গোলাম ওয়াদুদ
স্বাভাবিক সময়ে ব্যবহার করা খেলনা এখন ব্যবহৃত হচ্ছে যুদ্ধের ময়দানে! হ্যাঁ, এমনটা শুনলে চোখ কপালে ওঠাই স্বাভাবিক। তবে সত্য তথ্য হলো, রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট অনেক নতুন ঘটনার জন্ম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেলনাকেও যুদ্ধক্ষেত্রে নামিয়েছে। যুদ্ধে খেলনা ড্রোন বা বেসামরিক ড্রোনের ব্যবহার এখন নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলুন, এবার এসব নিয়ে বিস্তারিত জানা যাক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দিনে যেকোনো যুদ্ধে অপরিহার্য হয়ে উঠবে ড্রোন। প্রচলিত অস্ত্র নিয়ে একটি দেশ যতই শক্তিশালী হোক না কেন, যুদ্ধে প্রতিপক্ষের ড্রোন আক্রমণ প্রতিহত করতে না পারলে বিপর্যয় অনিবার্য। এরই মধ্যে তার নজির দেখা গেছে। শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা থাকার পরও ঠেকানো যাচ্ছে না ড্রোন হামলা। ড্রোন প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির কারণে সামরিক দিক দিয়ে এত দিন পেছনের সারিতে থাকা অনেক দেশ ক্রমান্বয়ে ওপরে উঠে আসতে শুরু করেছে। সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী ও অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশগুলোর মধ্যে দ্রুত ব্যবধান কমিয়ে আনছে ড্রোন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। দুই দেশই তাদের সাধ্যমতো একে-অপরকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। শক্তিশালী সমরাস্ত্রের পাশাপাশি যুদ্ধে উভয় দেশ ব্যবহার করছে ড্রোন। যে ড্রোনগুলো সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে থাকে, সেগুলোই যুদ্ধে কাজে লাগানো হচ্ছে। সামরিক হার্ডওয়্যারের চেয়ে খেলনার সঙ্গে এই ড্রোনগুলোর বেশি মিল।
গত মে মাসে একজন ক্রেমলিনপন্থী সাংবাদিক মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি জানিয়েছিলেন, রুশদের সশস্ত্র বাহিনীতে তাঁদের ব্যবহার করা ড্রোন দান করতে বলা হয়েছে। ইউক্রেনে দুই পক্ষই সস্তায় বেসামরিক ড্রোন কিনছে। যুদ্ধের আগে এসব ড্রোন প্রযুক্তি উৎসাহী ও অপেশাদার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাজে ব্যবহৃত হতো। রাশিয়া ও ইউক্রেন কীভাবে খেলনাসদৃশ ডিভাইস যুদ্ধে ব্যবহার করছে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন ওই সাংবাদিক।
ড্রোন সাধারণ মানুষের হাতে এসেছে বেশি দিন হয়নি। কনজিউমার বা বেসামরিক ড্রোন প্রথম জনপ্রিয় হয় ২০১০ সালে। একটি ফরাসি কোম্পানি প্যারট ড্রোনকে জনপ্রিয় করে তোলে। ২০১০ সালে ৪০০ গ্রাম কোয়াডকপ্টার সমৃদ্ধ এআর ড্রোন বাজারে নিয়ে আসে প্যারট। এটির ক্যামেরা দিয়ে পাখির চোখে দৃশ্য দেখা যেত এবং এতে অত্যাধুনিক অটোপাইলট কৌশল ছিল। এআর ড্রোন আংশিকভাবে সফল হয়েছিল, কারণ পূর্ববর্তী রেডিও-নিয়ন্ত্রিত খেলনার বিপরীতে এর জন্য সামান্য পাইলটিং দক্ষতার প্রয়োজন ছিল।
