জাহাঙ্গীর আলম
প্রবাদ আছে, টাকা বানাতে চাইলে আগে অবশ্যই টাকা খরচ করতে হবে। পৃথিবীর যেকোনো দেশে ব্যবসা শুরু করতে হলে সেটি যত ছোটই হোক না কেন, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা খরচ করতেই হবে। কিন্তু দেশ ভেদে এই অর্থের পরিমাণটা উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা। যেমন, সংযুক্ত আরব আমিররাতে ব্যবসা শুরু করা সবচেয়ে ব্যয়বহুল। তবে রুয়ান্ডায় একবারে কপর্দকশূন্য হাতেই শুরু করা যায় ব্যবসা।
তবে সাধারণ মত হচ্ছে, ব্যবসার শুরুতেই যদি বেশি পয়সা খরচ হয়ে যায়, তাহলে পণ্যের গুণ–মানে মনোযোগ দেওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে। অর্থাৎ, ব্যবসার শুরুটা অবশ্যই সুলভ হওয়া চাই। কারণ, একটি ব্যবসায় সফল হওয়া মানে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা। দেশের সম্পদ বৃদ্ধিতে অবদান রাখা। সরকারকে একটা মোটা অঙ্কের কর দেওয়ারও সুযোগ তৈরি হয়। তার মানে, সব পক্ষই লাভবান হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—উদ্যোক্তা মাগনা হওয়া যায় না। অন্তত বিশ্বের সব অঞ্চলে এমন সুযোগ নেই।
বিশ্বের সব দেশেই ব্যবসা শুরুর কিছু হ্যাপা আছে। বেশ কিছু প্রশাসনিক ঝক্কির ভেতর দিয়ে যেতে হয় একজন উদ্যোক্তাকে। উপযুক্ত অনুমোদন, লাইসেন্স ইত্যাদির জন্য নানা দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। এর জন্য কিছু অর্থও চলে যায়। সেই সঙ্গে খরচ হয় মূল্যবান সময়ও।
এই ঝক্কিঝামেলার পেছনে কত অর্থ, আর সময় ব্যয় হয়—সে ব্যাপারে হবু উদ্যোক্তার পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই। বিশ্ব ব্যাংকের এ–সংক্রান্ত উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে বিজনেস ফাইনান্সিং ডট কো ডট ইউকে চমৎকার ও সহজবোধ্য একটি মানচিত্র তৈরি করেছে। এই মানচিত্রে দেশ ভেদে ব্যবসা শুরুর খরচের পার্থক্যটি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে এর আগে কিছু বিষয়ে আলোকপাত করা যাক—
তুলনার সুবিধার্থে, ব্যবসায় খরচের হিসাবটা মার্কিন ডলারে রূপান্তর করা হয়েছে। মেট্রিক পদ্ধতিতে রূপান্তরের পর তুলনা করে দেখা যাচ্ছে, ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। এই দেশে উদ্যোক্তার বাজারে আসার আগেই পকেট থেকে চলে যাবে ৭ হাজার ৪৪৩ দশমিক ৫১ ডলার। আর সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল দেশ হলো আফ্রিকার রুয়ান্ডা। এই দেশে আক্ষরিক অর্থেই ব্যবসার প্রথম দুই বছর এক পয়সাও খরচ করতে হয় না। আর ইউরোপের দেশ স্লোভেনিয়াতে বিভিন্ন অনুমোদনের জন্য কোনো ফি দিতে হয় না। খালি ৮ হাজার ৯০০ ডলার পুঁজি থাকলেই যে কেউ ব্যবসা শুরু করতে পারে।
অবশ্য এই সাধারণ হিসাবের ভিত্তিতে সব দেশের তুলনা করা একেবারে ঠিক হবে না। এই টাকার অঙ্কগুলো সংশ্লিষ্ট দেশের মানুষের জীবনমানের সঙ্গেও তুলনা করা দরকার। কারণ, এই জীবনমানই সেই দেশের মানুষের আপেক্ষিক আর্থিক সামর্থ্য নির্ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ, কাজাখস্তানে একটি দোকান দেওয়ার খরচ মাত্র ১২ ডলার। এই পরিমাণ অর্থ সেই দেশের মানুষের মাসিক আয়ের মাত্র ২ শতাংশ। কিন্তু কঙ্গোতে একই ব্যবসা শুরু করতে খরচ করতে হয় ১ হাজার ২৩২ ডলার। এটি কঙ্গোবাসীর বার্ষিক আয়ের দ্বিগুণের বেশি।
