অনলাইন ডেস্ক
ভেঙে পড়ছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালি। বহিষ্কার হওয়ার আগে ফরাসি সেনাবাহিনী কিদালের উত্তর–পূর্ব অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি মাফিয়া গ্রুপগুলোর কারণে। অঞ্চলটিতে থাকা বিপুল পরিমাণ সোনার মজুত মাফিয়া গ্রুপগুলোকে এলাকাটি সম্পর্কে আগ্রহী করেছে। প্রায় একই পরিমাণের সম্পদ সমৃদ্ধ প্রতিবেশী অঞ্চল তিমবুক্তুর ওপর থেকেও আধিপত্য হারিয়েছে মালি সরকার।
মালির এই ভেঙে পড়ার দিকে মনোযোগ দেয়নি ফ্রান্স। অপারেশন বারখানের অংশ হিসেবে যদিও ফ্রান্স দাবি করেছিল যে, মালির ঐক্য এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য তারা কাজ করছে।
ফ্রান্সের মতো অনেকটা একই ভূমিকা পালন করেছে জাতিসংঘ। দ্য ইউনাইটেড ন্যাশনস মাল্টিডাইমেনশনাল ইন্টিগ্রেটেড স্ট্যাবিলাইজেশন মিশন ইন মালি বা মিনুসমা প্রকল্পের কাজ করার কথা বললেও জাতিসংঘ যেন চোখ বন্ধ করে রাখে।
মালির সামরিক জান্তা জিহাদি এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে বুরকিনা ফাসো এবং নাইজারের সামরিক সরকারের সঙ্গে যৌথ অভিযান শুরু করেছে। এতে পশ্চিম আফ্রিকার কিছু অংশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। এই তিন দেশেই সম্প্রতি সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে।
জান্তা সরকার বলছে, তারা সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে জনগণের দুর্ভোগ কমানোর একটি উপায় হিসেবে এই অভিযানকে দেখছে।
কিন্তু প্রকৃত চিত্র হচ্ছে, সরকার মেনাকা বা তিমবুক্তুর অবরোধ ভাঙতে পারেনি। লাখ লাখ মানুষ মানবেতন জীবনযাপন করছে। সেখানে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো প্রবেশ করতে পারছে না।
ইতিমধ্যে, সরকার মালিতে জাতিসংঘের মিশনকে অফিস বন্ধ করতে এবং জনগণকে সহায়তা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে।
ইকোনমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস (ইকোওয়াস) এবং আফ্রিকান ইউনিয়নও (এউ) নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে অনেক আগে থেকে। কারণ, ফরাসি কর্তৃপক্ষ তাদের ফরাসি–ভাষী আফ্রিকানদের সংঘাত ও সংকট মোকাবিলার জন্য সংস্থাগুলোকে অযোগ্য বলে মনে করেছে।
কিন্তু মালির ক্রমশ পতনের কারণ কী? অঞ্চলটির গভীরে প্রোথিত স্থানীয় সমস্যার স্বাভাবিক ফলাফল, নাকি আরও অশুভ কিছু? নাকি এর কারণ প্রাক্তন উপনিবেশিক শক্তি—যা দ্রুত আফ্রিকা মহাদেশে প্রভাব হারিয়ে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ও আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে দেশটির বিচ্ছিন্নতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে?