ড্রোনের বাজারে আমূল পরিবর্তন আসে ২০১৩ সালে। চাইনিজ স্টার্টআপ ডিজি একটি ড্রোন বাজারে আনে, যেটি এক কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। একটি গোপ্রো ভিডিও ক্যামেরা ছাড়াও পরিশীলিত ডিভাইস ও জনসাধারণের জন্য কম মূল্যে ছবি তোলার সুযোগ নিয়ে এসেছিল সেটি। ডিজি তখন থেকেই বেসামরিক ড্রোনের বাজারে আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে। এর সাম্প্রতিক ডিভাইসগুলো কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারছে, সম্প্রচার ক্যামেরা ও স্বয়ংক্রিয় বাধা পেরিয়ে যেতেও বেগ পেতে হচ্ছে না।
এই সক্ষমতাগুলো বেসামরিক ড্রোনকে ধীরে ধীরে যুদ্ধের জন্য উপযোগী করে তোলে। গত কয়েক বছর ধরেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যেসব সংঘাত সংঘটিত হয়েছে, তাতে অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল ড্রোন। সহজলভ্যতা এর অন্যতম কারণ। বেশ কিছু সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ করে ইরাক ও সিরিয়ায় বোমা ফেলার জন্য ছোট পরিসরে এসব ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল। ইউক্রেনে এগুলো আরও বড় ভূমিকা পালন করছে। রাশিয়া যখন ফেব্রুয়ারিতে আক্রমণ শুরু করে, তখন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মালিকদের কাছে তাদের ড্রোনগুলো সশস্ত্র বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য আবেদন করতে থাকে। এই যুদ্ধে কয়েক হাজার ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
গত ২০ বছর ধরে টার্গেট কিলিং বা হত্যা মিশনে ব্যবহার করা হচ্ছে সামরিক ড্রোন। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিভিন্ন দুর্গম অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র আল-কায়েদাবিরোধী অভিযানে ড্রোন হামলা পরিচালনা করে আসছে। সম্প্রতি কয়েকটি বড় সংঘাতে ব্যাপক মাত্রায় ড্রোন ব্যবহার করে নজির সৃষ্টি করেছে তুরস্ক। সিরিয়া, লিবিয়া এবং সর্বশেষ আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধে ড্রোন ব্যবহারে তুরস্কের সাফল্য সারা বিশ্বে আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধ দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে প্রচলিত যুদ্ধব্যবস্থা বদলে যাচ্ছে। কীভাবে আধুনিক যুদ্ধব্যবস্থায় অপরিহার্য হয়ে উঠেছে ড্রোন, সেটিরও আদর্শ নজির ছিল এই যুদ্ধ।
তবে এসব সংঘাতে সাধারণত সামরিক ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল। বেসামরিক ড্রোনের ব্যবহার ছিল স্বল্প পরিসরে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে বেসামরিক ড্রোন বড় পরিসরে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন রাশিয়া ব্যবহার করছে, তেমনি ইউক্রেনও এসব ‘খেলনা’ ড্রোন ব্যবহার করছে। যদিও ইউক্রেনের সব প্রয়োজন মেটানোর মতো পর্যাপ্ত ড্রোন আছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন। তবু বেসামরিক ড্রোনের ব্যবহার দেখার মতো।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর বলছে, আধুনিক যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে ড্রোন। এটি যুদ্ধের কৌশল পরিবর্তন করে দিতে পারে। এর মাধ্যমে অল্প সময়ে অনেক জায়গার তথ্য সংগ্রহ করা যায়, যা যুদ্ধে তাৎক্ষণিক কৌশল পরিবর্তনে সহায়তা করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ড্রোনগুলো মূলত আর্টিলারি স্পটার হিসাবে কাজ করে। মাটিতে থাকা একজন সৈন্যের পক্ষে শত্রুকে শনাক্ত করে সরাসরি গুলি করা কঠিন। কিন্তু একটি ড্রোন থেকে তা