এ ক্ষেত্রে ইউরোপে খুব বৈচিত্র্য দেখা যায়। সবচেয়ে কম খরচে ব্যবসা শুরু করা যায়—এমন দেশগুলোর মধ্যে ১২টিতে ১০০ ডলারেরও কম খরচ হয়। আর বেশি খরচের দেশগুলোতে লাগে হাজার ডলারের বেশি। একমাত্র স্লোভেনিয়া বাদে, ব্যবসা শুরুর বা সূচনা ব্যয়ের দিক থেকে ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে সাশ্রয়ী যুক্তরাজ্য। এমনকি বেলারুশে যেখানে খরচ হয় গড়ে ১৮ দশমিক ১৮ ডলার, সেখানে যুক্তরাজ্যে মাত্র ১২ পাউন্ড বা ১৭ ডলারে কোম্পানিজ হাউসে নিবন্ধন করেই যে কেউ ব্যবসা শুরু করে দিতে পারে।
আর ইউরোপের মধ্যে যে দেশে ব্যবসার সূচনা ব্যয় সবচেয়ে বেশি, সেটি হলো ইতালি। ইতালিতে যেকোনো আজিয়েন্দা বা ব্যবসা খুলতে চাইলে শুরুতেই শুধু নানা অনুমোদন, নিবন্ধন ইত্যাদি বাবদ ৪ হাজার ৮৯৫ ডলার পকেট থেকে নেমে যাবে। এই পরিমাণ টাকা দেশটির নাগরিকদের মাসিক গড় আয়ের (২,৪০৩ ডলার) দ্বিগুণের বেশি।
আর উত্তর আমেরিকার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র হলো ঐতিহাসিকভাবেই উদ্যোক্তাদের জন্য এক স্বপ্নের দেশ। এই দেশে ব্যবসা শুরু করতে খরচ করতে হয় ৭২৫ ডলার। যেখানে মেক্সিকোতে লাগে ১ হাজার ৪৬৩ দশমিক ৮১ ডলার। তবে কানাডাতে ব্যবসা করা আরও সহজ ও সাশ্রয়ী। যুক্তরাষ্ট্রের চার ভাগের এক ভাগ খরচ হয় এ দেশে। কানাডাতে ব্যবসার সূচনা ব্যয় মাত্র ১৬৬ দশমিক ১৯ ডলার।
আপাতদৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসার সূচনা ব্যয়টি বেশি মনে হলেও নাগরিকদের গড় মাথাপিছু আয়ের তুলনায় কিন্তু বেশ কম। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ও শক্তিশালী এ দেশের নাগরিকদের মাসিক আয় ৪ হাজার ৪৫৮ ডলার। সে হিসাবে দেশটিতে ব্যবসার সূচনা ব্যয় মাসিক আয়ের ১৬ শতাংশ। মেক্সিকোতে কোম্পানির মালিক হতে যে পরিমাণ খরচ হয়, সে তুলনায় এটি অনেক কম। সে দেশে ব্যবসার সূচনায় ব্যয় নাগরিকদের মাসিক আয়ের আড়াই গুণ।
উত্তর আমেরিকায় ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ হলো বেলিজ। সেখানে খরচ করতে হয় মাত্র ৯৯ দশমিক ৩১ ডলার, যা সে দেশের মাসিক আয়ের প্রায় ৩৩ শতাংশ। সে হিসাবে টাকার পরিমাণ হিসাব করলে ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ বাহামা। সেখানে খরচ হয় ১ হাজার ৮১০ দশমিক ৯২ ডলার। আর হাইতিতে খরচ হয় ৯৩২ দশমিক ৮০ ডলার। এটি হাইতির চারজন নাগরিকের মাসিক আয়ের সমান। দেশটির নাগরিকদের গড় মাসিক আয় ৬৭ ডলার।
নাগরিকদের সামর্থ্য বিচারে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে ব্যবসা শুরু করতে অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হয়। সুরিনাম, ইকুয়েডর, বলিভিয়া ও উরুগুয়েতে ব্যবসার সূচনা খরচ অনেক বেশি। তবে এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলো আবার তুলনামূলক সাশ্রয়ী। বিশেষ করে ভেনেজুয়েলা ও চিলি দারুণ সাশ্রয়ী।
ব্যবসার শুরুর করার ক্ষেত্রে সুরিনাম সবচেয়ে ব্যয়বহুল। এ দেশে ব্যবসার সূচনা ব্যয় ৩ হাজার ৩০ ডলার, যা দেশটির নাগরিকদের মাসিক আয়ের ১১ গুণের বেশি। এর সঙ্গে আবার যুক্ত হয় নোটারি সার্ভিসের জন্য ৮ শতাংশ সেবামূল্য।
