অনলাইন ডেস্ক
ইউক্রেন যুদ্ধ আটলান্টিক মহাসাগরের দুই পারের দেশগুলোকে আরও একবার কাছে আনার পথ তৈরি করে দিয়েছে। তবে এবার এটি হতে যাচ্ছে প্রযুক্তি খাতে। এরই মধ্যে দেশগুলো বৈশ্বিক গুজব ব্যবস্থাপনা কমান্ড সেন্টার স্থাপন, ইলেকট্রিক কারের প্লাগ উন্নতকরণ কারখানা স্থাপন, কার্বন হ্রাসে স্থাপিত অবকাঠামোর নির্মাণব্যয় হ্রাস, বাজারে চীনা প্রভাব কমাতে এবং প্রযুক্তির বাজার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশেষ কমিটি গঠনসহ একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে দেশগুলো। তবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন বেশ কঠিনই হবে।
ট্রান্স আটলান্টিকের দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে গঠন করা হয়েছে ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজি কাউন্সিল (টিটিসি)। ১৫ ও ১৬ মে ফ্রান্সের স্যাক্লেতে টিটিসির দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রীসহ শীর্ষ বাণিজ্য আলোচকেরা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় কমিশনের ট্রেড অ্যান্ড কমপিটিশনের কমিশনারও। এই সম্মেলন প্রথম অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের সেপ্টেম্বরে। যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গে অনুষ্ঠিত সম্মেলনটি আয়োজন করা হয় সদস্য দেশগুলোর মধ্যকার পরিচয় ও আন্তরিকতা বাড়াতে। তবে এবার সম্মেলনে নজর দেওয়া হয়েছিল ফোরামের অগ্রগতি মূল্যায়ন ও আগামী দুই বছরের কর্মপন্থা নির্ধারণের বিষয়ে।
টিটিসিকে এগিয়ে নেওয়া পশ্চিমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববাজারে চীন, রাশিয়া ও অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের হাত থেকে প্রযুক্তি বাজারের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেওয়া এর মুখ্য উদ্দেশ্য। তবে নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেওয়ার বিষয়টি খুব একটা সহজ হবে বলে মনে হয় না। এ প্রসঙ্গে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইবার পলিসি সেন্টারের অধ্যাপক মারিৎজ শ্যাকে বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—এসব গণতান্ত্রিক দেশের সরকারগুলো একটি কার্যকর বিকল্প গড়ে তুলতে পারবেন কি না।’ যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ প্রযুক্তি খাতে তাদের মধ্যকার ফারাক ঘুচিয়ে ফেলতে পারে এবং অন্যান্য দেশও তাদের নেতৃত্ব মেনে চলে, তবে বিশ্বের প্রযুক্তি বাজারের ৫৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করবে তারা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরামর্শক সংস্থা গার্টনারের মতে, এই ৫৫ শতাংশের বাজারমূল্য চলতি বছরেই ৪ হাজার ৪০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
বৈদেশিক নীতি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অলব্রাইট স্টোন ব্রিজের পল ট্রাইওলোর মতে, টিটিসি গঠিত হয়েছিল ট্রান্স আটলান্টিক আন্তঃসংস্থা হিসেবে। মূলত প্রযুক্তি জগতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে। এরই মধ্যে টিটিসি ‘টেকনোলজি স্ট্যান্ডার্ডস’, ‘সিকিউর সাপ্লাই চেইন’, ‘বিনিয়োগ বাছাইকরণ’ এবং ‘ক্লাইমেট অ্যান্ড ক্লিন টেক’সহ বিভিন্ন নামে দশটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে। টিটিসি গঠনের আরেকটি লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তি খাতে ব্যবসার নীতিমালা সহজের লক্ষ্যে। ফোরামটি সদস্য দেশগুলোর মধ্যকার ডিজিটাল পার্থক্য কমিয়ে আনতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন, টিটিসির একটি ওয়ার্কিং গ্রুপের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, টিটিসি যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি সংযোগ টিউব হিসেবে কাজ করছে।