সহজেই করা যায়। অপারেটর পাহাড় বা ভবনের আড়ালে লুকিয়ে থেকে দূরনিয়ন্ত্রিত ডিভাইস দিয়ে শত্রুপক্ষকে শনাক্ত করতে পারে এবং ওপর থেকে আর্টিলারি মুভমেন্ট ট্র্যাক করতে পারে। একটি প্রতিরক্ষামূলক অবস্থা ধ্বংস করতে প্রচলিত ব্যবস্থায় যেখানে ৬০-৯০ রাউন্ড গুলি লাগে, সেখানে ড্রোন থেকে মাত্র ৯ রাউন্ডে সেই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেঙে ফেলা যায়। এগুলো দিয়ে কম ঝুঁকি নিয়ে প্রতিপক্ষের যানবাহন খুঁজে তা ধ্বংস করা যায়। যদিও বেসামরিক ড্রোনগুলো ট্যাংকবিধ্বংসী বোমা বহন করতে যথেষ্ট নয়, তবে সেগুলো শত্রুপক্ষের ঘাঁটিতে গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে পারে।
ইউক্রেনে পূর্ব দনবাস অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত মিলিশিয়ারা বছরের পর বছর ধরে বেসামরিক ড্রোন ব্যবহার করে আসছে। ২০১৯ সালে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছিল যে সেনাবাহিনীর ইউনিটগুলো কোয়াডকপ্টার ব্যবহার করবে। মানুষবিহীন সামরিক ব্যবস্থার বিশেষজ্ঞ স্যামুয়েল বেন্ডেন্ট বলছেন, রাশিয়ার এমন ঘোষণায় বেশির ভাগ পর্যবেক্ষক ধরে নিয়েছিল, এটা দেশের অভ্যন্তরে ব্যবহার করা হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে রাশিয়ার অভিজাত বিমানবাহিনীতেও এখন ডিজি ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে।
যদিও বেসামরিক ড্রোনগুলোর নানা ত্রুটি রয়েছে। ২০১৭ সালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে ব্যবহারের জন্য ডিজি ড্রোন কেনা হয়েছিল। কিন্তু পরে সেগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে স্থায়ীভাবে কোয়াডকপ্টার দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়ে। এই ডিজি ড্রোনগুলোর যোগাযোগব্যবস্থাও এনক্রিপ্টেড বা সুরক্ষিত করা যায়নি।
চীনা কোম্পানি ডিজিআই অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের পণ্যের সামরিক ব্যবহারের নিন্দা করেছে। গত এপ্রিলে প্রতিষ্ঠানটি ইউক্রেন ও রাশিয়ায় নতুন ড্রোন বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু অন্যান্য কোম্পানি এই সুযোগে ব্যবসা করে নিচ্ছে। ‘প্যারট’ এখন সামরিক বাজারের জন্য ড্রোন তৈরি করছে। ইউক্রেনের বাহিনী এরই মধ্যে প্যারটের ড্রোন ব্যবহার শুরু করেছে। উৎপাদনে চীনাদের একচেটিয়া অবস্থান ভাঙার আশায় বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠান এখন ড্রোন তৈরির ব্যবসায় নেমেছে।
বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, ইউক্রেনে সর্বস্তরে সস্তা ড্রোনের ব্যবহার ভবিষ্যতের সংঘাতকে ভিন্ন দিকে নিতে পারে। শত্রুবাহিনী কোথায় আছে এবং তারা কী করছে তা জানিয়ে বিরাট সুবিধা এনে দেয় ড্রোন। বেসামরিক ড্রোন সামরিক হার্ডওয়্যারের মতো বিশেষায়িত না হলেও শত্রুকে খুঁজে পেতে বেশ সাহায্য করছে। এতে করে বেসামরিক ড্রোন পরিণত হচ্ছে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে।
তবে কি আগামীর যুদ্ধে জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবে খেলনা ড্রোনও? আপাতভাবে বলাই যায়, সেই আশঙ্কা প্রবল। শেষমেশ এই গ্রহের যুদ্ধ-সংঘাত পুরোপুরি সাই-ফাই চলচ্চিত্রের কল্পিত রূপই নেয় কি না, তা এখন দেখার বিষয়!