অথচ ভেনেজুয়েলাতে খরচ হয় মাত্র ২১ ডলার। কোম্পানির নাম সংরক্ষণ, স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে সেটি প্রকাশ এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা বাবদ এ অর্থ খরচ হয়। দেশটির নাগরিকদের মাসিক আয়ের (১ হাজার ২৩২ ডলার) মাত্র এক শতাংশ বা তারও কম। এরপরও কিন্তু ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি ধসে পড়ার উপক্রম। এর মানে দাঁড়ায়, দেশটিতে নতুন উদ্যোগ শুরু ও ব্যবসা পরিচালনার সামনে আরও অনেক বাধা আছে। কমিউনিস্ট দেশটিতে সবকিছুতে রাষ্ট্রের কঠোর নিয়ন্ত্রণ এর একটি অন্যতম কারণ।
আফ্রিকার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য শান দেওয়া আছে দুইধারী তলোয়ার। এ মহাদেশে সস্তায় কায়িক শ্রম পেতে কোম্পানিগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে। সরকারও সেটি উৎসাহিত করে। কিন্তু স্থানীয় উদ্যোক্তাদের কোম্পানির মালিক হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন কঠিন করে রাখা হয়েছে। অনেক দেশেই এই বাধাগুলো প্রায় স্থায়ীভাবে গেঁড়ে বসেছে। তবে ইদানীং কিছু দেশ স্থানীয় উদ্যোক্তা তৈরির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে শুরু করেছে।
ব্যবসা শুরুর জন্য আফ্রিকার সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ হলো ইকুয়েটোরিয়াল গিনি। এই দেশে খরচ হয় ২ হাজার ৩২২ ডলার। অর্থাৎ, ব্যবসা শুরু করতে চাইলে নানা আনুষ্ঠানিকতা করতেই নাগরিকদের গড়ে ৭ দশমিক ২ মাসের আয় পকেট থেকে বেরিয়ে যায়। প্রতিবেশী কঙ্গোতেও অস্বাভাবিক ব্যয় করতে হয়। তুলনামূলকভাবে সে দেশে ব্যবসা শুরুর খরচ সবচেয়ে বেশি। সেখানে ব্যবসার সূচনা ব্যয় একজন নাগরিকের সাড়ে ২৫ মাসের বেতনের সমান।
তবে কঙ্গো নদীর অববাহিকায় অবস্থিত গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে আবার ব্যবসার সূচনার খরচ বেশ কম, মাত্র ৮০ ডলার। আফ্রিকায় যে কয়টা দেশে ১০০ ডলারে কম খরচ করেই ব্যবসা শুরু করা যায়, তার মধ্যে এই দেশ অন্যতম। এর মধ্যে মিসর ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশও আছে, যাদের আফ্রিকা মহাদেশের অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউস বলা হয়।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তুলনা করলে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশগুলো রয়েছে প্রথমটিতেই। আর সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ মধ্য এশিয়ায়। শুরুতেই বলা হয়েছে, ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। কিন্তু নাগরিকদের সামর্থ্যের বিচারে তাকে কিন্তু সবচেয়ে ব্যয়বহুল বলা যাবে না। এখানে ব্যবসা শুরু করতে চাইলে নানা আনুষ্ঠানিকতা বাবদ যে খরচ হয়, তা নাগরিকদের গড়ে ২ দশমিক ২৫ মাসের উপার্জনের সমান।
আর প্রতিবেশী কাতার ও সৌদি আরবও কিন্তু সাশ্রয়ী নয়। দেশ দুটিতে খরচ হয় যথাক্রমে ৩ হাজার ৯৫১ দশমিক ৯৪ ও ১ হাজার ২৬৬ দশমিক ৫৭ ডলার। তবে বাহরাইনে খরচ হয় মাত্র ২৩০ দশমিক ৭৮ ডলার। অথচ যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেনে এ বাবদ খরচ হয় ৮০৭ দশমিক ৭৯ ডলার।
মধ্য এশিয়ার মধ্যে ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ কিরগিজস্তান। সেখানে খরচ করতে হয় মাত্র ৮ দশমিক ৩৫ ডলার। এই দেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও খরচ বেশ কম। আফগানিস্তানেও ব্যবসা শুরুর খরচ বেশ কম। অবশ্য গৃহযুদ্ধের মধ্যে সেখানে নিশ্চয় কেউ নতুন ব্যবসা খুলতে চাইবেন না!
