অনলাইন ডেস্ক
মিয়ানমারের বাংলাদেশসংলগ্ন রাজ্য রাখাইনে ২০২৩ সালের শেষ দিক থেকে তীব্র আক্রমণ শুরু করে অঞ্চলটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। দীর্ঘ সময়ের পরিক্রমায় গোষ্ঠীটি রাজ্যটির প্রায় শতভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এমনকি কয়েক লাখ বাসিন্দার অঞ্চলটিতে একটি প্রোটো-স্টেট গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করেছে। সাধারণত, প্রোটো-স্টেট হলো এমন একটি অবস্থা, যখন একটি অঞ্চল কোনো একটি দেশের সঙ্গে খুবই শিথিলভাবে যুক্ত থাকে।
মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী আরাকান আর্মিকে ঠেকাতে নির্বিচারে হামলা ও অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে, অঞ্চলটিতে ব্যাপক অর্থনৈতিক দুর্দশা দেখা দিয়েছে। তবে স্থানীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ জনসংখ্যা আরাকান আর্মিকেই সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ আছে, জান্তা বাহিনী রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের শহরগুলোতে স্থানীয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের নিজ বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হতে বাধ্য করেছে এবং রাখাইনে স্থানীয়দের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার মতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এখন যুদ্ধ বজায় থাকলেও এটি স্পষ্ট যে আরাকান আর্মি শিগগির রাখাইনের শাসনের ক্ষেত্রে ডি-ফ্যাক্টো কর্তৃপক্ষ হয়ে দাঁড়াবে। এ ক্ষেত্রে বাইরের যেসব অংশীদার বা পক্ষ আছে, তাদের ঠিক করতে হবে তারা কীভাবে এবং কখন আরাকান আর্মির সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করবে। তবে আরাকানের স্থিতিশীলতা চাইলে, আরাকান আর্মিকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের সম্পর্ককে নতুন করে বিবেচনা করতে হবে। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যে নিগ্রহমূলক আচরণ করা হয়েছে, তার তদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও মানবিক সহায়তার বিষয়টি নিশ্চিতে বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক দাতাদের সঙ্গে আরাকান আর্মিকে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই আরাকান আর্মি মিয়ানমারে জান্তা বাহিনীর কাছ থেকে এককভাবে সবচেয়ে বেশি এলাকা—জনসংখ্যা ও আয়তনের ভিত্তিতে—কেড়ে নিয়েছে। বর্তমানে গোষ্ঠীটি পুরো রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের করে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এর জন্য গোষ্ঠীটিকে অনেক বেশি চড়া মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে। একই সঙ্গে রাজ্যটির বেসামরিক লোকদেরও উচ্চ মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে।
আরাকান আর্মি ও জান্তা বাহিনীর মধ্যকার যুদ্ধে রাখাইন ও রোহিঙ্গা উভয় জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জান্তা বাহিনী দৈনন্দিন ভিত্তিতে রাজ্যটির বিভিন্ন অঞ্চলে বিমান হামলা চালিয়েছে। জান্তা ও আরাকান আর্মি উভয়ের বিরুদ্ধেই বেসামরিক নাগরিকদের নিগ্রহ করার অভিযোগ আছে। মে মাসের শেষ দিকে জান্তা বাহিনী রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ের উপকণ্ঠের একটি শহরে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালায়। আরাকান আর্মিও মংডু শহরে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালায় বলে অভিযোগ আছে। এতে অন্তত ২০০ লোক নিহত হয়েছিল।
আরাকান আর্মি হয়তো রাখাইনের পুরো ভূখণ্ডের ওপর সামরিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে, কিন্তু এর রাজনৈতিক শাখা ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান রাজ্যটি শাসন করার ক্ষমতা রাখে কি না এবং তাদের শাসনে রাজ্য স্থিতিশীলতা ফিরবে কি না—তা নিয়ে সন্দেহ আছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন জনগোষ্ঠীর সমর্থন হয়তো আরাকান আর্মি ও এর রাজনৈতিক শাখাকে নিজেদের শাসন দৃঢ় করার জন্য কিছু সময় দেবে। কিন্তু বিদ্যুৎ, ইন্টারনেটসহ প্রয়োজনীয় সেবার অনুপস্থিতি, সংঘাতে বিধ্বস্ত অর্থনীতি নিয়ে নিয়ে তারা কতটা এগিয়ে যেতে পারবে তাই এখন ভাবনার বিষয়।
একটি পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আরাকান আর্মিকে শুরুতেই গুরুতর কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। রাজ্যটির প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডার থাকলেও প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও নিকটবর্তী ভারতের সঙ্গে তাদের খুব একটা যোগাযোগ নেই। এই দুটি দেশের সরাসরি রাখাইনে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। যার কারণে, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, ব্যাংকিং ও অন্যান্য সেবার জন্য রাজ্যটিকে বাধ্য হয়েই নেপিডোর ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। ভূকৌশলগত কারণে ভারত ও চীন উভয়ই রাখাইনে নিজেদের উপস্থিতি জোরালো করতে চায়। অন্যদিকে বাংলাদেশ চায় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে তাদের নিজ ভূখণ্ডে ফেরত পাঠাতে। এই জটিল রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অবস্থা সামলানো মোটেও আরাকান আর্মির জন্য সহজ হবে না।