তথ্যসূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট, ডয়চে ভেলে, সিএনএন, বিবিসি, ওয়্যারড ও ইউএসএ টুডে
স্বাভাবিক সময়ে ব্যবহার করা খেলনা এখন ব্যবহৃত হচ্ছে যুদ্ধের ময়দানে! হ্যাঁ, এমনটা শুনলে চোখ কপালে ওঠাই স্বাভাবিক। তবে সত্য তথ্য হলো, রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট অনেক নতুন ঘটনার জন্ম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খেলনাকেও যুদ্ধক্ষেত্রে নামিয়েছে। যুদ্ধে খেলনা ড্রোন বা বেসামরিক ড্রোনের ব্যবহার এখন নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলুন, এবার এসব নিয়ে বিস্তারিত জানা যাক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দিনে যেকোনো যুদ্ধে অপরিহার্য হয়ে উঠবে ড্রোন। প্রচলিত অস্ত্র নিয়ে একটি দেশ যতই শক্তিশালী হোক না কেন, যুদ্ধে প্রতিপক্ষের ড্রোন আক্রমণ প্রতিহত করতে না পারলে বিপর্যয় অনিবার্য। এরই মধ্যে তার নজির দেখা গেছে। শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা থাকার পরও ঠেকানো যাচ্ছে না ড্রোন হামলা। ড্রোন প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির কারণে সামরিক দিক দিয়ে এত দিন পেছনের সারিতে থাকা অনেক দেশ ক্রমান্বয়ে ওপরে উঠে আসতে শুরু করেছে। সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী ও অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশগুলোর মধ্যে দ্রুত ব্যবধান কমিয়ে আনছে ড্রোন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। দুই দেশই তাদের সাধ্যমতো একে-অপরকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে। শক্তিশালী সমরাস্ত্রের পাশাপাশি যুদ্ধে উভয় দেশ ব্যবহার করছে ড্রোন। যে ড্রোনগুলো সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে থাকে, সেগুলোই যুদ্ধে কাজে লাগানো হচ্ছে। সামরিক হার্ডওয়্যারের চেয়ে খেলনার সঙ্গে এই ড্রোনগুলোর বেশি মিল।
গত মে মাসে একজন ক্রেমলিনপন্থী সাংবাদিক মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি জানিয়েছিলেন, রুশদের সশস্ত্র বাহিনীতে তাঁদের ব্যবহার করা ড্রোন দান করতে বলা হয়েছে। ইউক্রেনে দুই পক্ষই সস্তায় বেসামরিক ড্রোন কিনছে। যুদ্ধের আগে এসব ড্রোন প্রযুক্তি উৎসাহী ও অপেশাদার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাজে ব্যবহৃত হতো। রাশিয়া ও ইউক্রেন কীভাবে খেলনাসদৃশ ডিভাইস যুদ্ধে ব্যবহার করছে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন ওই সাংবাদিক।
ড্রোন সাধারণ মানুষের হাতে এসেছে বেশি দিন হয়নি। কনজিউমার বা বেসামরিক ড্রোন প্রথম জনপ্রিয় হয় ২০১০ সালে। একটি ফরাসি কোম্পানি প্যারট ড্রোনকে জনপ্রিয় করে তোলে। ২০১০ সালে ৪০০ গ্রাম কোয়াডকপ্টার সমৃদ্ধ এআর ড্রোন বাজারে নিয়ে আসে প্যারট। এটির ক্যামেরা দিয়ে পাখির চোখে দৃশ্য দেখা যেত এবং এতে অত্যাধুনিক অটোপাইলট কৌশল ছিল। এআর ড্রোন আংশিকভাবে সফল হয়েছিল, কারণ পূর্ববর্তী রেডিও-নিয়ন্ত্রিত খেলনার বিপরীতে এর জন্য সামান্য পাইলটিং দক্ষতার প্রয়োজন ছিল।
ড্রোনের বাজারে আমূল পরিবর্তন আসে ২০১৩ সালে। চাইনিজ স্টার্টআপ ডিজি একটি ড্রোন বাজারে আনে, যেটি এক কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। একটি গোপ্রো ভিডিও ক্যামেরা ছাড়াও পরিশীলিত ডিভাইস ও জনসাধারণের জন্য কম মূল্যে ছবি তোলার সুযোগ নিয়ে এসেছিল সেটি। ডিজি তখন থেকেই বেসামরিক ড্রোনের বাজারে আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে। এর সাম্প্রতিক ডিভাইসগুলো কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারছে, সম্প্রচার ক্যামেরা ও স্বয়ংক্রিয় বাধা পেরিয়ে যেতেও বেগ পেতে হচ্ছে না।