নিচের দেশগুলোর একটিতেও ব্যবসার সূচনা ব্যয় চার অঙ্কের নয় এবং তুলনামূলক ব্যয় কম হলেও এ অঞ্চলে ব্যবসা শুরুর ব্যয় সাশ্রয়ী ও সামর্থ্যের মধ্যেই আছে।
কম্বোডিয়া ব্যবসার পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে। তবে সেখানেও ব্যবসা শুরুর জন্য গড়ে ৭৪৬ ডলার খরচ করতে হয়। এই পরিমাণ টাকা দেশটির নাগরিকদের প্রায় সাড়ে সাত মাসের উপার্জনের সমান। সে হিসাবে এ অঞ্চলে ব্যবসা শুরুর ব্যয়ে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ এটি। আর সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ হলো পূর্ব তিমুর। দেশটিতে খরচ হয় মাত্র ১০ ডলার। তবে এরপরও নাগরিকদের মাসিক আয়ের ৯ শতাংশ।
সবদিক বিবেচনায় ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক দেশ হলো নিউজিল্যান্ড। দেশটিতে আনুষ্ঠানিকতা বাবদ খরচ হয় মাত্র ৪৩ দশমিক ৪৮ ডলার। এটি মাসিক আয়ের (২ হাজার ৮৩৮ ডলার) মাত্র ২ শতাংশ। সে হিসাবে টাকার পরিমাণে এবং সামর্থ্য—দুদিক থেকেই উদ্যোক্তাবান্ধব দেশ এটি। ব্যবসা শুরুর সহজসাধ্যতার বিবেচনায় তালিকায় এক নম্বরে নিউজিল্যান্ডকে রেখেছে বিশ্ব ব্যাংক। এখানে একটি মাত্র প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই ব্যবসা শুরু যায়, যেখানে সময় লাগে এক দিনেরও কম।
বিশ্ব ব্যাংকের ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, ব্যবসা শুরুর সহজসাধ্যতার সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩১। আর ব্যবসা পরিচালনার সহজসাধ্যতার সূচকে অবস্থান ১৬৮।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতো প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সময়ের সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এখনো ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট নন। সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের মতামত জরিপের ভিত্তিতে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় বাংলাদেশে ব্যবসার বাধা হিসেবে যেসব বিষয় উঠে এসেছে সেগুলো হলো—দুর্নীতি, দুর্বল অবকাঠামো, সরকারি আমলাদের দুর্বলতা, বিনিয়োগের জন্য অর্থ না পাওয়া, নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা, মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈদেশিক মুদ্রার নীতি, করহার, শিক্ষিত কর্মীর অভাব, করব্যবস্থার জটিলতা, অপরাধ, উদ্ভাবনী দক্ষতার অভাব, শ্রম আইনের সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি।
ঘুষ ও দুর্নীতি, ক্রয় প্রক্রিয়াতে স্বচ্ছতার অভাব, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, বিচার বিভাগে দীর্ঘসূত্রতা, আইন প্রয়োগে দুর্বলতা, কপিরাইটের অপব্যবহার ও পাইরেসির ছড়াছড়ি, মেধাস্বত্ব অধিকারের প্রয়োগ ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল—এসবও বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এ ছাড়া সাধারণত অভিজ্ঞতা থেকে সবাই জানে, অত্যন্ত ক্ষুদ্র পুঁজির ভাসমান দোকানের ব্যবসাগুলোতে যেসব পক্ষ থেকে বাধা আসে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। যেমন, ফুটপাতের দোকানে দিতে হলে পুলিশ, স্থানীয় মাস্তান, রাজনৈতিক নেতা ইত্যাদি পক্ষকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। এতে দেখা যায়, লাভের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চাঁদার পেছনেই ব্যয় হয়ে যায়। এ ছাড়া নানা ধরনের হয়রানি তো তাঁদের নিত্যসঙ্গীই।