টিটিসি এরই মধ্যে সদস্য দেশগুলোর সাইবার জগতে ব্যক্তিগত তথ্য প্রবাহে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তবে ইউরোপীয় ন্যায়বিচার আদালতে বিষয়টি আটকে গেছে। ২০২০ সালে আদালত বলেছিল, চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ইউরোপীয় নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যে হস্তক্ষেপ ঠেকাতে যথেষ্ট আইনি সুরক্ষা রাখা হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়ন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ বিষয়ে একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই ঐকমত্য টিটিসিকে সামনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে। তার পরও যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা বলয় গঠনের বিষয়ে একমত না হতে পারে, তবু টিটিসি তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হবে না বলেই বিশ্বাস টিটিসির কর্মকর্তাদের।
এদিকে, গত ২৮ এপ্রিল ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের ৬০টি দেশ ‘ডিক্লারেশন ফর দ্য ফিউচার অব দ্য ইন্টারনেট’ নামে একটি চুক্তিতে সই করেছে। এই চুক্তির মাধ্যমে টিটিসিভুক্ত দেশসহ বিশ্বে বিনা মূল্যে সবার জন্য উন্মুক্ত ও নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রযুক্তি বাজারে চীন ও রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রাধান্য হ্রাস করা অনেকটাই সম্ভব হবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। যদিও প্রাথমিকভাবে টিটিসির টার্গেট এই দুই দেশ ছিল না। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী এই দুই দেশকে এড়িয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। বরং টিটিসির জন্য এই দুই দেশ হুমকি হিসেবে হাজির হয়েছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ টিটিসির কার্যকারিতা প্রমাণের একটি বড় সুযোগ সামনে এনেছে। ফোরামটি জানে কীভাবে রাশিয়ার গুজব মোকাবিলা ও সাইবার নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। টিটিসির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘এটি (ইউক্রেন যুদ্ধ) আমাদের উভয়ের মধ্যে সহযোগিতার জন্য কিছু ক্ষেত্র সামনে এনে দিয়েছে।’ তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টিটিসি এখনো কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির বিষয়ে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে ফোরামটিকে। এআইয়ের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি শেয়ার হাব এবং এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিরূপণের পদ্ধতি নির্ধারণে সম্মত হয়েছে দেশগুলো। এ ছাড়া প্রযুক্তি খাতে বেশি মাত্রায় কার্বন নিঃসরণ করে এমন পণ্যের মানোন্নয়ন এবং নিজেদের প্রযুক্তি পণ্যগুলোর জন্য একটি সাধারণ ভাষা খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে কাজ করতে সম্মত হয়েছে তারা।
এই প্রকল্প মূলত যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক একটি রক্ষাকবচ। একই সঙ্গে দেশটির অর্থনৈতিক স্বার্থও এতে জড়িত। কারণ, বিশ্ববাজারে চীনকে টেক্কা দিতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন একটি বিশাল বাজার। আর ইউরোপই হতে পারে সেই বাজার। টেলিকমিউনিকেশন খাতে চীনকে টেক্কা দিতে ইউরোপের বাজার ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোনো বিকল্প নেই। এই এলাকার দেশগুলোর মধ্যেই প্রযুক্তি খাতে প্রতিযোগিতা রয়েছে। কিন্তু সুখের বিষয়, এই অঞ্চলের দেশগুলোর এমন উদ্যোগের কথা আগে কখনোই ভাবা হয়নি।
ফলে টিটিসির উত্থানের প্রধান লক্ষ্য চীনকে চ্যালেঞ্জ করা। যুক্তরাষ্ট্রের থিংকট্যাংক সেন্টার ফর নিউ আমেরিকান সোসাইটির মার্টিন রেসার বলেন, ‘এর একটি লক্ষ্য হলো রাশিয়ার রপ্তানি হ্রাস করা। তবে এখানে আর্থিক বিষয়টি খুবই ছোট। কিন্তু চীনের মতো জায়ান্ট দেশের রপ্তানিকে বাধা দিতে হলে এর বেশ বেগ পেতে হবে।’ চীন বিশ্বের অন্যতম প্রধান প্রযুক্তি পণ্য সরবরাহকারী দেশ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশই চীনের বিভিন্ন টেক ফার্মে বিনিয়োগ করেছে। ফলে, রাশিয়াকে টেক্কা দেওয়া গেলেও চীন অতটা সহজে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর নাগালে আসবে না।