২০১২ সালে একটি অভ্যুত্থানে তুয়ারেগ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা উত্তরের শহরগুলো দখল করার পর থেকেই মালিতে অশান্তি বিরাজ করছে। আল–কায়েদা সংশ্লিষ্ট যোদ্ধারা তখন তুয়ারেগদের পরাস্ত করে প্রায় ১০ মাস উত্তর মালির নিয়ন্ত্রণ রেখেছিল, যতক্ষণ না তাদের পরাজিত করে ফরাসি নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনী।
কাগজে কলমে ফরাসি সামরিক বাহিনী বর্তমানে দেশটিতে ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই’ করার জন্য রয়েছে এবং মালি সরকারকে উত্তরাঞ্চলে কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করছে। কিন্তু একটি সুদূর দেশে ফরাসি সৈন্যদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করার পেছনে প্যারিসের সিদ্ধান্তের আসল কারণ হলো ফরাসি অর্থনৈতিক এবং ভূ–কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করা অর্থাৎ, এই অঞ্চলের সোনা এবং ইউরেনিয়ামের খনি শোষণ।
ফ্রান্স দীর্ঘদিন ধরে প্রধান তুয়ারেগ বিচ্ছিন্নতাবাদী দল ন্যাশনাল মুভমেন্ট ফর লিবারেশন অব দ্য আজওয়াদকে (এমএনএলএ) প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে আসছে। মালিতে বিদ্যমান দ্বন্দ্বের পুরো সময় জুড়েই ফরাসি গণমাধ্যম এমএনএলএ–এর ‘স্বাধীনতার জন্য লড়াই’কে ব্যাপকভাবে সামনে এনেছে।
এমএনএলএ বিদ্রোহীদের প্রতি ফ্রান্সের ইতিবাচক মনোভাবের পেছনে রয়েছে ভূ–রাজনৈতিক স্বার্থ। কারণ, প্যারিস এমএনএলএকে এমন একটি গোষ্ঠী হিসেবে দেখছে যারা বর্তমানে আল–কায়েদা সংশ্লিষ্ট যোদ্ধা এবং ভবিষ্যতে কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিরোধিতা করে এই অঞ্চলে ফ্রান্সের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করতে পারে।
২০১৪ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে অন্যান্য তুয়ারেগ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী এবং আরব জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে কোঅর্ডিনেশন অব মুভমেন্টস অব আজওয়াদ (সিএমএ) গঠন করে এমএনএলএ। এক বছর পর তারা মালি সরকারের সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তি করে।
চুক্তিটির ফলে মালির কম জনবহুল উত্তরাঞ্চল স্বায়ত্তশাসন পায়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এই চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে আলজেরিয়ার ভূমিকাকে ফলাও করে প্রচার করলেও পর্যবেক্ষকদের কাছে এটি স্পষ্ট যে, চুক্তিটির পেছনে দেশটির প্রাক্তন উপনিবেশিক ‘প্রভু’ ফ্রান্স ছাড়া আর কেউ নেই।
সে সময়ে আফ্রিকা এবং ফ্রান্সের অনেক বিশ্লেষক যুক্তি দিয়েছিলেন যে, শান্তি চুক্তিটি মালি রাষ্ট্রের সমাপ্তি ডেকে আনবে। সেনেগালের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বাবাকার জাস্টিন এনদিয়ায়ে বলেছিলেন, ‘শান্তি চুক্তিটি এতই খারাপ যে, আমরা একে মালির কাফন বলতে পারি।’
শিগগিরই স্পষ্ট হয়েছে যে, শান্তি চুক্তিটি প্রকৃতপক্ষে মালির বিচ্ছিন্নতার পথকেই প্রশস্ত করেছিল। কিদালের উত্তর–পূর্বের অঞ্চলটি আনুষ্ঠানিকভাবে সিএমএ–এর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কার্যত ফরাসি সেনাবাহিনীর আধিপত্যে এলাকাটি অনাচার ও সহিংসতার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে।
ফ্রান্সই মালির বিভাজন বন্ধ করতে পারতো। তবে ফরাসি সরকারের এই কাজ করার কোনো আগ্রহ কখনো ছিল না কারণ, সিএমএ-এর প্রভাবের ক্ষেত্র বাড়লে ফ্রান্সের প্রভাবও বাড়বে। মূলধারার ফরাসি গণমাধ্যমও বাস্তবতার বিকৃত চিত্র তুলে ধরে। তারা মালির অস্থিতিশীলতা, সহিংসতা এবং দেশটিকে জিম্মি করে রাখা বিচ্ছিন্নতার হুমকির ওপর নয় বরং, কিদালের সোনার খনির ওপর প্রতিবেদন করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা করে।
মালির জনগণ এ ব্যাপারে সচেতন যে, তাদের দেশের বিশাল সম্পদের মালিকানা দখল করতেই দেশটিকে ভাগ করতে নকশা তৈরি করছে নব্য–উপনিবেশিকেরা। ২০১৫ সালে একটি বিক্ষোভের ছবি মালির সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে ঘুরে বেড়ায়, যেখানে মালির জনগণকে ফরাসি পতাকা পোড়াতে দেখা যায়।