এই সক্ষমতাগুলো বেসামরিক ড্রোনকে ধীরে ধীরে যুদ্ধের জন্য উপযোগী করে তোলে। গত কয়েক বছর ধরেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যেসব সংঘাত সংঘটিত হয়েছে, তাতে অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল ড্রোন। সহজলভ্যতা এর অন্যতম কারণ। বেশ কিছু সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ করে ইরাক ও সিরিয়ায় বোমা ফেলার জন্য ছোট পরিসরে এসব ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল। ইউক্রেনে এগুলো আরও বড় ভূমিকা পালন করছে। রাশিয়া যখন ফেব্রুয়ারিতে আক্রমণ শুরু করে, তখন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মালিকদের কাছে তাদের ড্রোনগুলো সশস্ত্র বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার জন্য আবেদন করতে থাকে। এই যুদ্ধে কয়েক হাজার ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
গত ২০ বছর ধরে টার্গেট কিলিং বা হত্যা মিশনে ব্যবহার করা হচ্ছে সামরিক ড্রোন। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিভিন্ন দুর্গম অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র আল-কায়েদাবিরোধী অভিযানে ড্রোন হামলা পরিচালনা করে আসছে। সম্প্রতি কয়েকটি বড় সংঘাতে ব্যাপক মাত্রায় ড্রোন ব্যবহার করে নজির সৃষ্টি করেছে তুরস্ক। সিরিয়া, লিবিয়া এবং সর্বশেষ আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধে ড্রোন ব্যবহারে তুরস্কের সাফল্য সারা বিশ্বে আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধ দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে প্রচলিত যুদ্ধব্যবস্থা বদলে যাচ্ছে। কীভাবে আধুনিক যুদ্ধব্যবস্থায় অপরিহার্য হয়ে উঠেছে ড্রোন, সেটিরও আদর্শ নজির ছিল এই যুদ্ধ।
তবে এসব সংঘাতে সাধারণত সামরিক ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল। বেসামরিক ড্রোনের ব্যবহার ছিল স্বল্প পরিসরে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে বেসামরিক ড্রোন বড় পরিসরে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন রাশিয়া ব্যবহার করছে, তেমনি ইউক্রেনও এসব ‘খেলনা’ ড্রোন ব্যবহার করছে। যদিও ইউক্রেনের সব প্রয়োজন মেটানোর মতো পর্যাপ্ত ড্রোন আছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন। তবু বেসামরিক ড্রোনের ব্যবহার দেখার মতো।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর বলছে, আধুনিক যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে ড্রোন। এটি যুদ্ধের কৌশল পরিবর্তন করে দিতে পারে। এর মাধ্যমে অল্প সময়ে অনেক জায়গার তথ্য সংগ্রহ করা যায়, যা যুদ্ধে তাৎক্ষণিক কৌশল পরিবর্তনে সহায়তা করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ড্রোনগুলো মূলত আর্টিলারি স্পটার হিসাবে কাজ করে। মাটিতে থাকা একজন সৈন্যের পক্ষে শত্রুকে শনাক্ত করে সরাসরি গুলি করা কঠিন। কিন্তু একটি ড্রোন থেকে তা সহজেই করা যায়। অপারেটর পাহাড় বা ভবনের আড়ালে লুকিয়ে থেকে দূরনিয়ন্ত্রিত ডিভাইস দিয়ে শত্রুপক্ষকে শনাক্ত করতে পারে এবং ওপর থেকে আর্টিলারি মুভমেন্ট ট্র্যাক করতে পারে। একটি প্রতিরক্ষামূলক অবস্থা ধ্বংস করতে প্রচলিত ব্যবস্থায় যেখানে ৬০-৯০ রাউন্ড গুলি লাগে, সেখানে ড্রোন থেকে মাত্র ৯ রাউন্ডে সেই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেঙে ফেলা যায়। এগুলো দিয়ে কম ঝুঁকি নিয়ে প্রতিপক্ষের যানবাহন খুঁজে তা ধ্বংস করা যায়। যদিও বেসামরিক ড্রোনগুলো ট্যাংকবিধ্বংসী বোমা বহন করতে যথেষ্ট নয়, তবে সেগুলো শত্রুপক্ষের ঘাঁটিতে গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে পারে।