আরেকটি সমস্যা হলো বিশ্বাস। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিশ্বাসের অভাব রয়েছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে যদি ট্রাম্প কিংবা তাঁর মতো কোনো নেতা নির্বাচিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসেন, তবে হয়তো টিটিসি শিগগিরই তার গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। ইউরোপীয় ন্যায়বিচার আদালত তো এরই মধ্যে নিরাপত্তা বলয় চুক্তির বিষয়ে ভেটো দিয়ে বসেছে। সব মিলিয়ে আটলান্টিকের দুই পারের দেশগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গঠন অনেক দূরের পথ।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির পিটার স্যোয়ার বলেছেন, ‘এটি হবে আইনের মারপ্যাঁচের রুবিকস কিউব মেলানোর মতো।’ আরেকটি বিষয় হলো, এই আলোচনাগুলো এখনো নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে রয়েছে। জনগণ এখনো এসব বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে অবগত নয়। তারা বিষয়টি কীভাবে গ্রহণ করবে, তা নিয়ে বিস্তর ভাবনার অবকাশ রয়েছে।’
তবে টিটিসি নিয়ে আশাবাদীদের দাবি, ফোরামটি লক্ষ্য অর্জনে যত দূর সম্ভব পথ পাড়ি দেবে। প্রয়োজনে সীমানার ধারণা তুলে দিয়ে দেশগুলোর মধ্যে সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক সহযোগিতা বাড়াতে হবে। তাদের মতে, এই প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর করে তুলতে সমমনা দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে। বিশেষ করে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোকে। অনেকেই আবার টিটিসিকে ডিজিটাল ন্যাটো বলেও আখ্যা দিচ্ছেন। ফলে এই প্ল্যাটফর্ম যে আগামী দিনে একটি উল্লেখযোগ্য শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে, তা নিয়ে অনেকেই আশাবাদী।
ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
ইউক্রেন যুদ্ধ আটলান্টিক মহাসাগরের দুই পারের দেশগুলোকে আরও একবার কাছে আনার পথ তৈরি করে দিয়েছে। তবে এবার এটি হতে যাচ্ছে প্রযুক্তি খাতে। এরই মধ্যে দেশগুলো বৈশ্বিক গুজব ব্যবস্থাপনা কমান্ড সেন্টার স্থাপন, ইলেকট্রিক কারের প্লাগ উন্নতকরণ কারখানা স্থাপন, কার্বন হ্রাসে স্থাপিত অবকাঠামোর নির্মাণব্যয় হ্রাস, বাজারে চীনা প্রভাব কমাতে এবং প্রযুক্তির বাজার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশেষ কমিটি গঠনসহ একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে দেশগুলো। তবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন বেশ কঠিনই হবে।
ট্রান্স আটলান্টিকের দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে গঠন করা হয়েছে ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজি কাউন্সিল (টিটিসি)। ১৫ ও ১৬ মে ফ্রান্সের স্যাক্লেতে টিটিসির দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রীসহ শীর্ষ বাণিজ্য আলোচকেরা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় কমিশনের ট্রেড অ্যান্ড কমপিটিশনের কমিশনারও। এই সম্মেলন প্রথম অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের সেপ্টেম্বরে। যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গে অনুষ্ঠিত সম্মেলনটি আয়োজন করা হয় সদস্য দেশগুলোর মধ্যকার পরিচয় ও আন্তরিকতা বাড়াতে। তবে এবার সম্মেলনে নজর দেওয়া হয়েছিল ফোরামের অগ্রগতি মূল্যায়ন ও আগামী দুই বছরের কর্মপন্থা নির্ধারণের বিষয়ে।