ফলে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরুর ব্যয় যে ১৪৯ দশমিক ২৫ ডলার বলা হচ্ছে, তা আপাতদৃষ্টিতে কম মনে হলেও তা আসলে কম নয়। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ২২৭ ডলার। গত মে মাসে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ তথ্য জানিয়েছেন। এই হিসাবকে বিবেচনায় নিলে এটি মাথাপিছু আয়ের ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। মাস হিসেবে এটি গড় মাসিক আয়ের চেয়ে কম। সে হিসাবে, বাংলাদেশে ব্যবসা শুরুর ব্যয় কমই বলতে হবে। কিন্তু এই কম ব্যয়ের কারণে ব্যবসা শুরু করাটা যে এখানে সহজ, সে কথা বলা যাবে না। তার কারণগুলো আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রবাদ আছে, টাকা বানাতে চাইলে আগে অবশ্যই টাকা খরচ করতে হবে। পৃথিবীর যেকোনো দেশে ব্যবসা শুরু করতে হলে সেটি যত ছোটই হোক না কেন, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা খরচ করতেই হবে। কিন্তু দেশ ভেদে এই অর্থের পরিমাণটা উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা। যেমন, সংযুক্ত আরব আমিররাতে ব্যবসা শুরু করা সবচেয়ে ব্যয়বহুল। তবে রুয়ান্ডায় একবারে কপর্দকশূন্য হাতেই শুরু করা যায় ব্যবসা।
তবে সাধারণ মত হচ্ছে, ব্যবসার শুরুতেই যদি বেশি পয়সা খরচ হয়ে যায়, তাহলে পণ্যের গুণ–মানে মনোযোগ দেওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে। অর্থাৎ, ব্যবসার শুরুটা অবশ্যই সুলভ হওয়া চাই। কারণ, একটি ব্যবসায় সফল হওয়া মানে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা। দেশের সম্পদ বৃদ্ধিতে অবদান রাখা। সরকারকে একটা মোটা অঙ্কের কর দেওয়ারও সুযোগ তৈরি হয়। তার মানে, সব পক্ষই লাভবান হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—উদ্যোক্তা মাগনা হওয়া যায় না। অন্তত বিশ্বের সব অঞ্চলে এমন সুযোগ নেই।
বিশ্বের সব দেশেই ব্যবসা শুরুর কিছু হ্যাপা আছে। বেশ কিছু প্রশাসনিক ঝক্কির ভেতর দিয়ে যেতে হয় একজন উদ্যোক্তাকে। উপযুক্ত অনুমোদন, লাইসেন্স ইত্যাদির জন্য নানা দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। এর জন্য কিছু অর্থও চলে যায়। সেই সঙ্গে খরচ হয় মূল্যবান সময়ও।
এই ঝক্কিঝামেলার পেছনে কত অর্থ, আর সময় ব্যয় হয়—সে ব্যাপারে হবু উদ্যোক্তার পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই। বিশ্ব ব্যাংকের এ–সংক্রান্ত উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে বিজনেস ফাইনান্সিং ডট কো ডট ইউকে চমৎকার ও সহজবোধ্য একটি মানচিত্র তৈরি করেছে। এই মানচিত্রে দেশ ভেদে ব্যবসা শুরুর খরচের পার্থক্যটি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে এর আগে কিছু বিষয়ে আলোকপাত করা যাক—
তুলনার সুবিধার্থে, ব্যবসায় খরচের হিসাবটা মার্কিন ডলারে রূপান্তর করা হয়েছে। মেট্রিক পদ্ধতিতে রূপান্তরের পর তুলনা করে দেখা যাচ্ছে, ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। এই দেশে উদ্যোক্তার বাজারে আসার আগেই পকেট থেকে চলে যাবে ৭ হাজার ৪৪৩ দশমিক ৫১ ডলার। আর সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল দেশ হলো আফ্রিকার রুয়ান্ডা। এই দেশে আক্ষরিক অর্থেই ব্যবসার প্রথম দুই বছর এক পয়সাও খরচ করতে হয় না। আর ইউরোপের দেশ স্লোভেনিয়াতে বিভিন্ন অনুমোদনের জন্য কোনো ফি দিতে হয় না। খালি ৮ হাজার ৯০০ ডলার পুঁজি থাকলেই যে কেউ ব্যবসা শুরু করতে পারে।
অবশ্য এই সাধারণ হিসাবের ভিত্তিতে সব দেশের তুলনা করা একেবারে ঠিক হবে না। এই টাকার অঙ্কগুলো সংশ্লিষ্ট দেশের মানুষের জীবনমানের সঙ্গেও তুলনা করা দরকার। কারণ, এই জীবনমানই সেই দেশের মানুষের আপেক্ষিক আর্থিক সামর্থ্য নির্ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ, কাজাখস্তানে একটি দোকান দেওয়ার খরচ মাত্র ১২ ডলার। এই পরিমাণ অর্থ সেই দেশের মানুষের মাসিক আয়ের মাত্র ২ শতাংশ। কিন্তু কঙ্গোতে একই ব্যবসা শুরু করতে খরচ করতে হয় ১ হাজার ২৩২ ডলার। এটি কঙ্গোবাসীর বার্ষিক আয়ের দ্বিগুণের বেশি।
এ ক্ষেত্রে ইউরোপে খুব বৈচিত্র্য দেখা যায়। সবচেয়ে কম খরচে ব্যবসা শুরু করা যায়—এমন দেশগুলোর মধ্যে ১২টিতে ১০০ ডলারেরও কম খরচ হয়। আর বেশি খরচের দেশগুলোতে লাগে হাজার ডলারের বেশি। একমাত্র স্লোভেনিয়া বাদে, ব্যবসা শুরুর বা সূচনা ব্যয়ের দিক থেকে ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে সাশ্রয়ী যুক্তরাজ্য। এমনকি বেলারুশে যেখানে খরচ হয় গড়ে ১৮ দশমিক ১৮ ডলার, সেখানে যুক্তরাজ্যে মাত্র ১২ পাউন্ড বা ১৭ ডলারে কোম্পানিজ হাউসে নিবন্ধন করেই যে কেউ ব্যবসা শুরু করে দিতে পারে।
আর ইউরোপের মধ্যে যে দেশে ব্যবসার সূচনা ব্যয় সবচেয়ে বেশি, সেটি হলো ইতালি। ইতালিতে যেকোনো আজিয়েন্দা বা ব্যবসা খুলতে চাইলে শুরুতেই শুধু নানা অনুমোদন, নিবন্ধন ইত্যাদি বাবদ ৪ হাজার ৮৯৫ ডলার পকেট থেকে নেমে যাবে। এই পরিমাণ টাকা দেশটির নাগরিকদের মাসিক গড় আয়ের (২,৪০৩ ডলার) দ্বিগুণের বেশি।
আর উত্তর আমেরিকার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র হলো ঐতিহাসিকভাবেই উদ্যোক্তাদের জন্য এক স্বপ্নের দেশ। এই দেশে ব্যবসা শুরু করতে খরচ করতে হয় ৭২৫ ডলার। যেখানে মেক্সিকোতে লাগে ১ হাজার ৪৬৩ দশমিক ৮১ ডলার। তবে কানাডাতে ব্যবসা করা আরও সহজ ও সাশ্রয়ী। যুক্তরাষ্ট্রের চার ভাগের এক ভাগ খরচ হয় এ দেশে। কানাডাতে ব্যবসার সূচনা ব্যয় মাত্র ১৬৬ দশমিক ১৯ ডলার।
আপাতদৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসার সূচনা ব্যয়টি বেশি মনে হলেও নাগরিকদের গড় মাথাপিছু আয়ের তুলনায় কিন্তু বেশ কম। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ও শক্তিশালী এ দেশের নাগরিকদের মাসিক আয় ৪ হাজার ৪৫৮ ডলার। সে হিসাবে দেশটিতে ব্যবসার সূচনা ব্যয় মাসিক আয়ের ১৬ শতাংশ। মেক্সিকোতে কোম্পানির মালিক হতে যে পরিমাণ খরচ হয়, সে তুলনায় এটি অনেক কম। সে দেশে ব্যবসার সূচনায় ব্যয় নাগরিকদের মাসিক আয়ের আড়াই গুণ।
উত্তর আমেরিকায় ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ হলো বেলিজ। সেখানে খরচ করতে হয় মাত্র ৯৯ দশমিক ৩১ ডলার, যা সে দেশের মাসিক আয়ের প্রায় ৩৩ শতাংশ। সে হিসাবে টাকার পরিমাণ হিসাব করলে ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ বাহামা। সেখানে খরচ হয় ১ হাজার ৮১০ দশমিক ৯২ ডলার। আর হাইতিতে খরচ হয় ৯৩২ দশমিক ৮০ ডলার। এটি হাইতির চারজন নাগরিকের মাসিক আয়ের সমান। দেশটির নাগরিকদের গড় মাসিক আয় ৬৭ ডলার।
নাগরিকদের সামর্থ্য বিচারে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে ব্যবসা শুরু করতে অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হয়। সুরিনাম, ইকুয়েডর, বলিভিয়া ও উরুগুয়েতে ব্যবসার সূচনা খরচ অনেক বেশি। তবে এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলো আবার তুলনামূলক সাশ্রয়ী। বিশেষ করে ভেনেজুয়েলা ও চিলি দারুণ সাশ্রয়ী।
ব্যবসার শুরুর করার ক্ষেত্রে সুরিনাম সবচেয়ে ব্যয়বহুল। এ দেশে ব্যবসার সূচনা ব্যয় ৩ হাজার ৩০ ডলার, যা দেশটির নাগরিকদের মাসিক আয়ের ১১ গুণের বেশি। এর সঙ্গে আবার যুক্ত হয় নোটারি সার্ভিসের জন্য ৮ শতাংশ সেবামূল্য।