আরাকান আর্মির জন্য আরেকটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হলো—রাজ্যটিতে বৌদ্ধপ্রধান রাখাইন জনগোষ্ঠী ও মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাতময় সম্পর্ক। ১৯৪২ সাল থেকেই এই দুই গোষ্ঠী পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়ছে। সংখ্যায় কম হলেও রোহিঙ্গারা এখনো রাখাইন রাজ্যের উত্তরাংশে বেশি প্রভাবশালী। রোহিঙ্গা-রাখাইন সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও জান্তা বাহিনী দ্বারা রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহার রাখাইনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। জান্তা বাহিনী আগে যেসব রোহিঙ্গা সংগঠনকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দিয়েছিল এখন সেগুলোকেই আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বাধ্য করছে। এমনকি বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরও এসব সশস্ত্র গোষ্ঠীতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে খবর আছে।
যদিও অধিকাংশ রোহিঙ্গা বাধ্য হয়েই জান্তার হয়ে লড়ছে। তবে অনেকেই আছে, যারা স্বেচ্ছায় জান্তা বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়ে রাখাইন বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে লড়ছে। এই বিষয়টি আরাকান আর্মিকে ক্ষুব্ধ করেছে। একই সঙ্গে, রাখাইন ও রোহিঙ্গা উভয় জনগোষ্ঠীর নেতাদের উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে পরিস্থিতি আবারও সাম্প্রদায়িক সংঘাতের দিকে রূপ নিচ্ছে।
রাখাইন রাজ্য বর্তমানে এক বিপজ্জনক সন্ধিক্ষণে রয়েছে। যেখানে রাখাইন ও রোহিঙ্গা উভয় সম্প্রদায়ের নেতাদের ঐতিহাসিক শত্রুতার ঊর্ধ্বে উঠে উত্তেজনা প্রশমিত করতে হবে। তাঁদের উচিত বিষাক্ত বক্তব্য এড়িয়ে সহিংসতা প্রতিরোধের লক্ষ্যে সংলাপ বসা এবং তাদের একে-অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেওয়া সরকারি প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করা।
আরাকান আর্মিকে নিশ্চিত করতে হবে, তারা বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করবে এবং তাদের মানবাধিকারকে সম্মান করবে, প্রশাসনে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত এবং বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগের একটি স্বাধীন তদন্ত করবে। এই তদন্ত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুরু হওয়া উচিত।
রাখাইন রাজ্য অভ্যন্তরীণভাবে যেসব সংকট মোকাবিলা করছে, তার কাটিয়ে উঠতে বাহ্যিক অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশও একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। রাখাইন যদি স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য হিসেবে আবির্ভূত হয়, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উচিত হবে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। বিশেষ করে, আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করার সময় বাংলাদেশের উচিত এই দাবি করা যে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মানবিক ও মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করা হবে।
এ ছাড়া, সীমান্ত স্থিতিশীল করতে ও অনিয়মিত অভিবাসনের বিষয়টি মোকাবিলা করার জন্য ঢাকাকে এই অঞ্চলে আরও মানবিক সহায়তা, সীমান্তজুড়ে বাণিজ্যের অনুমতি দেওয়া উচিত। ঢাকার উচিত শরণার্থীশিবিরে নিরাপত্তার উন্নতি করা, সেখানে সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রভাব কমানো এবং একটি প্রকৃত রোহিঙ্গা নাগরিক সমাজের আন্দোলন গড়ে তোলার অনুমতি দেওয়া। অন্য বিদেশি সরকারগুলোকেও আরাকান আর্মি ও রোহিঙ্গাদের বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া, যাতে তারা উভয় পক্ষে সহযোগিতা করতে পারে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে চলতে চাপ প্রয়োগ করতে পারে।
যা–ই হোক, আরাকান আর্মি এখন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে বড় সাফল্য অর্জন করার পরে তাদের দেখাতে হবে, তারা দেশের অবহেলিত কোণে স্থিতিশীলতা আনতে পারে এবং সেখানে বসবাসকারী সব মানুষের স্বার্থ রক্ষা করে শাসন করতে পারে।