টিটিসিকে এগিয়ে নেওয়া পশ্চিমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববাজারে চীন, রাশিয়া ও অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের হাত থেকে প্রযুক্তি বাজারের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেওয়া এর মুখ্য উদ্দেশ্য। তবে নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেওয়ার বিষয়টি খুব একটা সহজ হবে বলে মনে হয় না। এ প্রসঙ্গে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইবার পলিসি সেন্টারের অধ্যাপক মারিৎজ শ্যাকে বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—এসব গণতান্ত্রিক দেশের সরকারগুলো একটি কার্যকর বিকল্প গড়ে তুলতে পারবেন কি না।’ যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ প্রযুক্তি খাতে তাদের মধ্যকার ফারাক ঘুচিয়ে ফেলতে পারে এবং অন্যান্য দেশও তাদের নেতৃত্ব মেনে চলে, তবে বিশ্বের প্রযুক্তি বাজারের ৫৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করবে তারা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরামর্শক সংস্থা গার্টনারের মতে, এই ৫৫ শতাংশের বাজারমূল্য চলতি বছরেই ৪ হাজার ৪০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
বৈদেশিক নীতি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অলব্রাইট স্টোন ব্রিজের পল ট্রাইওলোর মতে, টিটিসি গঠিত হয়েছিল ট্রান্স আটলান্টিক আন্তঃসংস্থা হিসেবে। মূলত প্রযুক্তি জগতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে। এরই মধ্যে টিটিসি ‘টেকনোলজি স্ট্যান্ডার্ডস’, ‘সিকিউর সাপ্লাই চেইন’, ‘বিনিয়োগ বাছাইকরণ’ এবং ‘ক্লাইমেট অ্যান্ড ক্লিন টেক’সহ বিভিন্ন নামে দশটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে। টিটিসি গঠনের আরেকটি লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তি খাতে ব্যবসার নীতিমালা সহজের লক্ষ্যে। ফোরামটি সদস্য দেশগুলোর মধ্যকার ডিজিটাল পার্থক্য কমিয়ে আনতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন, টিটিসির একটি ওয়ার্কিং গ্রুপের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, টিটিসি যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি সংযোগ টিউব হিসেবে কাজ করছে।
টিটিসি এরই মধ্যে সদস্য দেশগুলোর সাইবার জগতে ব্যক্তিগত তথ্য প্রবাহে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তবে ইউরোপীয় ন্যায়বিচার আদালতে বিষয়টি আটকে গেছে। ২০২০ সালে আদালত বলেছিল, চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ইউরোপীয় নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যে হস্তক্ষেপ ঠেকাতে যথেষ্ট আইনি সুরক্ষা রাখা হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়ন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ বিষয়ে একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই ঐকমত্য টিটিসিকে সামনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে। তার পরও যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা বলয় গঠনের বিষয়ে একমত না হতে পারে, তবু টিটিসি তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হবে না বলেই বিশ্বাস টিটিসির কর্মকর্তাদের।
এদিকে, গত ২৮ এপ্রিল ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের ৬০টি দেশ ‘ডিক্লারেশন ফর দ্য ফিউচার অব দ্য ইন্টারনেট’ নামে একটি চুক্তিতে সই করেছে। এই চুক্তির মাধ্যমে টিটিসিভুক্ত দেশসহ বিশ্বে বিনা মূল্যে সবার জন্য উন্মুক্ত ও নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রযুক্তি বাজারে চীন ও রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রাধান্য হ্রাস করা অনেকটাই সম্ভব হবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। যদিও প্রাথমিকভাবে টিটিসির টার্গেট এই দুই দেশ ছিল না। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী এই দুই দেশকে এড়িয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। বরং টিটিসির জন্য এই দুই দেশ হুমকি হিসেবে হাজির হয়েছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ টিটিসির কার্যকারিতা প্রমাণের একটি বড় সুযোগ সামনে এনেছে। ফোরামটি জানে কীভাবে রাশিয়ার গুজব মোকাবিলা ও সাইবার নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। টিটিসির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘এটি (ইউক্রেন যুদ্ধ) আমাদের উভয়ের মধ্যে সহযোগিতার জন্য কিছু ক্ষেত্র সামনে এনে দিয়েছে।’ তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টিটিসি এখনো কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির বিষয়ে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে ফোরামটিকে। এআইয়ের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি শেয়ার হাব এবং এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিরূপণের পদ্ধতি নির্ধারণে সম্মত হয়েছে দেশগুলো। এ ছাড়া প্রযুক্তি খাতে বেশি মাত্রায় কার্বন নিঃসরণ করে এমন পণ্যের মানোন্নয়ন এবং নিজেদের প্রযুক্তি পণ্যগুলোর জন্য একটি সাধারণ ভাষা খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে কাজ করতে সম্মত হয়েছে তারা।
এই প্রকল্প মূলত যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক একটি রক্ষাকবচ। একই সঙ্গে দেশটির অর্থনৈতিক স্বার্থও এতে জড়িত। কারণ, বিশ্ববাজারে চীনকে টেক্কা দিতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন একটি বিশাল বাজার। আর ইউরোপই হতে পারে সেই বাজার। টেলিকমিউনিকেশন খাতে চীনকে টেক্কা দিতে ইউরোপের বাজার ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোনো বিকল্প নেই। এই এলাকার দেশগুলোর মধ্যেই প্রযুক্তি খাতে প্রতিযোগিতা রয়েছে। কিন্তু সুখের বিষয়, এই অঞ্চলের দেশগুলোর এমন উদ্যোগের কথা আগে কখনোই ভাবা হয়নি।
ফলে টিটিসির উত্থানের প্রধান লক্ষ্য চীনকে চ্যালেঞ্জ করা। যুক্তরাষ্ট্রের থিংকট্যাংক সেন্টার ফর নিউ আমেরিকান সোসাইটির মার্টিন রেসার বলেন, ‘এর একটি লক্ষ্য হলো রাশিয়ার রপ্তানি হ্রাস করা। তবে এখানে আর্থিক বিষয়টি খুবই ছোট। কিন্তু চীনের মতো জায়ান্ট দেশের রপ্তানিকে বাধা দিতে হলে এর বেশ বেগ পেতে হবে।’ চীন বিশ্বের অন্যতম প্রধান প্রযুক্তি পণ্য সরবরাহকারী দেশ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশই চীনের বিভিন্ন টেক ফার্মে বিনিয়োগ করেছে। ফলে, রাশিয়াকে টেক্কা দেওয়া গেলেও চীন অতটা সহজে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর নাগালে আসবে না।
আরেকটি সমস্যা হলো বিশ্বাস। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিশ্বাসের অভাব রয়েছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে যদি ট্রাম্প কিংবা তাঁর মতো কোনো নেতা নির্বাচিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসেন, তবে হয়তো টিটিসি শিগগিরই তার গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। ইউরোপীয় ন্যায়বিচার আদালত তো এরই মধ্যে নিরাপত্তা বলয় চুক্তির বিষয়ে ভেটো দিয়ে বসেছে। সব মিলিয়ে আটলান্টিকের দুই পারের দেশগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গঠন অনেক দূরের পথ।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির পিটার স্যোয়ার বলেছেন, ‘এটি হবে আইনের মারপ্যাঁচের রুবিকস কিউব মেলানোর মতো।’ আরেকটি বিষয় হলো, এই আলোচনাগুলো এখনো নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে রয়েছে। জনগণ এখনো এসব বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে অবগত নয়। তারা বিষয়টি কীভাবে গ্রহণ করবে, তা নিয়ে বিস্তর ভাবনার অবকাশ রয়েছে।’
তবে টিটিসি নিয়ে আশাবাদীদের দাবি, ফোরামটি লক্ষ্য অর্জনে যত দূর সম্ভব পথ পাড়ি দেবে। প্রয়োজনে সীমানার ধারণা তুলে দিয়ে দেশগুলোর মধ্যে সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক সহযোগিতা বাড়াতে হবে। তাদের মতে, এই প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর করে তুলতে সমমনা দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে। বিশেষ করে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোকে। অনেকেই আবার টিটিসিকে ডিজিটাল ন্যাটো বলেও আখ্যা দিচ্ছেন। ফলে এই প্ল্যাটফর্ম যে আগামী দিনে একটি উল্লেখযোগ্য শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে, তা নিয়ে অনেকেই আশাবাদী।
ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৮ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৮ দিন আগে