অথচ ভেনেজুয়েলাতে খরচ হয় মাত্র ২১ ডলার। কোম্পানির নাম সংরক্ষণ, স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে সেটি প্রকাশ এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা বাবদ এ অর্থ খরচ হয়। দেশটির নাগরিকদের মাসিক আয়ের (১ হাজার ২৩২ ডলার) মাত্র এক শতাংশ বা তারও কম। এরপরও কিন্তু ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি ধসে পড়ার উপক্রম। এর মানে দাঁড়ায়, দেশটিতে নতুন উদ্যোগ শুরু ও ব্যবসা পরিচালনার সামনে আরও অনেক বাধা আছে। কমিউনিস্ট দেশটিতে সবকিছুতে রাষ্ট্রের কঠোর নিয়ন্ত্রণ এর একটি অন্যতম কারণ।
আফ্রিকার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য শান দেওয়া আছে দুইধারী তলোয়ার। এ মহাদেশে সস্তায় কায়িক শ্রম পেতে কোম্পানিগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে। সরকারও সেটি উৎসাহিত করে। কিন্তু স্থানীয় উদ্যোক্তাদের কোম্পানির মালিক হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন কঠিন করে রাখা হয়েছে। অনেক দেশেই এই বাধাগুলো প্রায় স্থায়ীভাবে গেঁড়ে বসেছে। তবে ইদানীং কিছু দেশ স্থানীয় উদ্যোক্তা তৈরির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে শুরু করেছে।
ব্যবসা শুরুর জন্য আফ্রিকার সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ হলো ইকুয়েটোরিয়াল গিনি। এই দেশে খরচ হয় ২ হাজার ৩২২ ডলার। অর্থাৎ, ব্যবসা শুরু করতে চাইলে নানা আনুষ্ঠানিকতা করতেই নাগরিকদের গড়ে ৭ দশমিক ২ মাসের আয় পকেট থেকে বেরিয়ে যায়। প্রতিবেশী কঙ্গোতেও অস্বাভাবিক ব্যয় করতে হয়। তুলনামূলকভাবে সে দেশে ব্যবসা শুরুর খরচ সবচেয়ে বেশি। সেখানে ব্যবসার সূচনা ব্যয় একজন নাগরিকের সাড়ে ২৫ মাসের বেতনের সমান।
তবে কঙ্গো নদীর অববাহিকায় অবস্থিত গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে আবার ব্যবসার সূচনার খরচ বেশ কম, মাত্র ৮০ ডলার। আফ্রিকায় যে কয়টা দেশে ১০০ ডলারে কম খরচ করেই ব্যবসা শুরু করা যায়, তার মধ্যে এই দেশ অন্যতম। এর মধ্যে মিসর ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশও আছে, যাদের আফ্রিকা মহাদেশের অর্থনৈতিক পাওয়ার হাউস বলা হয়।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তুলনা করলে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশগুলো রয়েছে প্রথমটিতেই। আর সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ মধ্য এশিয়ায়। শুরুতেই বলা হয়েছে, ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। কিন্তু নাগরিকদের সামর্থ্যের বিচারে তাকে কিন্তু সবচেয়ে ব্যয়বহুল বলা যাবে না। এখানে ব্যবসা শুরু করতে চাইলে নানা আনুষ্ঠানিকতা বাবদ যে খরচ হয়, তা নাগরিকদের গড়ে ২ দশমিক ২৫ মাসের উপার্জনের সমান।
আর প্রতিবেশী কাতার ও সৌদি আরবও কিন্তু সাশ্রয়ী নয়। দেশ দুটিতে খরচ হয় যথাক্রমে ৩ হাজার ৯৫১ দশমিক ৯৪ ও ১ হাজার ২৬৬ দশমিক ৫৭ ডলার। তবে বাহরাইনে খরচ হয় মাত্র ২৩০ দশমিক ৭৮ ডলার। অথচ যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেনে এ বাবদ খরচ হয় ৮০৭ দশমিক ৭৯ ডলার।
মধ্য এশিয়ার মধ্যে ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ কিরগিজস্তান। সেখানে খরচ করতে হয় মাত্র ৮ দশমিক ৩৫ ডলার। এই দেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও খরচ বেশ কম। আফগানিস্তানেও ব্যবসা শুরুর খরচ বেশ কম। অবশ্য গৃহযুদ্ধের মধ্যে সেখানে নিশ্চয় কেউ নতুন ব্যবসা খুলতে চাইবেন না!