ফ্রান্স-বিরোধী চেতনা শুধু মালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি ফরাসি-ভাষী পশ্চিম আফ্রিকা জুড়েই বিদ্যমান। মালির নাগরিকেরা প্রায়ই এ কথা বলার জন্য রাস্তায় নেমে আসে যে—তারা চায় পুরোনো উপনিবেশিকেরা দেশ ছেড়ে চলে যাক।
সামরিক সরকার ক্ষমতা দখলের পর ফরাসি বাহিনীকে বের করে দিয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য তারা রাশিয়ার ভাড়াটে যোদ্ধাদের নিয়োগ করেছে। কুখ্যাত ভাগনার গ্রুপ এখন এই অঞ্চলে সক্রিয় বলে জানা যায়।
এখন তিমবুক্তু দখল করেছে জিহাদিরা। যেখানে ২০১৯ সালের দিকে মালিকে বিভক্ত করে এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে দুর্বল করে দেশটির বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করার জন্য ফ্রান্সের নব্য-উপনিবেশিক পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয়েছিল। নিশ্চিতভাবে সেই ঘটনা দেশটিতে আরও সহিংসতা এবং রক্তপাত ডেকে আনে। তবে এসব ঘটনা প্যারিসের জন্য উদ্বেগের নয় বলেই মনে হয়েছিল। কারণ, ঐতিহাসিকভাবে আফ্রিকানদের উন্নতির জন্য ফ্রান্সের ভূমিকা ভালোর চেয়ে মন্দই বেশি।
আল–জাজিরার নিবন্ধ থেকে অনূদিত ও সংক্ষেপিত। অনুবাদ করেছেন মঞ্জুরুল ইকরাম।
ভেঙে পড়ছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালি। বহিষ্কার হওয়ার আগে ফরাসি সেনাবাহিনী কিদালের উত্তর–পূর্ব অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি মাফিয়া গ্রুপগুলোর কারণে। অঞ্চলটিতে থাকা বিপুল পরিমাণ সোনার মজুত মাফিয়া গ্রুপগুলোকে এলাকাটি সম্পর্কে আগ্রহী করেছে। প্রায় একই পরিমাণের সম্পদ সমৃদ্ধ প্রতিবেশী অঞ্চল তিমবুক্তুর ওপর থেকেও আধিপত্য হারিয়েছে মালি সরকার।
মালির এই ভেঙে পড়ার দিকে মনোযোগ দেয়নি ফ্রান্স। অপারেশন বারখানের অংশ হিসেবে যদিও ফ্রান্স দাবি করেছিল যে, মালির ঐক্য এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য তারা কাজ করছে।
ফ্রান্সের মতো অনেকটা একই ভূমিকা পালন করেছে জাতিসংঘ। দ্য ইউনাইটেড ন্যাশনস মাল্টিডাইমেনশনাল ইন্টিগ্রেটেড স্ট্যাবিলাইজেশন মিশন ইন মালি বা মিনুসমা প্রকল্পের কাজ করার কথা বললেও জাতিসংঘ যেন চোখ বন্ধ করে রাখে।
মালির সামরিক জান্তা জিহাদি এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে বুরকিনা ফাসো এবং নাইজারের সামরিক সরকারের সঙ্গে যৌথ অভিযান শুরু করেছে। এতে পশ্চিম আফ্রিকার কিছু অংশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। এই তিন দেশেই সম্প্রতি সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে।
জান্তা সরকার বলছে, তারা সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে জনগণের দুর্ভোগ কমানোর একটি উপায় হিসেবে এই অভিযানকে দেখছে।
কিন্তু প্রকৃত চিত্র হচ্ছে, সরকার মেনাকা বা তিমবুক্তুর অবরোধ ভাঙতে পারেনি। লাখ লাখ মানুষ মানবেতন জীবনযাপন করছে। সেখানে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো প্রবেশ করতে পারছে না।
ইতিমধ্যে, সরকার মালিতে জাতিসংঘের মিশনকে অফিস বন্ধ করতে এবং জনগণকে সহায়তা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে।
ইকোনমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস (ইকোওয়াস) এবং আফ্রিকান ইউনিয়নও (এউ) নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে অনেক আগে থেকে। কারণ, ফরাসি কর্তৃপক্ষ তাদের ফরাসি–ভাষী আফ্রিকানদের সংঘাত ও সংকট মোকাবিলার জন্য সংস্থাগুলোকে অযোগ্য বলে মনে করেছে।
কিন্তু মালির ক্রমশ পতনের কারণ কী? অঞ্চলটির গভীরে প্রোথিত স্থানীয় সমস্যার স্বাভাবিক ফলাফল, নাকি আরও অশুভ কিছু? নাকি এর কারণ প্রাক্তন উপনিবেশিক শক্তি—যা দ্রুত আফ্রিকা মহাদেশে প্রভাব হারিয়ে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ও আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে দেশটির বিচ্ছিন্নতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে?