ইউক্রেনে পূর্ব দনবাস অঞ্চলে রাশিয়া সমর্থিত মিলিশিয়ারা বছরের পর বছর ধরে বেসামরিক ড্রোন ব্যবহার করে আসছে। ২০১৯ সালে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছিল যে সেনাবাহিনীর ইউনিটগুলো কোয়াডকপ্টার ব্যবহার করবে। মানুষবিহীন সামরিক ব্যবস্থার বিশেষজ্ঞ স্যামুয়েল বেন্ডেন্ট বলছেন, রাশিয়ার এমন ঘোষণায় বেশির ভাগ পর্যবেক্ষক ধরে নিয়েছিল, এটা দেশের অভ্যন্তরে ব্যবহার করা হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে রাশিয়ার অভিজাত বিমানবাহিনীতেও এখন ডিজি ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে।
যদিও বেসামরিক ড্রোনগুলোর নানা ত্রুটি রয়েছে। ২০১৭ সালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে ব্যবহারের জন্য ডিজি ড্রোন কেনা হয়েছিল। কিন্তু পরে সেগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে স্থায়ীভাবে কোয়াডকপ্টার দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়ে। এই ডিজি ড্রোনগুলোর যোগাযোগব্যবস্থাও এনক্রিপ্টেড বা সুরক্ষিত করা যায়নি।
চীনা কোম্পানি ডিজিআই অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের পণ্যের সামরিক ব্যবহারের নিন্দা করেছে। গত এপ্রিলে প্রতিষ্ঠানটি ইউক্রেন ও রাশিয়ায় নতুন ড্রোন বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু অন্যান্য কোম্পানি এই সুযোগে ব্যবসা করে নিচ্ছে। ‘প্যারট’ এখন সামরিক বাজারের জন্য ড্রোন তৈরি করছে। ইউক্রেনের বাহিনী এরই মধ্যে প্যারটের ড্রোন ব্যবহার শুরু করেছে। উৎপাদনে চীনাদের একচেটিয়া অবস্থান ভাঙার আশায় বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠান এখন ড্রোন তৈরির ব্যবসায় নেমেছে।
বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, ইউক্রেনে সর্বস্তরে সস্তা ড্রোনের ব্যবহার ভবিষ্যতের সংঘাতকে ভিন্ন দিকে নিতে পারে। শত্রুবাহিনী কোথায় আছে এবং তারা কী করছে তা জানিয়ে বিরাট সুবিধা এনে দেয় ড্রোন। বেসামরিক ড্রোন সামরিক হার্ডওয়্যারের মতো বিশেষায়িত না হলেও শত্রুকে খুঁজে পেতে বেশ সাহায্য করছে। এতে করে বেসামরিক ড্রোন পরিণত হচ্ছে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে।
তবে কি আগামীর যুদ্ধে জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবে খেলনা ড্রোনও? আপাতভাবে বলাই যায়, সেই আশঙ্কা প্রবল। শেষমেশ এই গ্রহের যুদ্ধ-সংঘাত পুরোপুরি সাই-ফাই চলচ্চিত্রের কল্পিত রূপই নেয় কি না, তা এখন দেখার বিষয়!
তথ্যসূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট, ডয়চে ভেলে, সিএনএন, বিবিসি, ওয়্যারড ও ইউএসএ টুডে
কোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
১৬ ঘণ্টা আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৪ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৮ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
১১ দিন আগে