মিয়ানমারের বাংলাদেশসংলগ্ন রাজ্য রাখাইনে ২০২৩ সালের শেষ দিক থেকে তীব্র আক্রমণ শুরু করে অঞ্চলটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। দীর্ঘ সময়ের পরিক্রমায় গোষ্ঠীটি রাজ্যটির প্রায় শতভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এমনকি কয়েক লাখ বাসিন্দার অঞ্চলটিতে একটি প্রোটো-স্টেট গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করেছে। সাধারণত, প্রোটো-স্টেট হলো এমন একটি অবস্থা, যখন একটি অঞ্চল কোনো একটি দেশের সঙ্গে খুবই শিথিলভাবে যুক্ত থাকে।
মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী আরাকান আর্মিকে ঠেকাতে নির্বিচারে হামলা ও অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে, অঞ্চলটিতে ব্যাপক অর্থনৈতিক দুর্দশা দেখা দিয়েছে। তবে স্থানীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ জনসংখ্যা আরাকান আর্মিকেই সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ আছে, জান্তা বাহিনী রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের শহরগুলোতে স্থানীয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের নিজ বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হতে বাধ্য করেছে এবং রাখাইনে স্থানীয়দের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার মতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এখন যুদ্ধ বজায় থাকলেও এটি স্পষ্ট যে আরাকান আর্মি শিগগির রাখাইনের শাসনের ক্ষেত্রে ডি-ফ্যাক্টো কর্তৃপক্ষ হয়ে দাঁড়াবে। এ ক্ষেত্রে বাইরের যেসব অংশীদার বা পক্ষ আছে, তাদের ঠিক করতে হবে তারা কীভাবে এবং কখন আরাকান আর্মির সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করবে। তবে আরাকানের স্থিতিশীলতা চাইলে, আরাকান আর্মিকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের সম্পর্ককে নতুন করে বিবেচনা করতে হবে। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যে নিগ্রহমূলক আচরণ করা হয়েছে, তার তদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও মানবিক সহায়তার বিষয়টি নিশ্চিতে বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক দাতাদের সঙ্গে আরাকান আর্মিকে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই আরাকান আর্মি মিয়ানমারে জান্তা বাহিনীর কাছ থেকে এককভাবে সবচেয়ে বেশি এলাকা—জনসংখ্যা ও আয়তনের ভিত্তিতে—কেড়ে নিয়েছে। বর্তমানে গোষ্ঠীটি পুরো রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের করে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এর জন্য গোষ্ঠীটিকে অনেক বেশি চড়া মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে। একই সঙ্গে রাজ্যটির বেসামরিক লোকদেরও উচ্চ মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে।
আরাকান আর্মি ও জান্তা বাহিনীর মধ্যকার যুদ্ধে রাখাইন ও রোহিঙ্গা উভয় জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জান্তা বাহিনী দৈনন্দিন ভিত্তিতে রাজ্যটির বিভিন্ন অঞ্চলে বিমান হামলা চালিয়েছে। জান্তা ও আরাকান আর্মি উভয়ের বিরুদ্ধেই বেসামরিক নাগরিকদের নিগ্রহ করার অভিযোগ আছে। মে মাসের শেষ দিকে জান্তা বাহিনী রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ের উপকণ্ঠের একটি শহরে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালায়। আরাকান আর্মিও মংডু শহরে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালায় বলে অভিযোগ আছে। এতে অন্তত ২০০ লোক নিহত হয়েছিল।
আরাকান আর্মি হয়তো রাখাইনের পুরো ভূখণ্ডের ওপর সামরিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে, কিন্তু এর রাজনৈতিক শাখা ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান রাজ্যটি শাসন করার ক্ষমতা রাখে কি না এবং তাদের শাসনে রাজ্য স্থিতিশীলতা ফিরবে কি না—তা নিয়ে সন্দেহ আছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন জনগোষ্ঠীর সমর্থন হয়তো আরাকান আর্মি ও এর রাজনৈতিক শাখাকে নিজেদের শাসন দৃঢ় করার জন্য কিছু সময় দেবে। কিন্তু বিদ্যুৎ, ইন্টারনেটসহ প্রয়োজনীয় সেবার অনুপস্থিতি, সংঘাতে বিধ্বস্ত অর্থনীতি নিয়ে নিয়ে তারা কতটা এগিয়ে যেতে পারবে তাই এখন ভাবনার বিষয়।
একটি পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আরাকান আর্মিকে শুরুতেই গুরুতর কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। রাজ্যটির প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডার থাকলেও প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও নিকটবর্তী ভারতের সঙ্গে তাদের খুব একটা যোগাযোগ নেই। এই দুটি দেশের সরাসরি রাখাইনে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। যার কারণে, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, ব্যাংকিং ও অন্যান্য সেবার জন্য রাজ্যটিকে বাধ্য হয়েই নেপিডোর ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। ভূকৌশলগত কারণে ভারত ও চীন উভয়ই রাখাইনে নিজেদের উপস্থিতি জোরালো করতে চায়। অন্যদিকে বাংলাদেশ চায় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে তাদের নিজ ভূখণ্ডে ফেরত পাঠাতে। এই জটিল রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অবস্থা সামলানো মোটেও আরাকান আর্মির জন্য সহজ হবে না।