২০১২ সালে একটি অভ্যুত্থানে তুয়ারেগ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা উত্তরের শহরগুলো দখল করার পর থেকেই মালিতে অশান্তি বিরাজ করছে। আল–কায়েদা সংশ্লিষ্ট যোদ্ধারা তখন তুয়ারেগদের পরাস্ত করে প্রায় ১০ মাস উত্তর মালির নিয়ন্ত্রণ রেখেছিল, যতক্ষণ না তাদের পরাজিত করে ফরাসি নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনী।
কাগজে কলমে ফরাসি সামরিক বাহিনী বর্তমানে দেশটিতে ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই’ করার জন্য রয়েছে এবং মালি সরকারকে উত্তরাঞ্চলে কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করছে। কিন্তু একটি সুদূর দেশে ফরাসি সৈন্যদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করার পেছনে প্যারিসের সিদ্ধান্তের আসল কারণ হলো ফরাসি অর্থনৈতিক এবং ভূ–কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করা অর্থাৎ, এই অঞ্চলের সোনা এবং ইউরেনিয়ামের খনি শোষণ।
ফ্রান্স দীর্ঘদিন ধরে প্রধান তুয়ারেগ বিচ্ছিন্নতাবাদী দল ন্যাশনাল মুভমেন্ট ফর লিবারেশন অব দ্য আজওয়াদকে (এমএনএলএ) প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে আসছে। মালিতে বিদ্যমান দ্বন্দ্বের পুরো সময় জুড়েই ফরাসি গণমাধ্যম এমএনএলএ–এর ‘স্বাধীনতার জন্য লড়াই’কে ব্যাপকভাবে সামনে এনেছে।
এমএনএলএ বিদ্রোহীদের প্রতি ফ্রান্সের ইতিবাচক মনোভাবের পেছনে রয়েছে ভূ–রাজনৈতিক স্বার্থ। কারণ, প্যারিস এমএনএলএকে এমন একটি গোষ্ঠী হিসেবে দেখছে যারা বর্তমানে আল–কায়েদা সংশ্লিষ্ট যোদ্ধা এবং ভবিষ্যতে কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিরোধিতা করে এই অঞ্চলে ফ্রান্সের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করতে পারে।
২০১৪ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে অন্যান্য তুয়ারেগ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী এবং আরব জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে কোঅর্ডিনেশন অব মুভমেন্টস অব আজওয়াদ (সিএমএ) গঠন করে এমএনএলএ। এক বছর পর তারা মালি সরকারের সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তি করে।
চুক্তিটির ফলে মালির কম জনবহুল উত্তরাঞ্চল স্বায়ত্তশাসন পায়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এই চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে আলজেরিয়ার ভূমিকাকে ফলাও করে প্রচার করলেও পর্যবেক্ষকদের কাছে এটি স্পষ্ট যে, চুক্তিটির পেছনে দেশটির প্রাক্তন উপনিবেশিক ‘প্রভু’ ফ্রান্স ছাড়া আর কেউ নেই।
সে সময়ে আফ্রিকা এবং ফ্রান্সের অনেক বিশ্লেষক যুক্তি দিয়েছিলেন যে, শান্তি চুক্তিটি মালি রাষ্ট্রের সমাপ্তি ডেকে আনবে। সেনেগালের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বাবাকার জাস্টিন এনদিয়ায়ে বলেছিলেন, ‘শান্তি চুক্তিটি এতই খারাপ যে, আমরা একে মালির কাফন বলতে পারি।’
শিগগিরই স্পষ্ট হয়েছে যে, শান্তি চুক্তিটি প্রকৃতপক্ষে মালির বিচ্ছিন্নতার পথকেই প্রশস্ত করেছিল। কিদালের উত্তর–পূর্বের অঞ্চলটি আনুষ্ঠানিকভাবে সিএমএ–এর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কার্যত ফরাসি সেনাবাহিনীর আধিপত্যে এলাকাটি অনাচার ও সহিংসতার কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে।