নিচের দেশগুলোর একটিতেও ব্যবসার সূচনা ব্যয় চার অঙ্কের নয় এবং তুলনামূলক ব্যয় কম হলেও এ অঞ্চলে ব্যবসা শুরুর ব্যয় সাশ্রয়ী ও সামর্থ্যের মধ্যেই আছে।
কম্বোডিয়া ব্যবসার পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে। তবে সেখানেও ব্যবসা শুরুর জন্য গড়ে ৭৪৬ ডলার খরচ করতে হয়। এই পরিমাণ টাকা দেশটির নাগরিকদের প্রায় সাড়ে সাত মাসের উপার্জনের সমান। সে হিসাবে এ অঞ্চলে ব্যবসা শুরুর ব্যয়ে সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ এটি। আর সবচেয়ে সাশ্রয়ী দেশ হলো পূর্ব তিমুর। দেশটিতে খরচ হয় মাত্র ১০ ডলার। তবে এরপরও নাগরিকদের মাসিক আয়ের ৯ শতাংশ।
সবদিক বিবেচনায় ব্যবসা শুরুর জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক দেশ হলো নিউজিল্যান্ড। দেশটিতে আনুষ্ঠানিকতা বাবদ খরচ হয় মাত্র ৪৩ দশমিক ৪৮ ডলার। এটি মাসিক আয়ের (২ হাজার ৮৩৮ ডলার) মাত্র ২ শতাংশ। সে হিসাবে টাকার পরিমাণে এবং সামর্থ্য—দুদিক থেকেই উদ্যোক্তাবান্ধব দেশ এটি। ব্যবসা শুরুর সহজসাধ্যতার বিবেচনায় তালিকায় এক নম্বরে নিউজিল্যান্ডকে রেখেছে বিশ্ব ব্যাংক। এখানে একটি মাত্র প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই ব্যবসা শুরু যায়, যেখানে সময় লাগে এক দিনেরও কম।
বিশ্ব ব্যাংকের ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, ব্যবসা শুরুর সহজসাধ্যতার সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩১। আর ব্যবসা পরিচালনার সহজসাধ্যতার সূচকে অবস্থান ১৬৮।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতো প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সময়ের সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এখনো ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট নন। সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের মতামত জরিপের ভিত্তিতে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় বাংলাদেশে ব্যবসার বাধা হিসেবে যেসব বিষয় উঠে এসেছে সেগুলো হলো—দুর্নীতি, দুর্বল অবকাঠামো, সরকারি আমলাদের দুর্বলতা, বিনিয়োগের জন্য অর্থ না পাওয়া, নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা, মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈদেশিক মুদ্রার নীতি, করহার, শিক্ষিত কর্মীর অভাব, করব্যবস্থার জটিলতা, অপরাধ, উদ্ভাবনী দক্ষতার অভাব, শ্রম আইনের সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি।
ঘুষ ও দুর্নীতি, ক্রয় প্রক্রিয়াতে স্বচ্ছতার অভাব, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, বিচার বিভাগে দীর্ঘসূত্রতা, আইন প্রয়োগে দুর্বলতা, কপিরাইটের অপব্যবহার ও পাইরেসির ছড়াছড়ি, মেধাস্বত্ব অধিকারের প্রয়োগ ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল—এসবও বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এ ছাড়া সাধারণত অভিজ্ঞতা থেকে সবাই জানে, অত্যন্ত ক্ষুদ্র পুঁজির ভাসমান দোকানের ব্যবসাগুলোতে যেসব পক্ষ থেকে বাধা আসে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। যেমন, ফুটপাতের দোকানে দিতে হলে পুলিশ, স্থানীয় মাস্তান, রাজনৈতিক নেতা ইত্যাদি পক্ষকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। এতে দেখা যায়, লাভের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ চাঁদার পেছনেই ব্যয় হয়ে যায়। এ ছাড়া নানা ধরনের হয়রানি তো তাঁদের নিত্যসঙ্গীই।
ফলে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরুর ব্যয় যে ১৪৯ দশমিক ২৫ ডলার বলা হচ্ছে, তা আপাতদৃষ্টিতে কম মনে হলেও তা আসলে কম নয়। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ২২৭ ডলার। গত মে মাসে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ তথ্য জানিয়েছেন। এই হিসাবকে বিবেচনায় নিলে এটি মাথাপিছু আয়ের ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। মাস হিসেবে এটি গড় মাসিক আয়ের চেয়ে কম। সে হিসাবে, বাংলাদেশে ব্যবসা শুরুর ব্যয় কমই বলতে হবে। কিন্তু এই কম ব্যয়ের কারণে ব্যবসা শুরু করাটা যে এখানে সহজ, সে কথা বলা যাবে না। তার কারণগুলো আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১৯ ঘণ্টা আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৭ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৮ দিন আগে