আরাকান আর্মির জন্য আরেকটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হলো—রাজ্যটিতে বৌদ্ধপ্রধান রাখাইন জনগোষ্ঠী ও মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাতময় সম্পর্ক। ১৯৪২ সাল থেকেই এই দুই গোষ্ঠী পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়ছে। সংখ্যায় কম হলেও রোহিঙ্গারা এখনো রাখাইন রাজ্যের উত্তরাংশে বেশি প্রভাবশালী। রোহিঙ্গা-রাখাইন সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও জান্তা বাহিনী দ্বারা রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহার রাখাইনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। জান্তা বাহিনী আগে যেসব রোহিঙ্গা সংগঠনকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দিয়েছিল এখন সেগুলোকেই আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বাধ্য করছে। এমনকি বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরও এসব সশস্ত্র গোষ্ঠীতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে খবর আছে।
যদিও অধিকাংশ রোহিঙ্গা বাধ্য হয়েই জান্তার হয়ে লড়ছে। তবে অনেকেই আছে, যারা স্বেচ্ছায় জান্তা বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়ে রাখাইন বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে লড়ছে। এই বিষয়টি আরাকান আর্মিকে ক্ষুব্ধ করেছে। একই সঙ্গে, রাখাইন ও রোহিঙ্গা উভয় জনগোষ্ঠীর নেতাদের উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে পরিস্থিতি আবারও সাম্প্রদায়িক সংঘাতের দিকে রূপ নিচ্ছে।
রাখাইন রাজ্য বর্তমানে এক বিপজ্জনক সন্ধিক্ষণে রয়েছে। যেখানে রাখাইন ও রোহিঙ্গা উভয় সম্প্রদায়ের নেতাদের ঐতিহাসিক শত্রুতার ঊর্ধ্বে উঠে উত্তেজনা প্রশমিত করতে হবে। তাঁদের উচিত বিষাক্ত বক্তব্য এড়িয়ে সহিংসতা প্রতিরোধের লক্ষ্যে সংলাপ বসা এবং তাদের একে-অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেওয়া সরকারি প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করা।
আরাকান আর্মিকে নিশ্চিত করতে হবে, তারা বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করবে এবং তাদের মানবাধিকারকে সম্মান করবে, প্রশাসনে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত এবং বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগের একটি স্বাধীন তদন্ত করবে। এই তদন্ত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুরু হওয়া উচিত।
রাখাইন রাজ্য অভ্যন্তরীণভাবে যেসব সংকট মোকাবিলা করছে, তার কাটিয়ে উঠতে বাহ্যিক অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশও একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। রাখাইন যদি স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য হিসেবে আবির্ভূত হয়, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উচিত হবে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। বিশেষ করে, আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করার সময় বাংলাদেশের উচিত এই দাবি করা যে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মানবিক ও মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করা হবে।
এ ছাড়া, সীমান্ত স্থিতিশীল করতে ও অনিয়মিত অভিবাসনের বিষয়টি মোকাবিলা করার জন্য ঢাকাকে এই অঞ্চলে আরও মানবিক সহায়তা, সীমান্তজুড়ে বাণিজ্যের অনুমতি দেওয়া উচিত। ঢাকার উচিত শরণার্থীশিবিরে নিরাপত্তার উন্নতি করা, সেখানে সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রভাব কমানো এবং একটি প্রকৃত রোহিঙ্গা নাগরিক সমাজের আন্দোলন গড়ে তোলার অনুমতি দেওয়া। অন্য বিদেশি সরকারগুলোকেও আরাকান আর্মি ও রোহিঙ্গাদের বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া, যাতে তারা উভয় পক্ষে সহযোগিতা করতে পারে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে চলতে চাপ প্রয়োগ করতে পারে।
যা–ই হোক, আরাকান আর্মি এখন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে বড় সাফল্য অর্জন করার পরে তাদের দেখাতে হবে, তারা দেশের অবহেলিত কোণে স্থিতিশীলতা আনতে পারে এবং সেখানে বসবাসকারী সব মানুষের স্বার্থ রক্ষা করে শাসন করতে পারে।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১৪ ঘণ্টা আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৭ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৭ দিন আগে