ফ্রান্সই মালির বিভাজন বন্ধ করতে পারতো। তবে ফরাসি সরকারের এই কাজ করার কোনো আগ্রহ কখনো ছিল না কারণ, সিএমএ-এর প্রভাবের ক্ষেত্র বাড়লে ফ্রান্সের প্রভাবও বাড়বে। মূলধারার ফরাসি গণমাধ্যমও বাস্তবতার বিকৃত চিত্র তুলে ধরে। তারা মালির অস্থিতিশীলতা, সহিংসতা এবং দেশটিকে জিম্মি করে রাখা বিচ্ছিন্নতার হুমকির ওপর নয় বরং, কিদালের সোনার খনির ওপর প্রতিবেদন করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা করে।
মালির জনগণ এ ব্যাপারে সচেতন যে, তাদের দেশের বিশাল সম্পদের মালিকানা দখল করতেই দেশটিকে ভাগ করতে নকশা তৈরি করছে নব্য–উপনিবেশিকেরা। ২০১৫ সালে একটি বিক্ষোভের ছবি মালির সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে ঘুরে বেড়ায়, যেখানে মালির জনগণকে ফরাসি পতাকা পোড়াতে দেখা যায়।
ফ্রান্স-বিরোধী চেতনা শুধু মালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি ফরাসি-ভাষী পশ্চিম আফ্রিকা জুড়েই বিদ্যমান। মালির নাগরিকেরা প্রায়ই এ কথা বলার জন্য রাস্তায় নেমে আসে যে—তারা চায় পুরোনো উপনিবেশিকেরা দেশ ছেড়ে চলে যাক।
সামরিক সরকার ক্ষমতা দখলের পর ফরাসি বাহিনীকে বের করে দিয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য তারা রাশিয়ার ভাড়াটে যোদ্ধাদের নিয়োগ করেছে। কুখ্যাত ভাগনার গ্রুপ এখন এই অঞ্চলে সক্রিয় বলে জানা যায়।
এখন তিমবুক্তু দখল করেছে জিহাদিরা। যেখানে ২০১৯ সালের দিকে মালিকে বিভক্ত করে এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে দুর্বল করে দেশটির বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করার জন্য ফ্রান্সের নব্য-উপনিবেশিক পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ শুরু হয়েছিল। নিশ্চিতভাবে সেই ঘটনা দেশটিতে আরও সহিংসতা এবং রক্তপাত ডেকে আনে। তবে এসব ঘটনা প্যারিসের জন্য উদ্বেগের নয় বলেই মনে হয়েছিল। কারণ, ঐতিহাসিকভাবে আফ্রিকানদের উন্নতির জন্য ফ্রান্সের ভূমিকা ভালোর চেয়ে মন্দই বেশি।
আল–জাজিরার নিবন্ধ থেকে অনূদিত ও সংক্ষেপিত। অনুবাদ করেছেন মঞ্জুরুল ইকরাম।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
১৮ ঘণ্টা আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
৫ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় মোটামুটি সারা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। বাদ যায়নি তাঁর প্রতিবেশী দেশগুলো। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই জয়ের বড় প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী দেশগুলোয়।
৭ দিন আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর বিশ্বের অনেক অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ ও প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, ইউক্রেন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, আর ইসরায়েল অনেকটা খুশিতে উদ্বেলিত। তবে বিশেষ নজরে আছে পারস্য উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো।
৮ দিন আগে