলতে থাকা উভয় পক্ষের হুমকি-ধমকি ও পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা ও মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, যেকোনো সময় শুরু হতে পারে ভয়াবহ যুদ্ধ। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে যে, সত্যিই কি ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ সংঘাতে জড়াচ্ছে।
গত ২২ জুন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক বিবৃতির পর এই আশঙ্কা আরও উসকে দিয়েছে। বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইসরায়েল এখন গাজা থেকে ‘সামরিক দৃষ্টি’ সরিয়ে লেবাননের ওপর নিবদ্ধ করবে। তিনি আরও বলেন, রাফাহে অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এখন তা লেবাননে সরিয়ে নেওয়া হবে। বিশ্লেষকদের অনুমান, ইসরায়েল লেবাননে আগ্রাসন চালালে তাতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পক্ষগুলোও জড়িয়ে যাবে।
বিগত কয়েক মাস ধরে লেবাননে চালানো ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ১ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। নিহত হয়েছে অন্তত ৪৩৫ জন। ইসরায়েলের দাবি, এর মধ্যে ৩৪৯ জনই হিজবুল্লাহর সদস্য। ইসরায়েলের তথ্যমতে, লেবানন সীমান্তে হিজবুল্লাহর সশস্ত্র হামলায় এখন পর্যন্ত ১৫ ইসরায়েলি সৈন্য ও ১০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকেই ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ উভয় পক্ষই সীমান্ত পেরিয়ে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে আসছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ২১ জুন পর্যন্ত উভয় পক্ষ লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তের উভয় পাশে ৭ হাজার ৪০০ হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে লেবাননে ইসরায়েলি হামলা ৬ হাজার ১৪২ এবং ইসরায়েলে হিজবুল্লাহর হামলা ১ হাজার ২৫৮ টি। এসব হামলায় ৫৬৪ জন নিহত হয়েছে।
হিজবুল্লাহর প্রধান সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ গত ৯ মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলি নির্বিচারে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, তাঁর দল ইসরায়েলে আক্রমণ তখনই বন্ধ করবে, যখন দেশটি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে। এই অবস্থায় বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ইসরায়েল যদি সামরিক শক্তির বড় একটি অংশ লেবানন সীমান্তে মোতায়েন করে, তবু হিজবুল্লাহ তার অবস্থানে অটল থাকবে।
হিজবুল্লাহর ওপর দুটি বইয়ের লেখক আমাল সা’দ বলেন, ‘আমি মনে করি না যে গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া হিজবুল্লাহ অন্য কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেবে। ফলে বলা যায়, এমনটা হলে যুদ্ধ চলতেই থাকবে।’
আমাল সা’দ আরও বলেন, ‘নাসরুল্লাহ বলেছেন, হামাস বিজয়ী না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা লড়াই চালিয়ে যাবেন। হামাস দুর্বল হয়ে পড়লেও হিজবুল্লাহ বসে থাকবে না। এখানে একটি কৌশলগত উদ্দেশ্য আছে। হিজবুল্লাহ কখনোই হামাসকে পরিত্যাগ করবে না।’
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির হিসাব অনুসারে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু চাইলেই এখন গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে পারবেন না। কারণ হিসেবে সামনে আসছে, নেতানিয়াহু জোটের কট্টরপন্থী নেতাদের হামাসকে চিরতরে নির্মূল করার জোরালো দাবি। ফলে, নেতানিয়াহু এখন যুদ্ধবিরতিতে গেলে ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকিতে পড়বেন।
তবে হামাসকে চিরতরে নির্মূলের বিষয়ে সন্দেহ আছে খোদ ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মধ্যেই। তাঁদের মতে, হামাস শুধু একটি গোষ্ঠীই নয়, এটি একটি আদর্শ। গত ১৯ জুন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান জাচি হানেবি এমন মন্তব্য করেছেন। তাঁদের মতে, হামাস একটি আদর্শের নাম, যা কখনোই নির্মূল করা সম্ভব নয়।
যাই হোক, এই বাস্তবতা মেনে হোক আর অন্য কিছু বিবেচনা করে হোক—ইসরায়েল গাজাসংক্রান্ত নীতিতে আরও নমনীয় হতে চাইছে বা পরিবর্তন আনতে চাইছে। এরই লক্ষ্যে দেশটি হামাসকে লক্ষ্য করে গাজায় সামরিক হামলা অব্যাহত রাখবে এবং একই সঙ্গে এলাকাটিতে হামাসের রাজনৈতিক বিকল্প খুঁজতে থাকবে। গাজায় আগ্রাসনের তীব্রতা কমিয়ে লেবাননে নজর দিলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে দুটি ফ্রন্টে জড়িত হওয়ার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। তবে ইসরায়েল বলছে, ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহকে মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত।
হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ ও তাঁর দল প্রতিনিয়তই শক্তিমত্তা ও দৃঢ় অবস্থান প্রদর্শন করে চলেছেন। গত ১৯ জুন নাসরুল্লাহ জানান, ১ লাখের বেশি যোদ্ধা আছে তাঁর দলে। এ ছাড়া আঞ্চলিক অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরও সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁকে। তবে তিনি সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি বলেও উল্লেখ করেন। কারণ হিসেবে নাসরুল্লাহ বলেন, ইসরায়েলকে মোকাবিলা করতে হিজবুল্লাহর নিজেরই যথেষ্ট সেনা আছে।
নাসরুল্লাহর এই বক্তব্যের এক দিন আগে হিজবুল্লাহ একটি ড্রোন ফুটেজ প্রকাশ করে। ফুটেজে ইসরায়েলি বন্দরনগরী হাইফার চিত্র ধরা পড়ে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি মূলত একটি অপ্রকাশ্য হুমকি, যা নির্দেশ করে যে শহরটি যেকোনো সময় হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।
সম্প্রতি প্রকাশিত আরেক ভিডিওতে ইসরায়েলের অভ্যন্তর ও ভূমধ্যসাগর উপকূলবর্তী একাধিক স্থানকে হিজবুল্লাহর সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হিসেবে দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে বৈরুতের লেবানিজ আমেরিকান ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইমাদ সালামে বলেছেন, ‘এসব ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলকে আসন্ন যুদ্ধের ব্যয় ও পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করতে চাইছে।’
নাসরুল্লাহ এর আগে ইসরায়েল থেকে দূরে থাকার জন্য ভূমধ্যসাগরের দেশ সাইপ্রাসকে হুমকি দিয়েছিলেন। প্রত্যুত্তরে সাইপ্রাস জানায়, তারা কোনো সংঘাতে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেবে না।
মার্কিন থিংকট্যাংক গ্লোবাল গার্ডিয়ান রিস্ক ম্যানেজমেন্টের গবেষক ও সাবেক মার্কিন স্পেশাল ফোর্স কর্মকর্তা শেঠ ক্রুমরিচ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘৮ অক্টোবরের পর থেকে সাইপ্রাস ইসরায়েলের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে উঠেছে। কারণ, আগে ইসরায়েলি রিজার্ভ সেনারা এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারপর ইসরায়েলে যেত।’
তবে নাসরুল্লাহর এই হুমকি কেবল সাইপ্রাসকে নয় বরং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি ছিল। এ বিষয়ে ইমাদ সালামে বলেন, ‘নাসরুল্লাহর হুমকিটি ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি, যাতে তারা ইসরায়েলকে সমর্থন করা থেকে বিরত থাকে।’
শেষ পর্যন্ত ইসরায়েল যদি হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে, তবে হিজবুল্লাহ তাৎক্ষণিকভাবে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। এ বিষয়ে লেবাননের বৈরুতের সেন্ট জোসেফ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক করিম এমিল বিতার বলেন, ‘ইসরায়েল সীমান্তবর্তী দক্ষিণ লেবাননে ছোট ও দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের ক্ষেত্রে হিজবুল্লাহর কৌশল প্রস্তুত। সেই সঙ্গে বড় পরিসরের যুদ্ধের জন্যও গোষ্ঠীটির কৌশল নির্ধারিত আছে বলেই মনে হয়।’
ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যকার হতে যাওয়া সম্ভাব্য এই যুদ্ধকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইমাদ সালামে ‘স্বল্প-তীব্রতার অসামঞ্জস্যপূর্ণ যুদ্ধ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। যা স্বল্প-ব্যয়, দক্ষ ও কার্যকর সংঘর্ষের মাধ্যমে শত্রুর রক্তক্ষরণ ঘটাবে। এটি মূলত বর্তমান সংঘাতেরই ধারাবাহিকতা।
ধারণা করা হচ্ছে, বড় পরিসরে যুদ্ধ শুরু হলে তার তীব্রতা ছড়িয়ে পড়তে পারে পুরো লেবাননে। যেমনটা এর আগে ২০০৬ সালে ইসরায়েল কর্তৃক লেবাননে হামলার সময় দেখা গিয়েছিল। এমনটা হলে লেবাননের কৌশলগত অবকাঠামোগুলোতে—যেমন বৈরুত বিমানবন্দর—আঘাত হানতে পারে ইসরায়েল।
কিছু বিশ্লেষকের মতে, দক্ষিণ লেবাননে সীমিত পরিসরে ইসরায়েলি স্থল আক্রমণ সম্ভব, যদিও তা উভয় পক্ষের জন্যই অনেক হতাহতের কারণ হতে পারে। এ বিষয়ে এমিল বিতার বলছেন, ‘হিজবুল্লাহ সম্ভবত এমনটা চায় না। হিজবুল্লাহ এবং ইরান সরকারের এই উপলব্ধি আছে যে, একটি যুদ্ধ লেবাননের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ধ্বংসাত্মক হবে।’
পাল্টাপাল্টি সামরিক পদক্ষেপের তীব্র হুমকির পাশাপাশি চলছে কূটনৈতিক আলোচনাও। সম্প্রতি মার্কিন বিশেষ দূত আমোস হচস্টাইন তেল আবিব ও বৈরুতে সফরে গিয়েছিলেন। এ সময় তিনি লেবানন স্পিকার ও হিজবুল্লাহর মিত্র নবীহ বেরির মাধ্যমে হিজবুল্লাহর কাছে বার্তা পাঠিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসের সঙ্গে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পশ্চিমা কূটনীতিক বলেছেন, হচস্টাইন হিজবুল্লাহকে জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে বড় পরিসরে যুদ্ধে বাধা দেবে এমন ধারণা পোষণ করা ভুল হবে। একই সঙ্গে হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল ফরাসি কূটনীতিকদের মাধ্যমে বার্তা লেনদেন করছে বিতার বলেছেন, উভয় পক্ষই মূলত সম্মানজনক প্রস্থানের কৌশল যাচাইবাছাই করছে।
এ বিষয়ে এমিল বিতার বলেন, যদি এই আলোচনায় ইসরায়েলকে বোঝানো সম্ভব হয় হিজবুল্লাহর মিত্ররা ইসরায়েল সীমান্তে অবস্থান করবে না এবং ইসরায়েলকে আক্রমণ করতে হিজবুল্লাহর রাদওয়ান বাহিনীকে ব্যবহার করা হবে না, তাহলে যুদ্ধ না-ও এগোতে পারে।
যদিও কূটনৈতিক পদক্ষেপ চলমান, তবু ভয়, একটি ভুল সিদ্ধান্তে যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। কারণ কোনো পক্ষই তাদের বিরোধীদের নৈতিক বিজয় ঘোষণা করার সুযোগ দেবে না। এ ছাড়া, হিজবুল্লাহ যুদ্ধ বন্ধ করার একমাত্র পূর্বশর্ত হিসেবে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে তাদের অবস্থানে অটল রয়েছে। এমিল বিতার বলেন, ‘আমরা এমন পরিস্থিতিতে রয়েছি, যেখানে দু পক্ষই নিজেদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বিবেচনা করছে।’
এমিল বিতারের মতে, ‘হিজবুল্লাহ জানে যে, তাদের সমর্থকসহ লেবাননের জনগণের বড় একটি অংশই নতুন করে যুদ্ধ চায় না। উভয় পক্ষই এ ধরনের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিচ্ছে। তবে আমরা এমন পরিস্থিতিতে রয়েছি, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এ সময় উভয় পক্ষের যে কোনো ভুল সিদ্ধান্তের এই অঞ্চলে ভয়াবহ যুদ্ধের শুরু করতে পারে।’
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আসিফ মাহমুদ
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
২০ ঘণ্টা আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৭ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৮ দিন আগে